কাঠগোলাপ🍁
তৃধা মোহিনী(মৃন্ময়ী)
পর্ব চব্বিশ
🍁
অন্ধকারে চেয়ারে বসে আছে একটি লোক,চেয়ারের একটা লাঠির উপর বাম হাতের উপর ভর দিয়ে হাতের পাঁচ আঙ্গুল ঘুরাচ্ছে..তার সামনে আরেকটা হুডি পরা লোক আসলো,মুখ ভর্তি তার ভিলেনি হাসি।।
“প্ল্যান কতদূর?” অন্ধকারে বসে থাকা লোকটি জিজ্ঞেস করলো।।
“প্ল্যান সাকসেসফুল ড্যাড!!” ছেলেটি বিশ্রি হাসি দিয়ে বললো।।
“আহ!!দ্যাটস লাইক মাই সান!!” লোকটি খটখটে হাসি দিয়ে বললো।।
“ধ্রুভ মীরা নামক আমার রাহিকে আঘাত করে ফেলেছে!!” ছেলেটা চোখ মুখ শক্ত করে বললো।।
“আহ হা!!স্টিভ রিল্যাক্স!!ধ্রুভ আঘাত করলে রাহি নিজে থেকে তার কাছ থেকে সরে যাবে!!” লোকটি বললো।।
“আই নো ড্যাড!!কিন্তু আমি ওকে ওই ধ্রুভের সাথে সহ্য করতে পারছি না!!আমি ওদের ইন্টিমেট হতে দিব না এইজন্য এতোদিন ধরে ওদের বাড়িতে বিভিন্ন কিছু করে ওদের ইন্টিমেসি আটকিয়েছি!!” স্টিভ বললো।।
“আই আন্ডারস্ট্যান্ড দ্যাট!!যা করবা সাবধানে?নয় বছরের প্ল্যান এইভাবে নষ্ট হতে দিব না আমি তোমার একটু ভুলের কারনে!!’লোকটি বললো।।
” বাট ইউ প্রমিসড মি দ্যা ইউ আফটার ইউ সাকসেস,ইউ গিভ মি রাহি!!”স্টিভ জানালো।।
“আমার মনে আছে তোমাকে বারবার মনে করিয়ে দেয়া লাগবে না?আচ্ছা ওই টমি দ্যা বিচের নিউজ কি টিভিতে আসছিলো?” লোকটি জিজ্ঞেস করলো।।
“আসবে না আবার??তুমি তাকে যেভাবে মেরেছো,তাও আবার ধ্রুভের মতো রিচ লোকের পালিত কুকুরকে, নিউজ ত আসবেই!!!” স্টিভ জানালো।।
“তাকে মেরেছি বেশ করেছি!!সে আমার ছয়মাসের করা ফল নষ্ট করে দিয়েছে!!আমার পথে যে আসবে তাকে আমি সরিয়ে ফেলবো!!” লোকটি উত্তর দিলো।।
“বাট বাবা তুমি ধ্রুভকে কেন চুজ করলা তোমার এই কাজের জন্য??আর অন্যের আইডেন্টিটি বা নিয়ে কেন বেঁচে আছো??” স্টিভ জিজ্ঞেস করলো।।
“ইটস এ লং স্টোরি মাই সান!!” লোকটি বাকা হেসে বললো।।
“আজকে আমি শুনতে চাই!!তুমি আমাকে বলতে চেয়েও এতোদিন বলো নি!!তুমি আমাকে এতোদিন লুকিয়ে রেখেছো এইসব থেকে!!!আমি সব জানতে চাই!!” স্টিভ জানালো।।
“দ্যান লিসেন!!” লোকটি অন্ধকার থেকে বেরিয়ে,আলোর সামনে আসলো ওয়াইনের বোতল নিয়ে।।
“আই এম দ্যা গ্রেটেস্ট দ্যা মোস্ট পাওয়ারফুল পারসোন বব জ্যাকসন!!জাপানের ল্যাবে সেদিন আগুন লাগার পর,আমি সেখানে আটকে থেকে যাই..আর তারা আমাকে ফেলে রেখে চলে যায় সেখান থেকে…আগুনের কারনে আমার অর্ধেক চেহারা ঝলসে যায়,কিন্তু ওই ল্যাবে আমি আর স্মিথ ছাড়াও আরেকটা লোক ছিলো..তা হলো তোমার জন্মপিতা জেমস..