#প্রেমনোঙর_ফেলে,১৪,১৫
#লেখনীতে: মিথিলা মাশরেকা
১৪.
প্রাপ্তর দেওয়া নতুন গিটারটা সাথে না নিয়ে বাসায় ফিরলো ইচ্ছে। কনসার্ট শেষ করে ওখানে আসা মিষ্টিঘরের বাচ্চাগুলোর সাথে বেশ কিছুটা সময় কাটিয়েছে ও। তখন প্রাপ্ত ছিলো না সেখানে। আড়চোখে ওকে কয়েকবার খুজেছে ইচ্ছে। মনেমনে রাগ হলো ওর প্রাপ্তর উপর। সরি বলাটাও জানে না ওই লোকটা। সরি বলে এভাবে গায়েব হয়ে গিয়ে আবারো প্রমান করে দিলো,মন থেকে সরি বলে নি ও। তাতে ওরই বা কি? একজনের বলা সরি মন থেকে বলা নাকি শুধুই ফর্মালিটি,ইয়ানাত নিক্কন কেনো তা নিয়ে বারবার ভাবতে যাবে? ওর দেওয়া গিটারটা ফেলে এসেছে। যদিও ইচ্ছে করছিলো না। অনেক খুজেছে মায়ের সেই পুরোনো ডিজাইনের গিটারটা। পায়নি। প্রাপ্তর গিটারটা দেখে,সময় অসময়ে অবয়বটাকে অন্তত মনে করতে পারতো!
ইচ্ছে বাসায় ঢুকলো হুইস্টলিং করতে করতে। নাফিজা বেগম যে ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে ম্যাগাজিন পরছে সেটা টের পেলো ও। গিটারের কাটা তারটার কথা মনে পরে গেলো ইচ্ছের। কাধের ব্যাগেই সে গিটার। কোনোরকম হেয়ালি না করে সোজা নাফিজা বেগমের সামনে গিয়ে দাড়ালো ও। ম্যাগাজিনটা কেড়ে নিলো তার হাত থেকে। বিন্দুমাত্র বিচলিত না হয়ে চোখ তুলে তাকালেন নাফিজা বেগম। যেনো তিনি জানতেন,ইচ্ছের এই রুপটাই দেখতে হবে তাকে। স্বাভাবিক স্বরে বললেন,
-এসেই অভদ্রতা শুরু করে দিলে?
-আমি কোনোদিন তোমাকে ভদ্রতা দেখাইনি এস এম।
-হ্যাঁ! তাইতো আফসোস! তোমার বাবা এটা বুঝলো না কোনোদিনও। তার মেয়ে…
-তার মেয়ে কি,কেমন সেটা সে জানে এস এম। যাইহোক! তুমিও ভালোমতোই চেনো আমাকে। তারপরও বোকামো কেনো করো বলোতো?
নাফিজা বেগম ভ্রুকুচকে তাকালেন। ইচ্ছে তাচ্ছিল্যে হেসে বললো,
-তুমি জানো আমি আমার মিউজিক নিয়ে কতোটা পসেসিভ। ইনস্ট্রুমেন্টগুলো আমার প্রান,এটাও জানো তুমি। ওগুলোর সাথে কখনো আপোষে যাইনি আমি। ওগুলোর একটুখানি এদিকওদিক হলেই ইচ্ছে পাগলামি করে। ঠিক সেভাবেই পাব্লিক প্লেসে সিন ক্রিয়েট করবো,এটা ভেবে তুমি আমার গিটারের তার কেটেছো দিয়েছো। রাইট?
…
-তোমাকে একটা সাজেশন দেই এস এম। আমাকে নিয়ে তোমার ধারনাটা বরং তুমি একটুখানি এডিট করে নাও। এখন সবার আগে আমার কাছে আমার ভিউয়ার্স। সবার আগে ওদের চাওয়া। ওরা আমাকে যেভাবে চাইবে,আমি সেভাবেই নিজেকে প্রেজেন্ট করতে পারবো। পারি। ইচ্ছে নিজেকে বদলে নিয়েছে এস এম। একের পর এক আঘাতগুলো এতো বেশি কঠোর ছিলো যে,এখন ওকে শত আঘাতেও আর ভাঙতে পারবে না তুমি। সো লেট ইট বি। ট্রাই করা বাদ দাও এখন।
কথা শেষ করে ইচ্ছে সিড়ি বেয়ে চলে আসছিলো। পেছন থেকে নাফিজা বেগম শক্তগলায় বললেন,
-তুমি তো নিজের সাথে নিজের লাইফকে বেশ ভালোভাবেই গুছিয়ে নিয়েছো ইচ্ছে। অনেক ভালো চাল চেলেছো। তোমার মাস্টারপ্লানে নওশাদের সবটায় তুমি,সিঙিং ক্যারিয়ারে এস্টাব্লিশড্ তুমি,হাজারহাজার ফ্যানফলোয়ার তোমার। আর তারসাথে,রাকীন শাফায়াতও!
