অভ্র নীল পর্ব-০৮

0
547

#অভ্র_নীল
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা
#পর্ব_০৮
_____

তন্ময় আকাশ শুভ ওদের তিনজনকে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে যার যার বাড়ি চলে যায়! (গত পর্বে)

সন্ধ্যা ৬টায়—

নীলের মা– নীল সন্ধ্যা হয়ে গেছে আম্মু! উঠে এখন ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাও!
নীল– আম্মু আর একটু আগে কেনো ডাকোনি?
উফফ
নীল ঘুম থেকে উঠে ওয়াশরুমে চলে যায়!
ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে নীল সোজা বারান্দায় চলে যায়! আর ভাবতে থাকে কাল কি হতে চলেছে ওর সাথে!
কিছুক্ষণ পর…!
খালেদা– নীল কোথায় তুমি? তোমার জন্য কফি নিয়ে আসছি খেয়ে নেও মা গরম গরম!

নীল– খালেদা আন্টি আমি বারান্দায়,,, তুমি টেবিলের উপর রেখে যাও আমি পরে খেয়ে নেবো!

খালেদা– তো আমি যাই বাড়ির অনেক কাজ সব কালকের আগেই শেষ করতে হইবো!(খালেদা বাড়ির কাজেট ভুয়া)

রুমে এসে কফির মগ টা নিয়ে পড়তে বসলাম!
আর যাইহোক পড়া তো আর মিস করা যাবে না!

রাত ৯টা—!!
নীলের মা— নীল খেতে আসো তাড়াতাড়ি!
নীল– আসছি আম্মু!
খাবার টেবিলে-
নীল– আম্মু,,, আব্বু কোথায়?

আম্মু– কাল তোমাকে দেখতে আসবে তাই আজ অফিসের সব কাজ শেষ করে আসতে লেইট হবে,, তুমি খেয়ে রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো!

নীল– চুপচাপ বসে খাচ্ছে যেনো খাবার গলা দিয়ে নামছেই না! কারণ সব হচ্ছে ওর ইচ্ছার বিরুদ্ধে
নীল খাওয়া শেষ করে রুমে এসে দরজা লক করে দিয়ে আবার বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চাঁদ দেখতে থাকে! নীল তো এটাও জানে না ওকে দেখতে কে বা কারা আসবে! আর কিছুক্ষণ ভাবলে মনে হয় নীলের মাথা ফেটে যাবে! নীল মাথায় হাত দিয়ে রুমে এসে ঘুমিয়ে পরলো!

রাত ১০টা
আকাশ- কল দিলো তানজুম কে!
তানজুম কল দিলো আকাশ কে
শুভ কল দিলো তানিয়া কে
তানিয়া কল দিলো শুভ কে
তন্ময় কল দিলো কাজল কে
কাজল কল দিলো তন্ময় কে
তিন জনের নাম্বারে তিন জনে একসাথে কল দেওয়ায় মোবাইলের ভেতরে থাকা আন্টিটা বলছে আপনার ডায়াল কিতো নাম্বার টি এই মুহূর্তে ব্যাস্ত আছে কিপা করে কিছুক্ষণ পর আবার চেষ্টা করুন!
তানিয়া তানজুম কাজল– না জানি এত রাতে কার সাথে এত কথা বলছে ফাজিল টায়!
আকাশ শুভ তন্ময়– না জানি এত রাতে কার সাথে কথা বলছে মেয়েটায়!
কিছুক্ষণ পর আবার কল দেয় এবার রিং হয়
তানজুম তানিয়া কাজল কল রিসিভ করার সাথে সাথেই।
তানজুম তানিয়া কাজল — হ্যালো! কার সাথে কথা বলতে ছিলা তুমি হুহহ কখন থেকা কল দিতাছি আমি।
আকাশ শুভ তন্ময়– কিহ তুমি কল দিচ্ছিলে এতক্ষণ? আমিও তো তোমাকেই কল দিচ্ছিলাম তাই তো ব্যাস্ত বলছিলো আমি আর কি না কি ভাবছিলাম
তানিয়া কাজল তানজুৃম– কিহ? কি ভাবছিলেন?
আকাশ শুভ তন্ময়– কোই কিছু ভাবি নাই তো ওই মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে। ভেবাচেকা খেয়ে গেলো তিন জনে।