সেদিন ল্যাবে জেমস কেমিক্যাল নিয়ে বাহিরে যেতে যেয়ে আগুনে আটকা পরেছিলো…সেদিন ল্যাবের আগুনে পুড়েছিলো জেমসের লাশ,কিন্তু ব্রেকিং নিউজে আসছিলো ববের লাশ..লাশ পুড়ে যাওয়ার কারনে কেও সেটা চিনতে পারে নি যে এইটা জেমসের লাশ..আমি সেদিন অর্ধ ঝলসে থাকা মুখ নিয়ে জাপান ত্যাগ করি..যখন আমি জাপান ছেড়ে কানাডায় চলে যাই,তখন এক বছরের মাথায় জানতে পারি..স্মিথ আর ন্যামিয়ান ও আছে এখানে,তারা বেশি খ্যাতি অর্জন করে ফেলেছিলো সেখানে..আমি প্রথমে তাদের কয়েকমাস ফলো করি,বিশেষ করে স্মিথ কে..তার প্রতিটা কাজ আমি অতি সূক্ষভাবে খেয়াল করেছি..হঠাৎ করে একদিন শুনলাম স্মিথের বদলির ব্যাপারটা, সে নাকি লন্ডনে শিফট হয়ে যাবে..সে যখন লন্ডন চলে যায়,আমি সেখানেও তার পিছু না..যখন দেখলাম দুই বছর ধরে একটা ছেলের চিকিৎসা করছে যে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত.. ছেলেটার ব্যাপারে খোজ নিতে আমার বেশ বেগ পেতে হয়েছিলো..ছেলেটা আর কেও নয় ধ্রুভই ছিলো..ধ্রুভের বাবা আশরাফুল সাহেব এটা সাসপেন্স রাখতে চেয়েছিলো যে ধ্রুভ যে অসুস্থ এটা যেন কোনভাবে লিক না হয়..যখন জানতে পারলাম,ধ্রুভ মানসিকভাবে অসুস্থ আর সেটা ছোটবেলা থেকে তার কারন হলো ছোটবেলায় খেলার ছলে ছোটভাইয়ের মারা যাওয়া তার মাথায় প্রচুর চাপ দিয়েছিলো..যে কারনে ছেলেটার নিউরন কাজ করা একদমই বন্ধ করে দিয়েছে,স্মিথ সেই ছেলের চিকিৎসা করবে..ধ্রুভকে ডিপ্রেশন থেকে বের করার জন্য স্মিথ কড়া ওষুধ দেয় যা তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে, পুরনো স্মৃতি মুছে দিয়ে..স্মিথ যখন প্রাথমিক কাজে ধ্রুভকে সুস্থ করতে না পারে এক বছর তখন মেডিসিনের আশ্রয় নেয়,যা মানসিক রোগীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে..ধ্রুভের এরকম অবস্থা আমার খেলার আরেকটা অংশ হয়ে গেলো,ধ্রুভের চিকিৎসা করতে করতে তার বাবা কারা গেলো তার কয়েক মাস পর তার মা..এইভাবে ভাই,বাবা-মা হারিয়ে আরো বেশি ডিপ্রেশনে চলে গিয়েছিলো..ধ্রুভের আপন বলতে কেউ নেই শুনে আমার জন্য সেটা প্লাস পয়েন্ট ছিলো,স্মিথ ছাড়া ধ্রুভ কাওকে বিশ্বাস করবে না সেটাও বুঝে গিয়েছিলাম..ধ্রুভ চিকিৎসা করার পর যখন দেখি ধ্রুভ ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছে তখন আমার জন্য সেটা দুঃসংবাদ ছিলো..তখন আমি আরেকটা চাল চাললাম আমার খেলায়”লোকটি এতোক্ষণ কথাগুলো বললো।।
“দ্যান হোয়াট হ্যাভ ইউ ডান ড্যাড!!” স্টিভ উদগ্রীব হয়ে জিজ্ঞেস করলো।।
