#বন্ধ_দরজায়_তুমি🖤
#Written_By_Mêhèriyâr_Mêhèr
#Part: 15…….
— Just shut up….. 😡😡 আমার বাড়িতে থেকে। আমার খেয়ে… ঘুমের মধ্যে চুমু খাওয়া না।😡😡 কাকে ভেবেছিলে তুমি…?? আজ তোমার শখ মিটাব আমি😡
বলেই তুরের দিকে এগোতে থাকে…..
— আমার কথাটা তো শুনুন। আমি কাউকে ভেবে কিছু করিনি।
— তাহলে এতক্ষন যা ছিল সেগুলো কি?😡
— বিশ্বাস করুন আমি বুঝতেই পারিনি সেটা আপনার ঠোঁট ছিল। যদি জানতাম তাহলে প্রমিস কিস তো বাড়ির ধারে চুমোও খেতে চাইতাম না😥
— তাহলে একটু আগে যা করছিল তা কি ছিল।
তুর কি বলবে বুঝতে না পেরে মাথা নিচু করে রাখে।
— আমি আপনাকে ভাবিনি…
— তাহলে কাকে ভেবেছিলে.. 😡
তুর যেতে যেতে দেয়ালের সাথে মিশে যায় আর তীব্র একদম ওর কাছ গেশে দাড়ায়…. তুর যেতে যাইলে দেয়ালে হাত রেখে তীব্র ওকে আটকে দেয়….
— কিহলো কথা বলছ না যে? কাকে ভেবেছিলে চুমো খাওয়ার জন্য…. 😡
— ছিহ আমার কি এখনো চুমো খাওয়ার বয়স হয়েছে । আপনি তো বলতেন আমি নাকি বাচ্চা…. 😕
— সেটা কয়েকদিন আগেও ছিলে কিন্তু এখন নেই।
তীব্র কিছু বলতে যাবে তার আগেই তুর বলে উঠে..
— আচ্ছা একটা কথা জানতে চাইব?
— কিহহহ… [ ভ্রু কুচকে ]
— আচ্ছা আপনার বয়স ৪০/৫০ এর বেশি হবে তাই না? আর এইজন্য আপনি আমাকে এখানে নিয়ে এসেছেন কারন আপনার বুড়ো হয়ে গেছেন আর আপনাকে কেউ বিয়ে করবে না…🙄
কথাটা শুনে অবাক চোখে কিছুক্ষন তুরের দিকে তাকিয়ে থাকে তীব্র.. মানে তীব্রকে দেখে ওর সত্যি এমনটা মনে হয়? তুরের এই কথায় ও থমকে যায়।
— What the… আমাকে দেখে তোমার কি মনে হয় [ অনেক জোরে ধমক দিয়ে ]
— সিউর হওয়ার জন্যই তো জিজ্ঞেস করলাম😥
— just shut up…..
তীব্র রেগে তুরকে ধাক্কা দিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে নিজের রুমে চলে। প্রচন্ড মেজাজ গরম হয়ে গেছে তীব্রের। তাই ও শাওয়ার নিতে বাথরুমে গেল। একটা টাওয়াল পরে শাওয়ার নিয়ে বেড়িয়ে এলো তীব্র। প্রচন্ড রাগ লাগছে মেয়েটার উপর। ও কিনা ৪০/৫০ বছরের বুড়ো বলছে।
তীব্র প্রচন্ড রেগে আয়নার সামনে গিয়ে দাড়ায়। তারপর তুরের রাগ আয়নার সামনে নিজের উপর দেখায়….
— যে ড. রায়হানের জন্য সবাই পাগল। আর এই মেয়ে কিনা বলছে আমি বিয়ে করার জন্য কোনো মেয়ে পাব না। কারন আমি বুড়ো হয়ে গেছি….
তীব্র নিজেকে ভালোভাবে দেখে নেয়। এই ২৮ বছরের বয়সে কখনো কারো থেকে এমন কথা শুনেনি তীব্র। আয়নায় নিজেকে দেখে একজন সুঠাম দেহের ব্যাক্তিত্ব সম্পুর্ন মনে করছে নিজেকে। যে কাউকে জন্য পাগল করার মত এবিলিটি আছে ওর। কিন্তু ওই মেয়েটা।
আয়না থেকে সরে যাওয়ার পর আবার দাড়ায় তার সামনে দাড়ায়….. তারপর নিজের মনেই জিজ্ঞেস করে….
