এক মুঠো রোদ পর্ব-৪৬

0
1009

#এক_মুঠো_রোদ
#Writer_নৌশিন_আহমেদ_রোদেলা
#part_46
#collected Sk Galib
ঘরের খোলা বারান্দায় বেতের মোড়াতে বসে আছে রাফিন। তার সামনেই অন্য একটি মোড়ায় বসে আছে আরিফ। দরজা ছেড়ে খানিকটা দূরে হুইলচেয়ারে বসে আছেন আরমান সাহেব। হুইলচেয়ারের দুপাশের দু’হাতলে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে আরু-লিনা। রাফিন হাতে থাকা পানির গ্লাসটা পাশে রেখে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো। ছোট্ট করে শ্বাস টেনে নিয়ে বললো,
—” আমি জানি আপনারা কেউই আমায় পছন্দ করেন না। করার কথাও নয়। আমি পছন্দ করার মতো ব্যক্তিও নই। আপনাদের মতো ফ্যামিলি কখনোই তাদের মেয়ে আমার মতো একজনের কাছে দিতে চাইবে না। এই বিষয়টা নিয়ে আমার তেমন একটা মাথাব্যাথাও ছিলো না। কিন্তু এক্সেডেন্টলি হলেও আপনাদের মেয়ে আমার সাথে জড়িয়ে গেছে। তাই এই বিষয়টা নিয়ে ভাবতেও হচ্ছে। আমি একজন সার্জন। আমার বাবাও সার্জনই ছিলেন। শুধু সার্জন হিসেবেও টাকা-পয়সার কোনো অভাব হওয়ার কথা নয় আমার তবুও আমি গ্যাংস্টার। এই পেশাটা আমার ইচ্ছেকৃত। ছোটবেলা থেকে নিঃসন্তান মামা-মামি প্রচন্ড আদরে বড় করেছে আমায়। বাবা-মা না থাকলেও আদর-ভালোবাসার অভাব হয় নি। কিন্তু “পাওয়ার” শব্দটা খুব টানতো আমায়। ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছে ছিলো পাওয়ারফুল হবো। আর হয়েও গেছি। আমি আমার এই জীবন থেকে বেরিয়ে আসতে পারবো না, বেরিয়ে আসতে চাইও না। আর আরুকে ছেড়ে দেওয়াটাও সম্ভব নয়। দেখুন, ভালো-খারাপ সব ধরনের মানুষেরই ভালোবাসার অধিকার থাকে। আর সেই অধিকার আমারও আছে। ভুল-ত্রুটি অনেক করেছি আমি। সামনেও করবো। অন্যায় কাজগুলোর সবটাই করবো তারসাথে আপনার বোনকে প্রচন্ড পরিমাণ ভালোও বাসবো।”
কথাটুকু বলে থামলো রাফিন। পকেট থেকে একটা দলিল বের করে আরিফের দিকে এগিয়ে দিয়ে আবারও বলে উঠলো রাফিন,
—” ক্ষমা চাওয়াটা আমার ধাঁচে নেই। নিজে ভুল করলেও সরি বলি না কখনো। কিন্তু কথায় আছে “Everything is fair in love and war.” আপনাদের সাথে যা কিছু করেছি তারজন্য আমি দুঃখিত। পারলে ক্ষমা করবেন। আর….এটা আপনাদের ঢাকার বাসাটার দলিল। দয়া করছি বা টাকা দেখাচ্ছি এমনটা মনে করবেন না। আমার জন্য এতো ঝামেলা পোহাতে হয়েছে ,বাড়ি বন্ধক দিতে হয়েছে সেই সুবাদেই ফিরিয়ে দিলাম। আর কিছুই না। পুরো পৃথিবীর কাছে এখনও নির্দয় রাফিনই আছি আমি আর থাকবোও কিন্তু যেখানে আমার স্ত্রীর প্রশ্ন আসবে সেখানে আমি রাফিন চৌধুরী নই শুধুই তার স্বামী হয়ে থাকবো। আপনারা ওর সাথে রিলেটেড বলে আমি আপনাদের কাছে শুধুই আরুর হাজবেন্ড, অন্যকিছু নই। আমি যা চাই তা পাই। না পেলে ছিনিয়ে নিই। কিন্তু এবার আর তা করবো না। একবার আরুকে ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছিলাম এবার ডিসিশনটা ও নিজে নিবে। একটুও জোর করবো না।”
