#মৃত_কাঠগোলাপ – ৩৯

0
450

#মৃত_কাঠগোলাপ – ৩৯
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
____________________________
তারপরের সময়গুলো ছিল ভীষন রঙিন! ধ্রুব সময়ের উপর নিজের কর্তৃত্ব ফলিয়েছে। আয়েশীর মন থেকে মৃদুলের সমস্ত স্মৃতি ঝড়ে গেছে। মৃদুলের নাম এখন আয়েশী সহ্য করতে পারে না। কান চেপে ধরে। যেন মৃদুলের নাম তার কানে প্রবেশ করা অর্থাৎ মহাপা’প! আয়েশী আর পা’প করতে চায় না। জীবনে আয়েশী শুধুমাত্র একটি পা’প করেছিল। তা হচ্ছে, মৃদুলকে ভালোবাসা! এই এক পা’প আয়েশীর জীবন থেকে সকল সুখ শুষে নিয়েছে। আয়েশী একটাসময় এই পাপের আগুনে দগ্ধ হয়ে হাসতে ভুলে গিয়েছিল, বাঁচতে ভুলে গিয়েছিল। তবে আজকের চিত্র সম্পূর্ন ভিন্ন। ধ্রুবকে নিয়ে গড়ে উঠেছে আয়েশীর এক নতুন জীবন! ধ্রুব এই মুহূর্তসমূহ ভীষন উপভোগ করছে। মাত্র এক বছর, এক বছরে ধ্রুব আয়েশীর মন থেকে মৃদুলের সমস্ত স্মৃতি মুছে ফেলেছে। কি আশ্চর্য্য! আয়েশী নামক প্রেমিকা সম্পূর্ণরূপে তার পাগল প্রেমিক মৃদুলকে ভুলে গেল।

সুন্দর এক সকাল! আকাশের বুকে লাল কমলা সূর্য উঠেছে। সূর্য থেকে যেন তাজা তাজা র’ক্ত ঝড়ছে। গ্রীষ্মের উত্তাপের দাপটে ঢাকা শহর ক্লান্ত, অবসন্ন। আয়েশী দুপুরের রান্না শেষ করে গোসল করতে ধ্রুবর কক্ষে এসেছে। ধ্রুব বাড়ি নেই। কাজে গেছে। হয়তো আর একটু পর এসে যাবে। আয়েশী তাই ধ্রুব আসার আগেই পরিপাটি হয়ে বসে থাকতে চায়। গা থেকে মসলার গন্ধ আসছে। দ্রুত গোসল করে নিল আয়েশী।
আয়েশী চুলে গামছা পেঁচিয়ে বাথরুম থেকে বের হল। সোফার উপর ধ্রুব বসে আছে। সোফায় হেলান দিয়ে দু চোখ বুজে আছে। সাদা ব্লেজার খুলে সোফার হাতলে ঝুলানো। শার্টের সামনের দুটো বোতাম খুলে রাখা। খোলা শার্টের ফাঁকে উকি দিচ্ছে ধ্রুবর লোমহীন বুক! খোলা বুকে ধ্রুবকে দেখতে ভীষন লোভনীয় লাগছে। ইশ, আয়েশীর বুকটা কেঁপে উঠল যে! এই মুহূর্তে আয়েশীর ধ্রুবকে খে’য়ে ফেলতে ইচ্ছে হচ্ছে! ছিঃ, কিসব ভাবছে। নিজের ভাবনা নিজের কাছেই প্রচণ্ড লজ্জাজনক ঠেকল। আয়েশী দ্রুত চোখ সরিয়ে নিল। ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল থেকে গামছা খুলে চুল ঝাড়তে লাগল। আড়চোখে হয়তো দু একবার তার সুন্দর স্বামীকে পর্যবেক্ষণও করা হল। হঠাৎ ধ্রুব চোখ খুলে তাকায়। আয়েশী সঙ্গেসঙ্গে চোখ সরিয়ে নেয়। আয়নায় দিকে চেয়ে চুলের পানি ঝাড়তে থাকে। ধ্রুব মিহি হাসে। আয়েশী এতক্ষণ ধ্রুবর দিকে চোরাচোখে চেয়ে ছিল, ধ্রুব জানে। জানে বলে, ধ্রুবর ঠোঁটে মুচকি হাসি। যেন আয়েশীর এই চুরি করে দেখা তার ভীষন মজা লেগেছে। ধ্রুব সোফা থেকে উঠে। আয়েশীর পাশে দাঁড়িয়ে পেছন থেকে ঝাপটে ধরে আয়েশীকে। আয়েশী সামনে ঝুঁকে যায়। সর্বাঙ্গ থরোথরো করে কেঁপে উঠে। ধ্রুব আয়েশীর কানে ঠোঁট বুলায়। মৃদু স্বরে বলে, ‘ কাঁপছ কেন? ‘
আয়েশী লজ্জায় জমে যায়। সে কাঁপছে? ছিঃ, ছিঃ! ধ্রুব কি ভাবছে? আয়েশী কাপুনি কমানোর চেষ্টা করে। পারে না। ধ্রুব উষ্ণ নিঃশ্বাস আয়েশীর কান ছুঁয়ে যায়, আয়েশীর কাপুনি বিদ্যুৎ বেগে বৃদ্ধি পায়। কি মুশকিল!
আয়েশী নিজেকে ধ্রুবর থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে। বলে,
‘ খাবার বাড়ছি। এসে খেয়ে নাও। তারপর যা ইচ্ছে কর! ‘
ধ্রুব আয়েশীর ঘাড়ে থুতনি রাখে। আয়নার আয়েশীর প্রতিবিম্বের দিকে চেয়ে চোখ সরু করে বলে, ‘ যা ইচ্ছে তাই?’
আয়েশী থতমত খেয়ে যায়। বোকা বোকা দৃষ্টিতে ধ্রুবর দিকে চায়। পরক্ষণেই হেসে বলে,’ সেটা দেখা যাবে। এখন চলো। খাবার ঠান্ডা হয়ে যাবে। ‘
ধ্রুব আয়েশীর ঘাড়ে ঠোঁট ঠেসে ছোট্ট একটা কা’মড় দেয়। নরম দেহি আয়েশী কামড়ের ব্যথায় কুঁকড়ে উঠে। ছিটকে ধ্রুবর থেকে সরে যায়। ঘাড়ে হাত ঘষে কাতর কণ্ঠে অভিযোগ করে, ‘ ইস, রাক্ষস নাকি? এত জোড়ে কামড় দেয়? জ্বলছে। ‘
ধ্রুব মৃদু হেসে দু হাত প্যান্টের পকেটে প্রবেশ করায়। বুক টানটান করে দাঁড়িয়ে বলে, ‘ আমার ভালোবাসা প্রকাশের ধরন এমনই। টলারেন্স ইজ বেটার অপশন। ‘
আয়েশী মুখ কুঁচকে নেয়।
‘ আমার জামাকাপড় বের করো। শাওয়ার নেব। ‘
ধ্রুব বাথরুমের দিকে এগিয়ে যায়। আয়েশী বিড়বিড় করে ধ্রুবকে দু একটা কথা বলে। কাবার্ড থেকে ধ্রুবর টিশার্ট এবং ট্রাউজার বের করে বিছানার উপর রাখে। অতঃপর কক্ষ থেকে বেরিয়ে রান্নাঘরে চলে যায়। ধ্রুব সারাদিন কাজ করে এসেছে। খাবার খেতে হবে এখন। আয়েশীরও প্রচুর ক্ষুধা লেগেছে। ধ্রুব আসার আগে আয়েশীর কোনো কিছু খেতে পারে না। ধ্রুবর নিষেধ! ধ্রুবর কতশত নিয়ম! মাঝেমধ্যে আয়েশী হাঁপিয়ে উঠে। এসব নিয়মের বেড়াজালে জর্জরিত হয়ে আয়েশী মাঝেমধ্যে নিজেকে অতলে হারিয়ে ফেলে।

