#Fearপর্ব ৭
Writer: Tanjima Islam
ফ্লোরাদের বাসার সামনে নেমে দাড়ালো সার্জিও, মি. প্রিয়েতো এসে পাশে দাড়ালো। সার্জিও ভেতরে ঢুকতে গেলে প্রিয়েতো তার হাত ধরে থামিয়ে বলল,” আগে সব শুনুন, তারপর।
সার্জিও অবাক হয়ে ইশারায় জিজ্ঞেস করল, কি হয়েছে!? প্রিয়েতো শুকনো ঢোক গিলে ফিসফিস করে বলল, “আজ সকালে আমি অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিলাম। হটাৎ ফ্লোরার রুম থেকে চিৎকার চেচামেচির শব্দ পেয়ে সেখানে গেলাম।
প্রিয়েতো আতংকে চোখ বড় বড় করে আবার বলতে লাগল, ” গিয়ে দেখি ফ্লোরার রুমের চারিদিকে অজস্র মোমবাতি!! কয়েকটা নিভে গেছে কয়েকটা জ্বলছে! রুমের এক কোনায় সাদা নাইট গাউন পরে, চুল গুলো সব সামনে দিয়ে কে যেন বসে আছে!! তা দেখে আমার আত্না কেপে উঠল!! হটাৎ ফিয়নার চিৎকারে সম্বিৎ ফিরে দেখি রক্তাক্ত অবস্থায় বেডের নিচ থেকে বেরিয়ে আসছে সে!!! আমার চোখের মনি কোটর ছেড়ে বেরিয়ে আসার উপক্রম হলো। ছুটে গিয়ে ফিয়নাকে ধরে তুললাম, রুম থেকে বের করে আমাদের বেডরুমে নিয়ে গেলাম। ওর শরীরের রক্ত ধুয়ে মুছে আপনাকে কল দিলাম। কিন্ত আপনি রিসিভ করেননি, তাই ফিয়নার রুম আর ফ্লোরার রুম বাইরে থেকে লক করে গাড়ি নিয়ে আপনার কাছে চলে গেলাম।
সার্জিও আর কোনো কথা না বলে সোজা বাসার মধ্যে চলে গেল। তার মাথায় এখন নানান দুশ্চিন্তা ঘুরছে, মনে মনে প্রার্থনা করছে যেন সবাই সুস্থ থাকে।
দরজার সামনে যেতেই চমকে উঠল প্রিয়েতো, আতংকিত হয়ে বলল,” এ কিভাবে সম্ভব!! আমিতো দরজা লক করে গেছিলাম।
সার্জিও সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে সিড়ি বেয়ে রুমে ছুটল। প্রিয়েতো গেল সাথে, সিড়ি দিয়ে উঠে প্রথমেই ফিয়নাদের রুম। সেই রুমের দরজাও খোলা দেখে এবার দম আটকে গেল প্রিয়েতোর, দ্রুত পায়ে রুমে ঢুকল সে। রুম ফাকা, বেডের ব্লাংকেট সব এলোমেলো। সাথেসাথেই ছুটল ফ্লোরার রুমে, সার্জিও আগেই ফ্লোরার রুমে গেছে।
প্রিয়েতো গিয়ে দেখল দরজা ভেতর থেকে লক করা। সার্জিও বেশ কয়েকবার দরজা ধাক্কাধাক্কি করল। প্রিয়েতোকে আসতে দেখে জিজ্ঞেস করল, “মিসেস সেলজার ঠিক আছেন!?
প্রিয়েতো হতাশ গলায় বলল, “রুমে নেই ও।
সার্জিও ফোন হাতে নিয়ে বলল,” আপনার গাড়ির চাবিটা দিন।
প্রিয়েতো চাবি দিয়ে জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।
সার্জিও বলল,”আপনি এখানেই ওয়েট করুন, আমি আসছি।
বলেই সিড়ি বেয়ে নেমে প্রিয়েতোর গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেল সার্জিও।
উদ্দেশ্য “সেইন্ট পিটার্স গীর্জা “, গীর্জার সামনে গাড়ি রেখে ঢুকল ভেতরে।
বিকেলের প্রার্থনা চলছে এখন, একটু পরেই সন্ধ্যা নামবে। একটা বেঞ্চে গিয়ে বসল সার্জিও। প্রার্থনা শেষে সবাই একে একে বেরিয়ে যেতে লাগল, সার্জিওর দুচোখ খুজে বেড়াচ্ছে “ফাদার মারিনো” কে।
অবশেষে দেখা মিলল ফাদার মারিনোর।
এদিকে প্রিয়েতো করিডরে পায়চারি করছে, সে ভেবে পাচ্ছেনা ফিয়না কোথায় গেল!! আর মেইন দরজাও খুলল কে!? নাকি ফিয়না নিজে খুলেছে!! কিন্ত আমি তো ওর রুমের দরজা লক করেছিলাম তাহলে!!?
সাতপাঁচ ভাবছে আর পায়চারি করছে প্রিয়েতো। সস্তি পাচ্ছেনা কিছুতেই, হটাৎ ফ্লোরার রুমের দরজা খোলার শব্দে চমকে পেছনে ফিরল প্রিয়েতো। ধীরে ধীরে ভয়ংকর বিশ্রী শব্দ করে খুলে যাচ্ছে দরজা। এরকম ভয়ানক পরিস্থিতিতে দরজা খোলার শব্দটাও ভয়ংকর লাগছে প্রিয়েতোর কাছে।
সন্ধ্যা নেমেছে, পুরো বাড়িতে অসহ্য নিস্তব্ধতা ছেয়ে যাচ্ছে। ফ্লোরার রুমের দিকে এক পা এগোচ্ছে তো দুই পা পিছিয়ে যাচ্ছে প্রিয়েতো। মনে মনে হাজারটা অশ্রাব্য গালাগাল করছে সার্জিও কে, এরকম পরিস্থিতিতে তাকে একা ফেলে কিভাবে গেল সে!?
