বন্ধ দরজায় তুমি🖤পর্ব-৫১

0
814

#বন্ধ_দরজায়_তুমি🖤
#Written_By_Åriyâñà_Jâbiñ_Mêhèr [ Mêhèr ]
#Part: 51…..

সবাই তো একই… স্বার্থপর।

🖤
কথাগুলো ভেবেই বেলকনিতে দাঁড়িয়ে নিচে সুইমিং পুলে থাকা, তুর-তাইয়্যানের দিকে তাকিয়ে কফিতে চুমুক দেয় তীব্র।

কথাগুলো মনে পরতেই আরেকটা ভাবনা ওর মাথায় আসে। ও যা করেছে সেটা কী শুধুই নিজের প্রোপার্টির জন্য ছিল? তাহলে তুরকে ছেড়ে না দিয়ে শত অবহেলা সহ্য করে তুরের কাছে পরে ছিল সেটা কী শুধুই স্বার্থ ছিল? নাকি তুর পালিয়ে যাওয়ার পর ওর জন্য পাগল হয়ে পথে পথে তীব্র খুঁজে বেড়িয়েছে তা স্বার্থ ছিল? তখন তো মাথায় এটাও ছিল না, তুরের কাছ থেকে ওর কী চাই? মনে একটাই চাওয়া ছিল, শুধু তুরকে চাই।

হ্যাঁ , এটাও ঠিক তীব্র যা করেছে সব প্রোপার্টির জন্য। কিন্তু ওর কী আদো তাতে চাহিদা ছিল? মানে সবটা কি লোভে পরে করেছিল?

তীব্র নিজেও জানত না ওর বাবা কে? সোনার চামচ নিয়ে জন্মগ্রহন করলেও ওর বেড়ে উঠা সাধারন আর পাঁচটা ছেলের মতই ছিল। তেমন কোন চাহিদা ছিল না। কিন্তু তীব্র যখন নিজের পরিচয় জানতে পেরেছে এটা ভেবে কখনোই খুশি হতে পারেনি যে ও একজন বিলিনিয়ার বাবার সন্তান। বরং অভিশাপ মনে হয়েছে এই প্রোপার্টির জন্য। এই প্রোপার্টির জন্য মাকে হারাতে হয়েছে, বাবার থেকে দূরে থাকতে হয়েছে, একটা নির্দোষ মেয়েকে… তবুও যখন মেয়েটাকে ভালোবেসেছে, মেয়েটার মত করে সব শাস্তি মাথা পেতে নিতে চেয়েছে। শুধুমাত্র এই প্রোপার্টির জন্য পারেনি। পারেনি ভালোবাসার মানুষকে সুস্থ করতে, তার পাশে থাকতে। চলে যেতে হয়েছে তীব্রকে। ভালোবাসার মানুষের সুরক্ষা দিতে তাকে কয়েদির মত আটকে রাখতে হয়েছে। নিজের সন্তানের সুরক্ষা দিতে পালিয়ে বেড়িয়েছে।

এখন প্রশ্ন এটা হতে পারে তীব্র কেন সবকিছু ছেঁড়ে গেল না। যদি লোভ না ছিল তাহলে সব ছেঁড়ে দিত। কিন্তু তীব্র তা কেন করল না?

আপাতভাবে কেউ দেখবেনা সে কারন।

যখন বাবার এত প্রোপার্টি পেয়েছে তবুও ওর নিজের স্বপ্নটা শেষ করেনি। ডাক্তারিকেই বেছে নিয়েছে। বিজনেসের কাজ আর দু‘টোর মাঝে ব্যালেন্স রাখাটা যে সহজ ছিল না। সেটা সম্ভব হয়েছে রিদ্ধ , ম্যানেজার , আর ওর বন্ধুদের জন্য। তীব্র যখন প্রোপার্টি ভাগ করার উইল পেয়েছে, চেয়েছে সব ছেড়ে নিজের মত একটা সিমপল লাইফ লিড করবে। কিন্তু তা করতে পারেনি শুধুমাত্র বাবার ভরসার মূল্য দিতে।

কারন ওর বাবার তৈরি করা কোম্পনির সাথে জড়িয়ে আছে হাজার হাজার মানুষের জীবিকা।বাবার বিজনেসের স্টাফ, ওয়ার্কার, সাথে নিজের তৈরি হসপিটালের সবার জীবিকার দায়িত্ব, হঠাৎ করেই এতদিনের সব দায়িত্ব ছেড়ে আবেগের বশে যেতে পারত না। বাস্তবতার কাছে আবেগের স্হান যৎসামান্য। বাস্তবতা অনেক কঠিন… কখনো কখনো বৃহৎ স্বার্থে ক্ষুদ্র বিসর্জন দিতে হয়। ওইমুহুর্তে তীব্র বাধ্য ছিল নিজের প্রোপার্টি বাঁচাতে। কারন যারা তীব্রের শেয়ার চাইত তাদের শুধু Sr. কোম্পানির টাকা দরকার ছিল। কোম্পানি নিয়ে কোন মাথা ব্যাথা ছিল না। আর তীব্রের হাত থেকে সব যদি ট্রাস্টে বা শেয়ার হোল্ডারদের কাছে চলে যায় তাহলে Sr. কোম্পানি এন্ড হসপিটাল বন্ধ হয়ে যেত। সাথে বন্ধ হয়ে যেত হাজার মানুষের মুখের খাবার। বাবার সমস্ত পরিশ্রম,ত্যাগ মিথ্যে হয়ে যেত। মায়ের মৃত্যু ব্যর্থ হয়ে যেত। নিজেকে কাপুরুষ মনে হত। প্রানের ভয়ে বাবার পরিশ্রম আরেকজনের হাতে তুলে দিয়েছে। ছোট হয়ে যেত নিজের চোখে।

এসব বাদ রেখেও যদি তীব্র প্রোপার্টি ছাড়তে চাইত তাতেও লাভ হত না। কারন ওয়ারিশ হিসেবে তীব্রকে কেউ ছাড়ত না। ওকে মরতেই হত। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছিল চাইলেও পারত না জীবন-মরনের এই পাশা না খেলে। ওকে এই খেলা শেষ করতেই হত।তাঁর দু‘টো পথ খোলা ছিল ওর কাছে ,,,
১. ওকে সবটা ছেড়ে দিয়ে আবেগের বশবর্তী হয়ে সেচ্ছায় জীবন দেওয়া নাহলে নিজের পাপ্যটা না নিয়ে কাপুরুষের মত পালিয়ে জীবন কাঁটানো।

