বন্ধ দরজায় তুমি🖤পর্ব-৫০

0
1463

#বন্ধ_দরজায়_তুমি🖤
#Written_By_Åriyâñà_Jâbiñ_Mêhèr [ Mêhèr ]
#Part: 50…..

🖤……

বাবা-মা, সবাইকে বিদায় জানিয়ে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে পা রাখল তুর। মন না টানলেও বাবা পাগল তাইয়্যারনর জন্য এসেছে। বাবা যেন ওর রক্তে মিশে আছে। এয়ারপোর্টে দাঁড়িয়ে এসব ভাবনায় ব্যস্ত তুরকে ঘুমন্ত তাইয়্যানকে কোলে নিয়ে ওর কাঁধে হালকা চাপড় মেরে রেগে বলে, ” ভাবনা-চিন্তা শেষ হলে বাড়ি চলো। ”

এয়ারপোর্টের বাইরে আসতেই দেখে গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। তীব্র তুরকে গাড়িতে উঠতে ইশারা করে। গাড়িতে উঠলে তাইয়্যানকে ওর কোলে শুইয়ে বলে ,” আমি আসছি… ”

” কিন্তু… ”

না শুনেই তীব্র দরজা লাগায়। গাড়ি চলতে শুরু করে। তুর দেখে ও কালো একটা গাড়িতে উঠছে। রাগে কান্না চলে এসেছে। চেনে না, জানে না এমন একটা দেশে ,তীব্র ওকে কীভাবে একা ছেড়ে দিল। কিছুক্ষনবাদে ঘুম ভেঙে যায় তাইয়্যানের। চোখ ডলতে ডলতে উঠে বসে।

“ তাপাসি পাপাই কই? ”

তুর রেগে উত্তর দেয়, “ জানিনা। সব সময় খালি পাপাই। অথচ আমাকে মাম্মাম বলে ডাকতেও কষ্ট হয়? ”

হেসে উঠে তাইয়্যান। “ পাপাই ঠিক বলে তুমি আমার পাপাইয়ের সাথে হিংসে করো। “

“ বেশ করি। ছেলে না যেন বাবা ভক্ত হনুমান। সারাদিন মায়ের সাথে আর নাম জপপে বাবার। যেন মা নেই? “

তাইয়্যান রেগে বলে, “ আমার পাপাইকে নিয়ে হিংসে করছ? লাগবে না তোমাকে। ”

পাশ ফিরে মুখ ফুলায় তাইয়্যান।তুুর নিজেও মুখ ঘুরিয়ে বসে থাকে। দুজনেই চুপ। কিছুক্ষনবাদে বাদে আড়চোখে দেখছে তুরকে। তুর রাগী ফেস করে তাইয়্যানের অন্তরালে হাসছে। তখনি তাইয়্যান নিজে এসে জড়িয়ে ধরে।

তুর বলে উঠে, “ কী হল? আমাকে তো চাই না?”

তাইয়্যান তুরের পেটে মুখ গুঁজে অ্যাটিটিউড নিয়ে উত্তর দেয়, “ তুমি এখানে নতুন। যদি কেউ নিয়ে যায় ? তাই ধরেছি। পাপাই ইজ দ্যা বেস্ট। “

তুরের মুখ হাঁ। তাইয়্যান ওর নিজের ছেলে? সন্দিহান তুর? তুর ফিসফিস করে বলল,“ যেমন বাবা তেমন ছেলে। একজন আটকে রাখে যাতে যেতে না পারি। আরেকজন জড়িয়ে ধরে থাকে যাতে কেউ নিয়ে যেতে না পারে।”

সিটে মাথা রেখে তাইয়্যানের মাথায় হাত বুলায়। গাড়ি বিশাল এক বাড়ির সামনে থামে। কয়েকজন গার্ডস এসে দরজা খুললে ঘাবড়ে যায় তুর। একজন গার্ডস ইংলিশে বলে,

“ ম্যাম, আপনারা গিয়ে বিশ্রাম নিন। “

“ তীব্র… আপনাদের স্যার কোথায়? “

“ ওনি একটা কাজে গিয়েছে। “

মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায় তুর। তাইয়্যান ঘুমচ্ছে । কোলে নেওয়া তুরের পক্ষে সম্ভব না হলেও চেষ্টা করল। তখনি তাইয়্যান চোখ মেলে বলে, “ এই জন্য বলেছিলাম বেশি করে খাও। পাপাই তো খেতে দেয়। তবুও শক্তি নেই। তাপাসি ,তাপাসি থাকবে। তাল পাতার সিপাহি.. হা.হা.. তুমি আসলেই তাপাসি। পাপাইয়ের মত হতে পারবে না। “

বলেই খিটখিট করে হেসে দেয়। রেগে যায় তুর। ওর হাত ধরে বাড়ির ভেতর। এতদিন পর তাইয়্যান নিজের বাড়ি ফিরেছে। যদিও অন্য বাড়িতেই বেশি থেকেছে। তাই তুরকে ছাড়িয়ে চলে যায়। অনেক কষ্টে ওর নাগাল পেয়ে তীব্রের রুমে নিয়ে যায়। সেখানে ফ্রেশ হয়ে সার্ভেন্টদের দিয়ে যাওয়া খাবার খাওয়ায়। তাইয়্যানের মন রাখতে নিজেও কিছুটা খায়।

.
.
.

অনেক রাতে তীব্র রুমে ফিরে কিছুটা ভ্রু কুঁচকে বিছানার এপাশ-ওপাশ দেখে নেয়। তুর আর তাইয়্যান দু‘পাশে ভারী মুখে গালে হাত দিয়ে বসে আছে। এই দৃশ্য নতুন না। তাই বিনাবাক্যে ফ্রেশ হতে যায় ।

কিন্তু ফিরে এসেও একই অবস্থা দেখে। ব্যাপারটা ঠিক না লাগলেও চুপ রইল তীব্র। ও আয়নার সামনে দাঁড়াতেই ওদের ইশারায় ঝগড়া করতে দেখে। তীব্র কারনে শব্দ করছে না।তা দেখে রুম থেকে বড়িয়ে যায় তীব্র । পর মূর্হুতে শুরু হয় ঝগড়া।

“ হয়েছে তোর? আমার পাপাই ভালো। কথা তো দূরে থাক দেখল না। কত ভালোবাসা? “

তাইয়্যান রেগে বলে,“ তোমার তো বর হয় । তোমার সাথে কথা বলেছে? “

সচকিত হয় তুর, “ আমি আর তুই এক হলাম?”

ভেংচি কাঁটে তাইয়্যান। “ আমার পাপা । কথা বললে বলবে ,নাহলে বলবে না। তুমি বলার কে?”

“ কারন তোর পাপা, আমার বর । তোর চেয়ে অধিকার আমার কম না? “

ওদের কথা দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে শুনছে তীব্র। তাইয়্যান তাও ঠিক আছে কিন্তু তুর? নিজের ছেলের সাথে অধিকার নিয়ে তুলনা করছে! এরা নাকি মা-ছেলে। তীব্র নিজেও কনফিউজড।

তীব্র আবার রুমে এসে গম্ভীর ভাবে বলল, “ আজ কী ঘুমোতে পারি? নাহলে কিন্তু… “

কথাটা শুনেই দুজনে দু‘পান্তে গিয়ে তীব্রকে মাঝখানে জায়গা করে দিল। অবাক হলেও চুপ রইল তীব্র। শুয়ে পড়ে। শরীরে হাফ হাতা টি-শার্ট।বেশ কিছুক্ষন পর বুঝল দু‘জন দু‘দিক থেকে ওর দু‘পাশে। তীব্র কিছু বুঝে উূঠার আগেই ধপাস করে দু‘ ডানায় শুয়ে পরে দুজনে। যেন কম্পিটিশন করছিল কে কার আগে তীব্রের ডানায় শুতে পারে। তীব্র ব্যাথা পেলেও রিয়েক্ট করল না।

