অদ্ভুত প্রেমবিলাস পর্ব-৫৯

0
696

#অদ্ভুত_প্রেমবিলাস
#লেখিকাঃ সারজীন ইসলাম

|পর্ব-৫৯|

রাতে খাওয়া দাওয়ার পরে যে যার রুমে চলে যায়। কিছুক্ষণ আগে সবাই একসঙ্গে বসার ঘরের সোফা সরিয়ে বিশাল এক মাদুর পেতে সেখানে খেতে বসেছিল। ইহিতা ধারার আব্বাজান আর চাচা জানের মাঝে বসে খেয়েছে। তারা দুজনে মিলে খাইয়ে দিয়েছে ইহিতা কে। উল্লাসিত একটা মুহূর্ত পার করেছে খাওয়ার সময় সবাই। তিন রমণী বসে আছে বসার ঘরে। খোশমেজাজে গল্প করছে তিনজনে। বাড়ির দুই বউ কতগুলো দিন পরে তাদের ননদ কে কাছে পেয়েছে। কতকথা জমানো আছে তাদের ভিতরে। কিছু কথা শুনে হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে গেছে তিন জনের। স্বর্ণা মেয়েটাকে বেশ পছন্দ হয়েছে ধারার। বয়সে ধারার ছোট কিন্তু সম্পর্কে বড়। ধারা মেজ ভাবী বলে ডাকলেও স্বর্ণা সে ধারা কে ধারা আপু বলে ডাকে। হঠাৎ ওদের হাসির আওয়াজ চিরে ধমকের সুর ভেসে আসলো ওদের দিকে।

‘ এখনো তোরা এখানে বসে হাহা হিহি করছিস। রাত কত হয়েছে সেদিকে খেয়াল আছে কারো?’

ধারা ঘাড় ঘুড়িয়ে বাম পাশে তাকিয়ে দেখে ধারার আম্মা ওদের দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে আছে। ধারা মৃদু হেসে বলল,

‘ এইতো আম্মা একটু পরে যাচ্ছি। তুমি এত রাতে এখানে কী করছ?’

ধারার আম্মা ধীর গলায় বলল,

‘ আরেকটু পরে কী এক্ষুনি তিনজনে তোদের ঘরে যাবি। ঘরের জগে পানি শেষ তাই পানি নিতে এসেছি।’

কিছুক্ষণ থেমে ধারার আম্মা আবার চিন্তিত গলায় বলল,

‘ রাতে খাবার সময় দেখলাম জামাই আর আপুমণি ঘেমে একাকার হয়ে গেছে। আজকের রাতটা তো খুব কষ্ট হবে ওদের। তোর ঘরেতো একটা মাত্র সিলিং ফ্যান। তোর আব্বা জান বলেছে কাল কিছু একটা ব্যবস্থা করবে।’

স্বর্ণা মিহি গলায় বলল,

‘ চাচি জান আপনি চিন্তা করেন না। আমাদের ঘরে যে টেবিল ফ্যান টা ছিল আপনাদের ছেলে আপুদের ঘরের সেট করে দিয়েছে। আসলে ভাইয়া আর ইহিতা মা মনে হয় সব সময় এয়ার কন্ডিশন এর মধ্যে থাকে তাই গ্রামের আবহাওয়া মানিয়ে নিতে কষ্ট হচ্ছে।’

ধারা মৃদু হেসে বলল,

‘ তা অনেক টা ঠিক বলেছ ভাবি। বাপ বেটি একটুও গরম সহ্য করতে পারে না। মেয়ে তো তার বাপের থেকে আরো কয়েক ধাপ এগিয়ে। তবে চিন্তা করো না দুজনে যেকোনো পরিস্থিতিতে মানিয়ে নিতে পারে।’

ধারার আম্মা মৃদু স্বরে বলল,

‘ কত করে বললাম আজকের রাতটা আপুমণি কে আমাদের সাথে থাকতে দে। কিন্তু তা তো দিলি না।’

ধারা হালকা হেসে বলল,

‘ আম্মা তুমি তোমার নাতনি কে চেনো না তাই এই কথা বলছো। সে ঘুম থেকে উঠে আমাকে আর তার পাপা কে দেখতে না পেলে সারাদিন ঘ্যান-ঘ্যান করবে। তাই তো তোমাকে নিষেধ করেছি।

