#ভুলবশত_প্রেম পর্ব ৪০
#লেখনীতে:সারা মেহেক
৪০
প্রলম্বিত নিঃশ্বাস ছেড়ে আদ্রিশ বললেন,
“এমাইট্রোফিক ল্যাটেরাল স্ক্লেরেরোসিস। রোগটার নাম শুনেছো?”
আমি ও ইমাদ ভাইয়া এপাশ ওপাশ মাথা দুলালাম। অর্থাৎ আমরা কেউই এ রোগের নাম শুনিনি৷ ফলে আদ্রিশকে বললাম,
” না। এ রোগের নাম আজ প্রথম শুনছি। ”
আদ্রিশ ছোট্ট নিঃশ্বাস ছেড়ে বললেন,
” শোনারও কথা না। কারণ রোগটা পরিচিত কোনো না রোগ না৷ পরিচিত না হওয়ার কারণ আছে। কারন এ রোগ কোনো রোগ না। সবচেয়ে বড় কথা, এ রোগের কোনো কিউর নেই। দ্যাট মিনস কোনো চিকিৎসা নেই৷ পুরোপুরিভাবে ঠিক হয় না এটা। ”
উনার কথা শুনে আমার ভেতরে কৌতূহল জাগলো। আমি উৎসুক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
” কিন্তু এ রোগে আসলে হয় কি?”
” এটা নার্ভাস সিস্টেমের একটা ডিজিজ। যেটা ব্রেইন আর স্পাইনাল কর্ডকে ইফেক্ট করে। এর কারণে মানুষ মাসলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। ”
” মাসলের নিয়ন্ত্রণ বলতে?”
” এই যেমন ধরো, মাসল দূর্বল হয়ে যাবে এ রোগে। আর যতই রোগটা বাড়বে ততই মানুষের হাতের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে। কথা বলা, হাঁটাচলা করা এমনকি শ্বাসপ্রশ্বাসেও সমস্যা হয়। ”
” এটা কি জেনেটিক্যালি হয়?”
” হ্যাঁ। সেক্ষেত্রে রোগের কারণগুলো জানা থাকে না। ”
” এ রোগে কি মানুষ মারা যায়?”
” অবশ্যই। ডাক্তাররা ধরাবাঁধা সময়ও দিয়ে দেয় রোগীকে। মাত্র কয়েক বছর। এই ধরো তিন থেকে পাঁচ বছর। কিন্তু এমনও হয়েছে যে ডাক্তারদের নির্ধারণ করে দেওয়া সময়ের চেয়েও বেশি সময় বাঁচে অনেকেই। স্টিফেন হকিংই তার উদাহরণ।”
আদ্রিশের কথায় আমি ও ইমাদ ভাইয়া বিস্মিত হলাম। বিস্ময় সহিত জিজ্ঞেস করলাম,
” এর মানে এই রোগটা স্টিফেন হকিংয়েরও হয়েছিলো!”
” হ্যাঁ। আর উনি তো উনার জন্য নির্ধারণ করে দেওয়া সময়ের চেয়েও অনেক বেশিদিন বেঁচেছিলেন। ৫৫ বছর বেঁচে ছিলেন উনি৷ ”
” এ রোগে মানুষ ধরাবাঁধা সময়ই বেঁচে থাকে কেনো? মানে, এ রোগে কি কারণে মানুষ মারা যেতে পারে ঐ সময়ের মধ্যে?”
” এ রোগে আক্রান্ত হয়ে বেশিরভাগ মানুষই মারা যায় রেসপিরেটরি ফেইলিউরের কারণ। অর্থাৎ শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা হওয়ার কারণে। শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যাও হয় সেই মাসল অর্থাৎ মাংসপেশির কারণে৷ এক্ষেত্রে শ্বাসপ্রশ্বাস নেওয়ার সময় যে মাসলগুলো সাহায্য করে সেগুলো প্যারালাইসিস হয়ে যায়। এর কারনে মানুষ মারা যায়। তবে অনেক সময় শ্বাসপ্রশ্বাসে সাপোর্ট করার জন্য ট্রাকিওটমিও করা হয়। ”
এই বলে আদ্রিশ প্রলম্বিত নিঃশ্বাস ছাড়লেন। আমি উনার দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে রইলাম। বেশ কিছুক্ষণ চিন্তাভাবনা শেষে উনাকে কিছু জিজ্ঞেস করতে নিলেই ইমাদ ভাইয়া সন্দেহের সুরে জিজ্ঞেস করলেন,
” এর মানে এই রোগের সাথে তোর ফর্মুলার কোনো সম্পর্ক আছে? ”
আদ্রিশ হতাশাজনক নিঃশ্বাস ছেড়ে বললেন,