কিন্তু তাতে যে লাভ হলো না। কারন ও সাপ আর বেজি নিয়ে শুয়েছে। যারা মৌনতার সাথে যুদ্ধে নেমেছে। চিমটি যুদ্ধে। কে কার চেয়ে বেশি চিমটি দিতে পারে?+-হার মানাও দুজনের জন্য অসম্ভব।দুজনেই যে মহারথী।চলছে পলাশীর যুদ্ধ। কিন্তু তীব্রের মন্দ ভাগ্য এই মহারথীরা নিজেদের জখম করার বদলে জঘম করছে যুদ্ধের ময়দানকে।মানে ওরা চিমটি একে-অপরকে না তীব্রকে দিচ্ছে। কে কার চেয়ে বেশি জোরে চিমটি কাটতে পারে শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে। প্রথম সহ্য করলেও আর পারল না। দু’জনকে দূরে সরিয়ে রাগী চোখে তাকায়।

” পেয়েছ কী আমাকে? শান্তিতে একটু ঘুমোতেও দেবেনা। ”

দুজনেই চুপ। একে-অপরকে দেখছে। তা দেখে আরো রেগে গেল তীব্র। ” কী হল? ”

” আমি কিছু করিনি? তাপাসি করেছে.. ”

” একদম মিথ্যে বলবি না? আমি কখন… ”

” দুজনেই চুপ। একটা কথা না। তোমাদের কিছু বলার চেয়ে বেটার আমি চলে যাই। ”

রুম থেকে বেড়িয়ে গেলেও লাভ হলো না। তীব্রকে থামানোর জায়গায় ঝগড়া শুরু করেছে। রাগে ও বাইরে ড্রয়িং রুমে সোফায় শুয়ে পরে। সারাদিনের ক্লান্তিতে কখন ঘুমিয়ে যায় নিজেও জানে না।

ঘুমের ঘরে পাশ ফিরতে পারে না। পাশ ফিরতে চাইলে সামনে কিছু পরে যেতে নেয়। ঘুমের মধ্যে তা আঁকড়ে ধরে দ্রুত উঠে বসে। যা দেখে তাতে অবাক।

তাইয়্যান সোফায় ওর গায়ের উপর হাত-পা তুলে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে। তীব্র বসা অবস্থায় ছেলেকে কোলে তুলে একটা চুমো দেয়। যেই নিচে নামতে যাবে দেখে তুর তাইয়্যানের পায়ে হাত দিয়ে মেঝেতে বসে তীব্রের পায়ের কাছে মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে গেছে। মা-ছেলের এই কান্ডে না চাইতেই ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠে। খুব সাবধানে নেমে তাইয়্যানকে রুমে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেয়। তারপর তুরকে। দুজনকে দুপাশে শুইয়ে মাঝে কোলবালিশ রেখে কম্বল টেনে দেয়। তাইয়্যানের কপালে চুমো দিয়ে নিজের কথা ভাবে। তাইয়্যান যেন অবিকল ওর প্রতিরুপ। তাইয়্যানের মাঝে নিজের ছেলেবেলা আবিষ্কার করে তীব্র। রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।

তীব্রের বেড়িয়ে যাওয়ার কিছুক্ষন পর তুরের ঘুম ভাঙে। নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করে। কে এনেছে তাও বুঝতে পারে। কিন্তু তীব্র? ও কোথায়?

তুর বিছানা থেকে নেমে বাইরে গেল। চারদিক অন্ধকার দেখলেও হঠাৎ নিচের দিকে কোনার রুমে হলুদ পর্দা আবিষ্কার করে।মানে সে ঘরে লাইট জ্বলছে। তুর ওই রুমের দিকে এগিয়ে যায়। দরজার কাছে গেলেই খুব ক্ষীণ আওয়াজ পায়। ব্যাপারটা বোঝার জন্য দরজায় কান লাগায়। তখনি সরে আসে দরজা থেকে। বুঝতে পারে ভিতরে কিছু হচ্ছে। ও দরজা খুলে ভিতরে ডুকতেই সিউরে উঠে তুর। পুরো রুমের অবস্থা বিধ্বস্ত। চোখে পরে স্টিক হাতে তীব্রকে। দরজা খোলার আওয়াজে পিছনে তাকায় তীব্র। বিভৎস হয়ে আছে তীব্রের চেহারা। অনেকদিন না ঘুমালে মানুষকে যেমন ক্লান্ত লাগে ঠিক তেমন লাগছে। রক্ত উঠে আছে চোখে। যেন কোন উন্মাদ মানুষ।

তুর ভয়ার্ত মুখে তাকিয়ে আছে।

” তীব্র…আপনি.. ”

তীব্র শান্ত কণ্ঠে বলে, ” এখান থেকে যাও… ”

” কিন্তু… ”

” যাও বলছি… ” হুঙ্কার করে।

তুর কেঁপে উঠে। কিন্তু বাইরে যাবার বদলে তীব্রের কাছে যায়।

” তীব্র… ”

এটা দেখে তীব্র হাতের স্টিক দিয়ে ড্রেসিং টেবিলে বারি মারে। তাতে কাচ এসে তীব্রের বুকে লাগে। সাদা টি-শার্ট ছিড়ে রক্ত পরতে থাকে। তুর দ্রুত তীব্রকে থামাতে যায়। কিন্তু তার আগেই তীব্র আরেকটা বাড়ি মারে যাতে কাচ চারদিকে ছড়িয়ে যায়। তুর গিয়ে তীব্রের হাত ধরে। তীব্র বার বার ওকে চলে যেতে বলে কিন্তু শোনা তুর। বাধ্য হয়েই তুরকে ধাক্কা মারে। ছিটকে পরে যায় দেয়ালে বাড়ি খায়। তবুও তীব্র থামছে। না তুর ওর আবার ওর কাছে গিয়ে স্টিক ফেলে দিতেই তীব্র রেগে দেয়ালের সাথে চেপে উচু করে নেয়। তুর কিছু বলতে যাবে তার আগেই ওর ঠোঁটে ঠোঁট রাখে। তীব্রের আচরণের হিংস্রতায় বুঝতে পারছে ও নিজের মধ্যে নিয়ে। কী করছে বুঝতে পারছে না। ওদিকে তুরের কপাল থেকে রক্ত গড়িয়ে পরছে। বেশ কিছুক্ষন পর যখন তীব্র ওর গালে হাত দেয় ঘন গরম তরল হাতে লাগে। দ্রুত ছেড়ে দেয় তুরকে। দেখে তুরের কপাল কেঁটে রক্ত বের হচ্ছে। তীব্র উন্মাদের মত ড্র‍য়ার থেকে ফাস্ট্রেড বক্স নিয়ে আসে। তুরের কপালের রক্ত মুছে মেডিসিন দিয়ে প্লাস্টার করে দেয়। কাজ শেষ হওয়া মাত্রই সজোরে তুরের গালে চড় বসিয়ে দেয়।

” বলেছিলাম না চলে যেতে? সবসময় জেদের কী আছে। কতখানি কেঁটে গেছে! আমার জন্য দরদ দেখাতে হবে না… ”

” তীব্র… ”

‘ তীব্র’ বলা মাত্রই দেয়ালের মিশিয়ে গাল চেপে ধরে, ” তীব্র ডাকের প্রয়োজন এখন নেই। এই নামে ডেকে আমাকে কেউ কিছু নিষেধ করলে পাগল হয়ে যাই আমি তা করার জন্য। আর তুমি সেই কাজটাই কর। যার মাসুল ও তুমি দেও। তাই বলছি এই নামটা মুছে ফেল মন থেকে। কারন তীব্র শুধু তার বন্দিনীর জন্য ছিল। সবার জন্য না। ”

আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই তুরকে বাইরে ছুড়ে দরজা লক করে দেয়। তারপর নিজের মত ভাংচুর শুরু করে।
,
,
,
,

,
,
,
🖤
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে ও বিছানায় শুয়ে আছে। হ্যাঁ… নিজেই এসেছে। ক্লান্ত হয়ে রুমে ফিরে শুয়ে পড়েছিল। সকালে ঘুম ভেঙে তাইয়্যান ওকে দেখতে না পেলে খোঁজ করবে। কিন্তু রাতে তুরকে দেখতে পায় না। এতটা ক্লান্ত ছিল যে খোঁজার মন অবস্থা ছিল না। দেখে কাল রাতের টি-শার্ট গায়ে নেই। মানে তুর খুলে দিয়েছে। আর কিছু না ভেবে ও বিছানা ছেড়ে ফ্রেশ হয়ে কফি নিয়ে বেলকনিতে আসে। দেখে তুর আর তাইয়্যান সুইমিং পুলের পাশে কিছু করছে। হঠাৎ তুরের চোখে চোখ পরে। চোখ সরিয়ে নেয় তুর। তীব্র কফি চুমুক দিতে দিতে গভীর ভাবে পর্যবেক্ষন করে তুরকে। সে চোখে রাগ স্পষ্ট। বুঝতে পারে কাল একটু বেশি করে ফেলেছে।

তখনি একজন স্টাফ মোবাইল দিয়ে যায়। তীব্র কলটা ধরে। কলটা কেঁটে স্বস্তির শ্বাস পেলে তীব্র।

“ আর কোন ভয় নেই আমার তুর। যার জন্য তোমাকে #বন্ধ_দরজায়_তুমি🖤 হতে হয়েছে সেই কারন আমি শেষ করে দিয়েছি…”

নিজের চোখ বন্ধ করে নেয় তীব্র…
.
.
.
.
.
.

