#বাবুইপাখির_অনুভূতি🕊️পর্বঃ৪৪

0
370

#বাবুইপাখির_অনুভূতি🕊️পর্বঃ৪৪
#লেখিকা:#তানজিল_মীম🕊️

_________________

হা হয়ে তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ান আর আহি রিনি আর শুভর মুখের দিকে। তাদের হয়তো বিশ্বাসই হচ্ছে না এইমাত্র রিনি কি বললো?’ আদ্রিয়ান তো পুরোই শকট কারন সে ভাবে নি তাঁর ‘আপু’ বলা পিচ্চি ভাইটাও কাউকে ভালোবাসবে। তবে আদ্রিয়ান যেদিন রিনিকে শুভর সেবাযত্ন করতে দেখছিল। সেদিনই একটু খটকা লেগেছিল তার কিন্তু পরে নিলয়ের কথা শুনে আর বেশি ভাবে নি সে কারন নিলয় খবর নিয়ে জেনেছে রিনির সাথে শুভর তেমন কোনো সম্পর্ক নেই এর মধ্যে ভার্সিটি বসে নাকি দেখা হয়েছিল তাও নাকি কথার চেয়ে ঝগড়া বেশি করেছে এঁরা। আদ্রিয়ান কথাগুলো আনমনে ভেবে কিছুটা অবাক হয়ে বললো শুভকে,

‘ এসব কি শুনছি শুভ? রিনি যা বলছে তা কি সত্যি?’

আদ্রিয়ানের কথা শুনে শুভ আমতা আমতা করে বললো,

‘ আসলে ভাইয়া,

সাথে সাথে রিনি শুভর পায়ে একটা খোঁচা দিয়ে দিলো তারপর আস্তে আস্তে বললো,

‘ বেশি আসলে আসলে করলে একদম খুন করে দিবো আর হ্যাঁ তুমি আমার কথা শুনে কি করে উঠলে কেন?’

‘ না মানে তুমি যে এক্ষুনি বিয়ের কথা বলে ফেলবে এটা আমি ভাবি নি তাই তো,

‘ তাই তো কি বিয়েটা একবার হোক তারপর তোমার এই তোতলানো স্বভাব বের করছি আমি।’

অন্যদিকে রিনি শুভর কান্ড দেখে অবাক হয়ে আবারো বলে উঠল আদ্রিয়ান,

‘ কি হলো কিছু বলছিস না কেন, রিনি যা বললো তা সত্যি তোরা একে অপরকে ভালোবাসিস?’

আদ্রিয়ানের এবারের কথা শুনে শুভ উপর নিচ মাথা নাড়িয়ে বলে উঠল,

‘ হুম ভাইয়া।’

শুভর কথা শুনে আহি অবাক চোখে এগিয়ে আসলো শুভর দিকে তারপর বললো,

‘ এদিকে শোনো?’

শুভ ও আহির কথা মতো হাল্কা এগিয়ে আসলো আহির দিকে। তারপর বললো,

‘ হুম বলো আহি আপু?’

শুভর কথা শুনে ফ্যাল ফ্যাল চোখে শুভর দিকে তাকিয়ে নিচু স্বরে বললো আহি,

‘ তুমি শিওর তো ভাইয়া এই ঝগড়ুটে আপুটাকেই তুমি ভালোবাসো?’

আহির কথা শুনে মাথা চুলকাতে চুলকাতে দাঁত কেলানি হাসি দিয়ে বলে উঠল শুভ,

‘ হুম।’

এদিকে শুভ আর আহির ফিসফিস করে কথা বলা শুনে রিনি বলে উঠল,

‘ এই তোরা কি ফিস ফিস করছিস বলতো?’

‘ না কিছু না।’ (আহি)

উওরে রিনি বেশি কিছু না ভেবে আদ্রিয়ান দিকে তাকিয়ে খুব কনফিডেন্স নিয়ে বলে উঠল,

‘ তারপর ভাইয়া এখন আপনি বলুন আপনি কি রাজি আমাদের সম্পর্কে?’

