#Fearপর্ব ৬

0
257

#Fearপর্ব ৬
Writer: Tanjima Islam

ঘড়িতে রাত প্রায় আড়াইটা বাজে, আকাশে ঝুলে থাকা রূপালী চাঁদটা হটাৎ করেই ঘন কালো মেঘের আড়ালে লুকিয়ে পড়ল।
ফ্লোরার গরাদহীন ব্যালকনিতে আগাগোড়া সাদা কাপড়ে মোড়া কেউ পায়চারি করছে।

ফ্লোরার ঘুম খুব পাতলা, ছোট থেকেই আতংকে থেকে থেকে তার ঘুম হত না ঠিকমতো।
হটাৎ মুখের ওপর কারও ভারী নিঃশ্বাস পেয়ে চমকে চোখ খুলল ফ্লোরা, না কেউ নেই। আবার চোখ বুজল সে, কিন্ত ঘুম আসছেনা। বেশকিছুক্ষণ এপাশ ওপাশ করে উঠে বসল সে, ঘুটঘুটে অন্ধকারে এ হাত সামনের দৃশ্যও দেখতে পাচ্ছেনা ফ্লোরা। হাত বাড়িয়ে বেড ল্যাম্প জালালো, কয়েকবার দপদপ করে বন্ধ হয়ে গেল সেটা। মুখে একরাশ বিরক্তি নিয়ে গায়ে নাইট গাউনের ওপরের অংশটুকু জড়িয়ে নিল ফ্লোরা। হাতড়ে হাতড়ে গিয়ে রুমের লাইট অন করতেই বুঝল ইলেক্ট্রিসিটি নেই, চার্জার লাইটেও চার্জ নেই।
রুম থেকে বেরিয়ে নিচে গেল সে, কিচেন থেকে একটা মোমবাতি জ্বালিয়ে রুমে ফেরার উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো। সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে গিয়ে পায়ের তলায় তরল কিছু অনুভব হল তার। পায়ে স্লিপার পরতে মনে নেই, অন্ধকারে কোনোরকমে উঠে এসেছে ফ্লোরা। নিচু হয়ে মোমবাতির আলোয় দেখল, সিড়ির ধাপে ধাপে কালো রঙের পানীয় টাইপ কি যেন লেগে আছে। আঙুলের ডগায় পানীয়টা নিয়ে কাছে এনে দেখতেই চমকে উঠল ফ্লোরা। মুখ দিয়ে অস্ফুটস্বরে বেরিয়ে এল, “রক্ত”!!!!

কিছুক্ষণ হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে সেই রক্তের দাগ অনুসরণ করে এগিয়ে চলল ফ্লোরা, না চাইতেও কোনো অজানা শক্তি যেন তাকে নিয়ে যাচ্ছে।
বেশ কিছুক্ষণ পর ফ্লোরা নিজেকে তার বেডরুমের পেল, এতক্ষণ যেন একটা ঘোরের মধ্যে ছিল সে। অবাক হল রুমের চারিদিকে অজস্র জ্বলন্ত মোমবাতি দেখে। এত মোমবাতি কে জালালো!!! ভাবতে ভাবতে রুমের মাঝখানে গিয়ে দাড়ালো ফ্লোরা, ফ্লোরে বিশাল পঞ্চভুজ আকানো!!

হটাৎ কোনো মেয়েলি কন্ঠ পেয়ে চমকে পেছনে ফিরল ফ্লোরা। তার ড্রেসিং টেবিলের আয়নার ভিতরে সেই নারীমূর্তি দাঁড়িয়ে আছে। শুকনো কয়েকটা ঢোক গিলল ফ্লোরা, রক্ত হিম হয়ে আসছে তার। তা দেখে নারীমূর্তিটির মধ্যে কোনো ভাবান্তর ঘটলনা। সাদা নাইট গাউন পরা নারীমূর্তি ফ্যাসফ্যাসে গলায় ফ্লোরাকে বলল,” সময় হয়েছে! সময় হয়েছে লিটল প্রিন্সেস!! আর কেউ তোমার থেকে আলাদা করতে পারবেনা আমায়!!!
বলেই অট্টহাসিতে লুটিয়ে পড়লো নারীমূর্তিটি।