ধ্রুব গোসল করে বের হয়। বিছানার উপর তার জামা কাপড় রাখা। আয়েশী সব গুছিয়ে দিয়ে গেছে। ধ্রুব মৃদু হাসে। ভেজা টাওয়াল পাল্টে টিশার্ট, ট্রাউজার পড়ে নেয়। কক্ষ ছেড়ে বের হবে, হঠাৎ আয়েশীর ফোন বেজে উঠে। ধ্রুবর ভ্রু কুঁচকে যায়। আয়েশীর ফোন বিছানার উপর রাখা। ধ্রুব হেঁটে যায় ফোনের দিকে। ফোন হাতে তুলে দেখে আয়েশীর ভাই, তুষার কল করেছে। ধ্রুব কল কেটে দেয়। তুষার পরপর আরো দুবার কল করে। আবার ধ্রুব কেটে দিয়েছে। তুষার এবার বার্তা পাঠায়,
‘ বোন, তোর সাথে কতদিন কথা হয় না। দেখি না কতদিন হল। একবার বাসায় আসবি? বাবা তোর কথা খুব বলছে। ‘ ধ্রুব ঠোঁট বাঁকায়। বিড়বিড় করে, ‘ ইমোশনাল ফুল পিপল ‘
ধ্রুব ফিরতি বার্তা পাঠায়, ‘ আমি ভীষন ব্যস্ত, ভাই। সময় হলে একবার আসব। ‘
ধ্রুব ফোন থেকে তুষারের নাম্বার ব্লক করে দেয়। তুষারের সাথে আয়েশীর বাবা মায়ের নাম্বার ব্লক করে। আয়েশী যদি তার পরিবারকে সময় দেয়, তবে ধ্রুবকে সময় দিবে কখন? ধ্রুব কি তবে আয়েশীকে হারিয়ে ফেলবে? না, না! এর চেয়ে বরং আয়েশীর তাদের সাথে যোগাযোগ না রাখাই ভালো।