🖤
তুরের জীবনের গল্পটা প্রায় ৭ বছর আগে শুরু হলেও সৌহার্দ্য থেকে তীব্র হওয়ার কাহিনিটা শুরু হয়েছিল ২৫ বছর আগে। সৌহার্দ্য নামের ১০ বছরের ছোট্ট ছেলেটা যখন তার বাবা মায়ের সাথে অস্ট্রেলিয়াতে থাকত।

তীব্রের বাবা মায়ের লাভ ম্যারেঞ্জ। বাবার পরিবার সম্পর্কে তেমন কিছু জানে না তীব্র। জানার ইচ্ছেও হয়নি কখনো। আর মা ছিল অনাথ। হয়ত এইজন্য বাবার পরিবারের কেউ মেনে নেয়নি তাদের। তাই তীব্রের বাবা অস্ট্রেলিয়াতেই ওর মায়ের সাথে স্যাটেল হয়ে যায়। সেখানেই ছোট করে শুরু করে নিজের ব্যবসায়। দক্ষতা, পরিশ্রম আর আন্তরিকতা মাধ্যমে সফলতাও পায় প্রচুর। ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে ব্যবসার পরিধি। জীবনের চুড়ান্ত প্রাপ্তি হয়ে আসে তাদের একমাত্র সন্তান তীব্র।

ছোটবেলা থেকে সিগ্ধ সৌন্দর্য, বন্ধুত্বপূর্ণ মিশুক স্বভাবের জন্য বাবা সাহিদ আর মা সানিয়ার নামের সাথে মিলিয়ে ছেলের নাম রাখেন সৌহার্দ্য।

দেখতে দেখতে অতিবাহিত হয় ১০টি বছর।ভালোবাসা, আদর কোন কিছুর কমতি ছিল না সৌহার্দ্যের। বাবা ব্যবসার কাজে ব্যস্ত থাকলেও পরিবারের প্রতি তার দায়িত্ববোধ ছিল ঈর্ষনীয়। যথেষ্ট সময় দিত সৌহার্দ্য আর স্ত্রী সানিয়াকে। ওরা দু’জনই ছিল ওনার দুনিয়া। বাবা ছাড়া বাকিটা সময় তীব্র মায়ের সাথেই কাঁটাত।

কিন্তু দিনকে দিন ছেলের মিশুক স্বভাবের আড়ালে সানিয়া আবিষ্কার করেন ভয়ংকর বুদ্ধিমান এক দর্শী ছেলে। সন্তানদের সবচেয়ে ভালো চিন্তে পারে একজন মা। কিন্তু ছেলের বুদ্ধি, চৌকসের সামনে বারবার বোকা বনে যেতেন তিনি। ছেলেকে ঘরে এক রকম আর বাইরে আরেক রকম আবিষ্কার করতেন। কোথাও শান্ত, তো কোথাও দুষ্ট। ওতটুকু বয়স থেকেই ছেলের সাথে পেরে উঠতেন না। ছেলে এমন এমন কথা, কাজে তাকে ভুলিয়ে দিত যে সে বাধ্য হয়ে সাহিদের কাছে অবাক হয়ে বলতেন ওসব কথা । ছেলের চেয়ে বেশি অবাক হতেন স্বামীর কথায়। সাহিদ ছেলেকে কিছু বলার জায়গায় উল্টে ছেলেকে এসব করতে উৎসাহ দিতেন। তাই বারংবার হতাশ হতেন সানিয়া। ছেলের স্বভাব আর বুদ্ধির এমন তীব্রতা দেখে সৌহার্দ্য নামটা তার কাছে বেমানান মনে হতে শুরু করে। কোন ব্যাপারে ছেলের সাথে পেরে উঠতে না পারলে রেগে গিয়ে সানিয়া সৌহার্দ্যকে তীব্র নামে ডাকত। তীব্র নামে ডাকলেই সৌহার্দ্য বুঝত মা রেগে গেছে। ও আরো বেশি উৎসাহিত হয়ে মা’কে রাগাত। ছেলের জ্বালায় অতিষ্ট সানিয়া। বুঝলেন এই ছেলের সাথে পারা সম্ভব নয়।

বাবার আদর, মায়ের খুনশুঁটি ভরা শাসন আর নিজের দর্শীতায় কেঁটে যাচ্ছিল ওর সময়। কিন্তু কথায় আছে মানুষের জীবন নদীর স্রোতের মতই প্রবাহমান। কখনো তা একদিকে স্থীর নয়। নদীর গতি পথের মতই ওদের সুখের জীবনের আসে বাঁক। যেই বাঁকে প্রবল স্রোতের গ্রাসে ভেসে যায় সবকিছু।

একদিন সন্ধ্যার দিকে খেলা শেষে বাড়ি ফিরলে ড্রয়িংরুমে একজন মহিলাকে দেখতে পায় তীব্র। মহিলাটিকে চেনে ও। এর আগেও কয়েকবার এসেছে। তিনি একজন অট্রেলিয়ান। নাম ন্যান্সি। সানিয়ার বান্ধবী। । অদ্ভুত হলেও সত্যি মায়ের বান্ধবী হওয়া সত্ত্বেও তীব্রের সাথে কখনো আলাপ হয়নি তার। কখনো ডাকেনি তীব্রকে নিজের কাছে । সাহিদ বাড়ি না থাকলে তিনি এসে সানিয়ার সাথে দেখা করে চলে যেত।

কিন্তু এবার তীব্রকে দেখে ন্যান্সি কাছে ডাকে। ও ন্যান্সির কাছে গেলে ওনি তীব্রেকে জড়িয়ে ওর ভরা গালে চুমো দেয়। হঠাৎ মহিলার এমন পরিবর্তনশীল ব্যবহারে কিছুটা নির্বোধ হয় তীব্র। মায়ের মুখটা অদ্ভুত ভয়ার্ত হয়ে আছে। মাকে এর আগে এভাবে দেখেনি তীব্র। ন্যান্সিকে ছাড়িয়ে সানিয়ার কাছে যেতে চাইলে ন্যান্সি বাঁকা হেসে ইংরেজিতে বলে,

” সেদিন যদি আমি না চাইতাম তাহলে আজ এই কিউট ছেলেটা আমাকে মা বলে ডাকত। তাই না সানিয়া? ”

ন্যান্সির এমন কথায় সানিয়া তীব্রকে দ্রুত নিজের কাছে নিয়ে আসে। ছোট তীব্র পুরো কথার মানে উদ্ধার করতে না পারলেও মাকে দেখে বুঝেছে সে ভয় পেয়েছে। তীব্র কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই সানিয়া ওকে সামনের রুমে রেখে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দেয়। তীব্র দরজা বারি দিলেও দরজা খুলল না সানিয়া। তীব্র দরজা থেকে জানালার সামনে গিয়ে দেখার চেষ্টা করল কী হচ্ছে? দেখতে পেলেও কিছু শুনতে পেল না। জানালাও লক করা ছিল। কিন্তু দেখে বুঝতে পারছে কিছু নিয়ে তার মায়ের সাথে ন্যান্সির কথা কাঁটাকাঁটি হচ্ছে। এক পর্যায়ে সানিয়া বিরক্ত হয়ে হাত দেখিয়ে ন্যান্সিকে বাইরে যেতে ইশারা করে নিজের মাথা চেপে ধরে। ঠিক তখনি ন্যান্সি ব্যাগ থেকে একটা চাকু বের করে পিছন থেকে ওকে মারতে যায়।