২.নিজের সাথে অন্যদের ভবিষ্যত বিবেচনা করে বাস্তবতাকে মেনে স্বার্থপর হওয়া।

তাই তীব্র ২য় পথ বাছে। স্বার্থপরতার তখন খুব বেশি দরকার ছিলো। তুরের দোষ ছিলোনা ঠিকি । কিন্তু এত গুলো মানুষের কথা চিন্তু করে বাধ্য হয়ে বলি দিতে হয়েছিল তুরকে। তোয়ার জন্য যতদিন ওকে আটকে রেখেছিল ঠিক ততদিন ওর সাথে রুঢ় আচরণ করেছে তীব্র। কিন্তু যেদিন থেকে তুরকে নিজের সাথে জড়ানোর চেষ্টা করেছে সেদিন থেকেই বদলে নিয়েছে নিজেকে। নিজের সবটা উজার করে ভালোবেসেছে ওকে। ওর সব চাওয়া-পাওয়া পূরণ করতে চেয়েছে। স্বার্থের জন্য সবটা করলেও ভালোবাসাটা স্বার্থ ছিল না।

তবুও ও তুরের কাছে দোষী। যা কখনোই অস্বীকার করেনি । রেজিস্ট্রির কথা তুরকে জানাতে পারত না। তাহলে ওকে আনার ইতিহাস, নয় মিথ্যে বলতে হত। যা আরো কিছু পাপবোধ সৃষ্টি করত তীব্রের মনে। আর সত্যিটা বললে তুর কখনো মেনে নিত না। তাই তীব্র নিরুপায় হয়ে তুরের কাছে রেজিস্ট্রির কথা চেপে যায়। কিন্তু তুরকে শান্তি দেবার জন্য আবার বিয়ে করতে চায়।
.
.
.
নিজের পাপ-পূণ্যের হিসার কতটা নির্ভূলভাবে করেছে জানে না তীব্র। তবে নিজ বিচারে অন্যায় শুধু ও তুরের সাথেই করেছে। যার শাস্তিও পেয়েছে। আর আজ… ওর জীবনের সমস্ত প্রাপ্তি ওর কাছে। যদিও তার জন্য অনেক যন্ত্রনা পেতে হয়েছে। তাতে কী? যে ভালোবাসায় কষ্ট নেই তার মূল্য কী? সহজ পাপ্তির যেকোন জিনিসের মোহটা কিছুক্ষনের মাঝেই কেঁটে যায়। আর সাধনা থেকে যে প্রাপ্তি হয় তা সারাজীবনের জন্য মনে গেঁথে যায়। হ্যাঁ, তুর ওর জীবনের সাধনার সমান। সাধনা ফলই তুর৷
.
.
.
.
নিজের ভাবনা থেকে বেড়িয়ে কফির মগে চুমুক দিতে দিতে নিচে সুইমিং পুলে তুর-তাইয়্যানেকে গভীর ভাবে পর্যবেক্ষন করছে তীব্র।

তাইয়্যান নিজের মহাকার্যে ব্যস্ত হয়ে খেয়ালহীন হলেও তুরের উপরের দিকে চোখ পরতেই দেখে তীব্র তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। যেন শিকার ধরার জন্য শিকারী লক্ষ্য স্থীর করছে কোথায় আঘাত করা যেতে পারে? কোন আঘাতে শিকার দ্রুত ধরা পরবে। ওর দৃষ্টি যে শুধু তুরের দিকে তা বুঝতেও বেগ পেতে হচ্ছে না তুরের। তীব্রের ওমন চাহনিতে অস্বস্তি হচ্ছে । না চাইতেও নিজের শরীরের টি-শার্ট ঠিক করে নড়েচড়ে বসল তুর। যেন অচেনা কোন লোক ওর উপর বদ নজর দিচ্ছে। চোখ দিয়েই গিলে খাবে।

তুরের এই কান্ডে হাসি পেল তীব্রের। চুমুক দিতে গিয়েও কফির মগ সরিয়ে নিল মুখ থেকে। তা দেখে আড়চোখে ওর দিকে তাকানো তুরের রাগটা যেন আরো বেড়ে গেল। আর তীব্র …

আর পারল না তুর। ও রেগে তীব্রকে উদ্দেশ্য করে চেঁচিয়ে তাইয়্যানকে বলল, “ এই দেখ তো আশে-পাশে কোন হলুদ রঙের হাফ ড্রেস পরা বাদর দেখতে পাস কিনা? যে লেজ কাঁটা হনুমানের মত চেয়ে আছে। “

তুরের কথার মানে উদ্ধার করতে পারে না তাইয়্যান। বাদর ড্রেস পরা তাও হলুদ রঙের হাফ ড্রেস। আর বাদর হলে হনুমানের মত কীভাবে চেয়ে থাকবে? কিন্তু পরে ভাবল তাপাসি যখন বলেছে হতেও পারে। ও আশে-পাশে, উপর-নিচ চারদিকে দেখল। কিন্তু বাদর বা হনুমান কোথাও দেখতে পেল না। কিন্তু যা দেখল তাতে কিছুটা অবাক হলো। বাদর বা হনুমান কিছু না থাকলেও উন্মুক্ত শরীরে হলুদ রঙের হাঁটু অব্দি টাওজার পরে তীব্র দাঁড়িয়ে আছে। তারমানে তাপাসি কী ওর পাপাইকে বলল।

ও রেগে গিয়ে উঠে দাঁড়ায়, ” তুমি কী পাপাইকে বাদর বললে? ”

” বাদরের সন্তান বলে কথা, ভালো কেমতে হইব? ” ফিসফিস করে বলল তুর।

” কীহল তাপাসি? বলছ না যে? ”

তুর ওর দিকে না তাকিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে কাজ করতে করতে জবাব দিল, “ তোর বাবাকে বলি নাই । আমার বরকে বলছি। “

“ তোমার বর তো আমার পাপাই । মানে তো আমার পাপাইকেই বলছে? “ সন্দিহান তাইয়্যান। এটা শুনে বিরক্তির চোখে তাকায় তুর। বেশ অ্যাটিটিউডের সাথে বলে , “ তা নিয়ে কোন সন্দেহ আছে তোর। ”

