#বন্ধ_দরজায়_তুমি🖤
#Written_By_Åriyâñà_Jâbiñ_Mêhèr [ Mêhèr ]
#Part: 48…..
🖤
মৃতপ্রায় কোন যন্ত্রমানবী তুর। নিস্তেজ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে । যেন কোন সার নেই শরীরে । একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তুরের পাশে ওর বাবা-মা, তোয়ার বাবা-মা সহ অনেকেই দাঁড়িয়ে আছে। এখানে এত মানুষ থাকার পরও পুরো পরিবেশটাই স্তব্ধ । কোন জীবত মানুষ নেই এখানে। জীবিত মানুষ থাকলেও তারা যেন প্রানহীন অচল । কারো মাঝে কিছু বলার কোন সক্ষমতা নেই। তা সাহসের অভাব নয় । প্রশ্নের উত্তর দানের ব্যর্থতা। তাইয়্যান কিছু বুঝতে পারছে না বিধায় বাবাকে জড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ছোট মনের কৌতুহল ধরে রাখতে না পেরে বলে উঠল, ” পাপাই সবাই এভাবে দাঁড়িয়ে আছে কেন? ”
স্তব্ধ এই পরিবেশে তাইয়্যানের এমন কথা শুনে সবার নজর এখন ওর দিকে। নিজেকে এখানের কেন্দুবিন্দু হিসেবে আবিষ্কার করে ঘাবড়ে গেল ছোট তাইয়্যান। ভয়ে বাবার পেটে মুখ লুকিয়ে ফুপিয়ে উঠল। ওর ফুপানোর শব্দে তুর তাকায় ওর দিকে । এক যন্ত্র মানবীর মত সরল অনুভুতিহীন ভাবে ওর কাছে যায়। হাঁটু গেড়ে ওর সামনে বসে পরে তুর। ঈষৎ হাত-পা কাঁপছে তুরের। ঠোঁট কাঁমরে নিজের কান্নাটাকে আটকানোর চেষ্টা করে হাত বাড়িয়ে দেয় সন্তানকে কাছে টেনে নিতে।
কিন্তু পরক্ষনেই মনে পরে তীব্রের সেই শর্ত । ওকে ছুঁয়ে কথা দিয়েছে, ওর দেওয়া জিনিসটা যদি তুরের পছন্দ হয়, তাহলে ওর অনুমতি ছাড়া তাকে স্পর্শ করবে না। শর্ত মোতাবেক ওকে বিয়ে করতে হবে। না, পারবে না ও তাইয়্যানকে স্পর্শ করতে। ও ফুপিয়ে কেঁদে উঠে তাইয়্যানের দিক থেকে হাত সরিয়ে নেয়। সেখানেই থম মেরে বসে শব্দ করেই কান্না করে দেয়।
তাইয়্যান তুরের এহেন আচরনে আরো বেশি ভীত হয়ে পড়ছে। তুরের দিকে একবার তাকিয়ে আবার তীব্রের পেটে মুখ গুঁজল। তীব্র ছেলের মাথায় হাত দিল। যা বুঝিয়ে দিচ্ছে ওর পাপা আছে ওর সাথে । ভয় নেই। তুর তাইয়্যানের এরকম ভীত রুপ দেখে অশ্রুভেজা করুন চোখে তীব্রের দিকে তাকায়। তীব্র তাইয়্যানের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে তুরের চোখে চোখ রাখে। তুরের চোখে অদ্ভুত এক ব্যাথার অনুভুতি দেখা পাচ্ছে।তুরের চোখ পানিতে ভরে আছে। একরাশ মান- অভিমান, অসহায়তা ফুটে উঠেছে।
তাইয়্যান এবার ” পাপাই ” বলে প্রায় কান্না করে দিল।
ছেলের ভয়ার্ত কণ্ঠের কান্নায় তীব্র তাইয়্যানের দিকে তাকায়। হাঁটু গেড়ে ছেলের সামনে বসে পড়ে। তাইয়্যানের ছোট ছোট দু’টো হাত নিজের হাতে আবদ্ধ করে তাতে চুমো খেয়ে বলে, ” তোমার মাম্মাম তোমাকে পেয়ে অনেক খুশি তো। তাই তাদের মাম্মা আর পাপাইয়ের সাথে কথা বলবে। যাতে তোমার কাছে থাকতে পারে। ”
” কিন্তু পাপা… ” ভেজা কন্ঠে।
” কিছু না বাবা। তুমি যেমন কিছু করলে পাপাই’কে বলো। তোমার মাম্মামকে তার মাম্মা-পাপাকে বলতে হবে তাই না। ”
মাথা নাড়ায় তাইয়্যান।
” তাহলে এখন তুমি এখান থেকে যাও। বড়দের কথায় তোমায় থাকতে হবে না। ”
তাইয়্যান একবার তুরের দিকে তাকায়। মাটিতে ওর পাশে বসে কাঁদছে। এটা দেখে তাইয়্যান তীব্রকে ছাড়িয়ে তুরের কাছে যায়। তুরকে কাঁদতে দেখে ও কান্না ভেজা কন্ঠে জানতে চায়, ” তুমি কাঁদছ কেন? ”
তুর তাইয়্যানের দিকে একবার দৃষ্টি দিয়ে আবার নজর নামিয়ে নেয়। গায়ে থাকা ল্যাহেঙ্গা শক্ত করে ধরে ঠোঁট কাঁমরে নিজের কান্না থামাতে চায়। তীব্র রিদ্ধকে ইশারা করতেই ও তাইয়্যান’কে নিয়ে যাওয়ার জন্য আসে।