— মেয়েটি কি সত্যি ভুল বলেছে। ২৮ বছরেও কোনো মেয়ের সাথে নিজেকে জড়ানো হয়নি। মনের দিক দিয়ে কি সত্যি সত্যি বুড়ো হয়ে গেছিস নাকি ড. রায়হান। বিজন্যাসম্যান তীব্র মুডি হলেও ড. রায়হান তো নয়….. কলেজ ক্রাশ আজ একটা বাচ্চা মেয়ের কাছে বুড়ো হয়ে গেছিস…… [ নিজের মনে হেসে উঠে তীব্র ] যাই হোক মেয়েটার উপর রাগ করে লাভ নেই…..
তারপর তীব্র রেডি হয়ে আবার তুরের রুমে যায়। গিয়ে দেখে তুর বসে আছে মন খারাপ করে।। আর কি জানি ভাবছে…..
— [ চিন্তা করো না তুর। তুমি এখান থেকে জীবিত বের হবে না মৃত সেটা ডিসাইড করছে তায়ানের সুস্থ্য হওয়ার উপর। তায়ান যদি সুস্থ্য হয়ে যায় তাহলে তায়্যিরাতকে ওর কাছে ফিরিয়ে দেব। আর যদি তায়ানের কিছু হয় তাহলেও তুমি মুক্তি পাবে তবে এই ঘর থেকে না এই পৃথিবী থেকে। ভেবেছিলাম তায়্যিরাতকে শিয়াল- কুকুরের আহার বানাব। কিন্তু তায়ানকে দেখে বুঝেছি ও কতটা চায় তার তায়্যিরাতকে । নিজের শেষ ইচ্ছায় তোর সুখের কথা বলেছে। তাই তোমার বাচা মরা এখন তায়ানের উপর……. ]
;– আরে তীব্র দাড়িয়ে আছেন কেন ভিতরে আসুন….
তুরের ডাকে তীব্রের ধ্যান ভাঙে। ও বাজের নজরে তুরকে দেখতে দেখতে বিছানায় এসে বসে। তুর নিজের মত করে টুকাটুকি করছিল। তীব্র কিছুই বুঝতে পারছে না। তুরের এমন বিহেভ যে সব কিছু স্বাভাবিক। ও তুরের এতটা কাছে অথচ তুরের তেমন কোনো রিয়েকশন নেই। যেন তীব্র ওর পাশে তার জন্য তুরের কিছু আসে যায় না। বরং ওর কথা বলার সঙ্গী তীব্র……
তীব্রের ব্যাপারটা ভালো লাগল না। ও উঠে যেতে ধরে ঠিক তখনি তুর ওর হাত টেনে ধরে…. অবাক হয়ে তীব্র তুরের দিকে তাকায়… তীব্রের চোখে চোখ পরতেই তুর খুব করুন কন্ঠে তীব্রকে বলে উঠে…..
— এমনিতে ত আমি কোনো মানুষের সাথে কথা বলতে পারি না। শুধু ওই রোবো ক্যাট ছাড়া আপনি এসেছেন বলে ও এখন অফ করা। কিভাবে কথা বলব। একটু বসে আমার সাথে কথা বলুন না।
— দেখ তুর….. [ গম্ভীর গলায় ]
_- প্লিজ মানা করবেন না। এই একটা অনুরোধ রাখুন। আমারো তো ইচ্ছে হয় কোনো মানুষের কাছ থেকে বাইরের জগৎ টাকে শুনতে চাওয়ার। বন্ধ ঘরে বাস করি বলে কি সেইটুকুও চাইতে পারি না। [ আটকে আসা কান্না করা গলায়। ]
তুরের এই আকুতি ফেলতে পারল না তীব্র…… ওর পাশে বসে পড়ল। তুর নিজের মনে শুধু কথা বলে যাচ্ছে কিন্তু তীব্র তা শুনছে কিনা তার কোনো খেয়াল নেই। তীব্র অবাক চোখে তুরের দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুই বুঝতে পারছেনা। কোথাও একটা কিন্তু রয়ে গেছে তীব্রের। হিসেব টা কিছুতেই মিলাতে পারছে না। এটা কি সেই তুর? যে মেয়ে কিছুদিন আগেও ওকে ভয় পেত। ও থাকত বলে ধম বন্ধ হয়ে যেত মেয়েটার। এই টা কি সেই মেয়েটাই.…… বড্ড অচেনা লাগছে। এত দ্রুত কেন এই পরিবর্তন টা।
তখনি তুরের একটা প্রশ্ন তীব্রের ভিতরটাকে নাড়িয়ে দেয়।
— আচ্ছা আপনার কি গার্লফ্রেন্ড আছে? মানে আপনি কি কোনোদিন কাউকে ভালোবেসেছেন?
