#শখের_সাদা_শাড়িপর্ব১৯

0
189

#শখের_সাদা_শাড়িপর্ব১৯
১৯.
অনুজের কথা টা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেছেন মাহফুজ সাহেব সহ সকলে। সৌমেন এর সাথে ওর পি এ মাইশার যে দীর্ঘদিনের প্রণয়। মাইশার ব্যক্তিগত জীবনের জন্যই এই কথা টা সকলের অগোচরে ছিলো। এসব কথা শুধু মাত্র অনুজ ই জানে। স‍ৌমেন কোনো কথাই পেটে রাখতে পারে না। অনুজ কে বলা চাই ই চাই। অনুজ তার ওয়াইফ কে বলে কিছু ছবি পাঠাতে। যেখানে সৌমেন আর মাইশা খুব ঘনিষ্ঠ ভাবে। ছবি গুলো দেখে মাহফুজ সাহেব তেমন কিছু বুঝেন না। তবে অনুজ গত এক সপ্তাহে অনেক কিছু বুঝে নিয়েছে। মাইশা যে লাপাত্তা হয়ে গেছে সেটা সকলের ই জানা। তবে বিষয় টা ঘাটায় নি কেউ। অনুজ প্রথমে সমস্ত সি সি টিভি ফুটেজ চেইক করেছে। ওর সন্দেহ টাই ঠিক ঠেকে। কোনো ফুটেজ ছিলো না। মাইশা কায়দা করে সরিয়ে ফেলেছে সব। অনুজ তারপর ই খোঁজ করেছিল অফিসের আর কেউ লাপাত্তা কি না তখন জানতে পারে কল্লোল নাকি কিছু দিন যাবত টানা আসছে না অফিসে। সন্দেহ জাগে খুব। সমস্ত ফাইল ঘেটে তথ্য গুলো চেইক করে অনুজ। ফলাফল দেখায় শূন্য। কারণ এখানে মাইশা আর কল্লোল এর সব ডিটেলস ভুয়া। মাইশা বলেছিল সে এতিম। সেই জন্যেই বোধহয় কোনো কিছু চেইক করে নি সৌমেন। আর কল্লোল এর ডিটেলস চেইক করেছে মাইশা। সেই জন্য ধরা পরার ও চান্স নেই। খুব সুন্দর করে গেইম খেলেছে এরা। তবে এদের উপর মহল টা খুব প্রভাবশালী বোঝা যায়। ধরা মুশকিল। অনুজ শেষ চেষ্টা করে একবার। সৌমেন বুদ্ধিমান ছিলো। সব সি সি টিভি ফুটেজ এর বাহিরে ও গোপন কিছু ছোট ক্যামেরা লাগানো থাকতো। অনুজ মনে মনে প্রার্থনা করে যাতে করে এই বিষয় টা মাইশার না জানা থাকে। বই এর ভেতর থেকে ক্যামেরা বের করে অনুজ। ল্যাপটপ এ পেনড্রাইভ লাগিয়ে চেইক করে। সবাই এখন নীরব দৃষ্টি তে। সমীর এর অসুস্থ হওয়ার দিনের ফুটেজ দেখে অনুজ। স্পষ্ট দেখা গেল মাইশা কে। মাইশা সি সি টিভি এর কাছে এসে ফিক করে হাসলো। আর তারপর পর ই বলল
” কি প্রয়োজন বল তো তোর? এই যে তোকে টাকা দিয়ে লাগিয়ে রেখেছে। তুই তো কোনো কাজেই এলিই না। তোকে তো আমি অফ করেই রোজ কাজ করি তাই না। ”

মাইশা এবার হাসতে হাসতে স‍ৌমেন এর লাঞ্চ এ একটা তরল মিশালো। তারপর বাটি টা উপরে তুলে বলল
” প্রিয় সৌমেন। আজকের খেলা টা খুব মজার হবে। ”

