তুমিময়_প্রেম🥀♥ #PART_07,08

0
452

#তুমিময়_প্রেম🥀♥
#PART_07,08
#FABIYAH_MOMO🍁
07

রাতে খাওয়া শেষে রুমে এসে বিছানা ঠিক করছি ছোট ভাই এসে আমার পিছু গিয়ে দাড়ালো। ওর উপস্থিতি টের পেয়েও আমি বিছানা বালিশ জায়গামতো রাখছি। ও বিনয়ী সুরে বলল,

–আপু আপু…কথা আছে!!

আমি ব্যাগ গুছাচ্ছি, কাল ক্যাম্পাস, আবার ওই ছেলের ভাতিজিকে পড়াতে যাবো কিনা ফাইনাল না। আমি দুটো টিউশনি করছি, আরো একটা ঘাড়ে নিলে পড়াশুনাতে সময় পাবো কিনা খোদা জানে। ছোট ভাই আবার স্বরের নম্রতা নিচু টেনে এখন সে অনুনয় সুরে বলল,

–এই আপু শুনো না…আমার কথা কেউ শুনে না…আব্বু শুনে না…আম্মু বকে,

সব রেডি করে চুলে দুই বেনি করছি, আয়নায় ওর দিকে মুখ ফুলানো কুটুস চেহেরা আড়চোখে দেখে চলছি। আমি গম্ভীর করে বললাম,

–তোর কথা বল, তারপর রুম থেকে ফোট! আমি ঘুমাবো!
–আপু? আমার ব্যাট লাগবে, সাদির বাসায় ব্যাট আছে…আমার নেই,
–তোর ব্যাট লাগবে আব্বু শুনছে?
–আব্বু বলছে বেতন দিলে কিনে দিবে….বেতন দিতে দেরি আছে…আমার ব্যাট চাই! চাই! চাই! আমার ওই ব্যাট চাই! আমার ব্যাট চাই!

“ব্যাট” নিয়ে ও জেদ চেপে বসলো ওর ব্যাট চাই। আব্বু ওকে ব্যাট কিনে দিবে। উনার স্যালারি দিলেই ব্যাটটা হাতের মুঠোয় এনে দিবে। কিন্তু এই বান্দা বড় নাছোড়বান্দা! আব্বুকে খাপছাড়া বানিয়ে জ্বালাতন না করে শান্তি দিবে না। আম্মু তো চোখ ঘুরালেই চুপ! ফের আম্মু না থাকলে হুল্লোড়! ওকে কোনোরকম সান্ত্বনার বার্তা বুঝিয়ে ঘুমাতে যেতে বললাম। আমি রুমের লাইট অফ করে ঘুমিয়ে পড়লাম। দুঃখিত!…ঘুম নেই আমার। অন্ধকারে আমার সাথে সাথেই শান্তির ঘুম আসেনা। আমার মাথায় প্রচুর চিন্তা। বস্তাভর্তি চিন্তা গাদাগাদা করে থাকে। বই কিনার টাকায় শর্ট, আব্বুর নতুন ফোন কিনে দেয়াতে আমার জমা টাকায় ব্যাঘাত, হাত-খরচা নেই, ক্যাম্পাসে টাকা বাচিয়ে যেতে হবে, রিকশা ভাড়া রোজ রোজ ইসরাত দিলেও কটু দেখাবে, পার্স ব্যাগ বলতে গেলে খালি। এত কিছুর পরেও ঘুম থাকবে? জানি না অন্য মানুষের ঘুম থাকে কিনা আমার চোখে ঘুমের ছিটেফোঁটা থাকেনা। টিউশনি করেও যদি টাকার হিসাব মিলাতে না পারি তখন বুক ফেটে কান্না চলে আসে…আমি দেখাতে পারিনা। মনের মধ্যে না চাইতেই তখন অভিযোগ চলে আসে, “আমরা বড়লোক হলাম না কেন?” কান্না ছাড়া আর কোনো জবাব আসেনা আমার….
.
.

সকাল আটটা। কালো কুর্তি পড়ে নিলাম। চুলে বামপাশ করে বেনি। ছোট চুলগুলো এলোথেলো হয়ে ডানপাশে এসে কাধ ছোয়াচ্ছে। ক্লিপ দিয়ে ছোট চুলগুলো কোনোরকমে আটকে নিলাম। মুখশ্রীতে বিশেষ কিছু মাখার ইচ্ছা নেই, হালকা পাউডার হাতে নিয়ে মুখে মিশিয়ে নিলাম। ব্যাগটা নিয়ে জুতা পড়তেই আম্মুকে জোর গলায় বললাম,

— আম্মু আসি। নতুন ছাত্রী পড়িয়ে দেরিতে আসবো। চিন্তা করো না। ব্যাগে মরিচের থেরাপি নিয়েছি। আসি…আসি!!