তা দেখে তীব্র জানালার ওপাশ থেকে ” মা…মা ” বলে চিৎকার করতে থাকে। যা সানিয়া শুনতে পায় না। কিন্তু ন্যান্সির তাকে মারতে আসছে এটা বুঝতে পেরে সরে যায় সানিয়া। তখনি এমন কিছু ঘটে যাতে প্রস্তুত ছিল না কেউ।

একটা গুলি এসে ন্যান্সির পিঠে লাগে। ততক্ষনাৎ মাটিতে পরে যায় । ওর রক্ত এসে পড়ে সানিয়ার শরীরে। কী করবে বুঝতে পারে না সানিয়া? ও পিছনে তাকিয়ে দেখে তীব্র জানালার সামনে দাঁড়িয়ে জানালা বারি দিচ্ছে। ও কিছু ভাবতে না পেরে দ্রুত তীব্রের কাছে জানালার সামনে যায়। বাইরের পর্দা টেনে আড়াল করে নেয় তীব্রকে। তীব্র কিছু বলতে পারে না। শুধু মায়ের ভর্য়াত মুখটা দেখা ছাড়া। সঙ্গে সঙ্গে পুরো বাড়ির ইলেক্ট্রিসিটি বন্ধ হয়ে অন্ধকারাছন্ন হয়ে যায় চারদিক। তীব্র চিৎকার করলেও বাড়িতে হওয়া বিকট আওয়াজের কাছে ওর আর্তনাদ মিলিয়ে এক সময় সব শান্ত হয়ে যায় চারদিক। কিছুসময় পর দরজা খোলার আওয়াজ পায়। কিন্তু কিছু বলে উঠার আগেই ক্লান্ত হয়ে সোফার পিছনে চিপায় পরে যায় তীব্র।

পরের দিন সকালে তীব্র ঘুম ভাঙ্গতেই অনেক লোকজনের আওয়াজ শুনতে পায়। বাইরে বেড়িয়ে দেখে পুরো ড্রয়িং রুমের অবস্থা বিভৎস। সবকিছু ছারখার করে ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তীব্র বাড়ির বাইরে যেতেই পুলিশসহ স্থানীয় লোকদের দেখতে পায়। তখনি সামনে সাদা কাপরে মোড়া একজন মানুষকে শুয়ে থাকতে দেখে। যার সাদা কাপরের থেকে বেড়িয়ে যাওয়া হাতের বেসলেট একদম ওর মায়ের মত। ও সেদিকে যেতেই কেউ এসে ওকে আটকায়। উপরে তাকিয়ে দেখে ওর বাবা সাহিদ।

তীব্র বাবাকে দেখে নিচের দিকে তাকাতেই মানুষটির মুখ থেকে কাপর সরে যায়। এক নজর সেই মুখটা চোখের তারায় ফুটে উঠে তীব্রের। “ মা “ শব্দটি উচ্চারণ করার আগেই সাহিদ তীব্রের মুখটা নিজের পেটে চেপে ধরে। তীব্র ছুটাছুটি করলেও আর দেখতে পারে না। ওর মাকে নিয়ে যায়। কিছুই বুঝতে পারে না তীব্র। ওরা চলে যাবার পর সবার মুখে শুধু এতটুকুই শুনতে পায়। ওর মা মারা গেছে। তীব্র #বন্ধ_দরজায় ছিল বলে ও বেঁচে গেছে। কথাটার মানেটা তখনো বুঝতে অক্ষম ছিল তীব্র।

তীব্র সারাদিন অপেক্ষা করে কিন্তু মাকে নিয়ে কেউ ফেরে না। আর না বাবা। তীব্রকে ওখানে কোন এক পরিচিত মানুষের কাছে রাখা হয়। যে কোন পুলিশের উচ্চ পর্দস্ত কর্মকর্তা।

প্রায় ৫দিন পর ওর বাবা ওকে নিজের সাথে নিয়ে আসে । বাবার সাথে বাড়ি ফিরলে ও মায়ের কথা জিজ্ঞেস করে। কিন্তু কোন উত্তর পায় না। হাজারটা প্রশ্নের পর শুধু এইটুকুই উত্তর পায়, “ ওর মা আর ফিরবে না।” আর কথা হয় না বাবার সাথে।

সেখান থেকেই বদলে যায় তীব্রের জীবনটা । বাবার মাঝে আবিষ্কার করে অন্য কাউকে। বাবা বাড়িতে ফিরলে তীব্র মায়ের কথা জিজ্ঞেস করত? কিন্তু তিনি উত্তর দিতেন না। একদিন রাতে তীব্রের ঘুম ভেঙে গেলে দেখে তার বাবা ড্রিংক করে মায়ের ছবি ছুড়ি দিয়ে কাঁটছে। কিছুই বুঝতে পারল না তীব্র।

পরের দিন সকালে ঘুম ভাঙ্গলে বাবাকেও দেখতে পায় না। রাতে সাহিদ বাড়ি ফিরলে তীব্র ভয় নিয়েই দরজার কাছে এসে দাঁড়ায়। ছেলেকে ওভাবে দেখে সাহিদ ছেলের কাছে গিয়ে কোলে নেয়। জিজ্ঞেস করে কী হয়েছে? তীব্রের উত্তরটা সেদিন নাড়িয়ে দিয়েছিল সাহিদকে।

” আচ্ছা বাবা… আমি #বন্ধ_দরজায় ছিলাম বলেই আমাকে ওরা নিয়ে যায়নি। মা যদি আমার সাথে থাকত তাহলে মাকেও ওরা নিয়ে যেতে পারত না। আর তুমিও রাগ করতে না।”

কথাটা শুনে নিজেকে ধরে রাখতে পারেনি সাহিদ। তীব্রকে জড়িয়ে কেঁদেছিল খুব। তীব্র প্রথম তার বাবাকে কাঁদতে দেখেছে। কিন্তু কেন বোঝেনি?

তার কয়েকদিন পর সাহিদ ম্যানেজারের সাথে ( তীব্রের বর্তমান ম্যানেজার) ওকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে তার পরিচিত এক লোকের কাছে রাখে তীব্রকে। সে আর কেউ নয় তায়ানের বাবা। নিজের সব কিছু হারিয়ে এদেশে এসে পায় তায়ানকে। আত্নার সম্পর্ক গড়ে উঠে ওর সাথে।

কিন্তু তারপর থেকে বাবার সাথে আর কোন যোগাযোগ হয়ে উঠে না তীব্রের। শুরু হয় নতুন পথচলা।

স্কুলে এসে তায়ানের সাথে পায় অরুন। মাধ্যমিকে উঠার পর ৩ জনের বন্ধুত্বে যোগ হয় তুষা। তুষা মেয়ে হলেও ছেলে ছাড়া মেয়েদের ক্যাটাগড়িতে ফেলা যায় না। তীব্র তুষার ফেভারিট হলেও প্রেমে পড়ে যায় অরুনের। সে এক মহা কান্ড। তুষা প্রেমে পড়লেও অরুন কোন ছেলে রুপি মেয়েকে ভালোবাসতে নারাজ। তাও আবার বেস্টফ্রেন্ড। কিন্তু শেষে ওই ছেলের রুপি মেয়ের জন্যই পাগল হয়ে যায়।

তারপর কলেজ লাইফ… সেখানে তীব্রের লাইফে আসে ৭ বছরের জুনিয়র রিদ্ধ। যার কাজই ছিল তীব্রের দেখা পেলেই মাথা খাওয়া। রাগ লাগত কিন্তু কিছু বলতে পারত না তীব্র।

ওদের বন্ধুত্বে ছিল না কোন খাদ। সাহিদ অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত বিজনেসম্যান হলেও তীব্র সাধারনভাবেই বেড়ে উঠে এখানে।

বাবার সম্পর্কে নিজেও জানত না। এতগুলো বছরে কোন যোগাযোগ হয়নি ওদের। শুধু বাবা হওয়ার দায়িত্ব পালন করেছেন। তাই সাহিদের প্রতি চরম রাগ, ক্ষোভ জন্মে তীব্রের মনে।