ধারার আম্মা ধীর গলায় বলল,

‘ আমি তখনই তা বুঝতে পেরেছি। অনেক কথা হয়েছে এবার যে যার রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়। আজ সারা দিন অনেক ধকল গেছে সবার উপর দিয়ে। তোদের যা গল্পগুজব করার আছে কাল সকালে করিস এখন যা সবাই।’

ধারার আম্মার কথা শুনে সম্মতি জানিয়ে যে যায় ঘরে চলে যায়। ধারা দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকে দেখে বাবা মেয়ে ঘুমিয়ে আছে। ধারা কিছুক্ষণ তাকিয়ে সেই দৃশ্য উপভোগ করে। ধারা ধীর পায়ে হেঁটে গিয়ে ইভানের পাশে বসে। আলতো করে এক হাত ইভানের গালে রাখে। এই মানুষটা তাকে কখনো কষ্ট পেতে দেয় না। সব সময় নিজের ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখে তাকে। মুখ ফুটে কিছু বলার আগেই মনের কথা বুঝি নেয়। মানুষটা তাকে পাগলের মত ভালোবাসে। আর মানুষটা কে ঘিরে ওর যত অনুভূতি, উদ্দীপনা, ভালোলাগা, উত্তেজনা সবকিছু এই মানুষটাকে ঘিরে। ভিশন ভালোবাসার মানুষটাকে ধারা। আনমনে বসে এসব ভাবছিলাম তখন হঠাৎ করে ইভান বলল,

‘ বউ তুমি আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছ কেন? আমার তো ঘুমের মধ্যেও লজ্জা করছে!’

ইভানের কণ্ঠস্বর শুনে ধারার চোখ বড় বড় হয়ে যায়। তাকিয়ে দেখে ইভান এখনো চোখ বন্ধ করে আছে। তাহলে কথাটা বলব কে? ধারা ইভানের গালের উপর থেকে হাত সরিয়ে নিয়ে সূক্ষ্ম গলায় বলল,

‘ তুমি ঘুমাওনি এখনো জেগে আছো?’

ইভান পাশ ঘুরে ধারার এক হাত বুকের সঙ্গে জড়িয়ে নিয়ে বলল,

‘ সন্ধ্যার পরে ওতোক্ষণ ঘুমানোর পরে কী আর ঘুম আসে। তোমার মেয়েকে ঘুম পাড়িয়ে চোখ বন্ধ করেছিলাম।’

ধারা ইভানের গায়ে হালকা হেলান দিয়ে বলল,

‘ রাত অনেক হলো ঘুমাবে না তুমি?’

ইভান সোজা হয়ে চোখ খুলে ধারার দিকে তাকিয়ে বলল,

‘ তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম এখন ঘুমিয়ে পরবো।’

আচমকা ধারা ইভানের বুকে মাথা রেখে বলল,

‘ থ্যাঙ্ক ইউ, থ্যাংক ইউ সো মাচ মাই লাভ।’

ইভান ধারার মাথায় হাত রেখে ঠোঁটে হাসি নিয়ে বলল,

‘ হঠাৎ থ্যাঙ্ক ইউ যে? কারণ কী ম্যাডাম?’

ধারা ইভানের বুকে মাথা রাখা অবস্থায় ইভানের দিকে তাকিয়ে বলল,

‘ এই যে আমার পরিবার আমার কাছে ফিরিয়ে দিয়েছো। সব মান অভিমান ভুলে আজ সবাই একসাথে হয়েছি এই সবকিছুর জন্য তোমাকে অনেকগুলো থ্যাংকস।’

ইভান হেসে বলল,

‘ তাহলে তো থ্যাংকস টা আমার পাওয়ার কথা নয় তোমার আব্বাজানের পাওয়ার কথা।’

ধারা ভুরু কুঁচকে বলল,

‘ মানে?’

