#শখের_সাদা_শাড়ি পর্ব ৩
৩.
উর্মি বাড়ি ফিরলো রাত এগারো টায়। ছোট ভাবি তুলি চোখ দিয়ে যেন গিলে খাবে। এদিক থেকে অবশ্য বড় ভাবির কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। সে খাবার এনে রাখলো টেবিলে। যদি ও পেট ভরা তবু ও অল্প খেল। এর কারণ ও রয়েছে। একবার ভার্সিটিতে বান্ধবী জন্মদিনে লাঞ্চ ট্রিট দিয়েছিলো। সেই কথা যখন বাড়ি তে এসে বলল তখন দুই ভাবি মিলে বিষয় টা নিয়ে একে বারে মুখের ফেনা তুলে ফেলেছিলো। কারন সেদিন বাসায় রান্না হয়েছিলো আলু ডিম এর তরকারি। আর উর্মি খেয়ে এসেছে মুরগির লেগ পিছ। তুলি এসে বসলো পাশে। বোধহয় কিছু বলতে চায়। তবে মানুষ যখন চাকরিজীবি হয় রোজকার করে তখন কুটনৈতিক মানুষ গুলো ও বুঝে কথা বলে। এই দিক টা দুদিন ধরেই দেখছে উর্মি। তুলি বলল–
” তা এতো দেড়ি করলে কেন? ”
” ফরেন কান্ট্রির সাথে মিটিং ছিলো। তাই লেট হলো। ”
” ও ভালোই তো। বেতন কত তোমার? ”
” আঠারো হাজার। ”
ইচ্ছাকৃত ভাবে চার হাজার টাকা কম বললো উর্মি। সে জানে নিজের হাত খরচের টাকা টা নিয়ে ও একসময় কথা উঠবে। তুলি বেশ অবাক হয়েই বলল–
” আঠারো হাজার? ”
” হুম। ”
” ভালো তো। আজকাল চাকরির যা দাম বাবা। তোমার তো কপাল খুলে গেল। ”
কিছু বললো না উর্মি। তুলি নিজ থেকেই আপন মনে আরো কিছুক্ষণ ধরে উর্মির ভাগ্যের প্রশংসা করলো। তারপর নিজের দুঃখের কথা শুরু হলো।
” বুজলে উর্মি। তোমার ভাইয়ের বেতন পঁচিশ হাজার টাকা। মাসে দশ হাজার টাকা করে সংসার খরচ দেয়। তারপর আমাদের ব্যক্তিগত খরচ ও আছে।মাস শেষে সেভিংস হয় না এক টাকা ও। ”
তুলির কথার মানে বুঝে উর্মি। সে নিজের টাকা তেই পড়াশোনা করেছে এতোদিন। বাবা মারা যাওয়ার পর একটা টিউশনি বাড়িয়ে দিয়েছিলো। যেটা থেকে চার হাজার টাকা পেতো। আর সেই টাকা টা সংসারে তুলে দিতো। এখন তো আবার সাথে মেঘনা জুটেছে। তার খাওয়ার টাকার কথাই বলতে চাচ্ছে তুলি। ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানি নিয়ে এক ঢোক খেল উর্মি। তুলি আবারো এক কথা জুড়েছে। উর্মি ভনিতা না করে ছোট করে শ্বাস ফেলে বলল–
” আপার জন্য আমি আরো চার হাজার টাকা বাড়িয়ে দিবো ভাবি। এ মাস টা না হয় যাক। ”
” ছিই ছিই আমি তো সেসব বলি নি উর্মি। আমি শুধু বললাম তোমার ভাইয়ার কথা। বুঝোই তো। ”
” আমি বুঝতে পেরেছি ভাবি। অনেক রাত হয়েছে। ঘুমোও তুমি। ”
হাই তুলে তুলি। তারপর বলে–
” হ্যাঁ আমি যাই তবে। তুমি ও যাও। ”
