বন্ধ দরজায় তুমি🖤পর্ব-৩

0
971

#বন্ধ_দরজায়_তুমি🖤
#Written_By_Mêhèriyâr_Mêhèr
#Part: 03…..

সবকিছু রেডি করা আছে। ফ্রেশ হয়ে খেয়ে মেডিসিনটা নিয়ে রেস্ট নেও। নাইলে আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না। আরেকটা কথা আমি কিন্তু আমার পাওনা কিছুটা নিয়ে গেছি। পরে বলবে আমি বলিনি কেন? তারায় ছিলাম তাই ডাকিনি। আর হ্যা যাওয়ার পর আমার উপর অভিশাপ দেওয়াটা বন্ধ করো। কারন আমার যদি কিছু হয় এই দুনিয়ার কেউ তোমাকে খুজে বের করতে পারবে না। পচে মরতে হবে তোমাকে। তাই নিজের ভালোর জন্য হলেও আমার ভালোটাই চাও….

নাম জানতে চেয়েছিলে তাই না। ওকে বললাম তুমি আমাকে তীব্র নামে ডাকতে পারো তুর…..

— ওনার নাম তাহলে “তীব্র… “। আসলেই তার নামটা তার মতই ভয়ংকর। নামের মতই তার মাঝে একটা তীব্রতার ব্যাপার আছে। ধুর এসব ভেবে লাভ নেই। লোকটা চলে গেছে এটাই সবচেয়ে বড় পাওনা।

তীব্র চলে গেছে কথাটা ভাবতেই বন্ধ ঘরের চার দেয়ালের মাঝে বুক ভরা নিশ্বাস নেয় তুর। কিন্তু পরক্ষনেই আবার মন খারাপ হয়ে যায় না জানি কতদিন ওকে আবার কোনো মানুষকে না দেখেই থাকতে হবে। যদিও তীব্র আগে কথা না বললেও এখন একটু বলে তাতেই ওর মনে হয় ও বেচে আছে কিন্তু এখন। এই চার দেয়ালের আড়ালে কি করে এতদিন থাকবে ও….. কিন্তু নিজের ভাবনার জন্য নিজেই নিজের উপর তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে। কারন লোকটা যে বলল সারাজিবন ওকে এখানে পচে মরতে হবে তার বেলায়……..

,
,
,
,

,,

,,

,নাহ আর ভালো লাগছে না তুরের। শুয়ে বসে থাকতে থাকতে সে ক্লান্ত তাই নিজের বাসভুমির সেই বন্ধ ঘরে হাটাহাটি শুরু করে…

হঠাৎ তুর ক্যালেন্ডারের সামনে সামনে গিয়ে দাড়ায়। তারপর ক্যালেন্ডারের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ভাবতে লাগল। আজ তিনমাস হতে চলল তুর এই বদ্ধ রুমটার মধ্যে বন্দী জীবন কাটাচ্ছে। ক্যালেন্ডারের প্রতিটি তারিখে নিজে হাতে একটা একটা দাগ কেটেছে তুর। তবে কলম বা অন্যকিছু দিয়ে নয় নিজ হাতের আঙুলের নখ দিয়ে।

এই রুমটা বেশ বড়ই । বাইরে যাওয়ার জন্য জন্য শুধু একটা দরজা। না কোনো জানালা না অন্য কিছু। রুমে তেমন কিছুই নেই বললেই চলে।শুধু আর একটা আলমারি রয়েছে। যাতে তুরের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সবই আছে। খাবার হিসেবে কতগুলো শুকনো খাবার আর পানির বটল রয়েছে। কোনো খাট নেই শুধু মাটিতে একটা বিছানা রয়েছে যা অত্যন্ত সফট। মাথার উপর সিলিং ফ্যান আর দেয়ালের সবচেয়ে উঁচুতে এসি রয়েছে। যা রির্মোট কন্ট্রোল। কিন্তু লাইট নেভানোর কোনো ব্যবস্থা নেই তুরের কাছে। কারন তাতে তুরের উপর নজর রাখতে পারবে না লোকটি। এক কথায় এই রুমে তেমন কিছুই নেই যার দ্বারা নিজের কোনো ক্ষতি করা যায়। সাথে এটাচ করা বাথরুম আর ক্রিচেন রয়েছে তবে লোকটি না আসলে ক্রিচেনে যাওয়া তো দুর দেখার সৌভাগ্য হয় না।