ইচ্ছে থামলো। তবে পেছন ফিরলো না। নাফিজা বেগমের চোখে ওর জন্য একরাশ ক্ষোভ,রাগ আর ঘৃনা। ছলছল করছে তার চোখ। ইচ্ছেকে থামতে দেখে সে আরেকপা এগিয়ে বললো,
-অস্বীকার করতে পারো ইচ্ছে? এ সবকিছু শুধু তোমার না,আরো কেউ অংশীদার ছিলো এর। অস্বীকার করতে পারো? নওশাদের কাছ থেকে বাবার ভালোবাসা আরো একজনের পাওয়ার কথা ছিলো। অস্বীকার করতে পারো? আরেকজনের তোমার চেয়ে ভালো ক্যারিয়ার নিয়ে বাচার কথা ছিলো। অস্বীকার করতে পারো ইচ্ছে? রাকীন শাফায়াতের “হবু বউ” সমেত “বউ” নামটা তোমার জন্য না,অন্যকারো জন্য বরাদ্দ ছিলো। অস্বীকার করতে পারো? বলো ইচ্ছে? অস্বীকার করতে পারো তুমি?
চেচিয়ে বললেন নাফিজা বেগম। চোখভরা জল তার। তবু তার আগে টুপটাপ জল গরালো ইচ্ছের চোখ থেকে। সিড়ি শক্তমুঠো করে ধরলো ও। এই চোখের জল নামক দুর্বলতাকে কারো সামনে আসতে দেওয়া যাবে না। একটা শুকনো ঢোক গিলে বললো,
-খেয়া ফিরে আসবে এস এম।
-আসবে না! আসবে না খেয়া! কোনোদিনও আসবে না! তুমি ওর ফেরার কোনো পথ খোলাই রাখোনি ইচ্ছে! আমার মেয়েটার অভিমান কোনোদিনও ভাঙবে না! ফিরবে না ও!
নাফিজা বেগমের চিৎকারে টমি ছুটে এসে শোড়গোল শুরু করে দিলো। ইচ্ছে শান্তভাবে বললো,
-স্টপ ইট টমি।
টমি থামলো না। ওর মতো চেচিয়ে ভয় দেখাচ্ছে নাফিজা বেগমকে। নাফিজা বেগম ঘৃনাদৃষ্টি ছুড়ে চলে গেলেন ওখান থেকে। ইচ্ছে থমথমে পায়ে নিজের ঘরে চলে আসলো। টমিও আসলো ওর পেছন পেছন। কাধের ব্যাগটা মেঝেতে রেখে বিছানায় পিঠ ঠেকিয়ে মেঝেতেই বসে পরলো ইচ্ছে। চোখ থেকে অনবরত পানি পরছে ওর। ঘাড় ঘুরিয়ে আস্তেধীরে ব্যালকনির সামনের দেওয়ালে সেই ভাঙা গিটারের কাঠে লেখা মা শব্দটার দিকে তাকালো ও। অস্ফুটস্বরে বললো,
-আর কতোদিন এই এতোবড় দায় বয়ে বেরাবো মা? আর কতোদিন? তোমার মেয়েকে কেউই বুঝলো না যে! তুমি চলে যাবার পর খেয়াই তো আমার সব ছিলো মা। ওউ কেনো ছেড়ে চলে গেলো আমাকে বলতে পারো? এতোভাবে নিঃস্ব করে দিয়ে কেনো উপরওয়ালা আমাকে বাচিয়ে রাখলো মা? শুধু এই দায়ের বোঝা বয়ে বেরোনোর জন্য? কোনোদিনও কি শেষ হবার নয় এ যন্ত্রনা? এভাবেই বাচতে হবে আমাকে? এভাবেই?
কথাগুলো বলে ইচ্ছে হাটু জরিয়ে নিলো নিজের। হুহু করে কাদতে কাদতে বললো,
-ফিরে আয় খেয়া! প্লিজ ফিরে আয়! আর পারছি না আমি! আর পারছি না!
টমি আবারো চেচাতে শুরু করেছে। ইচ্ছের কান্না সহ্য হচ্ছে না ওর। ইচ্ছে বললো,
-কাম ডাউন টমি।
টমি চেচাচ্ছেই। এবার ওর চেচানোটা সহ্য হচ্ছে না ইচ্ছের। নিজেও সর্বোচ্চস্বরে বললো,
-স্টপ বার্কিং এন্ড গেট লস্ট টমি! এখান থেকে চলে যা প্লিজ! একা থাকতে চাই আমি! একা থাকতে দে আমাকে!
টমি গুটিয়ে গেলো। লেজ নেড়ে ইচ্ছের আশেপাশে ঘোরাঘুরি করলো বারকয়েক। ইচ্ছে প্রতিক্রিয়া দেখালো না বলে কিছুক্ষন পর চুপচাপ বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে।
অনেকটাসময় কান্নার পর হুশ ফিরলো ইচ্ছের। নিজেকে সামলাতে শাওয়ার নিলো ঘন্টাভর। তারপর ভেজা চুলগুলো ছেড়ে নিচে নেমে আসলো। মাথা ভারি হয়ে আছে একদম। নিচে ততোক্ষনে আবারো এসে বসেছেন নাফিজা বেগম। ইচ্ছে শক্ত রাখলো নিজেকে। একজন সার্ভবয়কে ডেকে দিয়ে বললো,
-কফি।
দুদন্ড পরই কফি হাজির। ইচ্ছে কফিমগে দুবার চুমুক দিয়ে একুরিয়ামের মাছগুলোর দিকে তাকিয়ে রইলো। হুট করেই কিছু একটা মনে পরে গেছে ওর। টমিকে ডাক লাগালো ইচ্ছে। কোনো সাড়া নেই। কয়েকবার ডাকার পর ইচ্ছে বাসার চারজন সার্ভবয়কে ডেকে বললো,
-টমি কোথায়?