রান্নাঘর থেকে ওড়নায় হাত মুছতে মুছতে আম্মু কিছু বলবেন, তার আগেই বাইরে ছুট। দেরি হলে ঢাকাগামী বাস ধরতে পারবো না। বাস লেট করলে রিকশার জ্যামে আটকাবো। এরপর ক্যাম্পাসে লেট! লেকচার মিস! বাসার গলি পার করে রাস্তায় উঠে ফুটপাত অংশে দ্রুতগতিতে হাটছি। লেট করা চলবে না। ইসরাতের জ্বর এসেছে, ক্যাম্পাস আসবে না। একা ট্রাভেল করতে হবে। নিজের কেয়ার রাখতে হবে। হঠাৎ কেউ পূর্বের মতো ডাকলো,

–“এই দাড়াও দাড়াও…..দাড়াও প্লিজ…ওয়েট!!”

আমি এদিকে তাড়াহুড়ো করছি, উল্টো আমাকে কেউ পিছন থেকে ডাকছে। আমি থামলাম। দেখি তন্ময়! এই ফালতু কেন বারবার পিছন থেকে ডাকে! ফালতু! বিরক্তি নিয়ে ওর কাছে গিয়ে বললাম,

–কালকে মানা করছিলাম আমাকে পিছন থেকে ডাকবি না! তোর কানে কথা যায় না!
–তুমি আমায় ভুলছো মম, শুনো প্লিজ!! দরকার আছে…
–চুপ! রাস্তায় কি কথা হ্যাঁ ! রাস্তায় কথা কিসের! তোকে বারন করার পরও তুই ডাকাডাকি ছাড়লিনা! বারবার তুই একই কাজ করিস!
–তুমি আমার জুনিয়র মম। হোয়াই আর ইউ কলিং মি “তুই”?
–দেখ ভাই! আমার বাস চলে গেলে আমি ক্যাম্পাসে লেট করবো, ডাকিস না! তোরে “ভাই” বলতেছি…রাস্তায় ডাকিস না।

আমি মোর ঘুরে আসতে নিলে তন্ময় আমার সামনে এসে দাড়ায়। হাতের ঘড়িটা একটু নড়াচড়া করে ভাব বোঝালো যেন ভয় পাই। ও বলল,

–আমি ছেলে তুমি মেয়ে, রাস্তায় ডাকা ছাড়াও ইউনিক কিছু ফ্যাসিলিটিস দিতে পারি…জানো? চুপচাপ আমার কথা শুনো। তোমার জন্য ধানমন্ডি থেকে এখানে এসেছি, জাস্ট অনলি ফর ইউ! গুড গার্লের মতো আমার গাড়িতে উঠে বসো, পয়ত্রিশ মিনিটের মধ্যে ক্যাম্পাসে পৌঁছে দিবো।
–আমি হাত পেতে বলেছি আমায় লিফট দেন? ভিক্ষা চেয়েছি? এতো দরদ কেন উতলিয়ে উতলিয়ে পড়তেছে! রাস্তা ছাড়ো! আমি বাসেই যাবো!
–লুক মিস মম! আমি রিকুয়েস্ট করা পছন্দ করিনা। আশাকরি তুমি আমাদের গ্যাংয়ের নেগেটিভ বিহেবিয়ার সম্পর্কে জানো! তোমার জন্য ভালো এটাই হবে রাস্তায় সিন ক্রিয়েট না করে গাড়িতে উঠে বসো।
–ড্রাইভার?
–ইয়েস? বুঝলাম না, বুঝিয়ে বলো।
–তোর গাড়িতে….আসলে মানে তোমার গাড়িতে ড্রাইভার আছে?
–ওহ্ হ্যাঁ আছে। বাট রিজন কি?
–তাইলে শোন! তুই তোর ড্রাইভারের সাথে বসবি! আমি তোর পিছনের সিটে! রাজি?
–হোয়াট…. দ্যা …… হ্যাল!
–রাজি? নট রাজি? জলদি জলদি বল!
–এই তু…
–তুমি তুমি করা ভুলে যাবি বুঝছিস! এলাকা আমার! একটা ডাক দিবো সব উড়ে এসে তোর পা ভেঙ্গে হাতে ধরিয়ে ফুটবলের মতো লাত্থি মেরে ধানমন্ডি লেকে পৌঁছে দিবে! বুঝা গেছে!
–ইউ আর……. ওফ! চলো। গাড়িতে বসো।

তন্ময় মুখ প্যাঁচার মতো করে কুজো হলো। তাতে কিছু যায় আসে না, আমি ওদের পা চেটে কামলা খাটি না! ওরা নিজে এসেছে, ওদের গ্যাং লিডার আমার হাত চেয়েছে। আমি শুধু মনুষ্যত্বের নামে সাহায্য করেছি, আর কিছু আয়ের জন্য। ক্যাম্পাস চলে এসেছে। ওদের দাপটের জোরে হেডস্যারের গাড়ি ছাড়াও গ্যাংস্টারের সবার গাড়ি ক্যাম্পাসের গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকে। তন্ময়ের গাড়িও ঢুকেছে। সব স্টুডেন্ট কিভাবে ভয়ভয় চোখে রাস্তা খালি করে দিচ্ছে গাড়ির জানালায় বাইরে দেখছি। গাড়ি থামলে তন্ময় পিছনে ফিরে তাকায়, আমি ওর দিকে শক্ত দৃষ্টি ছুড়ে দরজা খুলে বাইরে বের হলাম। কেমন তাজ্জব! আমার দিকে স্টুডেন্টগুলো সিনেমার নায়িকা দেখার মতো তাকিয়ে আছে। বোঝলাম…তন্ময়ের গাড়িতে আমাকে দেখে ওদের চাহনির এ অবস্থা। কি কি সমালোচনায় পড়া লাগে খোদা মালুম! আমি ব্যাগের ব্যান্ডেল চেপে ডিপার্টমেন্টের ক্লাসরুমে চলে গেলাম।

.
.

