#অদ্ভুত_প্রেমবিলাস
#লেখিকাঃ সারজীন ইসলাম
|পর্ব-১৬|
মিতা বেগম চায়ের কাপে চুমুক দেয়। সামনে তার ছোট ফুপু বসে আছে। ছোট ফুপুর বাড়িতে এসেছে পর থেকে তাদের আতিথিয়তায় ত্রুটি রাখছে না কেউ। প্রথমে অভিমান করে থাকলেও পরে অভিমান ভেঙে যায় মিতা বেগমের ছোট ফুপুর। ইভান কে নিয়ে খুশির অন্ত নেই তাদের মাঝে। শাহেদা বানুর তিন ছেলে এক মেয়ে। সবারই বিয়েথা করে ভরা সংসার। স্বামী মারা গেছে সে অনেক বছর হলো। তার বড় ছেলে আফজাল। মেজো ছেলে জামাল। ছোট ছেলে জলিল। তার মেয়ে কে বিয়ে দিয়েছে দুই গ্ৰাম পড়ে। সন্ধ্যার পরে শাহেদা তার ঘরে বসে মিতা বেগমের হালচাল জিজ্ঞেস করে। শাহেদা বানু পান চিবিয়ে খেতে খেতে বলল,
‘ হ্যাঁ রে মিতা তোর আইতে কোন অসুবিধা হয় নাই তো! সেই কবে না কবে আইছিলি গ্রামে, আর এহন আইছিস আবার।’
মিতা বেগম চায়ের কাপে শেষ চুমুক দিয়ে বলল,
‘ তা তো একটু হয়েছে। কিন্তু মাঝপথে তোমাদের গ্রামের একটা মেয়ে আমাদের সাহায্য করে তাই বেশি সমস্যা হয়নি আমাদের তোমাদের বাড়ি চিনতে।’
শাহেদা বানু চোখ ছোট ছোট করে বলল,
‘ কোন মাইয়াই আবার তোগো সাহায্য করছে? নাম কি তার? বাড়ি কই?’
মিতা বেগম চায়ের কাপটা বিছানার উপর রেখে বলল,
‘ বাড়ি কোথায় তা তো আমি চিনি না কিন্তু বলেছে তোমাদের বাড়ি থেকে ছয়টা বাড়ি পর ওদের বাড়ি। আর মেয়েটার নাম হল ধারা। ভারী মিষ্টি দেখতে মেয়েটাকে। কি মায়া মায়া মুখ তার।’
শাহেদা বানু পান খাওয়া ঠোঁটে হালকা হেসে বলল,
‘ ও ধারা, ধারার কথা বলছিস তুই? মাইয়া ডা খুব ভালো। কিন্তু ওর কপাল টাই খারাপ।’
মিতা বেগম ভ্রু কুঁচকে বলল,
‘ কেনো? কপাল খারাপ কেনো?’
শাহেদা বানু ধীর গলায় বলল,
‘ কপাল খারাপ না তো কী? না হলে কী আর বিয়ের আসর থেকে কখনো বরযাত্রী তুলে নিয়ে যায়।’
মিতা বেগম ছোট করে বলল,
‘ তুমি কি বলছো আমি কিছুই তো বুঝতে পারছি না। কার বিয়ে ভেঙ্গেছে? আর কার বরযাত্রী তুলে নিয়ে গেছে।’
শাহেদা বানু মিতা বেগমের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ ও তুই তো আবার এসব কাহিনী কিছু জানিস না। আসলে মাইয়াটার বিয়ে ঠিক হয়েছিল। ওর হাতে কি এখানে সমস্যা আছে এই কথা জানলে বিয়ের আসর থেইকা বর তুলে নিয়ে যায়। তাই তো কইতাছি মাইয়াডার কপাল মেলা খারাপ।’
মিতা বেগম কৌতুহলী চোখে তাকিয়ে বলল,
‘ কী সমস্যা হয়েছে হাতে যার জন্য বিয়ে ভেঙ্গে গেছে?’
