কাঠগোলাপ🍁
তৃধা মোহিনী(মৃন্ময়ী)
পর্ব সাত
🍁
রাহি গায়ে হলুদ আর বিয়ে ঠিকঠাক এটেন্ড করতে পারে নি.. বেশি মানুষজন পছন্দ না তার..কিন্তু এই কয়েকদিনে রাশনার সাথে তার ভালোভাবে ভাব জমাতে পেরেছে..রাশনার সাথে ফোন নাম্বার ও ওদল বদল করেছে।।
“রাশনা এদিকে শুন” প্রান্ত চিল্লিয়ে ডাকলো।।
“কি হয়েছে এমন গরুর মতো চিল্লাও কেন??” প্রান্তকে জিজ্ঞেস করলো রাশনা ভেঙচি দিয়া।।
“আমাকে ষাড় বললি??তোর সাহস ত কম না পুকুর পাড়ের পেয়ারা গাছের পেত্নি??” প্রান্ত তেড়ে এসে বললো রাশনাকে,প্রান্তর এমন তেড়ে আসা দেখে রাশনা ভয়ে রাহির পিছনে লুকিয়ে গেলো।।
“বের হো ওখান থেকে??তোর সাহস কম না ত??তোর দাঁত ভেঙ্গে ওই পুকুরের মাছের খাবারের জোগান দিব আমি” প্রান্ত বললো।।
“আপু বাঁচাও নইত এই খবিশ লোক আজকে আমার সুন্দর দাঁত গুলো নিয়ে তাই করে নিয়ে যাবে ” রাশনা রাহিকে জাপটে ধরে বললো।।
রাহি এদের দুজনের মাঝে নিজেকে এলিয়েন ভাবছে আবার ভালোও লাগছে এমন খুনশুটিময় ভালোবাসা দেখে..কয়জন পায় মনের মতোন মানুষকে নিজের জীবনসঙ্গী রুপে পাওয়ার।।
“কার পিছে লুকাচ্ছিস??যে নিজের শোক লুকায়??যে নিজের কষ্টটুকু প্রকাশ করতে ভয় পায়??যে তারে ছেড়ে তার বান্ধবীর সাথে লটরপটর করে তাকে ভেবে নিজের ক্ষতি করছে যে মেয়ে তার কাছে যাস কেন, এদিকে আয় তুই?তোর খবর আছে?” প্রান্ত বললো।।
প্রান্তের এমন কথায় রাহির ভিতরটা নাড়া দিলেও মুচকি হেসে সেখান থেকে প্রস্থান করলো সে।।
“সব জেনে থাকার পরেও কেনো তুমি আপুর সাথে ওমন মিসবিহেভিয়ার করো??” রাশনা জিজ্ঞেস করলো।।
“ওর বুঝা উচিত,কখনো কারো জন্য জীবন থেমে থাকে না??যাকে ভেবে সে শোক পালন করছে সে তারই বান্ধবীকে নিয়ে দিনের পর দিন বিছানায় সুখ পালন করছে!!তার দেখায় দেয়া উচিত যে সামিরের জন্য রাহি যোগ্য না বরং রাহির নখের যোগ্যও না সামির” প্রান্ত চোখমুখ শক্ত করে বলে উঠলো।।
প্রান্ত তার কথা শেষে ওই জায়গা নিঃশব্দে ত্যাগ করলো..রাশনাও সেই সাথে দীর্ঘনিশ্বাস ফেললো।।
রাশনা শুরু থেকে সবকিছু জানে..প্রান্ত তাকে বলেছে সেই যখন থেকে রাহি তাদের বাসার নিচে ভাড়াটিয়া হিসেবে আসে..প্রান্ত রাহির সমস্ত কিছু জানে কারন রাহির যে বান্ধবী নামে বিষধর প্রানীটি তার ফুফাতো বোন মিথিলা..মিথিলা তার সাথে সম্পর্কে যাওয়ার অনেক চেষ্টা করেছিলো কিন্তু পারে নি..