অভ্র নীল পর্ব-০৯

0
555

#অভ্র_নীল
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা
#পর্ব_০৯
____________
শুভ আর আকাশের মনে তো লাড্ডু ফুটছে!
জানপাখিকে দেখতে পাবে! (গত পর্ব)
মিসেস রায়হান উঠে একজন সার্ভেন্টকে বললো উপরে গিয়ে নীলকে ওদের নিয়ে আসতে বলো!
সার্ভেন্ট– ম্যাডাম আপনাদের কে নীল আপা কে নিচে যেতে বলেছেন!
তানজুম– ওকে আমরা আসছি!
নীলকে সাথে নিয়ে তানজুম তানিয়া কাজল সিঁড়ি দিয়ে নামছে!
আকাশ আর শুভ হা করে তাকিয়ে আছে তানজুম আর তানিয়ার দিকে
আকাশ– শাড়ি পরেছো তুমি কলিজা কত সুন্দর লাগছে তোমাকে!(মনে মনে)
শুভ– হায় বাছবি কারো আব বাচচে কি জান লোগি কেয়া(মনে মনে)
নীলকে নিয়ে অভ্রর বরাবর সামনে বসায় অভ্র মাথা নিচু করে আছে আর নীল ও মাথা নিচু করে আছে!
আকাশ শুভ ইশারায় কথা বলছে তামজুম আর তানিয়ার সাথে কাজল বসে বসে দেখছে
রাজ চৌধুরী– আপনার মেয়ে ভাড়ি মিষ্টি রায়হান সরকার! আমাদের মেয়ে খুব পছন্দ হয়েছে আমরা আজই রিং পরিয়ে যাবো!
নীলের আত্মা শুখিয়ে যাচ্ছে এই কথা শুনে!
অভ্র– আমি কালই লন্ডন বেক করবো বিয়ে করাচ্ছি আমি নীলকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করবো না(নিচের দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে) মনে মনে
রাজ চৌধুরী– অভ্র মাথা উঁচু করে মেয়েকে দেখো
একবার!
অভ্র– নিশ্চুপ!
আকাশ শুভ মিসেস রাজ তোয়া– দেখ একবার তাকা!
নীল নিচের দিকে তাকিয়ে আছে কিন্তু ওর মুখ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে আর অভ্র তো নীলের সামনেই বসেছে!
অনেক ঝরাঝরির পর অভ্র বিরক্ত হয়ে একবার মাথা তুলে দেখে আবার চোখ নামিয়ে নিলো!
অভ্র– হইছে শান্তি দেখছি! (আকাশ আর শুভকে বললো)
অভ্র– ওয়েট ওয়েট কাকে দেখলাম আমি! (বলে আবারও মাথা তুলে তাকালো এইবার তো অভ্র পুরো অভাক পাশাপাশি নিজের চোখকে বিশ্বাসই করতে পাচ্ছে না)
অভ্র– আমি কি স্বপ্ন দেখছি নাকি কিভাবে সম্ভব?
আকাশ– সবই সম্ভব!
অভ্র আকাশের দিকে তাকাতেই আকাশ এক চোখ টিপ দেয়
শুভ– অভ্র ভাবীকে পছন্দ হয়েছে নাকি কালকের ফ্লাইটেই বেক করবি কোনটা (একটু শয়তানি হাসি দিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো)
অভ্র– তোরা দু’জন সব যানতিস?
আকাশ– তোর নীলের কথা তো আমরাই আঙ্কেল কে বলেছিলাম আর আঙ্কেল নিজে সব ঠিকঠাক করেন আমরাও হেল্প করি আর তাছাড়া নীলের কথা তোকে বলতে আঙ্কেল বারণ করেছিলো সারপ্রাইজ দোস্ত
অভ্র দুই পা দিয়ে দুজনের পায়ের উপর ইচ্ছে করেই চাপ দিলে দুজনের মুখ ফুলিয়ে রেখেছে শব্দ করতে পারছে না
অভ্র– তোদের শাস্তি!
শুভ– জান বাইরাই গেলো!
অভ্র নীলের দিকেই তাকিয়ে আছে এক নজরে আগে কখনো নীল কে এইভাবে দেখেনি!
নীল শাড়ি, নীল কাঁচের চুড়ি, ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক চোখে কাজল চুলগুলো খোলা!
আবার নতুন করে প্রেমে পরে গেলো অভ্র নীলের!
রাজ চৌধুরী– কি বাবা তুই রাজি তো!?
(অভ্র তো মহা খুশি)
অভ্র– হ্যাঁ বাবা আমি রাজি
সবাই রাজি— তাই দুই পরিবার মিলে দুই টা রিং বাহির করলো!!
অভ্র মনে হচ্ছে এখন নাচবে এত খুশি শুধু এত মানুষের জন্য ফিলিংস কন্ট্রোল করছে ওর ইচ্ছে করছে ওর বাবাকে গিয়ে জড়িয়ে ধরতে!
তারপর রাজ চৌধুরী রিং দিলো অভ্রর হাতে অভ্র ও পরিয়ে দিলো নীলকে রিং নীলও পরিয়ে দিল অভ্রকে রিং…
অভ্র– এই মেয়েটা কি একবারও কি মাথা তুলে দেখতে পারে না নাকি? আজ আমার জায়গায় অন্য কেউ হলে তাকেও এই ভাবে রিং পরিয়ে দিতে তুমি নীল ভাবতেই রাগ হচ্ছে তোমাকে কি যে করবো আমি
একবার শুধু বিয়েটা হতে দাও!! ( মনে মনে )

