#Fearপর্ব ২

0
298

#Fearপর্ব ২
Writer: #Tanjima_Islam

“কা’ফসকারি ইউনিভার্সিটি অব ভেনিস” এর ফিলোসোফি অ্যান্ড কালচারাল হেরিটেজ ডিপার্টমেন্টের স্টুডেন্ট ফ্লোরা।
ক্লাস চলছে, প্রায় সবাই মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করছে। ফ্লোরা ক্লাসে বসে আছে ঠিকই কিন্ত তার মাথায় ঘুরছে অন্য কিছু।

গত পরশুদিন ডক্টর সার্জিওর চেম্বার থেকে হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে ফ্লোরাকে নিয়ে সোজা বাসায় চলে গেল মিসেস ফিয়না। তাকে বেশ অস্থির লাগছে, বারবার টিস্যু দিয়ে চোখমুখ মুছছে আর ফ্লোরার হাত শক্ত করে ধরছে।
ফ্লোরা বেশ অবাক হয়েছে তার মায়ের এমন অদ্ভুত কর্মকান্ডে। বাসায় ফিরে ফিয়না সোজা নিজের রুমে চলে গেল, সারাটাদিন নিজেকে রুমেই বন্দি করে রাখল।
মেইড এলিস দুপুরে লাঞ্চ করার জন্য ডাকলে, ফিয়না সাফ জানিয়ে দিয়েছে তাকে যেন কেউ বিরক্ত না করে।
ফ্লোরা ভেবে পাচ্ছেনা এমন কি হল যে আম্মু এভাবে রিয়াক্ট করছে। ডক্টর সার্জিও কি এমন বলল!!! তাহলে কি আমি সত্যিই পাগল হয়ে যাচ্ছি!? এজন্যই আম্মু টেনশন করছে!!?
ফ্লোরা সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে মায়ের রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।

সন্ধ্যা নেমেছে, ঠাণ্ডা বেশ কমে গেছে, শীতকাল চলে যাচ্ছে। ফিয়না জানালার পাশে দাড়িয়ে রাতের শহর দেখছে, দিনের বেলায় রৌদ্রজ্জল আর রাত নামলেই কৃত্রিম আলোর ঝলকানিতে ছেয়ে যায় ভ্যাটিকান সিটি।
এলিস ওয়াশ করা কাপড় গুলো ভাজ করে ওক কাঠের তৈরি বিশাল আলমারিতে রাখছে। গোছানো শেষে বেরিয়ে যেতেই, ফিয়না গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল। কিন্ত তাড়াহুড়ায় লক ঠিক মতো না করেই জানালার ধারে দাড়িয়ে ফোন হাতে নিল। স্বামী প্রিয়েতো সেলজারকে ফোন দিল সে।

লন্ডনের এক বিলাসবহুল হোটেলের রুমে ঘুমোচ্ছে প্রিয়েতো, এই কদিন বাইরের ক্লায়েন্টের সাথে বিভিন্ন মিটিং করে রেস্ট নিচ্ছে সে।
দুবার রিং বাজতেই রিসিভ করল প্রিয়েতো, রিসিভ করতেই ফিয়না আতংকিত গলায় বলল,” ফ্লোরা বোধহয় এবার সব জেনে যাবে!! কি করব আমি!? প্রিয়েতো!!!
প্রিয়েতো ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলল, “আহ, ফিয়না। এ আর নতুন কি!! ও তো সেই ছোট থেকেই এসব অদ্ভুত দুঃস্বপ্ন দেখছে। এতে ভয় পাওয়ার কি আছে!?
ফিয়না ধৈর্য হারিয়ে বলল,” ফ্লোরা এখন আর ছোট নেই, ও ইদানীং খুব কৌতুহলী হয়ে উঠেছে এ ব্যাপারে। এমনকি ডক্টরও বলেছে
ফিয়নাকে আর বলতে না দিয়ে প্রিয়েতো বাজখাঁই কন্ঠে চেচিয়ে বলল, ” ডক্টর বলেছে মানে!? ডক্টর দেখাতে কে বলল!!!
ফিয়না কিছুটা ইতস্ততভাবে বলল, “ফ্লোরা যেতে চেয়েছিল, আমি না করলে হয়তো ও একাই চলে যেত।
প্রিয়েতো চোখ বন্ধ করে এক হাত দিয়ে মুখে জোরে জোরে বোলাতে লাগল। কিছুটা সংযত হয়ে বলল,” আচ্ছা, টেনশন করোনা। ও কিছুই জানতে পারবেনা।
ফিয়না কিছুটা শান্ত গলায় বলল, ” আচ্ছা, আর তুমি কবে ফিরবে”?
প্রিয়েতো বলল,” আজই।
বলেই ফোন কেটে দিল প্রিয়েতো।

ফিয়না ফোন রেখে পেছনে তাকাতেই চমকে উঠল, ফ্লোরা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। ফিয়না একটা ঢোক গিলে বলল, ” কি, কিছু বলবে ফ্লোরা!?
ফ্লোরা বলল,” দুপুরে লাঞ্চ করোনি, খাবে চলো।
ফিয়না সস্তির নিঃশাস ফেলে বলল,” হ্যাঁ হ্যাঁ, খিদে পেয়েছে খুব, চলো খেয়ে নিই।
বলেই দ্রুত পায়ে বেরিয়ে গেল রুম থেকে।
ফ্লোরা সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে। ভাবছে কি যেনে যাবো আমি!? কি লুকাচ্ছে বাবা-মা আমার থেকে!!

