#তোমার_পিছু_পিছুপর্ব২৬
মাহমুদ সাহেব বারবার কফির মগটা মুখের সামনে নিচ্ছেন…. কিন্তু চুমুক না দিয়ে তা আবার নামিয়ে টেবিলে রেখে দিচ্ছেন…… ওনার ঠিক সামনের চেয়ারে বসে আছে বর্ন……. বর্ন খুব ছোট ছোট করে কফির মগে চুমুক দিচ্ছে ঠিক কিন্তু দৃষ্টি রেস্টুরেন্টের কাচের দেয়াল ভেদ করে স্থির হয়েছে রাস্তায়…….
মাহমুদ সাহেব একটা পয়েন্ট খুজচ্ছেন…… যেখান থেকে আলোচনা শুরু করা যায়……… কিন্তু কোনভাবেই এগুতে পারছেন না……….বেশকয়েকবার চেষ্টা করেছেন………. আজ এই কথাগুলো না বললেই নয়…… তাই শুরু করা প্রয়োজন…..
তিনি হালকা গলা খাকারি দিলেন…… তাতে কাজ হলো কিছু একটা….. বর্নর দৃষ্টি ফিরল…..
-বর্ন,,,,,আজ হঠাৎ করে তোমাকে এখানে ডাকার পিছনে একটা কারন আছে……… তা অবশ্যই বুঝতে পারছো!?…..
-জ্বী……….
-তো…. হুম….. আমি তোমাকে কিছু গুরুত্বপূর্ন বিষয় সম্পর্কে অবগত করতেই…… আজ ডেকেছি……..
-জ্বী বলুন…….
-বর্ন…… আমি ঠিক জানি না….. তোমার আর নীলময়ীর মাঝের পরিচয় কতটুক!!!,….. কিন্তু আমি চাই….. তুমি যদি ওর সাথে কোন প্রকার সম্পর্কে জড়াও,,,,,,, তাহলে নীলময়ীর অতীত সম্পর্কে অবগত হয়েই জড়াও………
বর্ন কোন সাড়াশব্দ করল না…… শুধু একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। মাহমুদ সাহেব তাই আবার শুরু করলেন
-আমি জানি এই কথাগুলো বলার স্থানটা আমার নয়…… কিন্তু আমি চাই না আমার মেয়েটা আবার কোন কারনে সাফার করুক…..….……নীলময়ী…….. ওর লাইফে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি….. স্ট্রাগল ছিলো……. মানে……. শুরু থেকেই মেয়েটা আমার শুধু কষ্টই পেয়ে গেছে…….. একদম ছোট থেকে………নীলময়ী হওয়ার পর পর….. নীলময়ীর মা আমাদের ছেড়ে চলে গেলো……. কারন ওর কাছে আমাদের চেয়ে ওর ক্যারিয়ার বেশি প্রিয় ছিলো…… সন্তান ছিলো ওর কাছে বোঝা………….. একদম কোলের বাচ্চা ছিলো তখন নীলময়ী……… আর,,,, আমি!!! আমি নিজেও ঘৃণা করতে শুরু করলাম……… আমি ধরেই নিলাম এই সন্তানের জন্য আমার ভালোবাসার মানুষটা আজ আমায় ফেলে চলে গেলো…….. অবহেলা করতে লাগলাম……. আমার নিজের সন্তানকে……… অবহেলার মাত্রা একসময় এমন পর্যায়ে পৌছালো,,,,,, যে আমি ওর অস্তিত্বই ভুলে যেতে লাগলাম……. আমার যে কোনো মেয়ে ছিলো তাই ভুলে গেলাম……. কাজের বুয়া আর কেয়ারটেকারদের কাছে বড় হতে লাগল আমার মেয়ে…….
একটু থামলেন মাহমুদ সাহেব.…..….. বড় করে একটা দম নিলেন……..বর্ন খুব আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে ওনার দিকে। উনি আবার শুরু করলেন……..