সবাই তো মহা খুশি সবাই মিষ্টিমুখ করছে!
শুধু খুশি নয় নীল.!
রাজ চৌধুরী– তাহলে বেয়াই বেয়াইন বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে ফেলি কি বলেন!
রায়হান সরকার– একদম যা বলেছেন বেয়াই!
রাজ চৌধুরী — তাহলে আজ থেকে ১৫দিন পর ওদের বিয়ে.!
রায়হান সরকার– আচ্ছা ঠিক আছে আমাদের কোনো সমস্যা নাই!
মিসেস রাজ চৌধুরী আর মিসেস রায়হান সরকার– আপনারা যা ভালো বুঝেন আমাদের ছেলে মেয়ে দু’জনকেই পছন্দ হয়েছে!
রায়হান সরকার– আচ্ছা ঠিক আছে ১৫দিন পর ডেট ফাইনাল!
নীল মাথা নিচু করে আছে এখনো একবারও কারো দিকে তাকায়নি।
নীল– নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়ে এক প্রকার জোর করে আবার ১৫ দিন পর বিয়ে বাহ।
রাজ চৌধুরী– অভ্র তোমার যদি নীল মা-র সাথে আলাদা কথা থাকে তাহলে তুমি ওর সাথে গিয়ে কথা বলতে পারো!

রায়হান সরকার– হ্যাঁ হ্যাঁ,,, ঠিক বলেছেন!

অভ্র– তার কোনো দরকার নেই!
আকাশ– কেনো দরকার নাই! দরকার আছে আমরাও যাবো তোর সাথে আমরা না হয় দূরে থাকবো। কি বলিস শুভ?
শুভ– ঠিক বলেছিস!
মিসেস রায়হান– নীল ওদেরকে তোমার সাথে করে ছাঁদে নিয়ে যাও..!
নীল তানজুম তানিয়া কাজল আগে আগে গেলো পিছে পিছে অভ্র আকাশ আর শুভ ও গেলো!
এটা আকাশের প্লেন ছিলো!
অভ্র নীলের৷ সাথে দেখা করলে ওরাও একটু সুযোগ পেতো ওদের জান পাখির সাথে দেখা করতে আর আজকে তো শাড়ি পরা দেখেই
যাইহোক এত না বলি! ছাঁদে নীলকে একা রেখে ওরা তিনজন চলে আসে আর বলে।
তানজুম– ভাইয়া ওই যে নীল ওখানে দাঁড়িয়ে আছে আপনি যান আমরা আসি!
অভ্র চলে গেলো নীলের কাছে!
ওরা দুজন যাবে আর ওরা দু’জন আটকে দেয়!
আকাশ– লাড্ডু সোনা কোথায় পালাচ্ছ? ( তানজুমের গাল টেনে টেনে)
তানজুম– আ..আ.. আমাকে নিচে যেতে হবে আন্টির হেল্প লাগ…তে পারে! তো আমি যাই! (বলেই দৌড় দিতে যাচ্ছিল)
কিন্তু আকাশ খোপ করে তানজুমের হাত ধরে ফেলে!
আকাশ– কোথায় পালাচ্ছ বেবি আমার কাছ থেকে পালানো এত সহজ না! চলো আমার সাথে.!
(চলো বলে বলে হাত ধরে নিয়ে গেলো ছাঁদের উপর সাইডে)
তানিয়া আকাশ কে আসতে দেখে তখনি উল্টা পাল্টা দৌড়..!

