#বাবুইপাখির_অনুভূতি🕊️পর্বঃ৪৩
#লেখিকা:#তানজিল_মীম🕊️
—
_________________
‘ কি ভেবেছিলি তুই মুখে মাস্ক আর চোখে কালো চশমা পড়ে আসলেই আমি তোকে চিনতে পারবো না শুভ?’
কিছুটা গম্ভীর কণ্ঠ নিয়ে কথাটা বলে উঠল আদ্রিয়ান শুভকে। আর আদ্রিয়ানের কথা শুনে ভয়ে ঢোক গিললো শুভ। তাহলে কি সত্যি সত্যি ধরা পড়ে গেল সে আদ্রিয়ানের কাছে। কিছুটা ভয়ার্ত চেহারা নিয়ে পিছন ফিরে তাকালো শুভ। আদ্রিয়ান একই ভঙ্গিতে তাকিয়ে ছিল শুভর দিকে। অন্যদিকে আহিও বেশ ঘাবড়ে গেছে আদ্রিয়ানের কথা শুনে। শুভ কিছুটা আমতা আমতা করে বললো,
‘ মানে?’
‘ মানেটা তুই ভালো করেই জানিস শুভ, এতটুকু বলে আদ্রিয়ান তাকালো আহির দিকে তারপর গম্ভীর কণ্ঠ নিয়ে বললো,
‘ আমাকে এই হসপিটালে কেন এনেছো আর আমার ট্রিটমেন্ট কে করেছে?’
এবার সত্যি সত্যি ভয় পেয়েছে শুভ। এবার নিশ্চয়ই আদ্রিয়ান তাঁর ওপর রেগে যাবে। না জানি রেগে মেগে হসপিটাল ছেড়েই না চলে যায়। আহিকে চুপ থাকতে দেখে রাগী কন্ঠ নিয়ে বললো আহি,
‘ কি হলো তুমি কথা কেন বলছো না?’
এমন সময় আদ্রিয়ানের রুমে ঢুকলো নিলয়। আদ্রিয়ানকে রাগতে দেখে বললো সে,
‘ কি হয়েছে?’
বলেই সামনে শুভকে দেখে আঁতকে উঠল নিলয়। নিলয়ের আর বুঝতে বাকি নেই আদ্রিয়ান কি কারনে রেগে গেছে। নিলয় আদ্রিয়ানের দিকে এগিয়ে এসে বললো,
‘ রেগে যাস না প্লিজ আদ্রিয়ান?’
‘ আমায় এই হসপিটালে কেন এনেছিস তোঁরা?
নিলয় কিছু বলার আগেই আহি মাথা নিচু করে বলে উঠল,
‘ নিলয় ভাইয়া আনে নি আমি এনেছি?’
‘ আমি এক্ষুনি এই হসপিটাল থেকে চলে যাবো নিলয়?’
আদ্রিয়ানের কথা শুনে শুভ আদ্রিয়ানের দিকে এগিয়ে এসে বললো,
‘ এমন করো না ভাইয়া, তুমি এখনো পুরোপুরি ঠিক হও নি?’
শুভর কথা শুনে আদ্রিয়ান বলে উঠল,
‘ তাঁর মানে আমি ঠিকই ধরেছি তুই শুভই।’
এবার যেন সত্যি সত্যি চমকে উঠলো শুভ। শুভ তাঁর মুখের মাস্ক আর চোখের চশমা খুলে মাথা নিচু করে বললো,
‘ হুম।’
উওরে আদ্রিয়ান রাগী কন্ঠ নিয়ে নিলয় আর আহিকে উদ্দেশ্য করে বললো,
‘ আমি শুভর সাথে একা কথা বলতে চাই?’
