তোমাকে পর্ব 18.1

0
183

তোমাকে পর্ব 18.1

মুনিরদের বাড়িতে তিনটা শোবার ঘর I মুনিরের ঘরটা সামনের দিকে I ঘরটা বেশ বড় , পুরনো আসবাব দিয়ে সাজান I একটা বড় মেহগনি কাঠের খাট ঘরের মাঝ বরাবর রাখা I দেয়াল ঘেঁষে লেখার টেবিল আর বিশাল বইয়ের সেলফ I অন্যপাশে কাপড়ের আলমারি I ঘরের সাথে লাগোয়া বিশাল বারান্দা I বারান্দা থেকে উঠোনের একটা অংশ দেখা যায় I বারান্দায় একটা বড় 3 সিটের সোফা রাখা I মুনিরের রাতে ঘুম না এলে ও প্রায়ই এখানে বসে বই পড়ে I মাঝে মাঝে বসে বৃষ্টি দেখে I ওর নিঃসঙ্গ রাতগুলো এভাবেই কেটে যায় I

পাশের ঘরটাতে রেহানা বেগম থাকেন নাতনি কে নিয়ে I এই ঘরটা ও বেশ বড় I দুজনের জন্য বড় একটা খাট, কাঠের আলমারি I পাশেই তনুর ছোট গোলাপি রংয়ের পড়ার টেবিল I কোনার দিকে আরও একটা ঘর আছে I নাজমা এ বাড়িতে এলে সাধারণত এই ঘরেই থাকে I ঘরটা ছোট হলেও বেশ খোলামেলা এই ঘরটাই সেঁজুতিকে দেওয়া হয়েছে I

খাওয়ার পর নাজমা অনিমাকে নিয়ে এই ঘরে এলো I বাচ্চারা তখন পাশের ঘরে খেলায় ব্যস্ত I
নাজমা বললো
– ভাবি তোমার সাথে একটু কথা ছিল
– হ্যাঁ বলো না
– মা চাইছে তোমার জন্য একটা নতুন শাড়ি আর একটা আংটি কেনা হোক I আমরাই কিনে রাখতাম কিন্তু তোমার যদি পছন্দ না হয় তাই কেনা হয়নি I তুমি একটু ভাইয়ার সাথে গিয়ে কিনে নিয়ে আসবে ?
– এখন?
– আর তো সময় নেই ভাবি
– আজতো শুক্রবার ও নামাজে যাবেনা ?
– ভাইয়া অলরেডি চলে গেছে
– আচ্ছা, তাহলে আমি নামাজ পড়ে রেডি হচ্ছি
– থ্যাংক ইউ ভাবি

বেরোনোর আগে বিদায় নিতে গেলে রেহানা বেগম অনিমার হাতে দুটো সোনার বালা পরিয়ে দিয়ে বললেন
– এটা আমার শাশুড়ি আমাকে দিয়েছিলেন আমি আমার বড় বউকে দেবো বলে এত বছর ধরে তুলে রেখেছিলাম আজ তোমাকে দিয়ে শান্তি পেলাম I

অনিমা দেখল অনেক পুরনো ডিজাইন I অ্যান্টিক জুয়েলারি অনিমার ভীষণ প্রিয় I অনিমা বালা দুটো ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখল I তারপর বলল
– আমার খুব পছন্দ হয়েছে
রেহানা বেগম ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন
– যাও মা I তাড়াতাড়ি ফিরে এসো

একটু দূরে কোথাও যাওয়ার ইচ্ছা থাকলে ও সময় স্বল্পতার কারণে ওদের বসুন্ধরা মার্কেটে যেতে হলো I

