#বন্ধ_দরজায়_তুমি🖤
#Written_By_Åriyâñà_Jâbiñ_Mêhèr [ Mêhèr ]
#Part: 45…..
🖤
পরক্ষনেই তীব্র ভাবল না এভাবে বাইরে থাকলে তাইয়্যান অসুস্থ হয়ে পড়বে। আবহাওয়া ভালো না। ঠান্ডা ঠান্ডা পরছে। বাতাসের দিক, আদ্রতা দেখে বুঝাই যাচ্ছে বৃষ্টি নামতে পারে। ও মোবাইল বের করে একটা কল দিলো।
তারপর তুর-তাইয়্যানের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,“ অনেক অপেক্ষা করতে হয়েছে আমাকে। আমার যা চাওয়া খুব দ্রুতই পাব আমি। সারাংশর ব্যাক্ষা সম্প্রসারনের রুপেই এবার শেষ হবে। ”
কিছুক্ষন পর তোয়া উপস্থিত হলো সেখানে৷ তোয়া এসে দেখে তীব্র সামনের দিকে তাকিয়ে কিছু দেখছে। ও তীব্রের কাছে গিয়ে পিছন থেকে ডাকল,” ভাইয়া আসতে বলেছেন? ”
ওর কন্ঠে ঘোর ভাঙে তীব্রের। ও তোয়ার দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়। তোয়া কিছু বলতে যাবে তার আগেই তীব্র ইশারায় আস্তে কথা বলতে বলে। তাই তোয়া ধীর কণ্ঠে বলে,” কী হয়েছে ভাইয়া। ”
তীব্র সামনের দিকে ইশারা করলে সামনে তাকায় তোয়া । সামনে দেখতেই চোখ গুলো বড় বড় হয়ে আঁচমকাই ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠে। ” তাইয়্যান তুরের সাথে! তাও এভাবে? ” খুশিতে আটখানা হয়ে বেশ জোরেই বলে উঠে।
” আস্তে কথা বলো তোয়া। তাইয়্যানের ঘুম ভেঙে যাবে। ”
নিজেকে শান্ত করে বলে, ” হ্যা, কিন্তু… ”
তীব্র ওর কথা না শুনেই তাইয়্যান-তুরের দিকে এগিয়ে যায়। তুরের মাথা থেকে তাইয়্যানের মাথা উঠিয়ে খুব সাবধানে তুরের মাথা ধরে তাইয়্যানকে বেঞ্চে থেকে উঠিয়ে তুরের মাথা আস্তে করে সিমেন্টের বেঞ্চের উপর রাখে। তারপর তাইয়্যানকে কোলে নিয়ে তোয়ার কাছে দেয়। তোয়া ওকে কোলে নিতেই তীব্র বলে, ” ওকে নিয়ে শুইয়ে দেও। ”
তোয়া কিছুটা চিন্তিত হয়ে তুরের দিকে তাকিয়ে বলে, “আচ্ছা। কিন্তু তুর? ”
” ও উঠলে আবার ঝামেলা করবে। এইজন্য আটকে রেখেছিলাম। ও সুস্থ কিন্তু স্বাভাবিক নয় তোয়া। ব্যাপারটা তোমাদের বুঝতে হবে। তোমরা বললেই ও তোমাদের কথা শুনবে না। তাই মেরে, ধমকে, আটকে রেখে কোন লাভ নেই। যে ভুলটা তোমরা বিগত কয়েক বছর ধরে করে আসছ। ” উত্তর দিল তীব্র ।
ওর কথার মানে উদ্ধার করতে ব্যর্থ হয় তোয়া। তাই আবার জিজ্ঞেস করে, ” বুঝলাম না ভাইয়া? ”
তীব্র একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে তারপর বলে, ” সবাই এটাই ভেবেছে তুর কিসে ভালো হবে কিন্তু এটা কেউ জানতে চায়নি ও কী চায়? ”
” মানে… ” বেশ অবাক হয়ে প্রশ্ন ছুড়ে দেয় তীব্রের দিকে।
জবাবে বেশ কিছুক্ষন নীরব থাকে তীব্র। তারপর বলে, ” সবটাই জানো তুমি তোয়া। ওর সাথে আমি কী কী করেছি? তবুও কিন্তু ও আমাকে ভালোবেসেছে। আমার করা প্রতিটি কাজে যে ক্ষোভ ওর মনে সৃষ্টি হয়েছিল তাতে ওর সেই কাজ স্বাভাবিক নয় কী? তার উপর ওর সেই অনাকাঙ্ক্ষিত প্রেগন্যান্সি। তাই আমার প্রতি ওর সেই বিহেভের দোষ আমি দেবনা । তার পাপ্য ছিলাম আমি। তবে ওর খারাপ হওয়ার দোষ কিন্তু সম্পূর্ন না আমার , না ওর । সবচেয়ে বেশি দোষী তোমরা। ”