একবার মিথিলা প্রান্তের বাড়িতে এসে তার সাথে তার রুমে ফিজিক্যাল হওয়ার ট্রাই করেছিলো তখন প্রান্ত কষিয়ে মিথিলাকে চড় মেরেছিলো..কিন্তু মিথিলা বাইরে এসে বলে প্রান্তই তার সাথে ফিজিক্যালি এটাচ হতে চেয়েছিলো,কিন্তু রেহেনা বেগম ছেলের সাথে ছিলেন বলে মিথিলাকে তিনিও থাপ্পড় মেরে বাড়ি থেকে বের করে দেন..সেই থেকে তাদের সাথে প্রান্তদের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়..প্রান্তের ফুফু মাঝেমধ্যে লুকিয়ে তার মায়ের সাথে কথা বলে কিন্তু মিথিলার বাবার অহংকার বেশি থাকার কারনে তিনি জানিয়েছিলেন যদি ওই বাড়ির কারোর সাথে উনি সম্পর্ক রাখেন তাহলে প্রান্তের ফুফুকে তিনি তালাক দিবেন..নিজের সংসার বাঁচাতে গিয়ে তিনি নিজের ভাইয়ের বউয়ের সাথে লুকিয়ে কথা বলেন।।
ফ্ল্যাশব্যাক,
এক বছর আগে প্রান্তর বর্তমান কোম্পানিতে জয়েন দেয়ার আগে বিভিন্ন জায়গাতে ইন্টারভিউ দিতে গেছিলো..সেই সূত্রে রাহির ভার্সিটিতে প্রান্ত প্রফেসরের সিভি জমা দিতে গেছিলো..রাহির সাথে কখনোই প্রান্ত সোজামুখে কথা বলে নি ছোট থেকেই,রাহিও আগে থেকে চুপ চাপ স্বভাবের থাকলেও সহ্যের সীমা পার হলে প্রান্তকে উল্টা বাঁশ মেরে দেয়..যখন প্রান্ত সিভি জমা দিয়ে বের হয়ে আসে প্রিন্সিপালের রুম থেকে তখন একটা ক্লাসরুমের পাশ দিয়ে ক্রশ করে আসার সময় দেখে রাহিকে,যেখানে রাহি দাড়িয়ে চোখ দিয়ে জল ফেলছে..রাহির এমন ফেইস দেখে প্রান্ত আরেকটু এগিয়ে গিয়ে দেখতে পেলো দুইজন ছেলে মেয়ে একে অপরের সাথে লেপ্টে বিশ্রিভাবে চুমু খাচ্ছে,এমন কিছু দৃশ্য দেখে প্রান্তের চোখ কপালে উঠে গেছে..মিথিলা যখন তার মুখ সরালো সামিরের কাছ থেকে,সামনে আসলো তখন প্রান্তের অবাকের চরম পর্যায়ে গেছে যে মিথিলা এতোটা জঘন্য হয়ে গেছে??আরেকটু যখন এগিয়ে গেলো তখন দেখলো সামির নামে ছেলেটা রাহিকে বিশ্রি হেসে উল্টাপাল্টা কিছু বলছে(প্রান্ত জানতো না তখন ছেলেটার সামির,বুঝার অর্থে দেয়া),ছেলেটা আউল ফাউল বকেই যাচ্ছে কিন্তু রাহি কিছু বলছে না দেখে প্রান্ত এগিয়ে আসবে ঝাড়ার জন্য তখুনি মিথিলার আওয়াজ শুনলো..মিথিলার বলা প্রত্যেকটা কথা তার অবাকের চরম পর্যায়ে চলে গেলেও,রাহি নিশ্চুপ থাকতে দেখে তাকে রাগে শেষ পর্যায়ে চলে গেছে সে।।
“অবুকের মতো চেয়ে না থেকে সেদিন যদি সে মুখ তুলে জবাব দিয়ে কয়েকটা কষিয়ে থাপ্পড় দিতো আজ এই কাল দেমখা লাগতো না তার,সে তামাশা দেখে চোখের জল ফেলছিলো” প্রান্তের ধারনা এটা,এইজন্য তার রাহির উপরে রাগ..সেদিন যদি দুজনকে ইচ্ছামতো ধুয়ে দিতো আজ এতো আকাল আসতো না।।