তিনজনে রাগ করলো ওরা তিনজনে রাগ ভাঙ্গালোসোনা বাবু লক্ষী ময়না টিয় কবুতর শালিক টমাটু অনেক কিছু বলার পর রাগ ভাঙ্গলো
তার পর ২ঘন্টার ও বেশি তিন জনে তি জনের সাথে কথা বললো (প্রেম আলাপ পারলো) হিহিহি
এক জন সোফায় শুয়ে পা উপরের দিক করে কথা বলছে আরেকজন বিছানার উপর শুয়ে আরেকজন রুমের মেঝেতে শুয়ে- বসে আরেক জন বারান্দায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে
(আমি ভাবছি কি এত কথা বলছে আমি তো ২মিনিটের বেশি কথাই বলতে পারি না ওরা এত কি বলছে আল্লাহ-ই জানে যদি একটু শুনতে পেতাম)
কথা শেষ ১২ঃ৩০ বাজে সবাই গুড নাইট সুইটি কিউটি জানপাখি ময়নাপাখি বলে ঘুমিয়ে গেলো!
শুধু আকাশ আর শুভ ছাড়া!
আকাশ আর শুভ অফিসের কোনো কাজ করছিলো!
রাত ১২ঃ৩৫ মিনিট!
শুভ বাবা তোমাদের অনেকক্ষণ ধরে কল দিচ্ছি তোমরা কেউ কল রিসিভ কেনো করছিলে ব্যাস্ত বলছিলো ফোন! (কান্না জড়িত কন্ঠে)
শুভ– কেনো আন্টি আবার কি কিছু হয়েছে?
অভ্রর মা– হ্যা বাবা,, অভ্র ওই সকালে অফিসের জন্য বের হয়েছে অফিস থেকে বের হয়েছে সন্ধ্যায় কিন্তু এখনো বাড়িতে আসেনি! (কান্না করতে করতে বললো)
শুভ– আচ্ছা আন্টি আপনি টেনশন করবেন না আমি আর আকাশ দেখছি রাখি আন্টি..
অভ্রর মা– আচ্ছা বাবা! অভ্র কে পেলে আমাকে ফোন করে জানিও!
শুভ– এই ছেলেটাও না! উফফ (এক বস্তা রাগ নিয়ে)
শুভ বাড়ি থেকে বেরিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে এলো আকাশের বাড়ির নিচে!
শুভ ২বার কল করার পরও আকাশ কল রিসিভ করে নাই ৩বারের সময় রিসিভ করে!
আকাশ– হ্যালো! কিরে এত রাতে কল দিচ্ছিস কি হয়েছে!
শুভ– তুই যেভাবেই আছিস এখন নিচে আয়!
আকাশ– নিচে কেনো?
শুভ– আমি তোর বাড়ির নিচে দাঁড়িয়ে আছি সালা তাড়াতাড়ি নিচে আয়! (রাগি কন্ঠে)
আকাশ– এখনই আসছি! (বলে আকাশ নিচে এলো)
আকাশ– কি হইছে!
শুভ– কি হয় নাই বল! অভ্র আবার আজকেও বাড়িতে যায়নি আন্টি কল দিয়েছিলো! আমি সেই কখন থেকে কল দিচ্ছি রিং হচ্ছে রিসিভ করছে না!
আকাশ– ওয়েট আমি একটু কল দিয়ে দেখি! অনেকক্ষণ ধরে কল দিচ্ছি কিন্তু ও তো ধরছেই না!
শুভ– এই ছেলেটা না পুরাই আবাল!
আকাশ– আগের বার ওই রোডের মোড়ে পেয়েছিলাম চল সেখানে যাই!
শুভ– হ্যা চল! ভাই আমি অনেকক্ষণ ধরে ড্রাইব করছি এখন তুই একটু ড্রাইব কর প্লিজ…