খাবার রেখে মাইশা ফিচেল হাসলো। তারপর লকার গুলো থেকে কিছু ফাইল আর নগদ টাকা বের করে নিয়ে বেরিয়ে পরলো। ধীরে ধীরে আগের ফুটেজ গুলো ও দেখলো সবাই। কিছু অপ্রত্যাশিত দৃশ্য সামনে এলো। সৌমেন এর অগোচরে মাইশা আর কল্লোল কেবিনে এসে নোংরা সব কান্ড করতো। এখানে বুঝাই যায় এদের মাঝে সম্পর্ক রয়েছে। উর্মির চোখে ভাসে রিসোর্ট এ মাইশা আর কল্লোল কে চুম্বনে লিপ্ত হতে দেখেছে। তারপর সেদিন সৌমেন ও ফিরে এসেছিল। উর্মি বুঝতে পারে মাইশা আর সৌমেন এর এক সাথে যাওয়ার কথা ছিলো। তবে মাইশা মাঝে ফ্যাসাদ করে বসে। সেই কারনেই কষ্ট পেয়ে ফিরে আসে সৌমেন। উর্মির এখন নিজের চুল নিজে ছিড়তে ইচ্ছে হয়। কেন সে এসব আগে বুঝতে পারলো না। কোনো মতে যদি স‍ৌমেন কে বলা যেতো মাইশার কথা টা। তাহলে সৌমেন এর এই অবস্থা হতো না। উর্মি কেবল ভাবে আর ভাবে। ওর ভাবনার শেষ নেই আজ।

দীর্ঘ সময় নীরব থেকে সমীর বলল
” সত্যি বলতে মাইশার সাথে আমার তেমন যোগযোগ ছিলো না। কেন যেন ভালো লাগে নি ওকে। অনেক গুলো মাস সৌমেন ভাই এর সাথে কাজ করছি অথচ অচিরে ও বুঝি নি এই মাইশা একজন আততায়ী। সৌমেন ভাই এর জন্য খারাপ লাগছে। ”

” হুম সেটাই। আমি ও খুব একটা শান্তি পাচ্ছি না। স্যার এর অবস্থা দেখলেই গলা ধরে আসে। ”

” তবে উর্মি এটা আমি মানতে পারছি না সৌমেন ভাই এর মতো বিচক্ষণ মানুষ কে ঐ দু পয়সার মাইশা গোল খাইয়ে দিলো। এটা আমার মাথায় ক্যাচ করছে না। ”

” ভালোবাসায় অন্ধ হয়েছিলেন সৌমেন স্যার। হয়তো এটাই ছিলো ভাগ্য। ”

” সেই। ভাগ্যের বেশি কে দিবে। এখন বলো তো বাবুর কি নাম রাখলে। ”

” বাবুর নাম তো রাখা হয় নি এখনো। ”

” একটা কথা রাখবে? ”

” হ্যাঁ বলো না। ”

” বাবুর নাম আমি রাখবো প্লিজ। ”

হেসে ফেললো উর্মি। বেডের সাথে উবু হয়ে শুয়ে বলল
” এই কথায় আবার অনুমতি চাচ্ছো? ”

” উহু। আপু কে বলার জন্য বলেছি। আপু যদি পারমিশন দেয় তবেই নাম রাখবো। ”

” আপু দিবে পারমিশন। এতো ভেবো না তো। ”

” হুম। খেয়েছো? ”

” না। খাবো খাবো বলে খাওয়াই হলো না।”

” কি কথা উর্মি! এখন রাত এগারো টা বাজে। এখনি যাবে। ”

” না পরে। এখন আমি তোমার সাথে গল্প করবো। ”

উর্মির কন্ঠে দুষ্টুমি। হাসে সমীর। পরক্ষণেই বলে
” হচ্ছে না মিস। এখন আপনি খেয়ে দেয়ে ঘুম দিবেন। শরীর এর প্রতি যে যত্ন। ”

” কথা বলবো আমি। ”

” লক্ষী মেয়ে। এখন খেয়ে ঘুমাও প্লিজ। কাল কে তো আপা আর বাবু কে নিয়ে ক্লিনিকে যাবে। ”

” ও হ্যাঁ তাই তো। একদম ই খেয়াল ছিল না। আসলে সৌমেন স্যার এর ঘটনা টা এতো টাই আবেগী করে তুলেছিল যে ”

” হয়েছে মিস। এখন আপনি প্লিজ খাবার শেষ করেন। না হলে কিন্তু খুব বকা খেতে হবে। ”

হাসলো উর্মি। কল কাঁটার পূর্বে শব্দ করে চুমু খেল মেয়েটি। আর তারপর ই টুট টুট শব্দ শোনা গেল। সমীর নিশ্চল দেহ টা কে বেডে এলিয়ে দেয়। এদিকের ঝামেলা টা যেন ওকে চেঁপে ধরেছে। কিছু তেই কুল কিনারা পাচ্ছে না।

