#ভুলবশত_প্রেম পর্বঃ ৩০
#লেখনীতে:সারা মেহেক
৩০
দরজা খুলতেই সামনে আদ্রিশকে দেখতে না পেয়ে আমি ভীষণ অবাক হলাম। কিছুক্ষণ পূর্বেই তো উনি এখানে ছিলেন। তাহলে চলে গেলেন কখন? অবশ্য উনাকে এখানে না দেখে যতটা না বিস্মিত হলাম এর চেয়েও ঢের স্বস্তি পেলাম৷ কারণ উনি যদি সত্যিই রুমে চলে আসতেন তাহলে মারাত্মক খারাপ কিছু ঘটে যেতো, যা মোটেও কাম্য ছিলো না।
আদ্রিশকে আশেপাশে না দেখতে পেয়ে আমি স্বস্তির সহিত রুমে প্রবেশ করলাম। অতঃপর ওয়াশরুমে গিয়ে ভালোভাবে মুখ ধুয়ে আয়নার দিকে চেয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলাম। আয়নায় আমি নিজেকে দেখলাম না বরং আদ্রিশের প্রতিটি অকল্পনীয় কাজের পুনরাবৃত্তি হতে দেখলাম। আমি কখনো কল্পনাও করতে পারিনি যে আদ্রিশের এ রূপও আমায় দেখতে হবে। উনি আমায় বিয়ে করার জন্য এমন একটা পাগলামি করে বসবে তা পুনরায় চোখের সামনে ভাসতে দেখেই আমার শরীরের প্রতিটি লোম খাঁড়া হয়ে গেলো। কল্পনায় প্রতিটি মেয়েই চায় কেউ তাকে ভালোবাসুক, তার জন্য পাগলামি করুক। কিন্তু বাস্তবে কোনো মেয়ে এ পাগলামির শিকার হলে তার মনোহর কল্পনা এক ভয়ানক বাস্তবে রূপ নেয়। যা তার কাম্য ছিলো না। যা সে কল্পনাও করতো না৷
হঠাৎ ওয়াশরুমের দরজায় নদী টোকা মেরে বললো,
” মিম আপু, নাফিসা ভাবী তোমাকে ডাকছে। ”
আচমকা নদীর কণ্ঠ শোনায় আমি খানিক চমকে গেলাম। অতঃপর নিমিষেই নিজেকে ধাতস্থ করে বললাম,
” তুমি যাও নদী। আমি আসছি। ”
” না আপু। নাফিসা ভাবী তোমাকে আমার সাথেই যেতে বলেছে। এক্ষুনি চলো। ”
অতঃপর আমি কোনোরূপ কথা না বাড়িয়ে ওয়াশরুমের ভেতরে থাকা তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছে বেরিয়ে এলাম। নদীকে দেখে মৃদু হেসে জিজ্ঞেস করলাম,
” কেমন আছো নদী?”
নদীও ফিরতি হাসি দিয়ে বললো,
” অনেক অনেক ভালো আছি। তুমি কেমন আছো ভা…ওপস সরি। মিম আপু।” এই বলে সে আমার সামনেই অবিন্যস্ত দৃষ্টিতে চেয়ে জিব কাটলো। ওর এ কাজে আমি ভীষণ অবাক হলাম৷ নদী আমাকে ঠিক কি নামে সম্বোধন করতে গিয়েছিলো তা বুঝতে সময় লাগলো না আমার। অর্থাৎ আদ্রিশ যে আমায় পছন্দ করেন এ বিষয়টা নদী ভালোমতোই জানে। কিন্তু এ মুহূর্তে এ নিয়ে ওকে ঘাঁটাঘাঁটি করার কোনো ইচ্ছেই প্রকাশ পেলো না আমার মাঝে। আমি ঠোঁটের কোনো ঈষৎ ভদ্রতামূলক হাসি এঁটে স্বাভাবিক কণ্ঠে বললাম,
” চলো নিচে যাই নদী। আপু নিশ্চয়ই অপেক্ষা করছে আমার জন্য। ”
” হ্যাঁ চলো আপু।” এই বলে ও আমার হাত চেপে ধরলো৷ অতঃপর আমরা একত্রে নিচে নেমে এলাম।
সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতেই আদ্রিশের সাথে আমার দৃষ্টি বিনিময় হলো। উনি ড্রইংরুমের সোফায় বসে দু হাত ফোনটি ধরে রেখে বসে আছেন। এ মুহূর্তে উনার দৃষ্টি শান্ত এবং নিষ্পলক। চাহনি এমন যে, আমার উপর খুব রেগে আছেন। কিন্তু সে রাগ আপাতত শীতল রূপে আছে। তবে নিঃসন্দেহে যার বহিঃপ্রকাশ হবে উত্তপ্তরূপে।
আমি কয়েক পলকের জন্য আদ্রিশের দিকে চেয়ে রইলাম। অতঃপর নত দৃষ্টিতে নদীর সাথে রান্নাঘরে চলে এলাম।
ড্রইংরুমের সেন্টার টেবিলকে ঘিরে অবস্থিত সোফাগুলোয় কামাল আংকেল,নাসরিন আন্টী,ইমতিয়াজ ভাইয়া, জেবা ভাবী, কুহু,নদী,আদ্রিশ, আপু ও আমি বসে আছি। সকলের হাতেই পিজ্জার একটি করে প্লেট। প্রত্যেকের খাওয়াই প্রায় শেষের দিকে। এমতাবস্থায় ইমতিয়াজ ভাইয়ার কোলে থাকা ইকরা ছটফট করতে লাগলো৷ হয়তো সে এখন কোলে বসে থাকতে চাইছে না৷ সে চাইছে কেউ তাকে কোলে নিয়ে হাঁটাহাঁটি করুক। ইকরার এরূপ ছটফটানি দেখে জেবা ভাবী দ্রুত পিজ্জা খাওয়া শেষ করে ইমতিয়াজ ভাইয়ার কোল থেকে ইকরাকে কোলে নিয়ে হাঁটাহাঁটি করতে লাগলো।
হঠাৎ নাসরিন আন্টী আপুকে জিজ্ঞেস করলেন,
” কি ব্যাপার নাফিসা? মিমের বলে বিয়ে ঠিক হয়ে আছে?”
আচমকা এমন একটা কথার বোম ফাটার সাথে সাথেই আমার বুকটা ধক করে উঠলো৷ দৃষ্টি আপনাআপনি চলে গেলো আদ্রিশের পানে। উনার চাহনিতে স্পষ্ট অবিশ্বাসের দেখা মিলছে। নিশ্চয়ই উনি এরূপ সংবাদ শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না। মুহূর্তের মাঝেই উনার দৃষ্টি শক্ত হয়ে এলো। লক্ষ্য করলাম উনি উনার বাম হাতের মুঠো শক্ত করে সোফা চেপে ধরলেন। উনার এরূপ প্রতিক্রিয়ায় আমি খানিক ঘাবড়ে গেলাম। সাথে সাথে সাথে দৃষ্টি ফিরিয়ে সেন্টার টেবিলের উপর রাখলাম। আপু আমার পাশ থেকে নাসরিন আন্টীকে বললো,
” হ্যাঁ, আম্মু। পরশুদিন ছেলেপক্ষ দেখতে আসবে ওকে। ”
নাসরিন আন্টী সায় জানিয়ে বললো,
” হ্যাঁ, বেয়াইন ফোন করে আমায় বললো। কালকেই চলে যেতে বললো তোমাদের।”
কামাল আংকেল এবার আপুকে জিজ্ঞেস করলেন,
” এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে ঠিক হয়ে গেলো!”
” আরো প্রায় এক বছর আগে থেকেই মোটামুটি বিয়ে ঠিক হয়েছিলো। যদিও আমাদের পক্ষ থেকে তেমন একটা সায় ছিলো না। তবে আংকেল তার ছেলের সাথে মিমের বিয়ে দেওয়ার জন্য এক পায়ে দাঁড়া হবার মতো অবস্থায় আছেন এখনও।”
” ছেলে তোমাদের পরিচিত? ”
” না আব্বু৷ ছেলে আমাদের পরিচিত না। ছেলের বাবা আব্বুর কলিগ। সেই সুবাদেই পরিচিতি দুজনের। ”
” ওহ, তাহলে তো ভালোই হলো। তা ছেলে করে কি?”
