#ভুলবশত_প্রেম পর্ব ২৪

0
581

#ভুলবশত_প্রেম পর্ব ২৪
#লেখনীতেঃসারা মেহেক

২৪

আমি কয়েক মুহূর্ত স্তব্ধ দৃষ্টিতে চিঠির পানে চেয়ে রইলাম। চিঠিতে লেখা প্রতিটা শব্দ, প্রতিটা বাক্য আমাকে ভাবনার অতল সাগরে ডুবিয়ে দিলো। সাথে অনুভব করছি, আমার হৃদপিণ্ড পুনরায় তার স্পন্দন গতি বাড়িয়ে তুলছে। আমার কানজোড়া লজ্জায় গরম হয়ে আসছে।
হঠাৎ আপুর ডাক শুনে আমি ঘাবড়ে গেলাম। তড়িঘড়ি করে চিঠিটা ভাঁজ করে ফুলসমেত ব্যাগের মধ্যে ডুকিয়ে গেস্টরুম হতে বেরিয়ে এলাম। রুম হতে বেরুতেই আপুর মুখোমুখি পড়ে গেলাম। আপু আমায় দেখে জিজ্ঞেস করলো,
” গেস্টরুমে কি করছিস তুই? আমি কখন থেকে তোর জন্য ওয়েট করছি!”

আপুর প্রশ্নে আমি শুকনো ঢোক গিলো বললাম,
” না মানে ঐ আর কি আমার একটা জিনিস রয়ে গিয়েছিলো। সেটাই নিতে এসেছিলাম। তুমি ডাইনিং এ যাও আপু। আমি ফ্রেশ হয়ে চলে আসছি।”
এই বলে আপুকে দ্বিতীয় কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে আপুর রুমে গেলাম।

——

বিকেলের দিকে আমার ফোনে হঠাৎ ইমাদ ভাইয়ার কল দেখে খানিক ঘাবড়ে গেলাম। মনের দূর প্রান্তে এক অশনিসংকেতের দেখা মিললো। ফলে কিছুটা ভীতি নিয়ে ইমাদ ভাইয়ার কল রিসিভ করেই সালাম দিলাম। ওপাশে ইমাদ ভাইয়া স্বাভাবিক কণ্ঠে সালামের জবাব দিয়ে বললো,
” কেমন আছো মিম?”

” আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি কেমন আছেন ভাইয়া? ”

” আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। ”
ওপাশে ইমাদ ভাইয়ার স্বাভাবিক কণ্ঠস্বর শুনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লাম। অতঃপর জিজ্ঞেস করলাম,
” কোনো সমস্যা ইমাদ ভাইয়া? হঠাৎ আমার ফোনে কল করলেন যে?”

ওপাশে এবার ইমাদ ভাইয়ার কণ্ঠস্বর কিছুটা বদলে গেলো। পূর্বের তুলনায় খানিক চিন্তিত কণ্ঠে বললেন,
” তোমার আপু কোথায়?”

” আপু তো ঘুমাচ্ছে ভাইয়া। আপুকে ফোন দিবো?”

” না না। ওকে ফোন দেবার দরকার নেই। তোমার সাথেই কথা বলার জন্য কল করেছিলাম আমি। ”

” হ্যাঁ বলুন ভাইয়া। কি বলবেন।”

” আচ্ছা? নাফিসার ফোনে বা তোমার ফোনে কোনো আননোন নাম্বার থেকে কল এসেছে এ পর্যন্ত? সোজা কথা বললে, রোহান কি আবারো কল করেছে নাফিসাকে?”

এতো দিনে রোহান ভাইয়ার কথা, তার কর্মকাণ্ডের কথা বেমালুম ভুলে বসেছিলাম আমি। আচমকা ইমাদ ভাইয়ার মুখে উনার নাম শুনে পুনরায় ভয় জেঁকে ধরলো আমায়। তবুও নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে ইমাদ ভাইয়াকে বললাম,
” না ভাইয়া। রোহান ভাইয়ার কোনো কল আসেনি। আপু তো আমাকে এ বিষয়ে কিছু বললো না। তাহলে হয়তো আসেনি। ”

” নাফিসা এ ব্যাপারটা লুকাতেও পারে মিম।”

” না ইমাদ ভাইয়া। এমন কিছুই হয়নি আমি নিশ্চিত। আপুর ফোনো রোহান ভাইয়ার কল আসলেও আপুর চেহারা সুরত দেখে একদম ধরে ফেলতাম আমি। কিন্তু আপু এখনও স্বাভাবিক আছে।”

” তাহলে ঠিক আছে। কিন্তু মাঝেমধ্যে ওকে নিয়ে ভয় হয়। যদি হঠাৎ একদিন রোহান কিছু করে বসে?”