শাহেদা বানু চিন্তা করতে করতে বলল,
‘ ওর দাদা যে বছর মারা গেছে। সে বছর ওর হাতে সমস্যা টা দেখা দেয়। ধারার মুখে শুনেছি ওর হাতে না কী কোন পোকা লেগে ওর হাতের অবস্থা এমন হয়েছে।’
মিতা বেগম মৃদু স্বরে বলল,
‘ তুমি কাল ওর সঙ্গে আমাকে একবার দেখা করিয়ে দিবে।’
শাহেদ বানু চোখ ছোট ছোট করে বলল,
‘ কেনো ওর সাথে দেখা করে কী করবি?’
মিতা বেগম ছোট করে বলল,
‘ ওর সাথে কিছুক্ষণ কথা বলবো, এই আর কী?
শাহেদা বানু ছোট করে বলল,
‘ সে দেখা করিয়ে দেওয়া যাবে।’
মিতা বেগম এইটুকু বলে উঠে দাঁড়ায়। শাহেদ বানুর দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ আচ্ছা তুমি বসো, আমি দেখে আসি বাবু কি করছে। এদিকের তো কিছুই চেনে না।’
এইটুকু বলে মিতা বেগম রুম থেকে বেরিয়ে যায়। রুম থেকে বেরিয়ে দেখে উঠোনের এক কোণে চেহারার টুল পেতে গল্প করছে সবাই। অল্প সময়ের মধ্যে সকলের মধ্যমণি হয়ে উঠেছে ইভান। তাকে নিয়েই রকমারি আড্ডা। মিতা বেগম চোখের ইশারায় ইভানকে নিজের কাছে ডাকে। ইভান বুঝতে পেরেছ পারে মায়ের কাছে যায়। মিতা বেগম মৃদু স্বরে বলল,
‘ তা কেমন লাগছে তোর গ্ৰামের পরিবেশ।’
ইভান হেসে দিয়ে বলল,
‘ খুব খুব ভালো লাগছে। তোমাকে বলে বুঝাতে পারবো না।’
মিতা বেগম মৃদু হেসে ইভানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,
‘ তুই তাহলে ওদের সাথে বসে গল্প কর। আমি বাড়ির ভিতরে আছি। আর একা একা কোথাও যাবি না। ঘুরতে হলে কাল সকালে আফজালের ছোট ছেলে, কী জেনো নামটা ওর…. যাইহোক ওকে সাথে নিয়ে না হয় ঘুরতে বের হোস।’
ইভান মৃদু স্বরে বলল,
‘ আম্মু তুমি চিন্তা করছো কেন? আমি কি এখনো সেই ছোট্ট বাবু আছি নাকি! আমিতো এখন বড় হয়েছি, একা একা কত দেশ দেশান্তর ঘুরে বেড়াই।’
মিতা বেগম হালকা গলায় বলল,
‘ তুমি তো এখন অনেক বড় হয়ে গেছো, তাইতো তোমাকে এখনো আমি বাবু বলে ডাকি।’
ইভান হাসে। মিতা বেগমর কথা শুনে। ইভান জানে সে যতই বড় হয়ে যাক না কেন তার মায়ের কাছে সারা জীবন সেই ছোট্টবাবু হয়ে থাকবে। ছেলের ঠোঁটে হাসি দেখে মিতা বেগম মৃদু হেসে বাড়ির ভিতরে দিকে চলে যায়।
ইভান খোলা আকাশের দিকে তাকায়। শীতের মেঘমুক্ত আকাশ। তারা মিটমিট করে জ্বলছে। চাঁদ টা এখনও নিজের রুপে পূর্ণতা পায়নি। হয়তো দুই দিন পরেই নিজের রূপ ধারণ করবে। তখন পূর্ণিমার আলোতে আলোকিত করবে এই পৃথিবীকে। ইভান কে থাকার জন্য যে ঘর টা বরাদ্দ করা হয়েছে ব্যস্ত পায় চলে যায় সেই ঘরে। ইভান নিজের জিনিসপত্র ঘাটাঘাটি করে, ক্যামেরাটা হাতে নিয়ে বেরিয়ে আসে ঘর থেকে। এমন সুন্দর দৃশ্য ইভান ছবি না তুলে থাকতে পারবে না। ইভান ছবি তুলে সোশ্যাল মিডিয়া আপলোড করতে ভীষণ ভালোবাসে। রাতের সৌন্দর্য ক্যামেরাবন্দি করে ইভান চলে যায় আড্ডা দিতে।
