আমার_মুগ্ধতায়_তুমি #পর্বঃ১১,১২

0
583

#আমার_মুগ্ধতায়_তুমি
#পর্বঃ১১,১২
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
১১

*অর্শি দেখতে পেলো আয়াদের রুমের মধ্যে একটা মেয়ে। অর্শি এই দৃশ্যটা দেখে যেনো আকাশ থেকে পড়ল। “আয়াদ রাতের আঁধারে নিজের ঘরে মেয়ে নিয়ে আসে”! কথাটা মাথার মধ্যে ঘুরপাক খেতে লাগলো তার। কতটা নিচু হতে পারলে মানুষ রাতের গভীরে কোনো মেয়েকে একান্তে নিজের রুমে নিতে পারে? এই কথাটা বোঝার মতো বয়স অর্শির ঠিক হয়েছে। অর্শি ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে মেয়েটি আর আয়াদের দিকে। অর্শি ভাবছে “এই দৃশ্য যদি মা বাবা দেখতো তবে কি হতো? হয়তো বুক ফেটে মরেই যেতো। এতো ভালোবাসার সন্তান এতোটা নোংরা হয়ে গেছে সেটা যে কোনো মা বাবার জন্য ভিশন লজ্জাজনক”।

অর্শি আয়াদের এই নোংরামি সহ্য করতে পারলো না। জানালার পাশ থেকে সরে যায় সে। হাত পা কাঁপছে অর্শির। এসব কি দেখলো সে? আয়াদের সাথে তার সম্পর্ক ঝগড়ার মধ্যে সিমাবদ্ধ থাকলেও আয়াদকে কখনও সে নিচু চরিত্রের মানুষ মনে করেনি। কিন্তু আজ এই সব দেখার পর অর্শির চোখে আয়াদ একটা নষ্ট ছেলে ছাড়া অন্য কিছু নয়। অর্শি দাঁতে দাঁত চেপে নিজেকে একটু সামলে নেয়। নিজের রুমে ফিরে এসে অর্শি দরজা বন্ধ করে দিলো। বার বার অর্শির মনে পরছে আয়াদের সাথে ঐ মেয়েটির দৃশ্যটি। ভাবতেই লজ্জা করছে এতো ভদ্র ঘরের একটা ছেলে এতোটা নিচু মানসিকতার পোষন করে।

— মিস্টার আয়াদ আপনার ফাইল রেডি? আপনাকে কন্ট্রাক করা যাচ্ছে না বলে আমি নিজে এখানে চোরের মতো চলে এসেছি।

মিস ডায়না নিজের মুখের উপর থেকে চাদরটা সরিয়ে দিতেই আয়াদ চমকে উঠলো। এতো রাতে চোরের মতো আয়াদের রুমে আসার কি প্রয়োজন ছিলো মিস ডায়নার? আয়াদের মাথায় আসছে না কিছু। আয়াদ ডায়নার উদ্দেশ্যে কৌতুহল পূর্ণ দৃষ্টি নিয়ে বলতে লাগলো

— এতো‌ রাতে আপনি আমার রুমে কেনো? কেউ কি দেখেছে আপনাকে? প্লিজ! আপনি এখন এখান থেকে চলে যান।‌ কাল‌ আমি ফাইল নিয়ে আপনার সাথে মিট করবো। প্লিজ! কেউ যদি আপনাকে এতো রাতে আমার রুমে দেখতে পায় আমার মান সম্মান শেষ হয়ে যাবে।

ডায়না আয়াদের ভয়ে আতকে ওঠা চোখ জোড়া আর মুখে চলে আসা স্পষ্ট চিন্তার ছাপ দেখতে পেয়ে একটু হেসে উঠলো। ডায়নার হাসি দেখে আয়াদের চোখ জোড়া কৌতুহলী হয়ে উঠলো। “ডায়না হাসছে কেনো”? প্রশ্নটা মনের মধ্যে নাড়া দিচ্ছে আয়াদের। আয়াদ ডায়নার উদ্দেশ্যে কৌতুহলী কন্ঠে বলে উঠলো

— আপনি পাগলের মতো হাসছেন কেনো? কি হয়েছে?

