#ভুলবশত_প্রেম পর্ব ১
#লেখিকা :সারা মেহেক
” এই যে মিস, আপনার ঐ সুদীর্ঘ শাড়ীর আঁচলটা সামলে রাখুন দয়া করে। আপনার এ কাণ্ডে কারোর এক্সিডেন্ট হতে খুব বেশি সময় লাগবে না৷ ”
পিছন হতে অপরিচিত এক পুরুষালি কণ্ঠস্বর শুনে আমি চমকে ঘাড় ঘুরে তাকালাম। বাসন্তী রঙের পাঞ্জাবি পড়া উজ্জ্বল শ্যামলা বর্ণের অপরিচিত এক যুবককে দেখে ভ্রুজোড়া কিঞ্চিৎ কুঁচকে এলো আমার। যুবকটিকে দেখে খুব অল্প সময়ের জন্য আমার মস্তিষ্কে এই প্রশ্ন এলো যে, উনাকে আমি এর পূর্বে কোথাও দেখিনি। অথচ এই যুবক আপুর বিয়ের অনুষ্ঠানে এসেছে! অদ্ভুত ব্যাপার।
আমার এ ভাবনার মাঝে ফোড়ন কেটে যুবকটি হঠাৎ বলে উঠলো,
” আমাকে এভাবে দেখার কিছু নেই। প্লিজ আপনার শাড়ীর আঁচল সামলান। আর একটু হলেই আমি আপনার শাড়ীর আঁচলে ভুলবশত পা দিয়ে ফেলতাম। এতে আপনি তো পড়তেনই, সাথে আমাকেও ফেলে দিতেন। এতো ইররেসপন্সিবল হলে শাড়ী পরার দরকার কি?”
এই বলে কোনোরূপ প্রত্যুত্তরের অপেক্ষায় না থেকে যুবকটি তার স্থান ত্যাগ করলো। হঠাৎ আগমনকারী অপরিচিত এবং অভদ্র যুবকটির এহেন কথায় আমি খানিক সময়ের জন্য স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। স্থির দৃষ্টিতে ভাবতে লাগলাম, সোজা ভাষায় কি সুন্দর করে ইররেসপন্সিবল বলে আমায় অপমান করে গেলো সে। অথচ আমি বোকার মতো কিছু জবাব না দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম! রাগে আমার সমস্ত শরীর রি রি করতে লাগলো। এমন প্রতিক্রিয়া মোটেও কাম্য নয়। কিন্তু এখন কিছু করার নেই। আপাতত নিজের রাগকে সামলে আপুর হলুদের অনুষ্ঠানে মনোযোগী হতে হবে। অভদ্র ঐ যুবকটিকে পরে সামনে পেলে সুযোগ বুঝে দেখে নিবো, এই ভাবনা ভাবতে ভাবতেই সামনের দিকে পা বাড়ালাম আমি।
আজ আপুর হলুদের অনুষ্ঠান থাকায় সকাল থেকেই ভীষণ ব্যস্ত সময় কাটছে আমার। বরং শুধু আমার নয়, বাড়ীর ছোট বড় সকলেরই ব্যস্ততায় সময় কাটছে। ব্যস্ত সময় কাটবে না তো কি। বাড়ির মেয়ের বিয়ে বলে কথা!
বাসার ছাদে আপুর হলুদের অনুষ্ঠানের সব আয়োজন করা হয়েছে। এজন্য ছাদে লোক সমাগম বেশি। তবে এ লোক সমাগমের অধিকাংশই পরিচিত মানুষজন। হাতেগোনা কিছু অপরিচিত মানুষ এসেছে যাদের সাথে কখনো দেখা হয়নি৷ এর মধ্যে ঐ অভদ্র যুবকটি অন্যতম।
হলুদের সাজ শেষে যখন আপু বাসায় এসে পৌঁছালো তখন রীতিমতো বাসায় এক দুঃখ ভারাক্রান্ত মহল বিরাজ করছে। সবচেয়ে বেশি কান্না করেছে আপু এবং আম্মু। আমি আর আভাও কান্না করেছিলাম। তবে আপু আর আম্মুর ধারের কাছেও ঘেঁষেনি সে মূহুর্তে। কারণ এই দুজনের আশেপাশে থাকলে রুমটা ছোটখাটো একটা লবনাক্ত সমুদ্রে পরিণত হতো তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সাথে আমাদের এতো কষ্টের মেকআপও সেই পানিতে ধুয়ে যেতো। এসব ঘটনা এড়াতেই আমরা দুজন দূরে দূরে ছিলাম। কাজিনগুলোও সব দূরে দূরে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছিলো। আপু এবং আম্মুর কান্না পর্ব শেষে আমি, আভা এবং আমার দুজন কাজিন লামিয়া আর তাসনিম মিলে আপুকে স্টেজ অব্দি নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিলাম। আমরা চারজন আপুর মাথার খানিকটা উপরে লাল রঙের একটা ওড়নার চারকোনা ধরে ছাদে যাওয়ার জন্য সিঁড়ি বেয়ে উঠতে লাগলাম। আমাদের পিছু পিছু আপুর বান্ধবীরা এবং আমাদের আরো কিছু কাজিন ক্ষীর,মিষ্টি, হলুদের ডালা নিয়ে আসতে লাগলো।