আদ্রিয়ানের কথা শুনে নিলয় বলে উঠল,
‘ প্লিজ আদ্রিয়ান ওঁকে বকিস না তুই জানিস না ও তোর জন্য কতটা কেঁদেছে? প্লিজ এবার অন্তত ওঁকে ক্ষমা করে দে।’
‘ আমি কোনো এক্সকিউজ শুনতে চাই নি, আমি শুভর সাথে একান্তে কথা বলতে চাই।’
আদ্রিয়ানের কথা শুনে আহিও বলে উঠল,
‘ আমি জানি না আপনাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে কিসের ধন্দ আমার হয়তো এই মুহূর্তে আপনাদের মাঝে কথা বলা ঠিক হবে না কিন্তু তারপরও আমি বলতে চাই দেখুন যা হয়েছে তাতে শুভর কোনো দোষ নেই কারন পরশু রাতে আমি আপনায় নিয়ে এই হসপিটালে এসেছিলাম আর শুভ ডাক্তার হয়ে তাঁর কর্তব্য পালন করেছে। প্লিজ ওঁকে বকবেন না।’
‘ আমি এক কথা বার বার বলা পছন্দ করি না তোরা বের হবি,,
বলেই মাথায় হাত দিলো আদ্রিয়ান। কারন অতিরিক্ত উচ্চ স্বরে কথা বলার কারনে মাথায় ব্যাথা লাগছে আদ্রিয়ানের। আদ্রিয়ানের কান্ড দেখে শুভ হাল্কা এগিয়ে এসে বললো,
‘ প্লিজ ভাইয়া তুমি উচ্চ স্বরে কথা বলো না তুমি আমায় বকবে তো আমি সব শুনতে রাজি আছি। তারপরও তুমি রেগে যেও না।
বলেই নিলয় আর আহিকে উদ্দেশ্য করে বললো শুভ,
‘ তোমরা বাহিরে যাও?’
উওরে নিলয় আর আহিও কিছু বলতে না পেরে আস্তে আস্তে চলে গেল। নিলয় যাওয়ার আগে আদ্রিয়ানের হাত ধরে বললো,
‘ প্লিজ আদ্রিয়ান এইবার অন্তত ক্ষমা কর শুভকে।’
কিন্তু উওরে আদ্রিয়ান কিছু বলে নি। নিলয় আহি যেতেই শুভ দরজাটা হাল্কা চাপিয়ে দিয়ে আস্তে আস্তে এগিয়ে আসলো আদ্রিয়ানের দিকে। তারপর বললো,
‘ তোমার যা ইচ্ছে তাই করতে পারো ভাইয়া আমি কিছু মনে করবো না কিন্তু তুমি বেশি জোরে কথা বলো না। এতে তোমার খুব কষ্ট হবে। আর হসপিটাল থেকে যেও না লাগলে তুমি যতদিন হসপিটালে থাকবে ততদিন আমি তোমার কেভিনের আশেপাশেও আসবো না, তুমি প্লিজ যেও না।’
‘ আমার জন্য খুব ভাবিস তুই?’
আদ্রিয়ানের কথা শুনে ছলছল চোখে আদ্রিয়ানের দিকে একপলক তাকিয়ে আবার মাথা নিচু করে বললো শুভ,
‘ তুমি ছাড়া আমার পরম আপন আর কে আছে ভাইয়া। তুমি হয়তো আমার সাথে কথা বলো না দীর্ঘ দিন হয়েছে কিন্তু যতই হোক সেই ছোট বেলা থেকে তো তুমি আমায় বড় করেছো হয়তো কাছে আসো নি কিন্তু দূর থেকে তো করেছো। আমি আজ এত বড় ডাক্তার হয়েছি এর পুরো ক্রেডিট তো তোমারই। তুমি জানো না কাল যখন আহি আপু তোমায় আমাদের হসপিটালে নিয়ে এসেছিল তোমায় দেখার পর আমার কি অবস্থা হয়েছিল। বার বার মনে হয়েছিল তুমি চলে গেলে আমি একদমই এতিম হয়ে যাবো। সেদিন ঠিক টাইমে নীরব নামের ছেলেটি রক্ত না দিলে কি হতো?’
‘ আমায় খুব ভালোবাসিস তুই?’
