#Fearপর্ব ১

0
897

#Fearপর্ব ১
Writer: #Tanjima_Islam

থেকে থেকে বজ্রপাত হচ্ছে, বাইরে ঝড়ের বেগ বেড়েই চলেছে। সাদা নাইট গাউন পরে একটা মেয়ে তার কোলে থাকা কয়েকমাসের ছোট্ট বাচ্চাটাকে মন ভরে আদর করছে। যেন শেষবারের মতো সব ভালবাসা দিয়ে ভরিয়ে দিচ্ছে বাচ্চাটাকে। কোল থেকে নামিয়ে বাচ্চাটাকে বেডে রেখে জানালার ধারে গিয়ে দাড়ালো সে। জানালার চৌকাঠে পা রেখে পেছন ফিরে শেষবারের মতো দেখল, বাচ্চাটা তার আধো আধো কন্ঠে ডাকছে। মেয়েটা অস্পষ্ট গলায় বলল, “ওরা কেড়ে নিল তোকে!!
আরও কিছু বলল হয়তো যা বজ্রপাতে ঢেকে গেল। মেয়েটা এবার সামনে তাকিয়ে লাফ দিল, তার গগনবিদারি চিৎকার বজ্রপাতের শব্দ চিরে বেরিয়ে এল!!

চিৎকার দিয়ে উঠে বসল ফ্লোরা। দরদর করে ঘাম ছুটছে তার, অথচ এখন শীতকাল। হাত বাড়িয়ে পাশের বেড টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি নিয়ে ঢকঢক করে খেল সে। আজও সেই দুঃস্বপ্ন দেখল, যার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারেনা ফ্লোরা।
শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগল, কে ঐ মহিলা!কেন দেখি বারবার একই স্বপ্ন!! বুঝতে শেখা থেকেই এই অদ্ভুত স্বপ্ন আমাকে তাড়া করছে। অনেকক্ষণ এপাশ ওপাশ করেও ঘুম আসছেনা। বুঝলাম এখন আর ঘুম আসবেনা, ব্লাংকেট সরিয়ে বেড থেকে নেমে একটা উলের সোয়েটার গায়ে দিয়ে ব্যালকনিতে গেলাম।

ভ্যাটিকানে সকালের মিষ্টি রোদ উঁকি দিচ্ছে, এই ওয়েদারে এক মগ কফি হলে মন্দ হয়না।
ফ্লোরা রুম থেকে বেরিয়ে কিচেনে গেল, তিন মগ কফি বানিয়ে আগে বাবা মায়ের রুমে গেল। দরজা ভেজানো ছিল, তাও নক করল ফ্লোরা। ভেতর থেকে মিসেস “ফিয়না সেলজার” ভেতরে আসার জন্য ডাক দিল ফ্লোরাকে। ফ্লোরা হাতে ট্রে নিয়ে ঢুকল, ফিয়না শোয়া থেকে উঠে বসল। ফ্লোরা তার মাকে রুমে একা দেখে জিজ্ঞেস করল, ” কি ব্যাপার আব্বু কোথায়!?
ফিয়না ব্লাংকেট সরিয়ে একটা মগ নিয়ে বলল,” খুব ভোরে বেরিয়েছে, লন্ডনে কি একটা ইমার্জেন্সি কাজ পড়ে গেল।
ফ্লোরা কফিতে চুমুক দিয়ে জিজ্ঞেস করল, “আব্বু লন্ডন গেছে!! আমাকে ডাকোনি কেন!? আমিও যেতাম সাথে।
বলেই গাল ফুলিয়ে রাখল ফ্লোরা। ফিয়না স্মিত হেসে বলল, ” ওহ মাই প্রিন্সেস, এতে মন খারাপ করার কি আছে!? তোমার এক্সাম শেষে আমরা সবাই একসাথে বেড়াতে যাব কেমন!?
ফ্লোরা বেশ খুশি হল, মায়ের সাথে টুকটাক গল্প করতে লাগল ফ্লোরা।
মেইড এলিস এসে ব্রেকফাস্টের জন্য ডেকে গেল। ব্রেকফাস্ট করে ফ্লোরা বেরিয়ে পড়ল, আজ তার ভার্সিটি অফ কিন্ত মেডিটেশন ক্লাস আছে সকাল আটটা থেকে সাড়ে নয়টা পর্যন্ত।

