#অদ্ভুত_প্রেমবিলাস
#লেখিকাঃ সারজীন ইসলাম
|পর্ব-১৭|
গ্ৰামের সকালের পরিবেশ মুগ্ধ করেছে ইভান কে। চোখ বুলায় চারপাশে। ইভানের সঙ্গে এসেছে আফজাল মামার ছোট ছেলে কায়েস। কায়েস সবকিছু ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ইভান কে দেখাচ্ছে। যেদিকে তাকায় শুধু সবুজ আর সবুজ ঘেরা। ইভান একে একে সব কিছুই ক্যামেরাবন্দি করছে। ক্যামেরা হাতে নিয়ে তাকায় আকাশের দিকে। আকাশের সাদা গুচ্ছ গুচ্ছ মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে। অসম্ভব সুন্দর লাগছে দেখতে। ইভান একমনে তাকিয়ে সেই সৌন্দর্য দিকে উপভোগ করতে থাকে।
গুটি গুটি পায়ে ধারা গ্রামের মেঠো পথ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। সূর্যমামা এখনো ঠিক ভাবে তার উত্তাপ ছড়াতে শুরু করেনি। ডিসেম্বর মাস, অন্য বছরগুলোর তুলনায় এবছর একটু কমই শীত পড়েছে দেশে। ভোরের দিকে একটু ঠান্ডা ঠান্ডা আবহাওয়া থাকায় ধারার চাচি আম্মা ওর গায়ের চাদর জড়িয়ে তার পরে বাড়ি থেকে বের হতে দিয়েছে। অবশ্য সূর্য উঠে যাওয়ার পরে শীত নেই বললেই চলে। ধারা পা থামায় মাঠের কাছে এসে। ভুরু কুঁচকে মাঠের দিকে তাকায়। কি করছো ছেলেটা ওখানে? দাঁড়িয়ে থেকে খতিয়ে দেখছে ছেলেটার। ছেলেটার পাশে পরিচিত মুখ দেখতে পায়। ধারা গলা ছেড়ে বলল,
‘ ঐ কায়েস, পায়েশ দেখে আয়।’
কায়েস ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে। ধারা দাঁড়িয়ে আছে। ধারা কে দেখে ঠোঁটে হাসি ফোটার আগেই ধারার কথা শুনে হাসি বিলুপ্ত হয়ে যায়। এই মেয়েটা সব সময় ওর নামে এইসব আজগুবি কথা বলে। একবারে কায়েস বললেই তো পারে। তা না করে কায়েস পায়েস এসব কী ধরনের কথা? ওর একটা সম্মান আছে না! তার ওপরে সাথে ইভান ভাইয়ার মতো একজন মানুষ আছে। কায়েস চোখ ঘুরিয়ে নিয়ে তাকায় ইভানের দিকে। সে এখনো মনমুগ্ধ হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। ইভান ভাইয়ার আকাশ দেখার উছিলায় হয়তো তার মান সম্মানটা বেঁচে গেছে। কায়েস মনে মনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ধারার কাছে যায়। ভাব নিয়ে বলল,
‘ কী হয়েছে কী ধারা আপু? তখন থেকে চিৎকার করছো কেন?’
ধারা চোখ গোল গোল করে রাগি চোখে তাকায়। কায়েস ধারার রাগি চোখ দেখে ভয় পেয়ে বলল,
‘ না না আসলে কথাটা আমি ওই ভাবে বলতে চাইনি আপু, আমি বলতে চেয়েছি তুমি আমাকে কী জন্য ডেকেছো? জরুলি কোন দরকার আছে?’
ধারা কায়েসের এমন ভয় পাওয়া মুখ দেখে মৃদু হেসে বলল,
‘ না তেমন কোনো জরুরি দরকার নেই তবে।’
কায়েস ছোট করে বলল,
‘ তবে? তবে কী আপু?’
ধারা আবার মাঠে ইভানের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ ওই ছেলেটা কেরে মাঠের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে? আর অমন ক্যাবলার মত করে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে কেনো?’
কায়েস ধারার দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকায়। ইভান ভাইয়ার কথা বলছে। কোন দিক দিয়ে তাকে ক্যাবলা বলে মনে হচ্ছে। কত স্মার্ট একটা ছেলে। বিদেশে লেখাপড়া করে। বলতে গেলে হাতে গোনা কয়েকটা বছর ছাড়া সারা জীবনই তো বিদেশে কাটিয়েছে সে। গতকাল রাতে তো ভাইয়ার মিউজিক ভিডিওর একাউন্ট দেখে আমরা সবাই হা হয়ে গেছিলাম। কত লাখ লাখ ভক্ত তার। আর তাকে কিনা এই দজ্জাল মেয়েটা ক্যাবলা বলছে। এখন কিছু বলতে গেলেই তো আমার খবর করে দেবে।
কায়েসকে একা একা বিড়বিড় করতে দেখে ধারা একটু উঁচু গলায় বলল,
‘ ঐ তখন থেকে একা একা বিড়বিড় করছিস কেন? যা জিজ্ঞেস করেছি তাই বল।’
কায়েস থমথমে গলায় বলল,
‘ ওটা হচ্ছে ইভান ভাইয়া। বিদেশে থাকে, ভাইয়া কখনো গ্রাম দেখেনি তাই ফুপু ভাইয়া কে নিয়ে আমাদের বাড়িতে এসেছেন গ্রাম দেখাতে।’
ধারা মুখ ভেঙ্গিয়ে বলল,
‘ বুঝিনা বাপু এই পাগল-ছাগল কোত্থেকে আসে। যাই হোক আমি যাই তুই তোর পাগল সামলা।’
কায়েস কৌতুহলী হয়ে বলল,
‘ তা কোথায় যাচ্ছো এই সকালবেলা?’