” হে চ্যাম্প! চলুন আমার সাথে। আমার বিয়ে অনেক কাজ বাকি আছে আপনার। ” বলেই তাইয়্যানকে কোলে তুলে নেয়। তাইয়্যানকে নিয়ে যাবার সময় ও মাটিতে বসে থাকা তুরের কান্না দেখছিল। রিদ্ধ সেখান থেকে বেড়িয়ে ওকে একজন সার্ভেন্টের কাছে দিয়ে আবার রুমে ফিরে আসে।
ওদিকে তুর তখনো মেঝেতে বসে কাঁদছে। তা দেখে তীব্রের অপরাধ বোধ কাজ করছে। এমন কিছু না করলেই বোধহয় ভালো হত। ওকে ছুঁয়ে কথা দিয়েছে এজন্য তুর কোন অবস্থাতেই ওর কথা ফেলবে না। ভেবেছিল বিয়ের জন্য রাজি হবে। কিন্তু এতটা সিরিয়াস হয়ে তাইয়্যানকে স্পর্শ করবে না তা হয়ত ভাবেনি।
ও গিয়ে মাটি থেকে তুরকে উঠাতে চায়। কিন্তু তুরকে সোজা করে দাঁড় করাতে পারে না। কারন তুর নিজের শরীরে কোন ভর রাখেনি। তবুও অনেকটা কষ্ট নিয়েই ও তুরকে উঠালো। তুরকে উঠাতেই তুর সোজা ভাবে দাঁডিয়ে তীব্রের থেকে নিজেকে ছাড়ায়। দু’হাত দিয়ে চোখ মুছে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করল। দু-একটা নিশ্বাস ফেলে চোখ খুলতেই মুখে কঠোর ভাবটা ফুটে উঠে। তীব্রের দিকে একবার দৃষ্টি দিয়ে পরক্ষনেই তা নিজের বাবা-মায়ের দিকে দিল। ধীর পায়ে তাদের কাছে গেল ঠিকি। কিন্তু পাশ কাটিয়ে প্রশ্ন ছুড়ে দিল তোয়ার বাবা দিকে।
” কাকু তুমি তো বলেছিলে আমার অসুস্থতার জন্য জন্মের সময় আমার মেয়ে মারা গেছে? তাহলে তাইয়্যান কিভাবে আমার ছেলে হয়? ”
সবাই চুপ। কেউ কোন কথা বলার সাহস পাচ্ছে না। এ কয় বছরে তুরের উপর কথা বলার সাহস কেউ দেখায়নি। সবাই’কে চুপ দেখে তুর আবার জিজ্ঞেস করল,
” কী হল? কথা বলছ না যে? তাইয়্যান আমার ছেলে কীভাবে হলো? ”
এবারো সবাই চুপ। ওদের নিরবতা যেন সহ্য হলো না তুরের। ওর ইচ্ছে করছে সব কিছু শেষ করে দিতে। ধ্বংস করে দিতে। আর করল তাই। প্রচন্ড রেগে ওই রুমে যা ছিল সব ভাঙতে শুরু করল। আজ আর কেউ ওকে থামানোর সাহস করছে না। তীব্র চুপচাপ ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। ও চায় তুর নিজের সমস্ত প্রশ্নের উত্তর নিজের ফ্যামিলির কাছ থেকে জানুক।
তুর ভাঙতে ভাঙতে চিৎকার করে বলছে, ” কিহল বলছ না কেন? তাইয়্যান আমার সন্তান কিভাবে হলো? হয় তীব্র মিথ্যে বলছে না হয় তোমরা সেদিন মিথ্যে বলেছিলে? আমার মেয়ে যদি মারা যায় তাহলে তাইয়্যান কীভাবে আমার ছেলে হলো? ”
তুর প্রচন্ড রেগে একটা ফুলদানী ওর কাকাইয়ের দিকে ছুঁড়ে মারে। কিন্তু তা ওনার গায়ে লাগার আগেই তীব্র ধরে নেয়। রেগে যায় তীব্র নিজেও। তুরের কাছে গিয়ে তুরকে ঝাকিয়ে বলে, ” শান্ত হও। তোমার যা জানার তার উত্তর তুমি পাবে। আমি বলব তোমাকে সব… ”
তীব্রের এমন কথায় সবাই বেশ ঘাবড়ে গেল। তুরকে সব কিছুর সত্যি বলা মানে ও একটা দক্ষযজ্ঞ বাঁধাবে। তাছাড়া ওনারা যা ভুল করেছে । তার জন্য শাস্তিও কম পায়নি। তুর সুস্থ হওয়ার পর থেকে কাউকে শান্তিতে থাকতে দেয়নি। কী না সহ্য করতে হয়েছে মেয়েটার জন্য। মানুষের কটু কথা, অপমান, ব্যাঙ্গ অনেক কিছু। আর ওনাদের বা দোষ কী? ওনারা যা করেছেন তা তুরের ভালোর জন্যই করেছেন। ওনারা ভেবেছিল, যেহেতু তীব্র আর মেয়ে না হওয়ার জন্য তুর এমন অসুস্থ হয়ে গিয়েছিল। আবার তুরকে এসব জানায় তাহলে ফের যদি অসুস্থ হয়ে যায়। তাছাড়া তীব্র তখন দেশে ছিল না। কোথায় ছিল তা কেউ জানত না। তায়ানও নয়। তখন যদি ওর ছেলের কথা বলত তাহলে ডিপ্রেশনে মেয়েটার অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যেত। তাই যেহেতু