” হ্যাঁ। আর এটাই আমার সবচেয়ে বড় ভুল হয়ে গিয়েছে। ”
এই বলে আদ্রিশ ক্ষণিকের জন্য থামলেন। অতঃপর বললেন,
” এই রোগ পুরোপুরিভাবে ঠিক করা যায় না। তবে কিছু থেরাপির মাধ্যমে এটার উপশম করা যায়। আমার মাথায় কি চলছিলো আল্লাহ ভালো জানেন। অনেকদিন ধরেই এই রোগটা সম্পর্কে অনেক রিসার্চ করছিলাম। এ রোগ হলে যেনো পেশেন্ট পুরোপুরিভাবে ঠিক হতে পারে সেজন্য একটা ড্রাগ ফর্মুলা খুঁজছিলাম। অনেক রিসার্চের পর একটা ড্রাগ বানাতে পেরেছি৷ কিন্তু এটা এখনও প্রসেসিং পর্যায়ে আছে। অর্থাৎ এতে আরো রিসার্চের প্রয়োজন। এখন ড্রাগটা যে পর্যায়ে আছে এটা যদি রোগীর শরীরে ইনজেক্ট করা হয় তাহলে রোগী কয়েক মিনিটের মধ্যেই মারা যেতে পারে বা তার অবস্থার আরো অবনতি ঘটতে পারে। যেখানে আমি রোগীর প্রাণ বাঁচাতে ড্রাগ ফর্মুলা বের করছি সেখানে আমি কিছুতেই চাইবো না রোগী মারা যাক। এজন্য এই ড্রাগ নিয়ে আরো রিসার্চ করতে হবে। ”
আদ্রিশের কথায় আমি বিস্ফোরিত নয়নে ক্ষণিকের জন্য উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম৷ এতোদিন ধরে আমি উনাকে চিনি। অথচ উনি এ ব্যাপারে আমাকে ঘুণাক্ষরেও টের পেতে দেননি!
এই অব্দি উনার কাছে যা যা শুনলাম তাতেও আমার মনে প্রশ্ন রয়ে গেলো যে, রোহান ভাইয়া এখন কেনো ফর্মূলাটা চাইছেন? এ চিন্তার সূত্র ধরেই আদ্রিশকে জিজ্ঞেস করলাম,
” আপনি ড্রাগটা পুরোপুরি বানিয়ে ফেললেই রোহান ভাইয়া সেটি চাইতে পারতেন। এখনই বা কেনো চাইছেন উনি?”
আদ্রিশ পূর্ণ দৃষ্টিতে আমার দিকে চেয়ে বললেন,
” ও চাইছে এ ড্রাগটা ইউজ করে আমার ক্যারিয়ার, আব্বুর কোম্পানির নাম নষ্ট করতে। এখন এ ড্রাগ ওর হাতে দেওয়ার পর ও যদি কোনো রোগীর শরীরে এটা ইনজেক্ট করে তাহলে রোগী নির্ঘাত মারা যাবে এবং এর সম্পূর্ণ দায়ভার পরবে আমার ও আমাদের কোম্পানির উপর। এ কারণে সরকার আমাদের কোম্পানিও বন্ধ করে দিতে পারে আর আমাদের রেজিস্ট্রেশনও ক্যান্সেল করিয়ে দিতে পারে। তাহলে বুঝতে পারলে রোহান কেনো এই ফর্মুলাটা চাইছে?”
সম্পূর্ণ ব্যাপারটি ধরতে পেরে আমি কিছুক্ষণ স্তব্ধ বসে রইলাম। রোহান ভাইয়া যে কতোটা খারাপ মানুষ তা চিন্তা করতেই আমার শরীর শিউরে উঠলো। আদ্রিশ আরো বললেন,
” আমার মনে হয় মিস্টার ইকবালের সাথে ও ডিল করেছে এই ফর্মূলা বাইরের দেশে বিক্রি করার জন্য৷ এমনও হতে পারে যে মিস্টার ইকবাল ফর্মুলাটা নিয়ে বাকি প্রসেসিং করিয়ে এটা নিজের নামে চালাবেন। হয়তো……”
আদ্রিশের কথা সম্পূর্ণ শেষ হতে না হতেই আবারো উনার ফোনে কল এলো। স্ক্রিনে শুধু নাম্বার দেখেই আদ্রিশ সুপ্ত রাগ নিয়ে বললেন,
” রোহান আবারো কল করেছে। ”
উনার কথা শোনামাত্রই ইমাদ ভাইয়ার চেহারার রঙ বদলিয়ে গেলো। উনি উদ্বিগ্নতার সহিত আদ্রিশকে বললেন,
” কল রিসিভ করে লাউড স্পিকারে দিস আদ্রিশ।”
আদ্রিশ ইমাদ ভাইয়ার কথামতো কাজ করলেন। কল রিসিভ করতেই ওপাশে রোহান ভাইয়া বললেন,
” ওহ হ্যাঁ, তোদেরকে একটা গুরুত্বপূর্ণ ইনফরমেশন দেওয়া হয়নি। ”
আদ্রিশ কিছুটা ক্রোধান্বিত গলায় জিজ্ঞেস করলেন,
” কি ইনফরমেশন দেওয়া বাকি আছে তোর?”