” আমরা দোষী? ” বেশ অবাক হয়ে।
” হ্যা, তোয়া। তোমরা। ওই বয়সে যেকোন মেয়ে এমনটা করবে সেটা স্বাভাবিক। তুর সেটাই করেছে যে আপাত দৃষ্টিতে ওর অবস্থানে থাকা যেকোন মেয়েই ওমনটা করত। আর যখন আমি ওর মত করে কোন কিছু হতে দেইনি। তখন যে মানসিক চাপ ওর উপর পরেছে তাতে ওর অসুস্থ হওয়া টাও অস্বাভাবিক ছিল না। ”
চুপ তোয়া। তীব্র আবার বলে উঠল,
” কিন্তু একবার ওর সুস্থ হওয়ার পরের কথা ভাব তোয়া। ওর সুস্থ হওয়ার পর আমার ধারনা মতে সবাই ওকে এটাই বুঝিয়েছে তীব্র নামের লোকটা ওর জীবন থেকে চলে গেছে। এবার আর ওর কোনভয় নেই। কিন্তু একবারও কী ওর কাছে জানতে চেয়েছিলে ও কী চায়? বা আমি চলে গেছি বলে ও খুশি হয়েছে কিনা? আর না এটা বুঝতে চেয়েছ আমি ওকে ডির্বোস দিয়ে চলে গিয়েছি বলে ও সেটা কীভাবে নিয়েছে? কেউ কী ওর মনের কথা জানতে চেয়েছিলে? ”
নিশ্চুপ তোয়া। সত্যি তো। সবাই তুরের ভালোর কথা ভেবে, তুর যাতে আর কষ্ট না পায় তাই ভেবে তুর যা শুনতে চেয়েছে তাই বলেছে সবাই। তুর কী চায় তা জানতে চায়নি? ”
” কিন্তু আপনার প্রতি তুর যে পরিমান ক্ষোভ পুষে রেখেছিল তাতে কী করে বলতে পারেন তুর আপনাকে না পেয়ে এমনটা হয়েছে? ” আনমনেই বলে উঠল তোয়া।
ওর কথায় প্রতিউত্তরে আলত হেসে তীব্র বলল, ” তুমি কেন ভুলে যাচ্ছ তোয়া ও কিন্তু কখনোই আমার থেকে দূরে সরে থাকেনি। এমনকি থাকতে চায়নি। আমাকে ভয় পেলেও আমি কাছে টেনে নিলে আমার কাছেই ফিরে আসতে চাইত। আর বার বার তাই হয়েছে। তোমার কী মনে হয় আমি জোর করে ওকে নিয়ে যেতে পারতাম যদি না ও চাইত? এইজন্য তুমি ওকে মেরেও ছিলে। তাই না? ”
আরষ্ট হয় তোয়া। ” হ্যা কিন্তু…”
” তোমার মনে আছে তোয়া? তোমার জন্য তায়ান মরতে বসেছিল। কিন্তু ও সুস্থ হওয়ার পর তোমার জন্য আবার পাগল হয়ে গিয়েছিল। তাহলে তুর কেন আমাকে চাইবে না? তায়ান তো তাও বুঝদার কিন্তু তুর? ও তো নিতান্তই ছেলে মানুষ ছিল। ”
নিরবে শুনছে তোয়া।
তীব্র আবার বলল, ” ওর ভালোর জন্য ওর মুখের কথা শুনে ওকে বুঝিয়েছ তীব্র ওর অসুস্থতার জন্য ওকে ছেড়ে চলে গেছে। ( তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে ) কিন্তু এটা বুঝতে চাওনি একটা মেয়ের জন্য কতটা খারাপ প্রভাব পড়বে যে ওর হাজবেন্ড ওর অসুস্থতায় ওকে ডির্বোস দিয়ে চলে গেছে। সো এখানে ওর মানসিক চাপটা কী স্বাভাবিক নয়? আর এমন সময় যেকোন মানুষ খারাপ প্ররোচনায় বিপথে চলে যেতে পারে। তুর ও তাই। খারাপ লোকের হাতে পরে…. ”