— মানে… এগুলা আবার কি রকম প্রশ্ন… [ কিছুটা বিচলিত হয়ে ]
— না মানে সবার লাইফে তো এমন কেউ না কেউ থাকে যাকে সে ভালোবাসে। আপনার লাইফেও তাই থাকার কথা?
—- না নেই [ বেশ রেগে + উত্তেজিত হয়ে ] আমি কাউকে ভালোবাসিনা। আর না কাউকে বাসব বুঝতে পেরেছ তুমি? 😡
— হুমম…. [ একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে ] তা আপনি জানতে চাইবেন না আমার লাইফে কেউ ছিল কিনা। আমি কাউকে ভালবাসি কিনা…
তীব্রের উত্তরটা অজানা না। কারন তায়ান তায়্যিরাতের রিলেশন ২-৩ বছরের। আর তীব্র ওকে না দেখলেও ও সবটা জানে। আর এটাও জানে তুরকে এটা জিজ্ঞেস করলে তুর কি বলবে।
— তা জেনে আমি কি করব? 😡
এইটা শুনে তুর তাচ্ছিল্যের হাসি দেয়। তারপর একটা চাপা অভিমান থেকে বলে উঠে…..
— যাক বাবা যাকে ফিজিক্যাল রিলেশনের জন্য নিয়ে এসেছেন তার অতিতটা জেনে নিবেন না। আর মনে আদো কেউ ছিল কিন। আচ্ছা মনের কথা বাদ দিন। সেটা জেনে আপনার প্রয়োজন নেই। কিন্তু আদো তাকে অন্যকেউ স্পর্শ করেছে কিনা। সেটা যাচাই করবেন না। আপনাদের মত লোকেরা তো তাই করে। কাউকে নিয়ে এসে নিজেদের খেলনা পুতুলের মত নিয়ে খেলে। আপনি তাই করবেন? শুধু কয়দিন আগে আর পরে……
কথাটা তীব্রের গায়ে কাটার মত বাধে। ও ভালো করেই বুঝতে পারছে তীব্রকে কটাক্ষ করার জন্য কথাটা বলেছে তুর। কিন্তু আজ কিছু বলার নেই ওর। কিন্তু খুব রাগ লাগছিল তুরের উপর। কিন্তু এখন বলা যাবে না। তাই নিজেকে শান্ত করে সেখান থেকে চলে যেতে চাইল তীব্র।
কিন্তু তীব্রের যাবার পথেই বাধ সাধল তুর। ও তীব্রের মুখোমুখি তীব্রের সামনে গিয়ে দাড়ায়…..
— কি হয়েছে তোমার? পথ ছাড়ো আমার। [ অনেকটা বিরক্তি নিয়ে বলল কথাটা ]
— সব সময় তো যাই যাই করেন। এবার না হয় আমার একটা কথা রাখেন।
তীব্রের দিকে আলত পায়ে এগিয়ে যায়। তীব্র কিছুই বুঝতে পারছে না। তুরের পা যত কদম সামনে এগোও তীব্রের ততটাই পিছায়…..এই প্রথম কেমন অন্যরকম লাগছে তীব্রের। হার্ট বিট বেড়ে গেছে অনেকটা। তীব্র যেতে যেতে হঠাৎ দেয়ালে ধাক্কা খায়। যার খেয়াল নেই তীব্রের।
তীব্রের প্রচন্ড বেড়ে যাওয়া হার্টবিট তুরের কানে আসছে। তীব্রের এই অবস্থা দেখে তুর হালকা হাসে। তুর ঠিক ওর হৃদপিণ্ডের উপর হাত রাখে।
— এতটা হার্টবিট তো ভয়েও বাড়ে না। by the way… আপনি কি আমাকে ভয় পাচ্ছেন।
— stop this nonsense…. সড়ো…
তীব্র ওকে ছেড়ে যেতে নেয়। তখনি তুর বলে উঠে…..
_- একদিন তো চলেই যাব। হয় আমি চলে যাব। নয়তো আপনি নিজেই আমাকে ছুডে ফেলে দেবেন। এখন দেখার অপেক্ষা সেটা কবে?
— তুমি কি এসব বলতে চাও। আর এর জন্য আমাকে আটকে রেখেছ…..
— আমি আপনাকে আটকে রেখেছি। সিরিয়াসলি….
বেশ জোরেই হো হো করে হেশে দেয় তুর। তুরের সেই হাসিতে একটা জমে থাকা কান্না আর তীব্রের উপর একরাশ অভিযোগ ছিল বুঝতে বাকি রইল না তীব্রের। কেমন একটা অপরাধ বোধ কাজ করল তীব্রের।
— আপনার সত্যি মনে হয় তীব্র। আপনি না চাইলে আপনাকে আটকে রাখার শক্তি আমার থাকতে পারে। যে মেয়ে নিজের আপনার বন্দীনী হয়ে আছে সে আপনাকে কি করে আটকাবে…..