রিনির কথা শুনে আদ্রিয়ানও বলে উঠল,

‘ যেহেতু তোমরা দুজন একে অপরকে ভালোবাসো তাই সে ক্ষেত্রে আমি আর কি বলবো।’

আদ্রিয়ানের কথা শুনে রিনি খুশি হয়ে বলে উঠল,

‘ আমি জানতাম ভাইয়া আপনি এমন কিছুই বলবেন। আপনার ছোট ভাইটা না একদমই ভিতু। যাইহোক আপনারা কথা বলুন আমি এক্ষুনি গিয়ে আমার বাবা মাকে বলে আসি।’

বলেই রুম থেকে বেরিয়ে গেল রিনি। রিনিকে যেতে দেখে আহিও বেশি কিছু না ভেবে বলে উঠল,

‘ আমিও একটু আসছি বুঝলেন।’

বলে আহিও চললো রিনির পিছন পিছন। আর শুভ পড়লো মহা বিপদে এখন তাঁর ভাই কিছু জিজ্ঞেস করলে কি বলবে সে। শুভ দাঁত কেলানি হাসি দিয়ে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ বলছিলাম কি ভাইয়া আমার একটা অপারেশন করার আছে আমি যাই বুঝলে পরে আবার আসবো।’

বলেই এক প্রকার দৌড়ে বেরিয়ে যেতে লাগলো শুভ। সাথে সাথে আদ্রিয়ান বলে উঠল,

‘ তলে তলে এসব কবে থেকে চলছে, শুভ?’

সাথে সাথে শুভ দাঁড়িয়ে পড়লো যার ভয় পেয়েছিল সেটাই হলো। শুভ আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ বিশ্বাস করো ভাইয়া ও যে সরাসরি তোমায় এসে বিয়ে করার কথা বলবে এটা আমি ভাবতেই পারি নি?’

‘ তা তো তোর থোবড়া দেখেই বুঝতে পেরেছি যাই হোক তোর জন্য রিনির মতো চঞ্চল মেয়েই ঠিক আছে।’

উওরে মুচকি হাসলো শুভ। এমন সময় একজন নার্স এসে বললো শুভকে,

‘ স্যার অপারেশনের সব তৈরি এখন শুধু আপনি গেলেই হবে।’

‘ ঠিক আছে তুমি যাও আমি এক্ষুনি তৈরি হয়ে আসছি।’

‘ ঠিক আছে স্যার।’

বলেই চলে গেল নার্সটি। নার্সটি যেতেই শুভ তাকালো আদ্রিয়ানের দিকে। আদ্রিয়ানও হাল্কা হেঁসে বললো,

‘ যা আর ভয় নেই আমি কিছুই বলবো না তোকে।’

উওরে শুভ আদ্রিয়ানকে ‘থ্যাংক ইউ’ বলে চলে গেল। শুভর কাজে আদ্রিয়ান হাল্কা হেঁসে বলে উঠল,

‘ আসলেই ভীতুর ডিম একটা।’
____

হসপিটালের করিডোরের সামনে দাঁড়িয়ে আছে রিনি। হাতে তার মোবাইল ফোন মুলত বাড়িতে ফোন করার জন্যই কল করছে সে তাঁর মাকে। কিন্তু তাঁর মা ধরছে না। এমন সময় ওর সামনে এসে দাঁড়ালো আহি, কোমড়ে হাত দিয়ে বললো সে,

‘ তলে তলে এসব কবে থেকে চলছিল শুনি?’

হুট করেই আহির কন্ঠ শুনে পিছন ফিরে তাকালো রিনি। তারপর বললো,

‘ এই তো আজ তিনদিন হলো ভেবেছিলাম তোকে বলবো কিন্তু সময় করে ওঠে নি সরি দোস্ত।’

রিনির কথা শুনে চোখ বড় বড় করে বললো আহি,

‘ রিলেশনের আজ মাত্র তিনদিন হলো আর এর মধ্যে তুই বিয়ে নিয়ে কথা বলছিস।’

উওরে রিনি তাঁর ফোনটাকে তাঁর জিন্সের পকেটে রেখে আহি গলা জড়িয়ে ধরে হাঁটতে হাঁটতে বলে উঠল,

‘ তুই তো জানিস আমি সব কিছুই তাড়াতাড়ি করা পছন্দ করি জিমিয়ে থাকা জিনিসপত্র আমার একদম পছন্দ না। আর শুভ যে আকার ভিতু আমার মনে হয় না আগামী চার বছরেও ও তাঁর ভাইকে আমাদের সম্পর্কে বলতে পারতো। তাই আমি নিজেই বলে দিয়েছি।’

‘ তাই বলে এত তাড়াতাড়ি, ইস যদি আমিও তোর মতো হতাম তাহলে হয়তো নীরব ভাইয়া আমারই হতো।’

কথাটা আহি মুচকি হেঁসে বললেও রিনির খারাপ লেগেছে সে আহির দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ ভুলে যা না আগের সবকিছু আবার নতুন করে সবকিছু শুরু কর। দেখবি তোর জন্য কেউ না কেউ আছে যে তোকে খুব ভালোবাসবে।’