— আরে না এমনি হাসছি। ছেলে হয়ে এতোটা ভয় পাচ্ছেন ঐ দিকে আমি মেয়ে হয়েও কোনো ভয় না পেয়ে এখানে চলে এসেছি। যাই হোক আমাকে কেউ দেখতে পায়নি।

— বাঁচালেন আমায়। এখন আপনি আসুন কল ফাইল দিয়ে দিবো।

আয়াদের কথটা মিস ডায়নার পছন্দ হলো‌ না। উনি একটু রেগে গিয়ে ভিশন কর্কশ গলায় আয়াদকে উদ্দেশ্য করে বলল

— উহু, আমার এখনি লাগবে ফাইলটা। কাল অনেক দেরি হয়ে যাবে।

— দেরি মানে? আমার যখন ইচ্ছা তখন দিবো। আর লিসেন ফার্দার আমার বাড়ি এমন হুট হাট করে চলে আসবেন না। এটা আমার পছন্দ না।

আয়াদের কথাটা শুনে বায়নার মাথা গরম হয়ে যায়। ফাইলটা আজই লাগবে তার। মিস ডায়না আয়াদের কথাটা শেষ হতেই আয়াদের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো। আয়াদ নিজেও রেগে আছে ডায়নার খামখেয়ালি কাজে। কিন্তু ডায়নার রাগটা আয়াদের রাগকে ছাড়িয়ে যায়। ডায়না রেগে গিয়ে আয়াদের শার্টের কলার চেপে ধরে আয়াদের বুকের উপর রিভালবারটা চেপে ধরে। রাগে গজগজ করতে করতে ডায়না আয়াদকে দাঁতে দাঁত চেপে ফিসফিসিয়ে বলতে লাগলো

— আমাদের একটা নিয়ম আছে। যাকে আমাদের প্রয়োজন পরে না। তাকে আমরা আর রাখি না। এখনি যদি ফাইলটা আমি না পাই তো ৬টা বুলেট তোর বুকটা এপার ওপার করে বেরিয়ে যাবে।

ডায়নার কথা শুনে আয়াদ থ মেরে যায়। এসব কি বলছে ডায়না? আয়াদ মাথা গরম না করে ঠান্ডা মাথায় ফাইলটা ডায়নার হাতে তুলে দিলো। ডায়না আয়াদের কলার ছেড়ে দিয়ে ফাইলটা চেক করে দ্রুত গতিতে রুম থেকে বেরিয়ে চলে যায়।‌ ডায়না চলে যেতেই আয়াদ সোফার উপর ধপাস করে বসে পরলো। আয়াদ তো মানুষের উপকার করার জন্য কাজ করে থাকে। তবে কি আয়াদ কোনো মাফিয়া চক্রের সাথে যুক্ত হয়ে গেছে? প্রশ্নটা আয়াদের মনকে বিষিয়ে তুলছে।

* সকাল হতেই অর্শির ঘুম ভেঙ্গে যায়। রাতে ঘুম তেমন একটা হয়নি। আয়াদের ব্যাপারটা মাথায় চেপে বসেছে তার। অর্শি বিছানা ছেড়ে ফ্রেশ হয়ে নিয়ে নাস্তা করতে চলে যায়। নাস্তার টেবিলে বাবা বসে আছেন। অর্শি বাবার পাশে দাঁড়াতেই আয়াদের বাবা অর্শিকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো

— অর্শি মা কি খবর তোর? আজ কাল বড্ড ব্যস্ত নাকি তুই?

