অভ্র নীল পর্ব-১০

0
547

#অভ্র_নীল
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা
#পর্ব_10
____________

অভ্র নীল এর পেছনে দাঁড়িয়ে ছিল আর একটা কাশি দিলো যাতে নীল বুঝতে পারে যে ও এসেছে..!

নীল পিছনে না ঘুরেই যতসব আবল তাবল বলতে লাগলে!

নীল– দেখুন আমি আপনাকে বিয়ে করবো না আর করতেও চাই না প্লিজ আপনি বিয়েটা ভেঙ্গে দিন প্লিজ!
অভ্র– কিন্ত আমি তো তোমাকে বিয়ে করবোই তো বিয়ে ভাঙ্গার প্রশ্নই আসে না!

নীল ছেলেটার দিকে তাকিয়েই বললো!
নীল– আমি তো বলছি আমি আপনাকে বিয়ে করবো না আর আপন..…(অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আর বলছে এইটা তো ওই ছেলেটাই যে বলতো আমাকে ভালোবাসে)
অভ্র– বলতো মানে কি? এখনও ভালোবাসি!! (নীলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে আর বলছে)

নীল– আমি মনে মনে কি বলছি সেটা আপনি কিভাবে বুঝলেন।
(অবাক হয়ে)
অভ্র– এতদিন পর দেখেছো তাও আবার তোমাকে দেখতে এসেছি আবার বিয়ের ডেট ও ফিক্সড হয়ে গেছে আমার সাথে আর তুমি বলছো আমি কিভাবে বুঝলাম! তুমি এর থেকে বেশি ভাববে না তাই বুঝলাম!

নীল– আমি আপনাকে বিয়ে করবো না!
অভ্র নীলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে নীল ভয় পায়না তাই পিছিয়েও যাচ্ছে না সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে!
অভ্র– বিয়ে তো তোমাকে আমাকেই করতে হবে নীল! সামনে দাড়িয়ে বললো…
তুমি কি আমাকে ভয় পাচ্ছো না?

নীল– না পাচ্ছি না!
অভ্র– নীলের হাত ধরে ফেলে…. রাগ করে না লক্ষীটি রাগলে যে তোমাকে দারণ লাগে!

নীল অভ্রর হাত ছাড়িয়ে ঠাসসসসস
থাপ্পড় মেরে চলে যাচ্ছে! পেছন থেকে অভ্র….
অভ্র– তুমি কি থাপ্পড় মারা ছাড়া আর কিছু করতে পারো না না-কি? মাঝে মাঝে কিসও তো করতে পারো!

নীল পিছনে ঘুরে রাগে গজগজ করতে করতে বললো!

নীল– অসভ্য!

অভ্র– অসভ্য বলো আর যাই বলো আমি শুধু তোমারই নীল….আমি শুধু নীলের অভ্র….. মানে অভ্র নীল…!
অভ্র– তুমি থাপ্পড় মারো আর যাই করো তোমার এই থাপ্পড়ের মাঝেও যে আমি ভালোবাসা খুঁজে পাই…
এই থাপ্পড়ের মাঝেই তো তুমি আমাকে স্পর্শ করো নীল!
খুব যে ভালোবাসি তোমায়!! তোমাকে ছাড়া থাকা যে ইম্পসিবল…..! কেনো বুঝো না নীল…?

কিছু একটা শব্দ পেয়ে ওপাশ থেকে ওরা দু’জন ও চলে এলো!
আকাশ তানজুম জিজ্ঞেস করলেও অভ্র কিছু বলে না আর বলবেই কেমনে হবু বউয়ের হাতে থাপ্পড় খাইছে এটা বললে কি ওর সম্মান থাকবে
তাই এরিয়ে গেলো সবাই মিলে ছাঁদ থেকে নেমে নিচে চলে গেলো!
তানজুম নীলের রুমে নিয়ে আসলো ওদের দু’জন কে
বিছানায় শুয়ে আছে তানিয়া!
ওয়াশরুমে নীল বারান্দায় শুভ…বিছানায় তানিয়া….!

অভ্র আকাশ শুভকে বারান্দা থেকে আসতে দেখে..!