বর্তমান,
রাশনা রামিশার সাথে এইসব বিষয়ে আলোচনা করছিলো..রামিশাও আফসোস করছে যে রাহির সাথে ছোট বয়সে কি ঝড়টায় না গেছে..রামিশার বিয়ে খুব শান্তিমতো নির্বিঘ্নে কেটে গেলো..বিয়ে শেষে রেহেনা,প্রান্ত আর রাহিও বাড়ির পথে রওনা দিলো..সিদ্ধান্ত নিলো রাশনার এইচ.এস.সি এক্সামের আগ দিয়ে আকদ করিয়ে রাখা হবে..প্রান্ত যখনি এইভাবে বিদায় নেয় তখনি রাশনা কাদে,আজও ব্যাতিক্রম নয়..রাশনা যখন কাদতে আরম্ভ করলো তখন প্রান্ত তার ঠোট দিয়ে নিজের ঠোট আবদ্ধ করে শুষে নিতে লাগলো..তাদের রিলেশনে আজ প্রথম কিস..জড়িয়ে ধরেছিলো সেও প্রান্তকে।।
“তোর এরকম ভ্যা কান্দা বোরিং আর পুরোনো হয়ে গেছে,তাই নিউ টেস্ট দিলাম..আশা করি শুধু তুই না আমিও যেন এই বিচ্ছেদ আকদ হওয়ার আগ পর্যন্ত এই স্বাদ মনে রাখতে পারি” প্রান্ত রাশনাকে ছেড়ে তার ঠোটে আবার টুপ করে কামড় দিয়ে বেরিয়ে যায়,রাশনাও লজ্জায় লাল নীল হয়ে যায়।।
লন্ডন,
“ইউ ডিড নট ডু দ্যা রাইট থিং মি.স্মিথ!!ইউ নো দ্যাট, আই ফাউন্ড মাই মীরা দেয়ার??দ্যান হাউ ডেয়ার ইউ টু কিপ ব্রিংগিং মি হেয়ার” ধ্রুভ চিল্লিয়ে তার ডাক্তারের উপর ক্ষেপেছে,সেদিন ডাক্তার স্মিথ এস ইঞ্জেকশন দিয়ে ধ্রুভকে নিয়ে গেছে..কিন্তু তিনি এখনো এইটা বুঝতে পারছেন না স্বপ্নে থাকা নারীর সাথে কারো হুবহু কিভাবে মিল হয়।।
ধ্রুভের মামা উনি ডাক্তার স্মিথ কে চিনেন,যখন ধ্রুভের পাগলামির কথা তিনি ফোন করে জানালেন তখুনি তিনি বিডিতে আসেন..কারন,তিনি একমাত্র দেখেছেন ধ্রুভ কেমন হয়ে যায় রাগলে..ধ্রুভ অনেক ভালো ছবি আকে,এতো সুন্দর আকে মনে হবে ছবির মাধ্যমে বাস্তবতা ঢেলে দিয়েছে..যখন সে স্বপ্নে অদৃশ্য নারী মীরা নামে যাকে সে দিয়েছে তাকে দেখে তখন ছবি আকার চেষ্টা করেছিলো কিন্তু সে বরাবরই ব্যর্থ হয়েছিলো,এমন কখনো তার সময় গেছে যে সাতদিন সে ছবি আকতে যেয়ে লাগিয়েছে সময়..ঘরে তার খাওয়া,গোসল..থাকে ত সে প্যালেসের মতো বাড়িতে, কোনকিছুর অভাব নেয় তার..তারপরেও সে সামান্য এক নারীর পিছনে কিভাবে ছুটে।।
