অদ্ভুত_প্রেমবিলাস পর্ব-১০

0
735

#অদ্ভুত_প্রেমবিলাস
#লেখিকাঃ সারজীন ইসলাম

|পর্ব-১০|

জান্নাত সেই কখন থেকে ধারার কানের কাছে বসে ঘেন ঘেন করে যাচ্ছে। কিন্তু ধারা তার কোনো কথাই কানে তুলছে না। সে দিব্যি রোবটের নেয় বসে আছে। জান্নাত বুঝে গেছে ধারা কে এভাবে রাজী করানো যাবে না। অন্য কোন পথ খুঁজতে হবে। জান্নাত এসে ধারার গলা জড়িয়ে ধরে বলল,

‘ জানু প্লিজ রাজি হয়ে যায় না। শুধু একটা ভিডিও।’

ধারা বিরক্ত ভাব নিয়ে বলল,

‘ একটা কেন অর্ধেকও না। তোর যত ইচ্ছা তুই কর না আমাকে মাঝখানে টানছিস কেন?’

জান্নাত মন খারাপের গলায় বলল,

‘ এটাতো বেস্ট ফ্রেন্ডের নিয়ে করতে হয়। তাহলে আমি তোকে বলতাম নাকি!’

ধারা জান্নাতের দিকে তাকায়। ইচ্ছে করছে এই মেয়েটাকে পুকুরে নিয়ে ইচ্ছে মত চুবিয়ে ধরতে। তাহলে যদি এই মেয়ের মন থেকে এমন উদ্ভট ইচ্ছে গুলো দূর হয়। হুর, বলে কিনা আমাকে নিয়ে মিউজিক্যাল ভিডিও করবে। বলি আমি কখনো ছবি তুলেছি একটা ঠিক মত। সেখানে আমি কিনা করবো মিউজিক্যাল ভিডিও? ধারা জান্নাতের দিকে তাকিয়ে দেখে মন খারাপ করে বসে আছে। জান্নাত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে মিউজিক্যাল ভিডিও করে। মিউজিক্যাল ভিডিওর মাধ্যমে বেশ নামডাক হয়েছে। অনেকদিন ধরেই বলছে ওকে একটা বেস্ট ফ্রেন্ড কে নিয়ে ভিডিও করবে। কিন্তু ঐ শুধু না না করে গেছে। এবার মনে হয় আর না করে উপায় নেই। না হলে তো বেচারা সারাদিন মন খারাপ করে বসে থাকবে। তাতো ধারা কখনো হতে দেবে না। ধারা অন্যদিকে তাকিয়ে মৃদু স্বরে বলল,

‘ আমি রাজি।’

জান্নাত লাফ দিয়ে উঠে ধারা কে জড়িয়ে ধরে বলল,

‘ আমি জানতাম আমার জানু আমার কথা ফেলতেই পারবেনা।’

ধারা মৃদু হেসে বলল,

‘ হয়েছে এবার ছাড়। এখন বল কখন করবি ভিডিও?’

জান্নাত ধারা কে ছেড়ে দিয়ে বলল,

‘ কখন আবার কী এখনি করবো। চল আমরা এখন আমাদের বাড়িতে যাবো। তারপর একটু সেজেগুজে ভিডিও করবো।’

জান্নাতের কথা মত ধারা জান্নাতের সঙ্গে ওদের বাড়িতে চলে যায়। জান্নাত তো বরাবরই সাজগোজ করতে পছন্দ করে। তার উপরে যদি মিউজিক্যাল ভিডিও হয় তাহলে তো কথাই নেই। একদম বিয়ে বাড়ির সাজে সেজে ওঠে। এই নিয়ে অবশ্য ধারা ওকে কম ক্ষ্যাপায় না। সামান্য একটা মিউজিক এর ভিডিও করতে যে এত ঘন্টা ধরে মেকআপ করে, না জানি তার বিয়ের দিন কত ঘন্টা ধরে সে মেকআপ করে। এইসব ভেবে ধারা আনমনে হাসে। জান্নাত সাজগোজের পালা শেষ করে ধারা কে নিয়ে ভিডিও তৈরি করতে শুরু হয়ে যায়।

ধারা সবে দুপুরের খাবার খেয়ে ঘুমিয়েছে। আর অল্প কিছুদিন পরে ওদের বোর্ড পরীক্ষার দেখে স্কুল থেকে ওদের তাড়াতাড়ি ছুটি দিয়ে দেয়। পড়ার চাপে নিঃশ্বাস নেওয়ার সময় নেই ধারার। রাত জেগে পড়ার জন্য দুপুরের ঘুম টা ধারার প্রয়োজন। না হলে যে রাত ন’টার পরে ই ধারার চোখে ঘুম নেমে আসে। কিন্তু ঘুম বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না ধারার চোখে। ফোনের শব্দে লাফিয়ে উঠে বসে বিছানায়। বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নেয়। চারো দিকে তাকিয়ে দেখে পড়ার টেবিলে ওর ফোনটা বাজছে। একবার বেজে বন্ধ হয়ে গেছে ফোন। দ্বিতীয়বার বাজতে শুরু করলে ধারা বিছানা থেকে উঠে ফোন হাতে নিয়ে স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে জান্নাত ফোন করেছে। ধারা রেগে ফোঁস ফোঁস করতে করতে ফোন রিসিভ করে বলল,

‘ ওই কুত্তা তোর যন্ত্রনায় কি আমি এখন ঘুমাতে পারবো না?’