ইমাদ ভাইয়ার এ প্রশ্ন আমার মনেও জাগ্রত হলো। তবে নিজেকে এবং ইমাদ ভাইয়াকে সান্ত্বনা দিতে বললাম,
” কিচ্ছু করবে না রোহান ভাইয়া। এতোদিনে এমনকি বিয়ের দিনেও যেহেতু এমন কিছু করেনি সেহেতু আর ভয় নেই। ”

” এতোদিনে কিছু করেনি এর মানে এ নয় যে, সামনেও সে কিছু করবে না। মনে রেখো, ঝড় আসার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্তও কিন্তু সবকিছু শান্ত স্বাভাবিক থাকে। ”

ইমাদ ভাইয়ার কথা আমার মাঝে আরো ভীতির সৃষ্টি করলো। আমি শুকনো একটা ঢোক বললাম,
” আপনি চিন্তা করবেন না ভাইয়া। কিছুই হবে না আপুর। আর বাসার সিকিউরিটি তো বাড়িয়ে রেখেছেন তো চিন্তা কিসে?”

” জানি না মিম। কিন্তু মাঝে মাঝে আমার খুব চিন্তা হচ্ছে। ভয় হয়, হঠাৎ বড় কিছু না হয়ে যায়। ”

” আপনি শুধু শুধু চিন্তা করছেন ভাইয়া। রিল্যাক্স হওয়ার চেষ্টা করুন।”

ওপাশে ইমাদ ভাইয়া প্রলম্বিত নিঃশ্বাস ছেড়ে বললেন,
” আচ্ছা রাখছি মিম। পরে কথা হবে। ”

” আচ্ছা ভাইয়া। ”
ওপাশে ইমাদ ভাইয়ার কল কাটার শব্দ শুনে আমি ফোন রেখে দিলাম। যদিও আমি ইমাদ ভাইয়াকে চিন্তা না করার কথা বলে সান্ত্বনা দিলাম কিন্তু আমি নিজেকে শান্ত করতে পারলাম না। সত্যিই তো, রোহান ভাইয়া হুট করে এতো নিশ্চুপ হয়ে যাবেন তা ভাবিনি আমি। বিয়ের দিন উনি যেভাবে আপুকে অনুরোধ করেছিলো তাতে উনাকে নির্ঘাত পাগলা প্রেমিক বলে মনে হয়েছিলো। আর শেষ কথায় যে হুমকি দিয়েছিলেন তাতে বেশ জোর ছিলো। মনে হয়েছিলো হয়তো সত্যিই উনি কিছু করে বসবেন৷ কিন্তু উনি সেদিন কিছু করেননি। এমনকি এখনো পর্যন্ত কিছু করেননি। আর আপুকেও কল করেননি৷ তাহলে ইমাদ ভাইয়ার কথামতো, এটি কি ঝড় আসার পূর্বের সতর্ক সংকেত? না কি আমরাই অতিরিক্ত ভাবছি?

—-

ঘড়িতে এখন সময় রাত বারোটা। আজ রাতের মেঘমুক্ত আকাশে অর্ধ চন্দ্রাকৃতির চাঁদ মামার উদয় হয়েছে। পূর্ণিমার মতো পুরো পৃথিবীতে এতো আলো না ছড়ালেও আজ তার আলো বিলিয়ে দেওয়ার মাত্রা কিছু কম নয়৷ আগামীকালের অর্ধেক পড়া শেষ করে রুমের লাইট নিভিয়ে আপুর রুমের ব্যালকনিতে একা বসে আছি আমি। আপু ঘুমের ওষুধ খেয়ে আজ গভীর ঘুমে মগ্ন। রাতের খাবারের কিছু পরেই হঠাৎ আপুর প্রচণ্ড মাথা ব্যাথা হওয়ায় আপু আজ তুলনামূলক জলদিই ঘুমিয়ে পড়ে। এজন্য এ সময়ে আজ একা একা সময় কাটাচ্ছি।

গ্রিলবিহীন ব্যালকনিতে বসে আজ রাতের পরিবেশটা পুরোপুরি উপভোগ করতেই রুমের লাইট বন্ধ করেছিলাম আমি। কিন্তু ইমাদ ভাইয়াদের গার্ডেনের আলোয় চারপাশ পুরোপুরি অন্ধকার হতে পারেনি। এ নিয়ে আজকে বিদ্যুতের উপর ভীষণ রাগ হলো। একে তো আজকাল প্রয়োজনে সে গায়েব হয় না। উপরন্তু কালেভদ্রে যখন সে গায়েব হয় তখন নিজের পরিবর্তে জেনারেটরকে তার দায়িত্ব দিয়ে যায়। ফলে ভীষণ ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও আজকাল চাঁদের আলোয় আলোকিত শহরটা উপভোগ করতে পারি না। উফ, কি ঝামেলা!

