কাঠগোলাপ🍁পর্ব-২৬ শেষ পর্ব

0
738

কাঠগোলাপ🍁

তৃধা মোহিনী(মৃন্ময়ী)

পর্ব ছাব্বিশ

🍁
রাহি নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না,মানুষ ঠিক কতটা নিম্ন পর্যায়ে গেলে এমন কাজ করে??

“তাদের আপনি কোথায় পেলেন??” রাহি জিজ্ঞেস করলো।।

ফ্ল্যাশব্যাক,

সেদিন তোমাকে হসপিটালে এডমিট করার পর,আমি মাইক্রফোনটা ল্যাবে পাঠাই তারপর তারা খোজ চালায় যে এটার মধ্যে কি আছে??অতি চালাকের গলায় দড়ি বলে একটা কথা আছে না??তারাও ঠিক চালাকি করতে যেয়ে এই ভুলটা করেছে তা হলো মাইক্রোফোনে তাদের অজান্তে লোকেশন সেট হয়ে গেছে..আমি দুইদিন পর যখন স্মিথকে ডাকি মিথ্যা বলে এই যে আমার শরীর খারাপ করছে মেডিসিন না নেয়ার কারনে..উনি কথাটা শুনে খুশিতে গদগদ হয়ে গেছিলেন,দ্রুতভাবে মেডিসিন নিয়ে আসবে বলে জানিয়েছিলেন..উনি যেখানে যেখানে যায় তার পিছনে আমি আমার লোক ঠিক করেছিলাম,চার দিনের মাথায় দেখি হুডি পরে স্মিথ কোথায় যেন যাচ্ছে,আমার লোক ফোন দেয়াতে আমিও ছদ্মবেশে উনার পিছন ধরি..লন্ডনের শেষ সীমান্তে উনার গাড়ি থামায়,উনি একটা ছোট্ট খুপরি মতো ঘরে গেলো..ভিতরে যেয়ে আমি যা দেখি তা দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম,দুইটা স্মিথ একসাথে..একটা চেয়ারে বাধা অবস্থায়,যার চেহারা কেমন হয়ে গেছে দ্বিতীয়টা তার সামনে।।

“আবার এখানে কেন এসেছো??” চেয়ারে বাধা অবস্থায় স্মিথ বললো।।

“তোমার সুখ দেখতে!!” দাড়ানো স্মিথ বিশ্রি হাসি দিয়ে বললো।।

“তুমি কখনো সফল হতে পারবে না!!” চেয়ারে বসা স্মিথ বললো।।

“লেটস সি!!” দাড়ানো অবস্থায় স্মিথ বললো।।

কিছুক্ষন একটু পর আরেকটা লোক আসলো,সেও হুডি পরে আছে।।

“দেয়ার ইউ মাই বয়!!” দাড়ানো অবস্থায় স্মিথ বললো।।

“তোর ওই ধ্রুভের জন্য আমার ভাই মরেছে!!তোর ধ্রুভকে আমি শেষ করে দিব!!”স্টিভ বললো।।

” চিনতে পেরেছো স্মিথ তাকে??এটা জেমসের সন্তান স্টিভ!!সেদিন ল্যাবে আমি নয় জেমস মারা গেছিলো??তাদের সন্তানগুলোকে আমি নিয়েছি!!আমি যা বলবো তারা তাই করবে!!ধ্রুভ তার ভাইকে কোন খুন করেছে সেটার বদলাও নেয়া হবে!!ওহ হো তুমি ত জানো না সেটা!!তোমার মনে আছে সেই মডেল ক্যাথরিনের কথা যার জন্য ধ্রুভ না মেয়েটা পাগল ছিল!!ক্যাথরিনকে ধ্রুভ মেরেছিলো আমি সময়মতো না আটকালে ক্যাথরিন এই দুনিয়াতে আর বিরাজ করতো না,ক্যাথরিনকে ভালোবাসতো স্টিভের ভাই লুকাস..লুকাস ক্যাথরিনের মার সহ্য করতে না পেরে ধ্রুভকে মারত্ব যায়,আর ধ্রুভ মনে করে ক্যাথরিন লোক পাঠিয়েছে অথচ ক্যাথরিন সেদিন দেশ ছেড়ে চলে যায়..লুকাস ধ্রুভকে মার‍্যে গিয়ে নিজেই খুন হয়ে যায়,লুকাসের হান্ড্রেড পিস করে লন্ডনের হান্ড্রেড জায়গাতে রেখেছিলো??সি স্টিভ বেচে আছে তার ভাইয়ের বদলা নেয়ার জন্য!!”দাড়ানো অবস্থায় স্মিথ বললো।।