” সুইজারল্যান্ডে থাকে। ওখানকার এক কোম্পানিতে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে আছে।”
” বাহ৷ ছেলে তো তাহলে ভালোই জব করে। আমাদের মিমের জন্য নিশ্চয়ই ভালো হবে!”
আপুদের কথার মাঝেই আমি আর এক মুহূর্তও বসে না থেকে সোফা ছেড়ে উঠে চলে এলাম। আমার পক্ষে ওখানে বসে থাকা প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছিলো। তীব্রভাবে অনুভব করছিলাম, আদ্রিশ আমার দিকে চেয়ে আছেন এবং উনার এ চাহনি যে অগ্নি শিখার ন্যায় ছিলো এতে কোনো সন্দেহ নেই। ফলস্বরূপ উনার এ চাহনির সামনে টিকে থাকা অসম্ভব হয়ে উঠেছিলো আমার জন্য।
রুমে এসে দরজা বন্ধ করেই বিছানায় শুয়ে পড়লাম আমি। প্রচণ্ড অস্থির অনুভূত হচ্ছে আমার। ভেতরে সব যেনো তালগোল পাকিয়ে আসছে। ভবিষ্যতে আমার কি করা উচিত, কি সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত তা নিয়ে রীতিমতো আমার মাথাব্যথা শুরু হয়ে গেলো। বারংবার আদ্রিশের চেহারা চোখের সামনে ভেসে এলো। ভেসে এলো, কিছুক্ষণ পূর্বে দেখা উনার নতুন এক রূপ। কিছুক্ষণ আগ পর্যন্তও উনি আমার বিয়ের কথা জানতেন না। অথচ এমন এক কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলেছিলেন। তাহলে আমার বিয়ের কথা শোনার পর উনি কি করবেন তা অনুমান করার সাহস হলো না আমার।
—-
আজ শেষের ক্লাস না হওয়ায় দ্রুতই কলেজ থেকে বেরিয়ে এলাম আমি৷ কথা ছিলো কলেজ শেষ হওয়ার পর বাসায় গিয়ে খাওয়াদাওয়া করে আমি আর আপু পার্লারের উদ্দেশ্যে বের হবো। আম্মুর বিশেষ আদেশ ছিলো, আমায় যেনো পার্লার থেকে ফেসিয়াল করিয়ে নিয়ে আসে। সর্বোপরি, আমায় আগামীকাল ছেলেপক্ষ দেখতে আসবে!
প্রথম দফায় এ নিয়ে আপু ও আম্মুর সাথে বাকবিতন্ডায় জড়ালেও দিনশেষে তাদেরই জয় হলো। আমি কিছুতেই এতে নিষেধ করতে পারলাম না৷ তাদেরকে কিছুতেই বোঝাতে পারলাম না যে, আমি প্রচণ্ড বিরক্ত এতে। ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে মুখ ভঙ্গিমায় তাদের বোঝানোর চেষ্টা করলাম, আমি বিয়েটা করতে চাই না৷ আপু আমার এ ইশারা বুঝলো কি না জানা নেই। তবে আম্মু আমার ইশারা বুঝলো না। তার একটাই কথা, ছেলে এবং ছেলের পরিবার খুব ভালো। এমন ছেলে এ সময়ে এসে খুঁজে পাওয়া দুঃসাধ্য বটে। ভাগ্য করে এমন ছেলে পেয়েছি আমি!
বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পরও যখন খালি কোনো রিকশা পেলাম না তখন প্রচণ্ড বিরক্তি নিয়ে হাঁটা শুরু করলাম। কলেজের রাস্তা পেরিয়ে অপর রাস্তায় আসতেই আচমকা আমার সামনে আদ্রিশ এসে হাজির হলেন। উনাকে অকস্মাৎ এভাবে দেখে ভয়ে আমার আত্মা উড়ে যাওয়ার উপক্রম হলো। আমি তৎক্ষণাৎ ভীত কণ্ঠে উনায় জিজ্ঞেস করলাম,
” আপনি এখানে কেনো?”