কানে ইয়ারফোন গুঁজে ব্যালকনিতে বসে মৃদু তরঙ্গের গান শুনছি আমি। এদিকে মানুষের গানের পাশাপাশি নিশুতি রাতের পরিবেশের ঝিঁঝি পোকার গানও শুনছি আমি। দুটো মিলে রাতের গানের পূর্ণাঙ্গ একটি সংমিশ্রণ তৈরী হয়েছে। এ নিশুতি রাতের পরিবেশটা আরো উপভোগ্য করে তুলতে ঘাটতি আছে শুধু বিদ্যুৎ মহাশয়ের গায়েব হওয়ার। অবশ্য সে গায়েব হয়েই বা কি লাভ। নিজের জায়গায় তো তখন জেনারেটর কে বসিয়ে রেখে যায়।
নিজের সাথে নিজেই কথা বলতে বলতে আচমকা ধুপ করে চারপাশ অন্ধকার হয়ে এলো। তাহলে আমরা মন মোতাবেক অবশেষে বিদ্যুৎ মহাশয় গেলো! ইশ! কিন্তু খুশি হয়ে কি লাভ? এখনই তো ঘটর ঘটর শব্দ করতে করতে জেনারেটর জ্বলে উঠবে।
কিন্তু পাঁচ মিনিট পার হওয়ার পরেও জেনারটের জ্বলে উঠলো না৷ তাহলে কি আজ জেনারেটর নষ্ট হয়ে গেলো! বাহ, আজ দেখি সব আমার মন মতো হচ্ছে! সব নিজের ভাবনা অনুযায়ী চলতে দেখে ভীষণ খুশি খুশি লাগলো মনের মাঝে। ফলে আমি চেয়ার ছেড়ে উঠে চোখজোড়া বন্ধ করে গানের তালে তালে মৃদু গতিতে ব্যালকনির এক প্রান্ত হতে অপর প্রান্তে হাঁটতে লাগলাম। আহ, এ পরিবেশ উপভোগ করার যেনো আলাদা এক মজাই আছে।

ধীর গতিতে হাঁটতে হাঁটতে ব্যালকনির এক কোনে এসে আচমকা কারোর সাথে ধাক্কা লাগতেই আমি চোখ খুললাম। ভাবলাম হয়তো আপু জেগে গিয়েছে। কিন্তু ব্যালকনির সাথে লাগোয়া সুউচ্চ ঝাউ গাছের আঁধারে সামনের ব্যক্তিটির অবয়ব এবং পুরুষালি পারফিউমের ঘ্রাণে চট করে বুঝে ফেললাম সামনের ব্যক্তিটি আপু নয়। বরং অন্য কেউ। ব্যালকনির এ প্রান্তে হঠাৎ উদয় হওয়া আগন্তুক পুরুষ মানুষের উপস্থিতি টের পেয়ে ভয়ে আমার ভেতরটা একদম শুকিয়ে এলো। শুকনো ঢোক গিলতেও গলার মাঝে ব্যাথা অনুভব করলাম। আচমকা উদিত এ ব্যক্তিটি কে তা ভাববার পূর্বেই ভয়ে আমার গলা দিয়ে চিৎকার স্বরূপ আওয়াজ বেরুতে চাইলো। কিন্তু এর পূর্বেই আচমকা সেই আগন্তুক আমার কাছে এসে আমার মুখ চেপে ধরলো। ফলে কয়েক কদম পিছিয়ে এলাম আমি। এতে সেই আগন্তুকও আমার সাথে পিছিয়ে এলো। ব্যালকনির এ অংশের আঁধো আলোকিত পরিবেশে আগন্তুকের চেহারা দেখে বিস্ময় এবং ভয়ে আমার চোখজোড়া কোটর হতে বেরিয়ে যাবার উপক্রম হলো।
®সারা মেহেক(নতুন পেজে আগামী ১২/১৩/১৪ তারিখ থেকে ‘নব্য দিনের সূচনা’র দ্বিতীয় খণ্ড দিব। গল্প সবাই নতুন পেজে লাইক দিয়ে রাখুন। নতুন পেজ : সারা মেহেক। গ্রুপ: সারা’র গল্পকুঞ্জ

#চলবে
(ফ্রি টাইমে পাকিস্তানি ড্রামা দেখার দরুন গল্প লেখার সময় পাচ্ছি না। এমনকি লিখতেও মন চাইছে না☹️ কিন্তু গতকাল দেয়নি বলে আপনাদের জন্য আমার ড্রামা দেখা ছেড়ে গল্প দিলাম। কিন্তু আপনারা আমায় পাত্তাই দেন না। হুহ💔)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here