#Fearপর্ব ৮

0
344

#Fearপর্ব ৮
Writer : Tanjima Islam

সার্জিও আর প্রিয়েতো অবাক হয়ে ফাদার মারিনোর দিকে তাকালো।
ফাদার মারিনো বলল,” রুমে তিন জনই আছে।
ব্যাপারটা নিয়ে বেশ চিন্তিত হয়ে পড়ল সবাই, আরেকজন কে আছে ভেতরে!?
প্রিয়েতো জিজ্ঞেস করল, ” এখন কি করব ফাদার!? আমার স্ত্রী সন্তানকে কিভাবে রক্ষা করব!?
ফাদার বাইবেলের পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে থেমে গিয়ে বলল,” শয়তান যে দেহে প্রবেশ করবে, সেই দেহকে জালিয়ে পবিত্র পানি ছিটাতে হবে।
সার্জিও চমকে উঠে বলল,” তার মানে তিন জনের একজনকে মরতে হবে!!??
ফাদার মাথা নাড়িয়ে সায় দিল। প্রিয়েতোর প্রাণ যায়যায় অবস্থা, স্ত্রী সন্তানকে বুঝি এবার চিরতরে হারাতে চলল সে। প্রিয়েতো আতংকিত হয়ে বলল,” শয়তানটা তৃতীয় ব্যক্তির দেহে প্রবেশ করলেই জালিয়ে দিয়েন। আমার স্ত্রী সন্তানকে বাচান ফাদার।
ফাদার রেগেমেগে উঠে বলল,” এ তুমি কি বলছ প্রিয়েতো!! যাকে মারতে চাইছো সেও তো কারও না কারও সন্তান। এ অন্যায় আমি কিছুতেই করতে পারবনা।
সার্জিও কোনোরকমে ফাদারকে শান্ত করে বলল, ” ক্ষমা করবেন ফাদার, আসলে প্রিয়েতোর ব্যাপারটা তো বুঝতেই পারছেন। স্ত্রী সন্তানকে এমন ভয়ংকর বিপদে দেখলে কে শান্ত থাকতে পারে বলুন!! প্রিয়েতোর কথা বাদ দিন, ওদেরকে কিভাবে বাচাবো!! উপায় বলুন ফাদার।
ফাদার মারিনো কিছুটা শান্ত হয়ে সাথে আনা স্যুটকেস থেকে দুটো ক্রুশ বের করে এগিয়ে দিয়ে বলল,” আগে এটা পরে নাও, ঈশ্বর আমাদের সহায় হোন।

রাত নেমেছে, ঘড়িতে সাড়ে নয়টা বাজতে যাচ্ছে। মিসেস এলিটা সোফায় বসে টিভি দেখছে, একের পর এক চ্যানেল চেঞ্জ করছে সে। একসময় বিরক্ত হয়ে টিভি অফ করে দিল, ছেলেটা এখনও বাড়ি ফেরেনি তার। রাত যে খুব বেশি হয়েছে তা নয়, মাত্র সাড়ে নয়টা। কিন্ত চিন্তা হচ্ছে সেই সকালে ছেলেটা বেরিয়েছে, এখনও বাড়ি ফেরেনি। ফোনও অফ, হটাৎ সিয়েরার কথা মনে পড়তেই ফোন হাতে নিল এলিটা।
দুইবার রিং বাজতেই রিসিভ করল সিয়েরা। এলিটা উদ্বিগ্ন হয়ে বলল,” সিয়েরা!! আজ কি এডমন্ডের সাথে তোর দেখা হয়েছে!?
সিয়েরা বলল,” হ্যা আন্টি, ক্লাস শেষে দেখা হয়েছিল। কেন কি হয়েছে!?
এলিটা বলল,” ছেলেটা সেই যে সকালে বেরিয়েছে এখনও বাড়ি ফেরেনি।
সিয়েরা কিছুটা অবাক হল, এডমন্ড এখনও বাড়ি ফেরেনি মানে কি!? ও কি এখনও ফ্লোরাদের বাসায়!! ধুর এখনও ওখানে বসে কি করবে!? নাকি ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে!!
সিয়েরার মাথায় নানানকিছু ঘুরপাক খাচ্ছে। মিসেস এলিটা ডাক দিল,” সিয়েরা!?
এলিটার ডাকে সম্বিত ফিরে সিয়েরা বলল, ” আন্টি তুমি চিন্তা করোনা, নিশ্চয়ই কোনো ফ্রেন্ডের সাথে আছে। ফোনে হয়তো চার্জ নেই, আমি ওর ফ্রেন্ডদের কাছে খোজ নিয়ে জানাচ্ছি।

বলেই কল কেটে দিল, সিয়েরার কথায় এলিটা কিছুই সস্তি পেলেও দুশ্চিন্তা দূর হচ্ছেনা।

সিয়েরা কল দিল এডমন্ডকে, নাম্বার অফ। ওর ফ্রেন্ডদের ফোন দিল, এডমন্ড তাদের সাথে নেই। সিয়েরা এবার ফ্লোরাকে ফোন দিল, একমাত্র সেই বলতে পারবে এডমন্ড কোথায়।