আকাশ– তুই এখানে?
শুভ– আ.. আ.. ওই তানিয়া সিঁড়ি পরে গিয়েছিল তাই ওকে নিয়ে এসে এখানে শুইয়ে দিয়েছিলাম তারপর নিচে গেছিলাম তারপর আবার এসে ছিলাম ওকে দেখতে ঘুমাচ্ছে দেখে বারান্দায় গেছিলাম! (এক নিশ্বাসে বললো)

অভ্র– আমি কিছুই বুঝলাম না!!!
আকাশ অভ্রর কানে কানে সব বললো ওদের দু’জনের সাথে ওদের দুজনের ভালোবাসার কথা

অভ্র– ও ও ও এই ব্যাপার সবগুলা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেলছে!
নীল ওয়াশরুমের দরজা খুলে বেরিয়ে আসলো!
অভ্র এক নজরে হা করে তাকিয়ে আছে…
আকাশ– ভাই মুখটা বন্ধ কর মশা ডুকে যাবে তো সবাই হেসে দিলো
নীল– শাড়ি খুলে একটা গোলাপি কালারের গোল জামা পরেছে! ওও যা পরে তাতেই ওকে সুন্দর লাগে মনে হয় জেনো ওর জন্যই স্পেশাল ভবে বানিয়েছে!
খুব সুন্দর লাগছে ওকে!
আকাশের কথায় অভ্র-র ধ্যান ভাঙ্গে….!
সবাইকে নিজের রুমে দেখে খানিকটা অবাক হলেও নীল কিছু বললো না!
নীলের মতো নীলের রুমটাও সুন্দর সব কিছু পরিপাটি ও গুছানো!
সবাই সবার মতো গল্প করছে নীল চুপচাপ বসে আছে অভ্র নীল কে দেখছে…
রাতের ডিনারের সময় হয়ে যায়!
একজন মেড সার্ভেন্ট এসে বলে গেলো!
নিচে ডিনারের জন্য সবাই অপেক্ষা করছে আপনাদের!
সবাই নিচে চলে যায় খাওয়া কমপ্লিট করে!
খাবার শেষে বিদায় নিয়ে চৌধুরী পরিবার চলে যায়,,,
তানজুম তানিয়া কাজল!!!
আজ নীল এর বাড়িতেই থাকতে,,,
সবার খাওয়া শেষ হলে নীল তানিয়ার জন্য খাবার বেড রুমে নিয়ে আসে!
নীল– তোকে কি খাইয়ে দিবো নাকি তুই খেতে পারবি?
(তানিয়াকে জিজ্ঞেস করলো)

তানিয়া– ….. ….(তানিয়াকে থামিয়ে কাজল বললো)

কাজল– ও ব্যাথা পাইছে মানজায় তো হাতে কি হইছে হাত তো ভালাই ওর কাছে দে নিজে নিজেই খাইয়া নিবো ডং… (মুখ ভেংচি দিয়ে)

তানজুম– তুই পরলি কিভাবে সেটাই তো বুঝতে পারছি না!

তানিয়া– তোরা চুপ করবি আমি ব্যাথায় মরছি!
আমি একাই খেতে পারবো!

তানিয়া নীলের হাত খাবার প্লেট টা নিয়ে খেয়ে উঠলো!
সবাই চুপ করে আছে!
এই প্রথম সব গুলো এল সাথে আছে কিন্তু সবাই চুপ!

তানিয়ার খাওয়া শেষ হলে সব এক সাথে তানিয়াকে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছিল তুই পরলি কিভাবে?

সবার জরাজরির জন্য তানিয়া সব বললো। লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে…
তানজুম কাজল হাসতে হাসতে মাটিতে লুটোপুটি খাচ্ছে!
নীল বড়সড় একটা ধমক দিলো!
সব অবাক হয়েছে এবং চুপও হয়ে গেছে!
নীল বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়.!
নীল– তোরা সব যানতিস তাই না। কি হলো বল
সবগুলা চুপ করে আছে।
নীল বিরক্ত হয়ে বারান্দায় চলে গেলো আর কিছু বললো না!
তানজুম তানিয়াকে ব্যাথার ঔষধ খাইয়ে কোমড়ে আবার মলম লাগিয়ে দিল আর কাজল বারান্দায় গেলো নীলকে ডাকতে অনেক রাত হয়েছে ঘুমানোর জন্য কাল কলেজেও যেতে হবে!
নীল রুমে এসে কারো সাথে কোনো কথা না বলে চুপচাপ শুয়ে পরে ওরাও চুপচাপ ঘুমিয়ে পরে।

ওইদিকে তিন জন তো হেব্বি খুশি আজও আকাশ অভ্র শুভর ফ্লাটে আসছে তিন জনে তো পার্টি করছে বক্স বাজিয়ে তো লুঙ্গি গানে নাচতেছে ইয়াহ
অনেক রাত পর্যন্ত জেগে ছিল তিনজনই তার পর ঘুমিয়ে পরে!