আমাদের ছাদে উঠার পরপরই চারপাশে থাকা ফোনের ক্যামেরার সংখ্যা যেনো তরতর করে বৃদ্ধি পেলো। এতো এতো ক্যামেরার ফলে হাসিখুশি আমার মনটা মূহুর্তেই অস্বস্তিতে ছেয়ে গেলো। অস্বস্তির মাত্রা ধীরেধীরে বেড়ে যাওয়ায় হাঁটতে খানিক অসুবিধাও হলো আমার। কিন্তু আপুর জন্য কোনোমতে নিজেকে সামলে নিয়ে স্টেজ অব্দি গেলাম। আপুকে স্টেজে বসিয়েই আমি একপ্রকার সকলের চোখের আড়ালে যেতে স্টেজের পাশে এসে দাঁড়িয়ে পড়ি। কিন্তু এখানে দাঁড়িয়েও স্বস্তি পেলাম না। আপুর স্টেজে বসে পড়ার সাথে সাথেই স্টেজের আশেপাশে ক্যামেরার ক্লিক ক্লিক শব্দের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলো। যারা এখন ছবি তুলছে তারা একাংশ আমার অপরিচিত। কিন্তু এর মাঝে অধিকাংশই পরিচিত। এতো পরিচিত মানুষ থাকার পরও ঐ গুটি কয়েক অপরিচিত মানুষদের জন্য আমি আপুর পাশে বসে কয়েকটা ছবি তুলতেও দ্বিধা বোধ করলাম। এ এমন এক পরিস্থিতি যে আমার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আমি সেসব মানুষকে এ নিয়ে নিষেধ করতে পারছি না। ফলস্বরূপ আমি আমার স্থান হতে পিছিয়ে যেতে লাগলাম৷ কিন্তু দু কদম পিছিয়ে যেতেই ভুলবশত কারোর পায়ের উপর আমার পরনের হিল দিয়ে একপ্রকার পিষে দিলাম আমি। সাথে সাথে নিজের ভুল বুঝতে পেরে জিব কেটে সামনের দিকে এগিয়ে গেলাম। নিজের ভুল বুঝতে পেরে সরি বলার উদ্দেশ্যে এবং আমার হিলের নিচে কার পা পড়েছিল তা দেখতে আমি পিছনে ঘুরে তাকালাম। পিছনে ঘুরতেই অভদ্র সেই যুবকটিকে দেখে বড়সড় একটা ধাক্কা খেলাম আমি৷ ঠিক সেই মূহুর্তে ‘সরি’ বলার ভাবনা মস্তিষ্কে আসাতে নিজের উপর প্রচণ্ড রাগ হলো আমার। এজন্য সরি না বলেই জায়গাটি ছেড়ে চলে যেতে চাইলাম আমি৷ কিন্তু যুবকটির কিছু বলার স্পৃহা আমাকে সেখানে দাঁড়িয়ে পড়তে বাধ্য করলো। তবে ভাগ্যের জোরে যুবকটির মুখ হতে তিক্ত কিছু বচন শোনার পূর্বেই খালামনি আমাকে ডাক দিলো। স্টেজের ওপাশ হতে ধমকের সুরে আমার উদ্দেশ্যে বললো,
” এই মিম, তুই ওখানে কি করছিস! নাফিসার পাশে এসে বোস৷ এ সময়ে তুই আর আভা ওর পাশে একটু বসে থাকবি। তা না করে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে! আয় এদিকে।”
খালামনির তাড়া শুনে আমি চোখের চশমাটা নাকের যথাযথ স্থানে রেখে অভদ্র যুবকটির দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালাম। যুবকটির চোখেমুখে বেশ রাগ এবং বিরক্তি উপচে পড়ছে। তার এ রাগ এবং বিরক্তির কারন উদঘাটন করতে আমার খুব বেশি সময় লাগলো না।
খালামনি আমাকে আরো একবার তাড়া দিতেই আমি আর কিছু চিন্তা না করেই সেদিকে পা বাড়ালাম। পিছে লক্ষ্য করলাম, যুবকটি ফিসফিস করে কিছু বলছে। কিন্তু কি বলছে তা বুঝে উঠতে পারলাম না।
®সারা মেহেক(গ্রুপ সারা’র গল্পকুঞ্জ)
১
7
#চলবে
( গল্পটি নিয়ে কোনোরকম প্রশ্ন করবেন না দয়া করে। যাদের পড়তে ইচ্ছে করে তারা পড়বেন৷ বাকিরা এভয়েড করবেন🙂। যারা পড়ছেন, দয়া করে বলে যাবেন প্রথম পর্বটি কেমন লাগলো। আশানুরূপ প্রতিক্রিয়া না পেলে গল্পটি ডিলিট করে দিব
আর #নব্য_দিনের_সূচনা ২য় খণ্ড যথাসময়ে পেয়ে যাবেন। হ্যাপি রিডিং❤️)