#ভুলবশত_প্রেম পর্ব ৩৬

0
580

#ভুলবশত_প্রেম পর্ব ৩৬
#লেখনীতে:সারা মেহেক

৩৬

আমায় এভাবে হাসতে দেখে আদ্রিশ তার চেহারায় অদ্ভুত কায়দা ফুটিয়ে তুলে কিঞ্চিত ক্রোধান্বিত গলায় বললেন,
” খবরদার হাসবে না বলে দিলাম। এদিকে আমি কষ্টে বাঁচি না। আর তুমি হাসছো!”

আদ্রিশের এরূপ কথা শুনে আমার হাসি পূর্বের তুলনায় আরো বেড়ে গেলো। আমি এবার বিছানায় বসে পেটে হাত চেপে হাসতে লাগলাম। উনার বাচনভঙ্গি, উনার চেহারার অভিব্যক্তি, সবকিছু আমাকে হাসতে বাধ্য করছে। আমার হাসির দমক এখন এমন যে, মনে হচ্ছে আমি নিজের সামনে কোনো কৌতুকে ভরপুর অনুষ্ঠান সংঘটন হতে দেখছি। আমার হাসি দেখে আদ্রিশ এ পর্যায়ে রাগ করলেন না৷ বরং সরু চোখে গমগমে চাহনিতে চেয়ে রইলেন৷ আমি হাসতে হাসতে বললাম,
” আপনাকে থ্যাংকস এর ডিব্বা এনে দিলেও কম হবে। তবুও বলছি, আজকের রাতে আমাকে এতো এতো হাসানোর জন্য থ্যাংকস আপনাকে। আজকের রাত আমি কখনোই ভুলবো না৷ পুরোপুরি স্মরণীয় হয়ে থাকলো আমার জন্য৷”

আদ্রিশ তেরছাভাবে আমার দিকে চেয়ে হতাশ গলায় বললেন,
” আমার জন্যও স্মরণীয় হয়ে থাকলো। যেখানে বউয়ের সাথে সময় কাটানোর কথা, সেখানে আমি এখন কাজে যাচ্ছি। আর আমার বউটাও মাশাআল্লাহ! বিয়ের রাতে পড়তে বসেছে! আর আমাকে বিদায় হতে দেখে সে হাসিতে ফেটে পড়ছে! এমন বউ মনে হয় সারা পৃথিবী খুঁজলেও পাওয়া সম্ভব না। এক্সেপশনাল কেস।”

আদ্রিশের শেষোক্ত কথা শুনে আমি গর্বিত বোধ করলাম৷ আহ,কি প্রশংসা! উনার দিকে চেয়ে আমি বিস্তৃত হেসে বললাম,
” জানি জানি৷ আমাকে বলতে হবে না৷ আমি এক্সেপশনাল একটা মানুষ, এটা বারবার স্মরণ করিয়ে দিতে হবে না৷ আপনার তো এতে খুশি হওয়া উচিত। আমার মতো এক্সেপশনাল একটা লাইফ পার্টনার পেয়েছেন।”

আদ্রিশ কোনো জবাব দিলেন না। বিছানায় থাকা শপিং ব্যাগ থেকে ঘিয়ে রঙয়ের একটি টি শার্ট আর জিন্সের প্যান্ট নিয়ে ওয়াশরুমে গেলেন চেঞ্জ করতে। কিছুক্ষণের মাঝেই চেঞ্জ করে বেরিয়ে এসে বললেন,
” এর শোধ আমি তুলবো মিশমিশ। মাইন্ড ইট। ”

আমি কিঞ্চিৎ ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলাম,
” কার উপর?”

আদ্রিশ নির্বিকার গলায় বললেন,
” আপনার উপর ম্যাডাম৷ ”

আমি বিস্মিত হয়ে চোখজোড়া বড় বড় করে বললাম,
” আশ্চর্য তো! আমি কি করলাম!”

আদ্রিশ তৎক্ষনাৎ জবাব দিলেন না৷ বরং বাঁকা হেসে ধীরপায়ে আমার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বললেন,
” আমার উপর এতো হাসার জন্য আমি শোধ তুলবো না?”

আদ্রিশকে এভাবে এগিয়ে আসতে দেখে আমি সংকুচিত হয়ে এলাম। ঠোঁটের কোনে যে অবশিষ্ট হাসি ছিলো তা মুহূর্তেই উবে গেলো। হৃদপিণ্ডটা ধীরেধীরে তার স্পন্দন বৃদ্ধি করতে লাগলো। কণ্ঠনালীও প্রায় শুকিয়ে এলো। আমি খাটের হেডবোর্ডের অংশ থেকে কিছুটা দূরে বসে ছিলাম। আদ্রিশকে এভাবে এগিয়ে আসতে দেখে আমি হেডবোর্ডের দিকে পিছিয়ে যেতে লাগলাম। উনি আমায় দেখে বললেন,
” কি হলো? এতোটুকুতেই ভয় পেয়ে গিয়েছো!”

আমি শুকনো একটা ঢোক গিলে মেকি সাহসিকতা দেখিয়ে বললাম,
” মোটেও না। আপনি বাঘ না ভাল্লুক যে আপনাকে ভয় পাবো?”

এই বলে আমি দৃষ্টিনত করে আমার পরনের ওড়নার শেষাংশ মুঠোর মধ্যে পুরে নিলাম। মন চাইছে এখনই উঠে পালিয়ে যাই৷ কিন্তু এ কাজ করলে যে আদ্রিশের কাছে সারাজীবন ভিতু খেতাব পেয়ে বসে থাকতে হবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। সুতরাং, হাজার ভয় পেলেও আমি পালিয়ে যাওয়ার মতো বোকামি কাজটা করবো না। কিন্তু তাই বলে কি বসে থাকবো! আমার দ্বারা তো এভাবে বসে থাকা যাচ্ছে না!