তুরের প্রেগন্যান্সির কথা মনে ছিল। কিন্তু বেবি হওয়ার কথা না। তাই ওনারা মূলত তুরের ভালোর জন্যই এটা বলতে বাধ্য হয়েছিল। কিন্তু তা তুরের মা-বাবা পারেনি। ওর কাকাই বলেছিল। আর পরিস্থিতি এমন ছিল যে সত্যিটা তুরকে কারো পক্ষেই বলা সম্ভব ছিল না। আর তোয়াই বা কী বলবে? সেদিন তীব্র চলে যাওয়ার পর আর কোন হদিস পায়নি ওর। অনেক খুঁজেছে কিন্তু না… তাই বাধ্য হয়েই চুপ থাকতে হয়েছে। তাইয়্যানের মৃত্যুর খবর যেমন ও দেয়নি। তেমনি তুরকে কিছু বলতেও পারেনি। সবচেয়ে বড় কথা তাইয়্যান ওর নিজের সন্তান না হলেও পুরো ৬ মাস তাইয়্যানের মা হয়েই ছিল। ও না থাকলে কোন মতেই তীব্রের পক্ষে ছেলেকে তুরের সান্নিধ্যে দিতে পারত না…
তীব্রের প্রতি এতটা বিদ্বেষ থাকার পর তীব্রের জন্য ও খারাপ হতে পারে সেটা চিন্তা করাও বোকামি। আর তুর না বললে ও কী চায় ?সেটা কীভাব জানতে পারবে? ওনারা যা করেছে সব তুরের ভালোর কথাই ভেবে। এটা কেউ বুঝতে পারেনি অমৃত সুধার পরিবর্তে তারা বিষ দিয়েছিল। এত কিছুর পর এখন যদি তীব্র তুরকে কিছু বলে তাহলে তুর কখনোই এটা বুঝবে না ওর ভালোর জন্য সব করা হয়েছে, ওর মন রাখতে। বরং যে মেয়েকে এত কষ্ট করে এতদিন সবকিছু সহ্য করেও নিজেদের কাছে রাখতে পেরেছিল সে এখন সম্পর্ক ছিঁড়েই বেড়িয়ে যাবে।
তীব্র ওনাদের দিকে তাকাল সবার মুখেই অসহায়ত্বের ছাপ। তীব্র জানে ওনারা ওর সাথে যা করেছে তাতে ওনাদের দোষ দেওয়া যায় না। তুরের যে অবস্থা হয়েছিল ওর জন্য তাতে যেকোন অভিভাবক তাই করত। আর তুর? তুর তো ওনাদের কম জ্বালায়নি। যদি বলা হয় ওনারা শাস্তি পাইনি তাহলে সেটা পাপ হবে। মেয়ের ভালো কথা চিন্তা করতে গিয়ে ওই অবস্থায় ওসব কথা বলেছিল। ফলশ্রুতিতে, তুরের ওই উগ্রতা ৩ বছর ধরে সবাই সহ্য করছে। এর পরেও আর কী শাস্তি দেবে? আদো কী দেওয়া উচিত হবে? আর ওনাদের কাছ থেকে তীব্র যে ব্যবহার পেয়েছে তা ওর নিজের পাপ্য ছিল।
এসব কথা বিবেচনা করেই তীব্র আবারো সেই একই কাজ করে। সব দায় নিজের উপর নিতে যায়।
” কি হল তীব্র? চুপ করে আছেন কেন বলুন… ”
তীব্র চোখ বন্ধ করে তুরের অন্তরালে লম্বা একটা শ্বাস টেনে নেয়। তুরের কাঁধ শক্ত করে বলতে শুরু করে, ” তুমি অসুস্থ হওয়ার পর তুমি কিছুতেই প্রেগন্যান্সি মেনে নিতে পারছিলে না। তখন তোমাকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য মেয়ের কথা বলা হয়। তাতে তুমি শান্ত হয়ে নিজের খেয়াল রাখ মেয়ের আশায়। কিন্তু… ( একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসে ) তোমার মেয়ে নয় ছেলে হয়। তাইয়্যান। ”
তুর তীব্রকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলে উঠে, ” তাহলে আমাকে আমার ছেলের কাছ থেকে কেন দূর করলেন? ”
তুর নিজেকে ছাড়ানোর আগেই তীব্র ওকে আরো শক্ত করে আঁকড়ে অসহায় কণ্ঠে বলে, ” প্লিজ তুর আগে আমার পুরো কথাটা শোন। প্লিজ… ”
কিছুটা শান্ত হয় তুর। তীব্র আবার বলা শুরু করে, ” তুমি এখন ছেলের জন্য খুশি হলেও তখন ছিলে না। ”
বিস্ময় নিয়ে তাকায় তীব্রের দিকে। তীব্র আবার বলে, ” তুমি তাইয়্যানকে মেনে নিতে পারো তো নাই। উপরন্তু, তুমি তাইয়্যানকে মারার পর্যন্ত চেষ্টা করেছিলে। প্রায় কয়েকবার … ”
” নাহহ… ” বিস্ময় নিয়ে মাথা নাড়ায় তুর। কিন্তু তীব্র বিনাবাক্যে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানিয়ে বলে ও সত্যি বলছে। সত্যি তুর এমনটা করেছে।
” আমি বিশ্বাস করি না। আমি কী করে আমার নিজের সন্তানকে….”