তবুও বন্ধুদের সাথেই খুশি ছিল ও। নিজের জীবনে খুশি ছিল। কিন্তু সেটাও থাকল না।

কলেজ শেষে তুষা, অরুনের সাথে মেডিকেলে ভর্তি হয়। তায়ান ইউনিভার্সিটিতে। ঠিকি ছিল সবকিছু।

কিন্তু হঠাৎ একদিন ওর কাছে আগমন ঘটে ম্যানেজারের। একা আসেননি তিনি। সাথে নিয়ে এসেছিলেন বাবার মৃত দেহ। হ্যাঁ… নিজের রাগ, ক্ষোভ অভিমান প্রকাশের আগেই কোন এক অক্সিডেন্ট মা সানিয়ার মত কেঁড়ে নিল তাকে। উনার শেষ ইচ্ছে অনুযায়ী তাকে নিয়ে আসা হয় স্ত্রী সানিয়ার কবরের পাশে মাটি দেওয়ার জন্য। কিন্তু দূর্ভাগ্য ছিল তীব্রের ছেলে হিসেবে নয়। বাবার কবরে মাটি দিয়েছিল ম্যানেজারের পরিচিত মানুষ হিসেবে।

বাবার অন্তিমকার্য শেষ করে আসলে ম্যানেজারের কাছ থেকে তীব্র সবটা জানতে পারে। মায়ের মৃত্যু, বাবার অবহেলা, তীব্রের এখানে আসার কারন।

সানিয়াকে সাহিদ ভালোবাসলেও প্রেমিকা ছিল ন্যান্সি। একই ভার্রসিটিতে পরত দুজন। অরিয়েন্টেশনে সাহিদের কাছে ন্যান্সির সেল নাম্বার আসে। সেখান থেকেই ন্যান্সির সাথে ভার্চুয়াল প্রেম গড়ে উঠে সাহিদের।

ন্যান্সি সাহিদকে দেখলেও সাহিদ দেখেই বিয়ে করতে চায় ন্যান্সিকে। কিন্তু ন্যান্সির বিয়ে করার মত মানসিকতা ছিল না।

তবে ও বুঝতে পেরেছিল বেস্টফ্রেন্ড সানিয়া সাহিদের প্রতি দূর্বল। ভালোবাসে সাহিদকে। এটা নিয়ে ন্যান্সি জঘন্য গেইম খেলে সানিয়ার সাথে। নিজেকে সাহিদের প্রেমিকা জানিয়ে বিয়ে করতে বলে । পরিবর্তে শর্ত স্বরুপ সানিয়াকে ওর কথা মত চলতে হবে। সরল সানিয়া ভালোবাসার মানুষকে পাবার আশায় কী হবে চিন্তা না করেই রাজি হয়ে যায়। সাহিদও পেয়ে যায় নিজের মনের মত ভালোবাসার মানুষকে পায়। পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়ে করে সানিয়াকে।

ন্যান্সি সাহিদের চেয়ে ধনী কাউকে বিয়ে করতে চাইত। আর বাড়ি থেকে বিতাড়িত সাহিদ সানিয়াকে নিয়ে প্রচুর কষ্ট করে। শেষ পর্যন্ত গুছিয়ে নেয় নিজেকে। সেটাই কাল হয়ে দাঁড়ায় সানিয়ার জন্য। ন্যান্সি ব্লাকমেইল শুরু করে এটা নিয়ে। সানিয়া সাহিদকে হারানোর ভয়ে মেনে নেয় সবকিছু। পূরন করে ন্যান্সির সব রকম আবদার। সেদিন ন্যান্সি টাকার জন্যই এসেছিল। কিন্তু সানিয়া দিতে রাজি হয়নি বিধায় কথা কাঁটাকাটিঁ হয় । আর ন্যান্সি মারতে যায় ওকে।

কিন্তু গুলি লাগে ওর। পিঠে গুলি লাগার কারনে বেঁচে যায়। সব সত্যিটা জানতে পারে সাহিদ। প্রচন্ড ঘৃনা হতে তার ভালোবাসার মানুষের উপর। যার জন্য পরিবার ছাড়ল, কষ্টকে বরণ করল, ভালোবেসে ১০ বছর সংসার করল সেই মেয়েটার মৃত্যুর পর জানতে পারল তাদের সম্পর্কের ভীতটাই মিথ্যে ছিল। সানিয়া ওর প্রেমিকা ছিল না তার চেয়েও বেশি যন্ত্রনাদায়ক ছিল কেন ও সত্যিটা বলল না। ১০ বছরে এতটুকু বিশ্বাস করতে পারেনি যত বড় অন্যায় ও করুক মাফ করার ক্ষমতা সাহিদ রাখে।

ব্যাপারটা নাড়িয়ে দিয়েছিল তীব্রকে। ন্যান্সির মত মানুষের লোভ। আর মায়ের দূর্বলতা জন্য বাবাকে ধোকাটা মানতে পারেনি তীব্র। সেখান থেকেই মেয়েদের প্রতি চরম বিদ্বেষ কাজ করত ওর মনে।

তবে তীব্রকে এখানে আনা আর ওর মায়ের মৃত্যুর কারন ছিল সাহিদের ব্যবসায়ের শত্রুতা। সেদিন যদি সানিয়া সেচ্ছায় বাইরে না থাকত তাহলে তীব্রকেও ওর সাথে মরতে হত। সানিয়াকে বাঁচাতে না পারার ব্যর্থতায় সাহিদ ভেঙ্গে পরেছিল। তখন ম্যানেজারের কথায় তীব্রকে বাঁচানোর জন্য নিজের থেকে দূরে পাঠিয়ে দিয়েছিল। ওনার মত কারো সন্তান এখানে বড় হবে সেটা সবার ধারণার বাইরে ছিল ।তীব্রের সেফটির জন্য তাই নিজেও কাছে আসেনি। দূর থেকে দেখেছে। যাতে ওকে স্বাভাবিক ভাবে বড় হতে দিতে পারে। নির্ভয়ে…

ছেলে ম্যাচুয়ড হওয়ার আশায় দিন গোনা সাহিদকে তীব্রের হাতে সবকিছু বুঝিয়ে দেওয়ার আগেই আবার সেই শত্রুতার বলি হয়ে চলে যেতে হয়। সাহিদের কোন অক্সিডেন্ট হয়নি। ওকে মারা হয়েছিল।

বদলে যায় তীব্র। নিজের পড়া শেষ করে। ম্যানেজার ওখানের বিজনেস সামলায়। সর্বক্ষন সাথে থাকায় অরুন চেনা সৌহার্দ্যের মাঝে আবিষ্কার করে নিষ্ঠুর কাউকে । অনেক চেষ্টা করেছে জানতে পারেনি তার কারন।

তখন থেকেই তীব্রের সৌহার্দ্য নামটা ঢাকা পরে। এই নামে ডাকালে নিজেকে দূর্বল মনে করত তীব্র।

ডাক্তারি শেষ করে আস্ট্রেলিয়াতে যায়। নিজের সবকিছু বুঝে নেয়। বাংলাদেশে গড়ে তোলে নিজেস্ব হাসপাতাল। সবকিছুই নিজের মত করে তৈরি করে। পরিচিতি গড়ে তোলে ড. রায়হান বা SR. নামে।

সবকিছুই ঠিক ছিল… কিন্তু আবার তীব্রের সাজানো জীবনে আসে নতুন ঝড়। তোয়ার জন্য তায়ানের মৃত্যুদশা। জীবনের থাকা সবচেয়ে প্রিয় মানুষের এই অবস্থা। ভালোবাসার নামে আবার সেই ধোকা। মেনে নিতে পারেনা তীব্র। ওর মা ভালোবাসার জন্য বাবাকে ধোকা দিয়েছিল।তোয়ার ভালোবাসাই ছিল একটা ধোকা। আর এই জন্যই বিয়ের দিন তোয়াকে কিডন্যাপ করে ওই রকম এক জঘন্য শাস্তি দিতে চেয়েছিল। কিন্তু তোয়ার জায়গায় এসে পরে তুর…