ছেলেগুলো ভয়ভয়ে একজন আরেকজনের দিকে তাকালো। ইচ্ছে কিঞ্চিত উচ্চস্বরে বললো,
-কিছু জিজ্ঞাসা করলাম আমি!
-আ্ আমরা দেখিনি ম্যাম! ও তো আপনার সাথেই আপনার রুমে…
নাফিজা বেগম বললেন,
-যাক। একটা আপদ তো বিদেয় হলো।
একপলক তার দিকে তাকিয়ে তৎক্ষনাৎ বেরিয়ে পরলো ইচ্ছে। এই প্রানীটাই আছে একমাত্র ওকে বোঝার মতো। বোঝে বলেই হয়তো অভিমান জানে। আগেও একবার ধমক দিয়েছিলো বলে বাসা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলো টমি। ইচ্ছে তাড়াহুড়ো করে গাড়ি স্টার্ট দিলো। বুঝে উঠতে পারছে না ঠিক কোনদিকে যাবে ও। তবুও খুজতে তো হবেই। আপন মানুষগুলোর মতো এই প্রানীটাকেও হারিয়ে ফেলতে চায়না ও। রাস্তার জায়গায় জায়গায় গাড়ি ঠেকিয়ে টমির ছবি দেখিয়ে একে ওকে জিজ্ঞাসা করতে লাগলো দেখেছে কিনা। মাস্কের আড়ালে ওর চেহারাটা না দেখায় স্বাভাবিক ছিলো সবাই। কিন্তু স্বাভাবিক ছিলো না সে মানুষটা। হারানোর ভয়ে চারপাশ আবছা হয়ে আসছিলো তার।
•
নিজের বাইকটার উপর ভাব নিয়ে বসে থাকা প্রানীটিকে সরু চোখে দেখে চলেছে প্রাপ্ত। তার সাদা ধবধবে লোমশ শরীরটা অল্পের জন্য ছিন্নভিন্ন হওয়া থেকে বেচেছে। প্রাপ্তই বাচিয়েছে। কিন্তু তাতে যেনো ও সন্তুষ্ট না। ওর মতে, এই প্রানীটার চারপায়ের মিনিমাম ছয়জায়গায় ফ্র্যাকচার হওয়া উচিত ছিলো। তাহলে অনেকটা শান্তি পেতো প্রাপ্ত। কারন ওটা টমি। সেই কুকুরটা,যেটার জন্য দ্বিতল বাসার জানালার সেল্ফ থেকে পরে গিয়ে ব্যথা পেতে হয়েছিলো ওকে। আর আজ ওই কিনা এই কুকুরটাকে বাচালো। মাহীম অনেকক্ষন হলো টমির প্রতি প্রাপ্তর প্রতিক্রিয়া বোঝার চেষ্টা করছে। কিন্তু পারছে না। একসময় বিরক্তি নিয়ে বলে উঠলো,
-আর কতোক্ষন খালি চোখেই এটাকে জুম ইন,জুম আউট করে করে পরখ করবি ভাই? বিলেতি কু’ত্তা তোর পছন্দ? আগে জানতাম না তো!
মাথায় চাটি পরলো মাহীমের। প্রাপ্তই মেরেছে। তবে তাকিয়ে আছে এখনো টমির দিকে। যেনো মারটা টমিকেই লাগালো ও। কিন্তু টমি বেপাত্তায মনের সুখে নিজের গায়ে জিভ লাগিয়ে পরিস্কার পরিচ্ছনের অভিযান চালাতে ব্যস্ত সে। মাহীম মাথায় হাত বুলিয়ে কাদোকাদোভাবে বললো,
-মারলি কেনো ভাই?
-এটাকে বাচালাম বলে আফসোস হচ্ছে।
-তাই বলে আমাকে মারবি? দে ওটাকে আবারো মেইনরোডে ছেড়ে দিয়ে আসি। দে!
মাহীম এগোচ্ছিলো টমির দিকে। প্রাপ্ত ওর বাইকে পকেটে দুহাত গুজে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে ছিলো। আর ওদের সামনে টমি একা প্রাপ্তর বাইক জুড়ে বসে ছিলো। প্রাপ্ত মাহীমকে আবারো চাটি লাগালো মাথায়। মাহীম পেছন ফিরে খ্যাক শব্দে কেদে দিয়ে বললো,
-তুই কি চাস কি প্রাপ্ত?
