#অভ্র_নীল
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা
#পর্ব_১১
____________
সকাল ১০টায়…!
রাজ চৌধুরী পৌঁছে যায় আকাশের বাড়িতে সাথে মিসেস চৌধুরী ও ছিলেন..!
কলিং বেল বাজাতেই এক সার্ভেন্ট এসে দরজা খুলে দেয়!
সার্ভেন্ট– আসসালামু আলাইকুম স্যার…! আসুন..!
বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করতে করতে…!
মিস্টার রাজ– ওয়ালাইকুম আসসালাম…!
কেমন আছো নজরুল…?
সার্ভেন্ট– আলহামদুলিল্লাহ স্যার! আমি ভালো আপনার কেমন আছেন?
মিস্টার & মিসেস রাজ– আলহামদুলিল্লাহ আমরাও ভালো.!
সার্ভেন্ট– স্যার আপনারা বসেন আমি আপনাদের জন্য স্ন্যাকস নিয়ে আসছি.!
মিস্টার রাজ– দাঁড়াও নজরুল ..! স্ন্যাকস পরে নিয়ে এসো আগে তোমার স্যার আর মেডাম কে গিয়ে বলো আমরা আসছি আর তারাতাড়ি নিচে আসছে!
(ডায়িং রুমে সোফায় বসে আছেন মিস্টার, মিসেস রাজ)
সার্ভেন্ট– ওকে স্যার! আমি তাহলে অন্য কাউকে স্ন্যাকস নিয়ে আসতে বলছি! আর আমি গিয়ে স্যারদের ইনফর্ম করছি।
মিস্টার রাজ— ওকে!
নজরুল আরেকজন সার্ভেন্ট কে বললো স্ন্যাকস বানিয়ে ডায়িং রুমে নিয়ে যেতে আর ও চলে গেলো মিস্টার খান এর রুমের সামনে…!
দরজা নক করছে…
মিসেস খানন– কে?
সার্ভেন্ট— ম্যাম আমি নজরুল..!
মিসেস খান– দাঁড়াও আসছি..!
দরজা খুলে…!
মিসেস খানন– বলো নজরুল?
মিস্টার খানন ল্যাপটবে কাজ করছেন!
সার্ভেন্ট– ম্যাম, মিস্টার ও মিসেস রাজ চৌধুরী আসছেন ডায়িং রুমে আপনাদের জন্য অপেক্ষা করছেন।
মিসেস খান– অবাক হলেন!
মিস্টার খান– ল্যাপটব থেকে চোখ সরিয়ে দরজার দিকে তাকালেন..!
কার নাম বললো রাজ আসছে কিভাবে সম্ভব ওকে তো কত মাস ধরে দেখেই না এত ব্যস্ত থাকে আর সে আজ নিজে ওর বাড়িতে আছে দু’জনেই বেশ অবাক..
মিস্টার খান– তুমি যাও ওদের আপায়ন করো আমরা এখনি আসছি!
সার্ভেন্ট– জি স্যার..!
মিস্টার ও মিসেস খান ডায়িং রুমে এসে দাঁড়ালেন পরক্ষণেই মিস্টার রাজ ও মিস্টার খান দু’জন দুজনে কোলাকুলি করলেন সাথে ওনাদের বেগম রাও…
তিন বন্ধুর মধ্যে দুই বন্ধু অনেকদিন পর দেখা হয়েছে গতকাল মিস্টার হোসেনের সাথেও দেখা হয়েছিল (হোসেন শুভর বাবা)
চারজনেই বেশ মজাই আছে আড্ডা দিতেছে ভরপুর..!
রাজ– আমরা যেজন্য আসছি! আমরা তো অভ্রর বিয়ে ঠিক করেছি আগামী শুক্রবার ওর বিয়ে আর এই যে বিয়ের কার্ড তোকে আর ভাবিকে কিন্তু আসতেই হবে আর দু’দিন আগেই যাবি!
মিসেস খান– ভাইসাব আমাদের অভ্রর বিয়ে ঠিক কিভাবে কি?