সেখান থেকেই শুরু হয় তীব্রের জীবনের নতুন অধ্যায়…

তুর শুধুমাত্র অপ্রত্যাশিত একটা ভুল ছিল তীব্রের জীবনে। এমন একটা ভুল যা শুধরানো সম্ভব ছিলনা। ওকে ফিরিয়ে দিলে তোয়াকে আটকানো যেত না। বাধ্য হয়েই নিজের কাছে রেখে দেয়। তুরের কোন ক্ষতি করার মানসিকতা ওর ছিল না। কিন্তু ওর বোনের জন্য তায়ানের এই অবস্থা তারউপর তুরের গোঁড়ামি, জেদ, অবাধ্যতা না চাইতেও বাধ্য করেছে তুরের উপর নিজের রাগ, হতাশা প্রকাশ করতে। হতাশা দেওয়ার অনেক কারন থাকলেও দূর করার কারন হয়ে গিয়েছিল তুর। কিন্তু পরে ভেবেছিল তায়ান যদি সুস্থ নাহয় তাহলে তোয়া বুঝাবে আপন মানুষ হারালে কেমন লাগে। তুরের জীবন রাখে তায়ানের জীবনের উপর। সে যাত্রায় বেঁচে যায় তায়ান। তীব্রের রাগ হয় যখন এত কিছুর পর তোয়াকে মেনে নেয় তায়ান। তখনি নিজের বাবার কথা থামিয়ে দেয় ওকে। ন্যান্সি ভেবে ভালোবাসলেও সে সানিয়াকেই ভালোবেসেছে। নিজের সুখ চাইলে বিয়ে করতে পারতেন। কিন্তু করেননি। ধোকার পরও ভালোবেসেছে তীব্রের মাকে। তীব্র বুঝল ভালোবাসা অন্ধ। যে যাতে খুশি থাকে… মেনে নিল তীব্র।

তুরকেও ফিরিয়ে দেওয়ার কথা ছিল । কিন্তু নিয়তি তো অন্য কিছুই চাইছিল। তখন এমন কিছু জানতে পারে যাতে তীব্রের সমস্ত কিছু পাল্টে যায়।

আর তা হলো ওর বাবার করা উইল। যার মোতাবেক হলে ৩০ বছর হওয়ার আগে তীব্র বিয়ে না করলে এবং বিয়ের ৩ বছরের মাঝে বেবি না হলে তীব্রের সমস্ত সম্পত্তি ট্রাস্টে চলে যাবে। শুধু তাই নয়, বিয়ের পর তীব্রের সম্পদের 25% তার স্ত্রী, 50% সন্তানদের আর বাকি 25% শেয়ারের মালিক হবে তীব্র। বিয়ের পর যদি কোন কারনে ওর ডির্বোস হয়ে যায় তাহলে স্ত্রী, সন্তানদের শেয়ারে কোন রুপ অধিকার খাটাতে পারবে না তীব্র।

প্রথমে বাবার এমন উইলের কোন কারন খুঁজে পায় না তীব্র। সাহিদ যথেষ্ট বুদ্ধিমান , বিচক্ষন একজন মানুষ ছিল। তাহলে..

কিন্তু আরেকটা উইলে ওর চোখ খুলে দেয় তীব্রের। তাতে ছিল.. কোন রুপ ওয়ারিশ ছাড়া যদি সাহিদ মারা যায় তবে SR. কোম্পানির শেয়ারের মালিকানা কোম্পানির শেয়ার হোল্ডারদের মাঝে চলে যাবে। আর সেটা ওর সন্তানদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। কিন্তু পরবর্তী জেনারেশন মানে সাহিদের নাতি-নাতনির ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য হবে না। মানে তীব্রের সন্তানের ৫ বছর হওয়ার পর যদি ওয়ারিশ মারা যায় তবে তা ট্রাস্টে চলে যাবে। কোন শেয়ার হোল্ডার কোম্পানির মালিকানা পাবে না। আর এটা ৩২বছর আগের উইল। মানে বাবা-

বাবা-মায়ের বিয়ের তিনবছরের পরের দলিল। এই উইলে তীব্রের কাছে সব পরিষ্কার হয়। কেন ওর মা-বাবাকে মরতে হলো? কেন ম্যানেজার ওকে ছেলে হিসেবে বাবার কবরে মাটি দিতে দেননি। সমস্ত কিছুর মূল ছিল এই উইল।

ও ম্যানেজার জিজ্ঞেস করে কেন তার বাবা এমন উইল করেছিলেন? উত্তরে তিনি জানান, সাহিদের বিজনেস দাঁড়িয়ে যাওয়ার পর কিছু চক্রান্তের স্বীকার হয়। অর্থের অভাবে পরে। ইনভেস্টরা টাকা লাগাতে চায় না।তাদের শর্ত হিসেবে এমন উইল করতে বাধ্য হয়। কিন্তু সাহিদ ব্যবসা বাঁচানোর জন্য এমন উইল করলেও পরে সবার অজান্তে উইল চেঞ্জ করে। তাতে তীব্রের জীবনের সুরক্ষা না করলেও যাতে ওর সন্তানদের জীবন সুরক্ষিত হয় তার ব্যবস্থা করে। কারন ৫ বছর পযর্ন্ত‍ সন্তানরা বাবা-মায়ের কাছে সুরক্ষিত থাকে। তাই তিনি মেয়াদসীমা ৫ বছর রাখে। যদি ৫ বছর পর্যন্ত নিজের সন্তানকে সুরক্ষিত রাখতে পারে তীব্র ,তাহলে ওকে আর বাবা মত নিজের সন্তানকে লুকিয়ে রাখতে হবে না।

বাবার এমন বিচক্ষনতা অবাক করেছিল তীব্রকে। তার বাবা কোন অবস্থায় ওকে লুকিয়ে রেখেছিল বুঝতে পেরেছে। আর কেনই বা এমন উইল করেছে।

কিন্তু সেটা তীব্রের জন্য কতটা কঠিন যেতে পারে সাহিদ হয়ত ভাবেনি। সাহিদের সব কিছু পেলেও তার ভালো দিক গুলো রপ্ত করতে পারেনি তীব্র।

যেহেতু ও ছাড়া আর কোন ওয়ারিশ ছিল না সাহিদের। তাই তীব্রের নিজেস্ব হসপিটাল, ব্যবসায় সব কিছু বাবার কোম্পানির সাথে এড করে। এজন্য তীব্রকে বিয়ে করতে হবে।যেখানে কোন মেয়েকে নিজের জীবনে আনতে নারাজ তীব্র। সন্তান তো অনেক দূরের ব্যাপার । কী করবে কিছুই বুঝতে পারছিল না? যাকে বিয়ে করবে সে যদি তোয়া বা ন্যান্সির মত হয়?নিজ স্বার্থ বোঝে তবে? বিয়ের পর যদি মেয়েটা লোভে পরে বা অন্য যেকোন কারনে ওকে ছেড়ে দেয় । হিসেবে সন্তানদের কাস্টারি মা পায়। তাহলে..,

সব কিছুর দিক হারিয়ে যখন ক্লান্ত তীব্র। তখন আশার কিরণ হয়ে দাঁড়ায় তুর। তুরকে ফিরিয়ে দেওয়ার ভাবনা সেখানেই শেষ হয়ে যায় । তুরের প্রতি আকর্ষন, না চাইতেও ওর কাছে যাওয়া , ওকে ছোঁয়া,বার বার না চাইতেও ওর নেশায় জড়িয়ে যাওয়া, আর এত কিছুর পর তীব্রের প্রতি দূর্বল হয়ে পড়ায় নিজের লক্ষ্য পূরণের রাস্তা বানায় তুরকে। তুরের সাথে বিয়ের রেজিষ্ট্রি পেপার আর একটা বেবির দরকার ছিল তীব্রের । তা যেকোন মূল্যে। জন্মদিনে তুরকে শুধুমাত্র ভয় দেখানোর জন্য ফিজিক্যাল রিলেশনের কথা বললেও তায়ান সুস্থ হওয়ার পর যখন ও তুরের কাছে যায় তখন সেটা নিজের প্রয়োজনে বাধ্য হয় করতে।

শুরু হয় তীব্রের মাইন্ড গেম। কয়েকদিনের বন্দীনি থেকে তুরকে #বন্ধ_দরজায়_তুমি 🖤 করার চেষ্টা।

