#শখের_সাদা_শাড়ি পর্ব৭
৭.
অফিস থেকে ফিরতেই বাড়ির নিচ থেকে চেচামেচি শুনতে পায় উর্মি। এক মন ভয় নিয়ে ছুটে যায় ভেতরে। পাশের বাসার সুলেখা ফুপু ও তার ভাতিজা কে দেখে বুকে চিনচিন ব্যথা হয়। বড় ভাবি জোৎস্না সমান তালে চেচামেচি করছে। বাড়ির পেছন দিকের এক কোনে ভোতা মুখে দাড়িয়ে আছে মেঘনা। এক হাতে অন্তু কে জড়িয়ে রাখা। যা বোঝার বুঝে গেল উর্মি। এই ভয় টাই পেয়েছিল সে। তুলি কে আশ পাশে দেখা যাচ্ছে না। এর মানে সে ও এসব কান্ডের সাথে বেশ ভালোই জড়িত। উর্মি এগোয়। কেউ ওকে পাত্তা দেয় না। সুলেখা ফুপু নিজের ভারী শরীর টা নিয়ে একে বারে মুখের ফেনা তুলে ফেলেছেন। যেসব অকথ্য ভাষা ব্যবহার করলো তার মধ্যে সব থেকে খারাপ লাগে দুটি বিষয়ে। এক ফকিরের ছেলে মেয়ে আর দুই মেঘনার বাপের বাড়ি আসার অন্ন ধ্বংস। প্রতিবাদ করে উর্মি–
” মুখ সামলে কথা বলবেন ফুপু। আমরা মধ্যবিত্ত ঠিক তাই বলে ফকির না।কখনো আপনাদের বাসায় গিয়েছি দু মুঠো ভাত এর জন্য। ”
” চোরের মায়ের বড় গলা। ”
” আপনার বাসায় চুরি করেছি আমরা? চোর বলেন কোন সাহসে। বড়লোক হলেই মানুষ হওয়া যায় না। ”
সুলেখা একটু নিশ্চুপ। তখনি ভীরু বলল
” বেয়াদবি করবি না উর্মি। ”
” বেয়াদবি কোথায় করছি ভীরু ভাই। আপনিই বলেন আপনার ফুপু যে বললো আমরা ফকির চোর,সে কোন হিসেবে বলে। ”
” তোর ভাতিজা কি করছে জানোস? ”
” কি করছে অন্তু? ”
” আমার মেয়ের সাথে লাইন মারার চেষ্টা করছে। ”
উর্মি একটু চুপ হয়ে অন্তুর পানে তাকায়। সত্যতা অন্তুর নিকট। বড় ভাবি মাঝ থেকে বলে উঠে–
” আমার পোলা লাইন মারার চেষ্টা করছে তো ভালো করছে। আরও করবো। নিজে মেয়ে সামলান আগে। ”
” ভাবি মুখ সামলান। আমার মেয়ে এখানে কি করছে। আপনার ঐ টুকু লেংটা ছেলে আমার মেয়ের পেছনে ঘুরে। জিজ্ঞাসা করে দেখেন। ”
” আর আপনার মেয়ে সাধু? সে বুঝি আমার ছেলের সঙ্গ দেয় না? ”
” আমার মেয়ে সঙ্গ কেন দিবে। আপনার ছেলেই তো পিছু পিছু আসে। এই টুকু ছেলে নাক টিপলে দুধ বের হয় সেই ছেলে টাকার পেছনে দৌড়ায়। ভালোই তো শিক্ষা দিছেন। ”
জোৎস্না আরও ক্ষেপে যায়। দুজনের মুখোমুখি তর্ক চলতেই থাকে। উর্মি অন্তুর কাছে এসে দাড়ায়। মাথা নিচু করে আছে দেখে রাগ হয়। ইচ্ছে হচ্ছে চট করে দুটো বসিয়ে দিতে টকটকে গালে। টেনে নিয়ে যায় উর্মি। মেঘনা পেছন পেছন ছুটে।
” কিছু বলিস না বোন। বাচ্চা মানুষ। ”
” দেখছি আপা। তুই যা রেস্ট নে। ”
অসহায় এর মতো তাকিয়ে থাকে অন্তু। আর তারপর ই উর্মির ক্ষোভ এর মুখেয় পরতে হয়। গালে হাত দিয়ে কান্না করে ছেলেটা। উর্মির চোখ লাল।
ভীরু আর বড় ভাবির সাথে টক্কাটক্কি লড়াই চলে। আর আশ পাশের মানুষ মজা নিচ্ছে ফ্রি তে। রেগে আগুন হয়ে আছে উর্মি। সামনে গিয়ে বলে–