ক্লাস শেষ, দুপুর দুইটা। সিড়ি দিয়ে নেমে গেটের কাছে যাচ্ছি…জোড়ায় জোড়ায়, গুচ্ছাকারে আমার দিকে নিশানা করে কানাঘুসো করছে। আমি ব্যাপারটা আড়চোখে লক্ষ করলেও গায়ে মেখে নিচ্ছি না। গ্রীষ্মের রোদ্রে আমার মাথার তালু গরম হয়ে ঘেমে গেছে। জেনি, রিমিকে ওদের আড্ডাস্থল ‘নজরুল চত্বরে’ দেখলাম। কিন্তু কারো কোনো ব্যাঙ্গ প্রতিক্রিয়া নেই। যে যার যার মতো হাসিতামাশা করছে। গেট দিয়ে বাইরে বের হলাম। কি রোদ! গরমে চান্দি চ্যালা লোকদের মাথা ঘেমে তেলতেলে হয়ে যাবে। অবশ্য হয়েছে হয়তো। হাত ঘড়িটায় দ্বিতীয়বার দেখে নিলাম। দুইটার ত্রিশ। সবাই নিজ গন্তব্যে চলে যাচ্ছে, আমি বাইরে খাম্বার মতো ওই বিলাতি কুত্তার অপেক্ষায় দাড়িয়ে আছি। কেউ বলে উঠল-

–” চলো “।

সঙ্গে সঙ্গে পিছনে ঘুরে তাকালাম। মুগ্ধ গাড়ি থেকে নেমে “চলো” বলেই চলে যাচ্ছে। ওর গাড়ি ভেতরে কোথায় পার্ক করা ছিলো চোখে পড়েনি। আবার দলের সাথেও বসতে দেখিনি। ভূতের মতো গাড়ি নিয়ে ক্যাম্পাসের ভেতর থেকেই গেট দিয়ে বেরুলো…বিষয়টা নেওয়ার মতো ঠেকলো না। ড্রাইভার দরজা খুলে দিয়ে আমার বসার জন্য অপেক্ষা করছে। আমি কাধ থেকে ব্যাগ নামিয়ে গাড়িতে উঠলাম। মুগ্ধ ড্রাইভারের সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলেন। ড্রাইভার গাড়িতে উঠলো। আমি কৌতুহল হয়ে জিজ্ঞেস করে বসলাম,

–ড্রাইভারকে সাথে নেওয়া হচ্ছে না?

সে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে গাড়ির হুইল চেপে চালানো শুরু করে দিলো।

–নো।
–কেন? উনি কীভাবে আসবেন? আজব তো! ড্রাইভারকে একা ফেলে যাচ্ছেন!
–ড্রাইভার কি তোমার? সে কি নাদান বাচ্চা?আমার ফ্যাক্টস আমি বুঝবো! স্টে আউট অফ হেয়ার!
–তুমি নিজেও মানুষ! উনিও একটা মানুষ! ড্রাইভার তো তোমার! তো রিসপন্সলিব্লিটি কি তোমার না??
–জাস্ট শাট আপ! তোমার কথা শোনার জন্য আমি বসে বসে টাকা পাচ্ছি না! সো..ভালো খারাপের নলেজ তুমি না দিলে বেটার হবে!
–তুই আমার চুল কাটছিস! তোর আবার নলেজ আছে নাকি!! নলেজ বানান শিখছোস তাও কতো লাল থাবড়া খাইয়া! তোরে বেটার কেউ নলেজ দিবো! কুত্তা কি কামড়ায়!
–তুমি টিউটর হও কি করে…জাস্ট সে ইট ! নো সিরিয়াসলি…টিউটর এমন হয়? স্ল্যাগ, ল্যাংগুয়েজ এতো ক্রিটিক্যাল?
–তোর ধারনা না থাকলে গাড়ি থেকে নাম্, আর বাপের টাকায় পকেট না দেখিয়ে নিজে রোজগার কর! আমি কেন টিউটর হইছি পাই পাই বুঝবি! আর আমার মুখের ভাষা? শোন একটা কথা বলি? আমি ক্ষেত্রবিশেষে কথা বলি। কে কোন স্ট্যান্ডার্ডের ভাষা বুঝে আই নো ইট ভেরি কেয়ারফুলি! ডোন্ট ট্রায় টু জাজ মি! ইউ আর নট এ্যা ক্যাপিব্যাল পার্সন অফ ইট!ইউ শুড স্টে আউট!