মিসেস চৌধুরী– হ্যাঁ ভাবি! অভ্রই মেয়ে পছন্দ করেছে কিন্তু কাউকে বলেনি আমাদের তো আকাশ আর শুভ বলেছে সে অনুযায়ী আমরা মেয়ে দেখতেও গিয়েছিলাম মেয়ে তো মাশা আল্লাহ.. আমার পছন্দ হয়েছে ছেলের পছন্দ বেশ ভালো তাই আমরাও রিং পরিয়ে বিয়ের ডেট ফিক্সড করে আসছি।
মিস্টার খান– শুভ আর আকাশ সব জানতো কই আমাদের তো কিছু বলেনি!
মিসেস খান– ভাবা চায় অভ্রর মতো লাঁজুক ছেলে,, এই আমাদের আকাশ ও তো তানজুমকে
মিস্টার খান– হ্যাঁ আর শুভ তানিয়াকে..
মিস্টার ও মিসেস চৌধুরী অবাক হয়ে বললেন– তুই ওদের কিভাবে চিনিস?
মিসেস খান– ভাই-সাব ওদের বলতে?
মিসেস চৌধুরী– তানিয়া আর তানজুম কে?
মিস্টার খান– ভাবি আপনারা কিভাবে চিনেন?
মিস্টার চৌধুরী– তানিয়া তানজুম তো আমাদের হবু বউমা নীল এর বান্ধবী নীল কে যেদিন দেখতে গিয়েছিলাম সেদিন পরিচয় হয়েছে আর সেদিন তো আমাদের সাথে শুভ ও আকাশ ও গিয়েছিল।
মিস্টার খান– ও এই ব্যাপার!
মিসেস খান– কি বলছো কোন ব্যাপার?
মিসেস চৌধুরী– আমিও বুঝলাম না!
মিস্টার চৌধুরী– তার মানে কি আমি যা ভাবছি তুই ও কি তাই ভাবছিস?
মিস্টার খান– ভাবছি মানে কি রে কালতে আকাশ শুভ আমাদের রেস্টুরেন্টে নিয়ে গিয়ে বলেছে ওরা ওদের বিয়ে করতে চায়,, আর সে অনুযায়ী আমরা আজ ওদের বাড়িতেও যাবো মেয়ে দেখতে…!( রেস্টুরেন্টের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত খুলে বলে)
সবাই হাসছে
মানে তিন বন্ধু তিন বান্ধবীর প্রেমে।
হ্যাঁ রে।
রাজ– এই শোন তোরা তো আজ যাবি তাহলে মেয়ে পছন্দ হলে সেইম ডেট ফিক্সড করিস তিন বন্ধুর সেইম দিনে বিয়ে হবে। কি বলিস?
মিস্টার খান– কথাটা মন্দ বলিস নি! দেখি মেয়ে আগে
মিসেস চৌধুরী– ইন শা আল্লাহ মেয়ে পছন্দ হবেই মেয়ে দু’জন কেই আমরা দেখছি মেয়ে গুলো ও দেখার মতো হিরার টুকরা। মিসেস খান– তাই তো আমাদের ছেলেগুলো প্রেমে পরছে.
তা যা বলেছো।
আরও কিছুক্ষণ গল্প আড্ডা দেওয়ার পর রাজ চৌধুরী ও উনার স্ত্রী বিদায় নিয়ে চলে গেলেন!
দীর্ঘ ১ঘন্টা পর এবার আসছেন!
এখানেও সেইম কথা উপরে যা বলেছে,,, বিয়ের কার্ড, তিনজনের বিয়ে এক দিনে বক্কর চক্কর বলে চলে গেলেন!
এইভাবে সবাইকে বিয়ের নিমন্ত্রণ করেছে কার্ড যার যার বাড়িতে গিয়ে দিয়ে দিয়ে!
সেইম কাজ মিস্টার ও মিসেস রায়হান সরকার ও করছেন!
বিরতি………!!!!!!
এখন সময় মেয়েদের বাড়িতে যাওয়া…! কথা অনুযায়ী কাজ
কাজল গেলো তানিয়ার বাড়ি আর নীল এলো তানজুমের বাড়ি..!
বেচারা অভ্র পরে গেছে মিনকার চিপায় যাকে বলে দুই নৌকায় সওয়ারি
শুভ– অভ্র তোকে আমার সাথে যেতে হবে,, মানে তুই আমার সাথে যাবি তানিয়ার বাড়ি তোর সময় আমি কিন্তু গিয়েছিলাম.!