বাবার কথার বিপরীতে অর্শি বেশ শান্ত গলায় জবাব দিলো

— কোথায় ব্যস্ত? আমি ফ্রি আছি বাবা।

— হুম তোকে তো দেখতে পাওয়াই যায় না‌। আচ্ছা বস নাস্তা করে নে আগে।

— হুম।

অর্শি বাবার পাশে বসে বাবার দিকে তাকালো। “সত্যি বাবার ভালোবাসা হয়তো তার ভাগ্যে ছিলো না। কিন্তু এই বাবাটা নিজের বাবার থেকে কোনো অংশে কম না”। অর্শি বাবার দিকে তাকিয়ে কথাটা ভাবছে হঠাৎ অর্শির ভাবনার মাঝে আয়াদ চলে এলো।

— আয়াদ কোথায় থাকিস আজ কাল? তোকে তো বছরের দুই ঈদের মতো দুবার দেখতে পাওয়া যায়।

বাবার কথায় অর্শির ঘোর কাটে। অর্শি আয়াদের দিকে তাকাতেই কেমন একটা লাগছে তার। ভিশন রকম ঘৃণা কাজ করছে আয়াদের বিপরীতে। এতোটা ঘৃণা হয়তো অর্শি লাইফে অন্য কাউকে কখনও করে‌নি। অর্শি আয়াদের দিকে থেকে মুখ সরিয়ে নিয়ে চুপচাপ খাবার খেতে লাগলো। আয়াদ চেয়ারে বসতে বসতে তার বাবা বলছে

— আমি বাসায়ই থাকি। তুমি কাজের চাপে বিজি থাকো বলে খোঁজ পাও না।

— হুম, ঠিক বলেছিস। বয়স হয়েছে‌ আর কত। রিটায়ের্ড এর ও সময় চলে এসেছে।

— হুম।

* আয়াদ খাবার খাচ্ছে আর আড় চোখে অর্শির দিকে তাকাচ্ছে। অর্শি মাথা নিচু করে খাবার খেয়ে খাবার শেষ করে টেবিল থেকে উঠে যায়। আয়াদ ও খাবার শেষ করে অর্শির সাথেই উঠে যায়। অর্শি রেডি হয়ে নিলো। ভার্সিটিতে যেতে হবে। আয়াদ বাইক নিয়ে বাড়ির নিচে অপেক্ষা করতে লাগলো। নির্দিষ্ট সময় পার হতেই অর্শি বাড়ির নিচে আসলো। আয়াদ বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অর্শি আয়াদের পাশ থেকে একটু এগিয়ে সামলে যেতেই আয়াদ অর্শিকে উদ্দেশ্য করে বলল

— আবার সেই নাটক শুরু হয়েছে! আমার বাইকে করে যেতে হবে বলে দিচ্ছি।

অর্শি আয়াদের কথার কোনো জবাব দিলো না। আরো একটু এগিয়ে যেতেই আয়াদ বাইক থেকে নেমে দৌড়ে অর্শির সামনে চলে যায়। অর্শি মাথা নিচু করে আয়াদকে উদ্দেশ্য করে মৃদু কন্ঠে বলল

— আয়াদ ভাইয়া আমার পা আছে আমি একা যেতে পারবো। আপনাকে কষ্ট করতে হবে না। প্লিজ! আমাকে আমার মতো থাকতে দিন।

আয়াদ অর্শির কথার বিপরীতে একটু বাঁকা হাসি দিলো। ঠোঁট বাঁকিয়ে বলতে লাগলো আয়াদ

— সরি আমি কাউকে একা থাকতে দেই না। আমার সাহায্য নিতেই হবে মানে নিতেই হবে।

কথাটা বলতে বলতে আয়াদ অর্শির হাত ধরলো। আয়াদ অর্শির হাত স্পর্শ করতেই অর্শি ভিশন রেগে যায়। রেগে গিয়ে অর্শি আয়াদকে চমকে দিয়ে আয়াদের হাত থেকে নিজের হাত এক টানে ছাড়িয়ে নিয়ে