এটুকু বলে উঠে দাঁড়ালো রাফিন। সবাই নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রাফিনের মুখে। রাফিন দু’পা এগিয়ে গিয়ে আরুর মুখোমুখি দাঁড়ালো। তৃষ্ণার্ত দৃষ্টিতে আরুর দিকে তাকিয়ে নরম গলায় বললো,
—” আমি কেমন তুমি তা জানো আরু। সবটা জেনে,বুঝে যদি তোমার মনে হয় তোমার বর খুব খারাপ। তারসাথে থাকা চলে না। তাহলে একটা “টু” শব্দও করবো না আমি। আর সবকিছু জেনে,বুঝেও যদি ভালোবাসতে পারো…. পাশে থাকতে পারো। তাহলেও “টু” শব্দ করবো না আমি। তোমার ঘর,তোমার বর সবাই তোমার আরু। যখন ইচ্ছে হবে বা কখনো যদি ইচ্ছে হয় আমায় জানিও আমি নিজে এসে নিয়ে যাবো তোমায়। তবে আমি চাইবো, তুমি আসো আর আমায় প্রচন্ড ভালোবাসো। আমার দুনিয়াটা অন্ধকার কিন্তু তুমি আমার ঘরে থাকলে সেই গাঢ় অন্ধকারেও এক মুঠো রোদ ঝলমল করবে। সেই রোদের দহনে আমায় পুড়াবে। আর আমি পুড়তে চাই আরু। আমি অপেক্ষায় থাকবো। ভালো থেকো..”
কথা শেষ করে মুচকি হাসলো রাফিন। পরম আবেশে আরুর কপালে চুমু এঁকে দিয়ে খানিকটা দূরে সরে দাঁড়ালো সে। আরমান সাহেবের পা ছুঁয়ে সালাম করেই চুপচাপ বেরিয়ে গেলো। আরু একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আঁকাবাঁকা ওই পথে। শরীরের প্রতিটা শিরা-উপশিরা কাঁপছে তার। এমন তো নয় যে, এটাই রাফিনের প্রথম ছোঁয়া। এর আগেও ছুঁয়েছে রাফিন কিন্তু আজকের এই ছোট্ট ছোঁয়াটার মতো একপ্রাণ ভালোবাসা ছিলো না তাতে। ভালোবাসায় এতো শিহরণ থাকে, এতো চাহিদা থাকে, এতো মাদকতা থাকে তা যেন এই প্রথম বুঝিয়ে দিলো রাফিন….
_________________
স্টাডি রুমে বসে খুব মনোযোগ দিয়ে লেখালেখি করছে রোজা। তার পাশের চেয়ারটাতেই চোখ-মুখ অন্ধকার করে বসে আছে তীর্থ। বাতাসে ভারি বেদনার গন্ধ। রোজার শ্বাস-প্রশ্বাস নির্মল বাতাসের মতোই স্নিগ্ধ কিন্তু মন? মাথার উপর ঘুরা ফ্যানের শা শা আর বইয়ের পাতা উল্টানোর শব্দ ছাড়া আর কোন শব্দ নেই রুমে। শব্দহীন নিস্তব্ধ কামরা। এই গম্ভীর,অস্বস্তিকর নীরবতা কাটিয়ে দরজা থেকে ডেকে উঠলো কমলা
—” আফামনি আমো?”
রোজা ব্যস্ত ভঙ্গিতে বললো,
—” হ্যাঁ রে, আয় আয়।”
কমল চঞ্চল পায়ে ভেতরে প্রবেশ করলো। দু’কাপ কফি টেবিলে নামিয়ে রেখে মাথা নিচু করে বেরিয়ে গেলো। রোজা চেঁচিয়ে জিগ্যেস করলো,
—“হ্যাঁ রে কমল? বাবা ফিরেছে?”
কমল দু’পা পিছিয়ে আবারও দরজায় এসে দাঁড়ালো। অলস গলায় বললো,
—” না আফামনি। এখনো তো আয় নাই।”
রোজা চিন্তিত মুখে হাসি ফুটানোর চেষ্টা করে বললো,
—” ওহ্। রিদ কি করে?”