আকাশ– হো আর আমি তো ঘোড়ার ঘাস কাটতাছিলাম তাই না! আমি তো যাই নাই
অভ্র আমার সাথে যাবে মানে আমার সাথেই যাবে।
শুভ– না অভ্র আমার সাথে যাবে..
আকাশ– নাহ অভ্র আমার সাথে যাইবো!
শুভ– না আমার সাথে!
আকাশ– না আমার সাথে!
যে ভাবে ঝগড়া করছে অভ্র কার সাথে যাবে নিয়ে? না জানি সামনা সামনি থাকলে আজ কি হতো..
তিন জনেই গ্রুপে ভিডিও কলে সোফায় বসে বসে কথা বলছে,,
মানে কথা তো বলছে না এক প্রকার ঝগড়া করছে…
শুভ– আমার সাথে…
আকাশ– না আমার সাথে যাবে।
অভ্র বেচারা মিনকার চিপায়
এই জন্যই বলে দুই বন্ধুর এক সাথে একই দিনে আলাদা আলাদা কোনো প্রগ্রাম করতে বা রাখতে নেই,,
বুঝো এবার অভ্র
বেচারা মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে আর ওদের কান্ড দেখছে!
১০মিনিট পর.!
অভ্র– Enough!
আমি তার সাথেই যাবো যার হবু বউকে রেডি করতে আমার হবু বউ যাবে! (কিউট স্মাইল দিয়ে একটু লজ্জা মাখা কন্ঠে)
শুভ– হালায় কয় কি!
আকাশ– এবার কি বলবি? শুভ
শুভ– যা তাতে আমার কি! এক মিনিট ওয়েট ওয়েট আমি তো একটা কাজ করতে পারি!
অভ্র– কি কাজ?
আকাশ– কি কাজ বল?
শুভ– বলছি বলছি! আমি তন্ময় কে কল করে আমার সাথে নিয়ে যেতে পারি আর তাতে কাজল এর ও একটু সুবিধা হবে কি বলিস?
অভ্র– হুম এটা করতে পারিস কিন্তু আঙ্কেল আন্টি কে কি বলবি?
শুভ– বলবো নিউ ফ্রেন্ড..! বিজনেস পার্টনার।
আকাশ– যা ভালো বুঝিস,, কল দিয়ে বল এখনই!
শুভ– ওকে.. ওয়েট!
অভ্র– হো হো তোরা এই বুদ্ধি নিয়া বিজনেস ম্যান হলি কিভাবে সেটাই আমি বুঝতে পারছি না! গাধার দল (দাঁতে দাঁত চেপে)
আকাশ– আমরা আবার কি করলাম
শুভ– তাইতো?
অভ্র– তাই তো না থাডাইয়া একটা থাপ্পড় মারমু,, তন্ময় এর হেয়ার স্টাইল দেখছোস? ওর হাঁটা চলার স্টাইল দেখছোস!
ওকে যে দেখবে সেই বুঝে যাবে ও আর্মি আর আসছে ওনারা একজন আর্মি কে বিজনেস ম্যান বানাতে
আকাশ– হ্যাঁ তাইতো এটা তো ভেবে দেখিনি!
শুভ– তোর মাথায় এত কিছু আসে কিভাবে রে?
অভ্র– তোদের মত গাধা নই যে তাই… বলবি তন্ময় এর সাথে আমাদের রিসেন্টলি দেখা হয়েছে আর ও আমাদের ভালো বন্ধু হয়ে গেছে আর ও একজন আর্মি…! বাস আর কিছু বলতে হবে না এখন রেডি হয়ে নে আমিও একটু রেডি হই আমার জানপাখি কে দেখতে যাবো তোদের উছিলায়
আকাশ– ওকে ওকে!
শুভ– প্রতিদিনই না কলেজে দিয়ে আসিস আর নিয়ে আসিস রোজই তো দেখিস..!
অভ্র– তোর কি যা ফোন রাখ!
ওইদিকে…!