সকালে তিনজন ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নেয় আর যার যার বাড়ি চলে যায় তারপর তো আবার কলেজের জন্য রেডি হতে হবে!
নীল সকালে আজ একটু দেরিতে উঠে!
ঘুম থেকে উঠে ওদের কাউকে দেখতে না পেয়ে রুম থেকে সোজা কিচেনে চলে যায়!
নীল– আম্মু তানজুম তানিয়া কাজল ওরা কোথায়?
মিসেস রায়হান– ওরা তো সকালেই চলে গেছে!
আমি অনেকবার বলেছিলাম ব্রেকফাস্ট কিছুক্ষণের মধ্যেই তৈরি হয়ে যাবে খেতে যেতে কিন্তু ওদের নাকি মেট হয়ে যাবে!
নীল– আব্বু কোথায়?
মিসেস রায়হান– তোর আব্বু অনেক আগেই অফিস চলেগেছে ওনার নাকি অনেক ইমপোর্টেন্ট কাজ আছে তাই..!
তুমি ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে আসো ব্রেকফাস্ট করতে আর তোমার কলেজেরও টাইম হয়ে যাচ্ছে!
নীল– ওকে আম্মু!
নীল রেডি হয়ে নাস্তা করে নেয়!
নীল– আমি আমি গেলাম!
মিসেস রায়হান– ওকে সাবধানে যেও…!
নীল বাড়ি থেকে বের হয়ে তো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে!
অভ্র সকালে ঘুম থেকে উঠে গাড়ি নিয়ে চলে আসে নীলকে কলেজে ড্রপ করার জন্য..
গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
দেখতে খুব হ্যান্ডসাম ও সম্মার্ট লাগছে!
অভ্র আজ নীল শার্ট আর কালো প্যান্ট পরে আছে ব্লাক সুজ লম্বাগুলো স্ট্রাইট করা সানগ্লাস শার্টের কলারে ঝুলানো এক পায়ের উপর আরেক পা রেখে ভর দিয়ে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে!
নীল অভ্রকে দেখেও না দেখার মতো করে সাইড দিয়ে যেতে নিলেই অভ্র– তুমি কি অন্ধ?
নীল– কি?
অভ্র– আমি যে এখানে দাঁড়িয়ে আছি তুমি কি দেখতে পারছো না নাকি দেখেও না দেখার মতো করে চলে যাচ্ছো..
কোথায় যাচ্ছো?
নীল– কলেজ যাবো তাই নিজের গাড়ির কাছে যাচ্ছি।
অভ্র– আমি এখানে কি আমার চেহারা দেখাতে আসছি নাকি?
নীল– তা আমি কি জানি আপনার চেহারা আপনি জানেন! আমি তো গেলাম।
অভ্র– আজ থেকে তোমাকে কলেজ পৌঁছে দেওয়া আর কলেজ থেকে নিয়ে আসা আমার দায়িত্ব চলো গাড়িতো উঠো।
নীল– আমি আপনার সাথে কিছুতেই যাবো না ওকে…
অভ্র– তুমি ভালোয় ভালোয় উঠবে না তাইতো
ওয়েট আমি আমার শাশুড়ী আম্মাকে এখনি গিয়ে বলছি…! তার মেয়ে জামাই এর কথা শুনে না
নীল– আপনাকে আমি
আর কিছু না বলে অভ্র ড্রাইবিং সিটে গিয়ে বসে পরে নীল এখনো দাঁড়িয়ে আছে.
অভ্র কয়েকবার গাড়ির হন বাজাচ্ছে আর কোনো উপায় নাই ভেবে গাড়িতে উঠে বসে পরে পিছনের সিটে..!
অভ্র– এই যে হ্যালো ম্যাডাম আমি আপনার ড্রাইবার নই
নীল আর কিছু না বলে সামনে ফ্রোন্ট সিটে গিয়ে বসে পরে।
দু’জনেই চুপ করে আছে কলেজের সামনে গাড়ি ব্রেক করতেই নীল তারাতাড়ি করে নেমে পরে।
অভ্র গাড়ি থেকে নেমে নীলকে ডাক দিলো।
অভ্র– নীল…
নীল পেছনে ঘুরতেই অভ্র ফ্লায়িং কিস দিলো

নীল– অসভ্য..! (নীল কলেজের ভেতরে চলে গেলো)
অভ্র– মুচকি হেসে কলার থেকে সানগ্লাস টা হাতে নিয়ে স্টাইল নিয়ে পরতে পরতে গাড়িতে উঠে ড্রাইব করে চলে গেলো।

