#ভুলবশত_প্রেম পর্ব ৩৪

0
581

#ভুলবশত_প্রেম পর্ব ৩৪
#লেখনীতে:সারা মেহেক

৩৪

আমি হতভম্ব হয়ে আদ্রিশের কথাগুলো শুনলাম। অতঃপর উনার কথার কি প্রত্যুত্তর দেওয়া যায় তা বুঝতে না পারায় আমি চুপচাপ বসে রইলাম। দু মিনিটের মাঝেই আমরা রেস্টুরেন্টে পৌঁছে গেলাম। গাড়ি থেকে নেমে লক্ষ্য করলাম আদ্রিশ আমাকে সেই রুফটপ রেস্টুরেন্টে নিয়ে এসেছেন, যেখানে উনার সাথে আমার প্রথম কথা কাটাকাটি হয়।
আদ্রিশ আমাকে নামিয়ে দিয়ে গাড়ি পার্ক করে আসলেন। অতঃপর আমরা দুজনে রেস্টুরেন্টে গিয়ে কোনার দিকের একটি চেয়ারে বসে পড়লাম। আদ্রিশ টেবিল থেকে মেন্যুকার্ডটা নিয়ে আমায় জিজ্ঞেস করলেন,
” কি খাবে বলো। ”

” আপনি যা ওর্ডার করবেন তাই। আমার তেমন কোনো স্পেসিফিক পছন্দ নেই৷ আর হ্যাঁ, এই ওর্ডার দেওয়ার নিয়ে আমাকে জোর করবেন না একদম। না হলে কিন্তু পুরো রেস্টুরেন্টের খাবার ওর্ডার করে ফেলবো আমি। তখন বসে বসে বিল মিটিয়ে দিয়েন। ”

আমার কথায় আদ্রিশ ঠোঁট চেপে হেসে বললেন,
” একটা প্রশ্নের এতো বড় জবাব আশা করিনি আমি৷ যাই হোক, আমার পছন্দের ওর্ডারই দিচ্ছি তাহলে। ”
এই বলে উনি ওয়েটারকে ডেকে সিজলিং চিকেন ও ফ্রাইড রাইস ওর্ডার দিলেন। ওয়েটার ওর্ডার নিয়ে চলে যাবার পর আদ্রিশ আমার দিকে মুচকি হেসে তাকালেন। ভ্রু জোড়া নাচিয়ে উৎসুকতার সহিত জিজ্ঞেস করলেন,
” তো ম্যাডাম, কি অবস্থা আপনার?”

আমি সাবলীল গলায় জবাব দিলাম,
” এজ ইউজ্যুয়াল যেমন থাকে তেমন।”

আমার কথায় মুহূর্তেই আদ্রিশের চেহারা হতে সকল উৎসুকভাব ফুঁস করে উবে গেলো। উনি ভ্রু কুঁচকে খানিক অভিযোগের সুরে বললেন,
” অদ্ভুত মেয়ে তো তুমি! এতো কিছু হয়ে যাওয়ার পরও নো চেঞ্জ! ”

উনার কথা শুনে ঠিক বুঝতে পারলাম উনি কি নিয়ে কথা বলছেন। ব্যাপারটা বুঝার পরও অবুঝের মতো ভান করে বললাম,
” কি চেঞ্জ হবে আমার শুনি? কোনো চেঞ্জ হওয়ার দরকার ছিলো কি? কোনো চেঞ্জ না আসলে সমস্যা? ”

আদ্রিশ আমার কথার সুরেই হয়তো আমায় ধরে ফেললেন। আমি যে উনার সাথে দুষ্টুমি করছি তা বুঝতে উনার নিমিষের জন্যও সময় লাগলো না। উনি এ পর্যায়ে বাঁকা হেসে বললেন,
” আমার সাথে মজা করা হচ্ছে তাই না? একবার তোমায় বাগে পেয়ে গেলে তখন বুঝিয়ে দিবো মজা কাকে বলে, কত প্রকার ও কি কি।”

আদ্রিশের সেই ঠোঁট বাঁকানো হাসি এবং হু*ম*কি স্বরূপ কথা শুনে আমি মুহূর্তেই চুপসে গেলাম। উনি যে আমায় শুধু হু*মকি দিয়েই প্রায় শতভাগ দমিয়ে ফেলতে পারেন, এ বিষয়টা আবারো হাতে কলমে প্রমাণিত করলেন উনি৷
আদ্রিশ আমার মুখভঙ্গিমার পরিবর্তন দেখে তৃপ্তির হাসি হাসলেন। আমি উনাকে এরূপ হাসতে দেখে বিহ্বল হয়ে ঠোঁট বাঁকিয়ে ভেঙচি কেটে বললাম,
” সবসময় যে আপনারই জয় হবে এমনটা ভাবা উচিত নয়। ”
এই বলে আমি অবিন্যস্ত দৃষ্টিতে টেবিলের চারপাশ দেখতে লাগলাম। আমার কথার প্রতিক্রিয়াস্বরূপ আদ্রিশ পূর্বের ন্যায় হাসি বজায় রেখে আয়েশি ভঙ্গিতে চেয়ারের সাথে হেলান দিয়ে বসলেন। ডান হাতের আঙুল দিয়ে টেবিলের উপর খটখট শব্দ করতে করতে ঠোঁট উল্টিয়ে বললেন,
” আই লাইক ইউর কনফিডেন্স লেভেল মিশমিশ। বাট তোমাকে এটা মাথায় রাখা উচিত কার সামনে, কখন এবং কতটুকু কনফিডেন্স দেখালে তুমি বিপদে পড়বে না। ”