ইভান মৃদু স্বরে বলল,

‘ গতকালের বিকেলের দিকে তোমাদের দোকানের কর্মচারী শাহীন নামের ছেলেটা আমাকে ফোন করেছিল। আমি প্রথমে চিনতে পারিনি। পরে কথাবার্তা বলে চিনতে পেরেছি। আমি মনে করেছিলাম বাড়ির কেউ হয়তো অসুস্থতার জন্য শাহীন আমাকে ফোন করেছে। কিন্তু না তোমার আব্বাজান শাহীন কে দিয়ে আমাকে ফোন করিয়েছে। শাহিন কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন তোমার আব্বাজানের কাছে দিয়ে দেয়। তারপরে আমরা কথা বলি। আমি বুঝতে পেরেছিলাম অপরাধবোধের কারণে আব্বাজান আমার সঙ্গে ঠিকভাবে কথা বলতে পারছিল না। তখন আমি আব্বাজান কে সহজ করার জন্য নানা বিষয়ে কথা বলি। আব্বাজান গতকাল তার করা কর্মকাণ্ডের জন্য আমার কাছে বারবার ক্ষমা চেয়েছে। কিন্তু আব্বাজান তো বয়সে আমার থেকে বড় তাই আমি এই প্রসঙ্গ এড়িয়ে গেছি। আমাকে বারবার অনুরোধ করেছে আজ যেন আমি তোমাকে নিয়ে এই বাড়িতে আছি। ব্যাস এখন তুমি তোমার বাড়িতে।’

ধারা চোখগুলা ছোট ছোট করে বলল,

‘ এর জন্যই তুমি গতকাল অফিস থেকে ফিরেছো পর থেকে একা একা হাসছিলে?’

ইভান ঠোঁট কামড়ে হাসি আটকানোর চেষ্টা করে বলল,

‘ হুম।’

ধারা ইভানের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আচমকা ইভানের থাপ্পর ঘুষি দিতে দিতে বলল,

‘ কাল বিকেল থেকে তুমি এসব কথা জানতে তারপর তুমি আমাকে কিছু বলো নি। আমি তোমাকে ছাড়ছি না আজ তোমার একদিন কী আমার একদিন।’

ইভান এমন ধারা কাজ দেখে শব্দ করে হাসতে হাসতে ধারা কে নিজের বুকের সঙ্গে শক্ত করে জড়িয়ে নেয়।

সকাল হতে না হতে ধারার আব্বাজান, হাবিব, অভি এবং চাচা জান মিলে বাড়িতে উপস্থিত সকল নাতি নাতনীদের নিয়ে বাজারে গেছে। ইভান সে সম্রাট ভাইয়ার সঙ্গে গ্রাম ঘুরতে বের হয়েছে। অনেকদিন পরে আবার দুজনে গ্রাম ঘুরতে বের হয়েছে। আর বাড়ির মেয়েরা রান্না বান্নার কাজে ব্যস্ত। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাচ্চাগুলোকে সঙ্গে নিয়ে সবাই বাড়িতে ফিরে এসেছে। বাড়ির বিশাল উঠানে বাচ্চা চারজন খেলাধুলা করছে। লিওন, রোহান, ইহিতা আর শাওন। শাওন সবার থেকে ছোট। কিন্তু তিনজনে ওকে আগৈ রেখে খেলছে। রোহান সবার থেকে বড় বিধায়, মাঝে মাঝে সবাইকে শাসন করছে। ধারা রান্না ঘরে বসে সবার সঙ্গে গল্প করছিল তখন ইহিতা এসে রান্না ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে ধারা কে বলল,

‘ মাম্মা, ছোট মামা তার রুম থেকে ওয়ালেট টা চাইছে।’

ধারা চোখ ছোট ছোট করে বলল,

‘ ওয়ালেট দিয়ে কী করবে তোমার ছোট মামা? তাছাড়া তোমার ছোট মামার ওয়ালেট কোথায় থাকে তা তো আমি জানি না। তোমার ছোট মামাকে গিয়ে বলো, সে এসে যেন তার ওয়ালেট নিয়ে যায়।’

ইহিতা মৃদু স্বরে বলল,

‘ ছোট মামা তো এখন বাইরের চেয়ারে বসে আমাদের খেলা দেখছিলো। কিন্তু বাইরে রাস্তা দিয়ে কে যেন চিৎকার করতে করতে যাচ্ছিল তখন ছোট মামা আমাকে ডাক দিয়ে বলে, ইহিতা মা, তুমি তোমার আম্মু কে গিয়ে বল আমার রুম থেকে আমার ওয়ালেট টা তোমার হাতে দিতে।’

ধারা জিজ্ঞাসু গলায় বলল,

‘ তোমার মামা ওয়ালেট দিয়ে কী করবে তুমি সে বিষয়ে কিছু জানো?’

