#বিন্নি_ধানের_খইপর্ব_৪৬

0
413

#বিন্নি_ধানের_খইপর্ব_৪৬

#মিদহাদ_আহমদ

আমার শরীর যেনো কেঁপে উঠলো। ডাক্তার আমার দিকে পানির গ্লাস এগিয়ে দিলেন। তারপর বললেন,

‘আপনার টেনশন করার কোন কারণ নেই। তবে আমার হাম্বল রিকুয়েস্ট ওয়াইফ হিসাবে আপনাকে যথেষ্ট সতর্ক থাকতে হবে এখন থেকে।’

ডাক্তার এসব কথা কেন বলছেন আমি বুঝতে পারলাম না। ডাক্তারকে আবার ফিরতি জিজ্ঞেস করলাম,

‘আসিফের বড় কোন রোগ….’

‘আরে না না৷ বড় কোন রোগ না৷ আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন। শুধু আপনাকে কিছু কথা বলবো৷ মনোযোগ দিয়ে শুনবেন।’

আমি যেনো এবার হাফ ছেড়ে উঠলাম। ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করলাম,

‘আসিফের তাহলে কী হয়েছে?’

‘ব্রঙ্কাইটিস। ওইটা সম্পর্কে বুঝতে পারবেন আপনি নিজেই আশাকরি। আমাকে বুঝিয়ে দেয়া লাগবে না৷ তবে আমাকে যা করতে হবে তা হলো আপনাকে বুঝানো। আপনাকে এখন যে করেই হোক আপনার মিস্টারকে এই এডিকশন থেকে বের করে আনতে হবে৷ আর এজন্য আপনি কোন কোন পদক্ষেপ নিবেন তা আপনিই জানেন। সরি টু সে, আমি আশঙ্কা করেছিলাম ওবার ক্যান্সার বা এই জাতীয় কোনকিছু হলো কিনা৷ কারণ মেজরিটি পার্সেন্ট রোগীদের এই শঙ্কাটাই হয়৷ না তবে হাইপার হওয়ার কারণ নাই৷ আপনার মিস্টারের ও যদি এমন কিছু হতো, তাহলে আমাদের এই আধুনিক চিকিৎসাশাস্ত্র হয়তো ওনাকে সাড়িয়ে তুলতো। কিন্তু ইমাজিন করেন এই একটা কারণে কত শত ফ্যামিলি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে! আপনারা এডুকেটেড ফ্যামিলির মানুষ এর ক্ষতি জানার পরও দূরে রাখতে পারছেন না কিন্তু ওইসব প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষেরা যারা এর ভয়াবহতা জানতে পারছে না তাদের অবস্থা?’

আমার চোখ দিয়ে কান্না চলে এলো। ডাক্তার বললেন,

‘আপনি এমন করলে চলবে বলেন? আমি ডাক্তার কিন্তু তার পরও ডাক্তারির বাইরে গিয়ে একবার নজরুলে যাচ্ছি। নজরুল কী বলেছেন শুনেছেন? উনি বলেছেন,

‘কোন কালে একা হয়নি কো জয়ী পুরুষের তরবারি
প্রেরণা দিয়াছে শক্তি দিয়াছে বিজয়া লক্ষ্মী নারী’

মানে কী দাঁড়ালো? আপনার মিস্টারকে আপনি যদি জয়ী করতে চান, তাকে তার লাইফটাইমে হ্যাপি দেখতে চান আর সাথে সাথে আপনিও হ্যাপি থাকতে চান তাহলে আপনাকেই প্রেরণা দিতে হবে৷ আপনাকেই গোল সেট করতে হবে নেক্সট ইয়ার এই সময়ে আপনার স্বামীকে আপনি কোথায় দেখতে চান। কিছু ভুল বললাম?’