” আমার ভাতিজার দোষ দেওয়ার আগে নিজের মেয়ের দোষ টা দেখেন। আমি বলবো না আমার ভাতিজা সাধু। তবে দোষ একার না। ”
” আমার মেয়ের কোনো দোষ নাই। ”
” সেটার প্রমান এক্ষুনি দিচ্ছি। ”
নিজেদের বাড়ির বাগানে বসে কাঁদছে পিংকি। পাশেই ওর মা বসে আছে। তিনি অন্তু কে গাল মন্দ করছেন। তুলি বেশ ভালো করে কান পরা দিয়েছে। উর্মি কে দেখে একটু ভরকে যায় পিংকি। অন্তু বলেছে তার ফুপি খুব রাগি। মেয়েটা কে টেনে বের করে নিয়ে আসে। পেছনে ছুটে আসে পিংকির মা। ভীরু চেচাচ্ছে। তার মেয়ে কে কেন নিয়ে আসা হলো। উর্মি হাঁটু গেড়ে পিংকির কাছে বসে।
” আম্মু প্লিজ সত্যি কথা বলবে তুমি। অন্তু তো তোমার বন্ধু তাই না? ”
” পিংকি কিছু বলবো না। ছাড় আমার মেয়ে রে। ”
” ভীরু ভাই ফাজলামি করবেন না। আমি এখনি প্রমান দিবো। আপনি আটকান কেন!”
কথা শেষ করে পিংকির মাথায় হাত বুলায়। সুলেখা ফুপু এক নিশ্বাসে গোষ্ঠী উদ্ধার করে। উর্মি নরম কন্ঠে বলল–
” পিংকি, বাবা তুমি যদি আজ মিথ্যা বলো তাহলে তোমার বন্ধু কে সবাই বকবে। দেখো পাপা এখনো গালমন্দ করছে। প্লিজ বাবা সত্যি টা বলবে। বলবে তো? ”
হিচকি তুলে মাথা নাড়ায় পিংকি। ততক্ষণে ছোট ভাবি ও হাজির। উর্মি এক পলক তাকিয়ে পিংকি কে বলল–
” বাবা কি হয়েছিলো। অন্তু তোমাকে ছাঁদে গিয়ে কি দিয়েছে? ”
” চকলেট দিয়েছে। ”
” অন্তু বলেছিল তোমায় আসতে? ”
” না। ”
” তাহলে, একটু ক্লিয়ার করে বলো তো। ”
সবাই টান টান উত্তেজনা নিয়ে শুনে। পিংকি বলে–
” অন্তুর সাথে আমি স্কুলে খেলতাম। খুব ভালো বন্ধু। আমিই বলেছিলাম আমায় যেন ছাঁদে এসে চকলেট দিয়ে যায়।কারন মাম্মা আমাকে চকলেট খেতে দেয় না। ডক্টর আঙ্কেল নিষেধ করেছে। ”
ব্যাস সমস্ত টা পরিষ্কার। মাঝে হয়তো অন্তু দু একবার দুষ্টুমি করেছে। তবে এর মাঝে পিংকি নিজে ও দোষী। সবাই থমথমে হয়ে যায়। ফটফট পায়ে চলে যায় উর্মি। যাওয়ার আগে পিংকির কপালে চুমু দিয়ে বলল–
” থ্যাংকস আম্মু। সত্য টা বলার জন্য। আশা করি আমার ভাতিজা কে একা দোষারোপ করা হবে না আর। আমি বলছি আপনাদের মেয়ে কে সামাল দিবেন। আমি অন্তু কে কি করার করে নিবো। ”
স্বীয় কক্ষে খাপটি মেরে বসে আছে উর্মি। রাত প্রায় এগারো টা। অফিস থেকে বিকেলে ফিরেছে আজ। মাঝে সৌমেন স্যার কাজ দিয়েছিল। সব টাই পানির মতো ভেসে গেল। দীর্ঘশ্বাস ফেলে। সৌমেন স্যার কে কল করে।
” আমি আসলে খুব দুঃখিত স্যার। ”
” কি হয়েছে উর্মি? ”
” কাজ টা করতে পারি নি। পারিবারিক সমস্যায় আটকে গিয়েছিলাম। ”
” আচ্ছা ঠিক আছে। এতো ভেবো না। বাট কালকের মধ্যে কিন্তু লাগবে। ”
” ওকে স্যার। ”
” আর শাড়ির কালেকশন গুলো সমীর এর থেকে জেনে নাও। ”
” আচ্ছা। ওনার মেইল আইডি নেই আমার কাছে। ”
” আমি সেন্ড করে দিচ্ছি। ”
” ওকে স্যার। ”