ইহিতা মাথা চুলকিয়ে বলল,

‘ হ্যাঁ, হ্যাঁ মামা বলেছিল আমাকে। হাওয়া মিষ্টি খাওয়াবে আমাদের।’

ইহিতার কথা শুনেই রান্না ঘরের সবাই খিলখিলিয়ে হাসতে শুরু করে। ইহিতা চোখ ছোট ছোট করে তাদের দিকে তাকিয়ে বলল,

‘ তোমরা হাসছো কেন?’

জোনাকি হাসি থামিয়ে বলল,

‘ ওরে পাকা বুড়ি আমার। ওটা হাওয়া মিষ্টি না, ওটা হবে হাওয়াই মিঠাই।’

ধারা মৃদু হেসে মেয়ে হাত ধরে বলল,

‘ আচ্ছা চলো আমি দেখছি তোমার মামার ওয়ালেট খুঁজে পাই কিনা।’

ধারা ইহিতার হাত ধরে অভির রুমে আসে। এদিক ওদিক কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করে, বালিশের নিচে ওয়ালেট খুঁজে পায়। ধারা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ইহিতার হাতে ওয়ালেট দিতে গিয়ে কিছু একটা দেখে ভুরু কুঁচকায়। ইহিতার হাতে দেওয়ার সময় ওয়ালেট টা খুলে যায়। ধারা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ওয়ালেটে থাকা ছবিটার দিকে তাকায়। ছবিতে থাকা শাড়ি পড়া মেয়েটাকে খুব চেনা চেনা মনে হচ্ছে। কোথায় যেনো দেখছে তাকে। হঠাৎ ধারার ঠোঁটে হাসি ফুটে ওঠে। ওয়ালেট টা ইহিতার হাতে নিয়ে বলল,

‘ এটা তোমার মামা কে দিয়ে, তাকে বলো আমি তাকে ডাকছি।’

ইহিতা মাথা দুলিয়ে বলল,

‘ ওকে মাম্মা।’

মিনিট পাঁচেক এর মাথায় অভি এসে রুমে হাজির হয়। ধারা কে ওর বিছানায় পা দুলিয়ে বসে থাকতে দেখে বলল,

‘ ইসিতা বলল তুই নাকি আমাকে ডাকছিস? কিছু বলবি?’

ধারা অন্যদিকে তাকিয়ে বলল,

‘ হুম।’

অভি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,

‘ কী হলো চুপ করে বসে আছিস কেন? বল কী বলবি?’

ধারা অভির দিকে তাকিয়ে বলল,

‘ জান্নাত কে তুই ভালোবাসিস তাই না?’

অভি চমকে উঠে। কাঁপা কাঁপা গলার স্বরে বলল,

‘ কোন জান্নাত?’

ধারা ধীর গলায় বলল,

‘ তুই কয়টা জান্নাত কে চিনিস? আমার জানা মতে তুই তো একটা জান্নাত কে চিনিস!’

অভি কে চুপ থাকতে দেখে ধারা আবার বলল,

‘ কী হলো বল ভাইয়া?’

অভি কম্পিত গলায় বলল,

‘ তুই কী বলছিস কিছু বুঝতে পারছি না আমি। আমার অনেক কাজ আছে আমি আসছি এখন।’

অভি একপ্রকার ধারার থেকে পালিয়ে যেতে চাইলে ধারা মৃদু স্বরে বলল,

‘ পালিয়ে যাচ্ছিস? কার কাছ থেকে পালাচ্ছিস তুই? আমার কাছ থেকে? না তুই তোর নিজের কাছ থেকে পালাচ্ছিস?’