সিয়েরার ডাকে ভাবনায় ছেদ পড়ল ফ্লোরার। ক্লাস শেষ, বেরিয়ে ক্যাম্পাসের ভেতর হাটতে লাগল।
ক্যাম্পাসে স্টুডেন্টরা আড্ডা দিচ্ছে, কেউ ছবি তুলছে আবার কেউ বইয়ের পাতায় মুখ গুজে আছে। এডমন্ডকে দেখল ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে, ভার্সিটির মেয়েদের ক্রাশদের একজন সে। এডমন্ড এই ভার্সিটিতেই পড়ে, “মলিকিউলার সায়েন্স অ্যান্ড ন্যানোসিস্টেম” ডিপার্টমেন্টের স্টুডেন্ট সে, ফ্লোরার থেকে তিন বছর সিনিয়র। ছেলেটা বেশ হাসিখুশি টাইপের, আড়চোখে দেখতে দেখতে এডমন্ডের সাথে চোখাচোখি হতেই চোখ নামিয়ে নিল ফ্লোরা। আবার তাকিয়ে দেখল এডমন্ডও তার দিকে তাকিয়ে আছে। লজ্জায় আরক্তিম হয়ে উঠল ফ্লোরা, আর তাকানোর সাহস পেল না।

হটাৎ ক্যাম্পাসের একটা পিচ ট্রি এর দিকে চোখ আটকে গেল ফ্লোরার। গোলাপি ফুলে ছেয়ে থাকা গাছের নিচে একটা সাদা নাইট গাউন পরা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে !! এতো সেই মেয়ে!! যাকে সে প্রতিরাতে স্বপ্নে দেখে!! ফ্লোরা থেমে গেল, তাকিয়ে রইলো মেয়েটার দিকে।
সিয়েরা কিছুদূর গিয়ে দেখল ফ্লোরা ওর পাশে নেই, পেছনে তাকিয়ে দেখল ফ্লোরা অদ্ভুত ভাবে অদূরে দাড়ানো পিচ ট্রি এর দিকে তাকিয়ে আছে। কাছে গিয়ে ফ্লোরাকে ডাকতেই, চমকে উঠল সে। সিয়েরা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, ” কি হয়েছে ফ্লোরা!?
ফ্লোরা প্রায় সাথে সাথেই সেই পিচ ট্রি এর দিকে তাকালো। কিন্ত সেই মেয়েকে দেখতে পেলনা, কিছুক্ষণ এদিক ওদিক তাকিয়ে বলল,” না, কিছুনা, চল।
সিয়েরা জিজ্ঞেস করল,” গতকাল ক্লাসে এলি না যে!?
ফ্লোরা বলল, “এমনিই ভাল লাগছিল না। আচ্ছা শোন, তুই না ড্যান্স ক্লাস করিস!?
সিয়েরা মাথা নাড়িয়ে সায় দিয়ে বলল, ” কেন তুই এডমিট হবি!?
ফ্লোরা বলল, ” হুম, আসলে রাতে ঠিকমতো ঘুম হয়না। ক্লাস শেষে বাসায় গিয়ে বোর হয়ে যাই, ড্যান্স করলে বাসায়ও প্রাক্টিস করবো। তখন ক্লান্ত হয়ে যদি ঘুম আসে!!
শেষের কথাটা বেশ রসিকতা করে বলল ফ্লোরা, যাতে সিয়েরা কিছু বুঝতে না পারে। সিয়েরা হেসে বলল, ” ঠিক আছে, এখন তো আমার ড্যান্স ক্লাস আছে, চল তাহলে আজই এডমিট হবি।

মিসেস ফিয়না রুমে বসে ইয়োগা করছে। বেশ কয়েকদিন ইয়োগা না করায়, ব্যাক সাইড পেইন টা আবার বেড়েছে তার।
“ক্যাট ক্যামেল” টার্ম করছে সে, দুহাতে ভর দিয়ে দুই পায়ের হাটু গেড়ে পায়ের পাতা পেছনে দিয়ে। কোমরের সাথে তাল মিলিয়ে মাথা উঁচু নিচু করতে করতে হটাৎ থমকে গেল ফিয়না।