বাকি মেয়েরা তাকিয়ে আছে অভ্রর যাওয়ার দিকে
–কি হ্যান্ডসাম ছেলে
— ছেলেটা কে ইয়ার আমি তো ক্রাশ খাইলাম –আরেকজন আমিও
কাজল তানজুম তানিয়া দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওদের কথা শুনলো
তানিয়ার তো প্রচুর রাগ হচ্ছে ওদের কথা শুনে।
কাজল– গার্লস চোখ নিচে আর মুখ বন্ধ ওকে(ওই বাকি মেয়েদের কে বলল)
তিনজনের মধ্যে থেকে একজন– কেনো আমরা দেখলে তোমাদের সমস্যা কি
তানিয়া– আমাদের সমস্যা কি মানে?
অন্য মেয়ে– আমাদের ছেলেটাকে ভালো লাগছে আমাদের ক্রাশ ছেলেটা তোমরা কেনো এত বকবক করছো?
আরেকজন– হ্যা হ্যা যা নিজের চরকায় তেল দাও আমাদের কাজে বাধা দিও না বলে দিলাম নীলের চামচা গুলান!
(নীল কলেজের সব চেয়ে ভদ্র মেয়ে হলেও প্রচুর রাগী সহজে রাগে বা একবার রেগে গেলে খুব ভয়ংকর তাই সবাই নীলকে এক নামেই চিনে কারণ একবার রেগে গিয়ে নিজের ভয়ংকর চেহারা সবাইকে দেখিয়েছিল তারপর থেকে সবাই নীলকে ভয় পায়)

তানিয়া কাজল– কি বললি তোরা তোদের এত সাহস?

তিনজন মেয়ে– সাহসের কি দেখছিস ওই ছেলে শুধু আমাদের ওকে.. আর তোরা কি দেখিসনি ছেলেটা আমাদের ফ্লায়িং কিস দিয়েছিল!
(তিনজনের একজনও নীলকে অভ্রর গাড়ি থেকে নামতে দেখেনি তাই ভেবে নিয়েছি ওদের দিছে)

তানজুম একটা দুষ্ট হাসি দিয়ে বললো।
তানজুম– ওই ছেলেটার নাম অভ্র চৌধুরী আর ওই ছেলেটা হচ্ছে আমাদের নীলের হবু বর…!

তিনজন মাইয়া– কিহহহ ওও তাহলে আমাদের দুলাভাই (বলে দিলো তিনজন দৌঁড়)
এই দেখে তানিয়া তানজুম কাজল হাসতে হাসতে শেষ.
হাসতে হাসতে কলেজের ভেতরে গেলো!
তানিয়া— ওই তো নীল! চল ওর কাছে।
কাজল– কি বেপার নীল আজ দুলাভাই ড্রপ করলো তোকে বাহ ভাবা যায়…
তানিয়া তানজুম কিছু বলতে যাবে তার আগেই নীল!
নীল– শাট আপ…!
কলেজ শেষ হয়ে গেলে কলেজের গেইটের সামনে গেলে সব গুলা অবাক
তানজুম– আকাশ
তানিয়া– শুভ
কাজল– তন্ময়
নীল– উফফ (উফফ মানে অভ্র)
চারজন চারজনের সাথে চলে গেলো!
এইভাবে প্রতিদিন হাজারও ব্যস্ততার মাঝে অভ্র নীলকে সকালে কলেজে ড্রপ করে আর ছুটির পর নিয়ে আসে
নীলের প্রচুর বিরক্ত লাগে কিন্তু কিছুই করার নেই
কারণ আর কিছু দিন পরেই বিয়ে!
এইভাবেই চলে যাচ্ছে দিন!
অভ্র একদিনও ভুলে না নীলকে কলেজে ড্রপ করতে আর কলেজ থেকে নিয়ে আসতে আর একদিন ও লেট করে না প্রতিদিন সময়ের আগেই চলে আসে!

পর্ব → ১৫
_______

অভ্র একদিনও ভুলে না নীলকে কলেজে ড্রপ করতে আর কলেজ থেকে নিয়ে আসতে আর একদিন ও লেট করে না প্রতিদিন সময়ের আগেই চলে আসে!

