#ভুলবশত_প্রেম পর্ব ১৭

0
622

#ভুলবশত_প্রেম পর্ব ১৭
#লেখনীতে:সারা মেহেক

১৭

আদ্রিশের হেন প্রশ্নের জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। ফলে উনার প্রশ্ন শুনে আমি বেশ ভড়কে গেলাম। মুখ দিয়ে বের হলো না টু শব্দটুকুও। আদ্রিশ আমার হেন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ শেষে মৃদু হাসলেন। বললেন,
” এর মানে, আমার প্রশ্নের জবাব ‘হ্যাঁ’, হবে? ”

আমি পুনরায় কোনোরূপ জবাব দিতে পারলাম না৷ কেনো যেনো কোনো এক কারণে আমি এ প্রশ্নের জবাব দিতে পারছি না৷ মনেও সাহস জুগিয়ে উঠতে পারছি না৷ ফলস্বরূপ বিনাবাক্যে নতমস্তকে নিশ্চুপ বসে রইলাম আমি। আদ্রিশও নিশ্চুপ রইলেন। বেশ কিছুক্ষণ পর উনি ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে জিজ্ঞেস করলেন,
” সাদিককে আগে থেকেই চিনতে?”

উনার প্রশ্ন শোনার পরও আমি কিয়ৎক্ষণ চুপ রইলাম। অতঃপর মনে আত্মবিশ্বাস এবং সাহস জুগিয়ে মাথা তুলে চাইলাম উনার দিকে। কাষ্ঠ হেসে বললাম,
” পছন্দ করার জন্য কি আগে থেকেই পরিচিতি থাকতে হয়? পছন্দ তো প্রথম দেখায়ও হয়ে যেতে পারে। ”
এই বলে আমি প্রলম্বিত নিঃশ্বাস ছাড়লাম। অতঃপর দৃঢ়চিত্তে স্মিত হেসে বললাম,
” এবং মজার ব্যাপার কি জানেন? এ ধরণের ‘প্রথম দেখায় পছন্দ হওয়া, প্রেম, মনে ধরা’ ব্যাপারগুলো টিকে কম। এগুলো হয় নশ্বর। যেমনটি আমার ক্ষেত্রে হয়েছে।”

এই বলে আমি নিরস দৃষ্টিতে আদ্রিশের দিকে চাইলাম। আদ্রিশও গভীর চাহনিতে আমার দিকে চেয়ে রইলেন। পেলব গলায় আমায় জিজ্ঞেস করলেন,
” কষ্ট পাচ্ছো না?”

আমি উনার প্রশ্নে এক দফা হেসে দিলাম। অতঃপর দৃঢ়চিত্তে বললাম,
” এ অনুভূতি যেমন নশ্বর, এর দ্বারা প্রাপ্ত দুঃখ, কষ্টও তেমন নশ্বর। এই যে, আমি এখন যেমন কষ্ট পাচ্ছি। দুদিন বাদে এ কষ্ট আর থাকবে না। সবকিছু আগের মতোই স্বাভাবিক হয়ে যাবে। কারণ আমি সাদিককে খুব গভীরভাবে পছন্দ করিনি। প্রথম দেখায় ভালো লেগেছিলো, এই যা। এভাবে হুটহাট একটু পছন্দ করেছিলাম বিধায় হুটহাট করেই একটু কষ্ট পেয়ে বসলাম, ব্যস। এখন এ নিয়ে তো বসে থাকলে চলবে না।”
এই বলে কিয়ৎক্ষণ নিজের ভেতরটা অনুভব করার প্রয়াস করলাম আমি৷ ধীরেধীরে অনুভব করতে পারলাম, পূর্বের ন্যায় সেই কষ্টের অনুভূতিটা এ মুহূর্তে আর নেই। এখন মোটামুটি স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছি আমি৷ এদিকে আদ্রিশ যেনো আমার নিকট হতে এমন কিছু শোনার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। তা উনার কিঞ্চিৎ বিস্মিত অভিব্যক্তি দেখেই টের পেলাম আমি।

আদ্রিশ আমার কথাগুলো বিশ্বাস করে নিতে চোখ কুঁচকে দ্বিধাগ্রস্ত গলায় জিজ্ঞেস করলেন,
” যা বলছো তা কি নিজের থেকে বলছো? আই মিন সিরিয়াসলি এসব বলছো তুমি?”

আদ্রিশের কথায় আমি সশব্দে হেসে উঠে বললাম,
” কেনো? অবিশ্বাস্য কেনো মনে হচ্ছে এসব? আমি যা বলছি, সিরিয়াসলি বলছি। আমি উনাকে আহামরি পছন্দ করি না। চোখের দেখায় একটু ভালোলাগা। অতঃপর নিজের এ কাজের জন্য কষ্টমূলক এক ফল পাওয়া। যাই হোক, আপাতত এসব ব্যাপারে কথা বলা বন্ধ করি?”

আদ্রিশ যেনো আমার কথায় বেশ স্বস্তি পেলেন। কিঞ্চিৎ হেসে বললেন,
” ওকে। ঠোঁটে একদম জিপ লক লাগিয়ে দিলাম। খাবার আসার আগ পর্যন্ত আর কোনো কথা নেই। আপাতত কিছুক্ষণ মৌনতা পালন করি।”

আদ্রিশের বাচনভঙ্গিতে আমি ফিক করে হেসে ফেললাম। কিছুক্ষণের মাঝেই খাবার চলে এলে আমরা স্বাভাবিক কিছু কথাবার্তা বলতে বলতে খেয়ে নিলাম।

.

