অলিখিত_অধ্যায় #জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা ৬৩।

0
113

#অলিখিত_অধ্যায়
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
৬৩।

‘একপ্রকার জবরদস্তি করে একজন জায়গা করে নিল এই রুক্ষ কঠিন হৃদয়ে। কখন, কোথায়, কী করে সেই সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা নেই। অথচ সে দিব্যি আমার অন্তঃস্তলে বসে আছে ঘাপটি মেরে। কী নিদারুণ যন্ত্রণায় আছি, বুঝতে পারছেন?’

ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে আছে প্রিয়তা। ফারজাদের কথা বলার ধরণ আজ ভিন্ন। তার কথার সুর আজ ভিন্ন। সে যেন এই ফারজাদকে আজ চিনতে পারছে না। প্রিয়তা জিজ্ঞেস করল,

‘কে সে, যে আপনাকে এমন নিদারুণ যন্ত্রণায় ভোগাচ্ছে?’

ফারজাদের নির্নিমেষ চাহনি। প্রিয়তার অস্বস্তি ভরা মুখ। ফারজাদ সময় নিল অল্প। বলল,

‘আপনি।’

মৃদু আন্দোলন হলো প্রিয়তার মনে। ছোট্ট ঢোক গিলল। শোনা কথাটা আদৌ সঠিক কি-না জানার জন্য জিজ্ঞেস করল,

‘আমি?’

‘জি, আপনি।’

ফারজাদের সহজ স্বীকারোক্তি। কোনো ভণিতা নেই এর মাঝে। প্রিয়তা অনুচ্চ সুরে বলল,

‘কেন, আমি কী করেছি?’

ফারজাদ খানিকটা বিরক্তের সুরে বলল,

‘আপনি আমাকে শান্তিতে থাকতে দিচ্ছেন না, প্রিয়তা। বড্ড জ্বালাচ্ছেন আমাকে।’

‘আমি জ্বালাচ্ছি?’

প্রিয়তা অবিশ্বাস্য সুরে বলল। ফারজাদ জবাব দিল,

‘জি। অনেক বেশি জ্বালাচ্ছেন। সেই পাকিস্তান থেকে আসার পর থেকেই আপনি এমন করছেন। সকাল, দুপুর, বিকেল, রাত, কোনো সময়’ই একটু শান্তি দিচ্ছেন না। মন, মস্তিষ্ক সব জায়গাতে এত অশান্তি করলে হয়? আমিও তো মানুষ, এত জ্বালালে আমি বাঁচব কী করে?’

প্রিয়তা অনুভব করছে হাত যুগল কাঁপছে তার। হৃদকম্পনের গতি বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ। এমন হচ্ছে কেন? ফারজাদের বাক্যবাণ যে শরীর অবশ করে দিচ্ছে তার। প্রিয়তার কাছ থেকে কোনোপ্রকার সাড়া না পেয়ে ফারজাদ বলল,

‘আমি জানি, দ্বিতীয়বার নতুন করে কাউকে বিশ্বাস করাটা আপনার জন্য সহজ হবে না। তবে আমার প্রতি আমার নিজের কোনো সংশয় নেই। আমি জানি, আমি যাকে ভালোবাসব সবটুকু দিয়ে ভালোবাসব। এর মধ্যে খুঁত রাখব না একটুও। এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমিও অনেক ভেবেছি। অদ্ভুত ভাবে, যতবার’ই আপনার কথা স্মরণে আসে ততবার’ই ভরসা পাই আমি। মন বলে, আমি অবশ্যই আপনাকে ভালো রাখতে পারব। আমার মাঝে এই নিয়ে আর কোনো দ্বিধা-দ্বন্দ্ব নেই, প্রিয়তা। আমি আপনাকে বিয়ে করতে রাজি।’

প্রিয়তা চোখ বুজে নিশ্বাস ফেলল ছোট্ট করে। এএন কিছু তার কল্পনার ধারে কাছেও ছিল না হয়তো। তাই নিজেকে তার ধাতস্ত করতে সময় নিল অনেকক্ষণ। ফারজাদ নির্বাক চেয়ে আছে কেবল। অধিক আগ্রহে বসে আছে প্রিয়তার কাছ থেকে কিছু শোনার জন্য। অবশেষে ফারজাদের সকল অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে মুখ খুলল প্রিয়তা। বলল,

‘আপনি কি চাপে পড়ে সিদ্ধান্তটা নিয়েছেন, ফারজাদ? কিংবা দিলরুবা আন্টিকে খুশি করতে?’

‘আম্মিকে খুশি করতে হলে তো এই সিদ্ধান্ত আমি আরো আগেই নিতে পারতাম, অযথা এতদিন উনাকে অপেক্ষা করাতাম না। আমার উপর বিশ্বাস না থাকলে আমি আপনাকে জোর করব না, প্রিয়তা। আপনাকে সবসময় আমি একজন ভালো বন্ধু হিসেবে জানব।’

প্রিয়তা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,

‘আমার সম্পর্কে সব দেখে, জেনেও আপনি রাজি? পরে যদি আবার আফসোস হয়?’

‘আমি আমার সিদ্ধান্তে অটুট। বলেছি না, আমার উপর আমার ভরসা আছে। হাত ধরছি ছাড়ার জন্য নয়, আপনি চাইলে আরেকটাবার বিশ্বাস করে দেখতে পারেন।’

প্রিয়তার কাছে এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না এসব। ফারজাদ সত্যিই তাকে বিয়ে করতেই চায়ছে? এই মানুষটা? সে কি আদৌ এই মানুষটার যোগ্য? প্রিয়তা মনের প্রশ্নে অতিষ্ঠ হয়ে বলল,

‘আমার মন বলছে, আমি আপনার যোগ্য নই। আপনি আমার চাইতে আরো ভালো কাউকে ডিজার্ভ করেন।’

ফারজাদ এবার খানিকটা বিরক্ত হলো। বলল,

‘নিজের যোগ্যতাই আঙ্গুল তোলা মূর্খদের কাজ। আর যেখানে আমার মন আপনাকে চাইছে, সেখানে আপনার থেকে ভালো কাউকে আমি চাই না। এবার আপনি সরাসরি জবাব দিন, বিয়ে করবেন আমায়?’