আদ্রিশ এর জবাব দিলেন না। আমার দিকে শক্ত চাহনিতে চেয়ে শান্ত কণ্ঠে বললেন,
” চুপচাপ গাড়িতে উঠে বসো। কথা আছে তোমার সাথে।”
ব্যস, আদ্রিশের এ কথা আমার শ্বাসপ্রশ্বাস কয়েক সেকেন্ডের জন্য থামিয়ে দিতে যথেষ্ট ছিলো। যে মানুষটার সাথে গতকালের পূর্বেও দিব্যি ঝগড়া করেছি। আজ সে মানুষটাকেই আমি বাঘের মতো ভয় পেয়ে বেড়াচ্ছি। সবটাই ঘটেছে গতকালের সেই ঘটনার পর থেকে। এরপর থেকে যেনো এই মানুষটাই আমার কাছে অন্যরকম হয়ে গেলো।
আদ্রিশের সাথে এ মুহূর্তে আমার কথা বলার সাহস এবং ইচ্ছে, কোনোটাই হয়ে উঠলো না। ফলে আমি উনার প্রস্তাবে বেঁকে বসে বললাম,
” আমি আপনার সাথে কোনো কথা বলতে চাই না। আমি এখন বাসায় যাবো।”
আদ্রিশ আচমকা আমার দিকে মুখ এগিয়ে শক্ত কণ্ঠে বললেন,
” ভালোভাবে বলছি আমার সাথে চলো। তা না হলে, এই সবার সামনে তোমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে আমি দ্বিতীয়বারও ভাববো না। তখন সামলে নিও ব্যাপারটা।”
অতঃপর এই বলে উনি সামনে এগিয়ে গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসে পড়লেন। উনার এ কাজে আমি কিছুক্ষণের জন্য কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে পড়লাম। শেষমেশ একপ্রকার পরিস্থিতির উপর জোরজবরদস্তি করে আমি গাড়িতে বসে পড়লাম। আদ্রিশ আমার দিকে এক পলক চাইলেন। অতঃপর গাড়ি স্টার্ট দিলেন।
প্রধান শহর হতে বেরিয়ে কিছুটা গ্রামীণ পরিবেশের এক পুকুর পাড়ে এসে গাড়ি থামালেন আদ্রিশ৷ জায়গাটা নিস্তব্ধ নিরব। শান্ত দুপুরের ঈষৎ উষ্ণ রোদ এসে শরীরে মৃদু উষ্ণতা ছাড়িয়ে দিচ্ছে।
আদ্রিশ গাড়ি থামিয়ে নেমে পড়লেন। উনার দেখাদেখি আমিও নেমে পড়লাম। আদ্রিশ গাড়ির সামনে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। আমি উনার পাশে গিয়ে দাঁড়াতেই উনি শীতল কণ্ঠে বললেন,
” তাহলে এ বিয়ের ব্যাপারটা তুমি আগে থেকেই জানতে?”
উনার এ প্রশ্নে আমার স্বাভাবিক অনুভূতি থমকে গেলো। ফলে আমি নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে রইলাম। আমার নিরবতা উপলব্ধি করতে পেরে আদ্রিশ পাশ ফিরে আমার দিকে চাইলেন। আমি তৎক্ষনাৎ দৃষ্টি নত করে ফেললাম। আদ্রিশ পুনরায় আমায় জিজ্ঞেস করলেন,
” কি ব্যাপার? বলো। চুপ করে আছো কেনো?”
আমি নিচু স্বরে জবাব দিলাম,
” হুম।”
আদ্রিশ কিছুক্ষণ নিরব রইলেন। অতঃপর তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললেন,
” বাহ। তাহলে ম্যাডাম এ বিয়েতে খুব খুশি। তা, ছেলেকে নিশ্চয়ই খুব ভালোবাসো? তাই না?”