আদ্রিয়ানের এবারের কথা শুনে বেশ বিষন্ন মাখা মুখ নিয়ে তাকালো শুভ আদ্রিয়ানের দিকে। শুভর চাহনি দেখে আদ্রিয়ান আবারো বলে উঠল,
‘ কি হলো কথা বলছিস না কেন?’
‘ আমি তোমায় কতটা ভালোবাসি সেটাকি মুখে বলে প্রকাশ করা যাবে ভাইয়া। তুমি আমার সাথে সেই ছোট বেলা থেকে ঠিক মতো কথা বলো না, আমার একা থাকতে আর ভালো লাগে না ভাইয়া,আমিও তোমার সাথে এক বাড়িতে থাকতে চাই। অনেক তো হলো ভাইয়া এবার কি আমায় ক্ষমা করা যায় না।’
উওরে আদ্রিয়ান শুভকে জড়িয়ে ধরে বললো,
‘ সরি ভাই।’
হুট করেই আদ্রিয়ানের কাজে শুভ যেন শকট। সে বিশ্বাস করতে পারছে না আদ্রিয়ান তাঁকে জড়িয়ে ধরেছে। শুভ নিজেও আদ্রিয়ানকে জড়িয়ে ধরে বললো,
‘ ভাইয়া তুমি আমায় ক্ষমা করে দিয়েছো?’
‘ সত্যি বলতে কি জানিস ক্ষমা তো তোকে সেই কবেই করে দিয়েছি। তোর সাথে কথা না বলার একমাত্র কারণ হলো অপরাধ বোধ। তোকে দেখলেই আমার বার বার মনে হয় আমার জন্যই হয়তো অল্প বয়সে তুই বাবা মাকে হারিয়েছিস। আমি যদি সেদিন রাগ করে বাসা থেকে বের না হতাম তাহলে হয়তো এসব কিছুই হতো না।’
আদ্রিয়ানের কথা শুনে শুভ কান্না মিশ্রিত কন্ঠ নিয়ে বললো,
‘ না ভাইয়া সব দোষ তোমার ছিল না, আমি যদি তোমার প্রিয় শোপিচ না ভাঙতাম তাহলে আর কিছুই হতো না। আমাকে ক্ষমা করে দিও ভাইয়া।’
এই বলে দুই ভাই একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। যেন বহুত বছরের লুকিয়ে থাকা কষ্টগুলো আজ একত্রে বের হচ্ছে তাঁদের।’
___
অন্যদিকে,
আদ্রিয়ানের রুমে বাহিরে পায়চারি করছে আহি আর নিলয়। দুজনের চোখে মুখেই বিষন্নতার ছাঁপ। হঠাৎ সামনে পিছনে হাঁটতে গিয়ে একে অপরের মুখোমুখি হলো আহি আর নিলয়। হুট করে এমনটা হওয়াতে দুজনেই প্রায় চমকে উঠলো আহি তো চিন্তিত কন্ঠ নিয়ে বললো,
‘ এতক্ষণ ওনারা কি করছে ভাইয়া?’
‘ আমি কি জানি।’
‘ আচ্ছা ওনাদের মধ্যে সমস্যাটা কিসের ভাইয়া, আদ্রিয়ান কথা কেন বলে না শুভর সাথে?’
আহির কথা শুনে নিলয়ও বেশি কিছু না ভেবে বলে উঠল,
‘ একটা শোপিচের জন্য?’
নিলয়ের কথা শুনে বেশ বিস্মিত হয়ে বললো আহি,
‘ কি সামান্য একটা শোপিচের জন্য আদ্রিয়ান শুভর সাথে কথা বলে না।’
‘ তুমি ভুল বুঝছো আহি, ব্যাপারটা শুধু শোপিচের জন্য নয়।’
‘ তাহলে?’