সকাল বেলার আলো ফোটার পর পরই মিতা বেগম আর তার ছোট ফুপু বের হয় গ্রামের মেঠোপথে হাঁটাহাঁটি করতে। গ্রামের লোকজন খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে, তার উপরে যদি হয় শীতের সকাল তাহলে তো কথাই নেই। চলার পথে কয়েকজনের সাথে দেখা হয়েছে মিতা বেগম আর শাহেদা বানুর। মিতা বেগম এই গ্রামে বেশ কয়েকবার এসেছে, তাই তাকে কমবেশি সবাই চেনে। মিতা বেগম হাসিমুখে সবার ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করেছে। বেশ খানিকক্ষণ হাঁটাহাঁটি করার পরে বাড়ি ফিরে তারা দুইজনে। তাদের দুজনকে বাড়ি ফিরতে দেখে শাহেদা বানুর বড় ছেলের বউ এসে তাদের সামনে দাঁড়ায়। শাহেদা বানু তার বড় ছেলের বউয়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ বড় বৌমা বাড়ীর ছেলেপুলেরা এখনো ঘুম থেকে ওঠেনি?’
তিনি ধীর গলায় বলল,
‘ না মা এখনো ঘুম থেকে কেউ ওঠেনি। আসলে কাল অনেক রাত পর্যন্ত ওরা জেগে গল্প করেছে। ইভান কে পেয়ে যেনো ওরা হাতে চাঁদ পাওয়ার মতো অবস্থা।’
শাহেদা বানু মৃদু স্বরে বলল,
‘ ঠিক আছে, এহন যাও সবাইরে ঘুম থেইকা তোলো। বেলা হয়ে যাইতেছে, সকালে খাবার খাইবে কখন সবাই।’
শাহেদা বানু বড় ছেলের বউ ছোট করে বলল,
‘ আচ্ছা মা, আমি এখনই সবাইকে ডেকে তুলে দিচ্ছি।’
এইটুকু বলে তিনি ব্যস্ত পায়ে সেখান থেকে প্রস্থান করেন।
সকালবেলা খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ করে ইভান ক্যামেরা হাতে নিয়ে হাজির হয় মিতা বেগমের সামনে। মিতা বেগম তখন রান্নাঘরে বেতের মোড়া পেতে বাড়ির বউদের সাথে কথা বলছিল। ইভান মিতা বেগমের পিছনে দাঁড়িয়ে ছোট করে বলল,
‘ আম্মু।’
পিছন ফিরে তাকায় মিতা বেগম। সেজেগুজে একদম বাবু হয়ে এসেছে ইভান। মিতা বেগম ইভান কে পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার দেখে ধীর গলায় বলল,
‘ হ্যাঁ বল, কোথাও যাচ্ছিস তুই এখন?’
ইভান বাচ্চাদের মত মাথা দোলায়। তা দেখে মিতা বেগম মৃদু হেসে দিয়ে বলল,
‘ শোন ঘুরতে যাচ্ছিস ভালো কথা। দূরে কোথাও যাবি না। আশেপাশে ঘুরে দেখবি। আর বাড়ির কাউকে সাথে নিয়ে যাস।’
ইভান হাসে। তার মেয়ের এমন ধারা কথা শুনে। ইভান মাথা দুলিয়ে তার কথার সম্মতি জানিয়ে পা বাড়ায় বাড়ির বাইরের দিকে।
চলবে…..
ইনশাল্লাহ বিকেল বেলা আর এক পর্ব গল্প পোস্ট করা হবে।