#তোমার_পিছু_পিছুপর্ব-১৯

0
431

#তোমার_পিছু_পিছুপর্ব-১৯

তামান্না বর্নর অফিস রুম থেকে বের হয়ে ক্যান্টিনের উদ্দেশ্যে হাটা দিলো…. তামান্না বুঝে পায় একটা মানুষ এতো বই বই কিভাবে করতে পারে!!!! মাথার ভিতর যেনো রাজ্যের তত্ত্ব নিয়ে ঘুরে,,,,আর ঘন্টার পর ঘন্টা ওর সাথেই বা এসব বিষয় নিয়ে আলোচনার কারন কি!!! তামান্না বুঝে পায় না,,,,, আগেতো প্রচুর মেজাজ খারাপ হত,,,,ইচ্ছা হতো একটা বড় হাতুড়ি দিয়ে ওনার মাথাটা ফাটিয়ে দিতে,,,,কিন্তু ইদানীংকাল দেখা যাচ্ছে, তামান্নার মেজাজ খারাপ হওয়া উধাও হয়ে গেছে,,,,,,আশ্চর্য্যতো!!!!! তামান্না বরং আজকাল খুব আগ্রহ নিয়ে ওনার কথাবার্তা শুনে,,,,কেনো!!! তামান্না কি এই সময়গুলো উপভোগ করতে শুরু করেছে!!!
মাথা ঝাকিয়ে তামান্না এসব চিন্তাভাবনা উড়িয়ে দিলো…… এরকম অর্থহীন চিন্তাভাবনার কোন মানে হয় না,,,,,।

নীলময়ী ট্রেডমিলের স্টপ বাটনে প্রেস করল,,,, সাথে সাথে ট্রেডমিলের স্পিড কমে গিয়ে একদম থেমে গেলো…. রুমের লাউড মিউজিকও অফ করে,,,,ফ্লোর টু সিলিং কাচের দেয়ালের সামনে দাড়ালো…. খুব হালকা বৃষ্টি পড়ছে…. নীলময়ীর হঠাৎ কি মনে হল,,,,ও দৌড়ে নিজের রুমে গিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে হালকা ফ্রেশ হলো…. তারপর মেইন গেটের উদ্দেশ্যে হাটতে লাগল…. মেইন গেট দিয়ে বাহিরে বের হওয়ার সময় দারোয়ানকে হাতের ইশারায় মুখ বন্ধ রাখতে বলে দিলো… গেটের বাহিরে দাঁড়িয়ে ডানে একবার তাকালো বায়ে একবার তাকালো…. তারপর ডানে ঘুরে হাটতে লাগল।

তামান্না অফিসের কাচের মেইন ডোর ঠেলে বাহিরে এসে দাড়ালো…. মেজাজ খারাপ হচ্ছে ওর…. কি মুসিবত!!! অফিস শেষে ও প্রতিদিন নিউ মার্কেট যায়,,,নতুন বাসার উদ্দেশ্যে টুকটাক জিনিসপত্র কিনতে… এভাবে বৃষ্টিতে কি কেনাকাটা করা সম্ভব নাকি!!!! তামান্না ব্যাগ থেকে ছাতা বের করল….
-মিস তামান্না,,,
হঠাৎ পিছন থেকে কেউ ডেকে উঠায় তামান্না ভয়ে লাফিয়ে উঠল। পিছনে ঘুরে দেখে বর্ন দাঁড়িয়ে….
-জ্বী স্যার….
-ইয়ে মানে,,, মিস তামান্না আমাকে একটু হেল্প করতে পারবেন….
-জ্বী স্যার বলুন……
এখন যদি কফি বানানোর কথা বলিস রে ক্যাবলা….. গরম কফি আমি তোর প্যান্টের ভিতর ঢেলে দিবো…. মনে মনে কটমট করলেও,,, চেহারায় একটা ভাবলেশহীন ভাব ধরে রাখল তামান্না……
বর্ন একটু আনইজি ভাবে ঘাড়ের পিছন চুলকাতে লাগল…..
-মানে মিস তামান্না….আমাকে একটু সামনের ওই স্টোরটা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসবেন প্লিজ… একচুয়েলি আমার কাছে তো ছাতা নেই…… তাই আর কি….
তামান্না কয়েকসেকেন্ড তাকিয়ে থেকে বলল,
-চলুন স্যার….
বর্নর মুখ এলইডি বাল্বের মত উজ্জ্বল হয়ে উঠল,,,
-চলুন…..
তামান্না দ্বিতীয় কোন প্রশ্ন করল না…. বসের সাথে তর্কাতর্কি করা একটা নিশ্চিত বোকামী।
স্টোরের সামনে যেয়ে তামান্না বলল,
-স্যার এখানেই তো!?
-জ্বী…. ধন্যবাদ মিস তামান্না….
-অবশ্যই স্যার….. আমি তাহলে আসি….
বলেই তামান্না ঘুরে হাটতে শুরু করল। যতক্ষন তামান্নাকে দেখা যায় বর্ন ঠিক ততক্ষন তামান্নার গমন পথের দিকে চেয়ে রইল….. তামান্না মোড় ঘুরে উধাও হয়ে যাওয়ার পরও বর্ন চেয়ে রইল…. তারপর নিজেও উল্টো ঘুরে হাটতে শুরু করল। আজকে কেনো জানি হেটে হেটে যেতে মন চাইছে।