-চলবে 🍁

-Fabiyah_Momo🍁

#তুমিময়_প্রেম🥀♥
#PART_08
#FABIYAH_MOMO🍁

অদম্য গতিতে ছুটছে গাড়ি। দোকানপাট, রাস্তার-ধার, দুপাশের পথচারী মানুষজন সব একেএকে পেছনে চলে যাচ্ছে গতিশীলতায়। অন্যরকম ঘোর চলে আসছিলো, হয়তো জীবনে প্রথম এই আমার চারচাকার হাইক্লাস গাড়িতে চড়া, জানালা বদ্ধ সিটবেল্ট লাগানো, এসির ঠান্ডা মাদকতায় মুগ্ধ।। মুগ্ধ? এ কেমন শব্দ? মুগ্ধ তো আমি অনুভবের অভিব্যক্তি বোঝাচ্ছি কিন্তু এখানে যে মানুষ অবস্থিত!! রাদিফ মুগ্ধ। পরিস্কার কথায় বলতে — সে আমায় র‍্যাগিংয়ের নামে চুল কেটেছে, আমায় ক্যাম্পাসের সামনে ইনসাল্ট করেছে! এভাবেই ছেড়ে দেওয়া যায়? নো বস! সরি! স্নিগ্ধা মম এ্যাটলিস্ট এই বদের গেম বাজাবে! হরদমে বাজাবে! ওয়েট এন্ড ওয়াচ! কোলের উপর রাখা ব্যাগটা নিয়ে পাশের খালি সিটটায় রাখলাম। আমার মনে হচ্ছে গাড়িটা আমার! ড্রাইভার এই ছাগল! ব্যাপারটা দারুন! খোচা মেরে জিজ্ঞেস করলাম,

–এই? শোনো তো! তোমার ভাতিজির নাম কি? আমার নিউ স্টুডেন্ট! আমি তার নাম জানি না? হাও রাবিশ!

মুগ্ধ মাথাটা নড়াচড়া করে কাধের বামদিকে তাকালো। সামনের লুকিং গ্লাসটা আমার দিকে ঠিক করে হাতঘড়িতে নজর দিল। ড্রাইভিং করতে ব্যস্ত সে। আমার কথার জবাব দিলনা ! চুপ। প্রশ্ন করার পর পাচঁমিনিট পেরুলো বৈকি সে সামনের সিট থেকে ড্রাইভ করতেই বলল-

— সাফিয়া তাবাস্সুম ফাইজা।

হুট করে জবাব আসবে আমি ভাবতে পারিনি। অনেকটাই বিমোহিত আমি। সে আমাকে কাইন্ডলি জবাব দেবে ইটস ইম্পসিবল ফ্যাক্ট! বাট সে জবাব দিয়েছে। কিছু বললাম না চুপ। গাড়ি এনে স্টপ করলো একটা ওয়েল সোসাইটির সাততলা বিল্ডিংয়ের সামনে। বেশ বড় উচু শান বাধানো সম্মুখ গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকে গাড়ি এনে পার্ক করলো পাকিং লটে। সিট বেল্ট খুলে দরজা ধাক্কা দিয়ে বাইরে গিয়ে দাড়ালো। আমিও পা রাখলাম মাটিতে। সে পিছু একবার মাথা ঘুরিয়ে বলল-

— চলো। ফলো মি।

ব্যস এটুকুই বলে সে আমার আগে হাটাঁ শুরু করলো। লিফটের দরজা খুলে ভেতরে দাড়ালো এবং পকেটে দুই হাত আরামে ঢুকালো। আমি লিফটের ভেতরে এক কোনায় দূরত্ব রেখে দাড়ালাম। সে লিফটের বাটনে চাপ দিলো। লিফটের দুইপ্রান্ত থেকে দুই চকচক সিলভার রঙের দরজা এসে বন্ধ করে দিলো আমাদের এবং ধীরগতিতে উপরে উঠতে লাগলো। লক্ষ করলাম কিছুক্ষণ পর, লিফটের বাটনে নাম্বার নয় ভিন্নকিছু লিখা। সচরাচর যা দেখি লিফটের বাটনে..১,২,৩ বা ইংলিশে 1,2,3 অথবা ফ্লোর নং লিখা থাকে। কিন্তু এজায়গায় ব্যতিক্রম দেখছি। প্রতিটা বাটনের পাশে লিখা –বড় আব্বু, বড় আম্মু –মেজো আব্বু,মেজো আম্মু –ফুপি, ফুপা –আব্বু, আম্মু –রাজিব রুগ্ধ, আফিয়া সুলতানা…..এভাবে আরো কটা নাম দেখলাম। বিল্ডিং পুরোটাই সম্ভবত এই ফালতুর ফ্যামিলির। দরজা খুলে গেল লিফটের। সে পকেট থেকে একহাত বের করে লিফটকে নিচে পাঠানোর ‘ডাউন’ অপশনে চেপে দিলো। পিঠে ব্যাগ ঝুলিয়ে আমি সামনে এগিয়ে যাচ্ছি তার। পরিবেশ কেমন নিরিবিলি, ঠান্ডা। মানুষ থাকে বলে মনে হয়না। দৈর্ঘ্য-প্রস্থ নিয়ে বিশালাকারে একটা ড্রয়িং রুম। কাচের বড় গোল টেবিল রুমের ঠিক কেন্দ্রে সাজানো। দেয়ালে হাসোজ্জ্বল এক দম্পতির বড় ফ্রেমে ছবি টাঙানো। মাঝে একটা বাচ্চা মেয়ে কোলে বসে আছে। ছবিটা দেখতেই চিনতে আর বাকি রইলো না টিউটর হিসেবে রাজিব স্যারের মেয়ের জন্য এসেছি। মুগ্ধের বড় ভাই। জানালায় এখনো পর্দা দেওয়া। মুগ্ধ পর্দাগুলো দুইহাত দিয়ে দুইপাশে ঠেলে দিলো। মূহুর্তেই ড্রয়িংরুম আলোকিত হয়ে দুপুরের সূর্যের আলো প্রবেশ করলো। এরপর আমাকে পাশ কাটিয়ে চলে গেল দরজা দেওয়া একটি রুমের দিকে। রুমটার দরজায় নব্ ঘুরানোর পূর্বে আমার দিকে তাকিয়ে বলল-