” এটাই সত্যি তুর। তুমি তাইয়্যানকে ফিডারিং পর্যন্ত করাতে চাওনি। শুধুমাত্র তোয়া জোর করে তোমাকে দিয়ে তাইয়্যানকে খাওয়াত। কিন্তু… ”
তুর নির্বাক।
কিছুক্ষন চুপ থেকে তীব্র আবার বলা শুরু করে, ” কিন্তু ৬ মাসের মাথায় তোমার পাগলামি আরো বেড়ে যায়। তখন আমার সিনিয়র ডক্তর আমাকে তোমার থেকে দূরে যেতে বলে।। যেহেতু তাইয়্যানকে সহ্য করতে পারো না আর ওর ৬মাস হয়ে গিয়েছিল তাই আমি ওকে নিজের সাথে নিয়ে যাই। নাহলে তোমাকে সুস্থ করা যেত না। ”
তুর নিস্তেজ কন্ঠে মৃত চাহনিতে নিচের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়, ” তাহলে আমার সুস্থ হওয়ার পর কেন আসেনি? ওনারা কেন আমাকে তাইয়্যানের কথা বলেনি? ”
” তোমার যে অবস্থা হয়েছিল তাইয়্যানের জন্য তাতে ওকে ভুলে যাওয়ার পর তোমাকে ওর কথা বললে তুমি আবার অসুস্থ হয়ে যেত পারো। তাছাড়া আমি তখন দেশে ছিলাম না। এমতাবস্থায় যদি বাচ্চার কথা তোমাকে বলত তাহলে তোমার আবার অসুস্থ হওয়ার চান্স ছিল। তাই… ”
” ও তারমানে এবারো আপনি দোষী… আপনি দায়ী আমার ছেলের থেকে আমাকে দূরে রাখার জন্য। ” প্রচন্ড চেঁচিয়ে নিজেকে ছড়িয়ে নিল। ওনারা কিছু বলতে যাবে তার আগেই ইশারায় ওনাদের কিছু না বলার জন্য নিষেধ করে দিল। তীব্র ওর সাথে কথা বলতে চেয়েছে, সবকিছু জানাতে চেয়েছে, কিন্তু ওনারা সেটা করতে নিষেধ করেছে এটা তীব্র গোপন করে গেল। ও সবাইকে বেড়িয়ে যাওয়ার জন্য ইশারা করে। তীব্রের ইশারায় সবাই দ্রুত স্থান ত্যাগ করে।
ওনারা চলে যাওয়া মাত্রই তীব্র গিয়ে তুরের হাত ধরে মাটিতে বসে পড়ে। অপরাধীর চোখে ওর দিকে তাকিয়ে নজর আবার নামিয়ে নেয়। যেন ওই চোখে দৃষ্টি রাখার ক্ষমতা নেই ওর। তুর পাথরের মূর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে। যতবার তীব্রকে কাছে টেনে নেওয়ার কথা ভাবে ততবার তীব্র ওকে বাঁধা দেয়।
তীব্র ওর হাতটা নিজের গালে নিয়ে বলে, “ নিজের হয়ে তোমাকে কোন সাফাই আমি দেব না তুর। কিন্তু তবুও নিজের স্বপক্ষে শুধু এতটুকুই বলব যে, পরিস্তিস্থি আমাকে বাধ্য করেছিল তোমাকে ছেড়ে চলে যেতে। আর তোমার সুস্থ হওয়ার কথা জানার পর আমি দেশে ফিরে আসতে চেয়েছিলাম কিন্তু সেটা আর সম্ভব হয়নি। কারন তাইয়্যানের তখন খুব খারাপ অবস্থা ছিল। প্রায় এক বছরের মাথায় ও সুস্থ হয়। ” তুরের হাত ওর গালে থাকার কারনে তীব্রের চোখের পানি গুলো তুরের হাতে পরছে।
তুর ওর কথা গুলো শুনে এবার নিচে থাকা তীব্রের দিকে তাকিয়ে অনূভুতিহীন যন্ত্রমানবীর মত জানতে চায় ,“ তারপর কেন ফিরে আসলেন না তীব্র? তখন ফিরে আসলেও তো আমার জীবনের কিছুটা সময় নষ্ট হওয়া থেকে বেঁচে যেত। “
ওর এই কথায় তীব্র চোখ তুলে ওর দিকে তাকায়। বসা থেকে দাঁড়িয়ে তুরের চোখে চোখ রেখে বলে , “ অভিমানী তুমি একা ছিলে না তুর। আমিও ছিলাম। “
“ তাহলে এখন কেন এসেছেন? এখন কী অভিমান নেই? “
মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায় তীব্র। “ তখনও ছিল, এখনো আছে। কিন্তু তা ভালোবাসার চেয়ে বেশি নয়। তুমি তো বলেছিলে তুর , তুরকে ছাড়া তীব্রের চলবে না। তাহলে অভিমান জমিয়ে রাখি কিভাবে? আমি আসতে চাইনি । নিজের কাছে হেরে বাধ্য হয়েছি ফিরতে। “
নিশ্চুপ তুর।
“ আমাকে ক্ষমা করে দেও তুর। “ অনুশোচনার সুরে।
ধীর গলায় প্রতুত্তর দেয় তুর, “ কেন? “
“ নিজের অন্যায়ের জন্য নয়। কারন সেই ৬ মাসে তোমার সাথে আমি যা করেছি তার কোন ক্ষমা হয় না। তাই তার ক্ষমা চেয়ে তোমার মনের ক্ষতের চিহ্ন রাখতে চাই না। তুমি যদি কোনদিন নিজে থেকে ক্ষমা করতে পারলে সেদিন নিজেকে এই অপরাধের বোঝা থেকে মুক্ত ভাববো। ”
তুর এবারো চুপ।
” আমি ক্ষমা চাইছি তোমাকে শর্ত দেওয়ার জন্য। আমাকে ছুঁয়ে যে কথা দিয়েছ তার জন্য। তবে এবার আর কোন জোর নয়। আমি চাইনা তুমি বাধ্য হয়ে কিছু করো। তাই আমার শর্ত আমি ফেরত নিলাম। কারন আমি জানি আমার উপর যতই রাগ তোমার থাকুক না কেন? আমার কিছু হোক তা তুমি কল্পনাও করতে চাইবে না। তাই… ”