– কিছু খাবে অনিমা ? ভেতরে ঢুকে জানতে চাইল মুনির I
– না , আমি তো অনেক কিছু খেলাম সকালে I তুমি কিছু খাও I তোমার তো খাওয়া হয়নি সকাল থেকে I আমি বরং কফি খাই তোমার সাথে I
মুনির একটু অবাক হলো I আসলেই ব্যস্ততার কারণে সকাল থেকে কিছু খাওয়া হয়নি Iকিন্তু সেটা অনিমা কি করে বুঝলI অনিমা নিজেই বলল
– তুমি তো এত সকালে কিছু খাও না আর আসার পর তোমাকে কিছু খেতেও দেখলাম না I চলো তাহলে আগে কিছু খাবেI
মুনির একটু হাসলো I শুক্রবার বলে টপ ফ্লোরের ফুড কোর্ট এ দারুন ভির I স্বচ্ছ রেলিং ঘেঁষেএকটা দুই সিটের টেবিল পেয়ে গেল ওরা I এই টেবিলগুলো এত ছোট যে দুজন হাত ও রাখা যায়না I মুনির চিকেন স্যান্ডউইচ আর দুটো ক্যাপাচিনো অর্ডার করলো I অনিমা অনেকক্ষণ ধরে কিছু বলার জন্য উসখুস করছিল

-মুনির তোমাকে কয়েকটা কথা বলার ছিল
– কি ? হোটেল এর ব্যাপারে ?
– না, বিয়ের ব্যাপারে
-বল
– তুমি বিয়েটা কেন করছ ? শুধুমাত্র আমাকে সাহায্য করার জন্য ?
– কি করলে তোমার মনে হবে যে সাহায্য করার জন্য বিয়ে করছি না ?
– তাহলে কেন করছ ?
-তুমি কি এই বিয়েটা করতে চাইছো না ?
– না
– আচ্ছা ঠিক আছে I তোমাকে কয়েকটা প্রশ্ন করব এর একটার ও অ্যানসার যদি ‘না হয় তাহলে আমি আর কখনো তোমাকে বিয়ের কথা বলবো না
– কি প্রশ্ন ?
– তুমি কি আমাকে বিশ্বাস করো ?
– দেখো ব্যাপারটা বিশ্বাসের না ..
– YES OR NO ?
– হ্যাঁ করি
– তোমার কি মনে হয় তুমি আর সেঁজুতি আমার সঙ্গে ভালো থাকবে ?
– ব্যাপারটা সেটা না
– অনিমা হ্যাঁ অথবা না এ জবাব দাও
– হ্যাঁ
– তুমি কি কখনো আমাকে ভালোবেসেছিলে ?
অনিমা বিদ্যুৎ বেগে উঠে দাঁড়ালো তারপর বলল
-THAT’S ENOUGH . আমি তোমার স্টুডেন্ট নই যে তুমি আমাকে এখানে বসিয়ে ভাইবা নেবে I
মুনির হাসতে হাসতে বলল
– আচ্ছা আচ্ছা I এটা আউট অফ সিলেবাস ছিল শুধু তোমাকে রাগানোর জন্য I প্লিজ বস I

অনিমা বসলোI মুনির বলল

-এটাই লাস্ট কোশ্চেন I আমি যদি এখন তোমাকে বলি আমার কঠিন কোন অসুখ হয়েছে আমি আর কয়েক বছরের মধ্যেই মারা যাবো আমি আমার জীবনের শেষ কয়েকটা বছর তোমার সঙ্গে থাকতে চাই তাহলে কি তুমি বিয়েতে রাজি হবে নাকি তখন ও ভাববে আমি তোমাকে দয়া করছি I

অনিমার মুখ মুহূর্তে ফ্যাকাশে হয়ে গেল I চোখ ছল ছল করে উঠলো I অনিমা হাত তুলে চোখ মুছেতে যাবে তার আগেই মুনির ওর হাতদুটো নিজের হাতের মধ্যে মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলল I অনিমার গাল বেয়ে জলের ধারা নেমেছে I মুনির মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলI ওর বিশ্বাস হচ্ছে না অনিমা ওর জন্য কাঁদছে I
কয়েক মুহুর্ত পর মুনির ওর হাতদুটো ছেড়ে দিল তারপর চেয়ারে হেলান দিয়ে বলল
-এবার বল তুমি কি বিয়ে করতে চাও ?
– হ্যাঁ চাই I
-গুড I ফর ইউর ইনফর্মেশন আমার কোন কিছুই হয়নি I তুমি কোন মৃত্যুপথযাত্রী লোককে বিয়ে করছ না I
– আমি তোমার কথা বিশ্বাস করি না
মনির হেসে ফেললো
– একটু আগেই তুমি বলেছ যে তুমি আমাকে বিশ্বাস করো