—” ভাইজান তো সারাদিন বই-ই পড়ে আফামনি।”
—” আচ্ছা তুই যা। মাকে বলিস তীর্থ রাতে খাবে।”
তীর্থর স্পষ্ট প্রতিবাদ,
—” না। কমল? আন্টিকে কিছু বলার দরকার নেই। তুই যা।”
কমল মাথা হেলিয়ে সরে গেলো। রোজা নির্বিকার ভঙ্গিতে কফি কাপে চুমুক দিয়ে আবারও লেখালেখিতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। রোজার এই নির্বিকার ভঙ্গিমা একদমই সহ্য হলো না তীর্থর। ফুঁসে ওঠে বললো,
—” কেন করলি এমনটা?”
রোজা সহজ গলায় বললো,
—” কি কেন করলাম?”
—” তুই মৃন্ময়কে ওভাবে রিজেক্ট করতে পারলি?”
রোজা শান্ত দৃষ্টিতে তাকালো,
—” আমি তাকে রিজেক্ট করি নি। আমি তাকে বুঝিয়েছি যে, আমি তার জন্য পার্ফেক্ট নই। ব্যস!”
—” ব্যস? এটা তোর কাছে ব্যস মনে হলো? এমনটা না করলেও পারতিস রোজা। এতোকিছু চিন্তা করে ভালোবাসা হয় না রে। ভালোবাসাটা জাস্ট হয়ে যায়। ছেলেটাকে এভাবে কষ্ট দিস না প্লিজ। নিজেও তো কষ্ট পাচ্ছিস, তাহলে কি লাভ?”
রোজা বইয়ের দিকে তাকিয়ে উদ্দেশ্যহীন পাতা উল্টাতে লাগলো। মৃদু গলায় বললো,
—” এটা সাময়িক কষ্ট তীর্থ। আচ্ছা, তুইই ভাব আজ তুই উনার সাইড হয়ে কথা বলছিস। কাল যদি আমাকে রেখে অন্য একজনকে ভালো লাগে উনার তখন কার হয়ে কথা বলবি? আমার হয়ে? সেদিন বলে কি লাভ হবে? আমি আর আমার গোটা পরিবার হয়ে যাবো তো ফেলনা।”
—” তোর কি মনে হয়? মৃন্ময়ের মতো ব্যক্তিত্বসম্পন্ন লোক না ভেবেই প্রপোজাল দেবে তোকে? উনি যথেষ্ট ম্যাচিউর রোজা। তোর-আমার থেকে ম্যাচিউরিটি উনার বেশি বৈ কম নয় রোজা। আমাদের থেকে বেশি দুনিয়া দেখেছেন উনি। উনি না ভেবে আবেগে ভেসে কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না। উনি নিজেকে যেভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখেন আমি সিউর তোর প্রতি ভালোবাসাটা যদি উনার হাতে থাকতো তাহলে কখনোই যেচে তোকে ভালোবাসতে যেতেন না। উনার শান্ত,দৃঢ়,গম্ভীর চোখ দুটোতে তোকে পাওয়ার আকুলতা ভাসে তা শুনে তোর খুশি হওয়া উচিত। অথচ…. এমন একটা মানুষকে কেন কষ্ট দিচ্ছিস বল?”
