#বাবুইপাখির_অনুভূতি🕊️পর্বঃ০৯
#লেখিকা:#তানজিল_মীম🕊️
—
_________________
এক ঠ্যাং উচকিয়ে সাথে এক হাত ধরে পুকুরের কিনারায় নীরবকে ধরে দাঁড়িয়ে আছে সোহান, সুজন আর শরীফ। আর এদের কাজে বেচারি নীরব কাঁদো কাঁদো ফেস আর ভয়ার্ত কন্ঠ নিয়ে বলে উঠল,
‘ এগুলো তোরা কি করছিস পড়ে যামু তো?’
‘ তোকে ফেলার জন্যই তো ধরে আছি।’
‘ প্লিজ এমন করিস না।’
‘ ঠিক আছে করবো না কিন্তু তার আগে বল তুই শ্রীমঙ্গল যেতে রাজি।’
‘ এটা কোন ধরনের কথা।’
‘ শালা তোকে আজ এই পানিতে চুবিয়েই মারবো, সবসময় কোথাও যাওয়ার কথা উঠলেই তুই নানান বাহানা দেখাস।’
বলেই সোহানের হাতটা একটু আলগা করলো। সোহানের কাজে ভয় পেয়ে বলে উঠল নীরব,
‘ এমন করিস না আমি ভিজে যাবো তো।’
‘ তাইলে বল আগে তুই রাজি দোস্ত দু’দিনেরই তো ব্যাপার চল না যাই। আচ্ছা তুই চাইলে তোর সঙ্গে তোর বইপত্রও নিতে পারিস এবারও যদি রাজি না হোস তাইলে কিন্তু।’
বলেই নীরবকে ছেড়ে দিতে লাগলো সোহান,শরীফ আর সুজন। ওদের কাজে প্রচন্ড ঘাবড়ে গিয়ে বলে উঠল নীরব,
‘ ঠিক আছে ঠিক আছে তোরা যা বলবি তাই হবে আমি রাজি।’
নীরবের কথা শুনে সোহান ওরা খুশি হয়ে বললো,
‘ সত্যি দোস্ত তুই যাবি শ্রীমঙ্গল?’
‘ হুম যাবো যাবো এইবার তো ঠিক কর আমায়?’
‘ হুম করছি।
বলেই সোহান,শরীফ আর সুজন নীরবকে ছেড়ে সোজা করে দাঁড় করালো। ওদের কাছ থেকে ছাড়া পেতেই নীরব জোরে শ্বাস ফেলে বললো,
‘ এভাবে কেউ পানিতে ফেলার হুমকি দেয়।’
‘ সরি দোস্ত।’
‘ আচ্ছা ঠিক আছে, আহি ওদের বলেছিস?’
‘ না বলি নি তবে এখনই রিনিকে বলছি ও আহি আর ওই মেয়েটাকে বলবে আনে।’
সোহানের কথা শুনে এইবার নীরব একটু সিরিয়াসভাবে বলে উঠল,
‘ সেই কখন থেকে শুধু শুনছি ওই মেয়েটা ওই মেয়েটা মেয়েটা আসলে কে?’
‘ মেয়েটার নামটা ঠিক মনে নেই পরশুই এসেছে রিনির বান্ধবী রাজশাহীতে বসে আলাপ হয়েছিল। খুব বিলিয়ান্ট ছাত্রী বুঝলি স্কলারশিপ পেয়ে এসেছে ভার্সিটি।’
‘ ওহ।’
‘ হুম।’
_____
লাইব্রেরিতে বসে আছে আহি আর অথৈ। অবশ্য খালি বসে আছে বললে একটু ভুল হবে। আহি বসে মোবাইল দেখছে আর অথৈ বই পড়ছে। আর ওদের দুজনের থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে রিনি। হুট করেই সোহানের ফোন আসায় চলে যায় সে সাইডে। হঠাৎই রিনি তার কথা বলা শেষ করে দৌড়ে এসে কিছুটা এক্সাইটিং হয়ে বলে উঠল,
‘ দোস্ত ঘুরতে যাবি?’