“ তাপাসি…” চোখ রাঙিয়ে ।

“ ওই চুপ কর তো । তোর পাপাই বাদর। আর তুই হইলি হনুমান। রাম ভক্ত না সরি বান্দর ভক্ত হনুমান। “

তীব্র উপর থেকে ওদের কথা শুনছে। কিন্তু কিছু বলার নেই। তুর যতই ওকে আদর করুক। তাইয়্যান তো বাবা পাগল। তাও যদি তুর ওর সাথে শান্তিতে থাকত। তীব্রকে নিয়ে হিংসে করে বিধায় আরো বেশি ঝগড়া হয় দুজনের। সো মা-ছেলের মধ্যে কথা না বলাই ভালো। ছেলে মায়ের মত ঝগড়ুুুটে হবে তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই।

কিন্তু এখন ওদের ঝগড়া দেখার সময় নেই। কাল রাতে তুরকে যে থাপ্পাড়টা মেরেছে তার ঝাঁঝ যে তীব্রকে সহ্য করতে হবে বেশ বুঝতে পারছে। এ যে সেই আগের তুর নেই। শুধু ভালোবাসাই আগের মতন আছে। তাছাড়া এতদিনের ওর প্রতি উদাসীনতা। তা কী এমনি এমনি মেনে নেবে?

যাই হোক, জ্বলন্ত কয়লার উপর যখন হাঁটতে হবে তাহলে কী পায়ে ফোসকা পরার ভয় পাওয়া চলে? যখন চলতেই হবে তাহলে অপেক্ষা না করাই ভালো।

তুর-তাইয়্যানের সাথে কথা কাঁটাকাঁটিতে ব্যস্ত তখনি তীব্র তাইয়্যানের উদ্দেশ্য জোরে বলে উঠল, ” পাপাই আমার না একটু কাজ আছে। কী করব? ”

কথাটা শুনে নিজেদের ঝগড়া থামিয়ে তুর-তাইয়্যান ওর দিকে তাকায়। তীব্র এক চুমুক কফিতে দিয়ে বলে, ” তোমরা কেউ আসো না। ”

তুর-তাইয়্যান নিজেদের দিকে চোখাচোখি করল। বোঝাই যাচ্ছে দুজনেই যেতে নারাজ। তাইয়্যান নিজের কাজ ছেড়ে উঠতে চায় না। আর তুর তীব্রের কাছে যেতে চায় না।

” কী হল? কেউ আসবে কীনা? ”

তুর তাইয়্যানের দিকে তাকায়। ও ভাবলেশহীন ভাবে কাজ করছে। যেন তীব্রের ডাক শুনতেই পায়নি। তাইয়্যানের এমন রুপ দেখে তুর ভারী গলায় বলে, ” যাও তোমার পাপা ডাকছে। তুমি তোমার পাপার ছেলে বলে কথা। ”

তাইয়্যান নিজের ভঙ্গিমা অপরিবর্তিত রেখে বলল, ” তোমারও তো বর হয় নাকি? আর আমি বাচ্চা। পাপাইয়ের দেওয়া কাজ পারব নাকি? ”

তীব্র প্রতুত্তর না পেয়ে ” কী হলো ” বলতেই তাইয়্যান জবাব দিল, ” পাপাই আমি বিজি। তুমি বরং তাপাসিকে বলো। ওর কোন কাজ নেই। শুধু বসে বসে আমায় ডিস্টার্ব. করছে।. ”

কথাটা শুনে তুর বিস্ফোরিত চোখে তাইয়্যানের দিকে তাকায়৷

” আমি বসে আছি মানে! তাহলে এগুলো… ”

ওর কথায় পাত্তা না দিয়েই তাইয়্যান বলল, ” পাপাই আমি আসব? ”

তীব্র নিজের হাসি চেপে বলল, ” তোমার তাপাসি আসলেই বেটার হয়। তাহলে কাজটা ঠিক ভাবে করা যাবে। এটা বড়দের কাজ। তুমি বুঝবে না। ”

তীব্রের কথায় তাইয়্যান যেন সুযোগ পেয়ে গেল না যাওয়ার। অন্যদিকে ওর কথা তুরের ঠিক মনে হলো না। খটকা লাগল।

” এই যে তাপাসি পাপাই ডাকছে। তোমাকে যেতে বলছে যাও। ”

তুর রেগে গিয়ে, ” যাবে না ” বলে দিল। তা দেখে তাইয়্যান বলল, ” পাপাই তাপাসি যেতে চাইছে না। ”

কফির মগটা হাতে শক্ত করে ধরে দাঁত কিড়মিড় করতে করতে বলল, ” ওওঅঅ… দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা। ”

” পাপাই তাল পাতার সিপাহি তো… ”

” পাপাই তুমি জান তোমার পাতাসি আমার উপর রাগ করেছে। কেন জানো? ”

” কেন… ”

কথাটা শুনেই তুরের বুক ধক করে উঠল। তীব্র যে ওকে থাপ্পড় মেরেছে সেটা কী বলবে?

” আসলে পাপাই… ”

তুর ওর কথার মাঝেই বলে ফেলল, ” কিছু না তাইয়্যান…. ”

“ আরে এভাবে কীভাবে কিছু না। আসলে পাপাই আমি তোমাকে আদর করি কিন্তু তোমার তাপাসিকে তো করি না। তাই কাল রাতে ঝগড়া হয়েছে যাতে আমি তোমার তাপাসিকে আদ… ”

” আমি আসছি… ” দ্রুত বলে ফেলল তুর। ” হ্যাঁ.. আমি আসছি। তাইয়্যান তুই কাজ শেষ কর। ”

তুর রেগে বাড়ির ভিতর চলে এলো। আর তাইয়্যান ওখানেই নিজের কাজে ব্যস্ত। তুরকে বাড়ির ভিতর আসতে দেখেই তীব্র নিজের ঠোঁটে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে কফিতে ঠোঁট ছোঁয়ালো। তারপর কাপের দিকে তাকিয়ে বলল,

” গরম কফি ফুঁ দিয়ে ধীরে ধীরে ঠান্ডা করে খাওয়ার স্বাদই আলাদা। আর অতিরিক্ত ঠান্ডা হলে হয় এক নিমিষে খেতে হয় আর নয়ত গরম করে। আর তাতেও যদি কাজ না হয় তাহলে… “
.
.
.

