#বন্ধ_দরজায়_তুমি🖤
#Written_By_Mêhèriyâr_Mêhèr
#Part: 18…….
এতক্ষন সহ্য করলেও বাকিটা যেন তীব্রের সহ্যের মত না। আর কিছু বলতে দিল না তীব্র। তুরকে নিজের কাছে টেনেই ওর ঠোঁটে ডুব দিল তীব্র। এই প্রথম এতটা গভীর ভাবে স্পর্শ করল ওকে। তুর নিজেকে ছাড়াতে চাইলেও পারল না। তীব্র ওকে নিজের মাঝে মিশিয়ে নিল।
কিছুক্ষন পর ছেড়ে দিলে তুর নিচের দিকে তাকিয়ে হিচকি তুলতে থাকে। তীব্র ওর চুলগুলো হাতে পেচিয়ে ওর মাথাটা নিজের বুকের মাঝে চেপে ধরে…..
— তোমার সাথে কি হবে না হবে সব আমি ডিসাইড করব। সেটা তোমার কাছ থেকে শুনতে চাইনি আমি। তবে তোমাকে একটা সুখবর দিয়ে রাখি, এত সহজে না তুমি না আমার কাছ থেকে যাচ্ছ আর না আমি তোমাকে ছাড়ছি।
তুর নির্বাক চোখ চোখে তাকিয়ে আছে তীব্রের দিকে। ঠোঁট দুটো কান্নায় আবার কেপে কেপে উঠছে। চোখের কোন দিয়ে ফোটা ফোটা পানি পরছে। তীব্র ওর থুতনিটা ধরে। তুর ওর দিকে তাকায়….. তুরের চোখের পানি গুলো বুড়ো আঙুল দিয়ে মুছে দুচোখের পাতায় ঠোঁটের পরশ ছোয়ায়…. তীব্র ওর ঠোঁটের দিকে এগোতেই তুর বলে উঠে…..
— একটু পানি খাওয়াবেন আমাকে…. গলাটা শুকিয়ে যাচ্ছে।
কথাটা শুনে তীব্র ওকে ছেড়ে উঠে যায়। ভালোভাবেই বুঝতে পারল তুর কেন বলেছে কথাটা….. তীব্র বুঝেও না বোঝার ভান করল। তীব্র বাইরে চলে গেল আমার জন্য পানি আনার জন্য কিন্তু পানির বোতল তো রুমেই আছে তাহলে। মাথা ছিড়ে যাচ্ছে কান্নার কারনে তাই পানির বোতল নিয়ে পানি খাওয়ার চেয়ে মরে যাওয়া সুবিধার মনে হচ্ছে…..
ঠিক তখনি তীব্র একটা গ্লাসে পানি নিয়ে তুরকে দিল। বেশ অবাক লাগল। কারন তীব্র ওকে এই প্রথম গ্লাসে পানি দিল। তুর ওর হাত থেকে পানি নিতেই তীব্র ওর পাশে বসে। তুর গ্লাস হাতে বসে আছে। তীব্র হালকা হেসে বলল…..
— কিহল এই মাত্রই তো বললে তৃষ্ণায় বুক ফেটে যাচ্ছে তাহলে খাচ্ছ না কেন?
তুর কিছু না বলে গ্লাসের পানিটা খেয়ে নিল। তীব্র খালি গ্লাসটা পাশে রেখে তুর আবার বুকের মধ্যে টেনে ওর মাথায় বিলি কাটতে থাকে। কিছুক্ষনের মধ্যেই তুরের মাথা ভার লাগতে শুরু করে।
— আমার না মাথাটা কেমন ঝিম ঝিম করছে।
— অনেকক্ষন কেদেছ তাই।
তুর কিছু না বলে ওভাবে ওর বুকে মধ্যে পরে রইল।
কিছুক্ষন যাওয়ার পর তীব্র বলে উঠল…..
— তুর….
— হুমম… [ ঘুম জড়ানো কন্ঠে ]
— আচ্ছা আমি যখন তোমার কাছে থাকি তোমার কেমন অনুভুতি হয়।
— জানিনা। কিন্তু খুব অদ্ভুত….
— এখন কেমন অনুভুতি হচ্ছে?
— জানিনা কেমন জানি ঘোর ঘোর লাগছে। মনে হচ্ছে আমি নেশা করেছি, নয়তো কতদিন ধরে ঘুমায়নি। জানিনা কেমন কিন্তু খুব অস্থির লাগছে…. আচ্ছা এটাকে কি বলে?
বুঝলো তুরের নেশা হয়ে গেছে,…..
— ভালোবাসা। তুমি আমাকে ভালোবাস। তাই আমি যখন তোমার কাছে থাকি তখন তোমার এরকম ফিলিংস হয় কারন তুমি আমাকে ভালোবাস…. যখন কারো অন্য কাউকে ভালোলাগে তখন মস্তিষ্কে রাসায়নিক পদার্থের নিঃসরণ হয়। ফলে ব্যক্তির মনে সৃষ্টি হয় সুখানুভূতির। আর মজার ব্যাপার কি জানো সেই সুখ অনুভুতিটা ড্রাগসের মত হয়। মানে একজন মাদক গ্রহনকারী মাদকসেবনের সময় যেমন ফিল করে একজন প্রেমে পরা ব্যাক্তির অনুভুতিটা ঠিক তেমনি।
এটা শুনে তুর জিজ্ঞেসুর দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকায়। নিজের চোখ স্থীর রাখতে পারছে না তুর। টেনে খোলার চেষ্টা করলেও বার বার বন্ধ হয়ে আসছে। কাপা কাপা গলায় নেশাক্ত ভাবে তুর বলে…..