করিডোরের লাইট জালাতে গিয়ে আরেক দফা হতাশা গ্রাস করল প্রিয়েতোকে, ফিয়না ভোরেই বলেছিল বাসায় ইলেক্ট্রিসিটি নেই। মিস্ত্রি ডাকতে হবে, পরে এসব ঘটনায় ভুলেই গেছে মিস্ত্রিকে ফোন দিতে।
ফোনের ফ্লাস লাইট জালালো প্রিয়েতো, ফ্লোরার রুমের দরজায় একবার লাইট মারল সে। এখনও খোলাই আছে, রুমের ভেতরে অন্ধকার তা বোঝাই যাচ্ছে। কিন্ত ফ্লোরা কোথায়!! আর ফিয়না!! আদৌ কি কেউ আছে রুমে!?
সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে এগিয়ে চলল রুমের দিকে। দরজার সামনে গিয়ে ফ্লোরাকে ডাকতে গিয়ে বুঝল গলা দিয়ে শব্দ বের হচ্ছেনা তার। গলায় কিছুটা জোর এনে ডাকল,” ফ্লোরা!!
ভেতর থেকে কোনো শব্দ এলোনা।
প্রিয়েতো আবার ডাকল,” ফিয়না!!
এবার ভেতর থেকে একটা চাপা গোঙানির আওয়াজ এল!! প্রিয়েতো চমকে উঠল!! আবার ডাকল,” ফিয়না!!
এবার ফ্যাসফ্যাসে গলায় কেউ বলল,” ভেতরে এসো প্রিয়েতো, আমাকে বাচাও!
কন্ঠঃ শুনে ঠিক বুঝতে পারছেনা প্রিয়েতো, এটা ফ্লোরা নাকি ফিয়না। কিন্ত বেশ পরিচিত কন্ঠঃ, প্রিয়েতো একটু সাহস নিয়ে বলল,” তুমি বাইরে এসো।
কোনো প্রতিত্তোর এলোনা, কিছুক্ষণ নিরবতা কাটিয়ে প্রিয়েতো বলল, ” ফিয়না, তুমি কি ভেতরে!?
প্রিয়েতোকে অবাক করে দিয়ে ফ্লোরা করুন সরে বলল, “আব্বু বাচাও! আমাকে বাচাও আব্বু!! আমাকে মেরে ফেলবে বাচাও!!!
মেয়ের গলা পেয়ে নিজেকে আর সামলাতে পারল না প্রিয়েতো। দ্রুত পায়ে ফ্লোরার রুমে ঢুকতে গেল, হটাৎ কেউ এসে প্রিয়েতোর সামনে দাড়াতেই সাথেসাথে দড়াম করে দরজা বন্ধ হয়ে গেল।
ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে গেল প্রিয়েতো।
তাকিয়ে দেখল সাদা আলখাল্লা পরা এক বৃদ্ধ দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে, গলায় ছোট ক্রুশের লকেট, হাতে রূপোর তৈরি বিশাল ক্রুশ, বুঝতে বাকি নেই তিনি একজন প্রিস্ট।
ড্রয়িং রুমে সোফায় বসে আছে ফাদার মারিনো, প্রিয়েতো আর সার্জিও। মোটা মোমবাতি জ্বলছে টি-টেবিলের ওপর, মাথায় তাদের নানানরকম চিন্তা ঘুরছে।
ঘড়িতে সন্ধ্যা সাতটা চুয়ান্ন, ফাদার মারিনো নিরবতা কাটিয়ে বলল,” আমি আজ সামনাসামনি দেখেছি শয়তানটা কে। দেখেই বুঝেছি, সে জীবিত অবস্থায় ডাকিনীবিদ্যা চর্চা করত, শয়তানের একজন উপাসক সে। অশুভ শক্তি পেতে আত্নহত্যা করে নিজের আত্না শয়তানকে ভেট হিসেবে দিয়েছে সে।
প্রিয়েতো কিছুটা আন্দাজ করতে পারলেও সিওর না ফাদার আসলে কার কথা বলছে। ফাদার আবার বলতে লাগল, ” সে ফিরে এসেছে, প্রতিশোধ নিতে। কিন্ত
সার্জিও ধৈর্য্য হারিয়ে জিজ্ঞেস করল, “কিন্ত কি!
ফাদার সার্জিওর দিকে তাকিয়ে বলল, “সে ঐ তিন জনের মধ্যে কোনো একজনের দেহে প্রবেশ করেছে, যার মাধ্যমে নিজের প্রতিশোধ নেবে।
সার্জিও অবাক হয়ে প্রিয়েতোর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,” এলিস!?
প্রিয়েতো বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে না করে বলল,” এলিস গতকাল ফোন দিয়ে জানিয়েছে সে অসুস্থ, দুদিন পর আসবে।
সার্জিও আর প্রিয়েতো অবাক হয়ে ফাদার মারিনোর দিকে তাকালো।
(চলবে)
বিঃদ্রঃ অসুস্থতার কারণে বেশি বড় করে দিতে পারিনি😪
পরের পর্বে বড় করে দিব ইনশাআল্লাহ।😇
গল্পটা সবার কেমন লাগছে জানাবেন।