রোবোক্যাট যা তুরের একাকিত্ব দূর করার জন্য রেখেছিল। কিন্তু নিজ স্বার্থে সেটা দিয়েই তুরের মনে ওর ভালো লাগাটা ভালোবাসার রুপ দিতে বাধ্য করে। যেহেতু আগে থেকেই তুর তীব্রের প্রতি দূর্বল হয়ে গিয়েছিল ।তাই খুব সহজে নিজের কার্য হাসিল করতে পারে।

তুরকে নিজের কাছে চিরদিনের জন্য রাখার ইচ্ছে ছিল না। আর না স্বার্থ হাসিলের পর ছুড়ে ফেলার। বেবি হওয়ার পর সত্যিটা জানিয়ে তুরের সিদ্ধান্তের উপর ছাড়তে চেয়েছে। তুর ওর সাথে থাকবে নাকি চলে যাবে? তবে ওর সাথে জোর করে কোন সম্পর্কে জড়াতে চায়নি তীব্র। যা হবে সেটা দুজনের সম্মতিতে করতে চেয়েছিল। তবে সেটা এমনি এমনি কোনদিন সম্ভব না। তাই তুরকে সেদিন মেডিসিন [ যা অরুনের হাতে পরেছিল ] দিয়েছিল। মেডিসিনটা এমন ছিল যাতে তীব্র যা বলবে তাই তুরের কাছে সত্যি বলে মনে হবে। সবকিছু ইমাজিং করলেও সবটা বাস্তব বলে মনে হবে। তুরকে সে রাতে পেপারে সই করায়। আর এমন ব্যবস্থা করে যাতে তুর মেনে নিতে বাধ্য হয় ও তীব্রের সাথে সেচ্ছায় ফিজিক্যালি ইনভলব হয়েছে।

তার পরের দিন তীব্র বিয়ের সমস্ত কিছু কমপ্লিট করে। ফিরে যায় তুরের কাছে। তুরকে নিজের মুক্ত জীবনের স্বাদ দিয়ে তুরের সম্মতিতে আপন করে নেয় তুরকে। যেহেতু তুর ভেবেছে তীব্র আগেই ওর সাথে জড়িয়েছে। তাই এবার আর বাধা দেয়না …

সবকিছুই তীব্রের মন মতই হচ্ছিল। তুরের সাথে স্বামী-স্থীর স্বাভাবিক সম্পর্ক বজায় রাখে তীব্র। কিন্তু হঠাৎ কোন এক অজানা চাওয়া গ্রাস করে ওকে। স্বার্থের জন্য প্রথমে বাধ্য হলেও তুরের সাথে কাঁটানো ১মাসে তা প্রয়োজন হয়ে যায়। স্বার্থ শেষে তুরকে মুক্তি দেওয়ার মানসিকতা থাকলেও কোথায় যেন তা হারিয়ে যায়। লক্ষ্যের রাস্তাই জীবনের মানে হয়ে যায় তীব্রের জন্য। বুঝতে পারে তুরের প্রয়োজন কিছুদিন না। সারাজীবনের জন্য হবে ওর।

প্রয়োজন যখন অনন্তকালের তখন তা চিরস্থায়ী করাই উত্তম। আর যদি হয় সম্পর্ক, তবে তা দুজনের চোখে বৈধতা দেওয়া। কিন্তু রেজিষ্ট্রির কথা তুরকে বলা সম্ভব ছিল না।

তাহলে তুরের মনে প্রশ্ন জন্ম নিত কেন তীব্রে ওকে বিয়ে করেছে? আর কেনই বা আগে জানায়নি? যার উত্তর দিতে গেলে আরো কিছু মিথ্যে বলতে হবে।

আর সত্যিটা বলতে গেলে তীব্রকে সবটা বলতে হত যে, তুরকে হোটেল থেকে খারাপ লোকদের হাত থেকে বাঁচায়নি। বরং আরেকজনের শাস্তি হিসেবে নিজেই তুলে দিতে চেয়েছিল। নিজের স্বার্থে ওর মনে ভালোবাসার ফুল ফুটিয়েছিল। তাতে তীব্রের ভালোবাসা ছিল না। মিথ্যে ছিল সেদিন তুরের ভাবনা। তুর বোকা হয়ে তীব্রের কাছে নিজেকে বির্সজন দিয়েছে।

আর এসব জানার পর তুর কোনদিন মেনে নিতে পারত না ওকে। খারাপ লোকদের হাত থেকে বাঁচানোর কৃতজ্ঞতা ধূলিসাৎ হয়ে যেত। ক্ষোভটা ঘৃণায় পরিণত হত। যতটা খারাপ ও তীব্রকে ভাবত তার চেয়েও ছোট হয়ে যেত তুরের চোখে।

কোন দিনি থাকতে চাইত না তীব্রের সাথে। তাই তীব্র পুরানো ক্ষত না জাগিয়ে নতুন করে মলম দেওয়ার সিন্ধান্ত নেয়। আগের বিয়ের কথা না জানিয়ে নতুন করে বিয়ে করতে চায় ওকে। যাতে তুরের এটা মনে হয় ওকে তীব্র এসব ভালোবাসা আর মোহের মধ্যের অন্তর করার জন্য করেছে। আর ভালোবাসাটা বুঝতে পেরে ওকে বিয়ে করতে চাইছে।

যদিও তীব্র জানত, তুর ওকে কাছে আসতে বাঁধা না দিলেও, মেনে নিতে পারেনি। কিন্তু তাতে তীব্রের যায় আসত না। অভিনয়, ইচ্ছে-অনিচ্ছে বা বাধ্যতা তীব্রের শুধু তুরকে চাই। তাই ভালো থাকার অভিনয় করা তুরের সবকিছুতে সায় মেলায় তীব্র।

সম্পর্ক যেহেতু স্বাভাবিক করতে চেয়েছে তাই বিয়ে করে ওর বাবা-মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিতে চেয়েছিল ওকে। যাতে ধীরে ধীরে মেনে নেয় তীব্রকে। তাই তুরের কথায় বিয়ের জন্য বাংলাদেশে আসে তীব্র।

কিন্তু তীব্রের সমস্ত পরিশ্রম, চাওয়া-পাওয়া, সাধনা ব্যর্থ করে পালিয়ে যায় তুর…

তখন থেকেই শুরু হয় তুরকে পাওয়ার পাগলামী। তুরের মূল্যটা বুঝে পাগল হয়ে যায় তুরকে ফিরে পাওয়ার জন্য। তাই তুর ওকে শর্ত দিলে লোভে পরে তুরের পাঁতা ফাদে পা দেয় তীব্র।

তুরের কারনে তীব্রকে পুলিশ গ্রেফতার করলে, সবার নজরে এসে যায় তুর। কিন্তু গোপনে বিয়ে, তুরের জন্য হওয়া বদনামের কারনে তীব্রের শত্রুদের কাছ থেকে তুরের ক্ষতি নিয়ে আশংকা থাকে না। তাই তুরের মন রাখতে চলে যায় জেলে।

কিন্তু শুনানির পর তুরের প্রেগন্যান্ট হওয়ার খবরটা জানতে পেরে আনন্দে আর্তহারা হয়ে যায় তীব্র। লক্ষ্য পূরনের নয় বাবা হওয়ার আনন্দে পাগল হয়ে গিয়েছিল তীব্র।

কিন্তু তুরের মুখে বেবি এবোডের কথা খুশিটা মূহুর্তেই বিষে পরিনত হয়। ক্ষেপে যায় তীব্র।

তখন আর তুরের মন রক্ষার কথা ভাবতে পারে না। কারন বেবির সাথে তুরের জীবন বিপন্ন ছিল। তুর প্রেগন্যান্ট মানে তীব্রের বংশধর আসছে এই খবর বাইরে লিক হওয়া মানেই তুরকে মারার চেষ্টা করা। তীব্র যে ভয়ে ওকে এতদিন সবার চোখের আড়ালে রেখেছিলো #বন্ধ_দরজায়_তুমি🖤 করে, সেই ভয়টা সত্যি হয়ে যাচ্ছিল। তাই বাধ্য হয়েই তুরকে কোর্টে ছেলেমানুষ হিসেবে প্রুভ করে নিজেকে নির্দোষ প্রমান করে। তীব্র বাইরে না থাকলে তুর চেয়েও নিজেকে আর বেবিকে বাঁচাতে পারবে না। বাবা-মায়ের মত তুর আর বেবিকেও হারিয়ে ফেলবে।