— তারমানে আমি আপনাকে এতটাই ভালোবাসি যে আপনি কাছে এলে নিজেকে মাতাল মাতাল লাগে.….
— হুমম।
— তারমানে আমি চাইলেও আপনাকে ছেড়ে যেতে পারব না। আমার খুব কষ্ট হবে তাই না।
— একটু না অনেকটা হবে৷ যা তুমি ভাবতেও পারছ না।
— কেন এত ভালোবেসেছি আপনাকে? আমি তো তা চাইনি।
— প্রেমের নেশাটাই এমন তুর৷ কেউ চায় না কিন্তু না চাইতেই পেয়ে বসে। যেমন তুমি নিজেকে দেখ।
— হুমম। আমি সত্যি আপনাকে ভালোবাসি। তাই তো আপনি কাছে এলেই নেশা নেশা লাগে।
— হুমম।
কিছুক্ষন পর তীব্র বলে উঠল…..
— তুর আমার একটা কথা রাখবা।
— কি কথা?
— আগে বলো রাখবা।
তুর এখন ভাবার মত পর্যায়ে নেই। তীব্র যা বলছে তাই।
— হুমম রাখব।
— আচ্ছা….
-_ …….. এখন থেকে তুমি আমার তুর। শুধু আমার।
আর কিছু বলার আগেই ঘুমিয়ে গেল তুর। তীব্র ওকে নিজের বুকে জড়িয়েই শুয়ে রইল।
,,
,
,
,
,
,
,
সকালে ঘুম থেকে উঠতেই চমকে যায় তুর। তীব্র গালে হাত দিয়ে ওকে দেখছে। এটা দেখে চোখ গুলো বড় হয়ে যায় তুরের। তীব্র একটা মন ভোলানো হাসি দিয়ে তুরের কপালে পরশ আকে।
— আপনি এভাবে….
তীব্র ওর ঠোঁটে আঙুল দিয়ে চুপ করিয়ে দেয়। তারপর ওর কপাল থেকে চুল গুলো সরিয়ে ওর কাছে গিয়ে বলে….
— Good morning…. My lady. অনেক বেলা হয়ে গেছে ফ্রেশ হয়ে এসো। আমি নিজের হাতে ব্রেকফাস্ট বানিয়েছি। তাড়াতাড়ি….
— হুমম…
তারপর তুর ওয়াসরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসে। ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে তীব্র বসে আছে ব্রেকফাস্ট নিয়ে। তুরকে দেখে বড় সড় একটা হাই তোলে…..
— যদি এখানে মাছি থাকত তাহলে আমাকে মাছি তাড়াতে হত।
— হুমম…
তীব্রের কাজের আগা মাথা তুর বুঝতে পারছে না। এটা দেখে তীব্র রেগে বলে…
— এই মেয়ে কি হুমম….হুমম করছ?
— হুমম.… না মানে সরি…
এটা শুনে তীব্র হাসে 😄 তারপর তুরকে টেনে নিজের কোলে বসিয়ে দিয়ে ওর কোমর ধরে বসে…. আর তুর ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে।
— অনেক কষ্ট করে বানিয়েছি এবার কষ্ট করে একটু খাইয়ে দেও তুমি।
তর তখনো ওর দিকে চেয়ে আছে। এটা দেখে তীব্র বিব্রত হয়…
— এভাবে তাকিয়ে কি দেখছ। নাস্তা বানিয়ে দিয়েছি বলে কি খাইয়ে দিতে হবে না। 😤 খাওয়াও…. [ ধমক দিয়ে ]
তখনি তুর এক টুকরো খাবার দ্রুত তীব্রের মুখে পুরে দেয়। তীব্র পুরোটা খাবার ওর দিকে তাকিয়ে খেয়ে নেয়। তুর নিজেও আবুলের মত তীব্রকে দেখছে…
— খাবার খাওয়ালেই হবে পানি দিবে কে?
তুর গ্লাসের পানি তীব্রকে খেতে দেয়। তীব্র পানি খেয়ে বলে….
— খাবার খেলাম মিষ্টি তো দিলা না।
তুর টেবিলে দেখল কিন্তু কোনো মিষ্টির আইটেম পেল না বলে অপরাধীর চোখে ওর দিকে তাকাতেই….
— আচ্ছা এটা আমি নিয়ে নিচ্ছি….
তীব্র আলত করে তুরের গালে ঠোঁট বুলিয়ে কপালে চুমো একে দেয়।
— খাবারটা খেয়ে নিও। আমার বাকি কাজটা শেষ করে দ্রুত ফিরে আসব। [ একটা রহস্যময় হাসি দিয়ে ]
তীব্র উঠে চলে গেল। আর তুর ওখানের একটা চেয়ারে বসে রইল। তীব্রের কথার আগা মাথা কিছুই বুঝল না। তুরের ক্ষিদে পেয়েছে তাই নিজেই খেয়ে গেল। কিন্তু দেখল খাবার অনেক কিন্তু সবটাই তীব্রের খাওয়া। মানে তুরকে এখন তীব্রের খাওয়া খাবারটাই খেতে হবে। তীব্র ইচ্ছে করে করল নাকি না বুঝলনা। বাধ্য হয়েই খেয়ে নিল।
,
,
,,
,
,
,
,
,,
,
সারাদিন তুরের এক রকম অস্থিরতায় কেটে গেল। কেন জানেনা ওর খুব অদ্ভুত লাগছে। তীব্রকে পুরোপুরি অন্যরকম লাগছে।
কখন তীব্র আসে তার খেয়াল নেই তুরের বন্দী জিবনে অভস্ত্য হলেও অস্বস্তি কাটেনি। তাই ও শুয়ে ছিল। দরজা খোলার আওয়াজে বুঝতে পারে তীব্র এসেছে….. তুর উঠে বসতেই তীব্র ওর দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়…. কিছুটা ঘাবড়ে যায়..
