অদ্ভুত প্রেমবিলাস পর্ব-১২

0
775

#অদ্ভুত_প্রেমবিলাস
#লেখিকাঃ সারজীন ইসলাম

|পর্ব-১২|

ধারা গালে হাত দিয়ে উঠানের এক কোনায় বসে আছে। একা একা তার কিছু ভালো লাগছে না। পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরপরই জান্নাত চলে গেছে ও দাদার বাড়িতে। সারাদিন খাওয়া আর ঘুম ছাড়া কোন কাজ নেই ধারার। অভি বাড়ি থাকলে না হয় ওর পিছনে লাগা যেত। কিন্তু সে হতচ্ছাড়া তো বাড়ি আসার নামই নিচ্ছে না। কবে বাড়ি ফিরবে কে জানে? ফোন দিলে বলে আসবে আসবে। কখন আসবে জিজ্ঞেস করলে বলে পড়ার চাপ। ধুর কিছু ভালো লাগছে না। এর থেকে প্রতিদিন স্কুলে যাওয়া আসা ঢের ভালো ছিল। তখন এত বিরক্তিকর জীবন তো আর ছিল না। কানে আসে পুকুরপাড়ের হট্টগোলের শব্দ। কৌতুহল হয়ে পা বাড়ায় সেদিকে ধারা। ছোট ছোট বাচ্চাগুলো পুকুরপাড়ের খোলা জায়গায় বসে খেলাধুলা করছে। ধারা ওদের দিকে তাকিয়ে বলল,

‘ আমাকে খেলতে নিবি তোরা তোদের সঙ্গে?’

বাচ্চাগুলো খুশিতে গদগদ হয়ে বলল,

‘ হ্যাঁ নিবো খেলতে। তুমি খেলবে আমাদের সঙ্গে?’

ধারা মৃদু মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললে বাচ্চাগুলো এসে ধারার হাত ধরে টেনে নিয়ে যায়।

সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত ধারা ওদের সঙ্গে খেলাধুলা করে বাড়িতে ফিরে। বাড়ি ফিরে একা একা কিছুক্ষন এ ঘর ও ঘর ঘোরাঘুরি করে। না টিভি দেখতে ভালো লাগছে না ফোন টিপাটিপি করতে। বিরক্তভাব নিয়ে ধারা ওর দাদি আম্মার রুমে যায়। ধারার দাদি আম্মা পাশের বাড়ির অন্য এক দাদির সঙ্গে পানের ডালা সাজিয়ে গল্পগুজব করছে। ভেবেছিল কিছুক্ষণ দাদি আম্মার সাথে কথা বলে সময় কাটাবে কিন্তু তার কি আর যো আছে। ধারা মন খারাপ করে গুটি গুটি পায় নিজের ঘরের দিকে চলে যায়। পড়ার টেবিলের উপর থেকে ফোনটা নিয়ে বিছানার উপর উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ে। ফোন কিছুক্ষণ ঘাটাঘাটি করে ফোনটা পাশে রেখে সোজা হয়ে শুয়ে পড়ে। আজ যেন সময়ই কাটে চাচ্ছে না ধারার। এক এক মিনিট যেনো এক এক বছরের সমান। জান্নাত টা গ্রামে থাকলে ওর সঙ্গে মজা করা যেত। প্রতিদিন বিকেলবেলা এসে বলত, ‘ জানু অমুক কে গাছে এই ফল হয়েছে চুরি করবি?’ কিন্তু সে শয়তানটা তো পরীক্ষা শেষ না হতেই দাদার বাড়ি গিয়ে উঠে বসেছে। নিত্য নতুন মিউজিক ভিডিও করে আপলোড দিছে। দেখে বোঝা যাচ্ছে বড়ই আনন্দে আছে সে। আরে থাকবে নাইবা কেন ওখানে ওর আত্মীয়-স্বজনরা একসঙ্গে থাকে। ওরাই শুধু গ্রামে থাকে। অবশ্য জান্নাত কয়েকবার ফোন দিয়ে ওর হালচাল জিজ্ঞেস করেছে। জান্নাত জানিয়েছে সে খুব মজা করছে দাদার বাড়িতে। আর এদিকে ও বসে বসে সময় কাটানোর উপায় খুঁজছে‌। আগে তো বই পড়েই রাত এগারোটা বারোটা পার করে দিত। বিছানার এপাশ ওপাশ করতে করতে কখন যে রাত আটটা বেজে গেছে তা টের পাইনি ধারা। বাইরে উঠান থেকে ওর আব্বাজান, চাচার, ভাইয়ার গলার স্বর শোনা যাচ্ছে। তাহলে তারা দোকান থেকে এসে গেছে। পাশের ঘর থেকে ধারার চাচি ধারা কে ডাকছে। ধারা আর শুয়ে না থেকে উঠে ওর চাচীর কাছে যায়। ওর‌ চাচা চাচীর এক ছেলে হাবিব। সে সিলেট শহরে একটা কোম্পানিতে চাকরি করে। ধারার বিয়ের সময় কাজের চাপের জন্য আসতে পারেনি। অভি আর ধারার বড় সে। সম্রাট এর থেকে দুই বছরের ছোট। ধারা হেঁটে গিয়ে চাচির সামনে দাঁড়িয়ে বলল,

‘ ডাক ছিলে আমায়!’

