শাপলা ও সেতুর গল্প [পর্ব-১১]

0
170

#শাপলা_ও_সেতুর_গল্প #প্রভা_আফরিন [পর্ব-১১] সারাদিনের অফিসের ক্লান্তি, জ্যাম, শব্দদূষণ ঠেলে নবীন যখন বাসায় এলো দেখলো তার বোন নিলীমা স্বামী ও বাচ্চা নিয়ে হাজির। নবীনরা দুই ভাই তিন বোন। সবার বড় ভাই বিয়ের কিছুদিন পরই বউ নিয়ে আলাদা সংসার পেতেছে। আর বাকি তিনবোনই বয়সে নবীনের ছোট। দুইজনের বিয়ে হয়ে গেছে। আর সবার ছোটটি সবে কলেজ পাশ করলো। নবীন শ্রান্ত মুখে বোনের হালচাল জিজ্ঞেস করে ঘরে ঢুকে বিছানায় শুয়ে পড়লো। সারাদিন চেয়ারে বসে কাজ করতে করতে ওর মেরুদণ্ডে ইদানীং ব্যাথা হয়। বিছানায় দেহ মিলিয়ে যাওয়া মাত্রই নবীনের চোখ ভেঙে ঘুম নেমে এলো। এমন সময় তার মা এসে গায়ে আলতো ধাক্কা দিয়ে বললেন, “ঘামে ভেজা শরীর নিয়ে বিছানায় শুয়েছিস কেনো? চাদরটা একটু আগেই বিছিয়েছি। মেয়ে-জামাই কয়দিন এই ঘরে থাকবে ভুলে গেছিস।” নবীন খুব কষ্টে ঘুম জড়ানো লাল চোখজোড়া মেলে তাকালো। বললো, “ভুলিনি মা। শুধু শরীরে কুলাচ্ছিলো না।” নবীনের মা তাড়া দিয়ে বললেন, “জলদি উঠে চোখেমুখে পানি দিয়ে নে। এককাপ চা করে দেই, খেয়ে বাজারে যা।” “সকালেই না বাজার করে দিয়ে গেলাম।” “জানিস তো জামাই আমার হাতের খাসির মাংস খেতে পছন্দ করে। সেবার নাতনির জন্মদিনে যে রেধেছিলাম, এখনো তার প্রশংসা করে। মুখে লেগে থাকার মতো নাকি স্বাদ হয়েছিলো।” নবীন বিছানা থেকে উঠে বসলো। ওর ঘরটা তুলনামূলক বড় বিধায় বোনেরা শ্বশুরবাড়ি থেকে এলেই তার ঘর বেখল হয়ে যায়। এরপর বেদখল হয় মর্জি, টাকা, আরাম। নবীনের অবশ্য সেসব নিয়ে কোনো আফসোস নেই। বাবার এক্সিডেন্ট হওয়ার পর এক পা অচল হয়ে পড়ায় পুরো সংসারের দায়িত্ব অবধারিতভাবে নবীনের ঘাড়ে এসে পড়েছে। নবীন মানিব্যাগে হাত দিলো। বাবার নিয়মিত ঔষধের পাশাপাশি বোনেরা বাড়িতে এলে তাদের আহ্লাদের বাড়তি খরচের চাপ পড়ে ওর ঘাড়ে। কিছুদিন পর পরই একজন শ্বশুর বাড়ির সংসার তুলে নিয়ে চলে আসে। আবার কখনো দুইবোন একসাথেই চলে আসে। তখন বেতনের টাকায় টানাটানি লেগে যায়। নবীন বিরস মুখে বসে রইলো খাটে। ছোটবোন নিধির বান্দরবান ট্যুরের টাকা দিতে হবে এক সপ্তাহের মধ্যে। নাহলে নিধি খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে। আবার আরেক বোন-জামাইয়ের নানান আবদার। এ মাসে নিশ্চিত ধার-কর্জ করে চলতে হবে। নবীনের মা তাড়া দিয়ে বললেন, “হাতের কাজগুলো সেরে ফেলতে ফেলতে তুই জলদি করে দুই কেজি মাংস কিনে নিয়ে আয়। আধার হওয়ার আগেই রান্না বসিয়ে দেই। মেয়েরা তো জীবনেও রান্নাঘরে উঁকি দিয়ে দেখবে