_- কিহ….
— তোমার ওড়নাটা….
_- মানে.।।
— মানে তোমার ওড়নাটা দেও।
তুর কিছু বুঝতে পারে না দেখে তীব্র নিজেই ওর থেকে ওরনাটা নিয়ে নেয়। তারপর নিজের মাথাটা মুছতে মুছতে বলে….
— তুমি থাকতে আমাকে আমার মাথা মুছতে হলো। [ তুরের হাতে ওড়নাটা দিয়ে ] নিজে মুছে দেও….
— আমি…
— আজব… তোমার ওড়না, তোমার আমি.. সবকিছুই যখন তোমার আমি কেন মুছব। মুছো বলছি… [ তুরের কোমর ধরে নিচে বসে ]
তুর তীব্রের মাথা মুছিয়ে দিতে তুর বলে.।।
— আপনার মাথা কি ভাবে ভিজল।
— আজকে নতুনভাবে কিছু চেয়েছি। তাই প্রকৃতি নিজের আর্শীবাদ দিয়েছে…
তুর যে আগা মাথা কিছু বুঝেনি বুঝতে পারল। তীব্র হালকা হেশে বলল…..
— বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে তুর।
কথাটা শুনেই তুরের মনে কম্পন তৈরি হলো। পৃথিবীতে বৃষ্টি কেমন হয় তা হয়ত ভুলে গেছে। না ভুললেও মনে পরেনি। তুরের ছটফটানি বেড়ে গেল। জোরে জোরে নিশ্বাস কান্নার বেগ আটকাতে চাইছে… তীব্রের থেকে সরে ভেজা ওড়না বদলানোর বাহানায় মুখ লুকালো। তীব্র জানত এমনটাই হবে ইচ্ছে করেই বলল কথাটা।
ও তুরের কাছে গিয়ে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে ওর ঘাড়ের চুল সরিয়ে কয়েকটি চুমো খেল। তুর কেন চোখ বন্ধ করল জানেনা। তীব্র তুরকে নিজের দিকে ফেরিয়ে বন্ধ চোখের পানি মুছে দেয়.. তারপর মোহনীয় সুরে বলে….
— বাইরে যাবে তুর….
কথাটা শুনেই তুর অবাক চোখে ওর দিকে তাকায়। তীব্র সত্যি ওকে বাইরে নিয়ে যাবে সত্যি ও এই বন্ধ দরজার ওপাশে যাবে। বাইরের জগৎটাকে দেখবে ও….. ওর চোখে খুশির ঝলকানি দেখতে পাচ্ছে তীব্র।
— কিহল বাইরে যাবে। বৃষ্টি দেখবে। ভিজতে চাও বৃষ্টিতে.….
তুর কি বলবে বুঝতে পারছে না। চোখের পানি আর মুখে খুশির ঝলক কিন্তু আবেগটা যেন গলায় আটকে গেছে। তাই কিছু বলতে পারল না তুর , শুধু চোখের থেকে খুশির পানি ছাড়া…..
— তবে আমার একটা শর্ত আছে……
কথাটা শুনে তুরের মুখটা কালো হয়ে গেল। এটা দেখে তীব্র বলে…
-_ নিয়ে যাব কিন্তু আমি যতক্ষন না বলব তুমি নিজের চোখ খুলতে পারবে না।
তুর কিছু বলল না শুধু মাথা নাড়ল। কিন্তু চোখ বন্ধ করে যাবে কিভাবে…. তীব্র ধরতেই ওকে কোলে তুলে নিল। তুর গলা জড়িয়ে ধরল….
— তুর যদি যেতে চাও তাহলে চোখ বন্ধ করো।
তুর চোখ বন্ধ করে তীব্রের বুকের সাথে লেপ্টে গেল। তীব্র মুচকি হেসে ওকে দরজার দিকে নিয়ে গেল। তারপর তুরকে নিজের বন্ধ দরজা থেকে বের করে ছাদের দিকে পা বাড়াল। যতই এগিয়ে যাচ্ছে তুরের ভিতরে নাড়িয়ে দিচ্ছে। ও আজ ৪ মাস পর প্রকৃতির মাঝে যাচ্ছে….. কিন্তু তুর নিজের চোখ খুলল না।
,
,
,
,
,
হঠাৎ তুর নিজের শরীরে ফোটা ফোটা ঠান্ডা পানির আভাস পায়…. কিন্তু তখনো ওভাবেই থাকে। তীব্র সোজা তুরকে নিয়ে খোলা আকাশের নিচে দাড়ায়।
— তুর চোখ খোলো।
তীব্রের ডাকে তুর ওর দিকে তাকায়। খুব জোরে বৃষ্টি পরছে মুহুর্তেই দুজনে ভিজে একাকার। তুর তীব্রের গলা জড়িয়ে আছে। দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। একজনের চোখে অজস্র প্রশ্ন, আরেকজনের চোখে অদ্ভুত মোহ….
হঠাৎ বাজ পরতেই তুর জড়িয়ে ধরে ওকে….
— এখন তোমাকে নিজের মাঝে আটকাতে চাই না তুর। অনেক বন্দী থেকেছো আজকের এই মুহুর্তের জন্য তুমি মুক্ত তুর। আমাকে ছেড়ে নিজের মত বাচ।
তুরকে নিজের কোল থেকে নামিয়ে দেয়। তীব্রের বাহু বন্ধন থেকে মুক্ত হয়েই তুর চলে যেতে চায় কিন্তু তুর ওকে নিজের মাঝে টেনে নেয়….