মলিন হাসলো উর্মি। তুলি চলে যেতেই তাচ্ছিল্য নিয়ে তাকালো। উর্মি দুধের বাচ্চা না।সে বোঝে সব। বিয়ের আগে ছোট ভাইয়া যে ত্রিশ হাজার টাকা বেতনের জব করতো। আর বিয়ের পর পর ই সেটা ছেড়ে দিয়ে অন্য কোম্পানি তে জব নিলো। তুলির বুদ্ধি তেই বলেছিলো কোম্পানি নাকি এখন তাকে কাজে নিচ্ছে না। মন্দা যায় ব্যবসা। সেই কারনে জব ছাড়তে হয়েছে। অথচ উর্মি খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছে চল্লিশ হাজার টাকা বেতনের চাকরির জন্য আগের চাকরি ছেড়েছে ছোট ভাইয়া ।কষ্ট লাগে ওর। টাকা পয়সা সেভিংস করা টা কোনো দোষের না। তবে এভাবে হিংসে করা ও উচিত না। দীর্ঘশ্বাস নামায় উর্মি। তার বাইশ হাজার টাকার বেতনে এখন সবার চোখ পরেছে।
রাতে ঘুমানোর সময় মেঘনা বলল–
” তোর দুলাভাই কে একটা কল করি? ”
” প্রয়োজন কি আপা। সে তো সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছে তোমার জায়গা নেই এই বাড়িতে। ”
” তবু ও একবার চেষ্টা করে দেখি। ”
” আচ্ছা কর। ”
সটান থেকে অন্য দিক পাশ হয়ে শুয়ে রইলো উর্মি। মেঘনা প্রবল উত্তেজনায় কল করে যাচ্ছে। গলার স্বর কাঁপছে তার। রিং হচ্ছে তবে ধরছে না। উর্মি এবার মেঘনার দিকে ঘুরলো। মেঘনার চোখে জল।
” কাঁদিস না আপা। সব ঠিক হয়ে যাবে। সে তোকে মনে করে না তাকে তুই কেন মনে করিস। ”
” আমার সন্তান কাকে বাবা বলবে বল তো। ”
” চিন্তা করিস না আপা। দুলাভাই যদি ঠিক না হয় তবে তোকেই ওর বাবা মা হয়ে উঠতে হবে। ”
” আমি কি পারবো রে উর্মি? ”
” একশ বার পারবি। এখন ঘুমো তো। ”
মেঘনা কে জড়িয়ে ঘুমোয় উর্মি। মেয়েটার চোখে ঘুম নেই। তবু ভান ধরে আছে। সে চায় তার আপা একটু শান্তি তে থাকুক। এমনি তে ও বিয়ের পর থেকে শান্তি তে নেই। মানুষ তো!
পরদিন ভোর বেলা উঠেই টিউশনি তে ছুটলো উর্মি। এ মাস টা পড়াতেই হবে। না হলে খাবে কি? হাজার হোক মেঘনার পিছনে এখন টাকা খরচ করতেই হবে। বাচ্চা টা কেমন আছে সেটার জন্য চেকাপ করাতে ও হবে। এসব চিন্তা নিয়েই ছুটছে সে। হেটেই যায়। কি দরকার রিক্সা চড়ে একশ টাকা নষ্ট করার। তার থেকে ভালো একটু আগে রওনা দিয়ে হেটে যাওয়া। টাকা ও বাঁচলো স্বাস্থ্য ও ঠিক রইলো। পর পর তিনটে টিউশনি। দুটো শেষ করে এবার তিন নাম্বার টায় এলো। নয় তলা এক বিল্ডিং। অথচ লিফ্ট নেই। আশ্চর্য মানুষ এরা! চার তলা তে থাকে উর্মির স্টুডেন্ট। এবার নবম শ্রেনি তে পড়ছে। সিড়ি বেয়ে উঠে ঘেমে চুপচুপ। কলিং বেল চেপে দিয়ে উড়না তে ঘাম মুছলো।
” আসসালামু আলাইকুম আপা। ”
” ওয়ালাইকুম আসসালাম। সালমা আপা এক গ্লাস ঠান্ডা পানি দিবেন তো। আর ফ্যানের পাওয়ার টা ও বাড়িয়ে দিন। ”
” আইচ্ছা। ”
উড়না টা একটু সরিয়ে বসলো উর্মি। পানি দিলে পানি পান করলো এক নিশ্বাসে। এতো টাই বাজে অবস্থা। কিছুক্ষণ পর শশী এলো। চোখ দুটো লাল। এতোক্ষণ ঘুমোয় মেয়েটা!