এদিকে ফ্লোরার প্রাণ যায়যায় অবস্থা, আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছেনা সে। হিস্টিরিয়া রোগীর মতো কাপছে ফ্লোরা, নারীমূর্তি এবার আয়না ছেড়ে বেরিয়ে এল। ক্রুর দৃষ্টিতে দেখছে ফ্লোরাকে, আস্তে আস্তে ফ্লোরার গলা চেপে ধরল সে। নিঃশাস বেরিয়ে আসার উপক্রম হচ্ছে ফ্লোরার, সর্বশক্তি দিয়ে চিৎকার করার চেষ্টা করছে সে যা চাপা গোঙানির মতো শোনাচ্ছে। আস্তে আস্তে শূন্যে তুলে ধরল ফ্লোরাকে, পায়ের তলা ফাকা!! মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছে ফ্লোরা, হাত-পা ছোড়াছুড়ি করছে।

ক্লাসে বসে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে এডমন্ড। স্যারের লেকচার গুলো মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে তার। বেশ কয়েকদিন ধরে ভার্সিটিতে আসছেনা ফ্লোরা, মেডিটেশন ক্লাসেও পাওয়া যায়না তাকে। ফোন দিলে আজকাল মিসেস ফিয়না রিসিভ করে, কথাবার্তায় বোঝা যায় ইচ্ছে করেই ফ্লোরার সাথে কথা বলতে দেওয়া হয়না। ফ্লোরাকে খুব মিস করে সে, দিনদিন তার প্রতি দূর্বল হয়ে যাচ্ছে এডমন্ড। সেই বাদামী চুলের বাচ্চা মেয়েটাকে মনের কথা না বলা পর্যন্ত শান্তি পাচ্ছেনা এডমন্ড।
ক্লাস শেষে বেরিয়ে ক্যাম্পাসে যেতেই সিয়েরার সাথে দেখা। দ্রুত পায়ে এগিয়ে গিয়ে বললাম,” কিরে কি খবর তোর!?
সিয়েরা একগাল হেঁসে বলল, “এই তো ভাল, তোর!?
বললাম,” হুম ভাল, আচ্ছা ফ্লোরার কি খবর রে! আজকাল ভার্সিটিতেও দেখিনা।
সিয়েরা চোখের চসমা ঠিক করে বলল,” হুম, আন্টি বলল, “ফ্লোরা একটু অসুস্থ, কয়েকদিন পর থেকে আসবে ও।
অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ” ফ্লোরার সাথে কথা হয়নি!?
সিয়েরা মাথা নাড়িয়ে না করে বলল,” না।
বললাম,” আচ্ছা ওর বাসায় গেলে কেমন হয়! ওকে দেখে আসতাম।
সিয়েরা চোখ ছোট ছোট করে বলল,” হুম যাওয়াই যায়, কি ব্যাপার বল তো! ফ্লোরার জন্য এত টেনশন করছিস!?
সলজ্জ হেসে বললাম, ” আরে ফ্রেন্ড অসুস্থ হলে দেখতে যাব এতে আবার কি প্রবলেম!
সিয়েরা মুচকি হেসে বলল, ” হুম, ফ্রেন্ড!!
একটু ভাব নিয়ে বললাম,” তুই তো আমার ফ্রেন্ডের মতো, তো তোর ফ্রেন্ড মানে তো আমারও ফ্রেন্ড নাকি!?
সিয়েরা মাথা নাড়িয়ে মুচকি হাসছে।

ডক্টর সার্জিও হ্যালোরান রোগী দেখছেন, দুপুরের লাঞ্চ করবেন একটু পর। আজকাল ফ্লোরার খোজ খবর নেওয়া হয়না, সেদিন ওদের বাসা থেকে আসার পর ব্যস্ততা বেড়েছে তার।