— এই মুহুর্ত তোমার, কিন্তু এর পরের মুহুর্তটা শুধু আমার হবে। মনে রেখ…
তুরকে ছেড়ে দিয়েই তীব্র তুরের থেকে দুরে সরে যায় দেয়ালে হেলান দিয়ে তুর দেখতে থাকে…. বন্দী জীবনের এই প্রথম মুক্তি তুরকে খুশিতে কাদিয়ে দিয়েছে। আকাশের দিকে তাকিয়ে প্রচন্ড জোরে জোরে চিতকার করছে তুর….
পানির ফোটা, ঠান্ডা বাতাস, হাড় হিম করা ঠান্ডা নিজের চোখ বন্ধ করে অনুভব করছে তুর। আর ওদিকে তুরকে আপন খেয়ালে দেখতে ব্যস্ত তীব্র….
— এর পর প্রতিটি দিন তোমার এমন হবে তুর। তুমি যা চাইবে সব দেব আমি তোমায়, বিনিময়ে শুধু তোমায় চাই… আমার প্রথম এবং শেষ চাওয়া তুমি। আসক্ত আমি তোমার মাঝে…. Because you are my addiction tur….
,
,
,
তুর বুক ভরে নিশ্বাস নিচ্ছে তখনি ঘাড়ে কারো গরম নিশ্বাস পায়। তুর পিছন ফিরতেই দেখে তীব্র দাড়িয়ে আছে।
— আপনি..….
অঝোরে কাপছে তুরের ঠোঁট দুটো। বুঝতেই পারছে প্রচন্ড ঠান্ডা লাগছে ওর। অনেকদিন পর বাইরে তাছাড়া এখানকার আবহাওয়া অনেক ঠান্ডা….. তুর কাপা কাপা কন্ঠে বলল….
— কি হয়েছে?
_- তোমাকে চাই….
— মানে…
— তোমার নেশায় আমি আসক্ত তুর। শুধু নিজের একাকিত্ব দুর করতে তোমাকে চেয়েছি। আর এখন নিজের জন্যও তোমাকে চাই….
— তীব্র আ..পপ.পনি…
— সারাজীবনের জন্য….
তুর তীব্রের সামনে থেকে চলে যেতে নিলেই তীব্র ওকে টান দিয়ে নিজের কাছে এনে ওর ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়….. তুর তীব্রকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলেও এক পর্যায়ে শান্ত হয়ে যায়। তীব্র আজ তুরের মাঝে হারিয়ে যেতে চায়। আর কোনো দুরত্ব রাখবে না ওদের মাঝে…..
তুরের ঠোঁট থেকে সরে এসে ওর হাত পিছনে মুড়ে নিজের মধ্যে মিশিয়ে নেয়……
— আজ তোমাকে চাই আমি তুর। তোমার সজ্ঞানে তোমাকে আমি নিজের করে পেতে চাই তুর যাতে চাইলেও কোনোদিন তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যেতে না পারো।
তীব্রের কথার কি উত্তর ও দেবে জানা নেই ওর। তীব্র ওর কাছে ওকে চাইছে অথচ যা নেওয়ার তা তো সেদিন নিয়ে নিয়েছিল তাহলে আজ কেন অনুমতি চাইছে। এটা কি তুরকে তাচ্ছিল্য করার জন্য। তুর যদি না চায় তবে কি তীব্র ওকে ছেড়ে দেব। তা তো নয় তাহলে কেন চাইছে অনুমতি…..
অবাক চোখে তাকিয়ে আছে তুর।
— তোমার নিরব চাওনীকে আমি সম্মতি ভেবে নিলাম তুর…
তুরের বলার ভাষা নেই। আর তীব্রের জানার। ও তুরকে কোলে তুলে যেভাবে গিয়েছিল সেভাবেই ফিরে আসে। কিন্তু এখনও তুর অবাক হয়ে ওকে দেখে যাচ্ছে…..
তুরকে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেয়। তুরের দিকে কিছুটা ঝুকতেই তুর মুখ ফিরিয়ে নেয়। কিন্তু দুপাশে তীব্রের হাত থাকায় যেতে পারে না দুরে। তীব্রের চোখের দিকে তাকাতেই নেশাক্ত তীব্রকে দেখতে পায়।
— [ এই মুহুর্তে তোমার মাঝে কোনো নেশা নেই তুর। না আমার নেশা আর না মেডিসিনের। তুমি সম্পুর্ন সজ্ঞানে আছো। তাই আজ এই মুহুর্তে আমি তোমাকে আপন করতে চাই যাতে আমায় মায়ায় পরে হলেও আমাকে ছেড়ে যেতে না পার ]
নিজের মনে কথা গুলো ভেবেই তুরের দিকে এগোয় তীব্র। তুর খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পারে আর যাই হোক আজ ও তীব্রের থেকে নিজেকে বাচাতে পারবে না। এ নিয়ে তীব্রকে কিছু বলতেও পারছে না। সেদিন যেটা ওর অজ্ঞানে করেছিল আজ সেটাই তীব্র ওর সজ্ঞানে করছে। সেদিন বাধা দেওয়ার জ্ঞান ছিল না আর আজ শক্তি….. কথাটা ভেবেই নিজের চোখ বন্ধ করে নেয় তুর…..