হুট করেই রিনির এমন কথা শুনে অথৈ এক পলক ওর দিকে তাকিয়ে আবার বই দেখতে শুরু করলো আর আহি বেশ খানিকটা অবাক হয়ে বললো,
‘ মানে?’
‘ জানিস এইমাত্র সোহান ভাইয়া কেন আমায় ফোন করলো?’
‘ কেন?’
‘ ভাইয়ারা দু’দিনের ট্যুরে যাবে আমাদেরকেও সাথে নিবে?’
‘ সত্যি?’
‘ হুম।’
‘ অথৈর কথাও বললো বুঝলি।’
রিনির মুখে এই মুহূর্তে নিজের নামের কথা শুনে বইয়ের পাতা থেকে চোখ সরিয়ে রিনির দিকে তাকিয়ে বললো অথৈ,
‘ আমার কথা মানে?’
‘ মানে এটাই আমাদের সাথে তুইও যাবি?’
রিনির কথা শুনে আহিও খুব খুশি হয়ে বলে উঠল,
‘ ভালোই হবে তুই, আমি,রিনি তিনজন একসাথে থাকবো।’
আহির কথা শুকনো হেঁসে বললো অথৈ,
‘ আমি যাবো না।’
অথৈর মুখে না যাওয়ার কথা শুনে আহি আর রিনি দুজনেই হতাশ হয়ে বললো,
‘ কেন?’
‘ চল না যাই সবাই মিলে গেলে খুব মজা হবে?’ (আহি)
‘ না তোদের মাথা খারাপ সামনে এক্সাম আর এখন পড়াশোনা রেখে ঘুরতে যাবো।’
‘ এক্সামের এখনো অনেক সময় বাকি অথৈ (রিনি)
‘ ঠিকই তো এখনও অনেক সময় আছে তো অথৈ ( আহি)
‘ না যতই সময় থাকুক আমার এখনও অনেক পড়া বাকি আর তাছাড়া আপু দুলাভাই আমায় যেতে দিবে না।’
‘ আপুকে নিয়ে তুই টেনশন করিস না আমি বলবো ওনাদের।’ (রিনি)
‘ এবার প্লিজ রাজি হয়ে যা দু’দিনেরই তো ব্যাপার মাত্র।’
আহির কথা শুনে রিনিও বলে উঠল,
‘ প্লিজ চল না যাই।’
আহি আর রিনির এত অনুরোধের স্বরের কথা শুনে মুচকি হেঁসে বললো অথৈ,
‘ঠিক আছে ঠিক আছে আর বলতে হবে না আমি রাজি।’
অথৈর কথা শুনে আহি আর রিনি দুজনেই খুশি হয়ে বললো,
‘ থ্যাংক ইউ দোস্ত।’
উওরে মুচকি হাসলো অথৈ এরই মধ্যে সেখানে উপস্থিত হলো নীরব,সোহান,সুজন আর শরীফ। সোহান তো পুরো খুশি মনে বলে উঠল,
‘ শুনেছিস তো পরশু ট্যুরে যাবো তোরাও কিন্তু যাবি আমার সাথে টাকার কোনো প্যারা সব খরচ আমাদের।’
সোহানের কথা শুনে আহি আর রিনি দুজনেই খুশি হয়ে বললো,
‘ হুম শুনেছি আর এতে আমরা সবাই রাজি।’
রিনির কথা শুনে ওঁরাও খুশি হলো। হঠাৎই সোহান অথৈর দিকে একপলক তাকিয়ে রিনিকে বলে উঠল,
‘ ও কি যাবে তোদের সাথে?’