-নীলময়ীর জীবনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সমস্যা,,,,, ওর প্রয়োজন…… কোন কিছুই আমার চোখে পড়ল না…………… কিন্তু হঠাৎ একদিন…………. ওর বয়স তখন ১৬ কি ১৭ হবে হয়ত…. সেদিনের মতই হসপিটাল থেকে আমার কাছে ফোন এসেছিলো…….. আমি……. আমি…….. যখন গেলাম……….
মাহমুদ সাহেব জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে লাগলেন। বর্ন পানির গ্লাস এগিয়ে দিলেন উনাকে……. একচুমুকে পানিটুকু শেষ করে উনি আবার শুরু করলেন,
-ডক্টর বললেন…. ও নাকি সুইসাইডের চেষ্টা করেছিলো…… আর ওইটাই নাকি প্রথম ছিলো না…… এর আগেও ও বেশকয়েকবার সুইসাইড অথবা নিজের ক্ষতি করার চেষ্টা করেছিলো……সাইকোলোজিস্ট জানালেন……. নীলময়ী ডিপ্রেশনে ভুগছে……. এবং ও দিন দিন এতোটাই ডিপ্রেসড হয়ে পড়ছিলো যে…… ও নাকি সুইসাইডালে পরিণত হয়ে যাচ্ছিলো……….. আমি…… আমি……… শুধু হা করেই উনাদের শুনে গেলাম….. কিই বা বলতে পারতাম আমি……. আমাকে যখন আমার নিজের মেয়ের ডিপ্রেশনে ভোগার কারন জিজ্ঞেস করা হল,,,,,আমি ঠায় দাঁড়িয়ে……. তুমিই বলো,,,,, কি বলতাম আমি!!! যেই মেয়ের কোন অস্তিত্বই আমি স্বীকার করতাম না……. তার এই কন্ডিশনের কি কারন!!! তার জবাব আমি কিভাবে দিতাম!!!! বলো……..
মাহমুদ সাহেব ব্লেজারের হাতে চোখ মুছলেন……
-নিজের ভালোবাসার মানুষকে হারানোর শোকে আমি এতোটাই আহত হয়েছিলাম যে……..আমার ভালোবাসার অস্তিত্বটাকেই আমি ভুলে যেতে লাগলাম…… কতটা কতটা…….. নিষ্ঠুর বাবা না হলে আমি আমার সন্তানকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছিলাম…….. কতটা……. কতটা……..
মাহমুদ সাহেব দুই হাতে চোখ মুছতে লাগলেন…..
বর্ন এখনো নির্বাক……..
-আমি জানি……. এইকথাগুলো একসময় নীলময়ীই তোমাকে জানাতো……. কিন্তু আমি আমার মেয়ের জন্য কোন রিস্ক নিতে চাইছিলাম না……. যদি আমার মেয়েটা আবার অবহেলিত হয়!!!! যদি আবার ওর মন ভাঙে…….. রিস্ক নিতে চাইছিলাম না……. আমি….বুঝতেই পারছো…….
মাহমুদ সাহেব উত্তরের অপেক্ষায় বর্নর দিকে তাকালেন…..