আকাশ– ওকে!
কিছুক্ষণ পর— ওইখানে পৌঁছে যায়!
কিন্তু ওই রোডের কোথাও নাই অভ্র..
শুভ– আকাশ এখানে তো নাই কোথায় যেতে পারে!
আকাশ– ওই সামনেই একটা ক্লাব আছে চল ওখানে গিয়ে দেখি!
শুভ– কিন্তু ভাই অভ্র কখনোই ক্লাব যায় না ওখানে গেলে কিচ্ছু হবে না চল অন্য কোথাও খুঁজি!
আকাশ– তুই চুপ থাক – আমার মন বলছে অভ্র ওখানেই আছে! কারণ কাল ও অন্য একটা মেয়েকে দেখতে যাবে বিয়ের জন্য পছন্দ হলে বিয়ের ডেট ফিক্সড হবে আর ও নীলকে অনেক বেশি ভালোবাসে তাই আজ ও ওখানেই থাকবে চল একবার গিয়ে দেখি!
শুভ– কিন্তু আকাশ শুধু শুধু সময় নষ্ট
আকাশ– তুই না গেলে নাই আমি একাই যাবো!
(বলে হাঁটতে শুরু করলো)
শুভ– ওই সালা আসতাছি!
দুজনেই ক্লাবে ঢুকলো কোথাও অভ্র কে দেখতে পেলো না!
শুভ– বলেছিলাম তো অভ্র এখানে নাই চল অন্য কোথাও খুঁজি গিয়ে!
দু’জনেই বেরিয়ে তখনই আকাশের চোখ পরলো একটা ছেলের উপর পিছন থেকে দেখতে অভ্রর মতোই লাগছে!
আকাশ– শুভ ওই তো অভ্র!
শুভ– কি বললি কোথায় অভ্র?
আকাশ– ওই তো বসে আছে! চল সামনে যাই!
শুভ– যদি অভ্র না হয়!
আকাশ– শুভ
শুভ– ওকে চল যাচ্ছি তো
আকাশ আর শুভ ছেলেটার সামনে গিয়ে দেখে ছেলেটা বিয়ার খেতে খেতে টোটাল টাললি হয়ে আছে!
আকাশ– অভ্র কি করছিস নিজের অবস্থা এই অভ্র … অভ্র শুনতে পাচ্ছিস আমাদের কথা অভ্র…
শুভ– আকাশ অভ্র তো মনে হচ্ছে অনেক বিয়ার খেয়ে ফেলতে আর প্রথমবার এত বেশি খাওয়ার জন্য হয়তো অজ্ঞন হয়ে গেছে!
আকাশ– ঠিক বলছিস! কিন্তু এখন কি করবো ও কে এই অবস্থায় বাড়িতে নিয়ে যেতে পারবো না আন্টি তো সেন্স লেস হয়ে যাবে ওকে এইভাবে দেখলে!
শুভ– আমার বাড়িতে নিয়ে চল! আমার আব্বু আম্মু তো দেশের বাহিরে গেছেন ২দিন পর আসবে চল আমার বাড়িতে নিয়ে চল!
আকাশ– আমিও না হয় আজ তোর বাড়িতেই থাকবো চল!
শুভ– তুই ওকে নিয়ে গাড়িতে বস যা! আমি বিল প্রে করে আসছি!
আকাশ– ওকে! তারাতাড়ি আসিস।
শুভ– বিল প্রে করে ক্লাব থেকে বেরিয়ে আসে!
গাড়ির ড্রাইবিং সিটে বসে কার ড্রাইব করছে!
আর আকাশ পিছনে অভ্রকে ধরে বসে আছে!
প্রায় মিনিট চল্লিশের মধ্যে ওরা শুভর ফ্লাটে পৌঁছে যায়!
শুভ কার পার্কিং করে!
দু’জনে অভ্রকে ধরে একটা রুমে নিয়ে শুইয়ে দেয়!