আমি তৎক্ষনাৎ দৃষ্টি তুলে চাইলাম। ফলস্বরূপ আদ্রিশের সাথে আমার দৃষ্টি বিনিময় হলো। আমি অবিলম্বে প্রতিবাদী স্বরে জবাব দিলাম,
” আমি এ পর্যন্তও ঐ ছেলেকে দেখিনি। ভালোবাসা তো দূরের কথা। কাউকে না দেখেও কি আদৌ ভালোবাসা সম্ভব? অন্তত আমার পক্ষে এসব সম্ভব না। ”
আদ্রিশ ঈষৎ ব্যাকুলতার সহিত বললেন,
” তাহলে আমায় কি ভালোবাসো?”
উনার এ প্রশ্নে আমার শ্বাসপ্রশ্বাস থমকে এলো। আমি তৎক্ষনাৎ পুনরায় দৃষ্টিনত করলাম। কারন এ প্রশ্নের জবাব দেওয়া অসম্ভব আমার জন্য। আদ্রিশ হয়তো আমার দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে রইলেন। অতঃপর জিজ্ঞেস করলেন,
” এ কারণেই সেদিন রেস্টুরেন্টে আমায় ওসব কথা বলেছিলে তাই না?”
আমি দৃষ্টি তুলে বললাম,
” আপনার প্রস্তাবে রাজি না হওয়ার জন্য আমি সেদিন যা যা বলেছিলাম সবটাই ঠিক ছিলো। কিছুই বানিয়ে বলিনি আমি। আর সেদিন এ বিয়ের কথা ভেবে কিছুই বলিনি আমি।”
” ওকে, তাহলে তুমি এ বিয়েতে রাজি না। ঠিক তো?”
” আমি কখন এটা বললাম?”
” তাহলে কি তুমি বিয়েতে রাজি?”
” আমি এটাও বলিনি আপনাকে। ”
” তাহলে কি চাও তুমি? ”
আমি নিশ্চুপ রইলাম৷ আদ্রিশও নিশ্চুপ রইলেন। অতঃপর উনি প্রলম্বিত নিঃশ্বাস ছেড়ে বললেন,
” একটা কথা জেনে রাখো মিশমিশ, আমি কখনোই তোমাকে অন্য কারোর সাথে সংসার করতে দিবো না। ”
আমি কাতর কণ্ঠে বললাম,
” আমি আপনাকে কখনোই বিয়ে করবো না৷ এটা আমি আগেও বলেছি, আবারও বলেছি। আমার পক্ষে কখনোই আব্বু আম্মুর বিরুদ্ধে যাওয়া সম্ভব না। ”
আদ্রিশ পাশ ফিরে গাড়ির উপর এক হাত ঠেকিয়ে আমার দিকে হুট করে এগিয়ে এসে শক্ত কণ্ঠে বললেন,
” তুমি কি করবে আমার জানা নেই৷ কিন্তু বিয়ে তো আমাকেই করতে হবে। মাইন্ড ইট।”
আমি করুন চাহনিতে চেয়ে বললাম,
” আদ্রিশ, আপনি আমার ফ্যামিলির অবস্থা সম্পর্কে বুঝতে পারছেন না। কোথায় আপনারা আর কোথায় আমরা!”
” খবরদার! এসবের দোহাই দিও না আমাকে। আমার তোমাকে চাই মানে চাই৷ সে যে করেই হোক।”
” আপনি এতোটা স্বার্থপর কি করে হতে পারেন আদ্রিশ?”
আমার প্রশ্নে আদ্রিশ নিজের রাগের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললেন। আচমকা গাড়ির উপর শক্ত হাতে থাবা মেরে বললেন,
” হ্যাঁ আমি খুব স্বার্থপর। আমার মতো স্বার্থপর কোথাও পাবে না তুমি। কিন্তু এ স্বার্থের পিছনে তুমি আছো। তোমার কারণেই আমি স্বার্থপর হয়েছি মিশমিশ। আমার অবস্থা কি বুঝতে পারছো না তুমি? আমায় উপর কি একটুও দয়ামায়া হচ্ছে না তোমার?”