-আংকেল…… আপনি কি জানেন……. আমার জীবনে নীলময়ী আমার প্রথম বন্ধু……. সি ইজ এ প্রিসিয়াস গিফট টু মি….…. আমি নীলময়ী কে প্রমিস করেছি….. জানেন…… আমি সবসময়……. ওর সামনে ঢাল হয়ে থাকবো আমি…… আমি ওর সুপারম্যান তো……
বলেই বর্ন খুব সুন্দর করে হাসলো……
মাহমুদ সাহেব চোখ মুছেই যাচ্ছেন……. তিনি মনে মনে বললেন “হে পরমকরুনাময় পাক গাফফুর রাহিম….…. এই ছেলেটার জীবনে যেনো কখনো কোনো কষ্ট না আসে”
👇👇👇
তামান্না অফিস থেকে বের হয়ে সিড়ির কাছে দাড়ালো…… আবার বৃষ্টি!!!!! এই কি ঝামেলা…….. তামান্না ভ্রু কুচকে ব্যাগ থেকে ছাতা বের করতে লাগল……
-মিস তামান্না……
তামান্না এরকম হঠাৎ ডাকে…. ভয় পেয়ে দুই কদম পিছিয়ে গেলো…… পাশে তাকিয়ে দেখে বর্ন দাঁড়িয়ে…… দুই হাত প্যান্টের দুই পকেটে ভরে একটা পিলারের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে…….. তামান্না একটু অবাক হল,,,,,,,,, আজ সারাদিন তো উনাকে অফিসে দেখা গেলো না!!!!! তাহলে এখন কোথা থেকে উদয় হলো………. তামান্না হালকা করে হাসল……
-জ্বী স্যার বলুন……
-আসলে হয়েছে…… কি….. বৃষ্টি এমন হঠাৎ করে নামবে বুঝতে পারি নি……..…. ইয়ে মানে….. আমার গাড়িটা একটু সামনেই পার্ক করা…….. আপনি কি আমায় একটু লিফট দিবেন……..!?……
হেসে দিলো তামান্না…….. একদম প্রথম দিনের কথা মনে করে…….. এবং তামান্না ঠিক বুঝতে পারছে বর্নও সেই প্রথন দিনের কথা মনে করেই আজ আবার এভাবে বলছে……. তামান্না ব্যাগ থেকে ছাতা বের করল। আজও ওই ফুটো ছাতা!!!
তামান্না আর বর্ন পাশাপাশি হেটে চলছে……. বৃষ্টি অত জোরে না পড়লেও বর্ন অনেকটা ছাতার ভিতর সড়ে দাড়িয়েছে…… দু’জনের হাতে হাত ঘেষছে…..গাড়ির কাছাকাছি এসে বর্ন ঘুরে দাড়ালো……শুধু দাড়িয়েই রইল,,,,,,কিছু বলল না…… প্রথমে তামান্নাই শুরু করল
-জানেন….. কাল রাতে আমি একটা খুব সুন্দর স্বপ্ন দেখেছি…….
বর্ন চুপ করে রইল…… স্বপ্নের কথা শুনতে কি আজ ও এসেছে!!!! এতক্ষন যাবৎ দাঁড়িয়ে থেকে অপেক্ষা করেছে কি এভাবেই চলে যাওয়ার জন্য!!!! আজও কি এই মেয়েটা কিছুই বলবে না!!!!!
-………………….. কি স্বপ্ন…..!?
-উমমমম…… সেটা নাহয় আজ নাই জানলেন……
-স্বপ্নটা কি অনেক সুন্দর ছিলো!?
-হুম…. ছিলো……. খুব সুন্দর ছিলো…….
-তাহলে আমি শুনতে চাই…………
-নাহ………. আজ না……. একদিন…… অনেকক্ষন সময় নিয়ে,,,,শুনাবো আপনাকে আমি স্বপ্ন……. আপনি যেমন সময় নিয়ে শুনান আপনার বইয়ের গল্প,,,, তেমনি…….
-একদিন?!!!!
-হুম………….
-ওহ………………… মিস তামান্না……. আসি আমি……… তাহলে……..
-জ্বি,,,,,, আসি স্যার……..
বলে তামান্না হালকা হেসে ঘুরে হেটে যেতে লাগল। বর্ন দাঁড়িয়ে রইল……. ঠিক যতক্ষন তামান্নাকে দেখা যায় ঠিক ততক্ষন দাঁড়িয়ে রইল।
(আসছে)
ঃ গল্পটা আমিও রেগুলার লিখতে চাই…….. কিন্তু প্রতিদিন সকালে উঠে ক্যাম্পাস থেকে শুরু করে টিউশনি শেষ করে যখন রাতে বাসায় ফিরি,,,,,এতোটাই ক্লান্ত থাকি যে ঘুমিয়ে যাই। ফোন হাতে রেখে ঘুম……… তাই প্রতিদিন হয় না পোস্ট করা।