আকাশ নিজের ফ্যামিলির সাথে রাতে ডিনারের জন্য বাহিরে যাই!
কেউ কেউ যেতে চায়নি কিন্তু আকাশ এক প্রকার জোর করেই নিয়েগেছে সবাইকে কারণ আকাশের মাথায় অন্য কিছু আছে যার জন্য ফ্যমিলির সব এক সাথে হওয়া দরকার।
আকাশ এর জয়েন্ট ফ্যামিলি!
শুভ ও সেম কাজ করছে ফ্যামিলির সাথে ডিনার করতে বাহিরো আসে।
আকাশ আর শুভরই প্লেন ছিল এটা দুই ফ্যামিলিকো ডিনারের বাহানা করে একসাথে বসিয়ে তানজুম আর তানিয়ার কথা বলবে!
দুইজনেই প্লেন অনুযায়ী কাজ করেন।
শুভ ওর ফ্যামিলি একটা রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করে সেখানে একটা টেবিলে আগে থেকেই বসে ছিল আকাশ আর ওর ফ্যামিলি মেম্বার্স দুই ফ্যামিলিই দুজনকে দেখে একটু অবাক হলো! ছোটো থেকেই অভ্র আকাশ শুভর বন্ধুত্ব আর ওদের বন্ধুত্ব এতটাই গভীর ছিলো যার ফলে তিন ফ্যমিলির মধ্যেও ভালো বন্ধুত্ব হয়ে যায়! আর এখন কাজের চাপে কারো সাথে কারো তেমন দেখা হয় না আজ আকাশ শুভর জন্যই আবার দেখা হলো। ত
অনেকদিন পর দেখা হওয়াই একটু অবাক হয়েছেন তারা সবাই কিন্তু অনেক খুশিও হয়েছেন!
দুজনের ফ্যামিলি পরশপর কোলাকুলি করলেন কেমন আছে জিজ্ঞেস করলেন নানা গল্প জুড়ে দিলেন আর হাসাহাসি শুরু করলেন!
শুভ– কিরে আমরা যেজন্য সবাইকে এক জোট করলাম সেটা তো হবে না মনে হয়,, দেখনা কি গল্প শুরু করেছেন তারা! (আকাশের দিকে একটু ঝুকে গিয়ে ফিসফিস করে বলে! আকাশ আর শুভ পাশাপাশি বসেছে)
আকাশ– তুই কি দেখতে পাচ্ছিস না উনারা সবাই কত হ্যাপি কতদিন মাস পর আব্বু আম্মু আর তোর ফ্যামিলির সবাইকে একসাথে এত খুশি আনন্দ উপভোগ করতে দেখছি!

শুভ– ঠিক বলেছিস!
মাঝখানে ওয়েটার বয় এসে উনাদের খাবারের অর্ডার নিয়েগেছে.. কিছুক্ষণের মধ্যেই টেবিলে খাবার সার্ভ হয়ে যাবে!
শুভর বাবা– তাহলে এটা তোদের দুজনের প্লেন ছিলো! (হাসতে হাসতে)
আকাশ– জি আঙ্কেল!
আকাশের বাবা– তুই তো বলেছিলি অনেক ইমপোর্টেন্ট কথা বলবি! তো বল!
তুই একা বলবি নাকি শুভ ও কিছু বলবে?
শুভ– আমরা দু’জনেই বলবো আঙ্কেল
শুভর বাবা– তো বল দু’জন কি বলবি! (খেতে খেতে জিজ্ঞেস করলো)
দুই ফ্যামিলির সবাই এখন শুভ আর আকাশ এর দিকে তাকিয়ে আছে! (জিজ্ঞেসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে)
শুভ একবার ওদের দিকে তাকাচ্ছে আরেকবার আকাশের দিকে তাকাচ্ছে সেম কাজ আকাশ ও করছে।
দু’জন ই দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে,, কিভাবে বলবে আর উনারা কি ভাবে নিবে আল্লাহ ভাবতে ভাবতে শেষ!
আকাশ ও শুভর বাবা– তোরা কি কিছু বলবি! (খাওয়া বন্ধ করে ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে ধমক দিয়ে বললো)
দু’জনেই বড়সড় একটা ঢোক গিললো!
আকাশ তুই বল-? (শুভ)
আকাশ– সব সময় তুই আর অভ্র আমাকেি ফাঁসিয়ে দিস!
আকাশের বাবা– কি হল বলবি কি তোরা তারাতাড়ি বল।
শুভর বাবা– আর কত নিজেদের মুখ দেখবি?
আকাশের মা– কি এমন বলবি যে দুজনেই এত ধিধাবোদ করছিস?
শুভর মা– ইমপোর্টেন্ট কথা বলবি বলে নিয়ে এলি আর এখন একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে চুপ করে আছিস!
আকাশ– বলছি! (এক দীর্ঘ শ্বাস নিলো)
আজকে চড় থাপ্পড় খাওয়া থেকে বাচিয়ে নিও আল্লাহ পাবলিক প্লেস মারলে ইজ্জত থাকতো না! (মনে মনে)
আকাশ– বাবা ও আঙ্কেল আম্মু আর আন্টি…!
আমার আর শুভর ইমপোর্টেন্ট কথা হলো আমরা দু’জনে একটি মেয়েকে ভালোবাসি আর তাকেই বিয়ে করতে চাই! (এক নিশ্বাসে বললো)
কি না কি বলছে ও নিজেও জানে না! যাই বলছে উল্টা পাল্টা…!

