কাঠগোলাপ🍁
তৃধা মোহিনী(মৃন্ময়ী)
পর্ব এগারো
🍁
“আমার রুম?” ধ্রুভ বলে রাহির মুখে ফু দিলো,রাহি চোখ বন্ধ করে দিলো।।
“চলেন!!দেখাচ্ছি?” রাহি এই বলে এগোতে লাগলে,ধ্রুভ তার হাত টেনে ধরলো..রাহি অবাক হয়ে চেয়ে রইলো,এরকম টানাতে সে হকচকিয়ে গেছে।।
“এখন থেকে সর্বদা আমার হাতের মাঝে তোমার হাত রেখে হাটবা?? নেক্সট টাইম বলতে না হয়!!” ধ্রুভ কথাটা বলে,রাহির উত্তররের অপেক্ষা না করে তার হাত ধরে হাটা দিলো..বাধ্য রাহিও সেই সাথে ওইভাবে হাটতে হলো।।
ধ্রুভকে তার রুমে রেখে নিজের বাবার রুমে আসতে যেয়েও ধ্রুভ নানান প্রশ্ন করে তার মাথাটা খেয়ে দিল,শেষমেশ ধ্রুভ যখন ছাড়লো তখন রাহি তার বাবার রুমে গেলো।।
“ওই তোর সাহস তো কম না??রাফির সাথে তুই মার্কেটে গেছোস??পা কেটে তোর রেখে দিব আমি??চিনোস তুই আমারে??” প্রান্ত চিল্লিয়ে বললো।।
“আরে বাবা আস্তে!!এতো জোরে চিল্লাও কেন??আর আমি তোমাকে কতবার বললাম মার্কেট গেছি কারন আজকে ইনহেলার নেয়া লাগতো ওর আম্মার,বাধ্য হয়ে গেছি!!” রাশনা উত্তর দিলো।।
“তুই যাবি কেন??তোর ইনহেলার লাগতো??তুই জানিস না রাফি তোকে পছন্দ করে??ওর নজর কত খারাপ জানার পরেও এরকম আমাকে না জানিতে কেনো গেছিস তুই?” আরো দ্বিগুন জোরে চিল্লিয়ে প্রান্ত বললো।।
“এইজন্য তোমাকে জানাই নি আমি!! কিভাবে জেনেছো আল্লাহ জানে আর তুমি!!” রাশনা বললো।।
“ওই তুই আমার থেকে আর কি কথা লুকাস??ওই তোর জান আমি কবজ করে ফেলবো!!” প্রান্ত বললো।।
“ওই ওই করো কেন??আমার বাবা মা আমার কত সুন্দর নাম দিয়েছে সেটা ডাকো!!” রাশনা জানালো।।
“চুপ!!একদম চুপ,পাখা গজিয়েছে না তোর??একদম ডানা কেটে ফেলে দিব!!তুই দাড়া আমাকে আসতে দে শুধু আর মা ও গ্রাম থেকে ফিরুক,আকদ ছয় মাস পর না আগেই হবে!!তুই চিন্তা করতে পারবি না আমি এসে তোর কি হাল করবো??” প্রান্ত বললো চিল্লিয়ে।।
“আমি তোমাকে বিয়ে করবো না এইভাবে থ্রেট দিলে??আমি তোমাকে বকাও দি না তুমি যতটা দাও!!” রাশনা ভয়ে ভয়ে বললো।।
“তুই বিয়ে করবি না?তোর ঘাড় সহ করবে!!” প্রান্ত চিল্লিয়ে ফোন রেখে দিলো।।