–ওকে একটা বকা দিলে তোমার টিউশনি এখনি নট! বি এওয়ার!

ধমক দিলো নাকি শাষিয়ে বললো বোঝা মুশকিল। কারন, তার মুখের ভাবসম্প্রসারন সবসময় বিগড়ে থাকে। ধমক বা শাষানো আলাদা পর্যায় বোঝা যায়না। নব্ ঘুরালো এবং ভেতরে ঢুকে সাবধানে একহাত দিয়ে আমায় পিছু আসতে বললো। আমি গেলাম। খুব সুন্দর করে রুমটা সাজানো। দেয়ালের একপাশে নানা রঙের তুলি ডুবিয়ে আর্টিস্টের আকিবুকি। গাছ-গাছালি, লতাপাতা, প্রজাপতি সহ আরো অনেক কার্টুনের এনিমেশন ছবি দেয়ালে আকাঁ। এটা যে মেয়েদের রুম দেখলেই এক ঝটকায় বলে দিবে সবাই। মুগ্ধ চুপিচুপি বড় বিশাল লম্বাটে জানালার ওদিকটায় গেল। আন্দাজ করতে পারলাম ওর ভাতিজি, সাফিয়া তাবাস্সুম ফাইজা জানালার ওখানে গ্রিল ধরে চুপচাপ দাড়িয়ে আছে। মেয়েটার ভারী লম্বা চুল… বাতাসে বিবর্ন ফ্যাকাশের মতো উড়ছে। পড়নে আকাশী রঙের ফ্রক। মুগ্ধ ভাতিজিকে চমকে দিয়ে কোলে তুলে চক্রাকারে গোল-গোল ঘুরতে লাগল। হাসির শোরগোলে সদ্য ফোটা মিষ্ট ফুলের সুভাষের মতো পুরো রুম দিগ্বিদিক মিলিয়ে উঠলো। হাসির কলোরবে মেতে উঠলো দুজনের। এক. ফাইজার, দুই. মুগ্ধের। দুজনের খিলখিল হাসির আওয়াজে এখন মনে হলো এ বাড়িতে আসলেই মানুষজন থাকে। ফাইজা কোল থেকে হাসতে হাসতে নেমে বিছানায় বসলো।

–চাচ্চু তুমি প্রমিস করেছিলে আজ আমাকে স্রপাইজ দিবে! কোথায়? দেওনা??

মুগ্ধ হেসে দিয়ে বলল-

–ওটা সার্প্রাইজ হবে ফাইজা সোনা। তোমার সার্প্রাইজ ওখানে, ওইযে দেখো…

আঙ্গুল দিয়ে নিশানা করলো আমার দিকে। ফাইজা আমার দিকে ভালোভাবে খেয়াল করলো। দুইঠোট চিরে হেসে দিলো ফাইজা। আমার দিকে দৌড়ে লাফিয়ে জাপটে ধরলো। বাচ্চাটা আমায় পেয়ে এমন ভাব করলো বহুদিন ধরে চিনে সে। ফাইজা আমার কোমরে দুইহাত আবদ্ধ করে ঘাড় উচু করে তুলল। আর বলল-

— তুমি কি ফাইজার স্রাপাইজ??? চাচ্চুর স্পেশাল?

আমি ভ্যাবাচেকা হয়ে আছি। জবাব কি দিবো…কি বলে আশ্বস্ত করবো মুগ্ধের দিকে তাকিয়ে আছি। মুগ্ধ কিছু বলছেনা, এদিকে ফাইজাও মুখপানে জবাবের আশায় চেয়ে আছে, কিছু একটা বলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতেই হবে তা নাহলে বিপর্যয়!ঠোটে হাসি টেনে বললাম-

–ফাইজা আমি তোমার সার্প্রাইজ কিনা পরে জানা যাক?? চলো আগে পরিচত হই, তারপর নাহয় সার্প্রাইজের কথা বলবো?

–ঠিকাছে,

মুগ্ধ একটা শ্বাস ছাড়লো চোখবন্ধ করে। ভাতিজি ফাইজা খুব চটপটে, পেটে তার কথা থাকেনা বললেই চলে। ভুলবশত মুখ ফসকে সার্প্রাইজের নামে আসল কথাটা কথা বলে ফেললে মম এতোক্ষনে মুগ্ধের মাথায় ঘন্টা বাজিয়ে জঙ্গিগোষ্ঠীর আচরন করে দেখাতো। মুগ্ধ ফাইজাকে টেনে নিয়ে কথার ছলে চেয়ার টেবিলে বসালো-

–ফাইজা তোমার চকলেট কিন্তু পাবেনা সোনা। তুমি চাচ্চুর কথা শুনোনি, ভেরি ব্যাড। কি বলেছিলাম মনে আছে?