নিরব হয়ে আছে তীব্র… ওর নিরবতায় তুর বলে উঠে ……
— আমার একটা কথা রাখবেন প্লিজ…
নিশ্চুপ তীব্র..
— ভাববেন না এমন কিছু বলব না যেটা আপনি করতে চাইবেন না। কারন আমি জানি আমি মরেও গেলেও আপনি আমাকে এই খান থেকে বের হতে দেবেন না। আর মরে গেলে কি নিজের ইচ্ছায় তো মরার সুযোগ ও নেই। আমার সব ইচ্ছা-অনিচ্ছা এখন আপনার দাসত্ব করে।
— জানই যখন তাহলে বলো না।আর এসব নিয়ে আক্ষেপ করাটাও বন্ধ করো।
চলে যেতে নেয়। কিন্তু তুরের কান্নার সুরের আর্তনাদ থামিয়ে দেয় তীব্রকে।
— তীব্র…. [ আটকে আসা কন্ঠে ] আমাকে একটু বাইরের খাবার আনিয়ে দেবেন। বেচে থাকার জন্য এই শুকনো খাবার আর পারছি না খেতে। এটা খাব না, ওটা খাবনা বলে বায়না করব না। শুধু আমাকে বাইরে থেকে কিছু খাবার এনে দিন। শুধু ভাত হলেও চলবে……
বলেই হুহু করে কেদে উঠে তুর….. তারপর বেশ জোরেই কান্না করে তীব্রের পায়ের কাছে বসে পরে…..
— প্লিজ তীব্র আমার এই কথাটা রাখুন। এসব খাবার আর নামছে না আমার গলা থেকে। বিগত ৪ মাস যাবত আমি এসব খাবার খাচ্ছি। অনেক বার বলতে ইচ্ছে হয়েছে কিন্তু ভয়ে বলতে পারিনি। কিন্তু আজ পারলাম না। হয় আমাকে একটু খাবার এনে দিন নয়তো বিষ ।
তীব্রের পায়ের কাছে বসে অঝোরে কাদতে থাকে তুর। তীব্রের ব্যস্ততা এতটাই ছিল যে ও ভুলেই গেছে ওকে বিগত ৪ মাসের যত খাবার দিয়েছে তা পাওরুটি, জ্যাম, ফ্রুটস এবং অন্যান্য খাবার ছিল। যাতে ওর শরীরে কোনো কিছুর অভাব না হয়। কিন্তু এটা ভুলে গিয়েছিল তা দিয়ে শুধু পেট ভরায় কিন্তু মনের খোড়াক না। যেকোনো মানুষের পক্ষে কয়েকদিনের বেশি এসব খাবার খাওয়া সম্ভব না। একজন ডক্টর হিসেবে খুব ভালো করেই জানে। আর সেখানে একটানা ৩-৪ মাস সেটা আসলেই কষ্টকর….
কিন্তু তবুও ও নিজেকে শক্ত করে নিল। বেশ কঠোর গলায় বলল….
— তোমাকে যেই খাবারটা দেওয়া হয় সেটাই অনেক। সবকিছু পেয়ে গেছো তাই ভালো লাগছে না তাইনা।
এই কথা শুনে অবাক হয়ে তীব্রের দিকে তাকায়। মানুষের নির্দয়তার কথা ও শুনেছে কিন্তু আজ দেখেও নিল। কি আসত যেত ওকে একটু খাবার এনে দিলে। তুরের বুঝতে বাকি রইল না অপাত্রে দান করেছে ও….. তুর আর বেশি কিছু বলল না। শুধু নিজের চোখের পানি গুলো মুছে নিলো।
— আচ্ছা.…..
