সুখ_একটি_প্রজাপতি (২০)

0
39

#সুখ_একটি_প্রজাপতি (২০)

বিগত দুটো দিন ঝিলের জীবনে তোলপাড় করার মতোই ছিল। রজনী আর অভিনবর পালিয়ে যাওয়ার দৃশ্য যেন ওকে দ্বিধান্বিত করে তুলেছিল। স্বীয় ভালোবাসা যখন দূরে সরে যায় আমাদের মস্তিষ্ক তখন নিজ থেকেই কিছু ধারণা করে নেয়। তবে মন প্রায়শই ব্যতিক্রম ভাবে। এই মন মস্তিষ্কের দ্বন্দ্বে ব্যক্তির জীবন হয়ে উঠে অতিষ্ঠ। একটা সময় শ্বাস ভারী হয়। মনে হয় এই জীবন রেখে লাভ নেই। এমনি কিছু উগ্র চিন্তা এসেছিল ঝিলের মাঝে। সে সময়টায় কেউ পাশে ছিল না। এক অব্যক্ত অনুভূতি এসে দুমড়ে মুচড়ে দিচ্ছিল ওকে। অনুভূতিকে সাড়া না দিয়ে আচানাক ভাইকে কল করে বসেছে ঝিল। ফোনের এপাশ থেকে কান্না করছে। ওপাশ থেকে আহনাফ বিচলিত হয়ে পড়ল।
“বনু, বনু কি হয়েছে তোর?”

“আমার ভালো লাগছে না ভাইয়া। আমার কিচ্ছু ভালো লাগছে না। আমি দম আটকে মা রা যাব। প্লিজ আমায় নিয়ে যাও। আমি থাকতে পারছি না। কষ্ট হচ্ছে খুব। আমি মা রা যাব ভাইয়া।”

“নিয়ে যাব তো, কিন্তু তোর কি হয়েছে বনু? কেউ কি কিছু বলেছে? এই বনু কথা বলছিস না কেন? বনু। এই বনু।”

কান্নাভেজা কণ্ঠটা আর শুনতে পেল না আহনাফ। ঝিল মেঝেতে বসে পড়েছে। দরজার ওপাশ থেকে রীতিমতো ঝড় শুরু হয়ে গেছে। মেয়েটির কান্নাকাটির আওয়াজে চিন্তিত হয়ে পড়ল বাড়ির সকলেই। এত এত অশান্তি আর নেওয়া যাচ্ছে না। কি হচ্ছে কেউ যেন বুঝতেই পারছে না। সবেমাত্র বাড়ি ফিরেছে আয়ুষ। ঝিলের কান্নার অর্থ বুঝতে পারল না সে। কেবল বলল, “দরজা খোল ঝিল, না হলে ভাঙতে হবে।”

কয়েক সেকেন্ড থেমে রইল সবাই। ততক্ষণে ঝিলের বাড়ি থেকে কল এসে পড়েছে। আহনাফ জানাল সে রওনা দিয়ে দিয়েছে।
খুব ভোর বিধায় রাস্তা এখন একদম খালি। আধ ঘন্টার মধ্যেই চলে আসবে। ততক্ষণ অবধি যেন ঝিলের কাছে থাকে কেউ। একা রেখে না যায়। আহনাফের কল রেখে আয়ুষ বলল, “সবাই যাও আমি দেখি কি করা যায়।”

“কি অশান্তি বল তো। মেয়েটা এভাবে কান্নাকাটি করছে কেন।”

“দেখি, কিছু জানতে পারি কি না। তুমি ঘুমাতে যাও মা।”

“ঘুম কি আর আসবে? তোর বোনটা এভাবে…”

“থাক না সেসব। মামুনি প্লিজ মাকে ঘরে নিয়ে যাও।”

সুমতি বেগম বোনকে নিয়ে চলে গেলেন। ঝিলের কান্নার শব্দ কমে এসেছে। এবার আয়ুষ বলল, “কথা না বল। তবে অবুঝদের মতো কাজ করিস না। আমি বাইরেই আছি। একটু পরই আহনাফ আসবে।”

একটা চেয়ার নিয়ে দরজার কাছেই বসল আয়ুষ। গত দুদিনে একটি বার চোখের পাতা এক করে নি। শরীরটা ভীষণ ক্লান্ত। রজনীর দ্বারা এমন কিছু সম্ভব তা ঘুণাক্ষরেও ভাবনাতে আসে না। মেয়েটি তো ভীষণ শান্ত। পরিবারের প্রতি বেশ মায়াও রয়েছে। তবে কেন এমন করল সে?

আহনাফের ডাকে হন্তদন্ত হয়ে উঠল ঝিল। মেয়েটি এতটাই বেপরোয়া ছিল যে বেডের কোণের সাথে লেগে পা হড়কে গেল। নখের কোণ ভেঙেছে। তবে সেসবে ধ্যান নেই। উঠে গিয়ে দরজা খুলল সে। আহনাফের দৃষ্টিতে বিস্ময়। ভাইকে জড়িয়ে ধরল ঝিল। আহনাফ বুঝতে পারছে না। কি হয়েছে ওর! মেয়েটির মাথায় হাল্কা হাতে বুলিয়ে বলল, “এসে গেছি, আর কান্না নয়। ভাইয়া সব ঠিক করে দিব।”