আয়েশী খাবার বেড়েছে। চেয়ারে বসে ধ্রুবর জন্যে অপেক্ষা করছে। ধ্রুব সিড়ি ভেঙে নিচে নামছে। ভেজা চুল কপালের উপর লেপ্টে আছে। চুলের মধ্যে ফোঁটা ফোঁটা পানির বিন্দু। দেখে মনে হচ্ছে, শীতের সকালে দূর্বা ঘাসের উপর জমে থাকা শিশির ফোঁটা! ইশ, ভেজা গায়ে কি সুন্দর দেখাচ্ছে ধ্রুবকে!
ধ্রুব আয়েশীর পাশে চেয়ার টেনে বসে। আয়েশী ধ্রুবর প্লেটে সবজির পরিবর্তে মাংস দিতে চায়। আজ আয়েশী নিজের হাতে ধ্রুবর জন্যে গরুর মাংস রেঁধেছে। ধ্রুবর ভালো লাগবে দেখে, প্রথমেই ধ্রুবর প্লেটে মাংস তুলে দিতে চায়। তবে ধ্রুব হাত দিয়ে আটকে দেয়। বলে, ‘ মিট না, ভেজিটেবল দাও। ‘
আয়েশী বলে, ‘ মাংস একবার খেয়ে দেখো। ভালো লাগবে। আমি নিজে রেঁধেছি। ‘
‘ নিজে রেঁধেছ কেন? সার্ভেন্ট আছে কি করতে? কাল থেকে যেন রান্নাঘরের আশপাশে না দেখি তোমায়। ‘
‘ এমন করে বলছ কেন? তোমার জন্যে রান্না করতে আমার ভালো লাগে। ‘
‘ আমার জন্যে রান্না করার কোনো প্রয়োজন নেই। আমার সাথে থেকে চব্বিশ ঘণ্টা রোমাঞ্চ করো,আমি তাতেই খুশি। ‘
আয়েশী লজ্জায় মুখ কুঁচকে ফেলে। দ্রুত মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে বিড়বিড় করে বলে, ‘ অসভ্য লোক! ‘
ধ্রুব মৃদু হাসে। সবজি প্লেটে নিয়ে খেতে শুরু করে। আয়েশী কি আর করবে। নিজেই নিজের রান্না করে গরুর মাংস খেতে শুরু করে। খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে ধ্রুবর দিকে চায়। ধ্রুব বছরের সবকটা দিন কিভাবে সবজি দিয়ে ভাত খেতে পারে? খেতে কষ্ট হয় না? গলায় আটকে যায় না এই এক খাবার? কই, আয়েশী তো খেতে পারে না।
ধ্রুব খাবার শেষ করে। সার্ভেন্ট ধ্রুবর দিকে টিস্যুর বক্সে এগিয়ে দেয়। ধ্রুব টিস্যু দিয়ে মুখ, হাত মুছে চেয়ার থেকে উঠে পড়ে। আয়েশী তখনও খাচ্ছে। ধ্রুব বলে, ‘ দ্রুত খেয়ে রুমে আসো। আ’ম ওয়েটিং। ‘
ধ্রুব চলে যায়। সার্ভেন্ট এর সামনে এমন কথা শুনে, আয়েশী লজ্জায় হতভম্ব হয়ে পড়ে। দ্রুত মাথা নিচু করে খেতে থাকে। সার্ভেন্ট বোকা বোকা চোখে আয়েশীর দিকে চেয়ে, মুখ টিপে হেসে চলে যায়। আয়েশী ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ছাড়ে। ধ্রুব এত নির্লজ্জ কেন? নিজের মধ্যে তো লজ্জার ছিটেফোঁটা নেই, আয়েশীকেও যখন তখন লজ্জায় মেরে ফেলে। অসভ্য লোক!

ধ্রুব নিজের কক্ষে আসে। বারান্দায় ইজি চেয়ারে বসে সিগারেট ধরায়। ফোন হাতে নিয়ে ওসমানকে কল করে। ওপাশ হতে ‘হ্যালো স্যার’ বলা হলে, ধ্রুব গমগমে সুরে বলে,
‘ বিকেলে তৈরি থাকবি। মৃদুলের কবর দেখতে যাব। ‘
ওসমান অবাক হয়। প্রায় এক বছর পর মৃদুলের কবর কেন দেখতে চাইছে ধ্রুব? আবার কি নতুন কোনো ফন্দি আঁটছে সে?

#চলবে ( শব্দসংখ্যা- ১১০০+)
এখন থেকে মৃ’ত কাঠগোলাপ গল্পটা হবে ধ্রুব আয়েশীর ভালোবাসাময়!
যারা গল্পটা পড়বেন রেসপন্স করবেন প্লিজ। আর গল্প সম্বন্ধে নিজেদের ভালো লাগা, মন্দ লাগা জানাতে ভুলবেন না। ভালোবাসা!

গত পর্বের কমেন্ট বিজয়ী,
@farhana tabassum
@miftahul mun
@এলোমেলো স্বপ্নকন্যা
@maksuda ratna
@reha zaman
@মন ছুঁয়েছে মন

লেখিকার গ্রুপ,
কল্পনা-কলমে ~ ‘আভা ইসলাম রাত্রি’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here