,
,
,
,
,
,
,
,
সকালে ঘুম থেকে উঠলে দেখে তীব্র ওকে বুকের মাঝে নিয়ে শুয়ে আছে। নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে ও শুয়ে পরে। তীব্রের ঘুমন্ত মুখটা ওর সামনে আর ও সেই মুখটা দেখতে দেখতে নিজের দুচোখের পানি বিসর্জন দিতে ব্যস্ত… আবার ঘুমের কোলে ঢোলে পরে তুর……
ঘুম ভাঙতেই তীব্রকে কাছে পায় না তুর। ও আশে পাশে তাকাতেই কোথায় তীব্রকে দেখতে পায়না। শরীরে চাদর টানা। একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে তুর…..
— কিছুটা সময়ের মুক্তির জন্য আপনি অনেক বড় দাম নিলেন তীব্র। বিনিময়টা যে এতটা বড় হবে ভাবিনি।
তুর বিছানা থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে আসতেই দেখে তীব্র পিছনে ফিরিয়ে দাড়িয়ে আছে। তুরের আওয়াজ পেয়েই ওর দিকে তাকায়। তীব্রের দিকে তাকাতে না পেরে নিচের দিকে তাকিয়ে হাত কচলাতে থাকে তুর। তুরের দিকে হালকা এগিয়ে তুরের কাছে যেতেই তুর ভয়ের চাওনীতে ওর দিকে তাকায় তীব্র তা উপেক্ষা করেই তুরকে কোলে নিয়ে রুমের বাইরে নিজের রুমে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে তুরকে নামিয়ে দেয়। এই প্রথম তীব্রের রুমে এলো। তুর তখনো চুপ করে মাথা নিচু করে তাকিয়ে আছে।
— তুর আজকে থেকে তুমি এখানে আমার সাথে থাকবে আমার রুমে।
তারপর তুরের হাতে একটা শপিং ব্যাগ ধরিয়ে বলে….
— ওদিকে ওয়াসরুম এটা পরে আস….
তুর কিছু জিজ্ঞেসুর দৃষ্টিতে তাকালেও তীব্রকে দেখে বুঝতে পারে ও কোনো উত্তর দেবেনা। তাই ও ওয়াসরুমে চলে যায়। ব্যাগটা খুলতেই একটা সাদা গ্রাউন দেখতে পায়। কিন্তু এটা বাসায় পরার মত না। তীব্র ওকে যেসব ড্রেস দিয়েছিল তা সবটাই ঘরে পরার ছিল। কিন্তু তুর আর বেশি কিছু ভাবল না। নিজেস্ব চাওয়া পাওয়াই যখন নেই তখন এটা জেনে কি করবে তীব্র কি চাইছে…..
ও গ্রাউনটা পরে বাইরে বেড়িয়ে দেখে তীব্র খাটের উপর বসে কি যেন ভাবছে…. তুরকে দেখে কিছুক্ষন ওর দিকে থাকে। কিছুটা সংকোচ নিয়েই তুর ওর সামনে এসে দাড়ায়। তীব্র বসা থেকে উঠে ওর কাছে যায়। তুরের পিঠে হাত দিতেই চমকে উঠে তুর। তীব্র ওর চোখে চোখ রেখেই জামার চেনটা লাগিয়ে দেয়।
তুর কিছু বলতে যাবে তার আগেই ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসিয়ে দেয় তুরকে। নিজের মত করে সাজিয়ে দেয় । তুর পুতুলের মত অবাক চোখে নিজেকে দেখছে । আর দেখবে নাই বা কেন,৪ মাস পর নিজেকে দেখছে আয়নায়। ৪ মাসে সুর্যের আলো চোখে লাগেনি। পুরো শরীর সাদা বরফের মত। নিজেকে বরফের পুতুলের মত লাগছে যার না আছে কোনো অনুভুতি আর না আছে কোন ইচ্ছে অনিচ্ছা…. কথাটা ভেবেই ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠে কিন্তু সেটা কিসের ছিল তা জানা নেই তুরের…..
নিজের কাজ শেষ করে তুরের চোখ বেধে দেয় তীব্র। তারপর ওকে দাড় করিয়ে কপালে ঠোঁট ছুইয়ে দিয়েই কোলে তুলে নেয়। তুরকে নিয়ে কোথাও যাচ্ছে তীব্র। হঠাৎ মনে হল তুরকে গাড়িতে বসিয়ে দিয়েছে। চোখ বাধা তাই কিছু বুঝতে পারছে না। গাড়ি থামতেই আবার ওকে কোলে তুলে নেয়…..
তুরের প্রচন্ড বাতাস আর কোনো কিছুর গর্জন ফিল করতে পারছে। তখনি তীব্র বলে উঠে…..
_– আমি কোনো পুতুলকে নিয়ে আসিনি। যার না থাকবে কোনো অনুভুতি না থাকবে কৌতুহল। আমি কিন্তু এখানে তোমাকে মেরেও ফেলতে পারি…. তাই জিজ্ঞেস করছি কেমন লাগছে তোমার…
তীব্রের কথার স্পষ্ট উত্তর দেয় তুর…
— আগুনের সাথে বসবাস করছি আমি। তাতে যে পুড়তে হবে তাও আমার অজানা নয়। তবে আপনি কি জানেন সেই আগুন আমার শরীরটাকে জালিয়ে শেষ করে দেয়। কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি তা আমাকে দহনে জর্জরিত করলেও আমাকে তা মারবে না। মানে আমাকে পুড়িয়ে যন্ত্রণা দিলেও আমাকে ছাই করার শক্তি সেই আগুনের নেই। [ ঠোঁটের কোনে হাসি রেখে ]
এই কথা শুনে তীব্র নিজের মনে হেসে উঠে….
— এইটাই বিশ্বাস আগুনের উপর….
— না নিজের উপর আছে। আমাকে ছাই করার শক্তি তার নেই। বিশ্বাস না হলে ট্রাই করে দেখতে পারেন। ছাই করতে পারেন কিনা???