রাশনা হতাশ চোখে ফোনের স্ক্রিনে হোয়াটসঅ্যাপের দিকে তাকিয়ে রইলো,সারাদিন পর একটুখানি কথা হলো তাও এই রাফির বাচ্চার জন্য সেটাও গেলো..রাফি সম্পর্কে রাশনার কাজিন হয়..রাফি রাশনাকে পছন্দ করে অনেক আগে থেকে যখন প্রান্ত আর রাশনার রিলেশনও ছিলো না..রাফির নানান ভঙ্গিতে বুঝালেও রাশনা পাত্তা দিতো না,যখন তাদের রিলেশন হলো রাশনা তাকে রাফির কথা জানায়,সে জানিয়েছিলোবতার সাথে না মিশতে..একবার রাশনাদের বাড়িতে এসে রাফির দেখা পেয়েছিলো,রাফি তখন বিশ্রিভাবে রাশনাকে দেখছিলো তখন থেকে প্রান্ত রাফিকে দেখতে পারে না।।
আজকে রাশনা কলেজ থেকে ফিরছিলো ওই সময় রাফির সাথে দেখা,মেডিসিন কিনতে যাবে সে এখন রাশনাকেও জোর জবরদস্তি করে নিয়ে যাবে…রাফির মা সাথে থাকায় না করতে পারে নি আর প্রান্তকেও জানায় নি,এখন প্রান্ত কিভাবে জেনে গেছে ওর বন্ধু না হয় সিসিটিভি রাশনার পিছনে লাগিয়ে রাখছে সে জানিয়ে দিয়েছে..যার ফলাফল স্বরুপ রাশনা ঝাড়ি খেলো।।
“Ghuma!!love you!!ami ese tor obostha tight korbo!!mind it” টুং করে রাশনার ফোনে প্রান্তের মেসেজ আসাতে,যখন দেখতে পেলো তখন এইটা লিখে খুশি হলো আবার ভয় ও পেলো না জানি পরে কি করে।।
“সব ত বুঝলাম!!সে যে আস্ত পাগল,সেইটাতে কোন ডাউট নেয়!!কিন্তু তুই আমাকে আগে জানাস নি কেনো??” রুবেল জিজ্ঞেস করলো রাহিকে,রাহি তার বাবাকে এতোক্ষন সবকিছু খুলে বললো।।
“বাবা বলে কি হবে বলো??দেখছো কিভাবে সে আমাকে নিয়ে পসেসিভ??তোমার সামনেও সেটা!!” রাহি হতাশ সুরে বললো।।
“কি করা যায়??তাই ত বুঝছি না,পুলিশ কে ফোন দি!!ওরাই এই পাগলকে সামলাতে পারবে আর পাগলা গারদে ভর্তি করাবে!!’রুবেল বললো।।
” এইভাবে হয় না বাবা??সে মানসিক ভাবে স্ট্যাবল না,বুঝছি আমি আর তুমিও!!”রাহি জানালো।।
“তুই চুপ থাক!!আমি কল করি!!” এই বলে রুবেল ফোন নিয়ে পুলিশ কে ফোন করতে চলে গেলো,রাহির উত্তরের অপেক্ষা না করে..সবাই নিজেদের মতামত জানিয়ে চলে যায়,রাহির ও কিছু বলা থাকতে পারে সেটা কেও বুঝে না।।
আধাঘন্টা পর,
পুলিশ মেঝেতে পরে আছে কারন তার গালে ধ্রুভ সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে কষিয়ে থাপ্পড় মেরেছে..থাপ্পার মেরে সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে,এদিকে রুবেল থম মেরে একবার পুলিশের দিকে তাকাচ্ছে আর একবার ধ্রুভের দিকে।।
ফ্ল্যাশব্যাক,
রুবেলা ফোন করার পাচঁমিনিটের মাথায় পুলিশ হাজির,কলিংবেল বাজাতে রুবেল যেয়ে দরজা খুললো।।
“আসুন!!দেখুন কিভাবে একটা পাগল লোক আমার বাড়িতে এসে বসে আছে আমার মেয়েকে বিয়ে করার জন্য!!” রুবেল বললো।।