বাক্য শেষ করার আগেই দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসে তীব্রের। কিছুক্ষন থেমে আবার বলে,” তারপর নিশ্চয় তোমরা ওকে ভালো করতে আটকে রেখেছ, মেরেছ, আমার জানা মতে জোর করে রিহাবেও রেখেছিলে। তাতে কী ওকে ভালো করতে পেরেছিলে? আমার ধারণা মতে না। আর না সেটা সম্ভব। না তোমরা পেরেছিলে। আর এটাই স্বাভাবিক। আর এসব করেই বেশি ভুল করেছ তোমরা। ওকে বুঝিয়েছ ওর চাওয়া দরকারী নয় বরং তোমরা যা ভাব তাই ওর জন্য ঠিক। মানে ওর নিজেস্ব কোন চাওয়াই নেই। তাই দোশ আমি ওকে দেব না।”
তোয়া চুপ। কোন কথা বলার ভাষা আসছে না এখন। শান্ত গলায় তীব্র দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে তুরের দিকে তাকিয়ে বলে, ” তাইয়্যানকে নিয়ে শুইয়ে দেও। ”
ছোট করে ” হুমম.. ” শব্দটা উচ্চারন করে চলে যেতে নেয়।
হঠাৎ আবার চলে যেতে গিয়েও থেমে যায়। পিছন ফিরে তীব্রের দিকে তাকিয়ে ক্ষীন কণ্ঠে তীব্রকে জিজ্ঞেস করে,” সত্যি সব দোষ কী আমাদের ভাইয়া? ”
অপরাধী ভাব ফুটে উঠে তীব্রের মুখে। ” নাহহহ.… সবচেয়ে বড় দোষী আমি নিজেই। আমি অন্যায় করেছি ওর মন বুঝেও কোনদিন তার মর্যাদা রাখতে পারিনি। আর তোমাদের কাজটা ভুল ছিল। ওর মন না বোঝার ভুল। আন্টি, আংকেল, তোমরা সবাই এই ভুলটা করেছিলে যে আমাকে ছাড়া ও ভালো থাকবে। কিন্তু আমার জানা মতে ও আমাকে কখনোই ছাড়তে চায়নি। বরং আমাকে আঘাত দিতে চেয়েছিল। শোধ নিতে চেয়েছিল ওকে কষ্ট দেওয়ার। আর তোমরা সেটাকে ভুল বুঝে আমাকেও বাধ্য করেছিলে তুরকে ছেড়ে যাওয়ার জন্য। আর ওকে বাধ্য করেছিলে এটা বুঝতে ওর অসুস্থতার জন্য আমি ওকে ডির্বোস দিয়ে মুক্ত করে দিয়েছি। তবে যেহেতু মুল দোষী আমি। তাই নিজের দায় আমি এড়াব না। আমি ওর চাওয়া ওর মত করে ফিরিয়ে দেব। ”
আর কথা বাড়াল না তোয়া। খুব আফসোস হচ্ছে। কেন বুঝতে পারল না তুর তীব্রের চলে যাওয়াতে খুশি ছিল না। ওর মুখের কথা কেন বিশ্বাস করে মনটাকে পরতে পারেনি। দীর্ঘশ্বাস ফেলল। অপরাধী তোয়া তখনো ছিল আর আজও আছে। না চাইতেও বারবার অপরাধী হতে হচ্ছে। তীব্র তখনো ওর দোষ লুকিয়েছে আর আজও সবার দোষ আড়াল করে চলেছে। তোয়াই যে প্রথম দোষী। হ্যা, ওর জন্যই তীব্র নামক একটা ঝড় তুরের জীবনে এসেছিল। তীব্র তুরকে যে কারনেই নিজের কাছে রাখুক। তীব্রের কাছে যাবার কারন তো তোয়াই ছিল।
তোয়া আর ভাবতে পারল না। অপরাধ বোধ নিয়ে এতগুলো বছর ছিল। আজ যেন তা আরো বেড়ে গেল। আর কিছু শোনার শক্তি ওর নেই। তৎক্ষনাৎ স্থান ত্যাগ করে তাইয়্যানকে কোলে নিয়ে চলে গেল। ওরা চলে যেতেই তীব্র তুরের দিকে এগিয়ে যায়। তুরের নেশার না করতে পারার কারনেই হাইপার হয়েছে তাতে সন্দেহ নেই। ঘুম ভাঙলে আবার পাগলামী করবে এটাও স্পষ্ট। শুধু শুধু জোর খাটিয়ে কিছু করা যাবে না। তুরের মন ওকে রাখতে হবে। কিন্তু সেটা তুরকে বুঝতে দিলে হবে না। ভালোবাসা দিয়ে যেমন মানুষকে শুধরানো যায় না তেমনি শুধু শাসন দিয়েও না। কেন যে মানুষ তা বুঝতে চায় না জানা নেই?