ধারা মৃদু স্বরে বলল,
‘ ভাবীর বাপের বাড়ি যাচ্ছি।’
কায়েস ছোট করে বলল,
‘ একা একা?’
ধারা ধীর গলায় বলল,
‘ উঁহু, আমি বাজার পর্যন্ত যাবো। তারপর আব্বাজান এসে আমাকে নিয়ে যাবে।’
কায়েস ধারার দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ হঠাৎ ভাবিদের বাড়িতে কোন অনুষ্ঠান আছে নাকি?’
ধারা মৃদু স্বরে বলল,
‘ আরে না ভাবির বাবা হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়ে। আব্বাজান আর আম্মা কাল ভাবির বাবাকে দেখতে গিয়েছিল। কিন্তু ভাবির বাবা তাদের আসতে দেয়নি কাল। ভাবি কাল রাতে আমাকে ফোন দিয়ে বলে, আমি আজ তাদের বাড়িতে না গেলে ভাবি নাকি বাড়ি ফিরবে না সেখানেই থেকে যাবে। তাইতো সকাল-সকাল ছুটছি তাদের বাড়িতে।’
কায়েস শান্ত গলায় বলল,
‘ সাবধানে দেখে শুনে যেও আপু।’
ধারা মৃদু হেসে বলল,
‘ তুইও সাবধানে থাকিস যাই আমি এখন।’
এইটুকু বলে ধারা দাঁড়ায় না, ব্যস্ত পায়ে হাঁটতে শুরু করে।
কায়েস কিছুক্ষণ ধারার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে, ঘাড় ঘুরিয়ে পিছন ফিরে তাকায়। ইভান দাঁড়িয়ে আছে ওর থেকে চার কদম দূরে। ইভানের চোখে সানগ্লাস থাকায় ওর দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকাতে পারছে না কায়েস। কায়েস হালকা হেসে বলল,
‘ ভাইয়া তোমার প্রকৃতির ছবি তোলা শেষ? নাকি আরো কিছু বাকি আছে?’
ইভান ছোট করে বলল,
‘ মেয়েটা কে ছিলো?’
কায়েস চোখ বড় বড় করে বলল,
‘ কোন মেয়ের কথা বলছো তুমি?’
ইভান ছোট নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
‘ এখানে দাঁড়িয়ে যার সাথে কথা বলছিলে।’
কায়েস হেসে বলল,
‘ ও ওতো ধারা আপু!’
ইভান শীতল গলায় বলল,
‘ ধারা!’
এইটুকু বলে ইভান ওর চোখ থেকে সানগ্লাস খুলে ধারার চলে যাওয়ার দিকে তাকায়। মৃদু স্বরে বলল,
‘ কোথায় যাচ্ছে ও?’
কায়েস ইভানের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ ওর ভাবির বাড়িতে। দাওয়াত আছে না কী!’
ইভান আর কিছু বলে না। আর এক নজর ধারার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে, সানগ্লাস চোখে দিয়ে হাঁটা শুরু করে অন্যদিকে।
দুপুর বেলায় সবাই একসাথে খেতে বসেছে। হাসি আড্ডায় মেতে উঠেছে খাবার পরিবেশ। শাহেদা বানু কায়েসের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ এই কায়েস শোন বিকেলের দিকে একবার ধারা কে বাড়িতে আসতে বলিস তো।’
কায়েস খেতে খেতে বলল,
‘ তাকে এখন পাবে কোথায়? সে কি এখনো এখানে আছে নাকি?’
শাহেদা বানু চোখ ছোট ছোট করে বলল,
‘ কি বলছিস, ধারা আবার কোথায় যাবে?’
কায়েস খাওয়া থামিয়ে বলল,
‘ ধারা আপুর ভাবির বাবা না কী হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল তাই চাচা চাচি গিয়েছিল তাদের দেখতে। ওই বাড়ির লোকজন নাকি তাদেরকে কাল আসতে দেয়নি আর কাল রাতে ভাবি ধারা আপু কে ফোন করে তাদের বাড়িতে যেতে বলেছে। আর আপুও সকাল সকাল রওনা দিয়েছে তাদের বাড়িতে।’
শাহেদা বানুর বড় ছেলের বউ বলল,
‘ তা তুই এত কথা জানলে কিভাবে?’
কায়েস মৃদু স্বরে বলল,
‘ সকালবেলা ইভান ভাইয়াকে নিয়ে গ্রামে ঘুরতে বের হয়েছিলাম না তখন ধারা আপুর সঙ্গে দেখা হয় আর তখনই এসব কথা জানতে পারি।’
এইটুকু বলে কায়েস চুপ হয়ে যায়। ইভান খাওয়া থামিয়ে মনোযোগ দিয়ে কথাগুলো শুনছিল। আবার কি ভেবে একা একা মৃদু হাসে ইভান।
চলবে….