— ঠাসসসস, ঠাসসসস। ঐ অপবিত্র, নোংরা হাতে আমাকে স্পর্শ করবেন না আপনি।

সজোরে কসিয়ে থাপ্পড়টা আয়াদের গালে পরতেই আয়াদ অবাক হয়ে গেলো। গালে হাত দিয়ে মাথাটা নিচু করে অর্শিকে উদ্দেশ্য করে বিক্ষিপ্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো আয়াদ

— অপবিত্র হাত মানে! কি করেছি আমি? সেটা বল।

— কি করেননি? রাতের গভীরে সকলের অগোচরে রুমের মধ্যে মেয়ে নিয়ে এসে সারা রাত ফুর্তি করে এমন একটা ভাব করছেন যেনো কিছুই করেন নি।

— মানে! কার সাথে ফুর্তি করলাম? কি সব বলছিস তুই? মাথা ঠিক আছে তোর?

— এই ওয়েট ওয়েট আমার সামনে নাটক না একদম। আমি সব জানি কাল রাতে আমি নিজের চোখে দেখেছি সব টা।

অর্শির কথা শুনে আয়াদ বুঝতে পারলো অর্শি কি বলছে। আয়াদ একটা মুচকি হাসি দিয়ে অর্শিকে উদ্দেশ্য করে বলল

— অর্শি সত্যি টা জেনে মানুষকে অপবিত্র বলিস প্লিজ! সবটা না জেনে একতরফা মন্তব্য করিস না প্লিজ!

— ওহহহ তাই। সত্যিটা হলো ঐ মেয়ে বিপদে পরে রাতে মুখ ঢেকে আপনার রুমে এসেছিলো। আপনি তাকে সাহায্য করতে মদের খাওয়ালেন। তারপর দুজন মিলে ইনজয় করলেন সারা রাত। তারপর ও মেয়ের বিপদ কেটে গেলো আর সে চলে গেলো। তাই তো?

— যেটা ভাবার ভাবতে পারিস? আর কিছু বলবো না আমি।

— চুপ একদম। আমি যা জানি তাতেই হবে। আর কিছু জানার নেই আমার। নেক্সট টাইম আমার পথ আটকালে খারাপ কিছু হবে বলে দিলাম। নোংরা মানুষ একটা।

কথাটা বলে অর্শি আয়াদের সামনে দিয়ে হনহন করে চলে গেলো। আয়াদের চোখের কোন থেকে দুফোটা নোনা জল গড়িয়ে পরলো। আয়াদ সত্যিটা না পারছে বলতে আর না পারছে আড়াল করতে।

* ভার্সিটিতে এসে আয়াদ ক্যাম্পাসে এসে মন মরা হয়ে বসে আছে। সব বন্ধুরা আড্ডা দিচ্ছে। আয়াদ একটা কোনে চুপটি করে বসে আছে। অর্শির বলা কথা গুলো মনকে আঘাত করেছে ভিশন। আয়াদ একটু নিজেকে শান্ত করে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। অর্শির ডিপার্মেন্টের সামনে দিয়ে নিজের ক্লাসে যাবার সময় আয়াদ অর্শিকে দেখার জন্য অর্শির ক্লাসে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। আয়াদ অর্শির ক্লাসে তাকাতেই থ মেরে দাঁড়িয়ে পরলো। এসব কি দেখছে আয়াদ? অর্শি হঠাৎ করে এসব কেনো করছে? আয়াদ দেখতে পেলো অর্শি………………………….

#চলবে…………………….