‘না ডাক্তার। থ্যাঙ্কিউ আপনাকে৷ আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো’

‘ওকে। আর আমি আরও কিছু টেস্ট দিচ্ছি এখন৷ আপাতত টেনশন মুক্ত৷ তবে ব্রঙ্কাইটিস থেকেও তো পরিত্রাণ পাওয়া লাগবে তাইনা? ওনাকে টোটালি স্মোক আর ড্রিংকস থেকে দূরে রাখতে হবে। আমি আরও তিনটা টেস্ট দিচ্ছি৷ করিয়ে নিবেন। আর তারপর আমি ওষুধ দিবো৷ তবে টেনশন করবেন না। এখন আপনার হাতে সবকিছু। আপনার একাগ্রতা আর ইচ্ছাই পারে আপনার মিস্টারকে সুস্থ করে তুলতে।’

ডাক্তারের চেম্বার থেকে বের হয়ে এলাম আমি৷ বাসায় না এসে সরাসরি আসিফের অফিসে গেলাম৷ আসিফ তার রুমে ছিলো না। পেইন্ট রুমে সবার সাথে বসে বসে পেইন্ট করছে দেখলাম। অবস্থা নাজেহাল। মাথায়, কাপড়ে পেইন্ট লাগানো৷ আমাকে দেখে বলে বসলো,

‘কী মিস্টারের মিসেস? চলে এসেছেন এখান অবধি? তাহলে আসুন পেইন্ট করায় মন দেন ‘

আমি আসিফকে টেনে তার রুমে নিয়ে এলাম। আসিফকে বসিয়ে বললাম,

‘তুমি চাও আমি বাঁচি না তুমি বাঁচো? কোনটা?’.
‘দুজনেই মরি ‘

‘বেশ৷ তাহলে আমাকে বিষ খাইয়ে মেরে দাও ‘

‘হুয়াই? কী হলো আবার?’

‘মেরে দাও আমাকে।’

‘আরে বাবা বলো আমাকে। কী হলো?’

‘তুমি কি স্মোক ছাড়বে?’

আমার সামনে হাসতে হাসতে আসিফ একটা সিগারেট ধরালো৷ বেল্ট দিয়ে মাথার উপরের চুল বাধতে বাধতে সিগারেটে টান দিয়ে ধোয়া ছেড়ে বললো,

‘এই হয়েছে যা। এতকিছুর পরে আসলা লাইনে। আমি দেখো কাজ করতে ছিলাম। ডেলিভারি না করতে পারলে খাবো কী?’

‘আর আমার চিন্তা?’

‘তোমার চিন্তাই তো করছি৷ তুমি বুঝতে পারছো না আমার কথা। তুমি কি এসব ছাড়বে?’

আসিফ কাছে চলে এলো আমার। কোমর ধরে নিজের মুখ আমার মুখের কাছে এনে ফিসফিস করে বললো,

‘ভালোবাসা পেলে সব ছাড়তে রাজি আছি। ভালোবাসা দিবে? বলো?’

আমি ছাড়িয়ে নিলাম নিজেকে। এবার কান্না করে বসলাম। আসিফ সিগারেট নিভিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো,

‘এই বাচ্চাদের স্বভাব আর গেলো না তাইতো? কোনদিন ই যাবে না এসব স্বভাব। এভাবে বাচ্চাদের মতো কান্নাকাটি করা লাগে?’

এর মাঝে দুই সপ্তাহ কেটে গেলো৷ ননাস এখন কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছেন আগের থেকে৷ ননাস আগ থেকে বেকিং জানতেন। গতকাল রাতে একটা বেকিং পেইজ খুললেন৷ তানিয়াস কেক এন্ড পেস্ট্রি নামে। রাত একটায় ননাসের ইনভাইটেশন পেয়ে পেইজে জয়েন হলাম। সকাল থেকে দেখলাম ননাস রান্নাঘরে বেকিং করতে বিজি। কালকেই নাকি সে বেকিং করার ডাইস, নজেল, বাটার এসব অর্ডার করেছে। আমি আর শাশুড়ি মা রুমে বসে বসে বললাম, এমন কাজে যদি নিজেকে জড়িয়ে নিতে পারেন, তাহলে ওনার ই ভালো৷ এসব থেকে দূরে থেকে যতো নিজেকে সময় দিবে ততো নিজের জন্য ভালো৷ বিশাল এই ট্রমা থেকে তার বের হয়ে আসাটাই এখন বিশাল চ্যালেঞ্জ৷ এদিকে আগামী পর্শুদিন রাজীব আমেরিকা চলে যাবে৷ শাশুড়ি মা বাজারের এক বিশাল ফর্দ দিয়ে ড্রাইভারকে বাজারে পাঠিয়েছেন৷ এবারও শাশুড়ির এত পদের বাহারি খাবার বানানোর লিস্ট দেখে আমি মূর্ছা যেতে লাগলাম। ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করেই বসলাম

‘এতকিছু কি তামান্নার জামাই খেতে পারবে?’