তারপর গিয়ে একটা কাথা শরীরে জড়িয়ে ওদিক ফিরে শুয়ে পড়ল তুর। তীব্র ওখানেই ছিল বুঝতে পারল তুর নিজের কান্নাটাকে আড়াল করার চেষ্টা করছে। এখানে আসার প্রথম দিকে তুরকে কাদতে দেখলেও তারপর কয়েকমাসে তুরকে কাদতে দেখেনি তীব্র। কিন্তু আজকে এভাবে মেয়েটা কাদল তাও একটু খাবারের জন্য……. একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ল তীব্র। তারপর বাইরে চলে গেল।
ওদিকে তুর নিজের কান্নাটা দেখাতে চায় না তীব্রকে। এতদিন সেটা আটকে রাখলেও আজ যেন না চাইতেও তা বুক ফেটে বেড়িয়ে আসছে। এভাবে কাদতে কাদতে একসময় ঘুমিয়ে পরে তুর।
,
,
,
,
,
,
,
হঠাৎ কিছুর শব্দে ঘুম ভেঙে যায় তুরের। তুর উঠে বেশ অবাক হয় কারন দরজাটা খোলা। তুর ঘুমিয়ে আছে নাকি জেগে বুঝতে পারছে না। সত্যি কি দরজা খোলা। ওর আস্তে আস্তে দরজার কাছে যায়। হ্যা সত্যি দরজা খোলা। তাহলে তীব্র কি ভুল করে খোলা রেখে গেল নাকি ইচ্ছে করে। বুঝতে পারল না তুর। ও কি বাইরে যাবে নাকি যাবেনা। যদি তীব্র জেনে যায় তাহলে…… তাহলে কি হবে??
এসব ভাবতে ভাবতে তুর কখন বেড়িয়ে আসে নিজেও জানে না। বাইরে আসতেই অবাক হয়ে যায় তুর। অদ্ভুত ভাবে সাজানো বিশাল ডায়নিং….. তুর অবাক চোখে সবটা দেখতে থাকে তখনি কারো আওয়াজ শুনতে পায়…..
— যদি ভেবে থাকো তুমি পালাতে পারবে তাহলে এটা তোমার ভুল ধারনা।
তুর ওদিকে তাকিয়ে দেখে তীব্র হাত গুজে দাড়িয়ে আসে। তারপর তীব্র তুরের দিকে এগিয়ে আসে। এটা দেখে তুর কিছুটা মাথা নিচু করে নেয়। তীব্র এসে তুরের থুতনি ধরে উচু করে।
— তুমি এই ৪ মাস ভদ্র হয়ে থেকেছ বলে এটা তোমার পুরুষ্কার মনে করো। তীব্র কখনো কারো পাওনা দিতে লেট করে না। তাই তোমারও করিনি আজ থেকে তুমি এখানে আসার পার্রমিশন পেলে।
তুর চুপ করে তাকিয়ে আছে। অনেকটা স্বাভাবিক লাগছে তীব্রকে । তখনকার কঠোরতা নেই ওর মাঝে কেমন একটা কোমলতা বিরাজ করছে।
— আর হ্যা তুমি বাইরের খাবার খেতে চেয়েছিলে তাই না। হুমম দেব তোমায়। এতটাও হার্টলেস নই আমি। [ বাকা হেশে ] তবে একটা শর্তে..…
— কি শর্তে….
তীব্র গিয়ে তুরকে সামনে ঘুড়িয়ে ওর কাধে থুতনি রাখে…..
— আমি রান্না করব। আর আমার সাথে হেল্প করবে তুমি…. রাজি।
— সত্যি আপনি রান্না করবেন…..
— হুমম… তাও তোমার জন্য মুচকি হেসে। [ তুরের কানে চুমো দিয়ে ]
— কিন্তু আমার জন্য কেন করবেন?
এইটা শুনে বাকা হাসে তীব্র। তারপর তুরকে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে নেয়। তুরের কোমর পেচিয়ে তুরকে একেবারে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়….. একহাত দিয়ে ওর গাল ধরে তুরের মুখে ফু দেয়….. তাতে তুর চোখ বন্ধ করে নেয়….
তখন তীব্র তুরের কানে কাছে গিয়ে বলে…
— তুমি আমার জন্য খুব স্পেশাল তুর। তোমার কাছ থেকে অনেক এক্সপেকটেশন আমার। যা তোমাকে পুরন করতে হবে। বুঝলে…..
— মানে….
হালকা হাসল তীব্র….
— সত্যি তুমি কতটা বোকা তুর। একদম বাচ্চাই রয়ে গেলে। [ তুরের নাক টেনে ] একটা ছেলে একটা মেয়েকে কেন নিজের কাছে রাখে জানো। যখন একটা ছেলে একটা মেয়েকে চায়। আর তোমাকেও তো চাই আমি…..
— তীব্র আপনি….
— হুসসস…. আমার হেল্প করবে না। [ মৃদু হেশে ]
,
,
,
,
,
,
তারপর তীব্র তুরকে এক প্রকার টেনে নিয়েই ক্রেচেনে ঢোকে…..
— বলো কি কি রাধতে পারো তুমি?
এই কথা শুনে তুর আমতা আমতা করতে থাকে….