#আমার_মুগ্ধতায়_তুমি
#পর্বঃ১২
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
*আয়াদ দেখতে পেলো অর্শি একটা ছেলের সাথে হেসে হেসে খুব কাছা কাছি দাঁড়িয়ে কথা বলছে। দৃশ্যটা দেখার পর আয়াদের বুকের বাম পাশে চিন চিন ব্যথা অনুভব হলো। আয়াদ বুঝতে পারে না অর্শির পাশে অন্য কেউ থাকলে‌ তার‌ এই অদ্ভুত অনুভূতি কেনো হয়? আয়াদ একটু রেগে গিয়ে নিজের হাত জোড়া মুষ্টিবদ্ধ করে নিলো। ইচ্ছে করছে তার ছেলেটিকে গিয়ে রিহানের মতো সাজা দিতে। ওহহহ আপনাদের‌ তো বলাই হয় নি। সেই দিন হোটেলে রিহানের ওমন হাল ওয়াসরুমে পরে গিয়ে হয়নি। আয়াদ করেছে রিহানের ওমন হাল। যাই হোক আয়াদ ক্লাসের দরজার দিকে দাঁড়িয়ে আছে রাগি একটা লুক নিয়ে। আয়াদের উপস্থিতি আর্শি আড়চোখে পর্যবেক্ষণ করলো। আয়াদ কিছু সময় দাঁড়িয়ে থাকার পরে নিজের রাগকে আর কন্ট্রোল করতে পারলো না। হনহন করে অর্শির দিকে ছুটে চলে‌ যায় সে। অর্শির সামনে গিয়ে আয়াদ অর্শি আর ঐ ছেলের মাঝ বরাবর প্রবেশ করে দেয়ালে একটু হেল দিয়ে দাঁড়ায়। আয়াদের এমন হুট করে‌ চলে আসা ছেলেটির একটুও পছন্দ হয়নি‌‌।‌ ছেলেটি একটু রাগ ও কৌতুহল মিশ্রিত কন্ঠস্বর নিয়ে আয়াদকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো

— হ্যালো মিস্টার, কে আপনি? আর এমন হুট করে আমাদের মাঝে চলে এলেন‌ কেনো? আপনার তো দেখি বিন্দুমাত্র ম্যানার নেই!

ছেলেটির কথা শুনে আয়াদ এমন একটা ভাব করলো মনে হচ্ছে আয়াদ তার কোনো কথাই শুনতে পায়নি। আয়াদের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অর্শি। আয়াদকে নিশ্চুপ দেখে ছেলেটি একটু হাক ছেড়ে চেঁচিয়ে রাগি কন্ঠে আয়াদকে উদ্দেশ্য করে আবারও বলতে লাগলো

— এই হ্যালো, আমি আপনাকে বলছি। কথা কানে যায় না?

আয়াদ এই বার একটু বাঁকা হাসি দিয়ে‌ ছেলেটিকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো

— কথা কানে যাবে না তো কোথায় যাবে? কথা কানে আসছে কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না কথা গুলো কি আমায় বলছিস! নাকি অন্য কাউকে? যদি আমায় বলে থাকিস তবে উত্তর‌ দেয়া আমার কর্তব্য আমি কে? এটা জানে‌ না এমন লোক পুরো ভার্সিটিতে খুঁজলেও পাওয়া যাবে না। আমি আয়াদ। আর তোদের মাঝে আমি হুট করে চলে আসি নাই। বরং তুই আমাদের মাঝে ঢোকার চেষ্টা করছিস। আর বাকি রইল ভদ্রতা! সেটা আমার কোনো‌ কালেই ছিলো না। বাই দ্যা ওয়ে কাম টু দ্যা পয়েন্ট তোর তো ভদ্রতা জানা আছে তাই না। সো এখন ভদ্র‌তা বজায় রেখে এখান থেকে কেটে পর। নেক্সট টাইম অর্শির সাথে কথা বলা তো দূর ওর দিকে তাকাবিও না। আউট।

আয়াদের কথা শেষ হতেই ছেলেটি তাচ্ছিল্য পূর্ণ একটা হাসি দিয়ে আয়াদকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো

— যদি না যাই তা হলে কি হবে?