রুমের ভিতর এসে শুধু এতটুকুই বলতে পারল, ” সমস্যা কী আপনার? নিজের ছেলেকে এটা বোঝাচ্ছেন ওর মা ওর উপর হিংসা করে ওর পাপাই এর আদর খাও… ”

কথা শেষ হবার আগেই তীব্র তুরের দিকে ঠান্ডা কফি ছুঁড়ে মারে। যা ওর মুখের উপর পড়লে ক্ষেপে যায় তুর।

” করছেন’টা কী মি. সৌহার্দ্য রায়হান? আমি আপনার সার্ভেন্ট নই। ” চিৎকার করে বলল তুর।

তীব্র ওর কথায় কিছুটা ভ্রু কুঁচকে ধপ করে বিছানায় বসে দু’পাশে হাত রাখল।

” সৌহার্দ্য রায়হান… নট ব্যাড… ”

তুর রাগে ফোঁসফোঁস করতে করতে অন্যদিকে মুখ ঘোরায়। দাঁত কিড়মিড় করে চাপা গলায় বলল, ” আপনি যেমন সবাইকে তীব্র নামে ডাকার অনুমতি দেন না। সেটা শুধু আপনার বন্দীনির জন্য। তেমন আমিও… ”

তীব্রের ঠোঁটের কোণে হাসির রেশ আসল। কিন্তু তুর অন্যদিকে তাকানোর কারনে তা দেখতে পেল না। তীব্র কিছুটা ব্যঙ্গাত্মকভাবে জিজ্ঞেস করল, ” ঠিক তীব্র ডাকটা শুধু আমার বন্দীনির জন্য। তাহলে তুমি….”

” তেমন আমিও। তীব্র ডাক আমি শুধু তাকেই দিতাম যে আমাকে পাগলের মত ভালোবাসত। সে আপনি নন। তাই আমার মুখে তীব্র ডাক শোনার অধিকার আপনার নেই। ” স্পষ্ট ভাবে কঠোর কণ্ঠে বলল তুর। তীব্র কিছু বলতে যাবে তার আগেই তুর আবার বলে উঠল, ” আপনি যদি ভেবে থাকেন তুর আপনার হাতের পুতুল। আপনার জন্য দেশ ছেঁড়েছে, পরিবার, আত্নীয়-স্ব্জন, বন্ধু-বান্ধব সব ছেঁড়েছে। তাহলে আপনি আপনি ভুল করবেন। আমি কোন কিছুই সৌহার্দ্য রায়হান বা কারো কথায় করিনি। আমি সবকিছু ছেঁড়েছি। এখানে এসেছি আমার সন্তান তাইয়্যান আর আমার ভালোবাসা তীব্রের জন্য। নিজের সবটা দিয়ে ওদের ভালোরাখার জন্য… ”

এবার তুর ওর দিকে তাকায়। তীব্র সিরিয়াস হয়েই ওর কথা গুলো থুতনিতে ভর দিয়ে শুনছে। তা দেখে তুর আত্নভিমানী কণ্ঠে বলে উঠল, ” আর সে যদি আমি আমার কাঙ্ক্ষিত ভালোবাসার মানুষটিকে না পাই। যদি তার সবকিছু আমায় ঘিরে না হয়। আমি যদি তার কাছে আনন্দদায়ক না থাকি, তবে একটা কথা মনে রাখবেন ড. রায়হান… ”

নিশ্চুপ তীব্র নির্বাক হয়ে ওর কথা শুনছে।

” মনে রাখবেন তুর তার আর্তসন্মান হারিয়ে আপনার দাসী হয়ে থাকবে না। ”

” তুর… ”

” উহুম… আমার কথা শেষ হয়নি তী… ” তীব্র নামে ডাকতে গিয়েও থেমে গেল। দু’চোখ বন্ধ করে শক্ত হয়ে বলল, ” যখন তীব্রকে পাব না। তাহলে এখানে থাকা আমার জন্য সুখকর নয়। যেহেতু তাইয়্যান আপনাকে ছাড়া থাকতে পারবে না। তাই আমি ওর খুশিতে এখানে আপনার সাথে থাকব। তবে মনে রাখবেন সেটা শুধুমাত্র আমার সন্তানের জন্য। ”

তীব্র উঠে তুরের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে চোখে চোখ রাখে, ” মানে তুমি বলতে চাইছ আমাকে তোমার দরকার নেই। ”

কথাটা শুনে আরো ক্ষেপে গেল তুর। তীব্র খালি গায়ে থাকার কারনে রাগে দু’হাতে তীব্রের কাঁধে নখ বসিয়ে তীব্রকে কাছে টেনে বলে, ” আমি তো বলিনি আমার দরকার নেই। আমার দরকার তবে আপনার নয়। তীব্রের…। ”

তীব্র ওর চোখে প্রচন্ড ক্রোধের অগ্নি দেখতে পাচ্ছে। যেন তুর পারে না, এখনি ওর অশান্ত মনের ক্ষোভের আগুন নেভাতে, তীব্রকেই না জ্বালিয়ে দেয়৷ তুরের মনের এই তাপ যেন তীব্রের হৃদয় শীতল করে দিচ্ছে। কিন্তু তীব্র প্রশান্তির সেই আভাস মুখে ফুটিয়ে তুলতে নারাজ। তাই মুখের বিস্ময়ের ভাব অপরিবর্তিত রেখে বলল, ” ভেবে দেখ তুর… সত্যি তীব্রকে চাও তো? ”

মাথা নাড়ায় তুর, ” হ্যাঁ… আমি আমার তীব্রকে চাই। সৌহার্দ্যকে না। যাকে আমি ভালোবেসেছি। যার ঘুমের সঙ্গী আমি, আমি ছাড়া যার জীবনের মানে শূন্য, যে যেকোন মূল্যে আমাকে চায়। সেই তীব্রকে আমার চাই। ”

” তীব্র কিন্তু কোন কিছুই সহজ ভাবে চায় না। বুঝতেই পারছ… জানোই তো। আর আমিতো বলেই দিয়েছি তীব্র শুধু তার বন্দিনীর জন্য। ” তুরের কানের কাছে গিয়ে বলে, ” আর তীব্রের বন্দীনি হলে অনেক বেশি কষ্ট সহ্য করতে হবে। নাহলে তীব্রকে পাবে না। ”