‘ তাহলে হলো আদ্রিয়ান ছোট বেলা থেকেই একটু একটু অন্যরকম টাইপের বুঝতে পেরেছো নিজের জিনিস কারো সাথে শেয়ার করতে পছন্দ করে না। তো একদিন শুভ আদ্রিয়ানের একটা ফেভারিট শোপিচ খেলতে গিয়ে ভেঙে ফেলে, শোপিচটা অনেক ফেভারিট ছিল আদ্রিয়ানের আন্টি দিয়েছিল ওকে আইমিন আদ্রিয়ানের মা। তো শোপিচটা ভাঙার কারনে আদ্রিয়ান সেদিন শুভকে প্রচুর বকে, গায়ে হাতও তুলতে নেয় আর তখনই আদ্রিয়ানর বাবা রেগে আদ্রিয়ানের সাথে রাগারাগি করে আর তখনই আদ্রিয়ান রেগে গিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় আর তারপরই ঘটে সেই ভয়ানক ঘটনা আদ্রিয়ানকে কিডন্যাপ করা হয়। কিডন্যাপ করা ব্যক্তিটি মুক্তিপন হিসেবে অনেকগুলো টাকা চায়। আদ্রিয়ানে বাবা টাকা দিতে রাজিও হয়ে যায়। আর সেই টাকা নিয়ে যখন আক্কেল আন্টি গাড়ি নিয়ে যাচ্ছিল তখনই রাস্তায় তাদের এক্সিডেন্ট হয়। আর তাঁরা মারা যায় আর সেই থেকেই আদ্রিয়ান কথা বলে না শুভর সাথে। কিন্তু আমি জানি ভিতরে ভিতরে ও খুব ভালোবাসে শুভকে। কাছে যায় না ঠিকই কিন্তু দূর থেকে অনেক ভালোবাসে। শুভ যে কতবার আদ্রিয়ানের কাছে এসে সরি বলেছে। কিন্তু আদ্রিয়ানকে জানোই তো ও কেমন প্রত্যেকবার শুভর সাথে বাজে ব্যবহার করে তাড়িয়ে দিয়েছে। যেদিন প্রথম তোমায় লোক দিয়ে ডেকে এনে ছিলাম অফিসে সেদিন শুভ এসেছিল আদ্রিয়ানের কাছে, ভেঙে যাওয়া শোপিচটার মতো হুবহু একটা শোপিচ গিফট করেছিল। কিন্তু আদ্রিয়ান রেগে যায়, আর সেই রাগ সব তোমার ওপর দেখায়।
‘ ওহ,
‘ হুম কিন্তু একটা জিনিসই বুঝতে পারছি না আজ এখনও বের হচ্ছে না কেন শুভ? আর কোনো সাড়াশব্দও পাওয়া যাচ্ছে না।’
‘ চলুন গিয়ে দেখি ভাইয়া?’
‘ বলছো?’
‘ হুম।’
তারপর আহি আর নিলয় দুজনই আস্তে আস্তে এগিয়ে যায় দরজার দিকে। দরজা খুলে প্রথমে উঁকি মারলো আহি তারপর নিলয়। ভিতরে তাকাতেই আহি আর নিলয়ের চোখ চড়ুই গাছ তাদের তো বিশ্বাসই হচ্ছে না দুই ভাই এঁকে অপরকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে। নিলয় তো চরম প্রকার অবাক হয়ে বললো,
‘ আমি যা দেখছি তুমিও কি তাই দেখছো আহি?’
‘ কি?’
‘ এই যে আদ্রিয়ান শুভ এঁকে অপরকে জড়িয়ে ধরে আছে।’
‘ জ্বী ভাইয়া।’
‘ তাহলে কি আদ্রিয়ান শুভকে ক্ষমা করে দিয়েছে।’
‘ হতে পারে।’
‘ চলো তো গিয়ে দেখি,,
বলেই নিলয় আর আহি চলে গেল ভিতরে। নিলয় আর আহিকে ভিতরে যেতে দেখে আদ্রিয়ান শুভ দুজনই দুজনকে সামলে নিয়ে চোখ মুছে নিলো। নিলয় আদ্রিয়ানের দিকে এগিয়ে এসে বললো,
‘ আদ্রিয়ান তুই?’
‘ হুম আজ থেকে আমি আর শুভ একসাথে এক বাড়িতে থাকবো নিলয়?’