উওরে মুচকি হেঁসে বললো আহি,

‘ হুম, যাগ গে বাদ দে তো।’

এমন সময় রিনির ফোনটা বেজে উঠল উপরে তাঁর মায়ের নাম্বার দেখে বলে উঠল রিনি আহিকে,

‘ মা ফোন করেছে বুঝলি আমি এক্ষুনি আমার আর শুভর বিয়ের কথাটা বলে আসি।’

বলেই ফোনটা তুলে ‘হ্যালো’ বলে চলে গেল সে অন্য সাইডে। আর রিনির কাজে আহি হেঁসেই বলে উঠল,

‘ আসলেই এই মেয়েটার সবকিছুতেই খুব তাড়া।’

ভেবেই আদ্রিয়ানের কেভিনের উদ্দেশ্যে যাওয়ার জন্য রওয়ানা হলো আহি। এরই মধ্যে হঠাৎই এক চির চেনা ধ্বনি ভেসে আসলো তাঁর কানে। কেউ একজন বলে উঠল,

‘ আহি?’

আচমকাই বুকটা কেঁপে উঠল আহির। কারন ধ্বনিটা আর কারো নয় তাঁর প্রথম ভালোবাসা নীরবের কন্ঠ। আহি ধীরে ধীরে পিছন ফিরে তাকালো সত্যি সত্যি পিছনে ফুলের তোড়া হাতে নীরবকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কিছুটা অবাক হয়েই এগিয়ে আসলো সে নীরবের দিকে। তারপর বললো,

‘ ভাইয়া তুমি এখানে?’

‘ হুম যাকে রক্ত দিলাম তাঁর সাথে একবার দেখা করবো না তাই চলে আসলাম।’

‘ ওহ তুুমি আদ্রিয়ানের সাথে দেখা করতে এসেছো।’

‘ হুম।’

‘ আসো আমার সাথে উনি ওই সামনের কেভিনেই আছে।’

উওরে নীরবও বেশি কিছু না ভেবে চললো আহির সাথে সাথে। আদ্রিয়ানকে দেখার জন্যই এসেছে নীরব, তারওপর মনটাও ভালো নেই। তাই আসা এদিকটায়।’

____

নিজের কেভিনে চুপচাপ বসে আছে আদ্রিয়ান। অপেক্ষা কখন আহি আসবে কিন্তু আহির কোনো খবর নেই। হঠাৎই দরজা খোলার শব্দ পেতেই খুশি মনে তাকালো আদ্রিয়ান কারন সে বুঝতে পেরেছে আহি এসেছে। প্রথমে আহিকে দেখে খুশি হলেও পরক্ষণেই ওর পিছনে নীরবকে দেখে কিছুটা হতাশাও হয়েছে সে। আদ্রিয়ান ভাবে নি এই মুহূর্তে সে আহির সাথে নীরবকে দেখবে। নীরব খুশি মনে আদ্রিয়ানের দিকে ফুলের তোড়াটা হাতে এগিয়ে দিয়ে বললো,

‘ কেমন আছেন স্যার?’

নীরবের কথা শুনে আদ্রিয়ানও হাল্কা হেঁসে ওর হাত থেকে ফুলের তোড়াটা নিয়ে বললো,

‘ হুম ভালো, তবে আপনি না থাকলে হয়তো এই মুহূর্তে ভালো থাকতাম না।’

আদ্রিয়ানের কথা শুনে নীরব হেঁসেই বলে উঠল,

‘ কি যে বলেন স্যার। কি আর করেছি আমি জাস্ট একটু রক্ত দিয়েছি আর বাকিটা তো আল্লাহ আর আপনার ছোট ভাই শুভই করেছে।’

‘ আপনি আমায় বার বার স্যার বলছেন কেন?’

‘ না আপনার মতো এত বড় বিজনেসম্যানকে শুধু ‘স্যার’ শব্দটাই মানায়।’

উওরে হাসলো আদ্রিয়ান। তারপর এটা ওটা নিয়ে কথা বলতে শুরু করলো তাঁরা। আর আহি শুধু চুপচাপ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওদের কথা শুনতে লাগলো। আহিও ভাবেনি এই মুহূর্তে নীরব আসবে এখানে, নীরবের কথা ভাবতেই অথৈর কথা মনে পড়লো আহির। আজ অনেকদিন পরই ওর কথা মনে পড়লো আহির। আহি অনেক আগেই ভেবে রেখেছিল অথৈদের বাড়ি যাবে তাঁরা কিন্তু সময় করে আর হয়ে উঠে নি। তবে এবার যাবে আদ্রিয়ান সুস্থ হলেই সে আর রিনি গিয়ে নিয়ে আসবে অথৈকে। যতই হোক যা হয়েছে তাতে অথৈর কোনো দোষ নেই। আনমনেই নানান কথা ভাবতে লাগলো আহি।’