আমি চট করে উনার দিকে চেয়ে তড়িৎগতিতে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বললাম,
” তাহলে আপনি কি বলতে চাইছেন, আমি এই কনফিডেন্স দেখিয়ে বিপদ ডেকে এনেছি? ”

” সময় হলেই নিজের উত্তর পেয়ে যাবে। ”
এই বলে উনি এগিয়ে এসে টেবিলের উপর দু হাত রাখলেন। আমার দিকে চেয়ে আমার বা হাতটা ধরে বললেন,
” এই যে আংটিটা পরে আছে। এতে তোমার মাঝে কোনো পরিবর্তন আসেনি?”

আমি চট করে উনার হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম,
” জানি না। আর পরিবর্তন আসলেও আপনাকে বলবো না। আপনি খুবই খারাপ। কি দিয়ে কি বলে ফেলবো তার নেই ঠিক। আর আপনি সেটা নিয়ে বসে থাকবেন।”

আদ্রিশ ঠোঁট চেপে হেসে ফেললেন। আমার দিকে চেয়ে রহস্যময় চাহনিতে বললেন,
” আমি কেমন, কতোটা খারাপ, কতোটা ভালো, তা এখনও বোঝার ক্ষমতা তোমার হয়নি মিশমিশ। কিন্তু যেদিন বুঝবে আমি কেমন সেদিন হয়তো আরেক দফা আমার প্রেমে পড়ে যাবে তুমি। ”
এই বলে উনি ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলেন। আমি তৎক্ষনাৎ উনার কথার প্রতিবাদ করে বললাম,
” হুহ, আমি খারাপ লোকেদের প্রেমে পড়ি না।”

আমার কথা মাটিতে পড়তে না পড়তেই উনি তীব্র বিশ্বাসের সাথে বললেন,
” পড়ো না মানে! আমার প্রেমে পড়ে তুমি একদম মজে গিয়েছো।”

” হ্যাঁ তাই তো….আপনাকে কে বলেছে এই কথা? আমার তো মনে পড়ে না আমি এমন কিছু বলেছি আপনাকে। ”

” সব কথা কি বলার প্রয়োজন হয়? তুমি কি ভেবেছো, তুমি না বললে আমি তোমার চোখ দেখে বুঝবো না?”

” বাহ! আপনি নিজেকে এতো জ্ঞানী ভাবেন! ”

আদ্রিশ এ পর্যায়ে বিস্তৃত হেসে ঘোর লাগা কণ্ঠে বললেন,
” উঁহু জ্ঞানী নয়। আমি নিজেকে আমার মাধবীলতার প্রেমে মগ্ন এক প্রেমিক পুরুষ ভাবি। ”

আদ্রিশের এরূপ কথার ধরণে আমি মুহূর্তেই মিইয়ে গেলাম। আমার ভেতরে ক্ষীণ অস্থিরতার আভাস পেলাম আমি। ফলে নিজেকে সামলে নিতে চারপাশে অবিন্যস্ত দৃষ্টি স্থাপন করে রেস্টুরেন্টে আসা প্রতিটি মানুষকে দেখতে লাগলাম। এদিকে আদ্রিশও নিশ্চুপ বসে রইলেন৷ হয়তো বিনাবাক্য আমাকে নিষ্পলক দেখে যাচ্ছেন!

কিছুক্ষণের মাঝেই ওয়েটার আমাদের টেবিলে খাবার সার্ভ করে চলে গেলো। আমরা দুজনে ধীরেসুস্থে খাবার খাওয়া শুরু করলাম। আমাদের মাঝে নিরবতা পূর্ণ পরিবেশ দেখে আমিই অগ্রসর হয়ে কথা শুরু করলাম,
” আপনি কি রোজ এভাবেই বাইরে বের হোন?”

আদ্রিশ খেতে খেতে আমার দিকে জিজ্ঞাসু চাহনিতে চেয়ে বললো,
” এভাবে মানে?”

” এই মানে, আপনি কি রোজ এমন ড্রেসআপে, এমন স্টাইল করে বের হোন?”

আমার প্রশ্নে আদ্রিশ মৃদু শব্দে হেসে উঠে বললেন,
” হঠাৎ এ প্রশ্ন কেনো?”