-এটাকে পিসপিস করতে ইচ্ছে করছে।
-ইচ্ছের জিনিস নিয়ে ইচ্ছে করার রাইট তোমার নেই মিস্টার সাদমান ইনাব প্রাপ্ত।
ইচ্ছের গলা শুনে প্রাপ্ত ঘাড় ঘুরিয়ে পাশে তাকালো। সত্যিই বুকে হাত গুজে ওদের পাশে দাড়িয়ে আছে ইচ্ছে। গায়ে হালকা গোলাপি রঙের একটা কুর্তা,ল্যাগিংস্। ছাড়া চুলগুলো আধভেজা। কোনোরকম সাজগোজ ছাড়াই মোহনীয় এক রুপের সমাহার ওই উজ্জ্বল চেহারা। প্রাপ্তকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ওর সামনে তুড়ি বাজালো ইচ্ছে। টমির খোজে গাড়ি নিয়ে অনেকক্ষন ওভাবে ছুটছিলো ও। একসময় এক চেইকপোস্টের এক পুলিশকে গিয়ে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারে কারো গাড়ির সামনে পরতে গিয়ে কোনোমতে বেচে গেছে টমি। এক বাইকার নিয়ে গেছে টমিকে। সেদিক অনুসরন করেই এসেছে ইচ্ছে। এখানে এসে প্রাপ্তকে দেখবে,ধারনাতেও ছিলো না ওর। প্রাপ্ত নিজেও এক আকাশ বিস্ময়ে আটকে আছে। মাহীম মোটামুটি ভয় পায় ইচ্ছের তীক্ষ্মদৃষ্টিকে। তাছাড়া প্রাপ্ত যেহেতু ইচ্ছেকে দেখতে পারে না,এখানে কিছু অঘটন ঘটবেই এমনটা ভেবে আস্তেধীরে কেটে পরলো ও। ইচ্ছে প্রাপ্তকে লক্ষ্য করে বললো,
-টমির প্রতি এতো রাগ কেনো তোমার মিস্টার গ্যাংস্টার?
প্রাপ্ত শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ওর দিকে। কিছু বললো না। উত্তর না পেয়ে ইচ্ছে টমির দিকে তাকালো। টমি প্রাপ্তর বাইকে থাকা সেই গিটারটার উপরেই বসে। কি হলো,নিশব্দে হেসে দিলো ইচ্ছে। ওর শব্দহীন হাসিতে প্রাপ্তর আশেপাশে একদফা দমকা হাওয়া বয়ে গেলো যেনো। কি ভেবে তখনতখনই চোখ সরিয়ে নিলো ও ইচ্ছের দিক থেকে। হনহনিয়ে গিয়ে টমিকে নামিয়ে দিলো বাইক থেকে। ইচ্ছের কাছে ছুটে আসলো টমি। আর ইচ্ছে কপাল কুচকে তাকালো প্রাপ্তর দিকে। প্রাপ্ত বাইকে বসে বাইকটা স্টার্ট দিয়ে বললো,
-আমার রাগের কারন জানার না তোমার দরকার আছে,না অধিকার। মাইন্ড ইউর ওন বিজনেস মিস রকস্টার।
প্রাপ্ত বাইক ছুটাবে,টমি একদম সামনে এসে দাড়িয়েছে ওর বাইকের। বাইকটা থামাতে বাধ্য হলো ও। ইচ্ছে মুচকি হেসে ওর বাইকের ব্যাকসিট থেকে গিটারটা খুললো। ওটা নিজের কাধে ঝুলিয়ে বললো,
-সরি এক্সেপ্টেড। এখন এটলিস্ট রাগ কমাও মিস্টার গ্যাংস্টার? আর হ্যাঁ! এতো রাগ পুষতে নেই। তোমার এই রাগে তোমাকে আর যেই হোক,ইচ্ছে ভয় পায় না। মাইন্ড ইট! বাই।
ইচ্ছে গিটার কাধে নিয়ে টমিকে কোলে রেখে আদর করতে করতে চলে গেলো। স্তব্ধ হয়ে বাইকে বসে রইলো প্রাপ্ত। ও তো ইচ্ছেকে ইগ্নোর করতে চাইছিলো। আর এই মেয়ে ওর সরি,গিটার নিয়ে রাগের উল্টো মানে বের করে গেলো? ইচ্ছের সাথে দেখা হওয়ার পর থেকে ওর জীবনের সবটা এভাবে উল্টে যাচ্ছে কেনো? এ কোন অসীমকরনে আটকে যাচ্ছে ও? এ কোন বাধন? কোন নোঙর?
#চলবে…
#প্রেমনোঙর_ফেলে
#লেখনীতে: মিথিলা মাশরেকা
১৫.
খই শুকমরার একপারে হেলানো হিজল গাছের ডালে বসে গাব খাচ্ছে। কখনো পা নাড়িয়ে পানিতে তরঙ্গ তুলছে, গুনগুনিয়ে গান গাইছে মনের সুখে। গাছের গোড়ায় দাড়িয়ে আরো তিনটে বাচ্চা। খইয়ের গোছার গাবগুলোর দিকে অসহায়ের চাওনি স্থির সবগুলোর। খই পা দুলিয়ে গাব মুখে পুরে বললো,
-তারপর? কে কে জানি কইছিলি? গাব আনবি? পুঁটি? তুই? আর জানি কেডা? খুশবু? তুই?