“চলুন দেখান!!” পুলিশ জানালো।।
রুবেল পুলিশকে সাথে করে ধ্রুভের রুমের দিকে নিয়ে গেলো,রাহি ঘর থেকে বের হয় নি..চিল্লাফাল্লা ঠিক শুনছে..ধ্রুভ কেবলই শাওয়ার নিয়ে এসে টি-শার্ট পরছিলো আর পুলিশ এসে তার কলার ধরে টান দিলো..কলার ধরে টান দিয়ে হিড়হিড় করে বাহিরে নিয়ে যাচ্ছে।।
ধ্রুভের ব্রেইনের প্রতিটা কোষ মনে হচ্ছে আগুনে কে জ্বালিয়ে দিলো,কলার ধরা সাহস কেও অব্দি করে নাই..ধ্রুভ তাকে আর এগোনোর সুযোগ না দিয়ে,তার দিকে ঘুরিয়ে টাইনা এক থাপ্পড়, লোকটি এতো জোরে ছিটকে পরলো যে রুবেল ও তড়াক দিয়ে লাফ দিয়ে উঠেছে..ধ্রুভের রাগ কোনভাবে কমছে না,রাহি এমন আর্তনাদ শুনে বাহিরে আসলো।।
ধ্রুভ যখন দেখলো রাহি বাহিরে আসছে তখন তার মেজাজটা আরো জ্বলে গেলো,রাহির দুই গাল চেপে ধরলো..রাহি ব্যাথতে কুকিয়ে গেলো,রুবেল এগিয়ে আসলে..ধ্রুভ তাকে চোখ দিয়ে ইশারা করে থেমে যেতে ওখানে,রাহি এই নজরের মানেটা বুঝে..এখন বাবা না থামলে,সে বাবাকেও কিছু করে দিতে পারে..রাহি ইশারায় তার বাবাকে না করলো,রুবেল তাটস্থ ধরে দাড়ালো।।
“না করেছিলাম না কারো সামনে আসতে??কেনো আসলে বলো বাইরে??বলো মীরা??!” ধ্রুভ এতো জোরে রাহির গাল চেপে ধরেছে আর চিল্লালো কানে মনে হচ্ছে তালা লেগে গেলো তাদের,রাহিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ধ্রুভ রাহিকে টানতে টানতে নিজের রুমে যেয়ে রাহির ওড়না টেনে তার হাত বাধলো বেডেএর সাথে,পা বাধলো তার টাউজারের সাথে আর মুখে দিলো কসটেপ তার ব্যাগে ছিলো সেটা বের করে।।
“দিস ইজ ইউর পানিশমেন্ট ফর নাও!!আগে বাইরের টাকে সাইজ করে আসি!!এন্ড লিসেন, ইউর ফাদার ডিড নট ডু দ্যা রাইট থিং!!” ধ্রুভ বলে বেরিয়ে গেলো,এদিকে রুবেল চিল্লাচ্ছে কি করছে তার মেয়েকে নিয়ে..ধ্রুভ বেরিয়ে আসলো যখন রুবেল ঢুকতে গেলে তাকে বাধা দিয়ে বললো
,”ডোন্ট ট্রাই!!আদারওয়াইজ ইট উইল নট গুড হোয়াট হ্যাপেন নেক্সট!!”ধ্রুভ শান্তভাবে বললো,ধ্রুভের এমন আওয়াজ আর চাহনী দেখে রুবেল বাধ্য হয়ে চুপ থাকলো।।
ধ্রুভ বাহিরে এসে দেখলো পুলিশ পালানোর চেষ্টা করছে,তখনি ধ্রুভ তাকে টেনে এনে তার মেইন পার্টে এক লাথি দিলো..বেচারা আর্তনাদের আরো জোরে চিল্লালো।।
বর্তমান,