কথাটা শুনে নিজেকে আটকাতে পারল না তুর। প্রচন্ড রাগে একহাতে তীব্রের গলা পেঁচিয়ে গলায় নখ বসিয়ে ডানহাতে তীব্রের গাল চেপে ধরে, ” আপনার কী মনে হয়? তুর ননীর পুতুল৷ হালকা টোকায় ভেঙ্গে পরে যাবে। নাকি কাঠের পুতুল যে আপনার কথায় নাচবে? ”

মাথা নাড়ায় তীব্র।

” সেচ্ছায় বিয়ে করতে রাজি হয়েছি বলে মনে করবেন না আপনাকে ছাড়া তুর থাকতে পারবে না। আর ৫ বছরে তা প্রুফ করে দিয়েছি আমি। নেহাত তাইয়্যান ছিল নাহলে… ”

তীব্রের গাল ছেড়ে ওর বুকে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দেয় তুর। আচমকা তুরের এই কান্ডে অচেতন তীব্র নিজেকে সামলাতে না পেরে ছিটকে বেডে পরে যায়।

” একটা কথা মনে রাখবেন মি. সৌহার্দ্য রায়হান তুর নিজের ভালোবাসার জন্য সবকিছু করতে পারে। নিজেকে বাঁচাতেও জানে, কাউকে মারতেও… আর তুরের ভালোবাসাও হাট-বাজারে বিক্রি করা মোয়া না যে চাইলেই কিনে আনতে পারবেন। ”

” কী চাও তুমি? ”

” আমি কিছুই চাই না। যেহেতু আমাকে আপনার প্রয়োজন নেই। তাই কারো অপ্রয়োজনীয় কিছু হতে চাই না আমি। আমার ব্যাপারে আর আপনাকে উদাসীনতা দেখাতে হবে না।আপনি শুধু তাইয়্যানের জন্য আমাকে বিয়ে করেছেন। সো আমার ভ্যারাইটি যাতে আছে আমি শুধু সেই কাজ করব। এখানে শুধুমাত্র তাইয়্যানের মা হয়ে থাকব। ”

কথাগুলো বলে তুর চলে যেতে নেয়। তখনি তীব্র বিছানা থেকে উঠে ওর হাত ধরে টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসে, ” আর যদি কখনো তোমার দিকে হাত বাড়াই তো… ”

” তুর শান্ত মুখ ভঙ্গিতে তীব্রের হাত সরাতে সরাতে জবাব দেয়, ” সেই ভুলটা কখনো করবেন না। আমি কারো মুহুর্তের নয় জীবনের প্রয়োজন হতে চাই। ”

” তুমি বাধ্য আমার কাছে। সেচ্ছায় বিয়ে করেছ আমাকে। ”

” তাহলে বাধ্য করে দেখান। না তো করিনি। তবে একটা কথা মনে রাখবেন তুর সেচ্ছায় আর আপনার কাছে যাবে না। ”

কথাটা বলে চলে যেতে নিলে তীব্র ওকে টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। ” বাধ্য করার মানে জানো তুমি? ”

” আমি শুধু এটাই আপনাকে বললাম আমি কারো অবহেলার পাত্রী হয়ে না। তাইয়্যানের মা হয়ে থাকব। সো আপনার আরো সুবিধা হবে। কষ্ট করে আমাকে এড়িয়ে চলতে হবে না। কারন আমি নিজেই আপনার থেকে দূরত্ব বজায় রাখব। ”

ওরা আর কিছু বলতে যাবে তার আগেই শুনতে পায় তাইয়্যানের গলা, ” তোমরা কী করছ? ”

দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে তাইয়্যান দাঁড়িয়ে আছে৷ এবার দু’জন নিজেদের দিকে তাকায়। দুজন দুজনের খুব কাছে একে-অপরকে ধরে আছে। ব্যপারটা বুঝতেই দুজনে ছিঁটকে সরে যায়। তাইয়্যান ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে বলে, ” কী হল? কী করছিলে তোমরা? আর পাপাই তুমি কী কাজের জন্য ডেকেছ। তাপাসি সেই কখন এসেছে? ”

তুর কী বলবে বুঝতে পারছে না। তখনি তীব্র বলে, ” আরে আমার কাজ তো শেষ। কিন্তু তোমার তাপাসির চোখে কিছু পরেছে তাই বের করে দিচ্ছিলাম। ”

তীব্রের কথা শুনে তাইয়্যান দৌড়ে তুরের কাছে যায়। ” কই দেখি? কী ঢুকেছে? আমি বের করে দিচ্ছি। ” ছেলের এমন কান্ডে অবাক তুর। তাইয়্যান এতটা পাগল হয়ে গেছে।

” তাইয়্যান… তাইয়্যান। ( ধমক দিয়ে ) আমি ঠিক আছি। নেই চোখে কিছু। তুই চল আমার সাথে। ”

তাইয়্যানকে জোর করে নিয়ে যায় সেখান থেকে। ও যেতেই তীব্র বিছানায় বসে নিজ মনে হেসে দেয়।

” তোমার এই রুপটাই আমি দেখতে চাই তুর। আমি কখনো চাই না তুমি নিজে থেকে আমার বাধ্যতা স্বীকার করো। আমি নিজের মত করে তোমায় বাধ্য করতে চাই আমায় ভালোবাসতে। বাধ্য করে দেখাতে বলেছ। এখন আর আমার দোষ কোথায়…”

,
,

,
🖤

তুর তাইয়্যানকে নিয়ে বাইরে এলে একজন স্টাফ এসে তুরকে ইংরেজিতে বলে, ” স্যার আপনারদের নিয়ে বাইরে যাবে। তাই আপনাদের ফ্রেশ হয়ে তৈরি হয়ে নিতে বলল।”

” কিন্তু কোথায় যাবে? ”

” দুঃখিত, সেটা আমাকে বলা হয়নি। আমাকে শুধু আপনাদের জানানোর কথা বলা হয়েছে। ”

তুর আর কিছু জিজ্ঞেস করতে গিয়েও করল না। ” আচ্ছা আপনি যান… ” ওনি চলে যেতেই তুর আপনমনে বলল, ” কোথায় যাবেন ওনি? ”

তখনি দেখে তাইয়্যান নেই। ও দৌড়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকে গেল। ওর পিছে তুর ও যায়। তাইয়্যান দৌড়ে ” পাপাই ” বলে একদম তীব্রের কোলে। খুশিতে গদগদ হয়ে কোলে উঠেই হাত-পা ছাড়াতে ছাড়াতে বলল, ” পাপাই আমরা কী ওই বাড়িতে যাচ্ছি… ”