পুঁটি খুশবু দুজনেই মাথা নিচু করে নিলো। একটা হ্যাংলাপাতলা ছেলে সবটুকো শ্বাস নিয়ে বললো,
-আমি কই নাই খই বুবু। আমারে দেও কয়ডা গাব? কাছারীবাড়ির গাব না খাইলে বৎসরডা মাডি হইয়া যাইবো!
-তাও তরে দিমু না মধু। তোরা সুযোগ পাইলেই আমারেও দেস না!
বিশ্বজয়ের হাসি দিলো খই। আজকে চুপিচুপি গিয়ে সব গাব সাবার করে দিয়েছে ও। সবাইকে দেখিয়ে দেখিয়ে খাবে বলেই এখানে আসা ওর। নিচ থেকে সবগুলো ঘ্যানঘ্যান করছে, অনুনয় করছে গাবের জন্য। আর ও মনের তৃপ্তি মেটাচ্ছে। হঠাৎই খালে ঝপাৎ শব্দ! যেনো বড়সর কিছু পরে গেছে। খই ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে কেউ একজন হাত উচিয়ে পানিতে বারি লাগচ্ছে সমানে। শুধু তার বড়হাতা কালো শার্টের হাতদুটোই দেখা যায়। খুশবু চেচিয়ে বললো,
-আল্লা গো! কেডায় জানি পানিতে পরছে খই বুবু!
খইয়ের চেহারায় আতঙ্ক। সাতার না জানায় আগেরবছর এভাবেই পানিতে পরে ডুবে যাচ্ছিলো পুঁটি। এভাবেই হাতে পানিতেবারি লাগাচ্ছিলো ও। তারপর পুঁটিকে ওর মা বাচিয়েছিলো। কোলে থাকা গাবগুলো খই তীরে ছুড়ে মারলো তৎক্ষনাৎ। ঝাপ দিলো খালে। সাঁতরে পৌছালো ডুবতে থাকা মানুষটার কাছে। এগিয়ে গিয়ে বুঝলো,ওটা রাকীন।
শুকমরার ওপরের বাঁশের সাঁকোটা বেশ বড়। খালের প্রশস্ততা কম না। পায়ের নিচের দুটো বাঁশ, হাতে ধরার একটা বাঁশ নিয়ে ঝুলতে ঝুলতে গ্রামের লোকজন পার হয়। রাস্তা সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে পুরোদমে। গ্রামের লোকজন যথেষ্ট সহযোগীতাপুর্নভাবে সামলে নিচ্ছে সেদিকটা। শুকমরার ওপারে স্কুল। বাচ্চাগুলোর সাঁকো পার হয়ে স্কুলে যাওয়া অসুবিধা হয় ভেবে একটা ব্রিজ করে দেবে, এমন প্লান করেছে রাকীন। অভিজ্ঞতার জন্য নিজেই চড়ে গিয়েছিলো সাঁকোতে। কিন্তু কপাল খারাপ থাকলে যা হয়। মাঝ বরাবর এসে আর ভারসাম্য রাখতে পারেনি। খালের মাঝবরাবর পরেছে একদম। সাঁতার জানেনা বলে ডুবে মরেই যাচ্ছে এমন ধারনায় বদ্ধ হতে যাচ্ছিলো ও। তখনই কেউ এসে ওর কলার টেনে ধরলো ওর। ঠিকমতো বুঝে উঠতে পারলো না সে কে?
একহাতে রাকীনের কলার টেনে আরেকহাতে সাঁতরে কোনোমতে তীরে পৌছালো খই। ঠেলেঠুলে তীরে শুইয়ে দিলো রাকীনকে। কিন্তু রাকীন চোখ খুলছে না। খুশবু,পুঁটি,মধু ছুটে আসলো সেখানে। খুশবু চোখ কপালে তুলে বললো,
-আল্লা গো! এতোবড় মিনষে সাতরাইতে জানেনা?
মধু বললো,
-আরে এইডা তো হেই রাস্তার নকশা আঁকা লোকডা! শহরের মানুষ হ্যায়। সাতরাইবো কেমনে? আহারে। আইছিলো গেরামের ভালো করনের লাইগা। জিন্দা। আর ফিরবো লাশ হইয়া!
খই ব্যস্ত ছিলো রাকীনকে পরখ করতে। এবার ও বিস্ফোরিতচোখে তাকালো মধুর দিকে। খুশবু বললো,
-ইয়া আল্লা! মইরা গেলো তাইলে?
ঠাস করে ওর গালে চড় লাগিয়ে দিলো খই। গালে হাত বুলাতে বুলাতে খুশবু বললো,
-আমারে মারলা ক্যান বুবু? হ্যায় তো চোখই খুলেনা!