তুরের কথাটা যে এমন হবে তার ধারনা ছিল তীব্রের। কারন ও জানে তীব্রের প্রতি এখন আর তুরের কোনো ভয় নেই। যেটা আছে সেটা ক্ষোভ।
— এই জন্য তোমাকে চাই। সত্যি বলেছ আসলেই আগুনের এতটাও ক্ষমতা নেই। কিন্তু তাকে সামান্য ভেব না। ছাই করতে না পারলেও তার যন্ত্রণা কিন্তু অনেক বেশি ….. দেখতে চাও…. [ অদ্ভুতময় নেশাক্ত তুমি। জানো জিততে পারবে না। কিন্তু হার মানতে চাও না। তাইত সব কিছু পেয়েও তোমাকেই চাই ]
তারপর তুরকে নামিয়ে দিতেই তুর তীব্রের শার্ট খামচে ধরল। পায়ের নিচে নরম কিছু ঠেকল। তীব্র ওর চোখের বাধন খুলে দিতেই তুর চোখে সামনে নীল সমদ্রের অজস্র টেউ দেখতে পেল। তুর তীব্রেকে ছেড়ে পানির দিকে পা বাড়ালো। পা দুখানা সমুদ্রের পানিতে ভিজিয়ে তা নিয়ে খেলতে লাগল…. আকাশ পুরোপুরো রোদেলা না হলেও সুর্যকে দেখা যাচ্ছে….. তীব্র তখন সূর্যকে উদ্দেশ্য করে বলে…..
_- আমার কথা আমি রেখেছি যার মাঝে নিজেকে হারিয়েছি তাকে কাউকে স্পর্শ করা তো দুরে থাক দেখতেও দেয়নি।
হঠাৎ মেঘগুলো ঢেকে দিল সূর্যকে তীব্রের মনে হলো সুর্যটা মুখ লুকিয়েছে মেঘের আড়ালে…..
তীব্র গিয়ে তুরের হাতটা ধরে টেনে নিয়ে আসে…. তুর ঠোঁট উল্টে বলে….
— এখনি চলে যাব।
— না ওইখানে যাব…
একটা ছোট শিপ দেখিয়ে দিয়ে….
— আজ সারাদিনে এই সমুদ্রের বুকে আমরা দুজন ঘুরব….
তারপর তুরকে নিয়ে সারাদিন সমুদ্রের বুকে ঘুরে তীব্র…. তুর সমুদ্রের মাঝে ব্যস্ত আর তীব্র সমুদ্রে থাকা তুরের মাঝে…
বিকেলের দিকে ওরা একটা দ্বীপের কাছে আসে। চোখ ধাধানো সৌন্দর্য তার। চারদিকে সবুজের মাঝে বেষ্টিত উঁচু উঁচু পাহাড়। এবার কৌতুহল হয়ে তুর জিজ্ঞেস করেই বসে….
— এটা কোথায় বাংলাদেশে এত সুন্দর জায়গা আছে জানা ছিল না।
এটা শুনে তীব্র হালকা হাসে…..
— তা জেনে কি করবে এই মুহুর্তটা অনুভব করো শুধু…
তারপর তুরকে নিয়ে নেমে আসে শিপ থেকে। কিছুদুর হাটার পর ওরা পাহাড়ি সিড়ির কাছে আসে…. কিন্তু তুরের অবস্থা খারাপ। এতটুকু পথ হেটেছে তাতেই পা ফেটে যাচ্ছে। আর এটাই স্বাভাবিক কারন বিগত ৪ মাস ও হাটেনি তাও আবার এই পাহাড়ি রাস্তা। তুর মুখটা কালো করে বলল…..
— আমি আর পারছি না।
তীব্র জানত এমনটাই হবে। তাই কথা না বলেই তুরকে কোলে তুলে নিল। তারপর উপরের দিকে তাকিয়ে হাটা শুরু করল
তুর ওর গলা জড়িয়ে ওকে দেখেই যাচ্ছে। লোকটা কি চাইছে তার কোনো কিছুর ইয়াত্তা পাচ্ছে না।
কিছুদুর হাটার পর তীব্র বড় বড় নিশ্বাস নিয়ে তরের দিকে তাকায়। এটা দেখে তুর বলে…
— আমাকে নামিয়ে দিন আমি যেতে পারব।
— আমি জানি পারবে কিন্তু তাতে আমার কষ্ট হবে……
তারপর তীব্র আবার উঠা শুরু করল। তুর বুঝতে পারল তীব্রের কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু কেন জানি তীব্রের এই কষ্টটা ওর মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলল….. তুরের হাতে থাকা রুমালটা দিয়ে তীব্রের কপালের ঘাম মুছে দিল। তীব্র তুরের দিকে তাকাল কিন্তু কিছু বলল না।
৩৬০ টা সিড়ির পর তীব্র কাঙ্ক্ষিত স্থানে পৌছাল… প্রায় গোধুলি লগ্ম। তীব্র কোলে থাকা অবস্থায় তুরকে পাহাড়ের শেষ প্রান্তে নিয়ে যায়। তারপর ওকে চারদিক দেখতে বলে….
হালকা অন্ধকার পাহাড়ের বুকে। গোধুলি লগ্নের সুর্যের রক্তিম আভা চারদিকে প্রকাশিত। তুর নিজের জীবনের সবচেয়ে সুন্দর দেখছে।
-_ আমাকে নামান তীব্র….