–ফাইজার সব মনে আছে চাচ্চু। ফাইজা কথা ভুলে না!!…ভুলে না!! চাচ্চু আমার চকলেট দাও!!দাও দাও !! কটকিট দাও!!

মুগ্ধ তার লেফট সাইড পকেট থেকে তিনটা চকলেটের প্যাকেট বের করে টেবিলে রাখলো। ফাইজার কপালে চুমু দিয়ে বলল-

–ও তোমার নিউ টিচার ফাইজা। মিসকে জালাবে না। প্রোপ্রার্লি স্টাডি এন্ড হোমওয়ার্ক করবে। যা বুঝবেনা সব বুঝে নিবে..কেমন?

ফাইজা হেসেদুলে খিলখিল হাসিতে বলল-
–আচ্ছা চাচ্চু। ফাইজা কথা শুনবে।

হাসি মুছে মুগ্ধ আমার দিকে গম্ভীর করে তাকালো। দেখে কেউ বলবেনা, এই মুগ্ধ নামের ছেলেটা হাসতেও জানে আবার খুশি করে কথা বলতেও পারে। আমাকে দেখলে এবং বাইরের দুনিয়ায় গেলে সে হাসি উড়িয়ে গম্ভ-গাম্ভীর্য মূর্ত ধারন করে। চোখের কোটরে চক্ষুবলয় নাড়িয়ে বোঝালো ‘ফাইজাকে দেখে রাখতে’। সে রুমের বাইরে ফোনটা কানে লাগিয়ে হন্তদন্তে চলে গেল। ফাইজার পাশে একটা চেয়ার টেনে বসে পড়লাম। ও আমার দিকে টুকটুক করে তাকিয়ে আছে। কি অদ্ভুত সুন্দর চোখ ওর। মায়াবী সুন্দর বড় বড় চোখজোড়া। ছোটছোট দাতের পাটির উপর সারিতে সামনের দুটো খরগোশ দাত নেই। খরগোশের ঠিক সামনের দুটো লম্বা দাত থাকে ওই দাত দুটো ফাইজার গায়েব। তবুও মিষ্টি কোমল তার হাসি। আল্লাহ পাক নিষ্পাপ বাচ্চাদের উপর কতো সুন্দর মায়া ভরিয়ে দিয়েছেন। ফাইজাকে দেখলে মনটা মানেনা, আরো দেখতে ইচ্ছে করে। ওর হাসি দেওয়া ফুলে ওঠা গালদুটো একটু টেনে দিলাম। আর বললাম-

–ফাইজা, আমি ম…

–ফাইজা আপনার নাম জানে মিস। ফাইজার চাচ্চু ফাইজাকে সব বলেছে। যখন ফাইজার জন্য নতুন মিস আসতো তখন চাচ্চু ফাইজাকে আগেই নাম বলে দিতো। আপনার নাম মম। ম যোগ ম সমান সমান মম।

–তুমি তো ব্রিলিয়ান্ট মেয়ে দেখছি!! আমার নামের যোগ-বিয়োগ ভালোই করেছো। জানো ফাইজা একটা সিক্রেট বলি। তোমার মিসের নামটা সবাই ভুল উচ্চারন করে। কেউ বলে মমো, কেউ বলে মুমু, কেউ আবার মম্। এখন বলো কেমন লাগে নাম বিকৃত করলে?
–আপনি ওদের ঢিসুম-ঢিসুম করে মেরে দিবেন মিস। পচাঁ তারা। আপনার নামটা বলতে পারেনা। চাচ্চু বলেছে আপনি খুব ঢিসুম করে মারতে পারেন। চাচ্চুকেও মেরেছেন।

আমি নিজের সম্বন্ধে এ কথাটা এটুকু বাচ্চার মুখ থেকে শুনে অবাক হলাম। আমি মারপিট করতে পারি –কথাটা ভাতিজির কাছে শেয়ার কেন করলো? অকপট মনে কিছু গুল খাচ্ছে তার? নাকি শুদ্ধ ভাষায়, সামথিং সামথিং কাজ করছে? ধ্যাৎ! বেশি বাড়তি চিন্তা করছি। সে এসবের ‘ক’-ও ভাববেনা। আর ‘খ’-ভাবা তো দূরে থাক!