মাথা কাজ করছে না খইয়ের। রাকীনের পেটে চাপ দিয়ে পানিও বের করে দিয়েছে ও। তাতেও জ্ঞান ফিরছে না। পুঁটি এতোক্ষন চুপ থাকলেও এবার বিজ্ঞের মতো করে বললো,
-এরে দম দেওন লাগবো।
খই ওর দিকে তাকালো। বললো,
-দম দেওন লাগবো মানে?
-আমি দেখছিলাম একবার,পানিত পরলে হ্যার মুখে ফু দিলেই হ্যার হুশ আহে। এরও তাই করন লাগবো।
খই তাড়াহুড়ো করে সরে বসে বললো,
-দে দে! ফু দে তাইলে! জলদি দে!
পুঁটি বসে গিয়ে মুখ এগোচ্ছিলো। হঠাৎই ওর থুতনি চেপে ধরলো খই। কি ভেবে বললো,
-সবগুলা হা কর!
সাথেসাথে দাত ক্যালালো তিনজনই। ওদের মুখের দিকে তাকিয়ে নিজেই চোখমুখ উল্টালো খই। গাব খেয়ে একেকটা বিশ্রি দশা বানিয়েছে মুখের। পানিতে সাতরানোর জন্য শুধু ওরটাই তেমন নেই আর। পুঁটির থুতনি ছেড়ে খই কপাল চাপড়ালো নিজের। এরা কেউ রাকীনকে দম দিলে ওর দম ফেরার বদলে আটকে মারা পরবে। মধু বললো,
-আরো দেরি হইলে লোকডা সত্যই মইরা যাইবো বুবু!
একটা জোরে শ্বাস ফেলে নিজেকে প্রস্তুত করে নিলো খই। দেরি না করে একহাতে রাকীনের মুখ ধরে, আরেকহাতে ওর চুল মুঠো করে নিয়ে কয়েকবার ফু দিলো ওর ঠোটে ঠোট ছুইয়ে।
রাকীনের কাশি উঠে গেছে। খই ওকে ছেড়ে দিয়ে হুড়মুড়িয়ে পিছিয়ে বসলো। খুশবু, পুঁটি, মধুও পিছিয়ে দাড়িয়েছে। রাকীন উঠে বসে কাশলো অনেকটা সময়। হুট করেই অনুভব হলো, কি ঘটেছে ওর সাথে। পাশ ফিরে খইয়ের দিকে তাকালো ও। ওর ঠোটে ঠোট ছুইয়ে এতোটুকোও লজ্জাচাওনি নেই খইয়ের। বরং কিছুটা তেজ দেখিয়ে বললো,
-সাঁতরাইতে জানেনা, আইছে শুকমরার ধারে! আমি না থাকলে এতোক্ষনে ম’রার পাঁচ মিনিট পার হইয়া যাইতো! হুহ!
ভেঙচি কেটে ভেজা বিনুনির চুল খুলতে খুলতে বাড়ির দিকে পা বাড়ালো খই। ওর পেছনপেছন বাকিরাও চললো। ওরা চোখের আড়াল হলে রাকীন মাথার ভেজা চুলগুলো উল্টে ধরলো। জীবনে প্রথমবার এতোবড় ঘটনা ঘটেছে ওর সাথে। কোনো মেয়ের ঠোট ওর ঠোট স্পর্শ করেছে। তা সে যে কারনেই হোক না কেনো! আস্তেধীরে হাত তুলে নিজের ঠোট ছুইয়ে দিয়ে রাকীন আবারো তাকালো খইয়ের চলে যাওয়া ফাকা রাস্তার দিকে। অস্ফুটস্বরে বললো,
-বাচিয়ে গেলো? নাকি মে’রে দিয়ে গেলো?
•
সন্ধ্যে নেমেছে ব্যস্ত শহরের অলিগলিতে। তারই একটায় অসহায়ভাবে দাড়িয়ে রিকশা খুজে চলেছে পিয়ালী। রিকশা করে কোচিং থেকে বাসায় ফিরছিলো ও। কিন্তু রাস্তার মাঝে রিকশাটা খারাপ হয়ে যায়। তাই নেমে দাড়িয়ে অন্যরিকশা খুজছে ও। আগেরটা রিকশাচালক ঠিক করার চেষ্টা করছে। কিন্তু কিছুতেই ঠিক হচ্ছে না ওটা। এদিকে সন্ধ্যেও গরিয়েছে। রাস্তাটাও শুনশান বিশেষ। ওদের বাসার দিকে প্রাপ্তকে সবাই চেনেজানে বলে ভয় কাজ করে না কখনোই। কিন্তু এদিকটা সেভাবে চেনে না ও। আবাসিক এলাকা ছাড়িয়ে এ রাস্তায় জনচলাচল কম। গেমস খেলে ওর এক বান্ধবী ওর মোবাইলের চার্জ শেষ করে দিয়েছে। কাচুমাচু হয়ে কিছুক্ষন দাড়িয়ে থেকে,চশমাটা আরেকটু চোখে ঠেলে দিয়ে বললো,
-আর কতোক্ষন লাগবে মামা?