“তোকে যেন আমি ত্রীসীমানায় না দেখি??আউট!!” ধ্রুভ চিল্লিয়ে বললো,পুলিশটা অতি কষ্টে দাড়ালো আর কোন রকমে দাড়িয়ে ভৌ দৌড়ে দিলো।।
“এটা আপনার প্রথম ভুল আমার কাছে!!আমি কোন ভুল ক্ষমা করি না,এখানে আপনি মীরার বাবা এইজন্য কিছু বললাম না কিন্তু আমি চুপ থাকবো না?আজ থেকে আপনি বিয়ে হওয়া অব্দি মীরার সাথে দেখা করতে পারবেন না!!” ধ্রুভ বললো।।
“মানে কি??আমার মেয়ে,আমার বাড়ি??আমার বাড়িতে তুমি উটকো হয়ে থাকছো আর আমার বাড়িতে আমার মেয়ের সাথে দেখা করতে পারবো না??বলি নেশা ক’বার করো দিনে??যে এখনো ছুটে নি তোমার” রুবেল রেগে বললো।।
“নেশা সাতটা বছর ৯মাস ১৮ ঘন্টা ২০মিনিট ১০সেকেন্ড প্রতি মুহূর্তে করায় আমার মীরা!!যার মাদকতা এতো তীব্র যে আমি দিন দিন ডুবছি তাতে,এই নেশায় ক্ষতি হলেও আমি চোখ বন্ধ করে ও নিতে রাজি!!কিন্তু আপনি আমার মীরার থেকে দূরে থাকবেন??আপনার জন্য মীরা আমার কাছ থেকে দূরে সরলে,আপনাকেও এই দুনিয়া থেকে সরাতে আমি দুবার ভাববো না!!” ধ্রুভ বলেই ধপাধপ পা ফেলে রাহির কাছে গেলো।।
রুবেল অবাকের চরম পর্যায়ে গেছে,তার মেয়ের সাথে দেখা করতে দিবে না এই কিছুক্ষনের আসা ছেলে??আবার তারই বাড়িতে??।।
রাহির কাছে যেয়ে দেখলো ধ্রুভ রাহি কাতরাচ্ছে হাতের বাধন খুলার জন্য কিন্তু মুখে টেপ থাকার কারনে পারছে না সেটা,ধ্রুভ তার কাছে গিয়ে যখন দাড়ালো তখন রাহি ভয়ে একটু পিছু সরলে ধ্রুভ তাকে তার পা টান মেরে সামনে আনলো।।
“কথা কেনো শুনো না আমার??আজ তোমার পানিশমেন্ট হলো তুমি সারারাত এইভাবেই থাকবে!!” ধ্রুভ বললো,রাহি চোখ বড়বড় করে তাকাচ্ছে,মুখে টেপ থাকায় কিছু বলতে পারছে না,ইশারায় অনেক কাকুতি মিনুতি করছে কিন্তু ধ্রুভ তা পাত্তা না দিয়ে তার ফোন নিয়ে বসলো কারন স্মিথ বারবার ফোন দিচ্ছে তাকে আগে ক্লিয়ার করা দরকার।।
রাহি অসহায় চোখে তাকাচ্ছে কিন্তু লাভ হচ্ছে না,ভীষণ কান্না পাচ্ছে তার..কি করবে সে??ওইভাবেই হেলান দিয়ে খাটের সাথে মাথাটা এলিয়ে দিলো রাহি।।
চলবে🍁
গঠমূলল মন্ত করুন, আমি প্রথম পার্টে যতটা রেসপন্স পেয়েছি তারপর আর পাই নি আফসোস লাগে ভাবি আমারি ব্যর্থতা এখানে..আর একটা কথা রহস্য কখনো একেবারে খুলে না,ধীরে সুস্থে খুলে..ধ্রুভের ক্যারেক্টর টা আমি আরো ফুটিয়ে তুলতে চাই,আপনাদের রেসপন্স দেখলে পরের পর্ব লিখতে বসবো উৎসাহের সাথে..ভুল ত্রুটি ক্ষমার নজরে দেখবেন।।