তীব্র তুরের পাশে গিয়ে মাথায় হাত দেয়। হাঁটু গেড়ে মাটিতে বসে পরে ওর মুখের দিকে তাকায়। শান্ত-স্থীর সে মুখ। কিন্তু ঘুম ভাঙলেই তো তান্ডব করবে। তবুও তুরের কাছ থেকে অনেক কিছু বলাতে হবে ওর? যে করেই হোক ওর মুখ থেকে শুনতে চায় কী চায় ও.… ও আলত করে তুরের কপালে বেশ ক্ষানিকটা সময় নিয়ে ঠোঁট ছোঁয়ায়। কপালে চুমো এঁকে তুরের দিকে তাকায়। আলত করে ওর গালে নিজের বুড়ো আঙুল স্পর্শ করে নিচের দিকে তাকিয়ে নিজ মনে কিছু চিন্তা করে। পরক্ষনেই আবার ওর দিকে তাকায়। বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে তুরের মাথাটা উঁচু করে। আর একমুহূর্ত অপেক্ষা করে না তীব্র। পরক্ষনেই কোলে তুলে নেয় তুরকে। তারপর পা বাড়ায় বাড়ির ভিতরের দিকে। তীব্র ধীর পায়ে ওকে নিয়ে যেতে থাকে। তার মাঝে এক মুহুর্ত তুরের দিক থেকে চোখ সরে না। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। যেন দুনিয়ার সমস্ত মায়া আজ তুরের মুখে ভর করেছে। এই মুখে এক বার নয়, দু’বার নয়, বারবার, হাজার বার ডুবে থাকা যায়।
ও তুরকে নিজের রুমে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেয়। হঠাৎ করেই বাইরে নজর যায়। থাই গ্লাসের ওপাশে দেখা যাচ্ছে গাছ গুলো প্রচন্ড বেগে দুলছে। তীব্রের কেন জানি খুব অস্বস্তি হতে লাগল। ও গিয়ে তুরের মাথার সামনে বসে। কিছুক্ষন তুরের দিকে স্থীর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তুরের মাথায় হাত দিয়ে স্নিগ্ধ কণ্ঠে ” তুর ” বলে ডেকে উঠে। কিন্তু তুরের কোন সাড়া পায় না।
তীব্র ওর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে তুরকে বেশ কয়েকবার ডাকল, ” তুর… তুর। ”
হঠাৎ এমন ডাকে তুর আঁধো আঁধো চোখ খুলার চেষ্টা করে। পরক্ষনেই তুরের ঘুম হালকা থেকে হালকা হতে শুরু করল। ওকে ডাকার মানুষটা কে তা বোঝার চেষ্টা করল? আবছা অন্ধকার রুমে। লাইট অন করা নেই। নিজের মাথাটা উঁচু করে ভালোভাবে মানুষটিকে দেখতেই চোখের পাতায় চিরচেনা সেই মুখটি প্রতিফলিত হয়। পরমুহুর্তে শোয়া থেকে দ্রুত তুর উঠে বসল বিছানায়। কাঁপাকাঁপা কণ্ঠে বলে উঠল, ” আপনি…”
তীব্র ওর পাশে। তাই দ্রুত তুর উঠে বিছানা থেকে নেমে উন্মাদের মত আশ-পাশটা দেখতে লাগল। বোঝার চেষ্ট করল কোথায় আছে। যতদূর মনে পড়ে ওই পিচ্চিটার সাথে বাগানে ছিল। তাহলে এখানে ….. বুঝতে বাকি রইল না তীব্রই নিয়ে এসেছে।ওর রুমেই। অন্ধকার ছিল তাই বুঝতে বেগ পেতে হয়েছে।