“ড্যাড চলো এই বেজান শরীরের সাথে কথা বলে কি হবে??”স্টিভ স্মিথ কে নিয়ে বেরিয়ে গেলো।।

ধ্রুভ এতোক্ষন সব শুনছিলো,রাগে তার মাথা ফেটে যাচ্ছিলো এক প্রকার.. তার লোককে ফোন দিয়ে বললো ওদের উঠিয়ে নিতে,ওরা বেরিয়ে যাবার পর ধ্রুভ স্মিথের কাছে গেলো..ধ্রুভকে দেখে বেশ অবাক হয়েছেন উনি,ধ্রুভ তাকে নিয়ে গেলো ন্যামিয়ানের কাছে আগে..ন্যামিয়ান এতোদিন পর স্বামীকে দেখতে পেয়ে চোখের জল ফেলে দিলো..ধ্রুভ তাকে সমস্ত কথস খুলে বললো,স্মিথের ট্রিটমেন্ট আর সেফের জন্য ধ্রুভ তাদের লন্ডন ত্যাগ করতে বললো..এদিকের ধ্রুভের লোক বব আর স্টিভকে উঠিয়ে নিয়ে গেছে সাথে করে তার বাড়ির গার্ডেন এরিয়ে পিছন ঘরে..ধ্রুভ সেখানে যায়,তাদের সামনে গিয়ে উপস্থিত হয়।।

ধ্রুভকে দেখে তারা ভূত দেখার মতো চমকে উঠে,স্টিভ দাত মুখ খিচে উঠেছে তাকে দেখে।।

” সাপের লেজে পা দিয়েছো ত ছোবল ত খেতেই হবে?”ধ্রুভ কথাটা বলে হাতে থাকা হকিস্টিক নিয়ে মারা শুরু করলো,স্টিভের পুরুষাঙ্গের উপর বেশি মেরেছে ধ্রুভ কারন ও তার মীরার দিকে নজর দিয়েছে..এইভাবে
সেদিনের পর থেকে ধ্রুভ রাতে এসে তাদের মারে।।

বর্তমান,
রাহি সব শুনে স্তম্ভ হয়ে গেছে,কি বলবে কি করবে কিছু বুঝে উঠতে পারছে না..চোখ দিয়ে পানি পরছে তার,ধ্রুভ তার কাছে এসে চোখের জল মুছে দিলো।।

“তোমাকে যারা কষ্ট দিয়েছে তাদেরও কাওকে আমি আস্ত রাখি নি!!সামির না কি কুকুর ছিলো সে এইডসে আক্রান্ত কারন মিথিলার তার অগোচরে আরেক বফের সাথে ফিজিক্যালি এটাচ হয়েছে,ছেলেটার এইডস ছিলো যার ফলে মিথিলার কাছে এসেছে,মিথিলার হওয়াতে তখন সামিরের হয়েছে!!তারা হাসপাতালের বেডে মৃত্যুর সাথে লড়ছে!!’ধ্রুভ বললো।।

রাহি অবাক চোখে চেয়ে রয়েছে তার মানে ধ্রুভ শুরু থেকে সব জানে কিন্তু আড়াল করে গেছে।।

” তুমি আমার জান মীরা!!তোমাকে ভুলা কখনো সম্ভব না!!জীবনের প্রতিটা সময়ে তোমাকে প্রয়োজন আমার!!”ধ্রুভ কথাটা বলে রাহির কপালে চুমু দিলো।।