জেল থেকে বেড়িয়ে ওদের নিরাপত্তা করতে পারলেও তুরের মানসিক অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। শারিরীক অবস্থাও হয়ে পরে সঙ্গিন। বেবিকে বাঁচানো কষ্ট হয়ে পরে। কিন্তু বেবি এবোড করতে নারাজ তীব্র। শেষ মেষ যুদ্ধ করে তুর জন্ম দেয় তাইয়্যানকে। কিন্তু তুরের মেন্টাল কনডিশন খারাপ হওয়ার জন্য ছেড়ে যেতে বাধ্য হয় তুরকে। আর বিদেশ যাওয়ার কারন ছিল তাইয়্যানের সেফটি। যা এখানে সম্ভব না। আর তুরের ওই অবস্থায় নিজের সাথে নিতেও পারত না।

আর এখানে রেখে গেলে তীব্রের স্ত্রী হিসেবে তুরকেও বাঁচানো পসিবল নয়। তাই এই সমস্যার সমাধান করতে ডির্বোসের নাটক করে তীব্র। আর ডির্বোসের মানেই তুরের শেয়ারের উপর তীব্রের কোন কন্ট্রোল নেই। তাই তুর মারা গেলেও শেয়ারের অধিকার তাইয়্যান বা তুরের বাবা-মায়ের আন্ডারে চলে যাবে। সো তুরকে মেরে কারোই লাভ হত না।উপরুন্ত তীব্রের একটা টেনশন কমে যায়। চলে যায় তীব্রের আইল্যান্ডের সেই সেইভ হাউজে। যার খবর কেউ জানে না। সেখানের সিকিউরিটি ব্যবস্থাও প্রচন্ড টাইট। এখানেই তুরকে বন্দী করে রাখা হয়েছিল। সেখানে নিরাপদে বেড়ে উঠতে থাকে তাইয়্যান।

তুর সুস্থ হবার পর দেশে ফিরে আসতে চায়। কিন্তু তাইয়্যানের অসুস্থতার জন্য পারেনি। তাইয়্যানের সুস্থ হবার পর কোন রিক্স নিতে চায়নি তীব্র। তাইয়্যানকে নিয়ে প্রথমে নিজের কাজ করলেও তাইয়্যান হাঁটা শেখার পর তাইয়্যানকে সেইভ হাউজের বাইরে নিয়ে যায়নি। কারন বাইরে তীব্রকে বেশ কয়েকবার মারার চেষ্টা হয়েছিল। তাই দেশে ফেরার জন্য তাইয়্যানের ৫বছর হওয়ার অপেক্ষা করে তীব্র।

জীবনের সমস্ত প্রতিকূলতা কাঁটিয়ে ৫ বছর পর সবটা স্বাভাবিক হয়ে আসে। এখন আর টাকার জন্য ওদের জীবন অরক্ষিত নয়। Sr. কোম্পানির কোন ওয়ারিস না থাকলে তীব্রের শেয়ার ট্রাস্টে চলে যাবে।

তাই দেশে ফিরে আসে তীব্র। তাইয়্যানকে মা আর সৌর্হাদ্যকে নিজের কাঙ্ক্ষিত ফিরিয়ে দেবার জন্য।

কিন্তু তুরের এমন অবস্থা…

এত কিছুর পর নতুনভাবে সব তৈরি করার মত শক্তি থাকে না তীব্রের। ক্লান্ত হয়ে পড়ে।

তাই ঠিক করে চলে যাবে তাইয়্যানকে নিয়ে। কিন্তু এয়ারপোর্টে তাইয়্যান মা চায়… নিজের মায়ের চেয়ে আপন কেউ হতে পারে না। তাই ছেলের জন্য নিজের রাগ, অভিমান ভুলে তুরকে কাছে টেনে নিতে চায়। তার চেয়েও বড় কথা তীব্র নিজেও যে তুরের থেকে দূরে থাকতে পারবে না। তাছাড়া তুরের এই অবস্থার জন্যও দায় ও এড়াতে পারে না।

আগের বার তাইয়্যান আর তুরকে বাঁচানোর জন্য #বন্ধ_দরজার_বন্দিনী🖤 করতে চেয়েছিল। কিন্তু এবার তুরের কাছ থেকে নিজের না পাওয়া ভালোবাসা, চাওয়া-পাওয়া, আকাঙ্ক্ষা আদায় করে নিয়ে তুরের ভালোবাসার সাগরে ডুবে তুরকে #বন্ধ_দুরজার_তুমি🖤 করতে…

তবে তা নিয়ে সঙ্কিত তীব্র। সবার মত করে ভালোবাসতে পারবে না। ওর ভালোবাসায় কষ্ট যে অনেক বেশি। তীব্র তো নিজেই জানে না কী চায় ও। তুর কী মেনে নেবে এসব?

তুর যাই চায় না কেন? তীব্রকে ওর মেনে নিতেই হবে। কারন এটাই তীব্র-তুরের নিয়তি।

🖤🖤
🖤
নিজের লাইফের ৩৫ বছর এক নজরে দেখে নিল তীব্র। সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ। কিন্তু অর্থ, স্বার্থ, প্রতিহিংসা, লোভের জন্য কী না করতে পারে? মানুষ বলতেই স্বার্থপর। সবাই যে যার স্বার্থ বোঝে। স্বার্থের বাইরে কেউ নেই। ওই লোকগুলোর স্বার্থ ছিল প্রোপার্টি, যার কারনে মরতে হলো বাবা-মাকে। তীব্রের স্বার্থপরতার জন্য তুরকে বন্দী হতে হলো। তুর কী নিঃস্বার্থ ছিল? না। কারন ও ভালোবাসা আর নিজের সন্তানের স্বার্থে তীব্রের কাছে ফিরেছিল।ওর বাবা মা মেয়ের ভালোর জন্য। তোয়া নিজের দোষ ঢাকতে। কাকে দোষ দিবে? কেউ তো ধোয়া তুলছি পাতা নয়।

সবাই তো একই… স্বার্থপর।

🖤
কথাগুলো ভেবেই বেলকনিতে দাঁড়িয়ে নিচে সুইমিং তুর- তাইয়্যানের দিকে তাকিয়ে কফিতে চুমুক দেয় তীব্র।
.
.
.
.
.
.
.
[ কি বলতাম ভুলি গিচি… বাকিটা নিজেরা বুঝে নেন। এর শেষটা দেখতে আরো একটা পর্ব ওয়েট করতে হবে। ]

আগেই বলেছিলাম এটা সাসপেন্সিভ থ্রিলার স্টোরি। অনেকে বলেছেন কাহিনি অনেকটা সিনেমাটিক। বলার কিছু নাই। আমি লিখেছি সিনেমাটিক স্টোরি।

কাহিনির বেস বা প্লট যদি স্টোরং না হয় তাহলে পুরো কাহিনি নষ্ট হয়ে যায়।আমার মনে হয় না #বন্ধ_দরজায়_তুমি🖤মাইন্ড গেইমিং স্টোরির জন্য এর চেয়ে বেটার কোন কনসেপ্ট হতে পারে না। আর যদি এটা বলতাম যে ভালোবাসে তীব্র এইসব করেছে তাতে আমি না আপনারাই বলতেন হুড্ডাই পেচাইছি।

আমি আসলেই স্টোরি পেচাই নাই। আর আপনাদের যদি মনে হয় তাহলে বলেন এই প্লটের কাহিনি কিভাবে লিখলে পেচানো হত না। আমি অনেক খুঁজেও পায়নি। তাই আপনারাই বলেন…

কেন তুরকে #বন্ধ_দরজায়_তুমি🖤 হতে হলো?
উত্তরটা পেয়েছেন….. তাইয়্যান। তাইয়্যান গল্পের শেষ নয় শুরুটা ছিল।

সবার মতামত আশা করছি….

ধন্যবাদ..

Åriyâñà Jâbiñ Mêhèr

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here