না। এই বয়সেও সব কষ্ট একা আমার।” নবীন হঠাৎ বলে বসলো, “একজন সহযোগী হলে একটু আরাম করতে পারতে।” “পারতাম তো। কিন্তু তোর বেতনে কুলোবে না। তোর বাবা সুস্থ থাকলে তোকে এত দায়িত্ব নিতে হতো না।” নবীন ইতস্তত করে বললো, “টাকা দিয়ে লোক রাখার চেয়ে পরিবারে একজন নতুন সদস্য আনা ভালো নয় কি? তাহলে সংসারেরও উপকার হতো।” নবীনের মা শীতল চোখে ছেলের দিকে তাকিয়ে রইলেন। এরপর বললেন, “আজকাল কি লজ্জা-শরম জলাঞ্জলি দিয়ে বসেছিস? এমনিতেই টানাটানির সংসার। তারওপর অবিবাহিত বোন আছে ঘরে। ছোট বোনের বিয়ে না দিয়ে নিজের কথা ভাবতে লজ্জা করে না?” নবীন হতভম্ব হয়ে বললো, “টানাটানির সংসার কিনা সেটা তো আমি বুঝবো। আমি কি তোমাদের অভাবে রেখেছি? আর আমার বিয়ের সাথে নিধির বিয়ের কিসের সম্পর্ক, মা? বউ এলে কি বোনকে ফেলে দেবো আমি? তাছাড়া নিধিকে কি এখনই বিয়ে দেবে তোমরা? ওর একটা ভবিষ্যৎ আছে না?” “বউ এলে কি হয় সেটা তোর বড় ভাইকে দেখে বুঝিসনি? ফোনে খোঁজ নেওয়া ছাড়া কোনোদিন দায়িত্ব নিতে এসেছে সে?” সাংসারিক ঝামেলা, পকেটে টান, মায়ের একরোখামি, সব মিলিয়ে নবীনের মেজাজ বেজায় গরম হলো। সে গলার স্বর তুলনামূলক উঁচুতে তুলে বললো, “তোমার মেয়েরাও তো কারো বাড়ির বউ হয়ে গেছে। তারা কি সংসার আলাদা করে দিয়েছে? ওরা সংসার করে খাচ্ছে না?” “আমার মেয়েদের সাথে তুই অন্যদের তুলনা করছিস?” “করছি। তোমার মেয়েরা আলাদাভাবে কোনো যোগ্যতা নিয়ে পৃথিবীতে আসেনি। তারাও মেয়ে, তারাও বউ। বড় ভাই সংসার ছেড়েছে বলে আমিও বিয়ের পর তাই করবো এই ভাবনা কেনো আঁকড়ে ধরে বসে আছো তুমি?” নবীনের মা বিলাপ করে বললো, “আমার সাথে এভাবে কথা বলতে পারলি তুই? আজ তোর বাবার আর্থিক সামর্থ্য নেই বলে…” “নেই বলে কি তোমাদের চাহিদা কমেছে? তোমাদের কষ্ট করে চলতে হয়েছে? এই যে মাসে দুইবার মেয়ে-জামাইদের লম্বা ফর্দ নিয়ে হাজির হও, ছেলেকে একবার জিজ্ঞেস করেছো কিছু লাগে কিনা? মোজাগুলো ছিড়ে গেছে, সেলাই করে পড়ছি খেয়াল করেছো? নাকি বাইরের মানুষের মতো তোমরাও জুতোয় ঢাকা চকচকে পা’ই দেখতে পাও?” নবীনের মা বিস্ময়ভরা চোখে ছেলের দিকে তাকিয়ে রইলেন। এরপর চোখের পানি ছেড়ে বলতে লাগলেন, “টাকার খোটা দিচ্ছিস নবীন? এই ছিলো আমার কপালে? এরজন্য তোদের কষ্ট করে বড় করেছি? মেয়েরা বাপের বাড়ি এসে একটু শখ-আহ্লাদ করে বলে এভাবে বলতে পারলি? লাগবে না তোর বাজারে যাওয়া। তুইও বিয়ে করে আলাদা হয়ে যা। আমার মেয়েদের শখ আমি গয়না বিক্রি করে পূরণ করবো। একসময় সব বিক্রি করে আর না পারলে মরে যাবো।” নবীন ব্যথিত