সোহানের কথা শুনে রিনিও খুশি মনে বলে উঠল,
‘ হুম যাবে প্রথমে তো এক্সামের কথা বলে যেতে চাইছিল না কিন্তু পরে রাজি হয়েছে।’
রিনির কথা শুনে ওঁরা তো বেশ অবাক সুজন তো বলেই ফেললো,
‘ লে খোকা এই দুুই চাশমিশদের তো একই অসুখ।’
সুজনের কথা হেঁসে উঠল সবাই,সুজনের কথা শুনে একে অপরের দিকে তাকালো অথৈ আর নীরব। অথৈই অতোটা অবাক না হলেও নীরব বেশ অবাক হয়েছে অথৈকে দেখে। মনে মনে তো ভেবেই ফেললো ‘এই মেয়েটা তো সেই বাসের মেয়েটা। শরীফ, রিনি আর আহির দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ তা আমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিবি না ওকে?’
‘ হুম কেন নয়।’
বলেই রিনি একে একে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল অথৈকে, অথৈও মুচকি হেঁসে সবার সাথে পরিচিত হলো। কিছুক্ষনের মধ্যেই যেন তার সাথে সবার বন্ধুত্ব পূর্ণ সম্পর্কে চলে গেল। এমন সময় সেখানে উপস্থিত হলো মীরা সবার সামনে দৌড়ে এসে বললো সে,
‘ আমাকে ছাড়া সবাই সব প্লানিং করে ফেলছোস নাকি?’
মীরাকে দেখেই কেমন যেন জ্বেলাছি তা শুরু হলো আহির। তবে আপাতত সেটা প্রকাশ করলো না আহি। মীরার কথা শুনে নীরব বলে উঠল,
‘ আরে না তেমন কোনো ব্যাপার নেই, তা তুই যে কাজে গিয়েছিলি তা হয়েছে?’
‘ হুম আমার জবটা কর্নফাম হয়ে গেছে আর বসও বললো দু’দিন পর থেকে জয়েন করতে আর তখনই সোহানের ফোন আসাই আরো দু’দিনের ছুটি নিয়ে এসেছি বুঝলি। কারনটা তো বুঝতেই পারছিস তা কবে যাবি ভাবছিস?’
মীরার কথা শুনে সোহান বলে উঠল,
‘ পরশু।’
‘ খুব ভালো আমার তো ভেবেই এক্সাইটিং লাগছে।’
মীরার কথা শুনে রিনিও বলে উঠল,
‘ আমারও আপু।’
এরপর সবাই মিলে একসাথে বসে শ্রীমঙ্গলে যাওয়ার প্লানিং শুরু করে দিল। সাথে হাসাহাসি আর আড্ডা তো আছেই।’
_____
‘ আমি আসবো ভাইয়া?’
কিছুটা হতভম্ব কন্ঠ নিয়ে কথাটা বলে উঠল শুভ আদ্রিয়ানকে। ফাইল হাতে কিছু কাগজ দেখছিল আদ্রিয়ান হঠাৎই কারো কন্ঠ কানে আসতেই চোখ তুলে তাকালো সে। সামনের ছেলেটির মুখটা দেখতেই মাথা গরম হয়ে গেল তাঁর প্রচন্ড রাগ নিয়ে চেঁচিয়ে ডাকলো সে নিলয়কে। নিলয়ও আদ্রিয়ানের ডাক শুনে দৌড়ে এগিয়ে আসলো তার দিকে। তারপর এক পলক শুভর দিকে তাকিয়ে বললো সে আদ্রিয়ানকে,
‘ কি হয়েছে?’
‘ ও এখানে কি করছে নিলয়, গত মাসে ওর খরচের টাকা পাঠিয়ে দিস নি?’
নিলয় কিছু বলার আগেই ভিতরে ঢুকে আসলো শুভ তারপর বললো,
‘ আমি এখানে টাকা নিতে আসি নি ভাইয়া, তুমি সবসময় আমার সাথে এমন ব্যবহার করো কেন? শুধু মাসে মাসে টাকা পাঠালেই কি ভাইয়ের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় ভাইয়া?’
শুভর কথার মাঝখানে আদ্রিয়ান কিছুটা ক্ষিপ্ত মেজাজ নিয়ে বললো,
‘ নিলয় ওকে বলে দে ওর যদি কোনো কাজ না থাকে তাহলে ও আসতে পারে?’