আকাশ আর শুভ পাশে সোফায় বসে পরে!
খুব ক্লান্ত দু’জনে!

শুভ– তুই এখানে অভ্রর কাছে বস আমি দুজনের জন্য কফি বানিয়ে নিয়ে আসছি!

আকাশ– আমিও আসছি তোর সাথে!

শুব– নাহ! তুই এখানেই বস আর অভ্রর দিকে খেয়াল রাখ আমি নিয়ে আসছি!

আকাশ– ওকে!

কিছুক্ষণ পর শুভ কফি নিয়ে আসলো!
শুভ আর আকাশ কফি মগে চুমুক দিচ্ছে আর বিড়বিড় করছে!
আকাশ– কফি তো তুই দারুণ বানাস! আগে তো জানতাম না! (মানে কফিটা তেমন ভালো হয় নাই)
শুভ– আমি আগে কখনো কফি বানাইছি নাকি যেমনই বানাইছি এটাই তোর ভাগ্য বকবক না করে খা সালা (একটু রেগেই বললো)
মম ডেড ও বাহিরে গেছে আর ভুয়াও ছুটি তে গিয়েছে!
বাহিরের খাবার খেতে খেতে রুচি নষ্ট! বেহহহ
আকাশ– এখন বে করছিস কেনো? তুই না সারামাস বাহিরের খাবার খেতে পারবি ৭দিনেই রুচি নষ্ট হয়ে গেলো!
শুভ– হইছে হইছে বেশি বেশি বলছিস এখন
আকাশ– সত্যি কথা বললে সবারই রিয়াকশন এমনই হয়!
আকাশ– তোর এই কফি খাওয়ার থেকে না খাওয়াই ভালো,,, আমার মুখটাই নষ্ট হয়ে গেছে
শুভ– তো খাস না তোকে কি জোর করছি নাকি খাওয়ার জন্য
আকাশ আর শুভর মধ্যে বেশ কথা কাটাকাটি হচ্ছে কফি বানাতে পারে বলে!

ওই দিকে অভ্র বিছানার একবার এপাশ আরেকবার ওপাশ করছে।
আর কিছু বিড়বিড় করে বলছে!
আকাশ আর শুভ দুজনেই অভ্রর অবস্থা লক্ষ্য করে কফির মগ টা হাত থেকে সোফার সামনে থাকা টি টেবিলের উপর রেখে বিছানার দিকে যায়।
অভ্রর পাশে বসে দু’জনেই বুঝার চেষ্টা করছে অভ্র কি বিড়বিড় করছে.!
শুভ– ভাই কি বিড়বিড় করছে অভ্র?
আকাশ– বুঝতে পারছি না!
শুভ– আমার মনে হচ্ছে অভ্র নীল নীল বলছে শোন ভালো করে!
আকাশ ওর কান অভ্রর মুখের কাছে নিয়ে গেলো!
এখন স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে অভ্র নীলকেই ডাকছে।
আকাশ– অভ্র ঘুমের মধ্যেও নীলকেই খুঁজছে।
শুভ– আমাদের অভ্র নীলের সাথে দেখা হওয়ার পর থেকেই চেঞ্জ হয়ে গেছে,,, অনেক ভালোবেসে ফেলছে ওও নীলকে কিন্তু নীল যে ওকে ভালোবাসে না আকাশ!
ওও নীলকে কিভাবে এত ভালো বাসলো?
(আকাশের মুখের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে)

আকাশ– আমরা যেভাবে ভালো বেসেছি ওদেরকে অভ্র ও সেইভাবেই।
কাল তো অনেক কাজ নীল দের বাড়িতেও যেতে হবে।
আর সব কিছু ঠিক ঠাক হলে আমার বাবা-মাকেও তো তানজুমের কথা বলতে হবে তাদের রাজি করাতে হবে তারপর আমিও বর সাজবো
অভ্রর বিয়েটা হয়ে গেলেই বিয়ে করবো আমি তানজুমকে

শুভ– ভাই আমার দিকেও একটু তাকা তোর সাথে আমার বিয়ে টা হলে হয়ে গেলে কিন্তু বেশ মজা হবে
কি বলিস

আকাশ– হুম এটা কিন্তু খারাপ বলিসনি ভাবতে হবে বিষয় টা ওটা পরে দেখা যাবে এখন চল ঘুমাই কাল সকাল সকালই আঙ্কেল অভ্রর বাড়িতে যেতে বলেছেন!
সব কিছু আমাদেরই দেখতে হবে।

শুভ– আকাশ যখন অভ্র পাত্রী দেখবে নীল তখন ওর কি হবে
আকাশ– পিকচার আবি বাকি হে দোস্ত!
কালকেই দেখতে পাবি
এখন গুড নাইট
সকালে…….–!
নীল সারারাত টেনশনেই ঘুমাতে পারেনি! সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিজের রুমেই বসে আছে!