ঝিল মৌন রইল। একদমই কথা নেই। আয়ুষ একটু দূরে দাঁড়িয়ে। বোঝার চেষ্টা করছে সবটা। কিন্তু কিছুই আসছে না মস্তিষ্কে। রজনীর কাহিনীটায় মস্তিষ্ক জ্যাম হয়ে আছে।
“যা যা নেওয়ার গুছিয়ে নে। এখনি বের হবো আমরা।”

“কিছু নেওয়ার নেই। আমি এখনি যেতে চাই। প্লিজ এখনি নিয়ে যাও ভাইয়া।”

আহনাফ আর ঝিল তখুনি বের হয়ে গেল। অদ্ভুতভাবে ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল আয়ুষ। একটা যন্ত্রণা ওর দেহ মন সর্বত্র ছড়িয়ে গেল।

বাড়িতে এসে একটা কথাও বলল না ঝিল। নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল। গোসল করে এসে শুয়ে রইল। পরিশ্রান্ত আর নির্ঘুম থাকা দেহটা খানিকবাদেই হারিয়ে গেল ঘুমের দেশে। আহনাফ কোনো কথা না বলেই নেমে এসেছে। থাকুক মেয়েটা আলাদা। রোহনকে কল করে ঘটনাটা জানাতেই রোহন বলল দুপুরে এসে কথা বলবে। বিষয়টা মোটেও স্বাভাবিক নয়। রোহন আরও জানায় তাদের থেকে কিছু তো লুকানো হচ্ছেই। এই বিষয় গুলো খোলসা হওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন।

ঝিলের মামারা বাড়ি ফিরে মেয়েটির চলে যাওয়ার ঘটনা শুনতে পেল। একটা মন খারাপ হলো ওনাদের সকলেরই। তবে পরিস্থিতি এতটাই হাতের বাহিরে যে বিশেষ কিছু বললেন না ওনারা। আয়ুষ পুনরায় বের হয়ে গেল। বর্তমানে সে গ্রামের অলি গলি থেকে ছেলেপেলে নিতে যাবে। যারা রজনীকে খুঁজতে সাহায্য করবে।

.

দুপরের ঘটনা। আহনাফ আর রোহন একসাথে হয়ে বিষয়টা নিয়ে ভাবছে। ঝিলের সব থেকে কাছের বন্ধু হলো মৌনতা। মেয়েটি ওর জীবনে বেশ গুরুত্বের সাথে বাস করছে। তার থেকে কোনো তথ্য জানা যাবে বলেই রোহনের ধারণা। সে বহুদিন পর চিরচেনা নাম্বারটা ডায়াল করল। যে নাম্বারটা ডায়াল করা হয় নি বহুদিন বহুমাস। ওপাশের ব্যক্তিটি বোধহয় ভীষণ ব্যস্ত। তাই কল রিসিভ হলো না। রোহনের নাকের অগ্রভাগ লাল হয়ে এসেছে। রাগের কারণে চোখ দুটো যেন রঙের হাট বসিয়েছে। একটা অভিমান কিংবা আত্মসম্মান থেকে পুনরায় কল করল না সে। কিন্তু ওপাশ থেকে ঠিকই কল এল। রোহন বিষয়টা খেয়াল করতে করতে কল কেটে গেল। সে কল দিল না। বরং চেয়ে রইল কল আসার অপেক্ষাতে। ঘন্টা পেরিয়ে গেল অথচ কল এল না। রাগে শরীর রি রি করছে ছেলেটির। বিকেলের শুরুতে সমস্ত ইগোকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে রোহন পুনরায় কল করল। এবার রিসিভ হলো।
“হ্যালো। আসলে আমার ফোনের ব্যালেন্স শেষ হয়ে গিয়েছিল। লোন নেওয়া ছিল বিধায় পুনরায় লোন নিতে পারছিলাম না। একটা অনুষ্ঠানে এসেছি তাই বের ও হতে পারছি না। স্যরি।”

রোহন মনে মনে অনেক কিছুই কল্পনা করেছিল। সে ভেবেছিল মেয়েটিকে এসব নিয়ে কোনো এক সময় অনেক কথা শুনাবে। কিন্তু এত গুলো কথা শুনে সে বুঝতে পারল মৌনতা নিরুপায়। তাই সে স্বাভাবিক রইল।
“ইটস ওকে।”

“হ্যাঁ।”

বলেই থেমে গেল মেয়েটি। সে আসলে বুঝতে পারছে না সম্মোধনে তুমি বলবে নাকি আপনি। আগে তো তুমি বলেই এসেছে। কিন্তু এখন সম্পর্কটাও স্বাভাবিকের কাতারে নেই।
“কল কেন করেছিলেন?”

“একটু দরকার ছিল। সমস্যা না থাকলে আজ বাসায় এসো একবার।”

“ঠিক আছে।”

উত্তেজনায় কাঁপছে মৌনতা। সে কি রেখে কি করবে বুঝতে পারছে না। রোহন তাকে কল করেছে! এতদিন পর! ছেলেটার মনে বুঝি পুরনো হাওয়া লেগেছে? না না অন্য কিছুও তো হতে পারে। কিন্তু কি হবে? হওয়ার মতো কিছু তো নেই। মৌনতার নিজেকে পাগল পাগল মনে হচ্ছে। সে তখুনি বের হয়ে গেল। এমনকি উত্তেজনার কারণে ফোনটা ও ফেলে গেল।

চলবে…
কলমে~ফাতেমা তুজ নৌশি

পাঠকমহল: Fatema’s story discussion

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here