ধারার চাচি কাজ করতে করতে বলল,

‘ কোথায় থাকিস তুই? সন্ধ্যার পর থেকে তো তোর টিকি টিও দেখা যাচ্ছে না।’

ধারা ওর চাচির পাশে বসে বলল,

‘ ঘরেই ছিলাম। বলো কী বলবে।’

ধারার চাচি হাতের ইশারায় কিছু দেখিয়ে বলল,

‘ ওই দেখ ওগুলো আসার সময় বাড়ির কর্তারা তোর জন্য নিয়ে এসেছে। গরম গরম সিঙ্গারা আলুর চপ আরো কী কী জেনো আছে। যা দেখ গিয়ে।’

চাচির কথামতো ধারা গিয়ে খুলে দেখে। দুই তিন রকমের খাবার আছে। ধারা ওর ভাবিকে ডেকে এনে একসঙ্গে খেতে বসে। খাবার খাওয়া শেষ হলে রান্নাঘর থেকে ধারার আম্মা ধারা কে ডাক দিয়ে বলল,

‘ ধারা শোন।’

ধারা পিছন ফিরে তাকিয়ে বলল,

‘ বলো।’

ধারার আম্মা মৃদু স্বরে বলল,

‘ তোর জামা কাপড় গুছিয়ে নে কাল সকালে তুই আর বৌমা তোর নানার বাড়ি যাচ্ছিস। সম্রাট গিয়ে তোদের পৌঁছে দিয়ে আসবে।’

ধারা চোখ গুলো ছোট ছোট করে বলল,

‘ হঠাৎ নানুর বাড়ি যাব কেন?’

ধারার পিছন থেকে ওর ভাবি বলল,

‘ তোর তো পরীক্ষা শেষ। তাই ভাবলাম এই সুযোগটাই কিছু দিন ঘুরে আসি। আর তুইও তো সারাদিন মনমরা হয়ে বসে থাকিস। চল ঘুরে আসি কিছুদিনের জন্য ভালো লাগবে।’

ধারা ঠোঁটে হাসি টেনে বলল,

‘ ঠিক আছে আমি ঘুমোনোর আগে আমার জামা কাপড় গুছিয়ে নেব।’

এইটুকু বলে ধারা হাসিমুখে ওখান থেকে চলে যায়। ধারা সারাদিন মন খারাপ করে থাকে দেখে ধারার আম্মা আর ভাবি মিলে এই পরিকল্পনা করে। ধারার আম্মা আর ভাবি ধারার হাসি মুখের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসে। যাক অবশেষে তাদের পরিকল্পনা সফল হয়েছে।

মিতা বেগম দাঁড়িয়ে সবার কাজ পর্যবেক্ষণ করছে। বাড়িতে আরো কয়েকজন কাজের লোক নিয়োগ করা হয়েছে কিছুদিন ধরে। সালমা সেও কিছুদিন ধরে দৌড়াদৌড়ি উপর আছে। বাড়ির ছোট ছেলের রুম টা একদম নতুন করে সাজানো কাজে লেগেছে তারা সবাই। ইভান আসছে। দু’দিন হয়েছে তার পরীক্ষা শেষ হয়েছে। তার আসার উপলক্ষে মিতা বেগম ইভানের রুম টা নতুন করে সাজাচ্ছে। নিজে গিয়ে সব কিছু পছন্দ করে কিনেছে। সাথে অবশ্য মেজো ছেলে আর মেজো ছেলের বউও ছিল। মিতা বেগম সবাইকে কাজ বুঝিয়ে দিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে এসে রান্নাঘরে গিয়ে সালমা কে বলল,

‘ কড়া করে এক কাপ চা বানা তো।’

সালমা ব্যস্ত গলায় বলল,

‘ ওদিকের কাজ কতদূর কি হলো আপা?’

মিতা বেগম ডাইনিং চেয়ার টেনে বসে বলল,

‘ দুই এক ঘন্টার মধ্যে সব কাজ কমপ্লিট হয়ে যাবে।’

সালমা চিন্তিত গলায় বলল,

‘ আপা বাবু আসতে তো বেশি সময় বাকি নেই। এরমধ্যে আমি ওর পছন্দের সবকিছু তৈরি করতে পারব তো।’

মিতা বেগম মৃদু স্বরে বলল,

‘ আরে চিন্তা করিস না, বাবু ও আসবে কারণ দুপুর দুইটার টার ফ্লাইটে। ততক্ষণে সব হয়ে যাবে। তুই এখন কথা না বলে আমাকে এক কাপ চা দে।’

সালমা চায়ের পানি চুলায় দিয়ে বলল,

‘ এই তো দিচ্ছি আর কিছুক্ষণ।’

কিছুক্ষণের মধ্যে সালমা মিতা বেগমের জন্য চা বানিয়ে নিয়ে তার হাতে দিয়ে বলল,

‘ আপা এই চা। লাবিদ বাবা আর বৌমা তারা কখন আসবে?’

মিতা বেগম চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলল,

‘ সন্ধ্যার পরে চলে আসবে। লাবিদের একটা মিটিং আছে বিকালে। সেটা অ্যাটেন্ড করে চলে আসবে।’

সালমা ছোট করে বলল,

‘ ওহ।’

সালমা রান্নাঘরের দিকে চলে গেলে মিতা বেগম নিজ মনে ভাবে। বাবু দেশে ফিরলে ওর বড় ভাই আর বড় ভাইয়ের বউ আবার কোন ঝামেলা শুরু করে।

চলবে….

রাতে আর এক পর্ব দেওয়া হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here