মেডিটেশন ক্লাসে ভর্তি হয়েছে গত সপ্তাহে, আজ তার এখানে প্রথম দিন। ক্লাস শেষে মেইন গেইট দিয়ে বের হতেই হটাৎ পরিচিত কারও ডাক শুনে পেছনে ফিরে তাকালো। মুখ দিয়ে অস্ফুটস্বরে বেরিয়ে এল, “সিয়েরা”
ফ্লোরা আর সিয়েরা একই ভার্সিটিতে পড়ে। ফ্লোরা পেছনে ফিরে বলল,” তুইও এডমিট হয়েছিস নাকি!?
সিয়েরা বলল,” না, তবে হবো। আমার কাজিন এখানে এডমিট হয়েছে প্রায় একমাস, ওর সাথেই এসেছি।
বলতে বলতে একটা ছেলে এসে দাড়ালো সিয়েরার পাশে। সিয়েরা আমার দিকে তাকিয়ে বলল,” এ হল আমার কাজিন ” উইলিয়াম এডমন্ড”।
এডমন্ডের দিকে তাকিয়ে বলল, ” আমার ফ্রেন্ড ফ্লোরা সেলজার।
এডমন্ড ছেলেটা বেশ লম্বাচওড়া, সাদা শার্টের ওপর কালো জ্যাকেট পরেছে, ঝাকড়া চুল গুলো হাত দিয়ে বারবার ওল্টাচ্ছে। ফর্সা গালে খোচাখোচা দাড়ি।
সিয়েরা আর এডমন্ডের সাথে আড্ডা দিতে দিতে কখন যে সাড়ে দশটা বেজে গেল খেয়াল নেই। সিয়েরা আর এডমন্ড চলে গেল আর আমি বাসায় ফেরার পথ ধরলাম।
এখান থেকে আমার বাসা বেশি দূরে না, হেটে গেলে দশ মিনিট লাগে। ট্যাক্সিতে না উঠে হেটে চলেছি, হাটতে হাটতে হটাৎ রোডের পাশে একটা পুরাতন লাইব্রেরি দেখলাম। অন্যমনস্ক হয়ে চলায় একটা গাছের সাথে গিয়ে বাড়ি খেলাম। লাইব্রেরি থেকে একজন মধ্যবয়সী মহিলা বেরিয়ে এসে জিজ্ঞেস করল, ” ঠিক আছো ডিয়ার!?
স্মিত হেসে বললাম, ” জি ঠিক আছি।

বলেই চলে এলাম বাসায়। শাওয়ার নিয়ে বের হলাম, রুমে বসে খাতায় আঁকিবুঁকি করছি, কখন জানি ঘুমিয়ে গেছি।
সেই একই দুঃস্বপ্ন দেখে ধড়ফড়িয়ে উঠলাম। কিন্ত অবাক হলাম এই ভেবে যে, এর আগে কখনও দিনের বেলায় ঘুমালে ঐ দুঃস্বপ্ন দেখিনি। কিন্ত আজ!! আজ ঐ মহিলার বলা অস্পষ্ট কথা গুলো যেন অনেকটাই স্পষ্ট লাগল। মাথা দুহাতে চেপে মনে করার চেষ্টা করলাম কি দেখেছি।
বেশ কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে থেকে চোখের সামনে সেই দৃশ্য ফুটে উঠল, সেই মহিলা বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে বলল,” ওরা কেড়ে নিল তোকে!! হা ঈশ্বর ক্ষমা করো আমায়।
কিন্ত বাকি কথাটা শোনার আগেই লাফ দিল মহিলা। আর প্রতিবারের মতো এবারো তার চিৎকারে ঘুম ভাংলো আমার।

ফ্লোরা খেয়াল করল আজকাল দুঃস্বপ্নটা একেবারে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে তাকে। নাহ আর সম্ভব না, এভাবে চলতে থাকলে একসময় ইনসোমনিয়া হয়ে যাবে তার। ফ্লোরা উঠে তার মায়ের রুমে গেল, কিন্ত তাকে রুমে না পেয়ে মেইড এলিসকে জিজ্ঞেস করল।
এলিস বলল,” ম্যাম ছাদে গেছে।
ফ্লোরা সোজা ছাদে চলে গেল, গিয়ে দেখল মিসেস ফিয়না হাতে গ্লাভস পরে গার্ডেনে অর্কিড লাগাচ্ছে। ফ্লোরা ধীর পায়ে তার পাশে গিয়ে বলল,” আম্মু, আজ দুইবার সেই দুঃস্বপ্ন দেখেছি।