তুর ওর দিকে না তাকিয়ে ওর কথা শুনছে। তীব্র ওর কথা শেষ করে চলে যেতে গিয়ে আবার থমকে দাঁড়ালো।
” তুর আমি তাইয়্যানের কথা দেশে ফিরে তোমাকে বলতাম। কিন্তু পারিনি। তাইয়্যান ছোট থেকে ওর পাপাইয়ের সাথে বড় হয়েছে। আর ওর ইচ্ছে তীরের মত ওর ও মাম্মা-পাপাই হবে। তাই আমি চাইনি তুমি তাইয়্যানের জন্য দায় পরে আমার কাছে থাক। তাতে আমাদের সাথে ওর জীবনটাও বিষিয়ে যাবে। তাই আমি আগে তোমাকে আমার স্ত্রী হিসেবে চেয়েছিলাম। যাতে তোমারো মনে না হয়, যা করছি তাইয়্যানের জন্য করেছি। ”
এবারো তুর কোন কথা বলল না।
” এত কিছুর পর শুধু একটা কথাই বলব। তাইয়্যানের যতটা তোমায় প্রয়োজন। আমারও তোমায় ততটাই তোমার প্রয়োজন
। তুর ছাড়া তীব্র সত্যি অচল। তবুও বলব না তুমি বাধ্য হয়ে আমাকে বিয়ে করো। বাকিটা তোমার ইচ্ছে। তবে একটাই অনুরোধ থাকবে তাইয়্যান যেন বুঝতে না পারে ওর মাম্মা-পাপার সম্পর্ক বাকিদের মত নয়। আর না কোনদিন হতে পারবে। ”
বলেই তীব্র পা বাড়ায় বাইরে যাবার জন্য। তখনি শান্ত গলায় ডাক আসে তুরের, ” তীব্র… ”
থেমে যায় তীব্র । নিচের দিকে তাকিয়ে দু-একটা ঢোক গিলে নেয় তুর। কিছু একটা বলতে চায়। কিন্তু তা যেন গলা দিয়ে বের করতে পারছে না। হাত-পা ঈষৎ কাঁপলেও ঠোঁটজোড়া কাঁপছে প্রচন্ড বেগে। অস্বস্থি হচ্ছে তুরের।
আর তীব্র বাইরে যাবার জন্য পা বাড়িয়েও সেখানে দাঁড়িয়ে আছে তুরের মুখ নিঃসৃত সিন্ধান্ত শোনার লক্ষ্যে। বহুল কাঙ্ক্ষিত সে বাক্য। যা তীব্র শুনতে চায়৷ তবে কোথাও মনের মাঝে একটা আশার দীপ জ্বলছে তুর তাই বলবে যা ও শুনতে চায়।
তখনি তুর কাঁপাকাঁপা ঠোঁটে আবার ” তীব্র ” নাম করতেই তীব্র চোখ বন্ধ করে নেয়। শ্বাস যেন আটকে আসছে। আজ এই অনন্ত মহাবিশ্বের সৃষ্টির মাঝে তীব্রের একটাই চাওয়া তা হচ্ছে তুরের সম্মতি। নিজেকে ধরে রাখতে পারছে না। তবুও হাত মুঠ করে সামলাচ্ছে নিজেকে। আবারো তুরের ধীর কণ্ঠে ” তীব্র ” ডাক শুনতে পেল। তীব্রের ভিতরের উদ্বেগ যেন আরো বেড়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে বুকে হাজার মন পাথর জমা হয়েছে। এবার তুর মুখ ফুটে কিছু না বললে তাঁর তলে পৃষ্ট হবে তীব্র। ওর মুখে আবছা একটাই বিনয়ীর কথা আসল, ” প্লিজ বলো তুর… আর পারছি না আমি। ”
পরক্ষনেই তুর দ্রুত গতিতে বলে উঠল, ” আমি রাজি.. ”
কথাটা শুনে তীব্র চোখ-মুখ খিঁচে বন্ধ করে উপরের দিকে তাকায়। নিজের ঠোঁট কাঁমরে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে তুরের অলক্ষ্যে শুধু এটাই বলল, ” ইয়েস। ” বুকের পাথর নেমে অসম্ভব হালকা লাগছে।
তুর এখনো নিচের দিকে তাকিয়ে ঢোক গিলছে আর পাগলের মত এক বুলি আওরে যাচ্ছে, ” আমি রাজি.. আমি রাজি… ”
তীব্র নিজেকে সামলে পিছন ফিরে ওর দিকে তাকায়। ধীর পায়ে ঠোঁটের কোনে হাসি রেখে ওর কাছে যায়। তুরের গাল ধরে মুখটা তোলে। দুজনের চোখাচোখি হতেই তীব্র তুরের কপালে গভীর চুমো আঁকে যাতে কিছু বলার থাকে না তুরের।
তীব্র ওর দু’হাতের পিঠে চুমো দিয়ে বলে, ” যা তোমার ইচ্ছে। ”
তারপর চলে আসতে ধরলে তুর কাঁপা কণ্ঠে বেশ জোর নিয়ে বলতে চায়, ” আমি কিন্তু তাইয়্যানের কথা ভেবেই রাজি হয়েছি। যাতে আমার সন্তানের খুশি রয়েছে। ” বলেই জোরে জোরে শ্বাস নিতে শুরু করে।
তুরের এমন কথায় তীব্রের ঠোঁটের এক কোনে দাম্ভিক রহস্যময় হাসি ফুটে উঠে। কিন্তু তা তুরের অলক্ষ্যে। সেই হাসির মানে উদ্ধার করলে একটাই উত্তর পাওয়া যাবে। তুর নিজের সবচেয়ে বড় শত্রুর কাছে আত্নসমর্পন করল। তাও আবার শত্রুকে দয়া করে। তাতে তীব্রের কিছু আসে যায় না। কারন যুদ্ধে জিততে পারাটাই বড় কথা। ইতিহাস জয়টাকেই মনে রাখে কীভাবে জিতল তা না? আর তীব্র হয়ত এই কারনেই ছোট ছোট হার স্বীকার করেছে যার পাপ্য হিসেবে শতরঞ্জ খেলায় জিতে নিয়েছে তুরকে।
কথা না বাড়িয়ে আবার সেই বাক্যটাই উচ্চারন করল, ” যা তোমার ইচ্ছে। ” বলে বেড়িয়ে যায়। কী আসে যায়। গন্তব্য যদি পেয়ে যায় তাহলে কোন রাস্তায় হাটল সেটা কে দেখতে যায়?