অভি পা থামিয়ে ধারার দিকে তাকায়। ধারা অভির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,

‘ তোর ওয়ালেটে জান্নাতের ছবি কেন ভাইয়া? আমার বেস্ট ফ্রেন্ডের ছবি তোর ওয়ালেটে কী করে? কি হল চুপ করে আছিস কেন? এই প্রশ্নটার উত্তর যে আমার চাই ভাইয়া।’

অভি দীর্ঘশ্বাস ফেলে পাশের জানালা দিয়ে খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল,

‘ ভালোবাসি ওকে। ভীষণ ভালোবাসি। তাই কোন শুভক্ষনে ওর হাস্যোজ্জ্বল একটা ছবি তুলে রেখেছিলাম, আমার একা সময় তাকে দেখে পার করার জন্য।’

ধারা কাট কাট গলায় বলল,

‘ ছবিটা তো অনেক আগের তোলা। সময় গুনতে গেলে প্রায় নয়-দশ বছর আগের ছবি। তখন হয়তো আমি আর জান্নাত ক্লাস সেভেনে পড়ি। আমাদের গ্রামে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে যখন মেলা বসেছিল তখন আমি আর জান্নাত শাড়ি পড়ি। আমি যদি ভুল না হয়ে থাকি তাহলে তুই সেই দিন জান্নাতের শাড়ি পড়া ছবিটা তুলেছিস।’

অভি এক পলক ধারার দিকে তাকিয়ে পরে চোখ সরিয়ে নিয়ে বলল,

‘ হ্যাঁ, ওই দিনই আমি ছবিটা তুলেছিলাম। মেলা ভর্তি লোকজনের আড়ালে ছবিটা তুলতে হয়েছিলো। শাড়ি পড়া অবস্থায় ওকে খুব স্নিগ্ধ সতেজ লাগছিল।’

ধারা কঠোর গলায় বলল,

‘ এতই যখন ভালোবাসিস তখন জান্নাত যখন তোকে বারবার ফোন করতো তখন তুই ওর ফোন রিসিভ করতি না কেন?’

অভি ধারার দিকে তাকিয়ে আহত গলায় বলল,

‘ আমি তখন নিজের মধ্যে ছিলাম না রে। তুই তখন হঠাৎ করে বাড়ি ছেড়ে চলে গেলি তা আমি মেনে নিতে পারিনি। জান্নাত যখন আমাকে ফোন করতো তখন তোর কথা আমার বেশি মনে পড়তো। তুই আর জান্নাত মিলে কত দুষ্টুমি করতি দুজনে একসাথে। তুই জান্নাত কে ভাবি বলে ডাকলে জান্নাত লজ্জা রাঙ্গা হয়ে যেতে। এসব কিছু মনে পড়তো। তাই আমি ইচ্ছে করে ওর থেকে দূরে থেকেছি। কিন্তু একটা সময়ে একাকীত্বতা ঘিরে ধরে আমাকে। কিন্তু তখন খুব দেরি হয়ে গেছিল। জান্নাতের সঙ্গে যোগাযোগ করার কোন উপায় ছিল না। জান্নাত যে নাম্বারে আমাকে ফোন করতো, ঐ ফোন টা চুরি হয়ে গেছিলো। পরে সেই সিম কার্ড তুলতে গেলে সিম কার্ড লক হয়ে আরো কিছু সমস্যা দেখা দেয়। আমি অনেক চেষ্টা করেছিলাম ঐ সিম কার্ড টা তোলার জন্য। কিন্তু পারিনি আমি। পরে উপায় না পেয়ে নতুন করে সিম কার্ড কিনে নেই।’

ধারা এতক্ষণে বুঝতে পারছে অভি কেনো জান্নাতের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। ওদের এই অবস্থায় জন্য ধারা নিজেকে দায়ী করছে। ধারা ছল ছল চোখে অভির দিকে তাকিয়ে বলল,

‘ দুই দিন আগে তুই যখন সিলেট থেকে ঢাকা ফিরছিলে, তখন তোর পাশের মেয়েটা কে ছিল?’

অভি বিষ্ময় নিয়ে ধারার দিকে তাকিয়ে। ও সিলেট গেছিলো, ওর পাশে একটা মেয়ে বসা ছিল তা ধারা জানলো কীভাবে? অভি বিষ্ময় গলায় বলল,

‘ তুই একথা জানিস কীভাবে?’

ধারা উত্তেজিত গলায় বলল,

‘ উফ! বল না কে ছিলো?’