— তারমানে কিছুই পারো না।😤
— হুমম…
— 😅 its ok…. আজ আমি তোমাকে শিখিয়ে দেব কেমন?
— তীব্র আপনি….
— তীব্র সব পারে। প্রান যেমন বাচাতে পারে তেমনি মারতেও পারে৷ যখন যেটা দরকার আরকি….
— মানে.??
— কিছুনা। এদিকে এসো।
তারপর তীব্র তুরকে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। তারপর সবকাজ ধরে ধরে নিজের হাতে করায়। তুর অবাক চোখে তীব্রকে দেখতে থাকে। যেন নতুন কাউকে দেখছে। তীব্র তুরের হাতে কাজ করছে আর তুর ব্যস্ত হয়ে পরেছে তীব্রকে দেখতে….
— এভাবে দেখ না। কেমন জানি লাগে…
তীব্র তুরকে নিজের সাথে মিশিয়ে তুরের হাতেই সব কাজ শেষ করায়। বেশি কিছু না তবে মোটামুটি রান্না করে।
— তুর….
— হুমম….
— এগুলো সার্ভ করে দেও আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি কেমন?
মিষ্টি একটা হাসি উপহার দেয় তুর। তারপর তীব্র ফ্রেশ হতে চলে যায়। তুর ও নিজের মত করে খাবার রেডি করে রাখে…..
— বাহ সব রেডি হয়ে গেছে।
— হমম….
— খুব ভালো। নেও শুরু করো।
— আপনি খান….
— আমি প্রতিদিন খাই। আজ না হয় তুমি খাও….
তুর কোনো কথা না বলে একটা চেয়ার টেনে বসে পরে… যেই খাবারটা মুখে নিতে নেয়। কিন্তু তার আগেই তীব্র ওর হাত ধরে ফেলে….. তুর অসহায় চোখে ওর দিকে তাকায়……
— এভাবে দেখছ কেন? জানোনা বড়রা আর বুড়োরা আগে খায়….
বলেই খাবারসহ তুরের সব আঙুল মুখে পুরে নেয়। এটা দেখে তুরের প্রায় কান্নার অবস্থা। এতদিন পর খেতে পেল তাও দিল না। 😥এটা দেখে তীব্র হালকা হাসল…..
— টেস্ট ঠিক আছে এবার খেয়ে নেও।।
এটা শুনে তুর আর একমিনিট দেরি করল না। যতটা পারল খেয়ে নিয়ে ওখানেই বসে রইল। তীব্রের মনে হলো কত জনমের অভুক্ত রেখেছিল তুরকে রাক্ষসের মত সব খেয়ে নিল। তুরের খাওয়া দেখে ওর আর খাওয়া হলো না।
খাওয়া শেষে তুর নিজের রুমে যায়। ঠিক তখনি পিছন থেকে তীব্র ওকে জড়িয়ে ধরে ওর ঘাড়ে মুখ গোজে। তুর ছাড়াতে চাইলে আরো শক্ত করে তুরকে জড়িয়ে ধরে।
— ভালোবাস আমাকে…??
তুর চুপচাপ শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কি বলবে বুঝতে পারছে না।
— না মানে… [ আমতা আমতা করে ]
তুরের তোতলানীতে বাকা হাসে তীব্র……
— তোমার চোখ বলে দিচ্ছে তুমি আমাকে ভালবাস…. যদি লজ্জা পেয়ে থাকো তাহলে বলতে হবে না।
— এরকম কিছু না। [ হাত ঘষতে ঘষতে ]
— তারমানে কি আমি ভুল?
— নাহহ মানে….
এবার হো হো করে হেশে উঠে তীব্র…… তুরকে কাছে এনে কোলে তুলে নেয়৷
— কি হলো কোলে তুললেন কেন? 🙄
— তুমি জান ভালবাসা কাকে বলে? ভালোবাসার ডেফিনেশন কি?
— ভালোবাসার আবার ডেফিনেশন হয় নাকি?
— দুনিয়ায় সবকিছু ডেফিনেশনে হয়। আর তোমার মনে আমার জন্য যে ফিলিংসটা বাসা বেধেছে আজকে আমি তোমাকে তার মানে বলব।
— কারন আমিও তোমাকে ভালোবাসতে চাই তুর….
— দেখুন আপনার কথার আগা মাথা পাচ্ছি না আমি। তাই আমাকে ছাড়ুন।
তুরকে আরো শক্ত করে ধরল তীব্র….
— ভেবে দেখ ছেড়ে দিলে কিন্তু চরম মুল্য দিতে হবে তোমাকে, তার দোষ আমাকে দিতে পারবে না।
— আগে নিচে নামান।
— ওকে….