ইয়েস…. আমরা ওইখানেই যাচ্ছি। ”

” তাহলে তো এবারো ড্রাইভ করব। ”

তীব্র কিছুটা ভাবান্তিত মুখ করে বলল, ” আমার পাপাই যখন চায় তখন… ওকে ডান। ”

” থ্যাংক ইউ… থ্যাংক ইউ সো মাচ। কবে যাব? ”

” রেডি হয়ে দুপুরের আগেই… ”

” ওকে… ” তীব্রের গালে চুমো দিয়ে কোল থেকে নেমে দৌড়। তখন তুর আবার রুমে ঢোকে।

” কোথায় যাচ্ছি আমরা? ”

তীব্র ভাবলেশহীন ভাবে জবাব দিল, ” গেলেই দেখতে পাবে। ”

কিন্তু… ”

” আহহ্! সবসময় এত প্রশ্ন করো কেন? গেলেই দেখতে পাবে। ওখানে নিয়ে বেঁচে দেব না তোমাকে। চিন্তা করো না। ”

” আপনার কোন বিশ্বাস নেই। দিতেও পারেন। ”

কথাটা শুনে কিছুটা গায় লাগল তীব্রের। ” মানে? ”

” কিনেই তো এনেছিলেন কোন এক জায়গা থেকে৷ তাই ভয় হয়। ”

তীব্র আর কথা বাড়াল না।” ওখানে বেশ কিছুদিন থাকব। তোমার যা যা লাগবে প্যাক করে নেও। আমার আর তাইয়্যানেরটা না করলেও হবে। তুমিও না চাইলে করতে হবে না। তোমার সবকিছুই সেখানে আছে… ”

” মানে… ”

” আগে তো সেখানেই ছিলে। তাও… যাই হোক তবুও যা যা লাগবে সাথে নিয়ে নেও। ”

তুরকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই বেড়িয়ে গেল।
.
.
.
.
.
.
.

🖤
দুপুরের দিকে সবকিছু নিয়ে রেডি হলো যাওয়ার জন্য। তুর এখনো জানে না কোথায় যাচ্ছে। আর জেনেও তেমন লাভ নেই। এটা অস্ট্রেলিয়া। বাংলাদেশ নয় যে কোন জায়গার নাম বললে চিন্তে পারবে। তাইয়্যানকে জিজ্ঞেস করেছিল। কিন্তু তাইয়্যান যা ব্যাক্ষা দিয়েছে তা ও বুঝেছে কিনা তাতেই সন্দিহান তুর।

তীব্র ড্রাইভারের সাথে সামনে বসেছে। তুর-তাইয়্যান পিছনের সিটে। তীব্র গ্লাসের আয়নায় তুরকে দেখল। তুর চুল ঠিক করতে করতে আয়নার দিকে তাকাতেই তীব্র চোখ ফিরিয়ে নেয়। এটা দেখে তুর বলল, ” আমরা কখন পৌঁছাব….? ”

কথাটা শুনেই তাইয়্যান মুখে হাত দিয়ে হেসে দেয়। যেন তুর কত বড় একটা নির্বুদ্ধিতার প্রমান দিয়েছে।

তা দেখে তীব্র ধমকের সুরে বলে , ” তাইয়্যান… ”

আর কোন কথা হয় না ওদের মাঝে। গাড়ি চলতে শুরু করে। প্রায় ৩ঘন্টা পর ওরা এয়ারপোর্টে এসে পৌঁছায়। কিন্তু তুরকে অবাক করে দিয়ে ওরা একটা হেলিকপ্টারে উঠে। তীব্র আর তাইয়্যান নিজেদের আনন্দে মেতে আছে। তুর কিছু বলতে চাইলেও কেউ পাত্তা দিচ্ছে না।

নিচে সাগরের বিশাল নীল রঙের উত্তাল জলরাশি। সমুদ্রপৃষ্ঠের কয়েকশত ফুট উপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে ওরা। আনন্দে দিশেহারা করে দিতে পারে তাইয়্যান আর তুর। কিন্তু তীব্র। ও স্থবির হয়ে তুরের দিকে তাকিয়ে আছে। তুর চোখের ইশারা করতেই তীব্র হালকা হেসে দেয়। যার উত্তর ” কিছু না। ” তুর এই মানুষটাকে যে বুঝবে না জানে। তাই তার চেষ্টাও করল না।

কিছুক্ষন পর তুর নিজের সামনে দূরে একটা আইল্যান্ড দেখতে পায়। তখনি তীব্র আর তাইয়্যানের প্রস্তুতি শুরু হয়। যদিও আগে থেকেই শরীরে কীসব জড়িয়ে রেখেছিল আর এখন….

তীব্র আর তাইয়্যান কাঁধে বাগ নিয়ে হেলিকপ্টারের দরজার কাছে গেল। তা দেখে তুর বলল, ” দুজনের কী পাখি হওয়ার শখ হয়েছে নাকি? লাফ দিলে দিতেই পার। কিন্তু হাড্ডিগুড্ডি ভাঙলে… ”

কথাটা শুনে তীব্র তাইয়্যান একসাথে হেসে দেয়। তুর তার কারন উদ্ধারের আগেই। তীব্র তাইয়্যানকে ধরে লাফ দেয়। আর তাইয়্যান তুরের দিকে ফ্লায়িং কিস ছুঁড়ে বলে, ” বায় বায় তাপাসি….”