আমি এ পর্যায়ে খানিক চুপসে গেলাম। অবিন্যস্ত কণ্ঠে বললাম,
” না মানে এমনিই আর কি। ”

আদ্রিশ পুনরায় পূর্বের ন্যায় হেসে উঠে বললেন,
” বলা যায়, প্রায় সবসময়ই এভাবে বের হই। ”

আদ্রিশের কথায় আমার মুখ ভার হয়ে এলো। তৎক্ষনাৎ মাথায় একটা প্রশ্নই ঘুরলো। এর মানে আদ্রিশ রোজ মেয়েদের ইমপ্রেস করার মতলবে বের হোন? আর এমনটা যদি না-ও হয়ে থাকে, তবুও তো উনাকে দেখে রাস্তায় রাস্তায় মেয়েরা ক্রাশ খেয়ে বসে থাকবে! কি সাংঘাতিক ব্যাপার!

আমায় এরূপ নিশ্চুপ থাকতে দেখে আদ্রিশ চমকপ্রদ গলায় বললেন,
” ওয়াও! মিশমিশ তুমি জেলাসও হতে পারো!”

উনার এ প্রশ্নে তৎক্ষনাৎ আমার মনে হলো, আমি জবাবে উনাকে বলি, ‘হ্যাঁ আমি জেলাসও হতে পারি৷ কোনো সমস্যা?’ কিন্তু আমি এরূপ কিছু না বলে সরু চোখে উনার দিকে চেয়ে বললাম,
” কে বললো আমি জেলাস?”

” তোমার চোখে স্পষ্ট লেখা ভেসে উঠছে, ‘আই এম জেলাস’।”

আমি পূর্বের ন্যায় বললাম,
” আমার চোখ কোনো খাতা নয় যে, সব কথাই এখানে ভেসে উঠবে। ”

” তোমার চোখ কোনো খাতা না কি জানি না৷ কিন্তু আমি এখানে সব পড়তে পারি। সব।”

আমি উনার আরোপের প্রতিবাদ করে বললাম,
” আপনি এখন যা পড়েছেন, ভুল পড়ছেন। এমন কিছুই হয়নি।”

আদ্রিশ অত্যুজ্জল হেসে বললেন,
” আচ্ছা, যাও তোমাকে এ নিয়ে ঘাঁটলাম না৷ আফটার অল, জেলাস হওয়া তোমার মৌলিক অধিকার। জেলাস হতেই পারো। ”

আমি উনার কথার প্রত্যুত্তরে নিশ্চুপ রইলাম৷ সরু চোখে উনার দিকে চেয়ে এক চামচ ফ্রাইড রাইস মুখে নিয়ে চিবুতে লাগলাম। আদ্রিশও খেতে খেতে পুনরায় বললেন,
” তুমি যদি বলো, তাহলে ছেঁড়া জামাকাপড় পরেই বের হবো আমি। তাহলে কোনো মেয়ের নজরে পড়বো না। এবার খুশি তো?”

আমি পূর্বের ন্যায় নিশ্চুপ রইলাম। মূলত এ প্রশ্নের জবাবে আমি কিছু বলার মতো সাহস পেলাম না। যদিও আমি মনে মনে ঠিকই এ প্রশ্নের জবাব ‘হ্যাঁ’ বলে আছি। কিন্তু এটা তো আদ্রিশকে জানানো সম্ভব নয়।

আদ্রিশ খাবার শেষ করে টিস্যু দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে জিজ্ঞেস করলেন,
” তাহলে আগামী শনিবার থেকে তোমার প্ল্যানিং কি? আই মিন বিয়ের পর তোমার প্ল্যানিং কি?”

আমার খাবার তখনও শেষ হয়নি। আমি এক চামচ রাইস মুখে পুরে উনাকে থোরাই কেয়ার না করে বললাম,
” কি প্ল্যান থাকবে? কোনো প্ল্যানিং নেই। আমি তো আর বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ী যাচ্ছি না। সিঙ্গেলের মতো জীবন কাটাবো।”

আদ্রিশ আমার কথা শোনামাত্র চট কর এগিয়ে এলেন। গাঢ় গলায় হুমকি স্বরূপ বললেন,
” এমন ইচ্ছা ভুলেও মাথায় আনবে না। এমন হলে আমি তখনই তোমায় তুলে নিয়ে এসে আমার কাছে বন্দি খাঁচায় ভরে রাখবো।”

আমি কয়েক মুহূর্তের জন্য উনার দিকে নিষ্পলক চেয়ে রইলাম। অতঃপর পরিবেশটাকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে আমতা আমতা করে বললাম,
” আ-আপনার প্ল্যান কি?”

আদ্রিশ এবার আয়েশি ভঙ্গিতে বসে আমুদে গলায় বললাম,
” কি আবার প্ল্যান থাকবে। তোমার সাথে চুটিয়ে প্রেম করবো। ভরপুর রোম্যান্স করবো। আর সময় সুযোগ বুঝে জোড়ায় জোড়ায় টুইন বেবি নিবো৷ ”
®সারা মেহেক

#চলবে
(আজ আর ‘নব্য দিনের সূচনা’ দেওয়া হলো না। লেখা শেষ হয়নি বিধায়। কালকে শিওর দিবো।

হ্যাপি রিডিং)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here