এদিকে সিড়ি বেয়ে ফাদারের পিছু পিছু উঠছে সার্জিও আর প্রিয়েতো। ফাদারের এক হাতে রূপোর বড় ক্রুশ আরেক হাতে পবিত্র পানি। সার্জিও আর প্রিয়েতোর হাতে দুটো বড় বড় মোমবাতি জ্বলছে।
ফ্লোরাদের বাসায় পিনপতন নীরবতা ঘিরে আছে, বাসার সামনের লাইটপোস্টের নিচে কতগুলো কুকুর ঘেউঘেউ করছে। ঘড়ির কাটা জানান দিচ্ছে রাত দশটা বাজে।
ফ্লোরার রুমের সামনে গিয়ে ফাদার দরজায় পবিত্র পানি ছিটালো। চট করে দরজার লক খুলে গেল, দরজা খোলার সাথেসাথে বিশ্রী মাংস পোড়া গন্ধ নাকে এল। বিশ্রী গন্ধে প্রিয়েতোর পেটের নাড়িভুড়ি বেরিয়ে আসার উপক্রম হলো। সার্জিও এক হাত দিয়ে পকেট থেকে রুমাল বের করে নাকে চেপে ধরেছে।
গুমোট অন্ধকার আর দুটো মোমবাতির আলো মিলে অদ্ভুত আলোছায়া খেলছে রুমের ভেতরে। মোমবাতি ঘুরিয়ে বেডের দিকে তাকালো সার্জিও।
বেডে কাউকে পড়ে থাকতে দেখে এগিয়ে গেল সে, একটা ছেলে পড়ে আছে!! প্রিয়েতোর দিকে তাকিয়ে ইশারায় জিজ্ঞেস করল সার্জিও,” কে এটা!?
প্রিয়েতো ভালভাবে মুখ দেখতে পাচ্ছেনা, মোমবাতি এগিয়ে ধরে দেখল। মাথা নাড়িয়ে না করে বলল, ” চিনতে পারছি না, পরিচিত কেউ নয়।
সার্জিও বেডের পাশ থেকে সরে যেতেই পায়ে কিছু ঠেকল। মোমবাতি নিচু করে দেখল কলেজ ব্যাগ। ভাবল এটা হয়ত এই ছেলের, ব্যাগটা উঠিয়ে চেইন খুলে বইখাতা বের করল, বইখাতা বের করতে গিয়ে একটা আইডিকার্ড পেল সার্জিও। প্রিয়েতো জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সার্জিও কার্ড হাতে নিয়ে বলল,”
কা’ফসকারি ইউনিভার্সিটি অব ভেনিস!! মলিকিউলার সায়েন্স অ্যান্ড ন্যানোসিস্টেম ডিপার্টমেন্টের স্টুডেন্ট!!
সার্জিওর বুঝতে বাকি নেই ছেলেটা ফ্লোরার ভার্সিটির স্টুডেন্ট এবং অবশ্যই তার পরিচিত কেউ।
হটাৎ ফাদারের ডাকে চমকে পেছনে ফিরল প্রিয়েতো, সার্জিও ব্যাগ রেখে উঠে দাড়ালো। ফাদার রুমের দেওয়ালে, ওপরে ছাদের দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে। ফাদারের চোখ অনুসরণ করে তারাও তাকালো। ওপরে ছাদে অজস্র আঁকিবুঁকির চিহ্ন, তার মাঝে মাঝে মোটা কালি দিয়ে লেখা,” আমি ফিরে এসেছি প্রিয়েতো!!
লেখাটা দেখে আঁতকে উঠল প্রিয়েতো, পরক্ষণেই রুমের দেওয়ালে তাকালাম। দেওয়ালেও অজস্র আঁকিবুঁকির চিহ্ন, তার মাঝে রক্ত দিয়ে লেখা,” আমার লিটল প্রিন্সেস শুধু আমার।
প্রিয়েতো চিৎকার করে বলল, ” লরা!! আমি পাপ করেছি! তুমি আমাকে শাস্তি দাও কিন্ত আমার মেয়েকে আমার থেকে কেড়ে নিও না।