অনিমা জবাব দিল না I বাইরের দিকে তাকিয়ে রইল I মুনির উঠে খাবার আনতে চলে গেল I মুনির ফোন নিয়ে যায়নি I ফোনের আলো টা হঠাৎ করে জ্বলে নিভে গেল I হয়ত কোন মেসেজ এসেছে I অনিমা তাকিয়ে দেখল ওর ফোনের হোম স্ক্রিনে একটা মেয়ের ছবি I সমুদ্রের ধারে I সম্ভবত কক্সবাজারে হবে I ওর বউয়ের ছবি কি ? নিশ্চয়ই হানিমুন করতে গিয়েছিল I এতই যদি প্রেম বউ এর জন্য তাহলে আবার বিয়ে করার দরকার কি I অসহ্য I

পর্ব 18.2

অনিমা সেদিনের ধকলটা নিতে পারল না I রাত গভীর হতেই ওর কাঁপুনি দিয়ে জ্বর এল I পুরো তিন দিন ধরে জ্বর রইল I এই তিন দিনে ও শুধুই মুনিরের কথা ভাবল I খুব ইচ্ছা হল ওর সঙ্গে কথা বলতে I ওর একটা ফোন থাকলে বেশ হত I আচ্ছা অনিমা যদি ওকে একটা ফোন কিনে দেয় ও কি নেবে ? মনে হয় নেবে না I হাসিব ওকে বই কিনে দিতে চেয়েছিল ও তাই নেয় নি I তবে অনিমা একটা ব্যাপার বুঝে গেছে I মুনির কে ছাড়া ও থাকতে পারবে না I হয়তো মুনির ওকে এখন ভালোবাসে না একসময় নিশ্চয়ই ভালবাসবে I অনিমা ঠিক করে ফেলেছে ও মুনির কে ওর মনের কথা জানাবে I ও তো কিছু চাইছি না শুধু নিজের অনুভূতিটাই বলবে I

এরমধ্যে একদিন হাসান সাহেব এলেন অনিমা কে দেখতে I অনিমা বেশ অবাক হলো I ওর জ্বর হলে উনি কখনো আসেন না I মিঠু খেলার কাছ থেকে খোঁজ নেন I হাসান সাহেব একটু ইতঃস্তত করে ভেতরে এসে বললেন
– এখন শরীর কেমন ?
– জি ভালো
– তোমাকে একটা জরুরী কথা বলার ছিল
– জি
– আমার বন্ধুর ছেলে এসেছে আমেরিকা থেকে তিন সপ্তাহের জন্য I বিয়ে করে বউ নিয়ে যাবে I আমি চাই তুমি একবার ওর সঙ্গে দেখা কর I ওর যদি তোমাকে পছন্দ হয় তাহলে ..

অনিমা হতভম্ব হয়ে গেল I ওর নিজের পছন্দ অপছন্দের কোন গুরুত্ব
নেই

– আমি এখন বিয়ে করতে চাই না বাবা
– না চাইলে করবেনা কিন্তু একবার দেখা করে এসো

অনিমা জবাব দিল না I ওর মনটা অসম্ভব খারাপ হয়ে গেল I
– ছেলে খুব ভালো I দেখতে সুন্দর I ইঞ্জিনিয়ার I ওখানেই বড় হয়েছে I এখনই যেতে পারলে তোমার পড়াশোনাটা ওখানেই শেষ করতে পারতে I
– আমি এখানেই পড়াশোনা শেষ করতে চাই
– আচ্ছা আচ্ছা এখন বিয়ে করতে না চাইলে করো না
– থ্যাংক ইউ বাবা

হাসান সাহেব চলে গেলেন I অনিমা উঠে আলমারি থেকে একটা বই বের করল I ও ঠিক করল কালকেই মুনিরের সঙ্গে কথা বলবে I

চলবে…..

লেখনীতে

অনিমা হাসান

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here