তীব্র ওকে নামাতেই ও দুহাত খুলে মুক্ত ভাবে নিশ্বাস নিতে থাকে চোখ বন্ধ করে। আর তীব্র ওকে জড়িয়ে ধরে….. কতক্ষন থাকে জানা নেই। দিনের আলো ফুরিয়ে আসতেই তীব্র ওকে নিয়ে পাহাড়ে থাকা একটা গেষ্ঠহাউজে যায়। আগে থেকেই সবকিছুর ব্যবস্থা করে রেখেছিল তীব্র.।
তীব্র ওকে রুমে গিয়ে তুরকে ফ্রেশ হতে বলে। তারপর নিজেও ফ্রেশ হতে চলে যায়। তুর সেখানে আলাদা পোশাক দেখতে পায়। এটাও সাদা। তুর ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে তীব্র সাদা একটা ফতুয়া পরা যার মাঝে বুকটা খোলা। পুরো শরীরে লেপ্টে বোঝাই যাচ্ছে তীব্র শাওয়ার নিয়েছে। ভেজা চুলের পানিতে পুরো একাকার অবস্থা। কেন জানিনা তুরের লজ্জা লাগল তীব্রকে এভাবে দেখে…. লজ্জায় চোখ নামিয়ে কিছু বলতে যাবে তখনি তীব্র ওর কাছে গিয়ে আলত করে ওর ঘাড়ে ঠোঁট বুলিয়ে দেয়….
— এভাবে লজ্জা পেও না। লজ্জাগুলো বাচিয়ে রাখ…. নয়তো তোমারি বিপদ…..
কথাটা বলেই তুরকে কালো একটা চাদরে মুড়িয়ে দেয়।
— মোহনীয় এই সৌন্দর্য দেখার অধিকার শুধু আমার। যাকে সবার নজরের আড়ালে রাখতে চাই…..
তারপর তুরকে নিয়ে রাতের খাবারের জন্য চলে যায়…. খাবার খাওয়া শেষে ওরা সবার সাথে বসে আড্ডা দিতে থাকে…তখনি একজন লোক আসে আর ওদের উদ্দেশ্য করে বলে নিজেদের ভাষায় বলে…. পাশে থাকা একটা লোক বাংলায় বলে….
— ওনি কে আপনার সাথে….
তুর চুপ করে থাকলেও তীব্র হেসে উওর দেয়।
-_- যার সাথে মানুষ সারাজিবন কাটাতে চায়।সারাজীবন পাশে থাকতে চায় তাই। মানে আমার স্ত্রী…..
কথাটা শুনে তুর জিজ্ঞেসুর দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকায়. … ওর দৃষ্টিকে উপেক্ষা করে তীব্র বলে.।।।
— দোয়া করে দিন আমরা যেন সারাজীবন একসাথে থাকতে পারি। চাইলেও যেন ছেড়ে যেতে না পারি।
লোকটা এটা শুনে ওদের দোয়া দিয়ে চলে যায়। খাবার খেয়ে তীব্র ওকে রুমে চলে যায়। তুর এসেই ওয়াসরুমে ঢুকে যায়। আর তখনি বাইরে কারো নক করার আওয়াজ পায়…. তীব্র গিয়ে দরজা খুলতেই অবাক…
— একি তুমি…
— স্যার এইটা আপনাদের জন্য। যেহেতু আপনি স্পেশাল গেস্ট তাই আপনাদের জন্য। এইটা খুব বিখ্যাত শরবত…..
তীব্রের বুঝতে বাকি থাকে না এটা কি হতে পারে। ও মুচকি হেসে বলে উঠে…
— বউ নিয়ে হানিমুনে এসে নেশা করব।
— স্যার এটাই তো নেশা করার সময়…. রেখে দিন…
তীব্র বুঝল না নিলে ছাড়বে না। তাই গ্লাসটা নিয়ে ওকে টিপস দিয়ে বিদায় করল। গ্লাসটা টেবিলে রেখে বলল….
_- যে নেশায় আমি পরেছি তা কাটেটাই আমার সারাজিবন লেগে যাবে এই নেশায় কখন জড়াবো। [ তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে চলে যায় ]
ওদিকে ওয়াসরুম থেকে বেড়িয়ে তুরের বেশ পানির পিপাসা পায়। ও গ্লাসে শরবত দেখে কিছু না ভেবেই ঢকঢক করে সবটা খেয়ে নেয়। এতই মজা লাগে হাতে যা লেগে থাকে তাও চেটেপুটে খেতে থাকে….
বেশকিছুক্ষন পর তীব্র রুমে আসতেই দেখে লাইট অফ। বাইরে থেকে আবছা আলো আসছে…. তীব্র লাইটের কাছে যেতেই কেউ ওকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দেয়। তারপর ওর উপর চড়ে বসে। তীব্রের বুঝতে বাকি থাকে না মানুষটা কে? আবছা আলোয় মুখটা ঠিক দেখতে পাচ্ছে….
— তুমি…
— হুসসস… আপনাকে আজ আমার কিছু প্রশ্নের উওর দিতে হবে।
—- তুমি নেশা করছো?
— না শরবত খেয়েছি।
— তা বুঝতেই পারছি….
_- আগে প্রশ্নের উওর দিন। [ তীব্রের কপাল থেকে নাকে স্লাইড করে ]
— হুমম বলো… দেব উত্তর।
— আমাকে কেন এনেছেন? কেন আটকে রেখেছেন কিছু জানতে চাইনা। আমার প্রশ্ন আমি কি আপনাকে ভালোবাসি?
— কোন সন্দেহ… [ তুরকে কাছে টেনে ]
— হুমম… ভালোবাসার মানুষের ছোয়ায় নাকি পুর্নতার অনুভুতি হয় কিন্তু আপনার ছোয়ায় আমার এতটা তিক্ততার অনুভব হয় কেন? ভালোবাসার মানুষ হয়েও যখন আপনি আমাকে স্পর্শ করেন তখন কেন মনে হয় আমি আপনার থেকে দুরে যেতে চাই…..