-বুঝতাছি না।
রিকশাওয়ালা আবারো নিজের মতো খোটাতে লাগলেন রিকশা। পিয়ালী এদিকওদিক তাকালো। খানিকটা দুরেই রাস্তার কয়েকটা ছেলে একজোট হয়ে দাড়িয়ে। মাঝেমধ্যে ওর দিকে তাকাচ্ছে আর বলাবলি করছে। দুজন সিগারেটও টানছে। পিয়ালী আর সেদিকে তাকালো না। ঠিক করলো উল্টোপথে এগোবে। ওদিকে আবাসিক এলাকা আছে। লোকজনও আছে। ব্যাগ থেকে তরিঘরি করে ভাড়া বের করে এগিয়ে দিলো রিকশাওয়ালার দিকে। কিছু বলতে যাবে,কেউ ওর পাশ থেকে বললো,
-আজকাল এই রাস্তায় রিকশাও নষ্ট হয়? আগে তো কোনোদিন দেখি নাই রে!
ঝাকি দিয়ে উঠলো পিয়ালীর পুরো শরীর। সেই ছেলেগুলো এগিয়ে এসেছে। পিয়ালী তাড়াতাড়ি বললো,
-ম্ মামা? এইযে আপনার ভাড়া!
ছেলেগুলোর একটা বিদঘুটে হেসে বললো,
-ওমা! ভাড়া এখনই মিটিয়ে দিচ্ছো যে? একাকীই চলে যাবে বুঝি?
রিকশাওয়ালা নিচে হাটুগেরে বসে ছিলো। চোখ তুলে তাকিয়ে অবস্থা বুঝে দাড়িয়ে গেলো সে। খানিকটা সরু গলায় বললো,
-কি হইছে বাবা? কি চাও?
-তোমার রিকশা নিয়ে তুমি চলে যাও মামা। আমাদের যা চাই,আমরা রেখে দিচ্ছি।
এটুকো বলে একটা ছেলে পিয়ালীর দিকে তাকালো। আরো দুজনের কাধে দুহাত রেখে ভর ছেড়ে দিয়ে আপাদমস্তক দেখে নিলো পিয়ালীকে। পিয়ালী ভয়ার্তচোখে আরো গুটিয়ে গেলো। প্রাপ্তর জন্য কোনোদিনও বাজে পরিস্থিতি দেখতে হয়নি ওকে। আশেপাশে কোনো জনমানবের ছায়াটাও চোখে পরলো না। এখন কি করবে,কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না ও। রিকশাওয়ালাকে বললো,
-ম্ মামা? আপনার ফোনটা…
রিকশাওয়ালা ফোন বের করলো বুকপকেট থেকে। হুট করেই একটা ছেলে রিকশাওয়ালার হাত থেকে তার মোবাইলটা কেড়ে নিয়ে রাস্তায় ছুড়ে মারলো নির্বিকারভাবে। পিয়ালী আতকে উঠলো। ছেলেটা মাথার বড়বড় চুলগুলো ঝাকি মেরে পেছনে দিয়ে তাকালো পিয়ালীর দিকে। আফসোস করে বললো,
-ইশ! মামার ফোন তো ভেঙে গেলো! এবার কি হবে?
-আমারটা নাও।
পিয়ালীর সামনে কেউ মোবাইল তুলে ধরলো। মেয়েলি কন্ঠ শুনে যেনো প্রান ফিরে পেলো পিয়ালি। সামনের ফর্সা হাতের কব্জিতে ল্যাম্পপোস্টের আলোতে গিটারের ট্যাটুটা একদম জ্বলজ্বল করছে। পিয়ালী দ্রুত পাশ ফিরলো। ওর দিকে নিজের মোবাইল এগিয়ে দিয়ে একদম স্বাভাবিক ভঙিমায় দাড়িয়ে একটা মেয়েটাকে দেখে প্রসারিত হলো পিয়ালীর চাওনি। রকস্টার ইনায়াত নিক্কন। উরফ,ইচ্ছে!
উল্টোপিঠের রাস্তায় ব্রিজের ওপর চড়ে বসে কোক খাচ্ছিলো ইচ্ছে। মাঝের দুরুত্ব বেশ অনেকটাই। নিচের স্থির পানিতে অস্পষ্ট অবয়বটা আর আকাশের তারা। দুটোকে তুলনা করছিলো নিজের সাথে। টমিকেও সাথে নিয়ে এসেছিলো ও। ইচ্ছেকে চুপ দেখে টমি শুয়ে ছিলো চুপচাপ। হঠাৎই দাড়িয়ে গিয়ে শব্দ করতে শুরু করলো ও। ইচ্ছে টমির দৃষ্টি অনুসরন করে আশেপাশে তাকিয়েও কিছু পেলো না। পরে আরো ভালোভাবে লক্ষ্য করে বুঝলো ওপাশের রাস্তায় ছেলেগুলোর অবয়ব কোনো এক মেয়ের অবয়বকে ঘিরে রেখেছে। ভাবনা ভাবার মতোন দেরিটুকো না করে চলে এসেছে দ্রুতপদে। ওকে দেখেই ছেলেগুলো বিপাকে পরে গেলো যেনো। পরিস্থিতি স্বাভাবিক বোঝাতে একজন ফোকলা হেসে বললো,
-আরে? ই্ ইনায়াত ম্যাম? আপনি? আমাদের এলাকায়? ওই সবাই সবাইরে ডাক! দেখ রকস্টার ইনায়াত…
ইচ্ছে আগে পিয়ালীকে দেখলো। ভয়ে ঘেমে একাকার হয়ে গেছে পিয়ালীর মুখচোখ। এমন পরিস্থিতিতে ভয় পাওয়া যেকোনো মেয়ের জন্যই স্বাভাবিক। সেখানে পিয়ালী তো বাচ্চা মেয়ে। অভয় দেওয়ার উদ্দেশ্যে ইচ্ছে হেসে বললো,
-হেই কিউটি! চশমাটা খুব মানিয়েছে তোমাকে। কতো পাওয়ারের এটা?