— উহু বেশি কিছু হবে না। যাস্ট তোর সাথে একটু অভদ্রদের মতো আচরন করবো। যা আমি খুব ভালো পারি।

আয়াদের কথা শেষ হতেই অর্শি হাতে তালি দিয়ে আয়াদকে বাহ! বাহ! জানাতে লাগলো। আয়াদ একটু অবাক হয়ে অর্শির দিকে দৃষ্টিপাত করতেই অর্শি বলতে লাগলো

— বাহ! আয়াদ সাহেব বাহ! মানে আমি কারো সাথে কথা বলতে পারবো না। আমার আপনার রেস্টিকশন মতো কাজ করতে হবে। আপনি নিজের মুখে নিজের পরিচয়টা বার বার দিচ্ছেন। বাহ! আমি সত্যি অবাক না হয়ে পারলাম না। আপনি যে একটা নিচু লোক এটা শুধু আমি না। আপনি নিজেও জানেন।

— হাহাহাহা! আমি বাজে হুম সেটা আর কিভাবে প্রমান করবো বল? আর শোন তুই সবার সাথে‌ কথা বলতে পারবি। সবার সাথে আড্ডা দিতে পারবি। এটা নিয়ে আমার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু, কিন্তু তোর সাথে কেউ কথা বলতে পারবে না। আর যদি কেউ তোর সাথে কথা বলার চেষ্টা করে তবে তার অবস্থা যে কি হবে তা আমি নিজেও জানি না।

আয়াদের কথা শুনে অর্শি ভিশন রেগে গেলো। এমন সাইকো টাইপের কথা শুনে যে কেউ রেগে যাবে এটা স্বাভাবিক। অর্শি রেগে দিয়ে আয়াদের টিশার্টের কলার চেপে ধরলো। আয়াদ একটুও অবাক হলো না অর্শির ব্যবহারে। বরং আয়াদ মুচকি হেসে অর্শিকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো

— তুই যখন রেগে যাস তখন আমার কেনো জানি ভিশন ভালো লাগে। আহহহ সো সুইট। একদম সুগার ফ্রি মিষ্টির মতো লাগে তোকে।

অর্শি আয়াদের কলার ছেড়ে দিয়ে তাচ্ছিল্য কর কন্ঠে আয়াদকে বলতে লাগলো

— তাই! এই কথা বলেই মনে হয় সবাইকে হাত করেন আপনি। রাইট?

— একদম রাইট।

অর্শি আর কিছু বললো না। আয়াদের সামনে থেকে দৌড়ে ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে যায় সে। আয়াদ নিশ্চুপ হয়ে অর্শির চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকলো।

* ভার্সিটি থেকে আয়াদের সাথে‌ রাগা রাগি করে অর্শি বাড়ি চলে এলো। বাড়ি এসে নিজের রুমে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পরলো সে। “কেনো জানি ভিশন খারাপ লাগছে নিজের কাছে নিজেকে। আয়াদ কি প্রমান করতে চায়? আমি তো ওর থেকে দূরে থাকতে চাই। ও কেনো গায়ে পরে কথা বলে আমার সাথে? আমি কারো সাথে কথা বললে ও কেনো বাঁধা দেয়? তবে কি আয়াদ ভাইয়া আমাকে পছন্দ করে? উহু ওনার মতো একটা নোংরা মানুষকে আমি পছন্দ করতে পারবো না। আর ওনার আসল রূপ আমি দেখে ফেলেছি। তারপর ও ওনার প্রতি দুর্বলতা থাকা আমায় শোভা দেয় না। কিন্তু যতই ওনাকে অপমান করি না কেনো ওনার পাশে কোনো মেয়েকে দেখলে আমার হিংসে হয় এটা কেনো? আচ্ছা সত্যি তো এমনটা কেনো‌ হয়‌ আমার? আমি তো নিজের ইচ্ছেতে এমনটা করি না। কেনো জানি ওনার পাশে কোনো নারীকে দেখলে আমার কষ্ট হয়, রাগ উঠে ভিশন”। অর্শি কথা গুলো আপন মনে ভাবতে লাগলো। এই অনুভূতির নাম আর যাই হোক কখনও ভালোবাসা বলা যাবে না। কারন ওনাকে আমি ভালোবাসি‌ না। অর্শি কাল রাতের কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরলো।