রোহান ভাইয়া প্রচণ্ড উৎসুকভাবে বললেন,
” তোর নাফিসা ভাবীর প্রাই’ভেট ভিডিও আছে আমার কাছে। বুঝতে পারছিস? ওর শা’ও’য়া’র নেওয়ার ভিডিও আছে আমার কাছে। ”
এই বলে রোহান ভাইয়া পৈশাচিক আনন্দে হেসে উঠলেন।
রোহান ভাইয়ার এ কথা শোনার জন্য আমরা মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। আমি নিজের কানকে কিছুতেই এ কথা বিশ্বাস করাতে পারলাম না। আকস্মিক ঘটনার ধাক্কায় আমি ধপ করে নিচে বসে পড়লাম। স্তব্ধ চাহনিতে আদ্রিশের ফোনের দিকে চেয়ে রইলাম। আমার পুরো পৃথিবী যেনো চক্কর দিতে শুরু করলো। শেষমেশ আমার আপুর ইজ্জত সম্মান সব খোয়া গেলো! রোহান ভাইয়া আমার আপুর মানসম্মান সব ধুলোয় মিশিয়ে দিলো!
ইমাদ ভাইয়া কোনো কথা বলছেন না। উনি স্তব্ধ চাহনিতে আদ্রিশের দিকে চেয়ে রইলেন। আদ্রিশের দৃষ্টিও একই। এরূপ অকল্পনীয় কিছু ঘটনার সম্মুখীন উনি হবেন তা হয়তো উনি কল্পনাও করেননি।
ক্ষণিক বাদে রোহান ভাইয়া বলে উঠলেন,
” কি ব্যাপার? সব দেখি এক্কেবারে চুপ হয়ে গেলো। বড়সড় ঝটকা লাগলো না কি রে?”
আমরা কেউই কোনোরূপ কথা বলার মতো পরিস্থিতিতে রইলাম না। কয়েক সেকেন্ড বাদে আদ্রিশ থমথমে গলায় বললেন,
” এজন্যই তুই নাফিসা ভাবীকে কিডন্যাপ করেছিস? ”
” অবভিয়েসলি….. আমার কাছে একটা মেয়ের এতো বড় দূর্বল জিনিস রয়েছে আর সেটার আমি ফায়দা উঠাবো না। এটা টোটালি ইম্পসিবল দোস্ত। তোর ফর্মুলা পাওয়ার জন্য আমি প্রথমে তোর ওয়ান এন্ড ভালোবাসা মিমকে কিডন্যাপ করার প্ল্যানিং করেছিলাম। কিন্তু পরবর্তীতে নাফিসার ভিডিও পাওয়ার পর আমার পুরো প্ল্যানই চেঞ্জ হয়ে গেলো। শেষমেশ প্ল্যান মোতাবেক আমি নাফিসাকে কিডন্যাপ করাই।
এখন সবচেয়ে বড় কথা…… তুই বা তোর পরিবারের কেউ যদি নাফিসার কিডন্যাপের ব্যাপারে পুলিশ নিয়ে বেশি ঘাঁটাঘাঁটি করিস, তাহলে আই সয়্যার, নাফিসার ভিডিও আমি ভাইরাল করে দিবো। তখন বুঝে নিস, কত ধানে কত চাল। তাহলে নাফিসাকে ছাড়িয়ে নিতে কি করতে হবে তোকে? সিম্পল, ফটাফট আমাকে ফর্মুলা দিবি আর নাফিসাকে নিয়ে যাবি। ”
এই বলে রোহান ভাইয়া খট করে কল কেটে দিলো। (বি:দ্র: আজকের পর্বে আমি যে রোগটি সম্পর্কে আলোচনা করেছি তার সবটাই সত্য। নেট থেকে ইনফরমেশন কালেক্ট করে লিখেছি। সবচেয়ে বড় কথা, গল্পের প্রয়োজনে আমি এটা ব্যবহার করেছি যে রোগটি সারিয়ে তোলার জন্য ড্রাগ বা মেডিসিন উদ্ভাবন করা হয়েছে। কিন্তু আসলে এ রোগ পুরোপুরি সারিয়ে তোলার জন্য কোনো ড্রাগ বা মেডিসিন উদ্ভাবন করা হয়নি৷ আমি গল্পের প্রয়োজনে কাল্পনিকভাবে এটি ব্যবহার করেছি। তাই দয়া করে কেউ বিভ্রান্ত হবেন না। আর এই ইনফরমেশন নিয়ে লেখার কারনেই এ পর্ব দিতে দেরি হয়েছে। দুঃখিত 😓)
®সারা মেহেক
#চলবে
( আজ সকালে দেওয়ার কথা থাকলেও ব্যস্ততার কারণে দিতে পারিনি। আপনাদের অপেক্ষা করানোর জন্য দুঃখিত)