দুই ফ্যামিলি শকট হয়ে গেলো!
কি বললো??

শুভ ও আকাশের বাবা– কিহহহহ দুইজনে একটি মেয়েকে ভলোবাসিস মানে?
শুভ ও আকাশের মা– আর এক জনকে বিয়ে করবি মানে? কি সর্বনাশি কথা

আকাশ– দুইজন একজনকে বিয়ে করবো মানে?
শুভ– ফাজিল তুই তো এটাই বললি
আকাশের বাবা– কোনো ভাবেই সম্ভব না
শুভর বাবা– এক মেয়ে দুই জামাই ইম্পসিবল
আকাশের মা– পিটাইয়া ছাল উঠাই ফেলমু বেয়াদব ছেলে!
শুভর মা– দিনে দিনে এত ফাজিল হয়েগেছো দু বন্ধু মিলে একটি মেয়ের প্রেমে পরো আর একটি মেয়েকেই বিয়ে করতে চাও…?
আকাশের বাবা– তোমরা ভাবলে কি ভাবে আমরা এই সম্পর্ক মেনে নেবো! (রাগে ফায়ার হয়ে গেছেন)
শুভর বাবা– কখনোই না দুই মেয়ে হলে সমস্যা ছিল না আর এক মেয়েকে দু’জনে বিয়ে করতে চাও ছিহহহ
এখন তো শুভ আর আকাশের মা ও যুক্ত হলেন।
শুভর মা– দুজনের যা ইচ্ছে তাই বলবি অসভ্য ছেলে দিনে দিনে এত অসভ্য হয়েছো!
আকাশের মা– কানের নিচে থাপ্পড় মারা উচিত সাহস কোথায় পেলে এই কথা বলার আর ভাবলেও কিভাব?
দুইজন ছেলের সাথে একটা মেয়েকে বিয়ে দেবো!
ধীরে ধীরে কথা বার্তা বাড়ছে
শুভ আর আকাশের মেজাজ গরম হয়ে গেছে আমায় রাগ উঠে গেছে! কথা পুরো না শুনেই সবাই শুরু করে দিছে…! আকাশ চিল্লিয়ে বলে–
চোপপপপপপপপ করো তোমরা—–
আকাশের ধমকে আশে পাশের টেবিলের লোক তাকালো ওদের দিকে! সবাই চোখ বের করে তাকিয়ে আছে মনে হচ্ছে এখানে কেউ নাগিন ডান্স দিচ্ছে কেউ
আকাশ– আমি তানজুমকে ভালোবাসি আর ওকেই বিয়ে করতে চাই…! (একটি চিল্লিয়েই বললো)

শুভ– আমি তানিয়াকে ভালোবাসি,, আর তাহিয়াকেই বিয়ে করার ইচ্ছা আছে! (রাগী কন্ঠে বললো)

শুভর বাবা– তানিয়া তানজুম কে?

শুভ– আমরা যাদেরকে ভালোবাসি তাদের নাম!

আকাশের বাবা– তো আকাশ যে বললো একটি মেয়েকে ভালোবাসিস তোরা দু’জনে আর ওকেই বিয়ে করবি?

আকাশের মা– তোরা একটু বুঝিয়ে বল আমাদের.!
শুভর মা– কি হলো বল! (ধমক দিয়ে)

আকাশ– আমি আসলে তখন একটু নার্ভাস হয়ে গেছিলাম তাই দুইটা না বলে একটা বলা ফেলছি!

শুভ– তুই আর নার্ভাস? ভাবা যায়

আকাশ– তুই চুপ করবি,,, সব কিছুতেই তো আমাকে আগে ফাঁসিয়ে দিস তুই আর অভ্র আর এখন বেশি কথা বলছিস! (একটু চোখ বড় বড় করে রাগী লুকে তাকিয়ে বলল)

শুভ মুখ ভেংচি দিয়ে অন্য দিকে ঘুরে গেলো!