আদ্রিয়ানের কথা শুনে ছলছল চোখে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো শুভ,
‘ ভাইয়া তুমি এমন কেন সেই ছোট বেলা থেকেই তুমি আমায় অবহেলা করছো। সেই ছোট বেলার ভুলের জন্য আজও তুমি আমায় শাস্তি দিচ্ছো ভাইয়া। আমি তো তখন খুব ছোট ছি..
শুভ আর কিছু বলার আগেই আদ্রিয়ান রেগে গিয়ে বলে উঠল,
‘ ওকে চলে যেতে বল নিলয়?’
উওরে নিলয় কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না সেই ছোট বেলা থেকে এই দুই ভাইয়ের মধ্যে দ্বন্দ। অনেকবারই নিলয় চেয়েছিল এদের মধ্যে এই দ্বন্দ শেষ করতে কিন্তু বরাবরই আদ্রিয়ানের রাগের কাছে ব্যর্থ সে। নিলয় কিছুটা হতাশ হয়ে বললো আদ্রিয়ানকে,
‘ আদ্রিয়ান একবার একটু,
‘ আমি কোনো কথা শুনতে চাই না নিলয় তুই জাস্ট ওকে যেতে বল?’
আদ্রিয়ানের কথা শুনে অপরাধী ভরা কন্ঠ নিয়ে বললো,
‘ আমায় কি একবার ক্ষমা করা যায় না,প্লিজ আমায় ক্ষমা করে দেও আমি তোমার সাথে থাকতে চাই ভাইয়া। আমার যে একা একা থাকতে ভালো লাগে না।’
শুভর এবারের কথা শুনে আদ্রিয়ান উঠে দাঁড়ালো তারপর নিলয়কপ উদ্দেশ্যে করে বললো,
‘ আমার আর ভালো লাগছে না বাকি কাজগুলো তুই দেখে নিস নিলয়।’
বলেই চলে যেতে নেয় আদ্রিয়ান। আদ্রিয়ানকে যেতে দেখে শুভ দাঁড়ালো আদ্রিয়ানের মুখোমুখি তারপর হতাশা ভরা কন্ঠ নিয়ে বললো সে,
‘ ভাইয়া আমায় কি একবার ক্ষমা করা যায় না। প্লিজ আমায় একবার ক্ষমা করে দেও?’
শুভর কাজে আদ্রিয়ান রাগী কন্ঠে নিলয়কে বলে উঠল,
‘ ওকে আমার সামনে থেকে সরতে বল নিলয়?’
আদ্রিয়ানের কথা শুনে শুভ আদ্রিয়ানের হাত ধরে বললো,
‘ প্লিজ ভাইয়া আমায় ক্ষমা করে দেও?’
শুভর এবারের কাজে আরো বেশি রেগে যায় আদ্রিয়ান। শুভকে ধাক্কা মেরে বেরিয়ে যায় সে অফিস থেকে। আর শুভ হতাশা আর মন খারাপ নিয়ে তাকিয়ে রইলো আদ্রিয়ানের যাওয়ার পানে। প্রচন্ড কান্না পাচ্ছে তাঁর। এমন সময় তার কাঁধে হাত রাখলো নিলয়। নিলয়কে দেখেই বললো সে,
‘ আমায় কি কখনো ক্ষমা করবে না ভাইয়া। আমি তো তখন খুব ছোট ছিলাম বলো?’
উওরে দীর্ঘ শ্বাস ফেললো নিলয়। সে বুঝতে পারছে না এই মুহূর্তে কি বলে সে স্বান্তনা দিবে শুভকে?’
!
!
!
!
!
#চলবে…..
[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আর গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে, এতটা দেরি হওয়ার জন্য সরি সবাইকে,জানি আজকের পার্টটা ছোট আর অগোছালো হয়েছে এর জন্যও সরি]
#TanjiL_Mim♥️