আচমকা কারও কন্ঠঃ পেয়ে পেছনে ফিরল মিসেস ফিয়না, মেয়েকে দেখে কিছুটা সস্তি পেল। জিজ্ঞেস করল, ” কি বললে!?
ফ্লোরা ধৈর্য হারিয়ে কিছুটা চিৎকার করে বলল,” সেই দুঃস্বপ্ন, সেই দুঃস্বপ্ন যা আমাকে একটা রাত শান্তিতে ঘুমাতে দেয়না।
মিসেস ফিয়না কিছুটা ইতস্ততভাবে বলল, ” কাম ডাউন ফ্লোরা, এটা জাস্ট একটা দুঃস্বপ্ন। এটা নিয়ে টেনশনের কিছু নেই।
ফ্লোরা অসহায় চোখে তাকালো, ফিয়না তার কাধে হাত রেখে বলল,” যদি চাও তো কোনো সাইকিয়াট্রিস্টকে দেখাই তোমাকে!?
ফ্লোরা বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে বলল, ” আমাকে কি তোমার পাগল মনে হয়!?
ফিয়না কাপা কাপা গলায় বলল, ” তা কেন হবে ডিয়ার!? আমার মনে হয় তোমার ইনসোমনিয়া হয়েছে। ডক্টর দেখালে ঠিক হয়ে যাবে দেখো।
ফ্লোরাও যেন কিছুটা সস্তি পেল, তার পক্ষে আসলেই আর সহ্য করা সম্ভব হচ্ছেনা।

ডক্টর সার্জিও হ্যালোরানের চেম্বারে বসে আছে ফ্লোরা আর মিসেস ফিয়না সেলজার। সার্জিও জিজ্ঞেস করল, ” তো বলেন, কি প্রবলেম!?
মিসেস ফিয়না হালকা কেশে বলল,” আমার মেয়ে রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারেনা, ঘুমালেই অদ্ভুত সব দুঃস্বপ্ন দেখে।
সার্জিও মাথা নাড়িয়ে বলল, “আমি আপনার মেয়ের সাথে একান্তে কথা বলতে চাই।

ফিয়না বেরিয়ে গেলে সার্জিও ভাল করে দেখল ফ্লোরাকে, লম্বাচওড়া মিডিয়াম স্বাস্থ্যের মেয়ে ফ্লোরা। বেঙস লেয়ার কাট দেয়া চুল গুলো এক সাইডে ক্লিপ দিয়ে আটকে রেখেছে, কিন্ত সামনের কাটা চুল গুলো কয়েকটা বেরিয়ে আছে।
সার্জিও হালকা হেসে বলল, ” তো মিস আপনার নাম!?
ফ্লোরা বলল,” ফ্লোরা সেলজার।
সার্জিও বলল, “আমি সার্জিও হ্যালোরান।

টুকটাক কথায় ফ্লোরা বেশ বন্ধুর মতো হয়ে গেল সার্জিওর সাথে। অবশ্য এটা সার্জিওর একটা টেকনিক, সে তার পেশেন্ট এর সাথে আগে বন্ধুত্ব করে নেয়।
ফ্লোরাকে অ্যানালাইসিস করা শেষে বাইরে যেতে বলল, মিসেস ফিয়না ভেতরে ঢুকল। সার্জিও বলল,” আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করার আছে।
ফিয়না মাথা নাড়িয়ে বলল,” জি, করুন।
সার্জিও বলল,” ফ্লোরার কি লাইফে কোনো খারাপ অতীত আছে!?
ফিয়না বেশ থতমত খেয়ে বলল,” জি, মানে!! কিসের অতীত!?
সার্জিও বেশ নড়েচড়ে বসে ফিয়নার চোখে চোখ রেখে বলল, “ফ্লোরাকে দেখে ইটালিয়ান বলে মনে হল না, কিছুটা ইংরেজদের মতো গঠন ওর। আর আপনিতো ইটালিয়ান, তাহলে আপনার হাসব্যান্ড কি ইংল্যান্ডের বাসিন্দা!?
সার্জিও খেয়াল করল ফিয়না বেশ আনইজি ফিল করছে। এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিল ফিয়নার দিকে। ফিয়না ঢকঢক করে পানি খেল। বুক ধড়ফড় করছে তার, কাপা কাপা গলায় বলল, ” আমার মেয়ের কি হয়েছে ডক্টর!!?
সার্জিওর বেশ খটকা লাগল ব্যাপারটা, শান্ত গলায় বলল,”ফ্লোরার কোনো একটা খারাপ অতীত আছে যা তার স্মৃতিতে অস্পষ্ট। আর সেই অস্পষ্ট স্মৃতি দেখে ভয়ে ঘুমাতে পারছেনা ফ্লোরা। এখন এই সমস্যা থেকে বের হতে গেলে, আগে জানতে হবে
সার্জিওকে কিছু বলতে না দিয়ে ফিয়না বেশ কর্কশ কন্ঠে বলল, ” কিসের খারাপ অতীত!! কোনো অতীত নেই ফ্লোরার। ফ্লোরা আমার মেয়ে, ও সুস্থ আছে। কিছু হয়নি ওর।

বলেই হনহন করে বেরিয়ে গেল। সার্জিও অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো ফিয়নার চলে যাওয়ার দিকে।

(চলবে)
কেমন লাগল জানাবেন, ভাল লাগলে নেক্সট পার্ট দিব।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here