তানিয়া সিঁড়ি দিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে নামছে আর বলছে!

তানিয়া– আল্লাহ বাঁচাইছে! ওই ফাজিলটা আসার আগেই আমি পালিয়েছি উফফ না জানি আজ কি হবে জুমের সাথে! আমি তাড়াতাড়ি পালাইইইই….
পালাই বলতে বলতে কেই একজন তানিয়ার হাত ধরে ফেলে! (তানজুমের নিকনাম জুম)

তানিয়া হঠাৎ করে হাত টান দিয়ে ধরায় তানিয়া নিজের তাল সামলাতে না পেরে পরে যেতে নিলেই শুভ ঠুস করে তানিয়াকে ধরে ফেলে
পুরো ফ্লিম স্টাইলে
শুভ তানিয়ার কোমরে ধরে আছে তানিয়া চিৎকার দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে শুভ তানিয়া ভয় মাখা মুখের দিকে তাকিয়ে আছে আর হাসছে

শুভ– তুমি কি ভেবেছিলে এই ফাজিল টার হাত থেকে পালানো এত সোজা হুম!
তানিয়া শুভর কন্ঠ বুঝতে পেরে চোখ মেলতেই তানিয়ার চোখ কপালে
শুভ ওকে ধরে আছে আর অনেকটাই ওর ক্লোস হয়ে আছে!

তানিয়া– ছাড়ুন আমাকে.
শুভ– নাহ!( একটা দুষ্ট হাসি দিয়ে)
তানিয়া– আমি বলছি ছাড়ুন আমাকে! (একটু রেগেই গেছে এখন বাড়িতে মানুষের অভাব নাই আর কখন কোন সার্ভেন্ট চলে আসবে তার ঠিক নেই)
শুভ একটু রেগেই গেলো — আমিই তো ধরেছি অন্য কেউ ধরছে নাকি যে এমন করছো! (রেগে রেগে বলিলো)
তানিয়াকে এখন শুভ ধরে আছে!
তানিয়া– না মানে বাড়িতে……(আর কিছু বলতে দিল না তার আগে শুভ তানিয়ার দিকে ঝুকে ওকে কিস করলো তামিয়া শকড ছাড়ার নামই নাই হিহিহি
–ওরে আল্লাহ এইডা আমি কি দেখলাম! (চিল্লানী দিয়া)
কারো চিৎকার শুনে শুভ তানিয়াকে সাথে সাথেই ছেড়ে দেয়!
তানিয়া– ওরে বাবা গো ওরে মা গো আমার মাজা গেলো গো (কান্না কান্না গলায়)
শুভ– তানিয়া একমিনিট বসো কেউ আসছিলো আমি ওকে ধরে নিয়ে আসি!
শুভ দৌড়ে এসে তোয়াকে ধরে ফেললো!
(হো চিৎকার দিছিলো ওইটা তোয়াই ছিলো ভাইয়া আর ফিউচার ভাবির কাছে যাচ্ছিল) আর রাস্তায় দূর্ঘটনা সরূপ তানিয়া আর শুভকে দেখে চিল্লানি দেয় আর খিচ্চা দৌঁড়… দৌড় দিয়েও লাব হয়নি শুভ ধরে ফেলে!
শুভ– লক্ষী বোন আমার চল আমার সাথে!
তোয়া– আমি যাবো না তুমি খুব খারাপ!
শুভ– জোর করেই তোয়াকে সাথে নিয়ে এলো। জোর করে না নিয়ে এলে ওও নিচে গিয়ে সব বলে দিতো
শুভ তোয়াকে তানিয়ার কাছে নিয়ে এলো তানিয়া এখনো কোমর ধরে কোঁকড়াচ্ছে!
তোয়া তানিয়াকে এইভাবে দেখে আর কিছু বললো না!
শুভ তানিয়াকে নিজের দুই বাহুতে মানে কলে তুলে নিলো ওর কান্ড দেখে দুই জন অভাক এক তানিয়া দুই তোয়া.. তোয়া তো বড় সড় একখানা টক গিললো!