আদ্রিশ এতোক্ষণে আমার যথেষ্ট কাছে চলে এসেছেন৷ উনি আমার পাশেই দাঁড়িয়ে থেকে ক্রমান্বয়ী কণ্ঠে বললেন,
” যদি ভয়ই না পেয়ে থাকো, তাহলে আমার দিকে তাকাও। ওভাবে নিচের দিকে তাকিয়ে আছো কেনো?”

আদ্রিশের এরূপ প্রশ্নে আমি কয়েক মুহূর্তের সময় নিলাম। অতঃপর উনার এ প্রশ্নের জবাব দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে পাশ ফিরে তাকাতেই উনি অকস্মাৎ আমার দিকে ঝুঁকে এলেন। কোনো কিছু বুঝে উঠার পূর্বেই উনি আমার কানের কাছে মুখ এনে লহু কণ্ঠে বললেন,
” তোমার কাছে এলেই তো আমাকে সবসময় বাঘ, ভাল্লুকই ভাবো। এমনটা ভাবার কারণ কি?”

আদ্রিশের এরূপ কণ্ঠ শুনে আমার মাঝে শ্বাসরুদ্ধকর এক পরিস্থিতির উদয় হলো। মস্তিষ্কের নিউরনগুলোয় সেসময়ের জন্য তাদের কাজ করা বন্ধ করে দিলো। আমি একই অবস্থায় এক প্রকার জমাট বেঁধে বসে রইলাম। আদ্রিশ আমার নিকট হতে কোনো জবাব না পেয়ে ক্ষীণ শব্দে হাসলেন। অতঃপর উনি মাথা তুলে আনত অবস্থাতেই আমার মুখোমুখি অবস্থান করলেন। উনার এবং আমার মাঝে হয়তো দূরত্ব মাত্র কয়েক ইঞ্চির। আদ্রিশকে এভাবে মুখোমুখি দেখে আমি সরাসরি উনার দিকে চেয়ে থাকতে পারলাম না। ফলস্বরূপ খিঁচে চোখজোড়া বন্ধ করে নিলাম। আদ্রিশ পুনরায় ক্ষীণ শব্দে হাসলেন। আমার কপালের পাশে উড়ে চলা ছোট চুলগুলোকে আমার কানের পিছে গুঁজে দিয়ে নে’শাক্ত কণ্ঠে বললেন,
” এতো ভয় পাও কেনো মাধবীলতা? আমার কাছে আসা কি তোমার পছন্দ হয় না? সবসময় ভীত থাকো কেনো? তবে যাই বলো না কেনো, তোমার এ ভীত চাহনি আমায় খুব আ’কৃষ্ট করে। কেনো, তা জানি না। তবে তোমার এ চাহনিতেও আমি বারংবার আহত হই৷ না জানি তোমার এ চাহনি, এ রূপে আমি কবে যেনো নিহত হয়ে যাই৷”
এই বলে আদ্রিশ আচমকা আমার ডান গালে নিজের ঠোঁট ছুঁইয়ে পূর্বের ন্যায় বললেন,
” আমার উপর হাসার ছোট্ট একটা শাস্তি। সময় থাকলে সুদে আসলে সব শাস্তি উসুল করতাম। কিন্তু আজকের জন্য এতোটুকুই।”
এই বলে আদ্রিশ সোজা হয়ে দাঁড়ালেন। তৎক্ষনাৎ আমি চোখ মেলে তাকালাম। আদ্রিশের এরূপ কাজে আমি হতভম্ব হয়ে বসে রইলাম। উনার এরূপ কাজ বিশ্বাস করতে এখনও কষ্ট হচ্ছে আমার। আচমকা কি করলেন উনি! এমনটা কখনোও আশা করেছিলাম না৷ নাহ, মানুষটা খুবই খারাপ। এভাবে হঠাৎ হঠাৎ আমাকে চমকে দেন কেনো উনি! উনার এ জ্বালায় তো আমার জীবন হারাম হয়ে যাবে। কবে যেনো উনার এরূপ অকস্মাৎ কাজকর্মে আমি ছোটখাটো একটা হার্ট এটাক করে বসে থাকি।
আমি আদ্রিশকে এ নিয়ে কিছু বলতে যাবো কিন্তু এর পূর্বেই উনি আমার টেবিল হতে হাত ঘড়ি পরতে পরতে মৃদু হেসে বললেন,
” তোমায় এটুকু ছোঁয়াতেই তুমি হাওয়াই মিঠাইয়ের মতো গলে যাও। না জানি ভবিষ্যতে কি হবে।”
এই বলে উনি পূর্বের হাসি বজায় রেখে আমার দিকে তাকালেন। উনার কথা কর্ণপাত হতেই আমি বিস্মিত কণ্ঠে বললাম,
” কি খারাপ মানুষ আপনি!”

আদ্রিশ এবার শব্দ করে হেসে বললেন,
” বউয়ের কাছে খারাপ হতে দোষ কি?”

আমি উনার এরূপ বক্তব্যের প্রতিবাদ করে বললাম,
” অনেক দোষ। অনেক অনেক। আপনি আমার পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে এমন কাজ করবেন কেনো? আমার অনুমতি নিবেন না কেনো?”

আদ্রিশ ততক্ষণে দরজার কাছে চলে গিয়েছেন। আমার এরূপ কথা শুনে উনি ঈষৎ ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে বললেন,
” সুযোগ পেলে সাধুও অনুমতিহীন চোর হতে চায়। তাহলে এক্ষেত্রে আমি কেনো পিছে পড়ে থাকবো?”
®সারা মেহেক

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here