আদ্রিয়ানের কথা শুনে নিলয় আদ্রিয়ানকে জড়িয়ে ধরে বললো,
‘ অবশেষে তোদের ধন্দ শেষ হলো দোস্ত আমি খুব খুশি হয়েছি।’
নিলয়ের কাজ দেখে শুভ বলে উঠল,
‘ আমাকেও তো জড়িয়ে ধরতে হবে ভাইয়া?’
উওরে নিলয় হেঁসে আদ্রিয়ান শুভ দুজনকে একসাথে জড়িয়ে ধরলো। আজ তিনজনই খুব খুশি। অবশেষে দীর্ঘ ১৬-১৭ বছর পর আদ্রিয়ান আর শুভ এক হলো। ভাবতেই খুশি লাগছে নিলয়ের।’
অন্যদিকে এঁদের তিনজনের কান্ড দেখে মুচকি হাসলো আহি। যাক যা হয়েছে খুব ভালো হয়েছে।’
____
বিকাল_৪ঃ০০টা,,
চুপচাপ নিজের কেভিনে বসে আছে আদ্রিয়ান। আর ওর পাশে দাঁড়িয়ে চাকু দিয়ে ফল কাটছে আহি। আজ নিজেকে অনেক হাল্কা লাগছে আদ্রিয়ানের। অবশেষে সে তাঁর অপরাধ বোধ কাটিয়ে শুভকে মেনে নিতে পেরেছে। সে ভেবে নিয়েছে আর কখনো শুভর সাথে বাজে ব্যবহার করবে না। এখন থেকে সবসময় তাঁরা একসাথে থাকবে, আর অনেক আনন্দে জীবন কাটাবে। শুধু একটা ইচ্ছে অপূর্ণ রয়ে গেল।
‘ যদি আহি তাঁকে মেনে নিতো।’
কথাটা ভেবেই আদ্রিয়ান তাকালো আহির মুখের দিকে। তারপর কিছু একটা ভেবে বললো আদ্রিয়ান,
‘ আমায় রক্ত কে দিয়েছিল আ..?’
আর কিছু বলার আগেই ব্যাথা পেয়ে ‘আ’ করে উঠলো আহি। কারন আদ্রিয়ানের কথা শুনতে গিয়ে চাকুতে আঙুল কেটে গেছে তাঁর। হুট করেই আহির মুখে এমন শব্দ শুনে কিছুটা চমকে উঠে বললো আদ্রিয়ান,
‘ কি হয়েছে?’
‘ না তেমন কিছু নয়।’
‘ দেখি এদিকে আসো?’
উওরে আহিও বেশি কিছু না ভেবে এগিয়ে আসে আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ান আহির দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ দেখি তোমার হাত,
‘ কিছু হয়নি আমার জাস্ট একটুখানি কেটে গেছে।’
‘ সেই একটুখানি দেখি আমি,
আদ্রিয়ানের জোরাজোরিতে আহিও দেখালো তাঁর হাত অনেকখানিই কেটে গেছে তাঁর আঙুল রক্ত বের হচ্ছে সেখানে থেকে। আদ্রিয়ান আহির আঙুল দেখে কড়া দৃষ্টিতে আহির দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ এখানে একটু কেটেছে,
‘ ওই আর কি?’
উওরে আদ্রিয়ান কিছু না বলে তাঁর সামনে থাকা ঔষধের বক্সটা খুলে ব্যান্ডেজ বের করে আহির আঙুল বেঁধে দিতে লাগলো খুব যত্ন করে। আর আহি শুধু তাকিয়ে রইলো আদ্রিয়ানের মুখের দিকে। আদ্রিয়ানকে দেখতে যতটা না রাগী মনে হয়, ভিতরটা তাঁর ততই নরম। লোকটা এমনিতে খুব ভালো শুধু রেগে গেলেই ভয়ংকর।– কথাগুলো ভেবে আনমনেই হাসলো আহি।’
এমন সময় সেখানে উপস্থিত হলো রিনি আর শুভ। রিনির হাতে একটা ফুলের তোড়া আর তাঁর পাশেই শুভ। ওদের দুজনকে একসাথে দেখে কিছুটা অবাক হয় আদ্রিয়ান আহি দুজনেই। রিনি আদ্রিয়ানের দিকে এগিয়ে এসে ফুলের তোড়াটা হাতে দিয়ে বললো,
‘ এখন কেমন আছেন ভাইয়া?’