তবে বন্ধ রুমের ভিতরে থেকেও শান্তি পায় না তুর। নিজের মত করে চলতে পারে না। কারন এই ঘরের চারদিকে চারটি সিসি ক্যামেরা লাগানো। এমনকি বাথরুমেও চারটা ক্যামেরা লাগিয়েছিল লোকটা। এটা যখন ও দেখল প্রচন্ড রাগ লাগছিল লোকটার উপর। লোকটা একটু অন্যরকম জানা ছিল কিন্তু মঙ্গলগ্রহ বা বাংলাদেশের বিখ্যাত পাবনার পাগলা নিবাস থেকে পালিয়েছিল কিনা তা নিয়ে তুরের যথেষ্ট সন্দেহ আছে। নাহলে চারটা সিসি ক্যামেরা তাও বাথরুমে ভাবা যায়। প্রচন্ড রাগ রাগছিল। কিন্তু কি করার… তুরের কিছুই করার নেই। বাথরুম তো ইউজ করতেই হবে তাই কোন মতে ক্যামেরার উপরে কাপরের দেয়াল দিয়ে আড়াল করার চেষ্টা করল। কিন্তু শেষ রক্ষা আর হলো না। তুর যখন গোসল করতে গেল হঠাৎ করে দরজায় কেউ পাগলের মত ধাক্কাতে শুরু করল। বেশ বিরক্ত হলো তুর বুঝতে বাকি থাকল না যে যে মিডনাইট ম্যান মানে ওই পাগল লোকটা এসেছে। কিন্তু এটা বুঝতে পারল না মিডনাইট ম্যান এই মিড ডে তে কোথা থেকে উদয় হলো। পরক্ষনেই মনে পড়ল এখন বোধহয় রাত হবে। কারন ওনি তো দিনে আসবে না। কিন্তু বুঝতে পারল না। তা দিনে বা রাতে যে ভাবেই আসুক হঠাৎ করে বাথরুমের দরজা কেন ধাক্কাচ্ছে ওনার কি ইয়েটা বেশি জোরে পেয়েছে নাকি যে নিজের ওয়াসরুমে যাওয়ার তড় সইছে না। নিজের ভাবনা থেকে ফিরে আসার আগেই তুরের মনে হলো এবার দরজাটা আর আস্তা থাকবে না। আর দরজা ভাঙলে সর্বনাশ এই মিডনাইট ম্যানের কোনো বিশ্বাস নেই। সে আর এই দরজা সারাবে না। তাই বাধ্য হয়েই কোনোমতে কাপর পেচিয়ে দরজা খুলে নিজেকে লুকিয়ে দরজায় উকি দিল তুর। কিন্তু এটা ভুলে যে সে পাবনা ফেরত পাগলের সামনে দরজা খুলছে যার মাথায় এতটুকু সেন্স নেই যে একটা মেয়ে কখন ওয়াসরুমের দরজায় উকি দিয়ে দরজা খোলে। দরজা খোলার সাথে সাথে জার্মানিতে আসা সুনামির মত ওয়াসরুমের ভিতর ঢুকেই তুর হাত দুটো ধরে দেয়ালে চেপে ধরল।

— তোমার সাহস হয় কি করে আমাকে এতক্ষন বাইরে দাড় করিয়ে রাখার। সেই কখন থেকে দরজা ধাক্কাচ্ছি। কি করছিলে এতক্ষন। আর ক্যামেরা বন্ধ করেছ কেন? এত সাহস পাও কই… [ খুব জোরে চিল্লিয়ে ]

লোকটার কথা শুনে তুর আবালির মত ওর দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইল। তীব্রের কথা শুনে ওর ভয় না নিজেকে বিড়ালের বাচ্চা মনে হচ্ছে যে গোসল করতে পারবে না। তাই তাকে গোসল করানোর জন্য এসেছে।

— কি হল কথা বলছ না কেন? 😡

— আচ্ছা আপনার মাথায় সত্যি কি কোনো সমস্যা আছে। [ অবাক হয়ে ]

— মানে…??

— মানে…. 😡 আমি কি আপনাকে সাথে নিয়ে গোসল করব৷ আচ্ছা বাদ দিন এটা বলুন কোনো মেয়ে বাথরুমে বসে কি করতে পারে? 😡 সে কি করবে? গোসল করবে নকি অন্যকিছু সেটা আপনাকে দেখানোর জন্য ক্যামেরা খুলে রাখবে। লাইক সিরিয়াসলি। 😡

তুরের কথা শুনে তীব্র আকাশ থেকে পড়ল। মানে ও তুরকে নিয়ে এতটাই পজেসিভ হয়ে গেছে যে ও খেয়াল করেনি ও বাথরুমেই সিসিটিভি লাগিয়েছে। সত্যি তো মেয়েটা কি ওকে নিজের গোছল করা দেখাবে নাকি।

— আপনার কি মনে হয় আমি বাথরুমে বসে পালানোর প্লান করছি নাকি নিজেকে মারার প্লান। 🤔

তীব্র বেশ অস্বস্তিতে পরে তুরের কথায়
কিন্তু তুরকে বুঝতে না দিয়ে নিজেকে সামলে নিয়ে আসে। তারপর ওর দিকে এগিয়ে দেয়ালের দুপাশে হাত রেখে মুখটা নিচু করে ওর মুখের কাছে নিয়ে আসে। তারপর বলে…..