নীল আজ গোলাপি রঙের গোল জামা পরেছে সাথে নীল রঙের উড়না..! চুলগুলো ছেড়ে রেখেছে চোখে গাড়ো কালো করে কাজল দিয়েছে ঠোঁটে হালকা ম্যাথ লিপস্টিক তবুও দেখতে হেব্বি লাগছে
নীল তানজুম কে খুব সুন্দর করে সাজিয়েছে সাথে নীলের মধ্যে সবুজ রঙের একটি টিস্যু শাড়ি পরিয়েছে!
তানজুম পরতে চায়নি,, ও থ্রিপিছ পরতে চেয়েছিল কিন্তু নীলকে ওরা জোর করে শাড়ি পড়িয়েছিল তাই নীল ও তাই করলো..!
দেখতে মাশা আল্লাহ দুনজনকে সুন্দর লাগছে।
ওইদিকে কাজল তানজুমকে লালের মধ্যে সাদা পাইরের সিল্ক শাড়ি পড়িয়েছে তানিয়াকে আর খুব সুন্দর করে সাজিয়েছে!
কাজল থ্রিপিছ পরেছে চুল গুলো বকের ঠোঁট কাঠি দিয়ে পেচিয়ে রাখছে! (আমার মতো আমি এইভাবেই রাখি)
কাজলের একটু মন খারাপ অনেক দিন ধরেই তন্ময় এর সাথে দেখা হয় না আর সেইভাবে কথাও হচ্ছে না!
প্রায় এক ঘন্টা পর আকাশ ওরা তানজুমের বাড়িতে আর শুভ রা তানিয়াদের বাড়িতে চলে আসে!
সবাই পরিচয় হচ্ছে.!
কিছুক্ষণ পর মেয়েকে নিয়ে আসুন.!
…..
নীল তানজুমকে নিয়ে আসছে..! সামনে তাকাতেই নীল এর হাঁটা বন্ধ হয়েগেলো!
কাজল তানিয়াকে ধরে নিয়ে সিড়ি দিয়ে নামছে.!
সামনে তাকাতেই ওর ও পা থমকে গেলো!
কারণ,,, অভ্র সামনে সোফার উপর দুই পায়ের মধ্যে খানে দুই হাত দিয়ে হাত মুঠি বন্ধ করে এক নেশা ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নীল এর দিকে.!
নীল এর এখানে অভ্রকে দেখে রাগ হচ্ছে কিন্তু কিচ্ছু করার নেই,,,
নীল– সারাদিন জ্বালিয়ে পেট ভরে না নাকি যে এখানেও চলে আসছে জ্বালাতে (মনে মনে)
কাজল নিজের চোখকে বিশ্বাসই করতে পারছে না।
তন্ময় এখানে ওর চোখের সামনে উইথ শুভর সাথে কিচ্ছু বুঝতে পারছে না তবুও অনেক খুশি হয়েছে (মনে মনে)
দুই ফ্যামিলির-ই মেয়েদের কে খুব পছন্দ হয়েছে!
বিয়ের ডেট অভ্র আর নীলের বিয়ের ডেটেই ফিক্সড করা হয়েছে…
সবাই অবাক.. তিন বন্ধুর এক সাথে বিয়ে হবে!
এটা ওদের কল্পনার বাহিরে ছিলো এই গুলো যে ছেলেদের বাবা মা-য়েদের বুদ্ধি তারা জানতো না।
সবাই খুশি হলেও শুধু খুশি নয় নীল.. যতদিন যাচ্ছে তত বিয়ের দিন এগিয়ে আসছে…!
সবার আগা মাথা শেষ, দুই ফ্যামিলি বিদায় নিয়ে যার যার বাড়িতে চলেগেলো! (এত ডং করে লিখতে পারতাম না)
অভ্র নীল কে ড্রপ করতে যাবে নীল রাজি হয়নি কারণ ওর সাথে গাড়ি আছে! কিন্তু অভ্র জোর করেই নীলকে ওর গাড়িতে উঠতে বললো আর নীলের গাড়িকে ওদের ফলো করতে বললো!
তন্ময় নিজের বাইক দিয়ে কাজলকে নিয়ে লং ড্রাইবে গেলো!
.
.
.
#চলবে …..?
” কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ ” ❌