চোখে মায়ের যাওয়ার দিকে খানিক সময় তাকিয়ে রইলো। গা ঝাড়া দিয়ে উঠে অফিসফেরত কুচকানো পোশাকেই বাজারের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেলো। দিনে হালকা বৃষ্টি হওয়ায় বাজারে হাটু সমান কাদায় মাখামাখি অবস্থা। নবীন প্যান্ট গুটিয়ে কিছুটা উপরে তুলে বাজারে ঢুকতে নিলেই লিখি ফোন করলো। নবীন রিসিভ করতেই বললো, “নবীন ভাই, আপনি কি বাড়িতে বিয়ে নিয়ে কথা তুলেছেন?” “আমি বিয়ে-শাদি করবো না, লিখি। চির কুমার হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” “আহারে! মন খারাপ করবেন না। যখন আপনার সব বোনের বিয়ে হয়ে বাচ্চা হয়ে যাবে তখন নিশ্চয়ই আপনার বাবা-মায়ের পাকা চুলওয়ালা, চামড়ায় বলিরেখা পড়া ছেলের প্রতি সদয় দৃষ্টি নিক্ষেপিত হবে। তখন দেখবেন ছেলের পক্ষের নাতি-নাতনি দেখার আশায় আন্টি আপনাকে বিয়ে দিতে উঠে পড়ে লাগবে। ওনারও তো একসময় শরীর পড়ে আসবে। সংসারের হাল ধরতে, মেয়েরা বাপের বাড়ি এলে তাদের যত্ন করতে কাউকে লাগবে। তখন যদি আপনাকে বিয়ে করতে বলে একদম করবেন না। চির কুমার থেকে যাবেন। তাতে একই সাথে বেশ কয়েকটা কাজ হবে।” “কি কি?” “আপনার প্রতি অবহেলা করার প্রতিশোধ নিতে পারবেন। কাজের ভয়ে আপনার বোনেরাও বাপের বাড়ি আসবে না। ফলে আপনার টাকা বেঁচে যাবে। আবার চির কুমার থাকার প্রতিজ্ঞাও রক্ষা করতে পারবেন।” নবীন আহত হলো। চোখ বুজে বললো, “লিখি, তুমি কি আমার সাথে ঠাট্টা করছো?” “একদম। আর শুনুন, আমার বিয়েতে কিন্তু আপনাকে দাওয়াত দিবো না। কে জানে? অন্যের বিয়ে দেখে যদি আপনি আবার ডিপ্রেশনে পড়ে যান! থাক বাবা আমার বাড়ির আশেপাশেও আপনার আসার দরকার নেই। আমাদের এলাকাতেই আসবেন না। আপনি বরং বসে বসে বুড়ো হোন।” “তুমিও এভাবে বলছো? জানো আমি আজকে মায়ের সাথে রাগারাগি করে ফেলেছি।” “গিল্টি ফিল হচ্ছে তাই না? এক কাজ করুন, আমি বিকাশে টাকা পাঠাচ্ছি। অবশ্যই ধার হিসেবে। আপনি টাকাটা উঠিয়ে সবার জন্য শপিং করে বাড়িতে যান। আপনার মায়ের অভিমানও থাকবে না, আপনার গিল্টি ফিলিংও থাকবে না।” লিখি ফোন রেখে দিলো। জ্বলজ্বল করতে থাকা স্ক্রিনে তাকিয়ে নবীনের দায়িত্ব ঠাসা বুক থেকে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে। মানুষগুলো কি নিষ্ঠুর নাকি সেই বেশি নমনীয়? ____________ সকাল থেকেই থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। ফুরফুরে হাওয়ার আলিঙ্গনে আবেশিত পরিবেশ। এমন দিনে কাজে যেতে ইচ্ছে হয় না। ইচ্ছে হয় অলসতাকে সঙ্গী করে কাঁথা মুড়ি দিয়ে আরেকটু ঘুমিয়ে নিতে। কিংবা