‘তামান্নার জামাই খাবে কেন? খাবে তো পুরো পরিবার। তুমি না নুপুর এখনও বুঝলা না৷ মেয়ের মাকে কতকিছু করতে হয়, দেখতে হয়।’

বিকাল থেকে একে একে ননাস, মা, আমি আর কাজের লোক তিনজন মিলে এসব বাহারি জিনিস বানাতে বসলাম। শাশুড়ি বলে দিলেন এক বিশাল ফর্দ। খাবারের তালিকাগুলো ছিলো এমন,

‘খাসির কোরমা, দেশি মোরগের রোস্ট, কাচ্চি বিরিয়ানির সাথে বাদামের বোরহানি, গরুর কলিজা, রূপচাদা মাছ ভাজা। ‘

আর ডেজার্ট আইটেম ছিলো,

‘কোনাফা, নওয়াবি সেমাই, জর্দা পোলাও, ফ্রুট কাস্টার্ড, নারিকেলের পায়েস আর হাতে বানানো গোলাপজাম। সাথে দুধ ওয়ালার স্পেশাল পাটিশাপটা।’

ননাস বললো সে একটা কেক বেক করবে পাঁচ পাউন্ডের৷ কেক একটা দেয়াই যায়৷ শাশুড়ি শেষমেশ জালি কাবাব এড করলেন লিস্টে। বাজার থেকে কেনা বাহারি মিষ্টি নিমকি দইয়ের ফর্দ তো আর বাকি রইলো!

এসব বানাতে গিয়ে আমি মনে মনে ভাবলাম, এখনও মেয়েরা কত অসহায় আমাদের সমাজে! আমরা মেয়েরাই মেয়েদের দাম দেই না ঠিকমতো! অথচ আমরা দেখছি যে দুনিয়া এগিয়ে যাচ্ছে, দুনিয়ার মানুষ এগিয়ে যাচ্ছে৷ আর এই আগানোর বেলায় যে আমরা সমাজ ব্যবস্থার দায়ে যে একটা মেয়েকে তার নিজের কাছেই ছোট করছি এর কথা কি ভাবছি কখনো?

সকাল নয়টায় ঘুম থেকে উঠলাম। ননাসও রেডি, আমিও রেডি। আসিফ যাবে না৷ সে রাত্রে দেখে আসবে রাজীবকে। শ্বশুর আর শাশুড়িও যাবেন। ড্রাইবার সবকিছু গাড়িতে নিয়ে রাখলো৷ নিচে নামার সময়ে শাশুড়ি আমাকে তার রুমে ডেকে পাঠালেন৷ রুমে যেতেই শাশুড়ি আমাকে কিছুটা ভয়ার্ত গলায় বললেন,

‘তানিয়ার যাওয়া কি ঠিক হবে সেখানে?’

শাশুড়ির এমন কথা শুনে আমি যারপরনাই আশ্চর্য হলাম। তিনি এ কেমন কথা বলছেন!

শাশুড়ি আবার বললেন,

‘মারে আমার বড্ড ভয় হচ্ছে। যদি সেখানে গিয়ে কিছু হয়… আর সে রেডিও হয়ে গিয়েছে ইতোমধ্যে তাকে না করবো কীভাবে!’