মুহুর্তেই তখনকার অস্বস্তি তুরের মাঝে মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে লাগল। ও দ্রুত কণ্ঠে বলে উঠল, ” আমাকে এখানে নিয়ে এসেছেন কেন? আমাকে যেতে হবে। প্লিজ… ”
তুর দরজার দিকে যায়। কিন্তু তীব্র কোন ভ্রু-ক্ষেপ করে না তাতে। ওর নিজের যে অদ্ভুত অস্বস্তি হচ্ছে। দম বন্ধ হয়ে আসছে। তীব্র গিয়ে জানালা খুলে দেয়। আর সঙ্গে সঙ্গে শো শো আওয়াজে মুখোরিত হতে লাগল চারদিক। বুঝাই যাচ্ছে বৃষ্টি আসবে।
ওদিকে বাইরে যাবার চেষ্টায় পাগলের মত করছে তুর। আর এদিকে শান্ত ভঙ্গিতে জানালার সামনে দাঁড়িয়ে আছে তীব্র। শীতল বাতাসের স্পর্শে শীতল করতে চাচ্ছে ওর শরীর। কিন্তু গায়ের ডিজাইনার পাঞ্জাবির যেন তাতেও বেগ পাচ্ছে।
তখনি তুর প্রচন্ড রেগে ওর কাছে আসে। তীব্র জানত এটাই হবে। দরজা খুলতে না পারার কারনে ও আরো বেশি ভাইলেন্ট হয়ে যাবে। হলোও তাই। তুর এসে ওর পাঞ্জাবি ধরে ঝাকিয়ে বলল, ” আপনি কেন আটকে রেখেছেন? আমার বাইরে যাওয়াটা দরকার। প্লিজ যেতে দিন। ”
নিজেকে সামলাতে না পেরে প্রচন্ড জোরে কান্না করে কান্না করে দিয়েছে তুর। কিন্তু তীব্র তখনো শান্তভাবে ওর পানি গড়িয়ে পরা অশান্ত চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।
তীব্র ওর কোন কথা শুনছে না বলে তুর কিছু বলতেও পারছে না। আর না নিজেকে সামলাতে পারছে। শক্তি নেই ওর মাঝে। ওর অবস্থা দেখে তীব্রের চোখে পানি এসে পরেছে। কিন্তু তা তুরকে দেখাতে পারবে না। তাই ও তুরের ডাক না শোনার ভান করে জানালার বাইরে তাকায়।
এতক্ষন তীব্রকে ডাকার পর তুর বুঝতে পারল শুনবে না তীব্র ওর ডাক। নিজেকে কন্ট্রোল করার ক্ষমতাও হারিয়ে যাচ্ছে তুরের। দাঁড়িয়ে থাকতে পারল না। তীব্রের পাঞ্জাবির বোতাম ছিড়তে ছিড়তে বসে পড়ল মাটিতে তীব্রের পায়ের উপর। নিজের বোধ শক্তি হারিয়ে ফেলছে। ও আঁকড়ে ধরে আছে তীব্রের দু’পা।
তীব্রের পা জড়িয়ে নিস্তেজ কণ্ঠে এতটুকু উচ্চারন করছে বার বার, ” আমাকে যেতে দিন। প্লিজ আমাকে যেতে দিন… পারছি না আমি। যেতে দিন প্লিজ… ”
তীব্রর নিজের এবার ধৈর্য শক্তি নেই। ও চোখ বন্ধ করে রয়েছে হাত দু’টো মুঠ করে। আর তুর ওর পা ধরে শুধু একই বুলি আওড়ে যাচ্ছে, ” যেতে দিন আমাকে। পারছি না আমি। ”