খোলা বারান্দায় বৃষ্টির টুপটাপ ছন্দ ও তুলোর ন্যায় কোমল স্পর্শে মেতে নিজেকে উজার করে দিতে। প্রিয় মানুষটার সঙ্গে চায়ের আড্ডায় মেতে অহেতুক প্রাণ জুড়ানো গল্প করতে। প্রিয়কে জড়িয়ে ধরে তার চুলের গন্ধ নিতে। দুষ্টুমির ছলে তার গোছানো বসন এলোমেলো করে দিতে। তাকে আঁকড়ে সুখস্বপ্নে ডুব দিতে। ওয়েদার ডিমান্ড বলে কথা। কিন্তু যখনই সেই প্রিয় মানুষের মুখটাকে কল্পনা করতে ইচ্ছে করে তখনই রাসিফের নিজের গালে দুটো শক্তপোক্ত চ’ড় বসাতে মন চায়। দুনিয়াতে কি কল্পনা করার জন্য আর কোনো মেয়ে ছিলো না? আবেগময় টলমল মুহূর্তে ওই সরু থুতনির অধিকারী, ঘাড় ছাড়ানো ঝাড়ুর মতো চুলের মেয়েটাই কেনো আসবে? শেষে কিনা কল্পনাতেও মেয়েটা বিভ্রান্ত করতে হাজির! রাসিফ দুম করে শোয়া থেকে উঠে বসলো। তার মনের উথলে ওঠা আবেগে কেউ লেবু কচলে তেতো করে দিয়েছে। রাসিফ দাত না মেজেই ঘর ছেড়ে বের হলো। শুনতে পেলো নানি বিয়ের কথা তুলেছে। নাহিদা বানু মেয়েকে বলছেন, “আরেকবার চিন্তা কর জাহানারা। একটা ছোটমোটো মেয়ে বিয়ে করিয়ে আনবি, নিজের হাতে সংসারের জন্য মানুষ করে নিবি। চাকরি করা মেয়ে আনার দরকার আছে?” জাহানারা মায়ের কথায় বেজায় বিরক্ত। লিখিকে তিনি দেখে এসেছেন। মেয়েটা বুদ্ধিমতি। আচরণেও বেশ ভাল। আজকালকার মেয়েদের মতো এত উশৃংখলতা নেই। এই সংসারে ওনার দুই পাগলাটে ছেলেমেয়েদের জন্য আরেকজন পাগলাটে কম বয়সী মেয়ে আনার চেয়ে লিখি ঢের ভালো। জাহিদুল ইসলামেরও রাসিফকে পছন্দ। দুই পরিবার ধীরে ধীরে এগোচ্ছে। রুনি আলুভাজি দিয়ে পরোটা মুখে পুড়ে নানির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বললো, “আসলেই তো মা। একটা ষোল-সতের বছরের ফর্সা, লম্বা, সুন্দর মেয়ে হলে ভাইয়ের সঙ্গে বেশ মানাবে। তুমি ওই লিখালিখি মেয়েটাকে বাদ দিয়ে দাও। ওই মেয়েটার জন্যই তো ছোট চাচাদের সাথে আমাদের ঝামেলা হলো। সাদিকের বিয়েতে আমাদের দাওয়াতও দেবে না।” জাহানারা রুনির দিকে তাকিয়ে বললেন, “এখানে তো লিখির দোষ নেই। লিখি জানতো না সাদিক রাসিফের চাচাতো ভাই হয়। তোর ভাইয়েরও দোষ আছে। সম্পর্ক করেছে অথচ মেয়েটার কার সাথে বিয়ে ঠিক হচ্ছে সেদিকে নজর রাখবে না?” রাসিফ বিতৃষ্ণা নিয়ে বললো, “উফ মা, কতবার বলবো মেয়েটার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। এটা একটা মিথ্যা কথা।” “সম্পর্ক না থাকলেই একটা মেয়ে পাবলিক প্লেসে তোর হাত ধরে বয়ফ্রেন্ড পরিচয় দেবে? আর সম্পর্ক না থাকলেও বা, মেয়েটাকে আমার মনে ধরেছে। পাগলের সংসারে একজন পাগলের ডাক্তারও দরকার।” রাসিফ মুখ গুজে বসে রইলো। রুনি মায়ের দিকে হেলে চাপা গলায় বললো, “তুমি কি নিজেকেও পাগল বলছো, মা?” জাহানারা দুই আঙুলের সাহায্যে মেয়ের মাথায় ধাক্কা দিয়ে পেছনে সরিয়ে বললেন, “হ্যাঁ, পাগলদের সাথে থেকে আমিও পাগল হয়ে গেছি।” রুনি নিজেকে সামলে এবার নানির দিকে হেলে বসলো। বললো, “শোনো নানি, ভাইয়ের জন্য অল্পবয়সী মেয়েই বেশি ভালো হবে। আমার কাছে একটা পাত্রী আছে।” নাহিদা বানু ভাজ পড়া কপাল আরেকটু কুঞ্চিত করে বলেন, “কে সেই পাত্রী?” “আমার ননদ জেসমিন। সুন্দর গায়ের রঙ, অল্প বয়স, বাপের টাকাও আছে অনেক। মেয়ের সম্পত্তির ভাগ কিন্তু তার স্বামীই পাবে। ভাবতে পারছো কত সুবিধা!” “ওই মেয়ে! ওই মেয়ে তো বুকের ওড়না কি জিনিস তাই জানে না। ওকে করবো নাতির বউ? তোর বুদ্ধি আর জেসমিনের বুকের ওড়না দুটোই এক জিনিস। কোনোটারই অস্তিত্ব নেই।” রুনি চুপসে গেলো। নাহিদা বেগমের কোমড়ে বাতের ব্যথা। তিনি পূর্ণিমার সাহায্যে ঘরে চলে গেলেন। রাসিফ বাসি মুখে পরোটা ও ভাজি খেতে শুরু করলো। পরিবেশ যখন একটু শান্ত হয়ে এসেছে। সে আবারো মায়ের কাছে মিনমিন শুরু করলো, “ও মা?” “কি?” “বিয়েটা ভেঙে দাও।” “কেনো?” “আমি ওই মেয়েকে বিয়ে করবো না।” “কি জন্য করবি না?” জাহানারা ছেলের দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালেন। রাসিফ একটু সময় নিলো। এরপর নিচু কন্ঠে বললো, “মেয়ের বয়স বেশি।” “তোর বয়স কত?” “ছাব্বিশ, দুমাস পর সাতাশ হবে। কেনো?” “মেয়ের বয়স পঁচিশ। বেশি হলো কি করে? আমি আর তোর বাবা সমবয়সী ছিলাম তা জানিস?” রাসিফ চুপ করলো। একটু পর আবারো বলে উঠলো, “কিন্তু মা, মেয়েটা আগে প্রেম করেছে। আবার ছ্যাকাও দিয়েছে। বিয়ের আগে প্রেম করা মেয়েদের মাঝে ভেজাল থাকার সম্ভাবনা আছে। আমি এমন মেয়ে বিয়ে করতে চাই না।” রুনি মাঝখান দিয়ে বললো, “তাহলে তো তোর মাঝেও ভেজাল আছে ভাই।” রাসিফ অবাক হয়ে বললো, “আমার মাঝে?” “কেনো ভুলে গেলি? সেই যে ক্লাস টেনে থাকতে একটা মেয়ের সাথে চিঠি চালাচালি করতে গিয়ে ধরা খেলি। মা তো আমার নতুন কেনা চটিজুতো জোড়া দিয়ে তোকে পেটালো। নতুন চটিগুলো আর পায়ে দেওয়াই হলো না। আহারে! আমার জুতোজোড়া অকালে মারা গেলো।” পূর্ণিমা টেবিলের সব এঁটো থালাবাসন গুছাতে গুছাতে রুনির আফসোস ভরা কথা শুনে খিকখিক করে হেসে ফেললো। রাসিফ চোখের সামনে মানসম্মানকে পদদলিত হতে দেখে দাত কিড়মিড় করে বললো, “আপারে, তুই শ্বশুরবাড়ি যা। নাহলে দুলাভাইকে এবার আমিই আরেকটা বিয়ে করাবো।” চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here