লাঞ্চ করতে হসপিটালের বাইরে একটা রেস্টুরেন্টে গেল সার্জিও। খাবার অর্ডার করে ফোন হাতে নিতেই দেখল তেরটা মিস কল উঠে আছে। প্রায় সব গুলোই মি. প্রিয়েতো আর মিসেস ফিয়নার। কল ব্যাক করতে গিয়ে দেখল মি. প্রিয়েতো আবারও কল করেছেন। রিসিভ করতেই উদ্বিগ্ন হয়ে বলল,” ডক্টর! ডক্টর আপনার সাথে দেখা করতে চাই!! ইটস আর্জেন্ট!!!
সার্জিও অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, ” কি হয়েছে মি. প্রিয়েতো!! সব ঠিক আছে তো!?
প্রিয়েতো উদ্বিগ্ন হয়ে বলল, ” না! কিচ্ছু ঠিক নেই। বড় বিপদে পড়েছি, সাহায্য করুন ডক্টর!!
সার্জিও জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা আপনি শান্ত হোন, আমি আসছি।
প্রিয়েতো বলল,” আমি আপনার হসপিটালের বাইরে আছি।
সার্জিও বলল,” আপনি পাঁচ মিনিট ওয়েট করুন আমি আসছি।
বলেই কল কেটে দিল সার্জিও, রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে সোজা হসপিটালের দিকে চলল সে।

সার্জিও ভেবে পাচ্ছেনা এমন কি হয়েছে যে প্রিয়েতো এতটা ভয় পেয়েছেন। নাকি মিসেস ফিয়নার কিছু হয়েছে!? সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে হসপিটালের বাইরে দাড় করানো গাড়িতে উঠে বসল সার্জিও, গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল প্রিয়েতো।
সার্জিও খেয়াল করল, লোকটার ভরাট মুখ শুকিয়ে পান্ডুর হয়ে গেছে। জিজ্ঞেস করল, ” কি হয়েছে মি. প্রিয়েতো!! সবাই ঠিক আছে!?
প্রিয়েতো একবার করুন চোখে তাকিয়ে বলল, ” এখনই কিছু জিজ্ঞেস করবেননা দয়া করে, বাসায় চলুন বলছি।
সার্জিও আর কথা বাড়ালো না, উত্তেজনায় হাত পা কাপছে তার।
ফ্লোরাকে নিয়ে টেনশন হচ্ছেনা সার্জিওর, মা তো আর তার সন্তানকে খুন করবে না। নিশ্চয়ই মিসেস ফিয়নার কিছু হয়েছে, হ্যাঁ তারা যে অপরাধ করেছে তার শাস্তি পাওয়া উচিৎ। কিন্ত তা নিশ্চয়ই মৃত্যু নয়!!
সার্জিও একবার প্রিয়েতোর দিকে তাকাচ্ছে, আবার সামনে তাকাচ্ছে।

ফ্লোরাদের বাসার সামনে এসে থামল ট্যাক্সি, এডমন্ড বেরিয়ে ভাড়া দিয়ে চলল বাসার দিকে। সিয়েরার একটা ইম্পর্ট্যান্ট কাজ পড়ায় মাঝ পথ থেকেই ফিরে গেছে সে। এডমন্ড বাসার দরজায় গিয়ে কলিং বেল বাজালো। বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষার পরও কেউ দরজা খুলল না। কেউ বাসায় নেই নাকি!? আবারও বেল বাজালো এডমন্ড, এবার সিড়ি বেয়ে কারও ধপধপ শব্দে আসার আওয়াজ পেল সে। আস্তে আস্তে দরজা খুলে গেল, সাদা নাইট গাউন পরে দাঁড়িয়ে আছে ফ্লোরা। এডমন্ডের সামনে যেন কোনো সর্গীয় সাদা পরি দাঁড়িয়ে আছে। ফ্লোরার অসম্ভব ফ্যাকাসে মুখে অনুজ্জ্বল চোখের দিকে তাকাতেই কিছুটা চমকে উঠল এডমন্ড!!

(চলবে)
বিঃদ্রঃ নানান ঝামেলায় গল্প দিতে পারিনি এজন্য দুঃখিত। এবার থেকে রেগুলার গল্প দিব😊

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here