আকাশের বাবা– মেয়েগুলা কারা কোথায় থাকে ইত্যাদি ইত্যাদি জিজ্ঞেস করলো.!

অনেকক্ষণ কথা বলার পর দুই ফ্যামিলিই ডিসিশন নিলেন তানজুম আর তানিয়াকে দেখতে যাবে!
আর মেয়ে পছন্দ হলে বিয়ের ডেট ফিক্সড করবে!
তারা খুব সহজেই রাজি হয়ে যান! কারণ,,
আকাশ শুভ অভ্র অভ্র তিন জনেই ছোটো থেকে বড় হয়েছে মাঝখানে পড়াশোনা কমপ্লিট করার জন্য অভ্র বিদেশ চলে যায়!
তিনজনেরই সভাব চরিত্র এক! কখনোই কোনো মেয়ের প্রতি কোনো interest ছিলো না।
ওদের বিয়ে করার কথা বললে বলতো কখনোই কোনো মেয়েকে বিয়ে করবে না! এক পর্যায়ে তারা বিরক্ত হয়ে বিয়ের কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে। আর আজ সেই জায়গায় তারা দু’জনে এসে বলছে তারা একজনকে ভালোবাসে আর বিয়ে করতে চায়!
তারা তো অনেক খুশি ছেলেদের মুখের কথা শুনে..!
এবং তারা ডিসিশন নেয় কালকেই তারা মেয়েদের বাড়িতে যাবে আর সব কিছু ঠিকঠাক হলে বিয়ে তারাতাড়িই করিয়ে দিবে!
আকাশ আর শুভ উনাদের কথায় একটু অবাক হলো কারণ ওরা ভাবেনি ফ্যামিলি এত সহজে মেনে নিবে..!

যাইহোক মেনে নিছে এটাই অনেক!
সেদিন রাতেই!
আকাশ কল দেয় তানজুমকে আর আজকের কথা সব বলে! আর কাল যে আকাশ ওরা তানজুমের বাড়ি যাবে সব ওকে বলে! তানজুম একটু লজ্জা পায় ভেতরে ভেতরে অনেক খুশি ও হয়!
দু-জনেই কথা বলছে!

ওরা কথা বলতে থাক আমরা ততক্ষণে শুভর বাড়িতে যাই…!
শুভর মা– তুমি এক কথাই রাজি হয়ে গেলে! মেয়ের সম্পর্কে আমরা কিছুই জানি না! মেয়ে কেমন ফ্যামিলি কেমন আমাদের ছেলের যোগ্য হবে কি না। আমাদের ছেলেকে সারাজীবন সুখি রাখতে পারবে কি না!

শুভর বাবা– তুমি এত টেনশন করছো কেনো? আমাদের ছেলে একটা মেয়েকে পছন্দ করেছে সে তো আর হেলাফেলা টাইপের মেয়ে হবে না নিজের ছেলের উপর বিশ্বাস রাখো! আর এত মাস পর বিয়ের জন্য রাজি হয়েছে কাল তো যাবোই মেয়ে দেখতে সব কিছু ভালো হলেই বিয়ে ঠিক করবো বুঝছো এখন ঘুমাও…!
শুভর মা– ঠিক বলছো! (দু’জনেই ঘুম)
(একই চিন্তা ভাবনা কনভারসন আকাশের বাবা মার ও ছিলো আলাদা আলাদা বললে একই কথা দুইবার হত আর পর্ব বড় হত তাই এক বারেই বললাম)

শুভ কলের উপর কল দিয়ে যাচ্ছে…
কল বেজেই যাচ্ছে কল রিসিভ করার নামে খবর নেই!
শুভ– আজব মেয়ে তো হারাই গেলো নাকি এতবার কল দিচ্ছি চোখে দেখে না নাকি কানে শোনে না…!
উফফ,,, ঘুমিয়ে পরছে নাকি.?
মাত্র ১২টা বাজে এত তারাতাড়ি কেউ ঘুমায়!
আনরোমান্টিক মেয়ে…
একটা মেসেজ দিয়ে রাখি সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখতে পাবে!
মেসেজ…!
কুত্তী ছেরি এত তারাতাড়ি ঘুমাইতে কে বলছে?
আমি কল দেবো জানতে নাকি? কত গুলা কল দিছি বিয়ে টা হোক পরে বোঝাবো মজা.!
যার জন্য মেসেজ দিলাম সেটা হচ্ছে কাল আমি আমার ফুল ফ্যামিলি সহ তোমাদের বাড়ি যাবো তোমাকে দেখতে তোমাকে আমি অনেক বার দেখছি তবুও বাধ্য হয়ে যেতে হবে কারণ আব্বু আম্মু রাও যাবে সাথে আমাকেও যেতে হবে…
তাই সুন্দর করে সেজে থাকবে শাড়ি পরে আসবে মনে থাকে জেনো আর শাড়ি না পরলে জানোই তো
গুড নাইট বাবু উম্মাহহহহ