তীব্র চলে যায়। আর তুর….
,
,
,
,
,
🖤
সন্ধ্যার পর…
সবাই তুরকে সাজাতে ব্যস্ত। রিদ্ধের বউকে অন্য রুমে সাজাচ্ছে। দুজনের বিয়ে একসাথেই হবে। সেটা এখন নাকি আগে থেকে ঠিক করা হয়েছে তা বোঝার উপায় নেই। আয়োজনই ছিল এমন। তুর বসে বসে শুধু নিজের সাজটা আয়নায় দেখছে। কয়েকবছর আগেও ও এই রকমভাবেই বউ সেজেছিল তার ভালোবাসার মানুষকে বিয়ে করার জন্য। আর আজও তাই। তখনও তুর চুপচাপ ছিল আজও তাই। তখনো যেই মানুষটাকে বিয়ে করার কথা ছিল আজও তাই। পার্থক্য শুধু এতটুকু্ই তখন পালিয়ে গিয়েছিল আর আজ সেচ্ছায় তাকে আপন করে নিতে যাচ্ছে। তাহলে কেন পালালো তখন? সেই তো তার জন্যই নিজেকে শেষ করতে হয়েছে।
হয়ত এইজন্য পালিয়ে ছিল। যাতে ওদের গল্পের একটা নতুন অধ্যায় শুরু হবে। যা তীব্র বা তুর নয় ঠিক করবে নিয়তি। তখন যদি না পালাত তাহলে হয়ত তীব্রতুরের গল্পটাই এমন হত না। তাই নিয়তির চাওয়া ছিল এটা…
এসব ভাবতে ভাবতে কেউ তুরের কাছে এসে ওর গায়ে হাত দেয়। নিজের খেয়ালে হারানো তুর বাস্তবে ফিরে আসে তার ছোঁয়াতে। তার দিকে তাকাতেই দেখে তাইয়্যান দাঁড়িয়ে আছে। তুর হালকা হেসে তাইয়্যানকে কোলে নিতে চায় কিন্তু তাইয়্যান সরে যায়। অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে তুর।
তুর কিছু বলতে যাবে তার আগেই তাইয়্যান বলে উঠে, ” বললে তো আমার পাপাই নাকি বুড়ো। এবার ( ভ্রু নাচিয়ে ) সেই তো বুড়ো হ্যান্ডসামের সাথেই বিয়ে হচ্ছে। এবার আমার মাম্মাম ও হচ্ছ। কী জানি বলেছিলে? ( ভাবনার ভঙ্গিতে গালে আঙুল দিয়ে মনে করতে করতে ) হ্যা.. আমি নাকি আমাকে নাকি তোমার ছেলের মত লাগি না। এবার কী করবা? ”
বলেই খিকখিক করে হেসে দেয়। তুর আগেই বুঝেছে তাইয়্যান কতটা দুষ্ট। এখানে যে তাইয়্যান ফোঁড়ন কাঁটতে এসেছে বুঝতেই পারছে। আসলেই ছেলে হয়েছে ?মাম্মা-পাপার বিয়েতে এসে মাকেই ফোঁড়ন কাঁটছে। ছেলে হয়েছে তো কী ছেড়ে দেবে তুর? প্রশ্নই আসে না।
” তুই কী চাস বিয়েটা ভেঙ্গে দিব? ”
তাইয়্যান দাম্ভিক কণ্ঠে নিজের গোফ না হওয়া নাকের গোড়ায় আঙুল দিয়ে ঘষে বলল, ” ট্রাই করে দেখ। আমার পাপাই ঠ্যাং ভেঙ্গে রেখে দেবে। আর আমি ঝগড়া করব। হাহা… ”
ওর কথায় রেগে গেল তুর। মা-ছেলের এই কাহিনীতে তোয়াসহ বাকি সবাই হাসিতে গড়াগড়ি। তুরকে বউ সাজানো শেষ। শুধু গয়নাগুলো পড়ালেই হবে। তখনি সেখানে আগমন ঘটে তীব্রের। ব্লাক শেরওয়ানী। যার মাঝে চকলেট কালারের কাজ। ও ভিতরে ঢুকতেই তুরের সাথে চোখাচোখি হয়। ওকে দেখে তাইয়্যান হাসতে হাসতে বলে উঠে, ” পাপাই তাল পাতার সিপাহি নাকি বিয়ে করবে না। আমিও বলেছি তুমি ওর ঠ্যাং ভেঙ্গে দেবে। ”
ওর কথায় আলত হাসে তীব্র। তুর মুখ ফুলিয়ে বসে আছে। এই ছেলে সৎ ছেলের চেয়ে কম কিছু না। বুঝতেই পারছে ভবিষ্যত জীবন অন্ধকার ওর। তীব্র গিয়ে তাইয়্যানকে চুমো খেয়ে বলে, ” ডানা ভেঙে পাখি আটকায় বোকারা। কারন তাতে পাখির সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়। পাখিকে ডানা ভেঙে নয় পোষ মানাতে হয়। মায়া ধরাতে হয়। ”
ছোট তাইয়্যানের মাথায় এত বড় বড় কথা ডুকল না। কিন্তু তুরের বুকে কাঁমর দিচ্ছে। তীব্র ওকে উদ্দেশ্য করেই বলল। কিন্তু কেন?