ফোন রেখে কিছুক্ষণ জানালা দিয়ে তাকিয়ে থাকে উর্মি। নোটিফিকেশন এর শব্দে ঘোর ভাঙে। মেইল আইডি টা চেইক করে সমীর কে একটা মেইল পাঠায়। ঝটপট কল আসে সমীর এর।
” হ্যাঁ উর্মি কেমন আছেন? ”
” ভালো আপনি ভালো আছেন? ”
” হ্যাঁ ভালো আছি। উর্মি শুনেন আপনি আমায় হোয়াটস অ্যাপ অথবা ফেসবুকে নক দেন। আমি সব কালেকশন বুঝিয়ে দিচ্ছি তারপর মেইল করে একটা চার্ট পাঠিয়ে দিবো। ”
” আচ্ছা। ”
উর্মি কথা মতো ফেসবুকে নক করে। মেঘনা ধীর চিত্তে উপস্থিত হয়। উর্মির পাশে বসে।
” ঘুমা আপা, আমার লেট হবে। ”
” খাবার টা খেয়ে নে বোন। ”
” ক্ষিদে নেই আপা। ”
” অন্তুর উপর রাগ করেছিস? ”
” আমার রাগ আদেশ নিষেধ কারো যায় আসে না রে। তাই আর ভাবছি না। ”
অন্তু দরজার কাছ থেকে চলে আসে। উর্মি তখন ফোনের স্ক্রিনে ব্যস্ত। কান্নার শব্দে তাকায়। অন্তু কে দেখে বুক ভারী হয়। সামান্য চেচিয়ে উঠে অন্তু। উর্মি নিজের কান্না সংবরণ করে।
” আমি আর কখনো পিংকির সাথে কথা বলবো না ফুপি। তুমি আমায় মাফ করে দাও। প্লিজ ফুপি, প্লিজ। ”
মেঘনা ছলছল চোখে। উর্মি ডুকরে উঠে। অন্তু কে বুকে জড়িয়ে বলে–
” একদিন অনেক টাকা হবে তোর। আর তখন ঐ মানুষ গুলো কে দেখিয়ে দিবি মধ্যবিত্ত রাও পারে। ”
টুলুটুলু চোখ নিয়ে শশী কে পড়াচ্ছে উর্মি। কাল সারা রাত কাজ করেছে। ফলস্বরূপ চোখ দুটো কোটরে চলে এসেছে। শশী একটু পর পর ই এটা সেটা বলছে তবে উর্মি উত্তর করতে পারছে না। মাথা ব্যথা করে। হালকা হাতে মাথায় মালিশ করে।
শশী বলে–
” সালমা আন্টি একটু চা দেও তো আপু কে। ”
” তুমি পড়ো শশী। ”
” অসুস্থ লাগে তোমায়। ”
” ঘুম হয় নি তাই। তুমি সলভ করো ম্যাথ টা। ”
” হুম। ”
চা দিলে চা পান করে উর্মি। তবু মাথা ব্যথা যায় না। শশী কে পড়িয়ে বের হয়ে আসে। হেটে যাচ্ছে। পা যেন আটকে আছে। পরে যেতে নিচ্ছিল। তবে একটা গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে বেঁচে যায়। আবার হাঁটা দেয় তখনি এক গাড়ি এসে থামে। সমীর কে দেখে হাসার চেষ্টা করে উর্মি বলে–
” হাই ”
” হেই কোথায় যাচ্ছেন? ”
” বাসায় যাচ্ছি। ”
” ও তাহলে চলেন আমি পৌছে দেই। ”
” না না ঠিক আছে। আমি যেতে পারবো। ”
” আরে আসেন তো। ”
মৃদু স্বরে হু বলে উঠে পরে উর্মি। শরীর টা সুস্থ থাকলে যেতো না। তবে আজ কে আর পারছে না।
তুলি ছাঁদে কাপড় মেলছিল। গাড়ির শব্দে নিচে তাকায়। উর্মি কে সমীর এর সাথে দেখে গোল করে ফেলে চোখ। উর্মি হেসে কথা বলছে। এক কাপ চা খাওয়ার অনুরোধ ও করলো। কাজের বাহনায় না করে দিলো সমীর। উর্মি বেশি ভনিতা না করে ঘরে চলে এলো। বড্ড মেজমেজ করছে শরীর টা।
চলবে….
কলমে ~ ফাতেমা তুজ
পর্ব ৮
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=153694487191454&id=100076527090739