শুভও ঘুম…
তানজুমের সাথে কথা শেষ হলে,, আকাশ অভ্রকে কল দিয়ে সব জানায়…!
দুজনে অনেকক্ষণ কথা বলে কল কেটে দেয়!
অভ্র বেচারা নীলকে অনেক বার কল করে নীলের ফোন ব্যস্ত…!
নিশ্চয়ই তানিয়া কাজল বা তানজুমের সাথে কথা বলছে!
প্রায় ৩০মিনিট পর অভ্র আবার নীল কে কল দেয় কিন্তু নীল কল রিসিভ করলো না..!
একবার কল রিসিভ না করায় অভ্র এটাকে স্বাভাবিক ভাবেই নিলো আরেকবার কল দিলো নীল এবারও কল রিসিভ করলো না অভ্র বেশ রেগে গেলো!
অভ্র– মানে তুমি এটা ইচ্ছে করেই করছো নীল আমার কল রিসিভ করছো না
আরেক বার কল দিলো। এবার ফোন বন্ধ
অভ্রর মেজাজ এবার বিগড়ে গেলো এতক্ষণ জেগেই ছিলো শুধু কল রিসিভ করছিলো না এখন তো সব সীমা পার করে ফোন বন্ধ করে ফেলেছো…
অভ্র– নীলললললললললল… ( নীল বলে চিৎকার দিয়ে সামনে থাকা টেবিলে লাথি মারে হাতের ফোন টাও আছাড় মারে…! রাগে ফুপাতে ফুপাতে বেলকনিতে চলে যায়…! রাতে আর ঘুমায় না অভ্র….

অভ্র– সমস্যা কি তোমার নীল? আমি দেখতে ভালো নই না-কি আমাকে ইগনোর করো কেনো আমি কম কিসে ভালো কেনো বাসো না আমাকে..!
নীলললল…!
আর রাগ কনট্রোল করতে না পেরে দেয়ালে একটা পাঞ্চ করে..

সকালে…….!
আকাশ ও শুভর বাবা তানজুম ও তানিয়ার বাবার সাথে যোগাযোগ করে এবং জানায় তারা আজ উনাদের মেয়েদেরকে দেখতে যেতে চায় যদি উনাদের সমস্যা না থাকে… তারাও খুশি হয়ে বলে তাদের সমস্যা নেই…!
তানিয়া সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে চার্জের থেকে ফোনটা হাতে দিয়ে শকট এতগুলা কল…২০টা কল সাথে ১টা ইয়া বড় মেসেজ…
মেসেজ ভিউ করে পরতেই ঘাবড়ে গেলো তামিয়া…
এটা কি মেসেজ নাকি থ্রেড
বড় সড় একটা ঢোক গিললো তানিয়া সাথে সাথেই গ্রুপ কল দিলো চারজনে একসাথে কথা বললো অনেকক্ষণ বুঝতে পারছে না দুজনকেই একসাথে দেখতে আসবে কে কোথায় যাবে…!
নীল– আমি তানজুমের বাড়ি যাবো…! কাজল তুই তানিয়ার বাসায় যাবি…!

সবগুলা হ্যা এটাই বেটার হবে..!
কাজল–টাইমলি পৌঁছে যাবো আমরা তোরা টেনশন করিস না রাখি বাই…
কাজল– আল্লাহ হাফেজ.!
নীল– আল্লাহ হাফেজ.!!
তানজুম– আল্লাহ হাফেজ.!
তানিয়া– আল্লাহ হাফেজ.!

সকাল ১০টায়…!
রাজ চৌধুরী পৌঁছে যায় আকাশের বাড়িতে সাথে মিসেস চৌধুরী ও ছিলেন..!

কলিং বেল বাজাতেই এক সার্ভেন্ট এসে দরজা খুলে দেয়!

.
.
.
.
চলবে কি….?

ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। (ভালো থাকবেন সবাই) আমি শেষ লিখতে লিখতে…!

” কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ” ❌

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here