এক সপ্তাহের জন্য ব্যাগপত্র গুছিয়ে বসে আছি আমি। গন্তব্য আপুর শ্বশুরবাড়ি। আজ বিকেলে হঠাৎ আপুর কল আসে আম্মুর ফোনে। আপু জানায়, ইমাদ ভাইয়া এক সপ্তাহের জন্য ভার্সিটি হতে ট্রেনিং এ শহরের বাহিরে যাবে। আবার কিছুদিন পর আপুর পরীক্ষা। এর মাঝে কিছু পেপার ওয়ার্কও সাবমিট করতে হবে। যার জন্য আমার আপুকে সাহায্য করতে হবে। এজন্যই আমাকে আপু তার শ্বশুরবাড়িতে যেতে বলেছে। এমনকি সেখানে থাকতেও বলেছে। তবে আমাকে ডাকবার প্রধান কারণ এটা না। নতুন জায়গায় আপু একা থাকবে, খুব কাছের কারোর সঙ্গ থাকবে না, এসব কারণেই মূলত আপু আমাকে ডেকেছে।
আপুর এ প্রস্তাব প্রথম দফায় আব্বু আম্মু কিছুতেই রাজি ছিলো না। তবে আপু যখন বললো, আপুর শ্বাশুড়িই আপুকে এ বুদ্ধি দিয়েছে যে আমাকে তাদের বাড়িতে গিয়ে থাকতে হবে, তখন আব্বু আম্মু এবং আমি বেশ অবাক হয়েছিলাম। আমি কিছুতেই নিজেকে বিশ্বাস করাতে পারছিলাম না যে নাসরিন আন্টী এমন বুদ্ধি দিবে।
নাসরিন আন্টীর কথা শোনার পরও আব্বু আম্মু রাজি ছিলো না। অতঃপর আপু বাধ্য হয়ে নাসরিন আন্টীকে আম্মুর সাথে কথা বলিয়ে দিলো। ফলস্বরূপ কিছুক্ষণের জোরাজুরিতে আম্মু রাজিও হয়ে গেলো।

মাগরিবের আজানের পর পরই ইমাদ ভাইয়া আমায় নিতে চলে এলেন। প্রথম প্রথম আভাকেও আমাদের সাথে নিতে চাইলেন উনি। কিন্তু এ সপ্তাহে আভার ক্লাসটেস্ট থাকায় ওকে নেওয়া হলো না আমাদের সাথে।
বাসায় সাজো সাজো নাস্তা করে ইমাদ ভাইয়ার অবস্থা রীতিমতো কাহিল। উনার চেহারার হাবভাব দেখার মতো হয়েছে। উনার হেন পরিস্থিতি দেখে আমি ও আভা হেসেই কূলকিনারা পেলাম না৷
ইমাদ ভাইয়া ভরপেটে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আমাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন।

ইমাদ ভাইয়াদের বাড়ি পৌঁছে আমার প্রতি নাসরিন আন্টীর খাতিরযত্ন দেখে অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছানো ছাড়া উপায় রইলো না আমার কাছে। উনার আন্তরিক ব্যবহারে আমি মুগ্ধ না হয়ে উপায়ন্তর পেলাম না৷ উনি যেমন মিশুক ঠিক তেমনিও যত্নশীল একজন মানুষ। নাসরিন আন্টীর আচরণ দেখে মুহূর্তেই বলে দেওয়া সম্ভব ইমাদ ভাইয়া কার আচরণ দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন।

নাসরিন আন্টী, আপু এবং ইমাদ ভাইয়ার সাথে কিছুক্ষণ গল্পগুজব শেষে দোতালায় আপুসহ আপুর রুমে চলে এলাম আমি। ইমাদ ভাইয়া গেলেন বাহিরে। আপু আমাকে রুমে দিয়ে কিছু কাজের জন্য নিচে চলে গেলো। আমি আপুর রুমে গিয়ে ধীরেসুস্থে ফ্রেশ হয়ে সোফায় বসে বসে রুমের প্রতিটি জিনিস দেখতে লাগলাম। ইমাদ ভাইয়া যে বেশ শৌখিন ধরণের একজন মানুষ তা রুমের সাজসজ্জা দেখেই স্পষ্ট বুঝতে পেলাম আমি। রুমের প্রতিটি শোপিস এক এক করে দেখতে দেখতে আমার দৃষ্টি একটি কাঁচের শোপিসের উপর। আমি উঠে গিয়ে সেই কাঁচের শোপিসটি হাতে নিয়ে দেখতে লাগলাম।

আচমকা পিছন হতে সশব্দে ‘নাফিসা ভাবী!’ ডাক শুনে ভীষণ চমকে উঠলাম আমি। ফলস্বরূপ অসাবধানতাবশত হাত হতে শোপিসটি পড়ে গেলো। মুহূর্তেই তা চূর্ণবিচূর্ণ পদার্থে পরিণত হলো। আমি স্তব্ধ হয়ে কিয়ৎক্ষণ ভাঙা শোপিসটির দিকে চেয়ে রইলাম। অতঃপর প্রচণ্ড ক্রোধে এ কাজে দায়ী লোকটিকে দেখতে চট করে পিছনে ফিরলাম আমি। পিছনে ফিরে আদ্রিশকে দেখে আমার ক্রোধ এবং বিস্ময়, দুটোর মাত্রাই পূর্বের তুলনায় বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেলো।
®সারা মেহেক( গ্রুপ সারা’র গল্পকুঞ্জ)

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here