” বসো শশী। তোমায় না বলেছি এতো ঘুমাবা না। ”
” ঘুমাই না তো আপু। আজ ভাইয়াদের সাথে আড্ডা দিয়ে আমি কাহিল। ”
ভাইয়াদের শব্দ টা একটু কেমন লাগলো ওর। উর্মির জানা মতে শশীর একটাই ভাই। নাম শৌখিন।
” আপু। ”
” হুম বলো। ”
একটু ভরকে উত্তর করে উর্মি। সব চিন্তা ফেলে শশীর হোম ওয়ার্ক দেখতে চায়। মেয়েটা একটু আমতা আমতা করছে।উর্মি বুঝে যায় এ মেয়ের ফাকিবাজি। তাই বাজ খাই কন্ঠে বলে–
” কেন করো নি। ”
” বললাম না ভাইয়াদের সাথে আড্ডা–”
” মিথ্যে বলার জায়গা পাও না হু? ”
” শশী সত্যিই বলছে। ”
পরিচিত কন্ঠ। ঘাড় বাকিয়ে তাকায় উর্মি। চোখের সামনে সমীর হাসছে। একটু অবাক হলো উর্মি তবে মুখে কিছুই বললো না। শশী লাল চোখে তাকালো। ওকে আশ্বস্ত করতে সমীর বলল–
” শশীর দোষ নেই। আমিই কাল জোর করে আমাদের আড্ডা তে বসিয়েছি। ”
” ও তাহলে ঠিক আছে। ”
” দেখলি তো তোর ম্যাডাম কিছুই বললো না। শুধুই টেনশন করছিলি। ”
” টেনশন হবে না। ”
” হয়েছে এবার পড়েন আপনি। ”
শশী খুশি মনে বই খুললো। উর্মি কে চিন্তিত দেখাচ্ছে। সম্ভবত শশীর সাথে সম্পর্ক টা মিলানোর চেষ্টা করছে। ভেতর থেকে শৌখিন এর ডাক এলো। আসছি বলে চলে গেল সমীর। মিনিট দশেক পর শৌখিন আর সমীর এলো। উর্মি সালাম জানাতেই শৌখিন বলল–
” কেমন আছো উর্মি? ”
” জী ভাইয়া ভালো আছি। এই অসময়ে কোথায় যাচ্ছেন। ”
” সামনেই। ”
” মেয়ে দেখতে। ”
মাঝে ফোরন কেটে বলে সমীর। গোল গোল করে তাকায় শৌখিন। উর্মি হা হয়ে রইলো। শশী বলল–
” তাই তো বলি ভাইয়ার জামাকাপড়ের প্রতি কোনো ইন্টারেস্ট নেই। সেই ভাই আজ নায়ক কেন সাজছে। ”
” একদম রে। এর জন্যই তো কাল আমায় টেনে হিচড়ে নিয়ে আসলো। ”
” হু হু বুঝলাম এবার। ”
শশী কে ধমক দিলো শৌখিন। সমীর মিটমিটে হাসছে। উর্মি যেন কিছুই বুঝলো না। ওরা চলে যেতেই বলল–
” তোমার ভাইয়ার সাথে কে ঐ টা? ”
” সমীর ভাই। জানো তো খুব ভালো কস্টিউম ডিজাইন করে। চোখ ধাঁধিয়ে যায়। ”
” ওহ। কেমন ভাই সে? ”
” ভাইয়ার কলেজ ফ্রেন্ড। ”
” আচ্ছা পড়ো। ম্যাথে কিন্তু খুব কাঁচা তুমি। সামনে এক্সাম ভুলে যেও না। ”
চলবে…….
কলমে ~ফাতেমা তুজ
পর্ব ৪
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=152742973953272&id=100076527090739