— হ্যালো আয়াদ, আপনি কোথায় আছেন? এই মুহূর্তে আমার আপনার সাথে দেখা করার খুব প্রয়োজন।

ফোন কলের ওপার থেকে এক নিঃশ্বাসে কথাটা গড়গড় করে বলে‌ যায় ডায়না। আয়াদ ভিশন বিরক্তি নিয়ে কলটা পিক করলো। আয়াদ ডায়নার উদ্দেশ্যে বলল

— কেনো কি প্রয়োজন? আমার হাতে সময় নেই। আমি আসতে পারবো না।

— ওকে আমি আসছি।

— আপনি আসবেন মানে? অসহ্য কোথায় আসতে হবে? বলুন।

ডায়না ফোন করে আয়াদকে একটা এড্রেস বলল। আয়াদ নিজের ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও সেখানকার উদ্দেশ্য বেরিয়ে যায়। আজ এই ডায়নাকে বলে দিবে আয়াদ। তার এই সমস্ত কাজে আয়াদ আর নেই। আয়াদের বুঝতে আর বাকি নেই যে এটা একটা সাইবার ক্রাইম গ্যাংগ। আয়াদ ডায়নার দেয়া এড্রেস মতো আসতেই একটা বিশাল কালো গাড়ি থেকে ডায়না নেমে এলো। আয়াদ ডায়নার দিকে তাকিয়ে একটু অবাক হয়ে যায়। যে মেয়ে জিন্স আর শার্ট পরতো আজ সে শাড়ি পরে এলো? ব্যাপারটা কি? আয়াদ ডায়নার থেকে চোখ সরিয়ে নিতেই ডায়না এসে আয়াদকে উদ্দেশ্য করে বলল

— সরি মিস্টার আয়াদ। ঐ দিন মাথা ঠিক ছিলো না আমার। প্লিজ আমায় ক্ষমা‌ করে দিন।

— ইট’স ওকে। কিন্তু আমি দুঃখিত আমি আর আপনার হয়ে কাজ করতে পারবো না। কারন আমি ভালোর সাথে কাজ করি‌ খারাপের সাথে নয়। আসছি খোদা হাফেজ।

কথাটা শেষ করতেই আয়াদ ডায়নার সামনে থেকে চলে যেতে নিলো। আয়াদ একটু এগিয়ে যেতেই ডায়না আয়াদকে উদ্দেশ্য করে চিৎকার করে বলতে লাগলো

— স্টপ আয়াদ। আপনি জানেন না আমি কি কি করতে পারি?

আয়াদ ডায়নার দিকে মুখ ঘুরিয়ে তাকিয়ে একটা তাচ্ছিল্যকর হাসি দিয়ে বলতে লাগলো

— আমি জানি আপনি কি করতে পারেন আর ভুলে যাবেন না আমি কি করতে পারি।

কথাটা শেষ করে আয়াদ একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে চলে এলো। কাউকে বেশি লাই দিতে নেই। পরে মাথায় উঠে নাচবে।

* আয়াদ ডায়নার সাথে কথা শেষ করে বাড়ি চলে এলো। বাড়ি এসে আয়াদ নিজের রুমে একটু ফ্রেশ হয়ে নিলো। সন্ধ্যার দিকে আয়াদ দেখতে পেলো বাড়িতে অনেক মানুষের আনাগোনা হচ্ছে। আয়াজ বিষয়টা একটু গভীরভাবে দেখতেই দেখতে পেলো অর্শিকে দেখা যাচ্ছে না। আয়াদ একটু কৌতূহলী হয়ে তার মাকে কিছু জিজ্ঞেস করার সাথে সাথে আয়াদকে চমকে দিলো তার মা। আয়াদ তার মা এর কথা শুনে একদম থ মেরে দাঁড়িয়ে যায়। আয়াদ তার মাকে…………………..

#চলবে…………………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here