ফাইজাকে সিলেবাসের প্রথম থেকে পড়ানো শুরু করলাম। পড়ার মাঝে কথার দোটানায় ফাইজা অনেক কিছুই বললো যা আমার শোনার প্রতি এবং জানার প্রতি বিন্দুমাত্র ইচ্ছা করছিলো না। তাও প্রথমদিনের উছিলায় কিছু বললাম না। পরে বলে দিব ওর শ্রদ্ধেয় চাচ্চু নামক মুগ্ধ মহাপাপীর বিষয়ে কিচ্ছু জানতে আমি মোটেও আগ্রহী নই।

পড়ানোর একঘন্টা পেরুলো। মুগ্ধ রুমে ঢুকে বিছানায় বসলো। ফাইজা গুনের নামতা লিখছে, মম সেদিকে একমনে তাকিয়ে আছে। ফাইজার লিখার মধ্যে ভুলত্রুটি ঠিক করে দিচ্ছে সে। মুগ্ধ একটা ম্যাগাজিন নিয়ে বিছানায় পা তুলে বসেছে। ম্যাগাজিনটা কেবল লোকদেখানো বস্তু। তার আসল উদ্দেশ্য অন্যকিছু। ম্যাগাজিনের দিকে তাকানো শেষে লুকোচুরি চোখে অপলকে দেখছে ফাইজার পাশে বসা মেয়েটিকে। মমর প্রথম প্রথম অস্বস্তিকর না লাগলেও এখন ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলছে ছেলেটা বিছানায় বসে তার দিকে তাকিয়ে আছে। ফাইজার খাতার দিকে তাকালো মম। হুট করেই চোর ধরার ভঙ্গিতে মাথা ঘুরালো পেছনে। দেখলো, মুগ্ধ ম্যাগাজিনে তাকিয়ে আছে। সে কিছু একটা গড় করে পড়ছে। মুগ্ধ মমর দিকে তাকাবে?তার দিকে তাকানো তো দূরে থাকুক, চিন্তাই সে করতে পারেনা। মম মুগ্ধের দিকে পা টু মাথা তীক্ষ্ম চোখে বুলালো। মমর অপ্রকট চাহনি মুগ্ধের ভেতরে তোলপাড় শুরু করে দিয়েছে। অস্থিরতায় মাথা ঘাবড়ে দিচ্ছে। ইশশ…কোনোভাবে যেন লুকিয়ে তাকিয়ে দেখাটা ধরা না পড়ে!! কোনোভাবেই না! মুগ্ধ উল্টো পল্টি দেয়ার জন্য নিজেকে কুল-কাম করে বলল-

–ফাইজার টিউটর মিস মম! আমার দিকে চোখ কিসের? কনসেনট্রেট আমার দিকে কেন? ইটস হ্যারেসিং মি!

“চোরের মায়ের বড় গলা”–উক্তিটা খুব করে ফলিয়ে ছাড়লো মুগ্ধ। চুরি করে নিজেই শিয়ানা সেজে কথা শোনালো। এতে ফলাফল বেশ জমে গেল বটে মম কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে উঠলো। একটা ছেলের দিকে আপাদমস্তক তাকানো অন্য ডিরেকশনে চলে যাচ্ছে, পরে পানি গড়ালে ভালো হবেনা, এতে খারাপ কিছু ঘটতে পারে ভেবে মম তার টিউটর পেশায় উদযোগ হলো। মুগ্ধের দিকে তাকানো বন্ধ করলো। মুগ্ধ এতে হাফ ছেড়ে বাচলো। সে ম্যাগাজিনের বই দিয়ে মুখমন্ডল আড়াল করে নিলো। এক ঢোক গিলে ঠোট উচিয়ে শ্বাস ছাড়লো। মনেমনে বলল-

–হাড়ভাঙ্গা কষ্ট হবে! মেয়ে না আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত ! কি ডেন্জারাস !

.
.

বিছানায় শুয়ে আছি। রাত বারোটা তেইশ। কারেন্ট নেই। ল্যাম্প জ্বালিয়ে পড়ার টেবিলে লেকচার কমপ্লিট করছি। পড়া জমানো আমার ভালো লাগেনা। পড়া জমলে বিশাল বিশাল অলসতা কাজ করে। কষ্ট হয়, ঘুম পায় আরো কত কি….ক্যাম্পাসে যাচ্ছি। একদল হুরোহুরি-মাতামাতি ফূর্তিতে আমোদ করছে। আরেকদল চুটিয়ে প্রেমের সাগর বানাচ্ছে। আরেকদল আমার মতো রাত দশটার পর বিটিভির মতো বইয়ে চোখ ডুবিয়ে পড়া করছে। সমস্যাটা আসলে আমাদের না। সমস্যা টা হয়তো শিক্ষা ব্যবস্থা। চিল-পিল করার, মাস্তি করার টাইম আমাদের নেই। হাতে সময় এতোই কম কিন্তু পড়া অনেক বেশি। সেমিস্টার তো চোখের পলকে হানা দিতে চলে আসে!ঠিক জলোচ্ছাসের মতো কয়েক ফুট উচু উঠে আকাশ ছুয়িয়ে বিনোদন পার্টিকে নাকানিচুবানি খাইয়ে দেয়। বেচেঁ যাই আমরা, যেচে যাই যোগ্যতায়। উত্তীর্ণ হয়ে স একটা একটা করে সেমিস্টার কভার করি। আর বাশঁ খেয়ে সেমিস্টার ড্রপ খায় ফূর্তিবাজ ও প্রেমলীলাদের। ফাইজার বাবা আমাদের কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টের লেকচারার, তার মা একজন ব্যাংকার। জয়েন্ট ফ্যামিলিতে থাকা সত্ত্বেও ক্লাস টু-য়ে পড়া বাচ্চা মেয়েটার সঙ্গ দেওয়ার কেউ নেই। ছিমছাম ফ্ল্যাটটায় একা দিন কাটায় ও। পরিবারের আরো সদস্য থাকার পরও মেলবন্ধন কম, দেখাশুনা কম। মুগ্ধ ছেলেটা তার চব্বিশ ঘন্টার বিশটা ঘন্টা ভাতিজির সাথেই কাটায়। বাকি চার ঘন্টা ক্যাম্পাসে দাপট দেখায়। ছেলেটা বড়ই অদ্ভুত!