“স্মিথ একদিন রাতেরবেলা বাড়ি থেকে বের হয়েছে ধ্রুভের সাথে দেখা করতে,সেদিন কেনসিংটনে সারাক্ষণ ঝুমঝুম বৃষ্টি হয়েছে..স্মিথ ড্রাইভ করে আসছিলো মাঝরাস্তাতে দেখে একজন হুডি পরে লোক দাড়িয়ে আছে, ও গাড়ি থেকে জিজ্ঞেস করছে কে আমি??উত্তর যখন পাচ্ছে না,তখন গাড়ি থেকে নেমে আসলে যখন আমার সামনে তখন সে জিজ্ঞেস করছে,
” এইভাবে মাঝরাস্তায় দাড়িয়ে তামাশা করার কোন মানে নেয়!!সরুন সামনে থেকে!”স্মিথ বলছে।।
আমি যখন আমার মুখটা উঠালাম তখন সেটা দেখে স্মিথের চোখ বিস্ময়ে বড় বড় হয়ে গেছে।।
“বব তুমি?!” স্মিথ জিজ্ঞেস করার সাথে,আমি ইঞ্জেকশন তার ঘাড়ে পুশ করে তার জ্ঞান
সেদিন আমি স্মিথের ফোন থেকে ধ্রুভের সেক্রেটারীকে মেসেজ করে দি যে কিছু পারসোনাল সমস্যার জন্য সে লন্ডন ত্যাগ করে,এক মাসের মধ্যে ফিরে আসবে।।
সেদিন আমি স্মিথকে নিয়ে চলে আসি আমার গোডাউনে, তাকে সেখানে বন্দি করে রাখি..তারপর আমার আসল কাজ শুরু করি,বব থেকে নিজেকে স্মিথে ট্রান্সফার করা..সার্জারী করে আমি হুবহু স্মিথে রুপান্তর হয়ে যাই,এক মাসেরর মধ্যে নিজেকে চেঞ্জ করে বব থেকে স্মিথ হলাম হুবহু কিন্তু প্লাস্টিক সার্জারীর কারনে সেটা সারতে আরো বেশকিছুদিন সময় লাগবে কিন্তু আমি রিস্ক নিতে চাই নি,এক মাসের আগে লন্ডনে ব্যাক করি..লন্ডম যেয়ে প্রথমে ধ্রুভের সাথে মিট করি আগে,ধ্রুভের সাথে মিট করার পর যখন বুঝলাম সেই কিছুই ধরতে পারে নি তখন মনে মনে জয়ের খুশি পালন করলাম..আমি আমার এখন নেক্সট স্টেপ নেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম তা হলো ধ্রুভের মাইন্ড কন্ট্রোল করা..আমার এক্সপেরিমেন্টে এমন কাওকে দরকার ছিলো যে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত থাকবে আর ধ্রুভ ও তাই ছিলো যদিও তখন স্মিথের মেডিসিনের কারনে কিছুটা সুস্থ ছিলো..মেডিসিন আমার তৈরি করাই ছিলো,কয়েক সপ্তাহ পর ধ্রুভের মেডিসিন নেয়ার ডেট সেখানে আমি এই ইঞ্জেকশন পুশ করবো..ঠিক তাই করলাম,মেডিসিন নেয়ার ডেটে আমি ইঞ্জেকশন পুশ করলাম তার শরীরের..ইঞ্জেকশন দেয়ার সাথে ধ্রুভের শরীর কেমন ঝা ঝা করে উঠলো,দুই তিনদিন মতো বেহুশ হয়ে থাকলো..তার এই দুই তিনদিন বেহুশ হওয়ার সুযোগটাও আমি নিলাম..সে বেহুশ অবস্থায় তার সাথে মাইন্ড কানেক্ট করলাম তা হলো স্বপ্নের সেই নারী..তাকে তার মাইন্ডে এমন ভাবে সেটাপ দিব যে হ্যা স্বপ্নে সেই নারীটা আসছে কিন্তু এর পেছনের কারন যে আমি কখনোই জানতে পারবে না..ভিজুয়েলশনে তাকে আমি শো করাবো যে এই মেয়ের জন্য সে পাগল,তার প্রতি সে দুর্বল হয়ে যাবে আর সেটা হয়েছেও..