হঠাৎ করেই আকাশে গুম গুম মেঘের আওয়াজ পায়। বাতাসের সাথে পানির ছিটা আচড়ে পরতে শুরু করে তীব্রের মুখে। পানির আচে চোখ খুলে জানালার দিকে তাকায় তীব্র। আকাশের বুক চিড়ে অঝোরে বর্ষন হয়ে চলেছে। বড় বেশি ইচ্ছে বৃষ্টির পানিতে অনেক কিছু মুছে ফেলতে কিন্তু তা কতটুকু সম্ভব জানা নেই তীব্রের। হারিয়ে যাওয়া স্মৃতির হাতরালে এমনি একটা বৃষ্টি ভেজা রাতের মুহুর্ত ভেসে আসছে চোখের সামনে। হ্যা, সেই মুহুর্ত যেদিন প্রথম তুরকে আপন করে নিয়েছিল ও। সেই রাতের পাওয়াটা ছিল শ্বাশত। এমনি একটা রাত ছিল সেটা। এমনি বৃষ্টি ছিল সেই রাতে। বৃষ্টির পানিতে সেদিন যে মেয়েটা নিজের বন্দি জীবনের প্রথম মুক্তির জন্য উল্লাসে মেতে ছিল। আজ সেই মেয়েটাই ওর কাছে একটা অন্ধকার জীবনের গভীরে যাওয়ার জন্য ভিক্ষা চাইছে। কিন্তু তা যে পারবে না দিতে তীব্র। সেদিন মেয়েটার মুক্তির অনেক বেশি দাম নিয়েছিল তীব্র। কিন্তু আজ… আজ যে পারবে না ওকে মুক্তি দিতে। সেদিনের মুক্তি মেয়েটিকে সারাজীবনের জন্য বাঁধার শর্ত হিসেবে ছিল। কিন্তু আজকের মুক্তি মানে ওকে অন্ধকারের মাঝে ঠেলে দেওয়া । পারবেনা তীব্র সেই মুক্তি দিতে।
তাই তুরকে তোয়াক্কা না করেই তুরের থেকে নিজের বা ছাড়িয়ে নিল।
নিজের অজান্তেই পা বাড়িয়ে জানালার কাছে গেল। তীব্রের যাওয়ার কারনে পা ছেড়ে ওখানেই গুটিশুটি মেরে পড়ে রইল তুর। তীব্র জানালার সামনে দাঁড়িয়ে বৃষ্টির পানির ভারী আঁচ নিজের গায়ে মাখতে চাইছে। কিন্তু পারছে না। তাই পাঞ্জাবিটা খুলে পাশে রাখে।জানালার পাশের দেয়ালে বাম হাত দিয় চোখ বন্ধ করে জানালার সামনে দাঁড়িয়ে বৃষ্টির ভারী আচ অনুভব করছে। শরীরে চিকন স্লিভের টি-শার্ট। শরীরের বেশিভাগটাই উন্মুক্ত। এজন্য বৃষ্টির আঁচে পুরো শরীরে বিন্দু বিন্দু পানি জমে যাচ্ছে।
তুর মেঝেতে শুয়ে এতক্ষন নিরবে কাঁদলেও এখন বেশ শব্দ করেই কাঁদছে। নিজে থেকে কাঁদছে বলে ভুল হবে সহ্য করতে পারছে না বলে ছটফট করছে। যা এবার তীব্রের কানে আসছে।চেয়েও সেই কান্না আওয়াজ শুনতে নিজেকে বাঁধা দিতে পারছে না। তুরের এই অসহায়ত্ব তীব্রকে শেষ করে দিচ্ছে। ও একবার দেখে নেয় তুরকে। তারপর একই ভাবে আবার কিছুক্ষন বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকে। বেশ কিছুক্ষন পর ও মেঝেতে থাকা তুরের কাছে যায়। তুর এখনো মেঝেতে শুয়ে মুখ লুকিয়ে কাঁদছে। তীব্র ওর কাছে গেলেই তুর বিধ্বস্ত পানিতে ভেসে যাওয়া চেহারা নিয়ে ওর দিকে তাকায়। তীব্র শক্ত মুখের ভঙ্গিমা বজায় রেখেই তুরের দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়। তুর কিছু চেয়েও বলতে পারল না। তুর একবার ওর মুখ আরেকবার ওর বাড়িয়ে দেওয়া হাতের দিকে তাকায়। কিন্তু তীব্রের হাত না ধরে আবার মেঝেতে মুখ লুকিয়ে কাদতে থাকে। কিন্তু অনড় তীব্র মুখের শক্তভাব বজায় রেখেই একই ভঙ্গিমায় হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। তুর আবার ওর দিকে তাকায়। এবার আর পারে না নিজের কাঁপাকাঁপা হাত বাড়িয়ে দেয় তীব্রের দিকে।