আদ্রিশের এরূপ কথায় মুহূর্তেই আমার দু চোখ জলে ভরে উঠলো। উনার সামনেই আমি চোখের জল মুছে বললাম,
” আমি আমার আব্বু আম্মুকে খুব ভালোবাসি আদ্রিশ। তাদেরকে কষ্টে দেখা কিছুতেই সম্ভব না আমার পক্ষে। ”
আদ্রিশ কিছুক্ষণের জন্য নিরব রইলেন। আমায় দেখে আদ্রিশ হয়তো পূ্র্বের তুলনায় কিছুটা নরম হলেন। গুমোট গলায় বললেন,
” আমার কষ্ট সহ্য হবে তোমার? আমাকে এতোটা কষ্ট দিয়ে কি করে ভালো আছো তুমি? সেক্ষেত্রে তো তোমাকে স্বার্থপর বলা উচিত মিশমিশ।”
আমি কোনোরূপ প্রত্যুত্তর দিতে পারলাম না। আমার ভেতরটা যন্ত্রণায় ভরে উঠলো। পরিস্থিতিটা ক্রমশই বিষাক্ত হয়ে উঠলো। যা সহ্য করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়লো আমার জন্য। ফলে আমি প্রলম্বিত নিঃশ্বাস ছেড়ে উনাকে বললাম,
” অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। আমায় বাসায় ফিরতে হবে। আপু চিন্তা করবে খুব।” এই বলে আমি পিছন ফিরে গাড়িতে বসার জন্য উদ্যত হলাম। আচমকা অঘোষিতভাবে আদ্রিশ চট করে পিছন থেকে আমার হাত ধরে ফেললেন। তড়িৎ গতিতে নিজের দিকে ফিরিয়ে ব্যগ্র কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন,
” শেষবারের মতো জিজ্ঞেস করছি, তোমার আব্বু আম্মুকে ঐ বিয়ে ভাঙার কথা বলবে কি না?”
আমি কোনোরূপ জবাব না দিয়ে আদ্রিশের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে চেষ্টা করলাম। আদ্রিশ তো আমায় ছাড়লেনই না বরং পূর্বের তুলনায় আমার হাত আরো শক্ত করে চেপে ধরলেন। বললেন,
” আমার প্রশ্নের জবাব দাও মিশমিশ। জবাব না পাওয়া পর্যন্ত তোমাকে ছাড়ছি না আমি।”
আমি উপায়ন্তর না পেয়ে অনিহা সহিত বললাম,
” বলবো না।”
এ পর্যায়ে আদ্রিশ আমার হাত পূ্র্বের তুলনায় ঈষৎ জোরে চেপে ধরলেন। জিজ্ঞেস করলেন,
” আমায় বিয়ে করবে কি না?”
আমি এ পর্যায়ে কোনোরূপ চিন্তাভাবনা ছাড়াই জিদপূর্বক কণ্ঠে বললাম,
” এটা একভাবেই সম্ভব। আর তা হলো আপনার স্বপ্নে। আমি যদি ইয়াসিরকে বিয়ে নাও করি, তবুও আপনাকে বিয়ে করবো না। ”
” কেনো? কি কারণ আছে এর?”
” আপনাকে শতবার বলেছি এর কারণ। আমার পক্ষে আর বলা সম্ভব নয়। আপনি বুঝলে বুঝুন, না হলে না বুঝুন। কিন্তু আমি আমার সিদ্ধান্তে অটল থাকবো। ”
আমার এ কথা শোনার পরই হুট করে আদ্রিশ উনার বাঁধন আলগা করে দিলেন। শান্ত এবং শীতল কণ্ঠে বললেন,
” ওকে ফাইন। তুমি তোমার সিদ্ধান্তে অটল থাকো। আমিও আমার সিদ্ধান্তে অটল থাকবো। কিন্তু এরপর থেকে যা যা হবে তার সবটার জন্য তুমি দায়ী থাকবে মিশমিশ। ইউ উইল বি রিসপন্সিবল ফর দিস।”
®সারা মেহেক
#চলবে
(পরীক্ষার জন্য গল্প দিতে দেরি হচ্ছে। আশা করি আমার অবস্থা বুঝবেন। হ্যাপি রিডিং ❤️❤️)