দুজনকে নিয়ে একটা রুমে গেলো!
রুমটা নীলের,, রুম কোন দিকে সেটা তানিয়াই বলেছে!
তানিয়াকে বিছানায় শুইয়ে দিলো।
তানিয়া– ওই ওয়ারড্রব এর দ্বিতীয় ড্রয়ারে ব্যাথার মলম আছে নিয়ে আসো!
মলম নিয়ে আসলে তোয়া তানিয়ার কোমড়ে মলম মালিশ করে দেয় আর শুভ বারান্দায় চলে যায়!
তোয়া– মলম লাগিয়ে দিয়েছি ভাইয়া তুমি রুমে আসো!
শুভ রুমে আসে তানিয়া লজ্জায় কারো দিকে তাকাতে পারছে না তাই অন্য দিকে তাকিয়ে আছে!

শুভ তোয়ার হাত ধরে — বোন আমার লক্ষী বোন সোনা বোন তুই যা বলবি তাই করবো প্লিজ কারো কাছে কিচ্ছু বলিস না প্লিজ যা চাইবি তাই দিবো তবুও কাউকে বলিস না!তোকে অনেক গুলা চকলেট কিনেও দিবো।

তোয়া– কি যে বলো না ভাইয়া আমার কি আর চকলেট খাওয়ার বয়স এখন! (একখানা শয়তানি হাসি দিয়ে)
আমি কাউকে কিচ্ছু বলবো না একটা শর্তে

শুভ– কি শর্ত বল তোর সব শর্তে রাজি! তাও কাউকে বলিস না.
তোয়া– আজ থেকে আমার বয়ফ্রেন্ড এর যখন যা লাগবে তোমাকে কল দেওয়ার সাথে সাথেই দিতে হবে না করতে পারবা না! তাহলেই কাউকে বলবো না রাজি!
শুভ– কিহহহহ তোর বয়ফ্রেন্ড আছে
তোয়া– হো এত অভাক হওয়ার কি আছে তোমারও তো জিএফ আছে যার সাথে একটু আগে বলমু নাকি সবাইকে গিয়া
শুভ— তোর আর আমার বয়স কি এক
তোয়া– এই বয়সে সবারই থাকে আমার বান্ধবী গুলার তো ৪টা ৫ টা করে বয়ফ্রেন্ড আছে আমার তো শুধু একটা এখন বলো রাজি কি না তুমি!
শুভ— হো যা রাজি! রাজি না হইয়া আর উপায় আছে!
তোয়া– দাও ২০হাজার টাকা কেশ!
শুভ— কিহহহহ এত টাকা দিয় তুই কি করবি?
তোয়া– প্রেম করি তার পার্টি দিমু! এখন দাও
শুভর আর তো উপায় নাই তাই বাধ্য হয়েই দিতে হলো টাকা!
টাকা নিয়ে চলে গেলো তোয়া!
শুভ– শুধু মাত্র ২মিনিট কিস করার জন্য ২০হাজার টাকা আল্লাহ অন্য কিছু করলে তো আমি ফকির হয়ে যাবো

তোয়া আবার ফিরে এলে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে —
তোয়া– ভাইয়া নেক্সট টাইম রোমান্স করলে রুমের মধ্যে দরজা বন্ধ করে করবা কিন্তু! (হাসতে হাসতে দিলো দৌঁড়)
শুভ– তবে রে! তানিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখে ওও ঘুমিয়ে গেছে!
সরি বাবু আমি হঠাৎ করে ভয় পেয়ে তোমাকে ছেড়ে দিয়েছিলাম আর আমার জন্যই তোমার এখন এত কষ্ট হচ্ছে আর কখনো তোমাকে কষ্ট পেতে দিবো না! যত তারাতাড়ি পারি তোমাকে আমার করে নেবো!
(এই বলে তানিয়ার কপালে চুমু দিয়ে চলে গেলো)
তানজুমকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে দাড়িয়ে আছে আকাশ আর শুধু কথাই বলছে কি কথা বলছে ওরাই
জানে!
কারো কথায় আড়ি পাততে নেই তাই আড়ি পাতিনি..
এখন যাই আমাদের অভ্র নীল এর কাছে….
অভ্র নীল এর পেছনে দাঁড়িয়ে ছিল আর একটা কাশি দিলো যাতে নীল বুঝতে পারে যে ও এসেছে..!
নীল– পিছনে ঘুরেই যতসব আবল তাবল বলতে থাকলে!
কি বললো আবল তাবল সেটা পরের পর্বে বলবো!

.
.
.
.
চলবে কি….?

গল্প পড়ে সবাই রেসপন্স করবেন।(ভালো থাকবেন সবাই)

” কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ “❌

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here