— আমি না চাইলে তুমি পালানো তো দুর বাইরের আলোটা কেমন তাও জানতে পারবে না। আর নিজের ক্ষতির কথা বলছ। তার পরিমান কি হতে পারে সেটা তো তুমি আগেই দেখেছ।

— দেখুন আমার না মরার শখ ঠিকি আছে কিন্তু তা বাথরুমের মধ্যে না। আর আপনি কিভাবে বাথরুমের মধ্যে ক্যামেরা লাগান মানে কোনো ম্যানারস নেই নাকি? 😡 আমি আপনার সামনে কাপর চেঞ্জ করব নাকি? 😡 আর আপনারো বলিহারি বাথরুম ক্যামেরা লাগানোর জায়গা। দয়া করে এই জায়গায় তো ক্ষেমা দেন আমাকে।

এবার তীব্র তুরকে ভালোভাবে দেখে নেয়।ফর্সা লম্বা গড়নের মেয়েটা তীব্রের বুকের কাছে এসে পরছে। ভেজা ঠোঁটগুলো গোলাপের নরম পাপড়ির মত লাগছে।ভেজা চুল গুলো এলোমেলো হয়ে দুপাশে বিশ্রির হয়ে ছড়িয়ে আছে যা তুরকে অসম্ভব মোহনীয় করে তুলেছে। তাড়াহুড়ায় তুর কোনোমতে একটা ওড়না দিয়ে গ্রাম্য মহিলাদের শাড়ির মত পেচিয়ে রেখেছে। যার জন্য ফর্সা শরীরের এককাধ উন্মুক্ত আছে। তুরকে এমন অবস্থায় দেখে তীব্রের মাথা যেন হ্যাং করা শুরু করল।

— কিহল এমন নেশাগ্রস্তের মত তাকিয়ে আছেন কেন? গাঞ্জা টাঞ্জা কিছু খেয়েছেন নাকি?😡

তুরের কথায় তীব্র বাকা হাসল। তুরের কথাগুলোয় অদ্ভুত বিদ্রুপ থাকলেও সেগুলো বাচ্চাদের বায়না লাগে তীব্রের কাছে। ও তুরকে একটানে কাছে এনে শাওয়ার নিচে দাড় করিয়ে আবার শাওয়ার ছেড়ে দিল। তারপর একহাত দিয়ে তুরের দুহাত পিছনে মুড়ে আটকে ওকে নিজের সাথে মিশিয়ে দেয়ালে একহাতের ভর রাখাল.. শাওয়ারের পানি গুলো তীব্রের মুখ থেকে গড়িয়ে তুরের মুখে পরতে লাগল।

— কিহল কি করছেন???

— হুসসস.. [ বলেই তুরকে একদম নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়। তুর নিজেকে ছাড়ানোর জন্য হাত মুচরাতে থাকে কিন্তু তীব্রের একহাতের শক্তির কাছে ব্যার্থ হয়। তুর নিজের মুখ যতটা না দুরে নিতে চায় তীব্র ততটাই ওর কাছে যায়। তীব্রের একহাতের ভর দেয়ালে থাকার কারনে তীব্রের কোনো সমস্যা হচ্ছে না বরং তুরের ছোটাছুটিতে ওর বেশ মজা লাগছে ]

— ছাড়ুন আমাকে?

— নিজে আমার সামনে এভাবে ওড়না জড়িয়ে দাড়িয়ে আছো আর আর বলছ আমি নেশাগ্রস্তের মত তাকিয়ে আছি কেন? আমি তো শুধু তাকিয়ে আছি অন্যকেউ হলে এতক্ষনে …

টিপ টিপ বারছা পানি,
পানিমে আগ লাগাদি.