রোজা অন্যদিকে চোখ ঘুরিয়ে নিয়ে বললো,
—” বার বার কষ্টের কথা কেন বলছিস তীর্থ? আমার মতো সাধারণদের জন্য উনার কষ্ট হওয়াটা হাস্যকর। দু-একদিন মনে পড়বে তারপর দেখবি সব স্বাভাবিক। সব! উনার আমার প্রতি আকর্ষণটা শুধুই ভালোলাগা ভালোবাসা নয়।”
তীর্থ রেগে উঠে বললো,
—” তো কি চাস তুই? আমাদের টিনেজারদের মতো হাত-পা কেটে তোর নাম লিখে ভালোবাসা প্রকাশ করতে বলিস? এসব পাগলামো কি উনার ব্যক্তিত্বের সাথে যায়? উনি তো উনিই রে। নিজের পার্সোনালিটিকে সাইডে রেখে তোর সামনে মাথা নিচু করেছে তাতেই তো আমি অবাক। এমন খাঁটি মানুষ হাজার খুঁজেও পাবি না তুই। আমি নিজে ছেলে, ছেলেদের আমি চিনি। তোরা মেয়েরা ছেলেদের সম্পর্কে কি জানিস বল তো? তোরা জানিস ছেলেরা কাঁদে না। আচ্ছা? তোরা কি এটা জানিস না যে, সব ছেলের ক্ষেত্রে পাগলামো সাজে না, সব ছেলেরা পাগলামো করতে পারে না। মৃন্ময়ের মতো মানুষের বুক ফেঁটে গেলেও মুখ ফাঁটবে না রে। ওর কাছে মেয়েদের “না” মানে “না”। সেই “না” কে অতিক্রম সে করবে না। তাতে কষ্টে যন্ত্রণায় নিজেও যদি মরে যায় তবুও “টু” শব্দটা পর্যন্ত করবে না। উনার সাথে এই ক’টা দিন থেকেই না মন থেকে রেস্পেক্ট এসে গেছে। এই লোকটা আর যায় করুক কাউকে ঠকাবে না । এমন একটা মানুষকে এভাবে পুড়াস না প্লিজ। তোরা মেয়েরা না সত্যি খুব স্বার্থপর। খুব।”
এটুকু বলেই দ্রুত পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো তীর্থ। রোজা চুপচাপ বসে আছে। বইয়ের পাতায় দৃষ্টি স্থির তার। সব লেখায় কেমন ঘোলাটে, অগোছালো। রোজা চোখ বুজে নেয়। সাথে সাথে গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে দু’ফোঁটা সাদা-সরল জল।
________________
স্টুডিও থেকে এসেই সোফায় গা এলিয়ে দিলো মৃন্ময়। জ্বরে শরীর পুড়ে যাচ্ছে তার। অথচ সবার চোখে নিতান্তই সুস্থ সে। কপালে হাত রাখার মানুষের বড্ড অভাব তার। রোজাকে কাছে পাওয়ার ইচ্ছের সূচনাকাল থেকেই যেন অভাববোধটা চক্রবৃদ্ধি আকারে বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। ক্লান্ত শরীরটাকে টেনে তুলে ফ্রেশ হয় মৃন্ময়। বিছানায় বসে থার্মোমিটারে জ্বর মাপে —– ১০৩°। মৃন্ময়ের চোখেমুখে ভাবাবেগ দেখা যায় না। নীরবে থার্মোমিটারটা ড্রয়ারে রাখে সে। দক্ষিণের বারান্দা ভেদ করে হালকা-মৃদু হাওয়া আসছে। বিছানা থেকেই জানালার কোল ঘেঁষে ঝলঝলে চাঁদটা দেখতে পাচ্ছে মৃন্ময়। হালকা সাদা মেঘগুলো মাঝে মাঝেই ঢেকে দিচ্ছে চাঁদের সেই মায়াবি রূপ। আচ্ছা? চাঁদটা বুঝি লজ্জা পাচ্ছে? ঠিক তার রোজার মতো! মৃন্ময় মনোযোগ দিয়ে আকাশে তাকায়। চাঁদের আলোয় আলোকিত আধো সাদা মেঘ আর অন্ধকারের কুন্ডলীতে ফুটে উঠছে রোজার হাসিমাখা মুখ। লজ্জা রাঙা রং। মৃন্ময়ের ভাবনার মাঝেই দরজায় টোকা দেয় কেউ। মৃন্ময় বিরক্তি নিয়ে ফিরে তাকায়। দরজার কোণ ঘেঁষে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে সোহেল। সোহেলের দিকে স্থিরদৃষ্টি রেখেই স্বাভাবিক গলায় জিগ্যেস করলো মৃন্ময়,
—” কিছু বলবে সোহেল?”
সোহেল ইতস্তত ভঙ্গিতে তাকালো। অস্বস্তিতে হাসফাস করতে করতে বিরবির করলো,
—” আসলে স্যার…মানে…”
সোহেলকে মাঝ পথে থামিয়ে দিয়েই বলে উঠলো মৃন্ময়,
—” পরশো তোমার বিয়ে?”
সোহেল চমকে উঠলো। অবাক হয়ে বললো,
—” আপনি কিভাবে বুঝলেন স্যার?”
মৃন্ময় শান্ত কন্ঠে উত্তর দিলো,
—” তোমাকে দেখেই বুঝতে পারছি। চোখে লজ্জা,ঠোঁটে অস্বস্তি, গায়ে টকটকে শার্ট, নতুন হেয়ার স্টাইল, পারফিউমটাও বোধ হয় নতুন আর..”