এমন পরিস্থিতিতে এমন প্রশ্ন শুনে আটকে রইলো পিয়ালী। একে তো ইচ্ছের মতো স্টার এমন অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে চলে আসলো,তার উপর এভাবে এতোটা ফ্রি লি কথা বলছে। ইচ্ছে আবারো বললো,
-বললে না?
-ই্ ইটস্ টু পয়েন্ট ফাইভ।
পিয়ালীর কাপা গলা শুনে ইচ্ছে বুঝলো এখনো ভয় কাটেনি ওর। পিয়ালীর একগালে হাত রেখে মুচকি হেসে বললো,
-রিল্যাক্স! আ’ম হেয়ার। বাসায় কল করে কাউকে আসতে বলো। আমি গাড়ি আনিনি। নইলে আমিই পৌছে দিতাম তোমাকে।
দম ছাড়লো পিয়ালী। ইচ্ছে ওর ফোন গুজে দিলো পিয়ালীর হাতে। এবার ছেলেগুলোর দিকে ফিরলো ও। বয়স দেখেই বোঝা যায়,একেকটা কলেজের গন্ডি পেরিয়েছে কিনা সন্দেহ। এদের মার লাগাবে,নাকি পুলিশে দেবে,নাকি সতর্ক করবে,বুঝে উঠলো না ও। মাঝের ছেলেটার দিকে তাকিয়ে শান্তস্বরে বললো,
-মামার ফোনটা ভাঙলে কেনো?
-হ্ হাত থেকে পরে গেছে ম্যাম।
ওর গালে সশব্দে চড় লাগিয়ে দিলো ইচ্ছে। স্বাভাবিক গলায় বললো,
-আমার সামনে একদম সাহিত্য রচনা না। দুদিন পুলিশ কাস্টাডিতে থাকলে সবরকমের সাহিত্যের ধারা বেরিয়ে যাবে। শুধুমাত্র তোমাদের মা বাবার কথা ভেবে আজকে ছেড়ে দিচ্ছি। নেক্সট টাইম এ রাস্তায় কেনো, এই এলাকার কয়েকমাইল আশেপাশেও যদি কোনো হ্যারাসমেন্ট ঘটে,আই’ল ডিরেক্ট গেট ইউ গাইস হ্যাংড্! এন্ড আই মিন ইট!
ছেলেগুলো স্তব্ধ হয়ে গেছে একদম। ইচ্ছে শান্তকথায়, আজকের জন্য ছেড়ে দিয়ে আগামীর সবকিছুর জন্য দায়বদ্ধ করে দিলো ওদেরকে। কিছু বলতে যাবে ওদের একজন, ইচ্ছে বললো,
-আমার কোনো এক্সপ্লেনেশন চাইনা। ব্যাখা দিতে এসে আমাকে আর রাগিও দিও না। যা বললাম, মাথায় রেখে এলাকায় থেকো। এদিকওদিক সবকিছুর দায়ে তোমাদেরই কিন্তু জেলে পাঠানোর ব্যবস্থা করবো আমি। নাও গেট লস্ট।
দু দন্ড মুখ চাওয়াচাওয়ি করে দৌড় লাগালো সবগুলো মিলে। টমি শব্দ করতে লাগলো। ইচ্ছের ফোনটা তখনো পিয়ালীর হাতে। রাস্তায় থাকা রিকশাওয়ালার ভাঙা মোবাইলটা তুললো ইচ্ছে। সাইডব্যাগ থেকে হাজার টাকার কয়েকটা নোট বের করে তার হাতে গুজে দিয়ে বললো,
-মোবাইলটা ঠিক করিয়ে নিও মামা। একেবারে চুর্নবিচুর্ন হয়ে গেছে। অনেক টাকা লাগবে এটা সারতে।
টমি আবারো শব্দ করে উঠলো। ওর শব্দ অনুসরন করে ইচ্ছে,পিয়ালী দুজনেই পাশ ফিরলো। সামনে দাড়ানো সাদা টিশার্টের উপর চেইক শার্ট পরিহিত মানুষটাকে দেখে কিঞ্চিত ভ্রু কুচকে তাকালো ইচ্ছে। হাত শক্তমুঠো করে দাড়ানো ব্যক্তিটির দিকে পিয়ালী দৌড়ে এগিয়ে গিয়ে বললো,
-ভাইয়া!
#চলবে…