আমি শাশুড়ির মুখ আটকে দিলাম। শাশুড়িকে বললাম,

‘যদি তানিয়া আপা এসব শুনতে পায় তাহলে কী ভাববে বলেন মা? আর কোনকিছু হবে না। দুনিয়া এতোটা নিচে নেমে যায়নি যে মানুষ একজন ডিভোর্স হওয়া মহিলাকে নিয়ে আপত্তি তুলতে পারে৷ আপনি কোন টেনশন করবেন না মা।’

শাশুড়ি মা নিভু নিভু গলায় বললেন,

‘আল্লাহ ভালো জানেন কী হবে। আল্লাহ জানেন ভালো।’ প্রিয় পাঠক নিচের বার্তাটা উপেক্ষা করে যাবেন না। গল্পের জন্য নিজের বার্তাটা পড়ুন।

[আসসালামুয়ালাইকুম প্রিয় পাঠক৷ আপনাদের কাছে একটা রিকুয়েস্ট করছি। আমার এই গ্রুপে রেস্ট্রিকশন ইস্যু হয়েছে। গ্রুপটা ঠিকে থাকবে কিনা জানি না। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ যেকোন সময় গ্রুপ ডিজেবল করে দিতে পারে৷। আজ হয়তো গ্রুপ আর্কাইভ করে দিবো কিছুক্ষণ পর৷ আমি খুবই মর্মাহত হয়ে আছি৷ কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না। আপনারা আমার এত আপন, এত কাছের হয়ে গিয়েছেন যে আপনাদের হারানোর ভয় আমাকে খুব কষ্ট দিচ্ছে। গল্প কোথায় কীভাবে কন্টিনিউ করবো তাও জানি না৷ ফেসবুক আইডিতে সবাইকে যুক্ত করা যাবে না তাই সেখানেও কন্টিনিউ করা পসিবল না।
আপাতত আপনারা প্লিজ আমার পেইজে কানেক্টেড হয়ে থাকুন৷ পেইজে লাইক আর ফলো দিয়ে যুক্ত থাকুন। আশাকরি সেখানে আপডেট জানাবো যদি গ্রুপ না থাকে। এইটাই হয়তো শেষ বার্তা জানি না৷ আর প্লিজ, কেউ এমন কোন কমেন্ট করবেন না যা ফেসবুক রিড করতে পারে। যেমন, মাঃ*%&৳রা সরাসরি না লিখে এভাবে লিখবেন। আপনাদের গতদিনের কমেন্ট আর পোস্টের কারণেই গ্রুপে এই ইস্যু খুঁজে পেয়েছে ফেসবুক অথরিটি। তাই গল্পের জন্য পেইজে কানেক্টেড হয়ে থাকুন। গ্রুপের রিচ একেবারে ডাউন হয়ে গিয়েছে। এতিদিনের কষ্টের গ্রুপের এই অবস্থা আমাকে মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত করে দিচ্ছে। বলে বুঝাতে পারবে না এই কষ্টটা। ফেসবুক অথরিটির সিদ্ধান্ত যেকোনো সময় আসতে পারে। গল্পের আপডেট এখানে না পেলে পেইজে পাবেন৷ প্রিয় পাঠক, আমাকে ভালোবেসে আর গল্পকে ভালোবেসে হলেও প্লিজ পেইজে যুক্ত হয়ে যান। 🙏
পেইজ লিংকঃ

https://www.facebook.com/Midhad.official/

আর এই পর্বে পারলে বেশি বেশি কমেন্ট করবেন। এতেও যদি কিছু লাভ হয়ে বা গ্রুপটা বেঁচে যায়! (জানি না লাভ হবে কিনা তবুও সবাই বেশি বেশি কমেন্ট করিয়েন প্লিজ)

সবাই পেইজে লাইক ফলো দিয়ে পাশে থাকবেন৷ প্লিজ কেউ ভাববেন না যে পেইজ তোলার জন্য এসব করছি। আমার এতদিনের পরিশ্রমের গ্রুপ আজ ডাউন। ঠিক হবে কিনা বা কবে হবে জানি না। গল্পের জন্য এখন আপনারা পেইজেও কানেক্টেড থাকতে পারেন৷ (সব আপনাদের ইচ্ছা)।

চলবে.. কিন্তু ফেসবুকের এই রেস্ট্রিকশন উপেক্ষা করে কীভাবে চালাবো জানি না। আপাতত পেইজ ভরসা। গ্রুপ ঠিকে থাকলে গ্রুপ৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here