নীল– যদি আজ সত্যি সত্যি রিং পরিয়ে যায় তবে
কোন না কোন ছেলের সাথে বিয়ে হয়ে যাবে! উফফ
মাথা ব্যাথা করছে খুব
এখন এক কাপ কফি খেলে মাথা ব্যাথা টা কম তো

বলতে বলতেই দরজায় টোকা পরলো!
সার্ভেন্ট– আসবো ম্যাডাম!
নীল– হ্যা আসো!
সার্ভেন্ট— ম্যাম আপনার কফি.!
নীল– টেবিলের উপর রাখো!
সার্ভেন্ট কফি রেখে চলে গেলো!
নীল কফির মগটা নিয়ে বারান্দায় চলে গেলো!
কফির মগে চুমুক দিচ্ছে আর ভাবছে কি হতে চলেছে আজ তার সাথে..”
ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ নীলের অভ্রর কথা মনে পরলো!
প্রতিদনই তো কলেজের সামনে এসে দাঁড়িয়ে থাকতো ভালোবাসি বলে আর এখন এক সপ্তাহ ধরে খবর নেই.!
আমি কেনো ভাবছি ওই ছেলের কথা!
তারপর রুমে চলে এলো!
কিছুক্ষণের মধ্যেই এক সার্ভেন্ট এসে বললো!
ব্রেকফাস্ট এর জন্য নিচে বড় স্যার ডাকছেন!
নীল– যাও আমি আসছি!
ব্রেকফাস্ট টেবিলে!—
রায়হান সরকার বসে আছে এবং তার পাশেই বসে আছেন রায়হান সরকারের মা রাহেলা সরকার।
মিসেস রায়হান ও তার স্বামীর পাশেই বসে আছেন!
নীল আসলেই খাওয়া শুরু করবে।
নীল এসে চুপচাপ চেয়ার টেনে বসে পরলো কারো সাথে কোনো কথা বললো না!
সবাই চুপ করে আছে!
সবাইকে চুপ করে থাকতে দেখে রায়হান সরকার বিরক্ত হয়ে বললেন!
রায়হান সরকার– সবাই চুপচাপ কেনো?
আজ বিকালেই আসবে তারা সব কিছু জেনো পারফেক্ট হয় কোনো কিছুর জেনো কমতি না থাকে রায়হান সরকারের একমাত্র মেয়েকে দেখতে আসবে বলে কথা। আর নীলকে সুন্দর করে রেডি করিয়ে রাখবে আমি ওর জন্য কাল রাতেই নতুন ড্রেস আনছি ওটাই পরতে বলবে!
(মিসেস রায়হান কে বললো)

মিসেস রায়হান– আপনি যেভাবে বলবেন সব সেইভাবেই হবে!

নীল– আব্বু!
রায়হান সরকার– কিছু বলবে নীল!
নীল– আব্বু আমি বিয়ে করতে চাই না আমি নিজে…
(আর কিছু বলতে না দিয়ে রায়হান সরকার বললেন)
রায়হান সরকার– আমি জানি মা তুমি নিজে কিছু করতে চাও নিজের কেরিয়ার তুমি ওই ছেলের সাথে বিয়ের পরও করতে পারবে মা ছেলে বিষণ ভালো লাক্ষে একটা আমি তোমার আব্বু তোমার জন্য যা করি বা করবো বেস্টই করবো বিশ্বাস রাখো!

নীল আর কিছু বললো না কারণ কোনো বাবা-মাই তার সন্তানের খারাপ চায় না!
সবাই যার যার গন্তব্যে চলে গেলো!
নীল নিজের রুমে।
দাদী ও মিসেস রায়হান চলে গেলেন কিচেনে আজ কি কি মেনু হবে আর কি কি আর উনাদের আপায়নের যেনো কোনো ত্রুটি না থাকে সব কিছু পারফেক্ট হতে হবে! মিসেস রায়হান সব কিছু নিজে চেক করছেন! আর রায়হান সরকার অফিস গিয়েছেন ইমপোর্টেন্ড কাজে। কাজ শেষ করে ওনারা চলে আসার আগেই চলে আসবেন…!