উওরে আদ্রিয়ানও মুচকি হেঁসে বললো,
‘ হুম ভালো।’
পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে রিনি আর শুভ। রিনি খোঁচাচ্ছে শুভকে কারন তাঁরা কিছু বলবে আদ্রিয়ানকে। রিনি আজ সকালেই জানতে পারে শুভ আর আদ্রিয়ান নাকি দুই ভাই। শুরুতে শুভ একা ভেবে একটু খারাপ লাগলেও পরক্ষণেই শুভর একটা বড় ভাই আছে ভেবে খুব ভালো লাগে রিনির। রিনি শুভকে খোঁচাতে খোঁচাতে বলে উঠল,
‘ কি হলো তুমি কিছু বলছো না কেন?’
রিনির কাজে শুভ ঘাবড়ে গিয়ে বলে উঠল,
‘ এখনই বলতে হবে কাল বললে হয় না।’
‘ না হয় না, আমি কাল জিনিসটাকে খুব হেইট করি তাই যা বলার এক্ষুনি বলবে না হলে তোমার সাথে ব্রেকআপ।’
রিনির কথা শুনে শুভ ইনোসেন্ট মার্কা লুক নিয়ে বললো,
‘ রিনি।’
এদিকে শুভ রিনির কান্ড দেখে আহি আদ্রিয়ান দুজনই অবাক। আদ্রিয়ান কিছুটা অবাক হয়ে বললো,
‘ তোমরা কি কিছু বলবে আমায়?’
আদ্রিয়ানের কথা শুনে রিনি শুভকে ধাক্কা দিয়ে সামনে এগিয়ে দিয়ে বললো আদ্রিয়ানকে,
‘ হুম ভাইয়া শুভ আপনায় কিছু বলবে?’
রিনির কথা শুনে আদ্রিয়ান শুভর দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ কি বলবি আর তুই চিনিস ওঁকে?’
উওরে শুভ কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,
‘ হুম। আসলে হয়েছে কি ভাইয়া?’
‘ কি হয়েছে?’
‘ না মানে।’
‘ বেশি না ধুতিয়ে বলে ফেল,
‘ আসলে ভাইয়া আমি আর রিনি
‘ তুই আর রিনি কি?’
‘ আমি আর রিনি
এদিকে শুভর এমন তোতলানো শুনে রিনি বুঝতে পেরেছে শুভর দারা সম্ভব হবে না কিছু বলার তাই সে নিজেই এগিয়ে এসে বললো আদ্রিয়ানকে,
‘ আসলে হয়েছে কি ভাইয়া আমি আর শুভ একে অপরকে ভালোবাসি। আর আমরা খুব শীঘ্রই বিয়ে করতে চাই?’
হুট করেই রিনির মুখে এমন কথা শুনে আহি আদ্রিয়ান এমনকি শুভও অবাক হয়ে বলে উঠল,
‘ কি?’
আহি তো চরম অবাক রিনি কি বললো এইমাত্র যে ছেলের সাথে রিনিকে ঝগড়া ছাড়া আর কিছু করতে দেখে নি সে। সেই শুভকে নাকি ভালোবাসে রিনি আবার বিয়েও করতে চায়। কেমনে কি করে হলো এসব?’
এদিকে রিনি ভাবছে অন্যকিছু আদ্রিয়ান আহি ‘কি’ বললো এটা মানা যায় কিন্তু শুভ ‘কি’ করে কেন উঠলো?’
!
!
!
!
!
#চলবে…..
[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে।]
#TanjiL_Mim♥️