জান্নাত উত্তেজিত হয়ে বলল,

‘ জানু, জানু, জানু জানিস কী হয়েছে? তোর আর আমার ফ্রেন্ডশিপের ভিডিওটা ভাইরাল হয়ে গেছে। উফ আমি তো বিশ্বাসই করতে পারছি না। জানিস সবাই কমেন্টে তোর একাউন্টের নাম জানতে চাইছে। তোর একটা ভিডিওতেই হাজার হাজার ফলোয়ার হয়ে গেছে।’

জান্নাতের কথার মাথামুণ্ডু কিছুনা বুঝে ধারা বলল,

‘ এই জানু তোর কি হয়েছে? তখন থেকে কি উল্টোপাল্টা বকছিস? তোর কী পেট গরম হয়েছে?’

জান্নাত ধমক দিয়ে বলল,

‘ আমার কিছু হয়নি তোর হয়েছে। কালকে দুপুরের করা ভিডিওটা একদিনের মধ্যে ভাইরাল হয়ে গেছে। চিন্তা করে দেখ তাহলে তুই তো মিউজিক্যাল ভিডিও দুনিয়া আগুন লাগিয়ে দিবি।’

ধারা মৃদু স্বরে বলল,

‘ আগুন লাগালে তো আবার ফায়ার সার্ভিসের দরকার হবে। আমাদের গ্রামে ফায়ার সার্ভিস আছে কিনা তাও তো জানিনা। তার থেকে, থাক বাবা দরকার নেই। যে যেমন আছে তাকে তেমন থাকতে দে।’

জান্নাত নিচু স্বরে বলল,

‘ তুই এসব কি বলছিস? পাগল-টাগল হয়ে গেছিস নাকি?’

ধারা ধমক দিয়ে বলল,

‘ পাগল আমি হয়েছি নাকি তুই? দুইদিন পরে পরীক্ষা আর এখন উনি মিউজিক্যাল ভিডিও নিয়ে পরে আছে। এই পরীক্ষার মধ্যে আমি যদি আর একবার তোর মুখে মিউজিকাল ভিডিওর কথা শুনেছি তাহলে তোর একদিন কি আমার একদিন। এখন ফোন রাখ। গিয়ে ঘুমা। তা নাহলে কিন্তু আমি তোদের বাড়ি গিয়ে কেলিয়ে আসব।’

ধারার ধমক শুনে জান্নাত ফোন কেটে দিয়ে বিড়বিড় করে বলল,

‘ এটা রেগে গেলে আমার মায়ের থেকেও বেশি ডেঞ্জারাস হয়ে যায়। যাই গিয়ে আমিও ঘুমিয়ে পড়ি। আবার রাত জেগে পড়তে হবে। ইয়া আল্লাহ কবে এই পরীক্ষা নামক প্যারা শেষ হবে।’

জান্নাত একা একা বিড়বিড় করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ে।

রাতে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে নিজের ঘরে যাওয়ার সময় ধারার আম্মা ধারা কে ডাক দিয়ে বলল,

‘ এই এখন গিয়ে আবার পড়ার টেবিলে বসবি না। আমি হাতের কাজ শেষ করে এসে তোর মাথায় তেল দিয়ে দেবো। চুল গুলোর কি অবস্থা করেছিস দেখছিস একবারও। কাকের বাসায় থেকেও বিচ্ছিরি দেখতে লাগছে।’

ধারা ছোট করে বলল,

‘ আম্মা আজকের মাথায় তেল দিবো‌ না। অন্য আরেকদিন দিব।’

ধারার আম্মা ধমকের সুরে বলল,

‘ তোকে বেশি ফটর ফটর করতে বলেছি? যা বলছি তাই কর।’

ধারা গাল ফুলিয়ে বলল,

‘ আচ্ছা।’

ধারা ঘরে যাওয়ার কিছুক্ষণ এর মাথায় ধারার আম্মা একবাটি তেল গরম করে নিয়ে আসে। ধারার আম্মা বিছানায় বসে ধারা কে বলল,

‘ আমার সামনে এসে বস।’

ধারা ওর আম্মার কথামতো তার সামনে এসে বসে। ধারার আম্মা ধারার চুলে আলতো করে তেল দিতে দিতে বলল,

‘ ইশ! চুল গুলোর কি অবস্থা করেছিস? চুলে জট পড়ে গেছে তো।’

ধারা উত্তরে বলল,

‘ কই চুলে জট পড়েছে!’

ধারার আম্মা ধারা কে ধমক দিয়ে বলল,

‘ চুপ করে দুই দন্ড বসতো। সারাক্ষণ শুধু লাফালাফি। তোর আর বাঁদরের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। বাঁদর গাছে লাফায়। আর তুই মাটিতে।’

ধারা ওর আম্মার ধমক শুনে মন খারাপের অভিনয় করে বলল,

‘ তুমি আমাকে বাঁদর বললে। আমি আজকেই তোমার নামে আব্বাজানের কাছে বিচার দিব।’

ধারার আম্মা মৃদু হেসে বলল,

‘ তোকে বারণ করেছে কে? মন উজাড় করে বিচার করে দিস। কিন্তু এখন চুপচাপ বসে থাক।’

ধারা ওর আম্মার কথা শুনে গাল ফুলিয়ে বসে থাকলে তা দেখে ধারার আম্মা মৃদু হেসে মনে-মনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here