প্রিয়তা অস্বস্তিতে পড়ল ভীষণ। ফারজাদের দিকে তাকাতেও এবার আঁইঢাঁই করছে সে। এভাবে বলা যায়? হুট করেই কি নেওয়া যায় এত বড়ো সিদ্ধান্ত? একবার তাড়াহুড়ো করে অনেক বড়ো ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে বসেছিল, দ্বিতীয়বার আর এই ভুল সে করবে না। তাই বলল,

‘আমার সময় লাগবে?’

‘কতক্ষণ?’

‘ক্ষণ? আমার দিন লাগবে।’

‘কতদিন?’

প্রিয়তা ইতস্তত সুরে বলল,

‘জানি না।’

ফারজাদ বলল,

‘আমাকে ওয়াদির সাথে তুলনা করবেন না, প্রিয়তা। একই পাল্লায় সবাইকে মেপে কখনোই সঠিক মানুষ চিনতে পারবেন না আপনি। সময় নিন, তাতে সমস্যা নেই। তবে সময়ের অজুহাতে পরে আবার প্রতীক্ষিত মানুষটাকে খুইয়ে বসবেন না যেন।’

‘আমায় ভয় দেখাচ্ছেন, ফারজাদ?’

‘না, সাবধান করছি কেবল। চলুন, নীহাল আর মৌমি বোধ হয় অপেক্ষা করছে।’

ফারজাদ ঘুরে দাঁড়াল ফিরে যাওয়ার জন্য। প্রিয়তা ডাকল সাথে সাথেই। বলল,

‘আমার কথা শেষ হয়নি এখনো, চলে যাচ্ছেন কেন?’

ফিরে চাইল ফারজাদ। বলল,

‘এই না বললেন, আপনার সময় লাগবে?’

প্রিয়তা হাত কঁচলাচ্ছে অস্বস্তিতে। বলল,

‘আমার সময় নেওয়া হয়ে গিয়েছে। আমি রাজি।’

ফারজাদ ভ্রু কুঁচকাল। জিজ্ঞেস করল,

‘এত তাড়াতাড়ি?’

ছোট্ট করে নিশ্বাস ফেলল প্রিয়তা। বলল,

‘জি।’

‘পরে আবার মত পাল্টে যাবে না তো?’

‘আমার উপর বিশ্বাস নেই?’

‘আছে বলেই জীবন পাড়ি দেওয়ার মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে বসেছি।’

প্রিয়তা ক্ষীণ আওয়াজ তুলে বলল,

‘মাঝ পথে আবার ছেড়ে যাবেন না তো?’

‘আবারও বলছি, পুরোপুরি বিশ্বাস না করে সিদ্ধান্ত নিবেন না। সময় নিন, আমার অসুবিধা নেই।’

‘আপনি একজন দূর্দান্ত মানুষ, ফারজাদ। আপনাকে আমি চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতে পারি। তবে ভালোবাসার প্রশ্ন এলেই, ওয়াদির কথা মনে পড়ে বারবার।’

ফারজাদ এগিয়ে এসে প্রিয়তার মুখোমুখি দাঁড়ায়। মাঝখানে কয়েক ইঞ্চির দূরত্ব হয়তো। সে আলতো করে হাত রাখে প্রিয়তার মাথায়। বলে,

‘ওয়াদা করছি, অতীত ভুলাতে না পারলেও একটা চমৎকার ভবিষ্যত দিতে পারব। বিশ্বাস রাখতে পারেন, আমি ওয়াদি নই।’

প্রিয়তা প্রচন্ড ভরসা নিয়ে ফারজাদকে বিশ্বাস করে নিল সঙ্গে সঙ্গেই। এত বড়ো একটা ঘটনার পর এত দ্রুত কাউকে এত বিশ্বাস করে বসাটা সমীচীন না হলেও সেটাই করে বসল সে। ফারজাদের বেলাতে কেন যেন “অবিশ্বাস” বলে ব্যাপারটা কাজ’ই করল না। কী আশ্চর্য!

প্রিয়তা বলল,

‘আমার মন আপনাকে অবিশ্বাস করতে চায় না, ফারজাদ। আমি জানি, আপনি কখনোই ওয়াদি হবেন না।’

‘তাহলে আর কোনো সংশয় রইল না তো?’

প্রিয়তা স্পষ্ট সুরে জবাব দিল,

‘না।’

ঠোঁটের কোণে ক্ষীণ হাসির রেশটা খুব একটা স্পষ্ট নয়। ফারজাদ বলল,

‘চলুন তবে, বাড়িতে গিয়েও আমাদের সিদ্ধান্তটা জানানো যাক।’

বাড়ির দিকে রওনা দিল সবাই। মৌমির খুশি দেখে কে। যখনই শুনেছে তারা দু’জন রাজি তখন থেকেই তার নাচানাচি শুরু। নীহালও খুশি বেশ। ফারজাদের হাতে প্রিয়তাকে তুলে দেওয়া মানে, প্রিয়তাকে একটা সুন্দর জীবন দেওয়া। আর এই সুযোগ সে অবশ্যই হাতছাড়া করবে না।

চলবে…

(এহেম এহেম, বিয়ের কেনাকাটা শুরু করেন, পাঠকমহল🤭)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here