ওইদিকে—–
তিনজন ঘুমের রাজ্য থেকা এখনো ফিরেনি ঘুমাচ্ছে এখনো!
মিসেস চৌধুরী ফোন দিতে বিরক্ত হয়ে গেয়েছেন!
তাই বাধ্য হয়ে ড্রাইবারকে শুভর ফ্লাটে পাঠায় ওদের নিয়ে যাওয়ার জন্য…!
রাতে শুভ অভ্রকে ওর বাড়িতে নিয়ে এসেছিলো আর সব একসাথেই আছে কল দিয়ে জানিয়েছিল…!
তাই মিসেস চৌধুরী জানেন আর ড্রাইবারও অনেকবার গিয়েছে অভ্রর সাথে ওদের দুজনের ফ্লাটে তাই ড্রাইবারও আকাশ আর শুভর বাড়ি চিনে !
ড্রাইবার কিছুক্ষণের মধ্যেই শুভর ফ্লাটে পৌঁছে যায়!
ড্রাইবার অনেকবার কলিংবেলটা বাজিয়ে যাচ্ছে কিন্তু কোনো সাড়া শব্দ নাই…!
আকাশ কলিংবেলের শব্দে ঘুম থেকে উঠে চোখ ডলতে ডলতে উঠে দেখলো কোথায় আছে তারপর কালকের রাতের কথা ভাবতে ভাবতেই ও কলিংবেল বাজার শব্দ পেলো।
শব্দ শুনে উঠে দরজা খুলে আকাশ অবাক অভ্রর ড্রাইবার!
ড্রাইবার বললো– অনেকবার কল করার পর কোনো রেসপন্স না পেয়ে ম্যাডাম আমাকে পাঠিয়েছে৷ আপনাকে নিতে চলুন তাড়াতাড়ি.!
আকাশ রুমে গিয়ে অভ্র আর শুভকে ডাকতে থাকে দু’জনের একজনেরও ঘুমের থেকে উঠার খবর নাই এদিকে অলরেডি অনেক লেট হয়ে গেছে আকাশ ইচ্ছে করেই এক লাথি দিয়ে শুভকে খাট থেকে ফেলে দিলো!

শুভর চিৎকারে অভ্র একাই উঠে গেলো!
আকাশ– ১০ মিনিটে রেডি হয়ে চলো আমার সাথে আন্টি ড্রাইবার পাঠিয়েছে!

অভ্র আর শুভ রেডি হয়ে নেয়!
তারপর গাড়ি করে বাড়ি চলে আসে.!
বাড়িতে এসে অভ্র অবাক প্রেপারেশন দেখে মনে হচ্ছে মেয়ে দেখতে যাচ্ছে না ছোটো খাটো একটা বিয়ে হচ্ছে মনে হচ্ছে আজই ওই মেয়েকে বাড়ি নিয়ে আসবে অসহ্য সব কিছু ইগনোর করে নিজের রুমে চলে গেলো!
আকাশ আর শুভ ওরাও মিস্টার রাজ চৌধুরী আর মিসেস চৌধুরীকে হেল্প করছে!
অভ্র নিজের রুমে গিয়েও শুধু নীলের কথাই ভাবছে!
অভ্র– নীল তোমার কি একবারও মনে পরেনি আমার কথা আমি যে সত্যি তোমাকে ভালোবাসি। এই বিয়ে আমি কিছুতেই করবো না ওই মেয়েকে দেখে এসেই কালকের ফ্লাইটে লন্ডন ফেরত চলে যাবো!

সরকার হাউস—-!

মিসেস রায়হান– নীলের রুমে প্রবেশ করে!
নীল একটা শপিং ব্যাগ এগিয়ে দিলো আর বললো এটা আজকে সন্ধ্যায় পরে রেডি হয়ে থাকবে আর কিছুক্ষণ পরেই সবাই চলে আসবে তোমার বাবাও চলে আসবে তোমার বাব আসার আগে রেডি হয়ে থেকো।
নীল– আমি কিছুতেই সং সেজে তাদের সামনে কিছুতেই যাবো না জোর করেই কি বিয়ে দিয়ে দিবে তোমরা আমাকে বোঝা হয়ে গেছি নাকি তোমাদের উপর আমি রেডি হবো না।
মিসেস রায়হান– নীললল তুমি কেনো বুঝতে চাইছো না!
আন্টি ওকে রেডি করার দায়িত্ব তুমি আমাদের উপর ছেড়ে দাও…!
আমরা রেডি করবো ওকে!
মিসেস রায়হান আর নীল দু’জনেই দরজার দিকে তাকালো তাকিয়ে দেখলো!
তানজুম,,, তানিয়া আর কাজল…!
নীল– তোরা? (অনেক টা অবাক হয়ে কারণ নীল ভাবেইনি ওরা আসবে)