করুন চোখে তীব্রের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে। তীব্র ওর চোখের অসহায়ের ভাষা পরলেও নিজের রাগটাকে কন্ট্রোল করতে পারে না। ও তুরকে নিজের উপর থেকে ফেলে ওর গাল চেপে ধরে….
— আমার ছোয়া তোকে কি দেয় জানিনা। কিন্তু তোকে শুধু আমার চাই। আমার জীবনে যেমন তুই ছাড়া কেউ ছিল না তেমনি তোর জীবনেও থাকবে না।
— সত্যি কি ভালোবাসি আপনাকে…..
আর কিছু বলার আগেই তীব্র ওর ঠোঁট জোরা দখলে নেয়। এবার তুরও ছাড়ায় না নিজেকে সায় দেয় তীব্রের ডাকে….ভালোবাসার অদ্ভুত হারিয়ে দুজন………
,
,
,
,
,
,,
,
,
,
এভাবেই কেটে যায় ১ মাস…. তুর তীব্রকে মেনে নিতে না পারলেও অভ্যস্ত হয়ে গেছে ওর মাঝে…..
— এই যে ব্যাপারটা কি আজকে সারাদিন লাগবে নাকি😕 আজকে আদো কি পেটে কিছু পরবে…
— দেখ চ্যালেঞ্জ যখন নিয়েছি কেক আমি বানাবোই….
— এ নিয়ে ৩টা।। 😴
— ৩০টা হলেও সমস্যা নেই। জেতার জন্য তীব্র কি করতে পারে কোনো ধারনা নেই তোমার।
— হুমম নেই তো… আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করব?
— হুমম…
— আগে আপনি চলে যেতেন। কিন্তু এই একমাসে আপনি ১দিনের জন্য কোথায় যাননি কেন?
— গেলে খুশি হতে নাকি?
— না তা হবে কেন? এমনি জিজ্ঞেস করলাম।
_- হয়েছে এখন একটু হেল্প করো আমাকে।
— কি অদ্ভুত তাই না আমাদের সম্পর্ক আমাদের তাইনা। স্বাভাবিক স্বামী স্ত্রী মতোই সম্পর্ক আমাদের। তাদের মতই ছোট্ট সংসার কিন্তু তাদের মত বিয়েটাই হয়নি। [ একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে ]
— তাতে কি?
— না তেমন কিছু না। কিন্তু বিশ্বাস করুন আপনার বউয়ের মত আপনাকে হেল্প করতে পারব না।
— কেন? 😡
— তাহলে তো আপনি বিয়েই করবেন না অন্যকাউকে। সারাজীবন আমার সাথেই থেকে যাবেন?
— আমার শখ ও নেই অন্যকাউকে বিয়ে করার।
— তাহলে একটা কাজ করুন আমাকে বিয়ে করে নিন। এমনিতেই আমি ছাডা আপনি তো অন্যকাউকে বিয়ে করবেনই না। [ কথাটা বলেই চুপ হয়ে যায়। অজান্তেই বলে দিয়েছে ]
এটা দেখে তীব্র নিজের কাজ ফেলে ওর কাছে যায়। তারপর পিছন থেকে ওকে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে নাক ঘষে বলে…
— যদি বিয়ে করতে চাই তাহলে করবে….
কথাটা শুনে তুর ওর দিকে তাকায়….
— আপনি আমাকে বিয়ে করবেন তীব্র?
— যদি বলি হ্যা তবে….
তুর কিছু বলতে পারল না চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ল। সেটা খুশির সেটা বোঝাই যাচ্ছে। কিন্তু তীব্রের বউ হতে পারার খুশি নাকি নিজেকে পবিত্র করার জন্য সেই মানুষকে স্বামী হিসেবে মেনে নেওয়ার খুশি তা বুঝল না তীব্র।
— কিহল তুর….???
— জানিনা কেন জানি বিশ্বাস হচ্ছে না। আপনি কি সত্যি আমাকে বিয়ে করবেন?
আলত পরশ বুলালো তুরের কপালে….
— সত্যি…… [ তুরকে বুকে জড়িয়ে ]
সাথে সাথে কেদে উঠে তুর। কিন্তু কেন বুঝতে পারে না।
— এভাবে কেদ না তুর। আগে তো বিয়েটা হতে দেও। বাকি কান্নাটা নাহয় স্বামীর বুকেই কেদো..…..
তুর নিরবে কাদতে লাগল….
— [ অনেক সহজেই তুমি সবটা মেনে নেও তুর। বিশ্বাস জিনিস খুব খারাপ। সবার উপর করা যায় না। সেটা যতই আপন হোক। ভাঙলে অনেক কষ্ট হয়। তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনা কিন্তু না চাইতেই বার বার….. ]
নিজের মনেই দীর্ঘ শ্বাস ফেলে আরো জোরে জড়িয়ে ধরে…
,
,
,
,
,
,
,
,
,[ বাকিটা পরের পর্ব গুলোতে জানবেন ]
তুর আর তীব্রের বিয়ে😇😇😇 বেচারীর আশা পুরন হতে চলেছে। যাই হোক তীব্র খাটাস কিছু না করলেই হয় এইবার😴😴
আপনাদের কি ধারনা.।।।🤣🤣🤣🤣
যাই হোক নেক্সট পার্টে বুঝতে পারবেন… আসলে কি হয়।
Åriyâñà Jâbiñ Mêhèr
Åriyâñà_Jâbiñ_Mêhèr