অভি অবাক গলায় বলল,

‘ মেয়েটা আমার বন্ধু। সিলেট শহরের অনেক দিন পরে ওর সঙ্গে দেখা হয়েছিল, আর ভাগ্যক্রমে ওর সিট আমার পাশে ছিল। কেনো বল তো?’

ধারা ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে বলল,

‘ কিছু না। তুই থাকো। আমি আসছি। অনেক কাজ বাকি আমার।’

এইটুকু বলে ধারা হনহনিয়ে চলে যায়। আর অভি ধারার চলে যাওয়ার দিকে বিষ্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকে।

দুপুরের গোসলের পরে ধারা ওদের তিনজনের জামাকাপড় নিয়ে পুকুর পাড়ে ধুতে এসেছে। আচমকা পুকুরের সামনে ঘাট থেকে রহিমা চাচি মৃদু চিৎকার দিয়ে বলল,

‘ ধারা তোর পাশে কে জামাই নাকি?’

ধারা ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায়। ইভান দাঁড়িয়ে আছে। পরনের থ্রি কোয়াটার প্যান্ট আর টি-শার্ট। ধারা চোখ বড় বড় করে কিছুক্ষণ ইভানের দিকে তাকিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে রাহিমা চাচির দিকে তাকিয়ে লাজুক হেঁসে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে। ধারা তাড়াতাড়ি করে হাতের কাজ শেষ করে উঠে ইভানের সামনে দাঁড়িয়ে কপট রাগ দেখিয়ে বলল,

‘ এসব কী পড়েছো তুমি? শ্বশুরবাড়িতে কেউ এসব পড়ে ঘুরে বেড়ায়?’

ইভান বাচ্চাদের মত করে বলল,

‘ কী করব বল বউ প্রচন্ড গরম লাগছে।’

ধারা ইভানের দিকে মায়া মায়া চোখে তাকিয়ে বলল,

‘ গরম লাগছে তাহলে তুমি এখানে কী করছ ঘরে গিয়ে ফ্যান ছেড়ে বসে জিরিয়ে নেও।’

ইভান দাঁত কেলিয়ে বলল,

‘ কিন্তু ঘরে তো তুমি নেই। তাই আমি তোমার কাছে চলে এসেছি। চলো দুজনে একসাথে গিয়ে ফ্যান ছেড়ে জিরিয়ে নিবো।’

ধারা ইভানের দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে বিড় বিড় করে বলল,

‘ এই মানুষটারে জ্বালায় আমি নির্ঘাৎ পাগল হয়ে যাব।’

ধারা ইভানের দিকে তাকিয়ে দাঁত চেপে বলল,

‘ আপনি যান আমি আসছি।’

ইভান ধারার হাত ধরে বলল,

‘ না বউ তা হবে না। এমনিতেই তোমার পালাই পালাই রোগ আছে। এখন তুমি সোজা আমার সঙ্গে রুমে যাবে।’

ধারা ইভানের দিকে করুন চোখে তাকালে, ইভান সেদিন পাত্তা না দিয়ে ধারার হাত ধরে টেনে নিয়ে যায়।

রাতে খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ করে সবাই যখন বসার ঘরে বসে গল্প গুজব করছিল তখন ধারার আব্বাজান সবার দিকে তাকিয়ে মৃদু স্বরে বলল,

‘ শোনো সবাই আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমার মেয়ে, জামাই, নাতি নাতনি সবাই যখন একসাথে বাড়িতে আছে এই সুযোগে আমি অভির বিয়েটা দিয়ে দিতে চাই। আমার একটা মেয়ে পছন্দ হয়েছে। শুধু আমার নয় সম্রাট আর ওর চাচা জানের ও পছন্দ হয়েছে। তোমরা চাইলে তাহলে আমরা কথা এগোতে পারি।’

ধারার দাদি আম্মা ধমকের সুরে বলল,

‘ আমরা চাইলে কী? অভির তো আর বয়স কম হয়নি। তুই দিন ঠিক কর আমরা গিয়ে মেয়ে দেখে আসবো।’

সব কথা শুনে অভি মাথা নিচু করে বসে থাকে। আর ধারা তা দেখে ঠোঁট বাঁকা করে হাসে।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here