ধ্রুভ যখন ছবি আকঁতে সক্ষম হলো দুই বছর আগে তখন একটাই ছবি আকতে পেরেছিলো আর পারে নি..ওই ছবিটায় সে বড় করে বাধিয়ে রেখেছে..যেখানে মেয়েটার লম্বা চুল ছেড়ে আছে,মাথায় তার কাঠগোলাপ ফুলের ক্রাউন,পরনে সাদা জামদানী শাড়ি..চোখে মোটা করে কাজল..বাম গালে পক্সের দাগের গর্ত আর ডান গালে কালো কুচকুচে তিল..গেজা দুইটা দাঁত বেরিয়ে আছে আর খিলখিল করে হাসছে..এমন ছবিতে তার রুপ যেন উপচে পরেছে..স্মিথকে ছবি দেখাতে চায় না ধ্রুভ,সে চায় না তার মীরাকে সে ছাড়া অন্য কেও দেখুক…একদিন ধ্রুভর যখনি পাগলামি বেড়ে যাচ্ছিলো তখন স্মিথ এসে তার শরীরের ইঞ্জেকশন পুশ করে, ঘুমের ঘোরে তাকে পাঠায়..ধ্রুভের রুমে কাওকে আসা নিষেধ কিন্তু সেদিন স্মিথ অনেক বুদ্ধি করে ধ্রুভের রুমে যেয়ে সেই ছবি দেখেছিলেন..অবাক হইছেন এই ভেবে বিদেশে থাকা ছেলে বাঙালী নারীর ছবি কিভাবে আকলো তাও আবার সামান্য স্বপ্নে আসা মেয়ে..তিনি আরও বেশি ঝটকা খেয়েছেন যখন তিনি রাহির ছবি দেখেছিলেন..ধ্রুভের পাগলাটে স্বভাবের জন্য তিনি দৌড়ে বিডিতে যেয়ে যখন শুনলো মীরার জন্য ধ্রুভের পাগলামি আবার নাড়াচাড়া দিয়ে উঠেছে তখন উনি জিজ্ঞেস করেছিলেন কাকে দেখে এরকম তার হাল??তখন রাশনা মেহেদী ফাংশনে তোলা ছবি দেখিয়েছিলো..রাহির ছবি দেখে তিনি ৪৪০ ঝটকা খেয়েছিলেন,কাওকে কিছু না জানিয়ে সোজা ধ্রুভকে সেন্সলেস করে লন্ডন ব্যাক করেন..তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে এখনো স্বপ্নে থাকা মানুষের সাথে এতো মিল পায় কিভাবে সে!!
“লিসেন ধ্রুভ!!তোমার দেখা স্বপ্নের নারীটির সাথে এই মেয়ের মিল নেয়,আমি তাকে দেখেছিই!!” স্মিথ ধ্রুভকে তটস্থ করে বললো।।
“আর ইউ জোকিং টু মি?” ধ্রুভ বলেই স্মিথের চেম্বারে থাকা কাচের টেবিল এক লাথিতে ভেঙ্গে ফেললো।।
“আমি আমার মীরাকে চিনতে ভুল করবো??কখনো না!!যার জন্য আমি সাতটা বছর আমার আহার নিদ্রা সব ত্যাগ করেছি তাকে চিনতে ভুল করবো??” ধ্রুভ আরও জোরে চিল্লিয়ে বললো।।
“রিল্যাক্স ধ্রুভ!!” স্মিথ বললো।।
“আমার ওকে চাই মানে চাই!!যেভাবে হোক চাই!!হয় জীবিত ভাবে আসবে আর না আসতে চাইলে মৃতভাবে!!সে আমার!!মাই মীরা অনলি বিলংস টু দিস আশরিক আলফাজ ধ্রুভ!!” এইটা বলে ঠোটের কোনে বাকা হাসি দিয়ে,জ্যাকেট হাতে নিয়ে বেরিয়ে পরলো ধ্রুভ।।
চলবে🍁
গঠনমূলক কমেন্ট করবেন প্লিজ!!রহস্য এখনো অনেক বাকি আছে,কেবল ত শুরু সবকিছু!!নাইস,নেক্সট এইসব সত্যি না বললে অনেক খুশি হবো!!নেক্সট ওয়ার্ড ইজ সো ইরিটেটিং!!আর হ্যা যাদের পছন্দ আমাকে বা গল্পকে ব্লক করতে পারেন!!বাট কেও কপি বললে মেজাজ তুঙ্গকে তুলবেন না🙂যারা পাশে ছিলেন তাদের জন্য অনেক ভালোবাসা..ভুল ত্রুটি ক্ষমার নজরে দেখবেন।।