বৃষ্টি খুব হালকা হলেও বর্ন অনেকটা ভিজে গেলো…. চুল বেয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে,,,গায়ের ব্লেজারটাও ভিজে আছে….. এখন অবশ্য ওর শীত করতে শুরু করল,,,,রাস্তার মোড় ঘুরতেই বর্নর হাটার গতি কমে এলো…… ফুটপাত ধরে প্রায় কয়েকটা ৮/৯ বছর বয়সী ছেলেমেয়ে সিরিয়ালে বসে আইসক্রিম খাচ্ছে…. এবং এদের একদম শেষমাথায় বসে আছে নীলময়ী…. সেও মনের সুখে আইসক্রিম খেয়ে যাচ্ছে….. বর্ন এগিয়ে গেলো…. নীলময়ীর পিছনে দাঁড়িয়ে হালকা করে কাশল…. নীলময়ী ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়েই বলল,,,
-আ-আ-আমি জানতাম আপনার সাথে আজ দেখা হবেই হবেই….
অতি শীতে ওর দাতে দাতে ঠোকাঠুকি শুরু হয়েছে…. বর্ন কিছু না বলে শুধু হাসল
-খা-খা-খাবেন? মজা আছে….
বর্ন একটা রঙ বেরংগের গোলা আইসক্রিম নিয়ে নীলময়ীর পাশে বসে পড়ল,,,
-হুম,,,এই দেখুন ঠিক এভাবে টান দিন,,,হ্যা হ্যা,,,দিন,,,
বলেই নীলময়ী সুড়ুত করে আইসক্রিম চুষতে লাগল….
বর্ন নীলময়ীর মত আইসক্রিমে টান দিতে গেয়ে,,,বিষম খেয়ে কাশতে লাগল,,
-আহহহা…. আপনিতো দেখি একটা ড্যামনার ড্যামনা,,,আইসক্রিম খেতে পারেন না,,,,ডিগবাজিও খেতে পারেন না……
বর্ন একটু লজ্জা পেয়ে আবার আইসক্রিমে সুড়ুত করে টান দিলো…..
-এইতো,,,হ্যা ঠিক এভাবেই,,,,সাব্বাস………… শুনুন ছেলে…. আমাকে বিয়ে করতে হলে কিন্তু সব পারতে হবে….. লাটিম খেলা পারতে হবে,,,ঘুড়ি ওড়ানো পারতে হবে,,,,গোল্লাছুট, দাড়িয়াব……….. কিন্তু ধ্যাত!!!! আপনি তো ডিগবাজিও খেতে পারেন না!!!!
বর্ন বেশকিছুক্ষন চুপ থেকে আস্তে আস্তে বলল
-আমি খেয়েছিলাম…. একবার……
-কি!?
-ডিগবাজি…. ক্লাস টু’তে থাকতে বন্ধুদের দেখে বাসায় এসে খেয়েছিলাম….. বিছানাটা একটু উচা ছিলো…. উল্টো হয়ে কোণাকুণি এংগেলে না যেয়ে ১৮০° এংগেলে ঘুরে গেলাম…. উপুর হয়ে বিছানা থেকে পড়ে বা হাতের কুনুইয়ে ব্যাথা পেয়ে ফ্র‍্যাকচার করে ফেললাম…. জ্বর টর বাধিয়ে একাকার অবস্থা…… সামান্য একটা চেষ্টা ভয়ংকর ফলাফল হয়ে গেলো…. তাই আর কি….
বর্ন আড়চোখে নীলময়ীর দিকে তাকালো….
নীলময়ীর খানিকটা সময় লাগল,,,,,কথাগুলো হজম করতে…. যখন হজম হলো…. তখন ওর হাসি যেনো আর ধরে না….. ওর দেখাদেখি পাশে বসা পিচ্ছি ছেলেমেয়েগুলোও হাসতে লাগল….. এমনকি বর্ন নিজেও হাসতে লাগল,,,,।

(আসছে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here