” তাইয়্যান…. ” তুর হ্যালিকপ্টারের দরজার কাছে এলেই হ্যালিকপ্টারে ওদের সাথে থাকা একজন লোক তুরকে ধরে নেয়। আরেকটু হলে পরেই যেত। ওনি তুরকে ধরে ভিতরের দিকে টেনে নিয়ে ইংরেজিতে বলে, ” ম্যাম শান্ত হন প্লিজ। ওনারা স্কাই ড্রাইভিং করছে। ”

এবার তুর নিজেকে শান্ত করে দেখে নেয়। প্রকৃত ব্যাপারটা উদ্ধার করতেই বুঝতে পারে কত’টা বোকামি করেছে? তীব্র-তাইয়্যান দুজনেই প্যারাসুটের দড়িতে ঝুলছে। দেহে প্রান ফিরে পায় তুর। তখনি রাগান্তিতভাবে বলে, ” তাইয়্যান এতটুকু বাচ্চা ছেলে কীভাবে? ”

” ম্যাম, রিলাক্স। আপনি বেশি ভাবছেন। এটা নতুন কিছু নয়। ওনারা সবসময় এমন করে। তাইয়্যান ছোট হলেই এতে অভ্যস্ত… ”

তুর আর কিছু বলল না। তুরের আগেই তাইয়্যান-তীব্র প্যারাসুটের সাহায্যে মাটিতে নেমে এলো। কিছুক্ষনের পর তুরও।

হ্যালিকপ্টার থেকে তুর নামতেই তীব্র আর ত্যাইয়ান হাইফাইভ করে। তাইয়্যান ভেংচি কাঁটতেই তুর রেগে ওদের কাছে যায়।

” সমস্যা কী তোমাদের? আমাকে একবার বলতে পারতে? আর এই তুই… বেশি বড় হয়ে গেছিস? আর আপনিও পা কেমন বাবা তীব্র এই ছোট বয়সে…. ”

তীব্র শান্ত ভঙ্গিতে বলে, ” কেউ একজন একটা কথা বলেছিল। কী শুনবে? ”

তীব্রের কথায় জিঙ্গাসুর দৃষ্টিতে তাকায় তুর। তা দেখে তীব্র উপহাসের সুরে বলল, ” যে দেশের মায়েরা বিড়ালের ভয় দেখিয়ে বাচ্চাকে ঘুম পারাতে চায়, সেদেশের সন্তানদের কাছে কী করে বাঘ স্বীকারের আশা করা যায়? তুমিও সেই মায়েদের মত কথা বলছ তুর। ”

ওর কথার উত্তর দিতে পারল না তুর।

” ছোট বাচ্চাদের সাহস দেখে যারা অবাক হয় তাদের ভাবনার পরিধি ছোট হয়৷ এটা আমি আমার বাবার কাছে জেনেছি। একটা কথা মনে রেখ তুর। ছোটবেলায় যে শিক্ষা সন্তান না পায় , বড় হয়ে একটা ছেলে বা মেয়ে কী করে তা নিজেই শিখবে? কথায় আছে না, হলে ৯ এ… আর নাহলে ৯০ তেও না। “

তুর চুপ।

“একটা কথা মনে রেখ, সব মেয়ে মা হতে পারে কিন্তু বীর জননী হতে না। তারাই হতে পারে, সন্তানদের আগলায় না বরং হাত ছেঁড়ে একা হাঁটতে শেখায়।”

” আপনি কী বলতে চাইছেন? নিজের সন্তানদের আগলানো অপরাধ…”

” মাতৃত্ব অন্ধ। কিন্তু এমন মাতৃত্ব কখনোই কাম্য নয় যা সন্তানদের ভবিষ্যতকে অন্ধকার করে দেয়। বাচ্চা মানুষ পারবে না বলে যে বাবা-মা সন্তানেদের ছোটবেলায় শিরদাঁড়া সোজা করতে না দিয়ে ননীর পুতুল বানিয়ে রাখে। তাদের সন্তান আর কখনোই বড় হয় না। পরে যাওয়ার ভয়ে হাঁটতে না দেওয়া বাচ্চারা বড় হয়ে বিকলাঙ্গ হয়। তারাই জাতির, সমাজের, পরিবার , রাষ্ট্রের বোঝা স্বরুপ। তখন সেই বোঝাকে তার মা-বাবাই অভিশাপ, গালি দেয়। কিন্তু এটা না ভেবেই এতে ওই ছেলেটির বা মেয়েটির দোষ নেই সেই বাবা-মায়ের যারা ছোট বেলাই ওদের সাহস ভেঙ্গে বলেছে , তুই পারবি না।”

নিশ্চুপ তুর মাথা নিচু করে আছে।

“আমার মা দূর্বল মতিষ্কের ছিল। যে তোমার মত ভাবত। আর আমি আমার বাবার মত। তাই তাইয়্যানও তার বাবার মতই হবে। একজন শক্ত চিত্তের মানুষ। যে আবেগের দাম দিতে বিবেগকে বেছে নেবে।”

মাথা নিচু করে আছে তুর।

” টমাস আলভা এডিসন ( বাল্বের আবিষ্কারক ) যাকে দূর্বল ছাত্র হওয়ায় স্কুল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তার মা… শাহরুখ খানের প্রতি কারো বিশ্বাস না থাকলেও তার মায়ের ছিল। হ্যাঁ, তার ছেলে কিছু করার ক্ষমতা রাখে। তারা কেউ স্নেহের দোহাই দিয়ে সন্তানদের আটকায়নি। তাই তারা প্রতিষ্ঠিত। ”

এবারো চুপ তুর।

” KGF মুভির একটা সিনে মারামারি করার কারনে নায়কের নামে তার মায়ের কাছে লোকেরা বিচার দিয়েছিল। কিন্তু ওর মা কেন মেরেছিল জানো?”

তুরের মুখ ফুসকে বলে ফেলল, “কেন?”

” ছেলেকে কুকুরের মত দল বেঁধে না একা লড়াই করতে বলেছে। যাতে ওর লোকের সাহায্য দরকার না হয়। বরং নিজের ছায়া অন্যদের দিতে পারে। ”

” তুর চুপ।

” আগের পিতারা বংশ রক্ষার জন্য পুত্র চেয়ে কোন অন্যায় করত না। কারন তারা তাদের স্ত্রীদের দেখে বুঝেছে মেয়েরা দূর্বল হয়। সব মেয়েরা বীর সন্তান গর্ভে ধারণ করার ক্ষমতা রাখে। কিন্তু শুধু জাহানারা ইমামের মত মায়েরা সাহসীরা শহীদ জননী হওয়ার সুযোগ পায়। আমি তোমাকে সেই মায়ের মত মা হতে দেখতে চাই তুর। যে নিজের সন্তানকে আগলাবে না। বরং সন্তানকে নিজের রক্ষাকবজ হিসেবে তৈরি করবে। ”

কথাটা শুনেই তুর ওর দিকে তাকায়।

” আমি তোমাকে দূর্বল বলছি না। তবে বাকিদের মত নিজের অন্ধ মাতৃত্ব দেখিয়ে সন্তানকে বিকলাঙ্গ করো না। তখন আমি না তোমার সন্তান তোমাকে বলবে, মা তুমি নিজে অসহায়। আর আমাকেও অসহায় করেছ। তুমি যতটা নিজেকে সাহসী দেখাবে তোমার সন্তান তার চেয়ে বেশি দুঃসাহসী হবে।তুমি যতটা শক্তহাতে ছেলেকে সামলাবে তোমার ছেলে সেই জোরে দুনিয়া সামলে দেখাবে। এইজন্যই ক্রিকেটার এবি ডি ভিলিয়ার্স বলেছেন, সকল সফল পুরুষের পেছনে থাকেন একজন নারী । এইজন্যই নেপোলিয়ন বোনাপার্ট বলেছেন, “ তুমি আমাকে শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাকে শিক্ষিত জাতি দিবো। ”

এবার তীব্র তুরের দিকে তাকায়, “ আমিও তোমাকে তেমন মা হিসেবে চাই। তেমন স্ত্রী হিসেবে চাই। “

তীব্র আর কথা বাড়ায় না। তাইয়্যানের হাত ধরে গাড়ির দিকে এগিয়ে যায়। বিকেল প্রায় শেষের দিকে গোধুলি নামবে কিছুক্ষনের মাঝেই। ওরা গাড়িতে বসলে তুর ওর গাড়ির দিকে এগোয়। গাড়িতে উঠলে কারো সাথে কারো কথা হয় না।

তুর গাড়িতে মাথা হেলান দিয়ে তীব্রের কথাগুলো ভাবতে থাকে। সত্যি কী তাই? তবে তীব্র তো মিথ্যে কিছু বলেনি। যারা ছোট থাকতেই ভাই-বোনদের মাঝে নিজেরটা বোঝায় তারা বড় হয়ে নিজ স্বার্থ বুঝে বাবা-মাকে ছেড়ে গেলে দায় সন্তাদের কী করে হয়? আর ভাবতে পারে না। সব কিছু খুলে বলা লাগে না। যারা বোঝার এমনি বোঝে।

গাড়িতে উঠার কিছুক্ষনের মাঝে সন্ধ্যা নামে। গাছপালা ঘেরা দ্বীপে সহজেই আসে রাতের হাতছানি। পরিবেশটা অপরিচিত কিন্তু তবুও তুরের মনে হচ্ছে এই আবহাওয়ার সাথে ও পরিচিত৷ কিন্তু কীভাবে….

কথাগুলো ভাবতে ভাবতে গাড়ি একসময় বিশাল বাড়িতে ঢোকে। তাইয়্যান গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে বাড়ির ভিতর ঢুকে গেল। কিন্তু তুর পারল না। সবকিছু অপরিচিত তবুও এত চেনা কেন? কেন….

তীব্র একজন লোকের সাথে কী সব কথা বলে বাড়ির ভিতর ঢুকতে ধরলেই তুর ওর হাত ধরে। তীব্র ওর দিকে তাকাতেই দেখে তুর বিস্ময় দৃষ্টিতে চারদিকে তাকিয়ে আছে। তীব্র ওর একহাত ধরে আরেকহাতে তুরের ঘাড়ে হাত দিতেই তুর ওর দিকে না তাকিয়ে বলে, ” তীব্র আমি কী এখানে আগে এসেছি? ”

তীব্র কিছু বলল না। আলত হাসল। “ ভিতরে চলো। তাহলে বুঝতে পারবে। “

তুর ভিতরে ঢুকতে যাবে তার আগেই সমস্ত আলো নিভে পুরো বাড়িতে অন্ধকার নেমে পরিণত হলো ভুত বাংলো। আর তুর ভয়ে তীব্রের হাত খাঁমচে ধরল। তীব্র আলত হেসে বলে উঠল, “ ভয় কাঁটাতে হবে নাকি? “

তুর ওকে ছেঁড়ে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। তা দেখে তীব্র গলা পরিষ্কার করে বলে, “ রেগে যাচ্ছ কেন? আমি তো বলছি যেখানে তাইয়্যানের ভয় তুমি কাঁটাবে তা…”

আর কিছু বলতে পারল । তুর রেগে বলল, “ লাইট কেন চলে গেল? “

তীব্র কিছুটা আমতা আমতা করে অস্পষ্ট গলায় বলল, “ হয়ত কানেকশনে সমস্যা। এখানে ইলেকট্রিসিটি নেই। সবকিছু সোলার প্যানেল দিয়ে চলে। আর আমি কী? আচ্ছা দেখছি আগে চল তো।”

তুর কথার আগা-মাথা পেল না। কিন্তু তীব্র কী বলল?
.
.
.
.
.
.
.

অন্ধকারের মধ্যে মোম জ্বালিয়ে শাওয়ার নিল তুর। ওর মনে হচ্ছে তীব্র ওকে জব্দ করার জন্য এসব করছে। যাই হোক, শাওয়ার নিয়ে পিং টাওয়ালে নিজেকে আবৃত করে চুল ঝারতে ঝারতে বাইরে আসে। কিন্তু তীব্রকে বেডে বসে থাকতে দেখে অপ্রস্তুত হয়ে পরে।

“ আপনি…”

তীব্র হাতে থাকা কিছু একটা দেখছিল। তুরের আওয়াজে পিছনে তাকাতেই মোমের আবছা আলোয় তুরের জ্বলন্ত মুখটা ওর সামনে আসে। অদ্ভুত এক মোহনীয়তা গ্রাস করে তীব্র। যেন নেশায় পরে গেছে। তীব্র নিজের স্থান ছেড়ে তুরের কাছে গিয়ে ওর চিবুক স্পর্শ করে। কেমন নেশায় আসক্ত হওয়া তীব্র তুরের মুখটা নিজের হাতের মধ্যে আবদ্ধ করে কাছে টানতেই তুর ওকে সরিয়ে দেয়। তুরের এহেন আচরনে হুশ ফেরে তীব্রের। ও কিছু বলার আগেই তুর বলল, “ আমি সকালেই আপনাকে যা বলার বলেছি তীব্র। তাই দয়া করে আমাকে এমন কিছু করতে বাধ্য করবেন না যাতে আপনার খারাপ লাগে।”

,
,
,
,
,
,

[ বাকিটা আজ রাতেই দেওয়া হবে ]
একসাথে দুই পার্ট ভালো না।

Åriyâñà Jâbiñ Mêhèr

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here