তীব্র ওর হাতের নাগাল পেয়েই হ্যাচকা টানে তুরকে উঠিয়ে কোলে তুলে নেয়। তুর কান্না কান্না কন্ঠেই বলে,” প্লিজ তীব্র আমাকে যেতে দিন। ”
কিন্তু তুরের কথার কোন ভ্রুক্ষেপ তীব্রের নেই মাঝে। তুর অসহায় চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আর তীব্র শক্ত মুখে কোন প্রতিক্রিয়া না করেই ওর চোখে চোখ দিয়ে তাকিয়ে আছে। ও তুরকে সোজা বেলকানিতে নিয়ে যায়। সেখানের মেঝেতে তুরকে বসিয়ে উঠে যেতে নিলেই তুর ওর হাত ধরে। তীব্র ওর দিকে তাকাতেই অসহায় করুন এক তুরকে আবিষ্কার করে। কিন্তু তাতে আশ দেয় না ও। তুরের হাত ছাড়িয়ে চলে যায়।
বেশ কিছুক্ষন ওভাবেই বসে থাকে তুর। এক পর্যায়ে কিছু একটা উঁঠতে যাবে। তার আগেই তীব্র ওর পাশে বসে। এটা দেখে তুর বলে, ” আপনি যেতে দেবেন না আমাকে? ”
নিশ্চুপ তীব্র।
” তীব্র কিছু বলছি আমি ( উত্তেজিত হয়ে পড়ে। পরক্ষনেই আবার শান্ত ভাবে বলে৷৷) তীব্র প্লিজ যেতে দিন… ”
তখনি তীব্র তুরের সামনে একটা ড্রিংসের বোতল রেখে বলে, ” তোমার যা চাই। যার জন্য এতক্ষন ধরে যাওয়ার জন্য পাগল হয়ে গেছ… ”
তুর যেন আকাশ থেকে পড়ে। একরাশ বিস্ময় নিয়ে তাকায় তীব্রের দিকে। তীব্র শান্তভাবেই একটা বিয়ারের ক্যান ভেঙে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে তাতে চুমুক দিচ্ছে। তীব্রের এমন ব্যবহারে রাগ লাগে তুরের। ও নিজেও কোন ভ্রু-ক্ষেপ না করে তীব্রের দিকে তাকিয়ে বোতলের মুখটা খুলে পুরো বোতলটাই নিজের ঠোঁটে চেপে ধরে। এক নিশ্বাসে পুরোটাই শেষ করে দিল। এটা দেখে তীব্র আরেকটা বোতল দিল তুরের সামনে। তুর কিছুই বুঝতে পারছে না আর তীব্র ভাবলেশহীন। আরো রাগ লাগল তুরের। ও সেই বোতলটাও শেষ করতেই তীব্র আরেকটা দিল। তুর বুঝল তীব্র ইচ্ছে করেই করছে। ও একি কাজ করতে গেল। কিন্তু এবার বেগ পেতে হচ্ছে।
তীব্র ওর দিকে না তাকিয়েই বিয়ারে খেতে খেতে বলে,” যতটুকু নিতে পারবে ততটুকুই নেও। আমাকে দেখানোর জন্য কিছু করোনা। নাহলে তোমাকেই পস্তাতে হবে। ”
.
.
.
.
.
[ বাকিটা পরের পর্ব গুলোতে জানবেন 🖤 ]
.
.
.
Åriyâñà Jâbiñ Mêhèr