বেশ কিছুক্ষন পর,

নীরব আদ্রিয়ানের সাথে কথা বলা শেষ করে উঠে দাঁড়ালো তারপর নিজের হাত এগিয়ে দিয়ে বললো,

‘ আজ তবে আসি স্যার ভাগ্যে থাকলে আবার দেখা হবে।’

উওরে আদ্রিয়ানও মুচকি হেঁসে নিজের হাত এগিয়ে বললো,

‘ নিশ্চয়ই সময় করে এসো আমার অফিসে।’

‘ অবশ্যই স্যার।’

বলেই নীরব এগিয়ে গেল আহির দিকে, আহি এখনো সেইম ভঙ্গিতে নিজের ভাবনায় মগ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আহিকে ভাবনায় মগ্ন দেখে নীরব ওর মাথায় একটা টোকা দিয়ে বললো,

‘ তুই আবার কোন দেশে হারিয়ে গেলি, আহি?’

হুট করেই নীরবের কথা শুনে চমকে উঠলো আহি কিছুটা আমতা আমতা করে বললো সে,

‘ হুম হ্যাঁ কই কোথাও না তো, তুমি কি চলে যাচ্ছো ভাইয়া?’

‘ হুম,

হঠাৎই নীরবের চোখ যা আহির হাতের দিকে সঙ্গে সঙ্গে কিছুটা চিন্তিত কন্ঠ নিয়ে আহির হাত ধরে বললো নীরব,

‘ তোর হাতে কি হয়েছে আহি?’

‘ না তেমন কিছু নয় ভাইয়া ওই ফল কাটছে গিয়ে হাল্কা একটু কেটে গেছে।’

‘ কাজ কথার সময় সাবধানে করবি না। কাজ করার সময় চোখ কোথায় থাকে তোর।’

এই রকম নানা কিছু বলে বকতে শুরু করলো নীরব আহিকে। আর আহি বেচারি ছলছল চোখে শুধু তাকিয়ে রইলো নীরবের মুখের দিকে। আজ অনেকদিন পর আবার সে নীরবের কাজে বকা শুনছে।’

অন্যদিকে আদ্রিয়ান, আহি আর নীরবের কান্ড দেখে মটেও ভালো লাগছে না তাঁর। ভিতরে ভিতরে খুবই বাজে ফিল হচ্ছে। আদ্রিয়ান চটজলদি নিজের চোখ সরিয়ে ফেললো ওদের দিক থেকে। কেন যেন বর্তমানে আহি আর নীরবকে একসাথে মেনে নিতে পারছে না সে। তার ওপর কিছু বলতেও পারছে না যার কারনে আরো বেশি অসস্থি হচ্ছে আদ্রিয়ানের।’

_____

রিনিদের বাড়িতে সোফায় গোল হয়ে বসে আছে রিনির মা, বাবা আর ভাই। মুলত রিনির বাড়িতে আসার জন্য অপেক্ষা করছে ওনারা। অন্যদিকে
রিনির মা তো কেঁদেই চলে কখন থেকে কারন কিছুক্ষন আগে মেয়ের কথা শুনে সে ভেবে নিয়েছে তাঁর মেয়ে পাগল হয়ে গেছে। আর রিনির বাবা হতাশ কারন সে বুঝতে পারছে না তাঁর মেয়ে কি এমন বললো যার কারনে তাঁর বউ তাঁকে অফিস থেকে ডেকে এনেছে। এমন সময় সেখানে উপস্থিত হলো রিনি…
!
!
!
!
!
#চলবে…..

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে। অনেকেই হয়তো রেগে আছো রাগারই কথা, আমি জানি গল্প রেগুলার না দিলে গল্পের ওপর থেকে আগ্রহ কমে যায়। আসলে হুট করেই খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছি আমি। জ্বর, ঠান্ডা, কাশি তারওপর একদিন পর এক্সাম সব মিলিয়ে অবস্থা খুবই খারাপ। এর মধ্যে গল্প লেখা খুবই কষ্টকর। সবাই দোয়া করো আমার জন্য। যেন তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাই]

#TanjiL_Mim♥️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here