ফাদার বাইবেল খুলে জোরে জোরে পড়তে লাগলেন। হটাৎ রুমের কোনায় কে যেন বসা থেকে উঠে দাড়ালো। মোমবাতি ঘুরিয়ে তাকালাম, সাদা নাইট গাউন পরে দাঁড়িয়ে আছে ফ্লোরা। অসম্ভব ফ্যাকাসে মুখে পোড়া কয়লার মতো দুটো চোখ!!
বাইরে বজ্রপাত শুরু হল, ফাদার বাইবেল পড়েই যাচ্ছেন। রুমের ভেতর জিনিসপত্র ভাংচুর হচ্ছে, বাইরের ঝড় ছাপিয়ে রুমের মধ্যেকার ঝড় যেন তীব্র হয়ে উঠেছে!! হাতে থাকা মোমবাতি গুলোও নিভে গেল।
থেকে থেকে বজ্রপাত হচ্ছে, ফ্লোরা বাইবেল শুনে আকাশ বাতাস কাপিয়ে চিৎকার করছে।
অসহ্য অপার্থিব চিৎকারে গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। ফাদার দম নিতে একটু থামতেই, ফ্লোরা এসে ফাদারের গলা চেপে ধরল। ফাদারের হাত থেকে বাইবেল পড়ে গেছে, সার্জিও দ্রুত গিয়ে বাইবেল খুলে পড়তে লাগল। প্রিয়েতো ভয়ে আতংকে কেপে কেপে উঠছে, শয়তানটা ফাদারকে শূন্যে তুলে ছুড়ে মারল দেওয়ালে। ফাদার নিস্তেজ হয়ে পড়ল, সার্জিও অবিরত বাইবেল পড়ে চলেছে।
প্রিয়েতো ছুটে ফাদারের কাছে গেল, ফাদারের মুখ দিয়ে রক্ত উঠছে, চোখ যেন কোটর ছেড়ে বেরিয়ে আসতে চাইছে তার। ফাদার মারিনো চাপা গলায় বলল,” নিজ ইচ্ছায়, নিজ ইচ্ছায় শয়তানকে দেহ গ্রহণ করার জন্য ডাকতে হবে। দেহে প্রবেশ করলে
আর বলতে পারল না ফাদার, প্রিয়েতোর হাতেই জীবনের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করল সে।

এদিকে সার্জিও অবিরত বাইবেল পড়তে শুনতে পেল ফ্লোরা তাকে ডাকছে। পড়ার গতি কমিয়ে দিয়ে তাকালো সামনে, ফ্লোরা তার দিকে তাকিয়ে করুন সরে বলল,” ওহ সার্জিও। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে, আমাকে বাচাও।
সার্জিও পড়া থামিয়ে বলল, ” কিচ্ছু হবেনা তোমার, সব ঠিক হয়ে যাবে ফ্লোরা।
ফ্লোরা কাদোকাদো হয়ে বলল,” আমার খুব কষ্ট হচ্ছে, আমার কাছে এসো।
সার্জিওর খুব মায়া লাগল, ফ্লোরার দিকে যেতেই ফ্লোরা মৃদু চিৎকার করে বলল,” হাতের ওটা রেখে এসো।
সার্জিও ভ্রু কুচকে তাকালো, ফ্লোরা আবারও কাদোকাদো হয়ে বলল, ” আমাকে বাচাও প্রিয়!
সার্জিওর কি হল কে জানে, বাইবেল হাত থেকে ফেলে দিয়ে মন্ত্রমুগ্ধের মতো ফ্লোরার দিকে এগিয়ে গেল। ফ্লোরা বাকা হেসে বিদ্যুৎ গতিতে হাওয়ায় ভেসে সার্জিওকে শূন্যে তুলে ধরল। সার্জিও সম্বিত ফিরে দেখল, সে হাওয়ায় ভাসছে। গলার চামড়া পুড়ে যাচ্ছে, ঝাপসা চোখে দেখল ফ্লোরা ক্রুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। অনেকক্ষণ ধস্তাধস্তির পর গলায় ঝুলানো ক্রাইস্ট লকেট তুলে ধরল ফ্লোরার সামনে। আতংকিত হয়ে দূরে সরে গেল ফ্লোরা, দেওয়াল বেয়ে টিকটিকির মতো উঠে গেল। সার্জিও আছড়ে পড়লো ফ্লোরে, মাথা ধরে উঠে বসল।
হটাৎ প্রিয়েতোর গলা পেয়ে চমকে তাকালো সার্জিও, প্রিয়েতো জানালার ধারে দাড়িয়ে জোরে জোরে ডাকছে,” এসো লরা, গ্রহণ কর এ দেহ। এসো লরা, এসো লরা, এসো!
প্রায় সাথে সাথেই ফ্লোরার দেহ আছড়ে পড়লো ফ্লোরে, প্রিয়েতো একটা লাইটার ছুড়ে দিল সার্জিওর দিকে।
করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, “এ ছাড়া আর কোনো উপায় নেই, আমার পরিবারকে দেখো।

ঘন ধোয়া পাক খেতে খেতে প্রিয়েতোর দেহে প্রবেশ করল। প্রিয়েতো গগনবিদারী চিৎকার দিল, সার্জিও উপায় না পেয়ে লাইটারটা জালিয়ে ছুড়ে মারল প্রিয়েতোর দেহে। চোখের পলকেই আগুনে জলে উঠলো প্রিয়েতোর দেহ। জলতে জলতে জানালা দিয়ে উল্টিয়ে নিচে পড়ল প্রিয়েতোর জলন্ত দেহ।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here