” আচ্ছা বাবা তুমি গিয়ে দেখ তো রিদ্ধ আংকেল রেডি কিনা? নাহলে কিন্তু বিয়ে হবে না। ”
এই কথায় তাইয়্যান আর দেরি করল না। চলে গেল। যে করেই হোক তাল পাতার সিপাহিকে মা করেই ছাড়বে। ও যেতেই তীব্রের ইশারায় সবাই রুম থেকে বেড়িয়ে যেতেই তীব্র দরজা লক করে তুরের কাছে যায়। তুর চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়াতেই তীব্র বা হাতে ওর গলা সমেত ঘাড় স্পর্শ করে। স্পর্শটা আলত হলেও তার তীক্ষ্ণতা যেন সহ্য হলো না তুরের। তুর ওর হাত সরাতে চাইলেও পারল না। তীব্র ওর ঘাড় ধরে নিজের কাছে নিয়ে এলো।
” কী করছেন তীব্র ? ”
” হুসস… ওদিকে তাকাও.. ” তুরকে আয়নার দিকে তাকাতে বলল। দুজনকে একসাথে দেখতে পায় তুর। তুর দু’হাতে তীব্রের শেরওয়ানী আঁকড়ে ধরেছে। ঠিক তখনি তীব্র বলল,
” ভালো করে নিজেকে দেখ তুর। ঠিক সেভাবেই ওরা তোমাকে সাজিয়েছে যেভাবে ৬বছর আগে সাজিয়েছিলাম। ”
সচকিত হয় তুর। কলিজা যেন কেঁপে উঠে। হাঁ… এতক্ষন খেয়াল না করলেও এবার খেয়াল করে। একি সাজে ও আজও দাঁড়িয়ে আছে ও। সেম সাজ, সেম বেনারসি, গহনার বক্সের দিকে চোখ দিতেই দেখে তাও সেইম ডিজাইনের। কারন পালিয়ে যাওয়ার সময় ওর পরনে এসব ছিল। যা যত্নে রেখেছিল তুর। তীব্র আবারো সেইম ডিজাইনের জিনিসগুলো ওকে দিল। কিন্তু কেন?
” তীব্র… ” তুর আর কিছু বলার আগেই তীব্র গহনা নিয়ে আয়নায় দেখে দেখে তুরকে একটার পর আরেকটা পরাতে থাকে। প্রতিটা গহনা পরানোর জন্য নয় বরং তুরকে গভীর ভাবে স্পর্শ করার জন্য। তুর কিছুই বুঝতে পারছে না। অস্বস্তির হচ্ছে। কেন করছে তীব্র এমন। গহনা পরানো শেষ হলে তীব্র পিছন থেকে ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তুরের শরীরের ঘ্রান নেয়। নেশাক্ত কন্ঠে বলে,
” এই দিনটা ৬বছর আগে আমি চেয়েছিলাম তুর। বড্ড বেশি অপেক্ষা করিয়েছ তুমি আমাকে। তাইত ৬ বছর পরেও তোমাকে তেমনভাবেই সাজিয়েছি যেমনভাবে দেখতে চেয়েছিলাম। ”
” তীব্র আপনি… ” ভয়ার্ত কন্ঠে।
” চুপ… অনেক শুনেছি। এবার আর কিছু শুনব না আমি। তীব্রের যা চাই, যেমন চাই, যেভাবেই চাই সেটা ঠিক সেভাবেই চাই। তাইত এই ব্যবস্থা। ৬ বছর আগে যা পারিনি সেটা এবার হবে। ”
তীব্রের ভয়ার্ত শীতল কণ্ঠ শরীরে কাঁটা দেওয়ার মত। কী বোঝাতে চাইছে তীব্র?
” মানে..?
” মানে… ”( রহস্যময় হাসি দিয়ে ) তুরকে সমেত বিছানায় বসে তীব্র। তারপর ওর গলার নিচের বাইটের জায়গাটায় আঙুল দিয়ে স্পর্শ করতেই কুঁকড়ে উঠে তুর। তা দেখে তুরকে ছেড়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে তীব্র। কিছুক্ষন বাদে তুরকেও টেনে নেয়। তুরের মাথাটা নিজের বুকের উপর রাখে।
” মানে এটাই তুর। ভালোবাসি তোমাকে। তবে তা খুব ভয়ংকর নিষ্ঠুরভাবে। যার কল্পনাও কেউ করতে পারবে না। ”
বলেই শক্ত করে তুরকে ধরে। এতটাই শক্ত করে যাতে ব্যাথা পায় তুর।
” তীব্র… ”
” বিয়ে করবে আমাকে? ”
” মানে… ”
” আমার জন্য। শুধু আমার জন্য। শুধু আমাকে ভালোবেসে। শুধু আমার কাছে থাকার জন্য। আমাকে ভালোবাসার জন্য। আমার স্ত্রী হয়ে নয় আমার বন্দীনি হয়ে। আমার #বন্ধ_দরজায়_তুমি🖤 হওয়ার জন্য বিয়ে করবে আমাকে? যাতে তুমি পাবে তোমার অধিকার। আর আমাকে ফেরত দেবে সেই তুরকে যে আমার ভয়ে গুটিয়ে থাকত। কাছে আসতে ভয় পেত। কিন্তু আলত ভালোবাসলেই যে উজার করে দু’হাতে ভালোবাসার বৃষ্টি ঝরাত।
” তীব্র আমি আপনার কথা বুঝতে পারছি না। ”
তীব্র আর কিছু না বলেই বিছানা থেকে ওকে তুলে ওর হাত ধরে বাইরে নিয়ে এলো। বিয়ের স্টেজে সামনে এসে তুরের হাত ছেড়ে দিল। পুরো জায়গায় মানুষ ভরপুর। চারদিকে মানুষ গমগম করছে। প্রেস, মিডিয়া আরো অনেক নামী-দামী লোক, আত্নীয়-স্ব্জন সব।