মিসেস রায়হান– তোমরা আসছো মা তোমরাই ওকে বুঝিয়ে রেডি করে নিয়ে আসো!
বলতে বলতে রায়হান সরকার চলে এলো সব কিছু সাজিয়ে গুছিয়ে রাখা হয়েছে!
তানজুম তানিয়া কাজল—
কি না কি ঘোড়ার ডিম বগের ডিম বুঝাইলো অনেক বুঝানোর পর নীল রাজি হয়ে যায়!

কাজল শপিং ব্যাগ খুলতেই দেখতে পেলো একটা নীল কালারের শফট সিল্ক শাড়ি!
সাথে মেচিং চুড়ি কানের দুল!
ওরা তিনজনও আজ শাড়ি পরছে ওদেরও খুব সুন্দর লাগছে!
তানজুম তানিয়া কাজল– নীলকে শাড়ি পরিয়ে দিলো হাল্কা লাল ম্যাথ লিপস্টিক চোখে গাড় করে কাজল, কোমড় পর্যন্ত লম্বা চুল গুলো ছেড়ে দিলো!
নীল পুতুলের মতো বসে আছে!

ওইদিকে চৌধুরী হাউসের সবাই বেরিয়ে পরেছে সরকার হাউসের উদ্দেশ্যে!
সবাই খুব খুশি শুধু নীল আর অভ্র বাদে…!
সরকার বাড়ির গেইট দিয়ে ডুকলো চৌধুরীদের গাড়ি
সবাই এমন ভাবে চেচামেচি করছে জেনো বিয়ে করতে বর আসছে
মেয়ে দেখতে ছেলে পক্ষ আসছে ভুলে গেছে নাকি!
সবাই বাড়ির হলে বসে গল্প করছে! সবার সাথে সবার পরিচয় করিয়ে দিলেন।
রায়হান সরকার– আমার মা…(মিসেস রাহেলা সরকার কে দেখিয়ে)
আর আমার স্ত্রী (মিসেস রায়হানকে দেখিয়ে)
রাজ চৌধুরী– আমার ওয়াইফ শিলা চৌধুরী আর আমার ছেলে অভ্র চৌধুরী আর ওই যে আমার মেয়ে তোয়া চৌধুরী আর ওরা হচ্ছে আমার ছেলের মতো অভ্রর ছোটোবেলার বন্ধু আকাশ আর শুভ!
অভ্র মাথা নিচু করে আছে!
মিসেস রায়হান আর রাহেলা সরকারের– অভ্রকে বেশ পছন্দ হয়েছে!
রাহেলা সরকার– আমার ছেলের পছন্দ আছে! (একটু হেসে হেসে বললেন)
অনেকক্ষণ কথা বার্তা করলো সবাই টুকটাক নাস্তা করলেন!
রাজ চৌধুরী– কোই আমাদের বউমাকে নিয়ে আসেন দেখি আমরা সবাই! (মুখে হাসি দিয়ে বললো)
অভ্র বাবার মুখে বউমা শুনে প্রচুর রেগে গেলো কিন্তু কিচ্ছু বলতে পারছে না আবার মাথা নিচু করে রাখলো!
মিসেস রায়হান– আমি মেয়েদেরকে বলছি ওকে নিয়ে আসতে!
মিসেস রাজ– মেয়েদেরকে বলছি মানে আমরা তো জানি আপনার একটাই মেয়ে!
মিসেস রায়হান– হ্যাঁ আমার একটাই মেয়ে আর মেয়েদের বলতে আমার মেয়ের বান্ধবীদের কথা বলছি ওরাও এসেছে আর ওকে রেডি করে ওর সাথে আছে!
মিসেস রাজ– ওও ওকে আচ্ছা!
শুভ আর আকাশের মনে তো লাড্ডু ফুটছে!
জানপাখিকে দেখতে পাবে!
.
.
.
.

চলবে কি….???

” কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ “❌

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here