প্রবীণ এর সাথে কথা বলছিল উর্মি। কেস নিয়ে ছেলেটা নানা ভাবে সাহায্য করে যাচ্ছে। উর্মি প্রথম দিকে হতাশ হয়েছিল। তার ই সাথে নিজের ভুলের জন্য নিজেকে দোষারোপ করছিল। তবে প্রবীণ জানায় তুলি আর নয়ন এর ঘনিষ্ঠতার প্রমানে তেমন কিছুই প্রুভ করা যেতো না। এতে অবশ্য উর্মির মন খারাপ কমে নি। সে যে ভুল করেছে এটাই সত্য। নয়ন আর তুলি সেদিন খুব রেগে গিয়েছিল তার ই সাথে থ্রেট করেছে। এসবে হয়তো যায় আসে না উর্মির। তবু ও আপা আর বাচ্চা টি কে নিয়ে ভয় পায় সে। পাশের টেবিলে মেঘনা আর বাবু কে দেখে বুক ভারী হয়। অশান্ত হয়ে উঠে উর্মির নারী সুলভ মন। মাতৃত্ব জাগে অন্তকর্নে। বাচ্চা টি কে কোলে তুলে নেয়। তুলতুলে নরম ছানা টির দিকে এক রাশ মায়া নিয়ে চেয়ে থাকে। এক পর্যায়ে অশ্রু সিক্ত নয়নে বলে
” পৃথিবী উল্টে গেলে ও তোর ক্ষতি হতে দিবো না বাবু। তোকে আমি সবার থেকে আড়ালে রাখবো। ”

মেঘনার চোখ থেকে দু ফোঁটা অশ্রু নেমে পরে। উর্মির হাত চেপে ধরে বলে
” আমার সাথে আমার মেয়ের ও মা হয়ে উঠেছিস বোন। তোর ঋণ কি করে শোধ করবো বল? ”

” আপা! এমন কথা বলে আমাকে ঋণী করিস না প্লিজ। আমি ওর মা না হলে ও মায়ের চেয়ে কম কি। ”

দু বোনের মাঝে মৌন ঝরে। কেউ উত্তর করতে পারে না। প্রবীণ সব দেখে ভাবে এদের কে সর্বোচ্চ সাহায্য করবে।

চোখ মুছে উর্মি। প্রবীণ এর নিকটে এসে বলে ” স্যরি। আমরা আসলে হুটহাট আবেগে জড়িয়ে যাই। ”

সামান্য হাসে প্রবীণ। হাটতে হাটতে উত্তর করে
” আবেগ ছাড়া মানুষ আছে? আর এটা তো গর্বের কথা। তোমরা দুই বোন হচ্ছো শক্তি। রুখে দাঁড়িয়েছো অন্যায়ের বিরুদ্ধে। সেটার জয় পরাজয় পরের কথা তবে তোমরা নারী হিসেবে জয়ী। ”

শ্রদ্ধায় ছেয়ে গেল উর্মির হৃদয়। আপা বাচ্চা টি কে নিয়ে আবার বসে পরেছে। বাচ্চার দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে আছে যেন কলিজা খুলে চোখ বুলায়। উর্মি মনে মনে স্থির হয়। তার আপার বাচ্চা কে সব থেকে বেশি ভালোবাসা দিয়ে বড় করবে। ভাবনার অতলে যখন বুদ উর্মি তখন চট জলদি প্রবীণ বলল
” আমি তাহলে যাচ্ছি আজ। তোমরা দেখে শুনে বাসায় যেও। ”

” আচ্ছা। সমীর ফোন করলে জানাবেন আমি বাবু কে নিয়ে চেকাপ করাতে যাচ্ছি। ”

” হুম। নিজেদের খেয়াল রেখো। ”

মাথা ঝুঁকিয়ে সম্মতি জানায় উর্মি। প্রবীণ এর চোখে কিছু একটা লক্ষ্য করেছে সে। এতো টা স্বচ্ছ ছিলো চোখের মনি যা ওকে ভেতর থেকে সম্মান জাগাতে বাধ্য করে। সমীর এর সাথে নিয়মিত কথা বলার সুযোগ হয় না আজকাল। কাজের প্রেসার কম দেখালে ও মূলত কাজ বেড়েছে বহু গুন। যা পুরোপুরি জুড়ে বসেছে উর্মির ঘাড়ে। না জানি সৌমেন স্যার কি করে সামাল দিতেন।

চলবে…….
কলমে ~ ফাতেমা তুজ

পর্ব ২০
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=161869233040646&id=100076527090739

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here