তার পেছনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে!! দুই পায়ের ফাক দিয়ে শুধু এক জোড়া সাদা ফ্যাকাশে পা দেখতে পাচ্ছে ফিয়না। কপালের দুই ধার বেয়ে ঘাম ঝরছে তার, মাথা ঘুরিয়ে দেখার সাহস পাচ্ছেনা!! চোখ মুখ কুচকে বন্ধ করে মাথা ঘুরিয়ে তাকালো ফিয়না, নাহ কেউ নেই!! সস্তির নিঃশাস ফেলে মাথা ঘুরিয়ে সামনে তাকাতেই চমকে উঠল সে, আগাগোড়া সাদা কাপড়ে মোড়া কেউ তার মুখ বরাবর বসে আছে। চোখ ঠিকরে বেরিয়ে আসার উপক্রম হলো ফিয়নার। তড়িৎ গতিতে ছিটকে পড়ল, বেডের সাইডে বাড়ি খেয়ে উল্টে পড়ল সে।
সচকিত হয়ে এদিক ওদিক তাকালো ফিয়না, পুরো রুমে সে একা। জোরে জোরে শাস নিচ্ছে সে, মনে হচ্ছে কেউ যেন তার বুকে হাতুড়ি পেটা করছে!!

ফ্লোরা একটা বেঞ্চে বসে আছে, সিয়েরা ওকে এডমিট করার ফর্ম ফিল আপ করে জমা দিতে গেছে।
ফ্লোরা চারিপাশে তাকাচ্ছে, বিভিন্ন বয়সের মেয়েরা ড্যান্স প্রাক্টিস করছে।
হটাৎ দেখল কাচের দরজার ওপাশে ডক্টর সার্জিও দাঁড়িয়ে কার সাথে যেন কথা বলছে।
ফ্লোরা উঠে দরজা খুলে সার্জিওর পাশে গিয়ে দাড়ালো, সার্জিও বেশ হাসি মুখে জিজ্ঞেস করল, ” মিস ফ্লোরা রাইট!?
ফ্লোরা স্মিত হেসে বলল, “জি, কেমন আছেন!?
সার্জিও বলল,” জি ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন!?
ফ্লোরা উত্তর না দিয়ে উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞেস করল, “সেদিন আম্মুকে কি বলেছেন!? আমি কি পাগল হয়ে যাচ্ছি!?
সার্জিও অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো ফ্লোরার দিকে, তারপর বলল,” আরে আপনি পাগল হতে যাবেন কেন!? আমার ধারণা আপনি যে দৃশ্য দেখে ভয় পান, রাতে ঘুমাতে পারেন না সেটা হয়তো আপনার সামনেই ঘটেছে, আর সেটা অনেক ছোট বেলায় হওয়ার কারণে ঠিকঠাক মনে নেই আপনার।

ফ্লোরার কেন জানি মনে হচ্ছে সার্জিওর সাথে এ ব্যাপারে ওর বিস্তারিত আলোচনা করা দরকার। কারণ আর কেউ ফ্লোরার এই দুঃস্বপ্নকে পাত্তা না দিলেও সার্জিও বেশ সিরিয়াসভাবে নিয়েছে।
ফ্লোরা বলল, ” আপনার সাথে কিছু কথা আছে।
সার্জিও বলল,” জি বলুন।
ফ্লোরা মাথা নাড়িয়ে না করে বলল, ” না এখানে না। সময় নিয়ে কোথাও বসে কথা বলতে চাই। সার্জিও অবাক হলেও বলল,” ঠিকাছে, কাল আমার অফ ডে, কাল কোথাও দেখা করি!?

ঘড়ির কাটায় দুপুর তিনটা সতেরো বাজে। ফ্লোরা বাসায় ঢুকে সোজা রুমে চলে গেল। ফ্রেশ হয়ে শাওয়ার নিয়ে তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে বের হল। মেইড এলিস এসে ডেকে গেল লাঞ্চ করতে।
ফ্লোরা ড্রেস পরে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে চুল ঠিক করতে লাগল। হটাৎ পায়ের তলায় ড্রয়িং পেপার পড়ে থাকতে দেখে হাতে নিয়ে দেখল, তাতে একটা গাছ আকানো আর পাশেই সাদা নাইট গাউন পরে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে!!
চমকে উঠল ফ্লোরা, আজ ক্যাম্পাসে দেখা সেই দৃশ্য ওর ড্রয়িং খাতায় আকানো!!! ফ্লোরার হাত পা হিস্টিরিয়া রোগীর মতো কাপছে!! কাপতে কাপতে ফ্লোরে লুটিয়ে পড়লো ফ্লোরা, ঝাপসা চোখে দেখল আগাগোড়া সাদা কাপড়ে মোড়া কেউ ওর দিকে এগিয়ে আসছে!!!

(চলবে)

বিঃদ্রঃ অনেকেই রিকুয়েষ্ট করছেন #Lucifer গল্পটা কন্টিনিউ করতে। তাদের জন্য গুড নিউজ😊, “চলমান #Fear গল্প শেষ হলে #Lucifer গল্পটা লিখব, কিন্ত গল্পটাতে কিছুটা চেঞ্জ আনব।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here