এটুকু বলেই থামলো মৃন্ময়। ভ্রু দুটে মুহূর্তেই কুঁচকে এলো তার। মৃন্ময় সবসময়ই স্বল্পভাষী অথচ আজ অযথাই কথা বাড়াচ্ছে সে। নিজের অদ্ভুত আচরণে নিজেই বিরক্ত হয়ে পড়লো মৃন্ময়। চোখটা সেকেন্ডের জন্য বন্ধ করে চোখ খুলতে গিয়ে বুঝতে পারলো মাথাটা ঝিমঝিম করছে তার। জ্বরটা কি তবে বাড়লো? চিন্তিত ভঙ্গিতেই আবারও সোহেলের দিকে তাকালো সে। মুখে হাসি টেনে নিয়ে বললো,
—” ছুটি চাও?”
সোহেল লাজুক হেসে বললো,
—” জি স্যার। সেই সাথে আপনাকে দাওয়াত দিতে চাই স্যার। গরিবের বিয়েতে আপনার যাওয়া সাজে না তবুও বললাম।”
মৃন্ময় হেসে বললো,
—” নিজেকে ছোট করে দেখছো কেন সোহেল? আমি অবশ্যই যেতাম কিন্তু তুমি তো জানো এসব পাব্লিক ফাংশনগুলো কখনোই এটেন্ড করি না আমি। এনিওয়ে,ক’দিনের ছুটি লাগবে তোমার?”
—” চার দিনের ছুটি হলেই চলবে স্যার।”
মৃন্ময় বিছানায় ঠেস দিয়ে বসলো। মৃদু গলায় বললো,
—” এক সপ্তাহের ছুটি দেওয়া হলো তোমায়। আর তোমার সেলারিটাও তুলে নিও সাথে পাঁচ হাজার টাকা বোনাস।”
সোহেল অবাক হয়ে বললো,
—” একসপ্তাহ আগেই তো বেতন তুললাম স্যার।আর বোনাস কেন? এখন তো কোনো অকেশনও নেই।”
মৃন্ময় হেসে বললো,
—” আবারও তুলো। আমায় এতো এতো হেল্প করছো, পরিশ্রম করছো তারজন্য বোনাসটা তোমার পাওনা। তাছাড়া,ভালোবাসার মানুষকে কাছে পাওয়াটাই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অকেশন। যাও!”
সোহেল আবেগাপ্লুত হয়ে ভেজা কন্ঠে বললো,
—” আপনি খুব ভালো স্যার। খুব।”
মৃন্ময় জবাব দিলো না। চোখ বন্ধ করে বসে রইলো। ছোট বেলায় জ্বর হলে চোখ দেখেই চট করে বুঝে যেতেন মা। মৃন্ময় অবাক হয়ে প্রশ্ন করতো, না ছুঁয়ে কি করে বুঝলে আম্মু? তার মা হাসতো। ছেলের মাথার চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে বলতেন, যাকে প্রচন্ডরকম ভালোবাসা যায় তাকে না ছুঁয়েও অনুভব করা যায় মৃমু্। আচ্ছা? রোজাও কি চোখ দেখেই জ্বর বুঝে যাবে? মৃন্ময়ের অদ্ভুত সব ইচ্ছে জাগতে লাগলো। এই মাঝরাতে হুট করেই রোজার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ার ইচ্ছে জাগতে লাগলো। রোজা আসলেই বুঝতে পারবে কি না তা জানার জন্য কৌতূহলে দম বন্ধ হয়ে আসতে লাগলো। নিজের এমন অস্থিরতায় নিজেই হেসে ফেললো মৃন্ময়। জ্বর আর আবেগ দু’য়ে মিলে ধরাশায়ী করতে চাইছে তাকে। আজ রাতে বোধহয় ঘুমটা আর হবে না তার। না হোক, থেমে যাক রাত। এই পৃথিবীতে দিন-রাতের কি প্রয়োজন? কোনো প্রয়োজন নেই। সব থেমে যাক। থেমে যাক রোজাও….তারসাথে মৃন্ময়ের হাজারও অনুভূতিগুলোও!
# চলবে

#part_47
https://m.facebook.com/groups/459470204903112/permalink/943516836498444/

#part_45
https://m.facebook.com/groups/459470204903112/permalink/943516303165164/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here