তুরকে নিচে নামালেই তুর সরে যেতে নেয়। কিন্তু তীব্র ওকে টেনে শক্ত করে ওর কোমর চেপে ধরে…… ওকে নিজের মধ্যে মিশিয়ে নেয়।
— আবার কি হল?
— ওইযে বলেছি.. ডেফিনেশন অফ লাভ…..
তারপর তীব্র নিজের একহাত তুরের কোমরে রাখে আরেকহাত ওর ঘাড়ে। তুরের ঠোঁটের দিকে এগোতে থাকে…..আর তুরের খুব আনইজি ফিল হতে থাকে।
— আপনি….
— হুসসস…. তোমার না কিসের অনুভুতি জানার ইচ্ছে ছিল। আজ নাহয় তা বুঝে নিও।।
— মানে…. [ ঢোক গিলে ]
তীব্র ওর ঠোঁটের কাছে আসতেই তুর চোখ বন্ধ করে নেয়। ঠিক তখনি তুর নিজের ঘাড়ে সুচ ফোটার আভাস পায়। সঙ্গে সঙ্গে নিজের ঘাড় চেপে ব্যাথায় আর্তনাদ করে ঘাড়ে হাত দিতেই তীব্র ওকে ছেড়ে দেয়। আর তুর ছটফট করে মেঝেতে বসে পরে। এটা দেখে তীব্র ও তুরের সাথে মাটিতে বসে পরে…. বেশ চিন্তিত হয়েই তুরের গালে হাত দিয়ে বলে উঠে….
— কি হয়েছে তোমার?
— জানিনা তীব্র। কিন্তু মনে হলো ঘাড়ে কিছু ফুটল।
— কই দেখি।
তারপর জায়গাটা দেখে বলল কই কিছু নাই তো।
— জানিনা। কিন্তু আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। মাথায় প্রচন্ড যন্ত্রণা হচ্ছে মনে হয় ছিড়ে যাচ্ছে। [ দুহাতে মাথা চেপে ধরে। ] তীব্র আর কিছু বলার আগেই তুরের সামনে সবটা ঝাপসা হয়ে আসে। আর ও ওখানেই জ্ঞান হারায় ]
এটা দেখে তীব্র ওর পাশে বসে ওর পালস চেক করে। তারপর নিজের হাতে থাকা পিনটা একটা প্লাস্টিকের ব্যাগে পিনটা রেখে বাথরুমে গিয়ে নিজের হাতটা ভালোভাবে ওয়াস করে নেয়। তারপর টাওয়ালে মুছে বেড়িয়ে আসে।
তারপর তুরকে কোলে তুলে মেঝেতে করা বিছানায় শুইয়ে নিজেও ওর পাশে শুয়ে পরে।
— ভালো যখন বেসেছ তার দাম তো তোমাকে দিতে হবে তুর বেবি। ভালোবাসা অনেক দামী বস্তু। এভাবে সস্তায় যদি পেয়ে যাও তার মুল্য কি? ভালোবাসতে অনেক যন্ত্রনা সইতে হবে। আর তাই এইটুকু তো তোমাকে সইতেই হবে। তায়ানকে অনেক বার নিষেধ করেছি শুনেনি আমার কথা। তোমাকে বলেছি তুমিও সেই বোকার মত এক কাজ করলে। ভালোবাসার এত কাঙাল কেন তোমরা…… সে যাই হোক আমার তো আমার কাজ নিয়ে কথা। সেটা পুরন হলেই হলো।
তারপর তীব্র তুরের দিকে ফিরে তুরের গালে হাত রাখে।
— এখন থেকে আমি যা বলব সেটাই তোমার কাছে সত্যি হবে তুর। দিনকে রাত বললে তুমি তাই মানতে বাধ্য। আজ থেকে তুমি পরিপুর্ন ভাবে আমার বন্দীনী। আর এটাই তার অভিশেখ……. বেশি কষ্ট না হলেও অনেকটা সময় দিতে হয়েছে…. and thanks to you robo cat…. তুমি না থাকলে এতটা সম্ভব ই হতো না।