তুরের চোখে পানি। আর তীব্র শক্ত মুখে অগ্নি দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। তখনি একজন প্রেসের লোক এসে বলে, ” আপনাদের তো ডির্বোস হয়ে গিয়েছিল তাহলে। ”
” তীব্র ঠোঁটে রহস্যময় হাসি রেখেই জবাব দেয়, ” বলা হয়েছিল ডির্বোসের কথা। কিন্তু আদো কোন ডির্বোস হয়নি। তাই সামাজিক ভাবে তুর এখনো আমার স্ত্রী। আর এবার ধর্মীয়ভাবে পুরো দুনিয়ার সামনে করতে চাই।”
এটা শুনে তায়ান তোয়াকে জিজ্ঞেস করে, ” তোমাকে না সেদিন ডির্বোস পেপার দিয়ে গিয়েছিল? ”
তায়ানের কথায় তোয়া বলে উঠল, ” সেদিন ভাইয়া আমাকে ডির্বোস পেপার দেয়নি। বলে গিয়েছিল ঠিকি কিন্তু সেটা ডির্বোস পেপার না প্রোপার্টির পেপার ছিল। যা পরে রিদ্ধ আমার থেকে নিয়ে গেছে। আর বলেছে এই কথা যেন কেউ জানতে না পারে। ভাইয়া নাকি ভুল করে ডির্বোস পেপারের জায়গায় প্রোপার্ট পেপার রেখে গিয়েছিল। পরে সে ডির্বোস পেপার দিয়ে যাবে। এত কিছু হয়েছে যে আমি ভুলেই গেছি সেই কথা। ”
এটা শুনে তায়ান দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। বুঝতেই পারছে তীব্র আসলে কী করেছিল?
ওদিকে তীব্র তুরের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলল, ” সো মিসেস. তুর আপনি আরেকবার আমাকে বিয়ে করে Sr. মানে ড. সৌহার্দ্য রায়হানের স্ত্রী, তাইয়্যান শুভ্রতুর রায়হানের মা আর ( তুরের কানের কাছে গিয়ে ) তীব্রের #বন্ধ_দরজায়_তুমি🖤 হবেন? ”
ওর কথা শুনে বিস্ফোরিত চোখে তাকায় তুর। কী বলছে ও? সৌহার্দ্য রায়হান। এখানের সবাই অবাক কারন এই নামটা এই প্রথম জানল সবাই এতদিন শুধু ড. রায়হান নাহলে Sr. বলে চিনেছে সবাই।
তুর কাঁপাকাঁপা গলায় বলল, ” আপনি…?”
” হুমম… আমি আমার #বন্ধ_দরজায়_তুমি🖤 তীব্র… মানে ড. সৌহার্দ্য রায়হান.. “
.
.
.
.
.
[ বাকিটা পরের পর্বে জানবেন 🖤 ]
যদি ভাবেন গল্পের টুইস্ট শেষ তাহলে ভুল। কারন আসল কাহিনি আনক্লিয়ার…
শেষ পার্টে আপনাদের যে উত্তর আমাকে দিতে হবে..
১. দোষী নয় জেনেও কেন তুরকে শাস্তি পেতে হল?
২. কেন ওকে প্রথমে সব কিছু ভুলিয়ে দিতে চেয়েছিল?
৩. কেনই বা বলত ওকে বিয়ে করবে না?
৪. যদি তুরকে বিয়ে করেছিল তাহলে কেন তা স্বীকার করেনি?
৫. পরে কেন ওকে বিয়ে করতে চেয়েছে?
৬. ওকে ডির্বোসের ব্যাপরটা আজকে ক্লিয়ার । কিন্তু আসলে সেটা কতটা বিশ্বাসযোগ্য? তীব্র ওকে সত্যি ডির্বোস দিতে চেয়েছিল?
৭. আর তীব্রকে মারার ব্যাপারটাই বা কী?
৮. আর তাইয়্যান? তাইয়্যানকে নিয়ে যতটা বলা হয়েছে তা কতটা সত্যি?
মোট কথায় এই প্রশ্নের মধ্যে কার কাছে কোন উত্তর আছে? বা কার কোন উত্তর চাই? এর বাইরেও যদি কারো মনে কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে করে ফেলুন। শেষ সুযোগ। শেষ পার্টে সব ক্লিয়ার হবে?
এগুলো গেল আপনাদের প্রশ্ন। এবার আমার একটা প্রশ্নে আসি। গল্প কাল শেষ করে দেওয়া হবে। যেহেতু পুরোটা গল্প পরছেন তাহলে এবার আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দিন?
রাগ, অভিমান ভালোবাসা হলো,
প্রেম,বিরহ, বিচ্ছেদ তাও পূর্নতা পেল।
তবুও আমার অবুঝ ছোট মনে গভীর একটা প্রশ্ন এলো। তা হলো তুরকে কেন তীব্রের #বন্ধ_দরজায়_তুমি🖤 হতে হলো?
এত কষ্টে করে গল্প লিখছি আপনারা কষ্ট করে এই উত্তরটা দেন। তাহলে আমার গল্প লেখা সার্থক। যা হিন্ট দেওয়ার দিছি। তাও বলছি এখানে সব প্রশ্নের উত্তর এক বাক্যে পাবেন। বাক্যের সংক্ষিপ্ত রুপেও দিতে পারেন। আর কিছু বললাম না😁😁😁
Åriyâñà Jâbiñ Mêhèr