এরপর থেকে যখনি সে বেহুশ হতো ইঞ্জেকশন নিয়ে ততবারই আমি এই কাজ করতাম তবে এখানে যে আমার প্রথম করা কাজটা সত্যি হয়ে যাবে এটা আমার ধারনার বাহিরে ছিলো..সেদিন তার মাইন্ড কানেক্ট করে আমি দেখিয়েছিলেন এক নারীকে তার স্বপ্নে কিন্তু সেদিনের পর থেকে প্রতিদিন ওই নারীকে সে স্বপ্নে দেখতো যার নাম দিয়েছে সে মীরা..আমার সাথে সব কথা শেয়ার করতো কিন্তু আমি বুঝে যেতাম মেয়েটার উপর সে সম্পূর্ণভাবে ততদিনে দুর্বল হয়ে গেছে..সবসময় সে মীরাকে খুজতো,মীরা তার পাগলামি ভালোবাসার কারন..তার মীরা শুধু তার হবে অন্যকারো না,তন্ন তন্ন হয়ে মীরাকে খুজতো..এইটাতে সে হিংস্র হয়ে গেছিলো যেমন কোন আওয়াজ তার কানে গেলে কেমন ক্ষেপে উঠতো,কোন বেগানা নারী তার কাছে ঘেষলে তার মাথায় রক্ত উঠতো..কেও তার উপর এট্যাক করলে তার উপর বিশ্রিভাবে সে এট্যাক করতো..যখন থেকে সে মীরাকে তার স্বপ্নে দেখেছে তার পাঁচ বছর পর সে মীরার ছবি আকঁতে সক্ষম হয়,আমাকে দেখতে দেয় নি সে কিন্তু মেডিসিন দেয়ার ফলে ওইদিন বেহুশ থাকার কারনে আমি ওর রুমে যেয়ে সেই নারীর ছবি দেখি..এই নারীর এতো সৌন্দর্য দেখে আমি অবাক হয়েছিলাম,তারপর খুব একটা পাত্তা দেয় নি কারন আমি ভেবেছি এটা আমার করা ইমেজিনেশন..কিন্তু সাত বছর এইভাবে চলার পর যখন হুট করে বাংলাদেশ যেয়ে ধ্রুভ ওই নারীর সাক্ষাৎ পায়,তার পাগলামো বেড়ে যায় তখন তার রিলেটিভ আমাকে ডেকে পাঠায়, তার মামা আমাকে চিনতো সে সুবাদে কন্টাক্ট করে ডাকে..সেখানে যে তার কাজিনের ফোন ধ্রুভের মীরা ছবি থেকে আমি আকাশ থেকে পরেছিলাম!!আর ভেবেছিলাম এতোটা হুবহু মিল কিভাবে??আমি তাৎক্ষণিকভাবে সেখান থেকে চলে আসি তাকে নিয়ে..কিন্তু পরক্ষনে সে আবার বাংলাদেশ চলে যায় কয়েক সপ্তাহ পর,আমি মেডিসিন এইটা করার জন্য জাপান চলে যাই এইজন্য সে এর মধ্যে ওই মেয়েটাকে বিয়ে করে লন্ডন আনে!!আর তোমার ওই মডেল ক্যাথরিনের কথা মনে আছে যে ধ্রুভের জন্য পাগল ছিল!আমি সময়মতো তখন গেলে সেদিন মেরেই ফেলতো তাকে সে!!আর ছেলেটাকে কি মারটায় না মারলো,হান্ড্রেড পিস!!কিন্তু তার থেকেও বিষ মাল আমি,এই বর্ব দ্যা গ্রেট কখনো বেঁচে আছে কখনো কেও জানতে পারবে না!!থাকবে শুধু রহস্য আর রহস্যা!!”বলেই লোকটি অর্থাৎ বব খটখট করে হাসতে লাগলো।।
চলবে🍁
গঠনমূলক মন্তব্য করুন,আপনাদের মন্তব্যের উপর আমার পরের পর্ব নির্ভর করছে..রহস্য জটলা খুলছে,কেমন লাগছে জানাবেন..ভুল ত্রুটি ক্ষমার নজরে দেখবেন।।