বইয়ের পাতায় ঝিমিয়ে পড়ছি। চোখে ঘুমের ঢুলুঢুলু ভাব। সারা শরীর জুড়ে ক্লান্তিকর ভাব। বিরক্তির ভাব। বিষন্ন কাজ করছে প্রচুর। কিছুতেই মনোযোগী হয়ে চোখ খুলে মন দিতে পারছিনা । হঠাৎ দেখি ভুমভুম করে শব্দ হচ্ছে। ভাইব্রেটের আওয়াজ। কারেন্ট নেই বিধায় ফোনের ভাইব্রেট কাপুনি বেশ জমকালো হরতালেই শোনা যাচ্ছে। খুজঁতে খুজঁতে দেখি টেবিলের ভেতরে খাতার নিচে ভুলে রেখে দিয়েছি। ফোন নিলাম। স্ক্রিনে গতকালকের নাম্বার দেখে রিসিভ করলাম। মনে মনে নিশ্চিত করেছি কয়েকটা আচ্ছা করে গালি দিব! খাটি বাঙালি তরতাজা শুদ্ধ গালি! কত বড় বদমাইশ রাত বারোটা বেজে একটার কাটায় যাবে! ছেলেটা ঘাড়ে উঠে অসময়ে ফোন করে বসেছে! এজন্যই বলে ছেলেদের বেশি সুযোগ দিতে নেই। সুযোগ পেলেই চড়কা ঘুরাতে প্রেম জমাতে আসবে! আমি মুখ খুলে গালির ‘ব’ শব্দটা বলতে নিবো তার আগেই সে বলে উঠলো

–এ্যাক্সট্রেমলি সরি মিস! ফাইজার একটু প্রবলেম হয়েছে নিড হেল্প নাও! কাল স্কুল ওর! একটা প্রবলেম সল্ভ করাতে ভুলে গিয়েছেন।

নিজেকে গালির চৌদ্দগুষ্ঠি বলা থেকে বিরত করলাম। ফাইজার ভুলক্রমি, নাকি মুগ্ধের কারসাজি –হাতিয়ে দেখতে হবে। আমি বললাম-

–আমি কি তোমার মিস? তুমি আমার স্টুডেন্ট? না এক সেকেন্ড! শোনো, তোমাকে আমি সারাদিন ধোলাই দেইনি বলে ভেবেছো কুমারী মেয়েকে রাত বারোটায় কল করে পটাবো, উলাবু উলাবু করবো.. তাইনা? আপু ডাক! শুনছিস? আপু ডাকবি! মিস বলে ডাকার ফ্যাসিলিটিস আমি তোকে দেইনি! সো কল মি আপু!

–হোয়াট! আর ইউ গন? স্টুপিডের মতো কথা বলছো কেন? আমি সিনিয়র হয়ে তোমায় আপু ডাকবো? আর কি বললে? তুই! সাহস আসে কোত্থেকে তুই করে ডাকার! আমি ফ্লার্ট করতে কল করেছি? হোয়াট দ্যা সেন্ট্যান্স ম্যান!

–সেন্ট্যান্সের বিবরন গ্রামার বই খুললে পাবি! বইটা খুইলা পাল্টায়া একপৃষ্ঠা পড়িস! কাজে দিবো!

–জাস্ট শাট আপ ফাউল মেয়ে! নিজেকে কোন্ জমিদারের মেয়ে ভাবো! আমি তোমারটা খাই না পড়ি? ভাব কিসের তোমার?

–আমার ভাব কিসের আর কতপ্রকার, এইসবের ব্যাখ্যা মাথা ফাটিয়ে বলে দিছি। যদি আরো একবার বুঝতে চাস, আসিস! রড দিয়ে পিটিয়ে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে বোঝাবো! রাত আটটার পর আমায় তুই এবং তোর গ্যাংয়ের কেউ যেন কল করার সাহস না দেখায়! খবরদার! চুল কাটার কথা কিন্তু এখনো ভুলিনি!

মুখের উপর চড় মারার মতো ফোনটা কেটে দিলো মম। মুগ্ধ থেতলে ভ্যাবলা হয়ে আছে। কি হলো কি? সব মাথার উপর দিয়ে গেল। ভেবেছিলো ভাতিজির বাহানায় কথার শুরওয়াত করবে তা তো হলোই না উল্টো একচোট তুইতোকারি ভাষায় ধমকানি খেলো। ছিঃ ছিঃ….লজ্জায় মাথা কাটা। মুগ্ধ ফোনটা বুকের উপর রেখে ঠোট উল্টে বালিশে মাথা রাখলো। হকিস্টিকের তান্ডবে মাথায় আঘাত পাওয়া জায়গায় হাত দিয়ে বললো-

–মাথা আমার মেবি গেছে ইয়াররর…..

-চলবে🍁

–Fabiyah_Momo🥀🍁

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here