তীব্র রোবো ক্যাটটাকে এমন ভাবে ফাংশন করে রেখেছিল যাতে তুরের প্রত্যেকটা কথা তীব্রকে ঘিরেই হয়। যাতে তুরের মনে হয় তীব্র ওকে ভালোবাসে আর তুর নিজেও তীব্র কে ভালোবেসে ফেলেছে। একজন ম্যাডিক্যাল সাইন্সের স্টুডেন্ট হওয়ার কারনে তীব্র মানুষের ব্রেনের ফাংশন সম্পর্কে অবগত। আর বিশেষ করে তুরের বয়সী মেয়েদের ব্রেনের ব্যাপ্তি কেমন, কিসে তারা দ্রুত এট্রাকট্রেট হয় তীব্র তা খুব ভালোভাবেই জানে….. আর তাই রোবো ক্যাটকে দিয়ে তীব্র দীর্ঘ সময় নিয়ে একপ্রকার তুরের ব্রেন ওয়াস করে। আর তুর যখন কাল ওর সাথে ওরকম বিহেভ করে তখন তীব্রের বুঝতে বাকি থাকে না ও ওর কাজে সাফল্যের সাথে উত্তির্ন হয়েছে।
তীব্র তুরের নাকে মুখে আঙুল দিয়ে ছুইয়ে দিতে থাকে।
— জানোতো তুর বেবি ডক্টরি নাকি মহত পেশা। ডক্টর রা নাকি অনেক দয়ালু আর নরম মনের মানুষ হয়। কিন্তু যারা এটা ভাবে তারা ভুলে যায় এই ডক্টর রাই দিনে হাজার হাজার লাশ দেখতে দেখতে নিজের ভিতরের অনুভুতি মরে যায়। আর সবচেয়ে যেটা মজার সেটা হলো সবচেয়ে বড় অভিনেতা হলো ডক্টররা কেননা ওরা মরা দেখতে দেখতে এতটাই অবস্থ যে কেউ মারা গেলে সামান্য কষ্ট টুকু হয়না কিন্তু যখন পেসেন্টের গার্জিয়ানদের সামনে আসে তখন কিন্তু ঠিক ভারী উদাস মুখ করে অভিনয় করে…. সত্যি বলতে ওদের চেয়ে বেশি হার্টলেস কেউ হয় না। যেমন আমাকেই দেখ এই হাতে কত মানুষকে বাচিয়েছি জানিনা। আবার কত মানুষ মরেছে তাও জানিনা। দুইটাই আমার দায়িত্ব। তায়ান আমাকে বলত আমার নাকি ডক্টর হওয়া উচিত না কেননা আমি হার্টলেস। আর ডক্টর হলে নাকি পাথর হয়ে যাব। আজ তার পরিচয় নিজেই পেলাম। এতদিন হয়ে গেল অথচ তোমার কষ্টে নিজের খারাপ লাগা আনতে পারিনি৷ যেটা এসেছে তা হচ্ছে নিজের নিষ্ঠুরতার প্রতি আক্ষেপ।
তারপর কিছুক্ষন চুপ থাকে তীব্র…..
— খেলার আসল মজা এবার আসবে তুর বেবি।দেখা যাক কথা কোথাকার জল কোথায় গিয়ে গড়ায়…. সেটা তায়্যিরাত পর্যন্ত যায় নাকি তুরের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকে….
,
,
,
,
,
,
,
,
,,
[ বাকিটা পরের পর্বে জানবেন ]
আশা করি বুঝতে পেরেছেন কেন তুর এত কিছুর পর কেন তীব্রের প্রতি দুর্বল হয়েছে। আর এটা হিউম্যান সাইকোলজি। দেখল আর ভালাবাসা হয়ে গেল এরকম কোন ব্যাপার না।
আর অনেকের কাছে তীব্রকে ডাক্তার হিসেবে নাকি ভাইলেন্ট লাগছে না।🤣🤣🤣 সেইটা খুব তাড়াতাড়ি বুঝতে পারবেন আসলেই কেন দেওয়া হয়েছে😴😴
জানি অনেকের মনে প্রশ্ন। আশা করি আজকে আরেকটা পার্ট দিব। আর সবটা ক্লিয়ার করব তায়ানের। তবে পার্ট ছোট বলে কেউ কিছু বলবেন না। বড় করতে গিয়ে নিয়মিত দিতে পারিনা। তবে বেশি ছোট হবে না।
এখন আপনারা বলেন ছোট হলেও নিয়মিত চান নাকি বড় করে ১ দিন পর পর।
তবে অযথা কাহিনি বড় করব না। যদি মনে কোন কাহিনী এড না হলে ভালো হত জানাবেন। তবে আমি কারন ছাড়া কোনো কিছু এড করি না। প্রতিটি জিনিসের ব্যাখা পরের পার্ট পরলেই বুঝবেন। অনেকে বলেছেন রোবো ক্যাট না আনলে ভালো হত। এই পার্ট পরে কি প্রশ্ন সত্যি তাই।
Åriyâñà Jâbiñ Mêhèr
#Åriyâñà_Jâbiñ_Mêhèr