কেস হয়ে যেত। যদিও আমারো ইচ্ছে করছে এমন কিছু করতে কিন্তু তুমি এখনো বাচ্চা। আর আমার টেস্ট এতটাও খারাপ নয় যে একটা বাচ্চার সাথে কিছু করব।

তীব্রের এমন কথায় ওর মুখ হা হয়ে গেল।

— You looking so hot… এখন আমার কি দোষ। [ চোখ টিপ দিয়ে ]

তুর এবার নিজের দিকে তাকিয়ে নিজেই লজ্জা পেয়ে যায়। এবার আর ও তীব্রের দিকে তাকাতে পারে না। কিন্তু মনে মনে তীব্রের গুষ্টি ষষ্ঠী উদ্ধার করতে থাকে।

— কিহল কিছু বলছ না যে?

তুরকে কিছু বলতে না দেখে ওর হাত দুটো ছেড়ে দেয়। হাত ছাড়া পেয়ে তুর পালিয়ে যেতে চায়। কিন্তু তার আগেই তীব্র ওর কোমর পেচিয়ে ধরে একহাতে ওকে উচু করে মেঝে থেকে সম্পুর্ন উপরে তুলে মিলিয়ে নেয় বুকের সাথে।

— আমাকে এত খাটালে, এত বাজে কথা বললে, আবার উচু গলায় কথা বললে তার শাস্তি তো তোমাকে পেতে হবে।

— মানে.. 🙄 [ ভয়ে ঢোক গিলে ]

— তোমাকে…

তরের দিকে এগিয়ে যেতেই তুর মুখ ফিরিয়ে নেয়। আর ওর ভেজা চুলগুলো খুব জোরেই তীব্রের মুখে বাড়ি খায়। তুরকে ভয় দেখানোর জন্য এমনটা করলেও তুরের চুলের বারিতে কেন জানি তীব্রের রাগ উঠে গেল। তার চেয়েও বড় কারন তুর তীব্রের বুকে হাত দিয়ে আছে। ওর ছোয়া যেন তীব্রের সহ্য হলো না। তুর চোখ বন্ধ করে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে তীব্রের বুকে বারি দিচ্ছে। আর তীব্র ওর বন্ধ চোখের দিকে তাকিয়ে প্রচন্ড রাগে তাকিয়ে আছে শান্ত চোখে।

— প্লিজ যেতে দিন। [ চোখ বন্ধ করে তীব্রকে কিল ঘুশি মারতে থাকে ]

মুহুর্তেই তীব্রের রাগটা বেড়ে গেল। ও তুরকে দেয়ালের সাথে চেপে ওর উন্মুক্ত কাধে খুব গভীরভাবেই চুমো আকে…. তুরের মনে হলো কোন জোক ওর রক্ত খেতে চাচ্ছে। তুরের বন্ধ চোখ গুলো রসগোল্লার মত বড় বড় হয়ে যায়। নিজের ছটফটানি থামিয়ে শান্ত কচ্ছপের মত দাড়িয়ে রইল। ওকে শান্ত হতে দেখে তীব্রের রাগটা ক্রমশ বেড়ে গেল। তীব্র কাধ থেকে সরে গলার কাছে গিয়ে একটা বাইট করে দাত বসিয়ে দিতেই তুর চিতকার করে উঠল। সঙ্গে সঙ্গে তীব্র ওর মুখটা চেপে ধরে বলল….

— আর কোনোদিন যেন আমাকে টাচ করার মত ভুল করো না। তোমাকে আমি স্পর্শ করতেই পারি কিন্তু আমাকে টাচ করার দুঃসাহস ও করো না।

তুরের ভেজা চুল গুলোকে নিজের মুঠোয় পুড়ে। ভেজা চুলের ব্যাথাটা বড়াবড় বেশি।কিন্তু শব্দ করতে পারে না। কারন তীব্র মুখ চেপে তার উপায় রাখেনি। তুরের কান্নায় ধম বন্ধ হয়ে আসছে। এটা দেখে তুরকে ছেড়ে দিতেই ও কাদতে থাকে। রাগটা আরো বেড়ে যায় তীব্রের।

— কান্নার খুব শখ তাই না। ওকে….

বলেই তুরকে ধাক্কা মারে। তীব্রের ধাক্কায় তুর পানি ভর্তি বাথটবে পরে যায়। আর তখনী তীব্র……
,

,

,
,
,
,
,
,
,
,
[ বাকিটা পরের পর্ব গুলোতে জানবেন ]

জানিনা কেমন হলো? 🙄🙄 লেখছি তো আমি কিন্তু বুঝতে পারছি না এই তীব্র আসলেই পাবনা ফেরত কিনা😁😁😁 দেখা যাক….

আপনাদের কি মতামত…. 😎😎😎

Åriyâñà Jâbiñ Mêhèr

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here