দুই মাস পর,

ন্যামিয়ান আর স্মিথের আন্ডারে থেকে অনেকটায় সুস্থ ধ্রুভ তবে দুর্বল হয়ে গেছে ভুল মেডিসিনের কারনে কিন্তু এই কয়েকদিন রাহি ধ্রুভকে এক সেকেন্ডের জন্যও চোখের আড়াল করে নি,ধ্রুভ যে মীরাকে ভুলে নি আগের থেকেও বেশি মীরাকে চেয়ে ফেলেছে..উঠতে বসতে সবসময় তার মীরাকে দরকার,প্রতিক্ষনে।।

বব আর স্টিভকে পুলিশের কাছে জমা দিয়েছে ধ্রুভ,রাহি কসম দিয়েছে যেন সে যতদিন আছে উল্টাপাল্টা কাজে যেন সে আর জড়িত না থাকে..সবকিছু থেকে দূরে থাকতে বলেছে যেগুলো করা অন্যায়,বব আর স্টিভ হকিস্টিকের বারি মেরে মেরে এতোবেশি কাহিল করেছে যে আগামী ছয়মাস হাসপাতালের বেড থেকে উঠতে পারবে না,বিশেষ করে স্টিভকে..তার পুরুষাঙ্গের বারোটা বাজায় দিয়েছে ধ্রুভ।।

কোন একদিন সকালবেলা,

রাহি ঘুম থেকে উঠে চোখের সামনে মানুষটাকে দেখে অবাক হয়ে গেছে,চোখ ভর্তি জল তার।।

“বাবা তুমি?” রাহি বললো,রুবেল মুচকি হেসে মেয়েকে জড়িয়ে ধরলো।।

“তোর পাগলা জামাই নিয়ে এসেছে আমাকে!!তুই কি ভেবেছিস আমি তোর খোজ নি নাই এতোদিন??তুই যাওয়ার পর ওই আমার খোজ নিতো,বাজার করে দিতো!!এতোদিন লাগলো এখানে আসতে কারন ভিসা হয় নাই,ধ্রুভ ভিসা করে একেবারে আমাকে এখানে নিয়ে চলে আসছে!!আমি আসতাম না আর নাছোড়বান্দা!! তাই আসা,পুতুলকন্যার রাজ্যে তার বাবা হাজির!!” রুবেল কথাগুলো বললো,রাহি হাসছে সাথে চোখে পানি।।

“আপনি আসতে না আসতে আমার মীরাকে কাদালেন?আমি কিন্তু আপনাকে ছাড়বো না!” ধ্রুভ ঘরে নাক ফুলিয়ে বললো,ধ্রুভের কথা শুনে বাবা মেয়ে দুজনেই ঘর কাপিয়ে হাসলো।।

ঘনঘন নিঃশ্বাসে ছেয়ে আছে ঘর,পুরো ঘরে কাঠগোলাপের সুগন্ধে ভরপুর..আজ যে ধ্রুভ আর রাহির মিলনের রাত..রাহির দিকে এক এক পা করে আগাচ্ছে ধ্রুভ,রাহি পিছুচ্ছে..রাহি এক সময় দেয়াল ঠেকে গেলো,ধ্রুভ রাহির সামনে হাটু গেড়ে বসলো..রাহি আজকে কালো শাড়ি পরেছে,রাহির পেটের উপর থেকে আচল সরিয়ে ধ্রুভ রাহি উদাম পেটে নাভীর উপরে চুমু খাচ্ছে,ভিজিয়ে দিচ্ছে ধ্রুভ তার চুমুর রাহি ঠোট,গলা আর কাধ..রাহি আবেশে চোখ বন্ধ করে ধ্রুভের মাঝে নিজেকে বিলীন করে দিচ্ছে।।

“তুমি কাঠগোলাপের মতো পবিত্র মীরা!!আজ থেকে তোমার রূহ ও আমার!!” ধ্রুভ রাহির কানে ফিসফিস করে বলে রাহির ঠোট চেপে ধরে অন্য জগতে পা দিল,যেখানে শুধু খুশি থাকবে।।

সমাপ্ত🍁

গঠনমূলক মন্তব্য করুন,আমার লেখা এই প্রথম কোন গল্প এতো পর্বের..যতদিন নিজের ফোন না আসছে কোন গল্প লেখা হবে না,ভালো থাকবেন সবাই..ভুল ত্রুটি ক্ষমার নজরে দেখবেন,ভালোবাসা রইলো।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here